পরিচ্ছন্নতা একটা বড় গুণ। আমার মধ্যে এই গুণ প্রয়োজনের চাইতে একফোঁটাও বেশি নেই। আমার নিকটবর্তী অতি সংবেদনশীলদের জন্য বিপদের কথা হল, এ নিয়ে আমার খুব একটা মাথাব্যথাও নেই। নিন্দুকেরা আমাকে খবিশ বলে ডাকে, আড়ালে না, সামনেই ডাকে। তারা জানে এতে আমার কিছু যায় আসে না। কত মানুষ কত কথাই তো বলে। এত কিছুতে কান দিলে কি চলে? তাছাড়া দুনিয়ার বেশিরভাগ বিষয়ের মত এটাও বোধহয় আপেক্ষিক। আমিও মনে মনে খবিশ ডাকি এমন মানুষের অভাব নেই।
আমি খবিশ এটা আমি প্রথম জেনেছিলাম আমার মা'র কাছ থেকে। স্কুলে পরে যাবার জন্য সাদা রঙের দু'টো শার্ট ছিল। আমি একটিই দিনের পর দিন পরে যেতাম, মা এসে পালটে দেয়া না পর্যন্ত। মা এসে যখন বলতেন, "আজকে এই শার্টটা পরে যাস না, ধুতে দেব", আমি বলতাম, "কেন?"
-"কেন মানে? দেখিস না কেমন ময়লা হয়েছে?"
-"কোথায়?"
মা হাল ছেড়ে দিতেন। চলে যেতে যেতে উচ্চারণ করতেন তার প্রিয় বাক্যটি- "যেমন বাপ তেমন ব্যাটা"। এ কথার সাথে আমি অবশ্য একমত না। বাবার খবিশত্ব পোষাক ব্যবহার আর কাকগোসলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সপ্তাহে একদিন কাঠি দিয়ে পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচীর নামে আমার দুই কানের বারোটা বাজানো তার একটা প্রিয় অবসরযাপন পদ্ধতি ছিল। আর আমার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারটা পুরোটাই লোক দেখানো। যে কারণে সালাম দেই অনেকটা সে কারণেই দাঁত মাজি, মাঝে মাঝেই ভুলে যাই। ওদিকে বাবা 'টুথপেস্টের সাথে টুথব্রাশ ফ্রি' এমন বিজ্ঞাপনের আদর্শ মডেল, জানেন ব্রাশের সঠিক ব্যবহার। এহেন লোকের আমার সাথে তুলনা দেয়া বোধহয় ঠিক না।
একদিনের ঘটনা। আমার ছোট ভাই তখন সবে স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে। হঠাৎ পাশের ঘরে হট্টগোল শুনে ছুটে গেলাম। মা তাকে বকছেন,
-"এটা খাচ্ছ কেন?"
ভাইয়ের মাথা নিচু।
-"এটা কি খাওয়ার জিনিস?"
কোন জবাব নেই।
-"তোমাকে আমরা খেতে দেই না?"
-"উ।"
-"উ কী? খেতে দেই কি দেই না?"
-"খেতে দাও।"
-"তাহলে এটা খাচ্ছ কেন?"
