গত সোমবার যেতে হয়েছিল আবিদজান থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরের একটা মফস্বল শহরে, নাম দালোয়া। সড়কপথে ৬ ঘন্টার দূরত্ব।
যাবার খবরে উৎফুল্ল হয়েছিলাম। কারণ প্রথমত, এখানে আসার প্রায় ৫ মাস হলেও আবিদজানের বাইরে এই প্রথম যাওয়া। দ্বিতীয়ত, ওখানে কাজ ছিল খুবই স্বল্প এবং উপভোগ্য, এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মহড়া সংক্রান্ত, উপলক্ষ ১৬ই ডিসেম্বর। এখানে ঈদ হয়েছিল শুক্রবার। সাপ্তাহিক ছুটি শনি রবি। আবিদজানে ফিরে এলাম বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। অর্থাৎ, ৬টা দিন ঘুমের পাওয়ার-প্লে। উল্লেখ্য, আমি কুম্ভকর্ণের দূরসম্পর্কের আত্মীয়।
এখানকার মহাসড়কের দু'ধারের দৃশ্যাবলী প্রায় বৈচিত্র্যহীন। বাংলাদেশের থেকে এখানকার মূল পার্থক্য হল এখানে সবুজের বন্যতা একটু বেশি, জলাশয় প্রায় নেই বললেই চলে আর রাস্তার ওঠা নামার হার অনেক বেশি। তবে মোটের উপর আমরা উঠছিলাম উপরের দিকে। দালোয়া আবিদজানের উত্তর-পশ্চিমে।
আমার কেন যেন নতুন কোন জায়গায় গিয়ে মনটা একটু খারাপ হয়ে যায় প্রথমে। গন্তব্য নিয়ে অনেক কিছু কল্পনা করে ফেলি। পৌঁছানোর পরের বাস্তবতার সাথে কল্পনার কোন মিল থাকে না। তারপর আস্তে আস্তে অপরিচিত জায়গাটা তার ভাঁজ খুলতে শুরু করে। তখন ভালো লাগা বা আত্মীকরণ শুরু হয়। বন্ধুবান্ধব নিয়ে দল বেঁধে গেলে অন্য কথা, এসব ঝামেলার মধ্য দিয়ে যেতে হয় না। এতে অবশ্য সেখানকার বাসিন্দাদের সাথে মেলামেশার সুযোগ একটু হলেও কমে যায়। দালোয়া পৌঁছানোর পরই আমার আবিদজানে থাকার ঘরটার কথা মনে হতে থাকল। কিছু মানুষের সাথে পরিচয়ে প্রাথমিক নিঃসঙ্গতা কেটে গেলে আবার ভালো লাগতে আরম্ভ করল। নিজের মেজাজ পরিবর্তনের দ্রুততায় নিজেই আশ্চর্য হয়ে গেলাম। বেশ ভালোই কাটলো মাঝের দু'দিন। তারপরও আসার আগের রাতে ঘুমাতে যাবার সময় আনন্দ হল- আহ, কাল আবার ঘরে ফিরে যাচ্ছি। বুঝলাম ঘরের সংজ্ঞা বদলে গেছে। আইইউটির নর্থ হলের ৫২১ ছেড়ে আসার সময়ও মনে হয়েছিল নিজের ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছি। তবে সেটা ছিল ৪ বছরের ধাক্কা, বহু বন্ধুত্বের শক্ত বাঁধন। আবিদজানের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা বেশ দ্রুতই ঘটেছে বলতে হবে। কোন জায়গায় ক'দিন কাটালে মানুষ তা নিজের বলে মনে করতে শুরু করে?
আসার পথে এক ঘন্টার যাত্রাবিরতি দিয়েছিলাম আইভরি কোস্টের প্রশাসনিক রাজধানী ইয়ামুসুক্রোতে। [বাংলাদেশে যেমন -পুর বা -গঞ্জ, এখানে তেমন -ক্রো। যাত্রাপথে যত জায়গার নাম চোখে পড়ল বেশিরভাগেরই শেষে ক্রো- গেংগারোংক্রো, গুরুমিনাক্রো, লোগবাক্রো (আমি নাম দিয়েছি, লোক ভাগ করো), তিয়েমেলেক্রো, দিম্বোক্রো (বাঁকা ডিম?), বনিক্রো, আতিয়েগুয়াক্রো, যম্বোক্রো, দুয়োক্রো, ইয়াক্রো ইত্যাদি। তবে একটা ব্যাপার লক্ষ্য করলাম, আবিদজানের দিকে যত আসছিলাম -ক্রো এর হার তত কমছিল। এখন ঘরে টাঙানো মানচিত্রে দেখছি -ক্রো গুলো বেশিরভাগ ইয়ামুসুক্রোর আশেপাশেই ছড়িয়ে আছে।] যাত্রাবিরতির মূল কারণ ছিল 'বাসিলিকা'। এটি একটি গির্জা, স্থাপত্য অতি আকর্ষণীয়। উইকিতে দেখছি এটাই নাকি দুনিয়ার সবচে' বড় গির্জা, স্থানীয় গাইড এটা উল্লেখ করেনি। এর উচ্চতা ১২০ মিটার, চূড়াস্থিত ক্রুশ ধরলে ১৫৮। ভেতরে ৭০০০ জনের বসার ব্যবস্থা, প্রতিটি সিট আবার শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যুক্ত। এক