একই বৃন্তে দু'টি ফুল

রায়হান আবীর এর ছবি
লিখেছেন রায়হান আবীর (তারিখ: বুধ, ০৫/১১/২০০৮ - ৯:৩৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

একই বৃন্তে দু'টি ফুল
বনশ্রী আর দুলদুল

আইইউটির ছেলেদের মনের কথা এটি। বোর্ড-বাজারে ছোট বড় আরও অনেক বাসের কাউন্টার থাকলেও কোন অদ্ভুত কারণে এই দুইটি বাসই সবার প্রিয়। বনশ্রী বাসের ভিতরের বমি বমি গন্ধ, ময়লা কভার এবং চিপা স্থানের কারণে পছন্দের তালিকায় অবশ্য দুলদুল অনেক এগিয়ে। তার মানে এই না যে দুলদুলে কোন সমস্যা নাই। সমস্যা আছে। সবচেয়ে বড় যেটা সেটা হলো, এই বাসে বসলে পাশে নারী যাত্রী পাবার সম্ভাবনা শূন্যের কাছাকাছি। বোর্ড-বাজার থেকে তারা যাত্রী তোলা আরম্ভ করে। আবদুল্লাহ্‌পুর আসতে আসতে প্রায় ভর্তি হয়ে যায়। কাকলীতে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় লাস্যময়ীরা দুলদুলে উঠার পায়তারা করতে থাকে তখন বাসে তাদের জন্য এক ফোঁটা জায়গাও খালি নাই। এই সময়ে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হল নিজের সিট ছেড়ে তাদের বসার জায়গা করে দেওয়া। বিনিময়ে একটা মিচকি শয়তান মার্কা মুচকি হাসি পাওয়াও তো দারুন ব্যাপার। তাও করা হয়ে ওঠে না। কারণ লাস্যময়ীরা আমার আসন থেকে থাকেন কয়েক ক্রোড় দুরে। পাশে যদি কালেভদ্রে কেউ থেকেও থাকে, তার চেহারা হয় দ্রোহী ভাইজানের সেই ছাত্রীর মতো।

ছাত্রদের পছন্দের ব্যাপারে অতি দ্রুত সিদ্ধান্তে আসা গেলেও স্যারদেরটা নিয়ে আমি এখনও নিশ্চিত নই। সেদিন একজনকে দেখলাম, টাকা বাঁচানোর ধান্ধায় দুনিয়ার সবচেয়ে গান্ধা লোকাল বাস বলাকায় উঠার জন্য ফাল দিচ্ছেন। ভাল করে তাকিয়ে দেখি তিনি আর কেঊ নন আমাদের সুপ্রিয় ইসলামিয়াত শিক্ষক। ইলেকট্রিক্যাল থেকে পাশ করে যিনি ইসলামিয়াত শিক্ষাকে মহান পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তারচেয়েও ভয়াবহ অবস্থা আমাদের হেড-এর। কথিত আছে যে, তার বেতন প্রতি মাসে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার মতো। তারেও আমি একদিন উত্তরা থেকে লোকাল বাসে উঠতে দেখলাম। এতো টাকা উনি কি করেন আল্লাই জানেন। নিজের কাজে যে লাগান না তা প্রমাণিত। কারণ ফার্মগেটে তার পরনের সোয়েটার টা'র দাম করেছিলাম একদিন। বিক্রেতা সত্তর টাকায় ছেড়ে দিতে রাজী হয়েছিল।

এই তো গেল বাসের কথা। এছাড়াও কতিপয় ছাত্রের রয়েছে নিজস্ব গাড়ি। আমাদের সবার মতো আইইউটি তাদের খুব একটা পছন্দ না। সকালে গাড়ি হাকিয়ে এসে ক্লাস শেষ হবার সাথে সাথেই তারা ফুরুত। এইক্ষেত্রে আমাদের জামি ব্যতিক্রম। তার ছোট্ট মারুতি সোনাটা সবসময় হলের সামনে ল্যান্ড করা থাকে। পোলাপাইন নিয়ে মাঝে মাঝে সে লং ড্রাইভে বের হয়। সেদিন ফাহিমটা এসে বলল, দোস্ত জামির গাড়ি নিয়া এক জায়গায় গেলাম। শ্মশান ঘাট। পাশে একটা পুরানো মন্দির। ভয়াবহ রকমের সুন্দর জায়গা। আরেকদিন শীতলক্ষার পাড় থেকে ঘুরে এসে সে তো আবেগে কথাই বলতে পারেনা। আমি মনে মনে ভাবি, আহারে,

দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
আইইউটি হইতে দুই পা ফেলিয়া...