-"খাচ্ছিলাম না তো। চাবাচ্ছিলাম।"
কালো ক্ষুদ্র জিনিসটার উৎসস্থল ছিল তার নাসিকা। ব্যাপারটা অবশ্য যৌক্তিক বিচারে আমার কাছে তেমন গুরুতর কিছু মনে হল না। ততদিনে নিশ্চিত হয়ে গেছি এ পরিবারে অস্বাভাবিক কেউ থেকে থাকলে সে মানুষটা হচ্ছেন মা। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলজীবনে ঢোকার পর আমার এই ধারণাই আরো পাকাপোক্ত হল যে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে চিন্তিত মানুষেরাই আসলে অস্বাভাবিক। স্বাভাবিক হচ্ছে আমার মত মানুষেরা, যাদের মাঝে মধ্যে গোসল না করার স্বাধীনতা আছে, মাসের পর মাস চুল দাড়ি ইত্যাদি () বাড়তে দেয়ার স্বাধীনতা আছে, বিছানার বালিশ চাদর না পাল্টানোর স্বাধীনতা আছে; এমন আরো অনেক রকম ভাবেই আমরা সুবিধাভোগী। শুচিবাইগ্রস্ত মানুষেরা এই স্বাধীনতার প্রতি হিংসায় জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যায়। কোন এক শীতকাল পুরোটা গোসল না করে কাটিয়ে দিয়েছিলাম (হলজীবনের আগেই)। সেই কথা এখনও অনেক গর্ব করে সবাইকে বলি। মানুষের অবিশ্বাসের দৃষ্টি দেখার মজাই আলাদা। এই মজাটা পেতাম যখন সেমিস্টার শেষে হল থেকে বাসায় ব্যাগভর্তি কাপড়চোপড় নিয়ে আসতাম। মা'র চড়কগাছ চোখ হত দেখার মত। মাঝে মাঝে সাদা জামাকাপড়গুলোর মালিকানা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করতেন। হলে থাকতে লন্ড্রীতে কাপড় দেয়ার প্রয়োজনীয়তা কোনদিনই অনুভব করিনি।
খবিশত্বের ব্যাপারে আমার কিছু পর্যবেক্ষণ আছে, ব্যাপারটা ঠিক যুক্তি মেনে চলে না। যেমন আমার ছোট ভাই অমন 'বিশ্রী' কাজটা করলেও সে জীবনেও অন্যের এঁটো কিছু খাবে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাকেও শুচিবাইগ্রস্ত আখ্যা দেয়া যায়। দিনের মধ্যে সে অসংখ্যবার কাপড় বদলাবে। মা বাদে অন্য কেউ মাছ বেছে দিলে খাবে না, অন্যদিকে বাসায় পেন্সিলগুলোর পেছনের একটা ইরেযারও আস্ত নেই। শৌচকর্মে পানির ব্যবহারে তার অবিশ্বাস্য কার্পণ্য, কিন্তু গোসলে গেলে ঠিকই পানির ট্যাঙ্ক অর্ধেক খালি করে আসা চাই। এইসব বিপরীতধর্মী আচরণের কারণ হয়তো কোন মনোবিজ্ঞানী ভালো বলতে পারবেন। [পরিচ্ছন্নতার সংজ্ঞাও সংস্কৃতিভেদে ধ্রুব না। কালচার শকের একটা ভালো অভিজ্ঞতা হয়েছিল একবার। জর্ডানের এক ব্যাটালিয়নে আমন্ত্রণ রক্ষা করতে গিয়েছিলাম। জনা ত্রিশেক লোকের সমাগমে চা আপ্যায়নের জন্য ছিল একটি মাত্র কাপ। এক ব্যক্তি ঘুরে ঘুরে সবাইকে দিলেন, একজনের খাওয়া শেষ হলে পরের জনকে, একবারও কাপটি না ধুয়ে। বুঝলাম তাদের এঁটোজ্ঞানই নেই। তারা খাদ্যও গ্রহণ করে দু'হাত ব্যবহার ক'রে।]
এসব ছোটখাট নিরীহ বদভ্যাস দূর করা বোধ করি অসম্ভব কিছু না। একটু অন্য দিকে যাই। বিষয় অবশ্য একই, খবিশত্ব, একটু ভিন্নমাত্রার। কিছুদিন আগে সচলায়তনে অবাঞ্ছিতের এই লেখায় দু'টি অস্বস্তিকর ভিডিও দেখলাম। তার মধ্যে দ্বিতীয়টি বোধহয় না দেখলেই ভালো ছিল। এর কুশীলবদের মানসিকতার পরতে পরতে যে আবর্জনা, তা কি এত সহজে মোছার? এখানে আবার পড়লাম জামায়াতে ইসলামী নাকি ৫ জন (সংখ্যাটি কি কাকতালীয়?) মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা দিতে যাচ্ছে (তারা আদৌ মুক্তিযোদ্ধা কিনা তা অপ্রাসঙ্গিক)! মানসিকভাবে অসুস্থ মানুষদের এই দলটি বেশরম জানা ছিল, তারা নিজেরাও আশা করি জানে সেটা। আমার প্রশ্ন হল এসব মাত্রাছাড়া নোংরামির কি কোন চিকিৎসা আছে?
নেই বোধহয়।
মন্তব্য
জামাত ১৪ ডিসেম্বর আর ১৬ ডিসেম্বর পালন করবে???? আর কত কিছু দেখতে হবে এই দুনিয়ায়
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
তাই ভাবছি। এরপর গোলাম আজমকে জাতির পিতা বললেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না।
________________________________
তবু ধুলোর সাথে মিশে যাওয়া মানা
দুর্দান্ত একটা লেখার ততোধিক আকর্ষণীয় সমাপ্তি...
