আপনাদের ভোট চাই...

রায়হান আবীর এর ছবি
লিখেছেন রায়হান আবীর (তারিখ: রবি, ২৮/১২/২০০৮ - ২:৪৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

উৎসর্গঃ- ফেসবুক, বিভিন্ন মেইলিং গ্রুপে এবং ভার্সিটির কতিপয় উঠতি বরাহশাবকের উদ্দেশ্যে...


...

আপনার এলাকার সবচে’ যোগ্য ও গুনী লোককে ভোট দিন। সে যে দলেরই হোক

জ্বি জ্বি!! আমি জানি, আপনি বুঝতে পেরেছেন আমি কোন দলের কথা বলছি। আর যাদের মাথা একটু মোটা আছে, তাদের জন্যই বোল্ড করা। আরে ভাই, নিঝুম সাহেবের মতো চামচ নিয়ে কমোডের দিকে যাচ্ছেন কেন?? না না! আমি ওসব খাইনা। যুদ্ধাপরাধীদের পরিবর্তে নেড়ি কুত্তাকে ভোট দিবেন? তা কী করে হয়? একটু ভাবুন প্লিজ!!

যুদ্ধ তো আমরা করি নাই ভাই। যুদ্ধ তো করলো সেই ভারতের দালাল আর ভারতের সৈন্যরা। আমরা তো নিজের দেশের সার্বোভৌমত্ব রক্ষা করতে চেয়েছিলাম মাত্র। এমনিতেই ছোট ছিল দেশটা। তারপর সেটাকে আবার দুই ভাগ করতে চাওয়াটা কতটা যুক্তিসংগত, আপনিই বলেন। আপনারাই তো বাধালেন সমস্যাটা।

সংস্কৃতি, ঐতিয্য!! এগুলো কি ধর্মের চেয়েও বড় আপনার কাছে? তাহলে আমার বলতেই হচ্ছে মাথা ঠিক নেই আপনার। ঐ সব ঐতিয্য- মৈতিয্য মরে গেলেই শেষ। আর ধর্ম তো কত বড় একটা ব্যাপার। ব্রিটিশদের কাছ থেকে আমরা এত কষ্ট করে রাষ্ট্র আদায় করে নিলাম- হিন্দুদের কাছ থেকে চিরতরে আলাদা হয়ে গেলাম। আর আপনারা কী না তাদের সাথেই হাত মিলালেন? ভুলটা স্বীকার করে নিন ভাই, ভুল স্বীকার মহত্ত্বের লক্ষণ।

আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা বলে হাসাবেন না দয়া করে। যুদ্ধ শেষ হবার পর আমাদের আগের দেশের নওজোয়ানদের আপনারা তো ঠিকই বিনা বিচারে ফেরত দিয়ে দিয়েছিলেন। তাহলে রাজাকারদের বিচার করার জন্য উঠে পড়ে লাগলেন কেন? এইগুলো পশ্চিমাদের ষড়যন্ত্র। তারা চায় না, আমরা সবাই একসাথে কাজ করে দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাই। পিছনে তাকিয়ে থাকলে কি সামনে এগোনো যাবে, বলুন?

আরে ভাই, আপনারা এতো বিচার বিচার করেন- অথচ নিজেদের বিচারেরই খবর নাই। একাত্তরে পাক বাহিনীর হাতে মানুষ মরছিল মাত্র ১০ হাজার। ৯০ হাজার পাকী সেনাদের কত সতর্ক থাকতে হলো এতো কম মানুষ মারার জন্য, ভেবে দেখেছেন? ওরা তো মুক্তিদের মত শয়তানের কাছে নিজেদের বেঁচে দেয় নাই। ওরা যুদ্ধ করছিল শহীদী তামান্নায়। আর ১৬ই ডিসেম্বরে দেশ ভাঙ্গোনের পর আপনারা কি করলেন! লাখে লাখে বিহারী আর ইসলামপন্থী লোক মেরে শেষ করলেন। একাত্তরের নয় মাসে যত মানুষ মরছে পাক-স্থান দ্বিখণ্ডিত হওনের পর মাত্র তিন মাসে তার কয়েক গুণ মানুষ মরছে। মারছেন আপনারা, সেই বিচার করেন না কেন? আমরা কত ভালা দেখছেন? জীবনে কোনদিন সেই মুসলিম-হত্যার বিচারও চাই নাই।