কোনায় পিয়েতার কাঠের রেপ্লিকা। ভেতরের দেয়াল ঘিরে ১২টি স্তম্ভ, যীশুর ১২ জন চেলার প্রতীকরূপে। তারা প্রত্যেকে পিলারগুলোর উপরে রঙিন কাঁচ দিয়ে অঙ্কিত। গির্জার মাঝখানে যীশু, বলাই বাহুল্য। তার এক কোনায় অরগান, ড্রামস ইত্যাদি। সাউন্ড সিস্টেমও সাধারণ না। লিফটে করে ছাদে ওঠার ব্যবস্থা আছে দর্শনার্থীদের জন্য। ৩ বছর (জুলাই ১৯৮৬-সেপ্টেম্বর ১৯৮৯) ধরে বিভিন্ন দেশের ৩৬টা কোম্পানি গির্জাটি বানিয়েছে। পুরা ব্যাপারটাই টাকাপয়সার শ্রাদ্ধ, যার কারণটাও অতি ঠুনকো।
এই বেলা কিছু ছবি দেই। খিয়াল কইরা, ছবিগুলো মুঠোফোনে তোলা, তার ওপর ছবি তোলার ব্যাপারে আমার আলাদা কোন দক্ষতা নেই।
বাসিলিকা থেকে বেরিয়ে দেখি ডাব বিক্রী হচ্ছে, ঠিক বাংলাদেশি ধরনে। দু'টো কচি দেখে বেছে চোঁ চোঁ শব্দে সাঁটালাম। সদ্য কৈশোর ছোঁয়া বিক্রেতাটির নাম মাদু। এখানে আরো কিছু ছবি আছে, মাদু মিয়ার ছবি সহ।
মন্তব্য
বাসিলিকায় ছোট্টিকা (ছোট্ট+ঝটিকা) সফর করানোর জন্য ধন্যবাদ।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
________________________________
তবু ধুলোর সাথে মিশে যাওয়া মানা
লেখার এই আটপৌরে ভঙ্গিটাই দারুন লাগে...
লেখার এই আটপৌরে ভঙ্গিটাই দারুন লাগে...
________________________________
তবু ধুলোর সাথে মিশে যাওয়া মানা
বস, দারুন লেখা, কিন্তু ছবি এত ছুডু কেন? সচলের ছবি আপলোডার ব্যবহার করেছিলে? সেটা করে থাকলে ছবি আপলোডারে সিলেক্ট করার পর যখন আসে তখন দেখবে একটা জায়গায় সাইজ থাকে POPSIZE আর THUMBNAIL, তুমি মনে হয় বস পপসাইজ না দিয়ে থাম্বনেইল দিয়েছ। তাও খুব ভালো লাগল। FLICKR দিয়ে এমবেড করলে এই জটিলতা থাকে না।
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদ্বপি গরীয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
আর কয়েন না, ক্যাম্নে কী বুঝতেই ধৈর্য্য হারাইছিলাম। পরে শেষের লাইনে ফেসবুকের অ্যালবামের লিঙ্ক দিলাম, সবার জন্য উন্মুক্ত। আর তরিকা জানানোর জন্য ধনে পাতা।
________________________________
তবু ধুলোর সাথে মিশে যাওয়া মানা
রাহিন ভাইজান,
চ্রম মৌজে আসেন তাই না...
নীল ভূত।
লেখা ভালো লাগলো।
বিশ্বকাপের টিকিট কাটছো?
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
যদিও আফ্রিকাগামী মানুষদের আমি একটু হিংসের দৃষ্টিতে দেখি, কিন্তু বিনে টিকেটে আমাদের এই ভ্রমনে সাথে নেয়ার জন্য ধন্যবাদ। খু্ব ভালো লাগলো।
----------------
"সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে"
-----------
চর্যাপদ
ডাব খাওয়া প্রসংগে মনে পড়ল... প্রতিবার দেশের বাড়ি যাবার পথে বাস ফেরিতে উঠলেই আমি, আমার ছোটভাই আর বাবা চটপট বাস থেকে নেমে একটা করে ডাব খেতাম। পরে বাসের দীর্ঘ যাত্রা আমি আর আমার অনুজ বসে বসে ত্যাগেই শান্তি - ত্যাগেই শান্তি জপতাম। বাবা রাশভারি মানুষ। ওনার কোন অভিব্যক্তি দেখতাম না। তবে নেক্সট স্টপেজ-এ দেখা যেত উনি আমাদের দুভাইয়ের আগে ঠিক-ই রেস্টরুম খুঁজে নিয়েছেন
শত অস্বস্তি সত্বেও ঢাকা টু বাগেরহাট আসা যাবার পথে ডাব মিস করতাম না আমরা। জেনে শুনে ডাব করেছি পান... জাতীয় ব্যাপার অনেকটা
ভালই ট্যুর দেয়া হচ্ছে। শেষে আবার কচি দেখে দু' দুটো ডাব চোঁ চোঁ শব্দে সাঁটালি! ভালু ভালু।
একা একা ঘুরলেন ? (
"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"
একা একা ঘুরলেন ?
"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"
নতুন মন্তব্য করুন