ফাজলামির একটা মাত্রা থাকা দরকার ।
_________________________________________
মধ্যরাতের কী-বোর্ড চালক
এভাবে বললে তো লজ্জা পেয়ে যেতে হয় রে ভাই। অনেক ধন্যবাদ।
________________________________
তবু ধুলোর সাথে মিশে যাওয়া মানা
ঈদশুভেচ্ছা।
মোনাফেক শব্দটা যে ওদের সাথেই সবচেয়ে ভালো মানায় এইটা প্রমাণ করতে হবে না!
মূল বক্তব্য অপরিস্কার লাগলো।
- বাস্তববাদী_২০০৯
এ নিতান্তই প্রায় বক্তব্যহীন লঘু ব্লগরব্লগর। আপনার মনোযোগের জন্য ধন্যবাদ।
________________________________
তবু ধুলোর সাথে মিশে যাওয়া মানা
শালা খবিশ... খবিশ বানান দন্ত্য-স না তালব্য-শ?
হুমমম,
ডাক দেয়ার সময় হয়েছে- "দুনিয়ার খবিশ এক হও"
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
জামাতীরা তো মুক্তিযোদ্ধা ফোরাম গঠন করছে।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
আজ থেকে বহু বৎসর আগেই জামায়াতের শ্রমিক সংগঠন "শ্রমিক কল্যান ফেডারেশনের" সভাপতির পদ অলঙ্কৃত করেছিলেন একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। ঐ ব্যক্তি যে "একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা" এই দাবীটি খোদ জামায়াতের। কথাটি সত্যও হতে পারে। মুক্তিযুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধারা কেমন আছেন, তাঁদের দিন কীভাবে চলছে, তাদের সংসার কীভাবে-কেমন চলছে, কেউ তাঁদের মগজ ধোলাইয়ের চেষ্টা করছে কিনা, অশিক্ষিত বা স্বল্পশিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ সাত-পাঁচ বোঝাচ্ছে কিনা এগুলোর খোঁজ সরকারগুলো বা আমরা কতটুকু নিয়েছি তা আমরা ভালো করেই জানি। তাই ২০০৯ সালের শেষভাগে এসে জামায়াতের অনুষ্ঠানে পাঁচ জন মুক্তিযোদ্ধাকে দেখলে অবাক হবেন না। জামায়াত তার পরিকল্পনা মোতাবেকই আগাচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধা আর রাজাকারদের এক মঞ্চে এনে যুদ্ধাপরাধের বিচার চাওয়ার ব্যাপারে সাধারণ মানুষের মনে দ্বিধা আর বিভ্রান্তি করার কাজ পুরোদমে চলছে। কিন্তু এর বিপরীতে কোন ব্যক্তি বা সংগঠনের কোন সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা কি আমাদের চোখে পড়ে?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
একমত।
________________________________
তবু ধুলোর সাথে মিশে যাওয়া মানা
একদম খাঁটি কথা পাণ্ডবদা। দ্বীমত করার কোন সিযোগ নেই।
আপনার ছোটভাইয়ের কুকির্তি পড়ে বারবার স্মৃতিতে ঘটনাটা চলে আসছে, এখন উপায় বাতলে দেন।
লেখাটা অতি ভাল হয়েছে। শেষটার কোন উত্তর নাই। আমাদের দেশ বলেই হয়ত এতোসব সম্ভব
দেশ নিয়ে গর্ব করে গান গাইবার দিন শেষ হতে বেশী বাকি নাই।
বিয়াফক মজার লেখা, বড় ভালু পাইলাম, মেজাজ খাইস্টা হইয়া ছিল, পড়ে এখন মন ফুরফুরা শরীফ হয়ে গেছে, উপরে দেখলাম একজন আবার ফোড়ন মাইরা গেছেন, উনারে একটু হারপিক দিয়ে মাইজা গোসল দেওনের কাম।
বস, এইখানে আইসা পড়, শীত কেন, সারা বছর গোসল না কইরা পার কইরা দিতে পারবা। গা ঘামে না খুব একটা যদিও গরম পড়ে ভালই। তবে শীতকালে গোসল না করলে আমার ঠান্ডা কেন যেন বেশি লাগে। তাছাড়া এখানে আসার পর থেকে সৌচ কার্যে আমি কখনো ঠান্ডা পানি ব্যভার করি নাই, তাই কৃপণতার প্রশ্নই আসে না ;)।
শেষের অংশ পড়ে একটা কথা মাথায় আসল
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদ্বপি গরীয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
নতুন মন্তব্য করুন