তাও মানবেন না? ও বুঝেছি। আপনার মা- বোনকে ধর্ষণের কথা ভুলতে পারছেন না, তাই তো। আরে ভাই, দেশ রক্ষার জন্য শক্ত- সামর্থ জোয়ানরা এই আজিব দেশে আসলো, তাদের একটু চাওয়া- পাওয়া আছে না? আপনার মা- বোনদের কী দায়িত্ব ছিল না, তাদের একটু খাতির যত্ন করা। তাহলেই তো আর জোরাজুরি করতে হয় না। আপনি ভাই, একদম অবুঝ।

শহীদ!! হা হা হা। শহীদের সংজ্ঞা আপনার ঠিক মতো জানা নেই বলে মনে হচ্ছে। বলুন মৃত। আর কত জনই বা মারা গিয়েছিল? দশ হাজার। সংখ্যাটা পছন্দ হলোনা? প্লিজ, একটু ঠান্ডা হন। কমোডের দিকে যাবে না দয়া করে। আচ্ছা যান পঞ্চাশ হাজার। এ আর এমন কি বলুন। জাপানের আনবিক বোম মেরে কয়েকলক্ষ মানুষ মেরে ফেলা হলো। এই কয়েক লক্ষ মানুষের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শেষ হয়ে গেলো। তাতে করে কী কয়েক কোটির জীবন বাঁচালো না। ভাই, মনটাকে সংকীর্ণ করে রাখবেন না। ইতিহাসের দিকটাও একটু ভেবে দেখুন।

সেই রুমী, আজাদ, আনিস কিংবা শওকতের মতো ছেলেগুলো যদি বিপথপাগামী না হতো, লাল সবুজের জন্য অস্ত্র না তুলে, চাঁদ তারার নীচে থাকতো*- তাহলে কতো ভালো হতো একবার ভেবে দেখুন তো। তখন আর যাই হোক- ব্যক্তি স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে হুমায়ুন আজাদ, আহমেদ শরীফ কিংবা আরজ আলীর মতো লোকজন ইসলাম বিরোধী কথা বলার সাহস পেতনা। আরে ভাই, ওরা যা বলে না!! এসব কথা শুনলেও তো ঈমান দূর্বল হয়ে যায়।

তাও ভালো সবাই আপনাদের মতো হুজুগে না। অনেকেই ভুল বুঝতে পেরেছে। তাইতো আমরা ক্ষমা পেয়েছি, প্রকাশ্য রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছি। ভাইরে, সুমঞ্চৌধুরীর কথাটা ভুলে গেলেন। আমাদের বুঝতে হবে…বুঝে...

জ্বী জ্বী, আমাদের প্রতিকটা দাড়িপাল্লা। শ্লোগানটা মনে আছে নিশ্চয়ই।

auto

ভোট দিলে পাল্লায়
বেহেশত দিবে আল্লায়


* চিহ্নিত লাইনটির কপিরাইটঃ বিজয় দিবসের নাটক- সেমিকোলন।


মন্তব্য

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

নেট স্পীড ভালো থাকলে এইটা দেখেনঃ

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

পাল্লায় ভোট দিয়ে বেশেহতে যাওয়ার টেকনিক বলা আছে চোখ টিপি

নজমুল আলবাব এর ছবি
গৌতম এর ছবি

ক্ষুব্ধ মানুষের বেদনাহত-আক্ষেপের লেখা...
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ব্লগস্পট ব্লগ ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

বিপ্রতীপ এর ছবি

প্রথম আলোর একটা নিউজ পড়লাম একটু আগে...