সুযোগ আসল গত বৃহস্পতিবার। সারা সপ্তাহের লোড মাথা থেকে ঝাড়ার জন্য ভাবলাম কিছু সামাজিক সিনেমা দেখি। নতুন কিছু না পাওয়াতে বেশ বোরিং লাগছিল। তখন দেখি জামি। সবাই হল ছেড়ে চলে গেলেও সে যায়নি। মনবাসনার কথা তাকে জানাতেই সে রাজী হয়ে গেল। বৃথা দেরী না করে তার ছোট্ট ছানাটি নিয়ে রওনা দিলাম ফাহিমের সেই রগরগে জায়গাগুলো দেখতে। রাস্তার পাশের জরাজীর্ণ মন্দির দেখে আশাহত হলাম। দ্রুত পা বাড়ালাম শ্মশান ঘাটের উদ্দেশ্যে। মন্দির যে আমাদের ভাল লাগেনি তা বুঝতে পেরেই ফাহিম পাশ থেকে খুব রহস্য করে বলল, দোস্ত আমি যেইদিন আসছিলাম সেইদিন এইখান থেকে কেমন জানি একটা গন্ধ গন্ধ আসছিলো। আমি ভাবলাম নিশ্চই উনাদের (?) গন্ধ। বেরসিক জামির পাশ থেকে প্রত্যুত্তর, ধুর আমি তখন ফ্রট দিসিলাম। ঐটা তারই গন্ধ। আহারে ফাহিম...শীতলক্ষারও একই অবস্থা। নদীতে পানিই নাই। কিছুক্ষণ ভাব ধরানোর বৃথা চেষ্টা করে যখন লাভ হচ্ছিল না তখন গাড়ীতে মিলার গান ছেড়ে আমরা লাফালাফি শুরু করলাম।

শুকনো পাতার নুপুর পায়ে নাচে পূর্ণিমা
জল তরঙ্গে ঝিলিমিলি ঢেউ তুলিয়া যায়...

বাস নিয়ে শুরু করলাম যখন তখন একটা সত্যি জোক বলে শেষ করি।

মিরপুর থেকে বিকল্প বাসে করে নিউমার্কেট যাচ্ছি। এক বাবা তার পিচ্চি ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন। সেই পিচ্চির প্রশ্নের কোন শেষ নাই। এক পর্যায়ে সে বাবাকে জিজ্ঞেস করল,
বাবা, আমরা কোথায় নামবো?
:সাইন্স ল্যাব।
:বাস কি তখন থামবে?
:অবশ্যই।
:আব্বু, ড্রাইভার কিভাবে জানে যে, আমরা সাইন্স ল্যাব নামবো?

গড় রেটিং

(১ ভোট)

Trackback URL for this post:
http://www.sachalayatan.com/trackback/12841

লিখেছেন রায়হান আবীর (তারিখ: শুক্র, ২০০৮-০২-২৯ ০০:১৬)
উদ্ধৃতি | রায়হান আবীর এর ব্লগ | ১৬টি মন্তব্য | পছন্দের পোস্টে যুক্ত | আপত্তি জানান | ১৯৩বার পঠিত

Views or opinions expressed in this post solely belong to the writer, রায়হান আবীর. Sachalayatan.com can not be held responsible.

১ | দ্রোহী | শুক্র, ২০০৮-০২-২৯ ০০:৩৪

জোকটা মজার।

××আমার ছাত্রীকে তিনদিনের বেশী পড়াতে হয়নি। সে এক বিরাট ইতিহাস। :)××
কি মাঝি? ডরাইলা?

উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | reply | আপত্তি জানান | লেখককে মেসেজ

১.১ | রায়হান আবীর | শনি, ২০০৮-০৩-০১ ০১:২৯

সেটা নিয়া কবে লিখবেন বস?
---------------------------------
এসো খেলি নতুন এক খেলা
দু'দলের হেরে যাবার প্রতিযোগিতা...

উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | সম্পাদনা | reply | আপত্তি জানান

২ | হিমু | শুক্র, ২০০৮-০২-২৯ ০১:২০

শুকনো পাতার নূপুর পায়ে নাচে "ঘূর্ণিবায়" হবে না? কী জানি, পূর্ণিমাও হতে পারে। মিলার গানে সব হয়। আমাদের মিলা সব পারে ;)।

হাঁটুপানির জলদস্যু

উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | reply | আপত্তি জানান | লেখককে মেসেজ

২.১ | রাতুল (যাচাই করা হয়নি) | শুক্র, ২০০৮-০২-২৯ ০২:৪০

শুকনো পাতার নূপুর পায়ে নাচে "পূর্ণিমায়"

হবে, তাই না?

উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | reply | আপত্তি জানান

২.১.১ | রায়হান আবীর | শনি, ২০০৮-০৩-০১ ০১:৫৫

সিউর...
---------------------------------
এসো খেলি নতুন এক খেলা
দু'দলের হেরে যাবার প্রতিযোগিতা...

উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | সম্পাদনা | reply | আপত্তি জানান

২.২ | দ্রোহী | শুক্র, ২০০৮-০২-২৯ ০২:৪৩

যতদুর মনে পড়ে "ঘুর্ণিবায়" হওয়ার কথা। তবে পূর্ণিমা হইলেও খারাপ হয় না। সমস্যা হচ্ছে পূর্ণিমাকে দেখতে যত ভালো লাগে পূর্ণিমার নাচ ততো ভালো লাগে না।
কি মাঝি? ডরাইলা?

উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | reply | আপত্তি জানান | লেখককে মেসেজ

২.২.১ | প্রকৃতিপ্রেমিক | শুক্র, ২০০৮-০২-২৯ ০৫:২১

এটা নিয়ে যদি জোক না করে থাকেন তাহলে বলি শব্দটা ×ঘূর্ণিবায়‌‌‌× হবে।

উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | reply | আপত্তি জানান | লেখককে মেসেজ

২.২.১.১ | দ্রোহী | শুক্র, ২০০৮-০২-২৯ ০৫:২২

হুম ু আর ূ কারে প্যাঁচ লেগে গেছিল। শুদ্ধ বানানের জন্য ধন্যবাদ।
কি মাঝি? ডরাইলা?

উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | reply | আপত্তি জানান | লেখককে মেসেজ

২.৩ | রায়হান আবীর | শনি, ২০০৮-০৩-০১ ০১:৩৬

নজরুল এবং ফুয়াদ ও তার দলের (মিলা) সাথে এই হলো পার্থক্য। নজরুল যে চিন্তা করে গানটি লিখেছেন এবং শিল্পীরা গেয়েছেন ফুয়াদের ভাল লাগেনি। মিলার কন্ঠে গানটি শুনে দেখেন, তাইলেই বুঝবেন এখানে আসলে পূর্ণিমার কথাই বলা হয়েছে। দ্বিতীয় লাইনে বর্ণনা করা করা হয়েছে অন্য একটা জিনিস। বাজী। একবার শুনেই দেখেননা।
---------------------------------
এসো খেলি নতুন এক খেলা
দু'দলের হেরে যাবার প্রতিযোগিতা...

উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | reply | আপত্তি জানান

১০

২.৩.১ | হিমু | শনি, ২০০৮-০৩-০১ ০১:৪১

হতে পারে। আমাদের ফুয়াদ সব পারে।

হাঁটুপানির জলদস্যু

উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | reply | আপত্তি জানান | লেখককে মেসেজ

১১

৩ | পরিবর্তনশীল | শুক্র, ২০০৮-০২-২৯ ০২:১১

উদ্ধৃতি
সবচেয়ে বড় যেটা সেটা হলো, এই বাসে বসলে পাশে নারী যাত্রী পাবার সম্ভাবনা শূন্যের কাছাকাছি।

আমার জীবনটাই এখন একটা দুলদুল পরিবহণ।
তোরটা?

---------------------------------
চোখের পাতায় হাত রেখে ওরা আমাকে স্বপ্ন দেখার যন্ত্রণা দেয়।

উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | reply | আপত্তি জানান

১২

৩.১ | রায়হান আবীর | শনি, ২০০৮-০৩-০১ ০২:০২

খুবি ভাল অবস্থা। এক্কেরে মিলার লাহান।
---------------------------------
এসো খেলি নতুন এক খেলা
দু'দলের হেরে যাবার প্রতিযোগিতা...

উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | সম্পাদনা | reply | আপত্তি জানান

১৩

৪ | ধুসর গোধূলি | শুক্র, ২০০৮-০২-২৯ ০৬:১৬

- জাই সাহেব কি এখনো আছেন?
ললনা সহযাত্রী মিলবে একদিন আর আমরা সে গল্প রসিয়ে রসিয়ে পড়বো, এই কামনা করি।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | reply | আপত্তি জানান | লেখককে মেসেজ

১৪

৪.১ | রায়হান আবীর | শনি, ২০০৮-০৩-০১ ০১:৫৯

জাই স্যার বর্তমানে ভিসি হওয়ার দৌড়ের জন্য পাকিস্তানে অবস্থান করছেন। গত দুই বছরে তিনি মনে হয় ৩ মাসও আইইউটি তে ছিলেন না।
---------------------------------
এসো খেলি নতুন এক খেলা
দু'দলের হেরে যাবার প্রতিযোগিতা...

উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | সম্পাদনা | reply | আপত্তি জানান

১৫

৫ | অতিথি লেখক [অতিথি] | শুক্র, ২০০৮-০২-২৯ ০৯:৫৬

***উলুম্বুশ**

আমাদের পোলাপান যখন আইইউটিতে ভর্তি হইল তখন ছিল সিটি বাস ১২ টাকা লাগত মালিবাগ থেকে যেতে। ৩-৪ জন মিলে এক বন্ধুর ওখানে ওর সাথেই যাচ্ছি। সিট গুলা এত সোজা ছিল যে পিঠ ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে গালিগালাজ ......... এর বাস।
আমাদের ঐ বন্ধুর উক্তি , ভার্সিটি নিয়ে যা খুশি বল বাস নিয়ে বলবি না। এতই ভালোবাসা।

উদ্ধৃতি | ঘ্যাচাং | reply | আপত্তি জানান

১৬

৫.১ | রায়হান আবীর | শনি, ২০০৮-০৩-০১ ০১:৪০

হুম...
---------------------------------
এসো খেলি নতুন এক খেলা
দু'দলের হেরে যাবার প্রতিযোগিতা...


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।