বীরগঞ্জের সুজালপুর ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল্লাহ্ আল কাফি অভিযোগ করেন, জামায়াতের নারী কর্মীরা বোরকার নিচে কোরআন শরিফ নিয়ে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কোরআন শরিফ ছুঁইয়ে, ধর্মের নামে অপব্যাখ্যা দিয়ে ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি আদায় করছে। নিজপাড়া ইউনিয়নের বৃদ্ধ কৃষক আফিল উদ্দিন (৭০) বলেন, ‘তিন দিন আগে দাঁড়িপাল্লা মার্কার লোক বাড়িত আইছলো। কহিছে, বাহে, দুই দিন পর তুই মরি গেইলে গোপাল কি তোর জানাজা পড়হিবা পারিবি? না তোক মাটি দিবা পারিবি? কাজে ভোটটা হামার পাল্লাত দিস। এই কাথা শুনি মুই ওমহাক কহিচু, মোর তিনটা বেটা (ছেলে)। বেটা ঘরক (ছেলেদের) মুই কহি থুইচু, মরি গেইলে মোক যেন কুনো রাজাকার মাটি না দেয়।’

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
খুঁজে যাই শেকড়ের সন্ধান...

পান্থ রহমান রেজা [অতিথি] এর ছবি

বেটা ঘরক (ছেলেদের) মুই কহি থুইচু, মরি গেইলে মোক যেন কুনো রাজাকার মাটি না দেয়।’
আফিল উদ্দিন, আপনাকে স্যালুট।

এনকিদু এর ছবি

উত্তম জাঝা!

কৃষক আফিল উদ্দিনের জন্য ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

হ, সব দোষ আমাদেরই। আমরা বাড়াবাড়ি না করলে কি আর পাকি সৈন্যরা মাইন্ড করতো! বোলড করা অংশটা ঠিক ধরেছেন। এখন মুড়িমুড়কির একদর। লীগ-জামাত-বিম্পি সবাইকে এক পাল্লায় তুলে দিলে এইটাই সুবিধা। জামাতিরা তো সৎ লোকই। হাসি

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

শিক্ষানবিস এর ছবি

মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলি। কথাটা অবশ্য পুরো ঠিক বলা হল না। এ ধরণের কথা জীবনে যত শুনতে হয়েছে তাতে আমার বাকশক্তি (বা শ্রবণশক্তি) পুরো লোপ পাওয়ার কথা। লোপ তো পায়নি। ঠিকই তো আছি। তবে কি বাঙালিত্বের চেতনা লোপ পাচ্ছে? আর ভাল লাগে না...

নিবিড় এর ছবি

শুধু ভদ্র ভাষায় বলি শালারা আসলেই বরাহ শাবক । মাঝে মাঝে এদের আসেপাশে দেখলে মনে হয় এরা বুঝি সরাসরি গোয়েবলস থেকে মিথ্যা বলার ট্রেনিং নিয়ে এসেছে । এখানে সমস্যা হল - এরা অনেক সুসংগঠিত ভাবে অপপ্রচারে নামে কিন্তু এদের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আমরা খুব কম সময় সুসংগঠিত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পেরেছি । তাই অসেচতন মানুষ অনেক সময় এদের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে ।

রণদীপম বসু এর ছবি

auto

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

অবাঞ্ছিত এর ছবি

এদের জন্য আমার দুইটা শব্দ... ফায়ারিং স্কোয়াড


I think , therefore i am - Descartes

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

আজ আমার প্রধানতম কামনা: এই ইতরেরা যেন নির্বাচিত না হয়!
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
একলা পথে চলা আমার করবো রমণীয়...

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

স্পর্শ এর ছবি

আবীর তোমাকে স্যালুট।
একটা মজার কথা বলি। আজকে ভোট দিতে গিয়েও আমার এইসব কথা শোনা লেগেছে!
আমাদের বুয়েটে!!
শিক্ষা পেয়েও আমরা কেন যে শিক্ষিত হইনা। মন খারাপ
....................................................................................
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।