আইডিয়াল স্কুলে পড়তাম। বাচ্চা ক্লাসে থাকার সময় স্কুলে কোনো অনুষ্ঠান হলে আমন্ত্রণ পত্র বিতরণ করা হতো ছাত্র/ছাত্রীদের মাঝে। মজার ব্যাপার ছিলো, আমন্ত্রণ পত্র দুই প্রকারের। একটা বেশভুষাহীন সাধারণ প্রিন্ট করা কাগজ, আরেকটা সাদা খামে মোড়ানো হার্ডকাভারে প্রিন্টেড। উন্নতমানের আমন্ত্রণ পত্র 'ডোনেশন' দিয়ে ভর্তি হয়েছে যারা তাদের জন্য। দপ্তরি পত্র বিতরণে এসে প্রথমেই ডোনেশনে ভর্তি হয়েছে যারা তাদের হাত উঁচু করতে বলতেন। হাত তোলা পার্টিকে খামে ভরা শক্ত পত্র প্রদান করে বাকিদেরটা ক্লাস ক্যাপ্টেনের হাতে বুঝিয়ে দেওয়া হতো বিতরণের জন্য।
এবং কী এক অদ্ভুত কারণে দপ্তরির ডোনেশনে কারা ভর্তি হয়েছে এই প্রশ্নে আমি হ্যাঁ বাচক উত্তর দিতাম। আমি একটু গাধা টাইপ ছাত্র ছিলাম, ডোনেশন শব্দটার মানেই জানতাম না তখন, তাই বাক্যটারও না। কিন্তু হাত তুলতাম। বোধহয় শক্ত কার্ড পেতে আমার ভালো লাগতো। ছোটবেলায় কতো কী 'ভালো লাগতো'।
আমার জন্ম ঢাকায়। কোথায়? কোনো এক জায়গায় 'হেলেনা' নামক হাসপাতালে। এবং ছোটবেলায় আমি মনে করতাম ঢাকায় জন্ম নেওয়াটা অত্যন্ত চ্রম একটা ব্যাপার। এ কারণে অপরিচিত কেউ যখন জিজ্ঞেস করতো, তোমাদের বাড়ি কোথায়? বাড়ি কোথায় প্রশ্নটির দ্বারা সচরাচর মানুষ বা বোঝাতে চায় সেটা না বুঝে আমি ঘুরিয়ে উত্তর দিতামঃ আমি ঢাকা থাকি, আমার জন্ম ঢাকায়। কিন্তু মানুষেরা আসলে লোক খুব খারাপ তারা এই ঘুরানো উত্তরে সন্তুষ্ট হতে চায়না। তারা আবার প্রশ্ন করে, 'না মানে তোমাদের দেশের বাড়ি কোথায়?'। তখন আর ঘুরানো প্যাঁচানোর উপায় থাকতো না। আমি বোকার মতো উত্তর দিতাম, 'নোয়াখালী'।
সময়ের সাথে ছোটবেলা বদলায়। আমিও বদলেছি। ভালোবাসার ঢাকা বদলেছে। শক্ত আর নরম কার্ডের মাঝে যে কোনো পার্থক্য নেই সে ধারণা বদলেছে, জন লেননের হাত ধরে বদলেছে রাষ্ট্র কিংবা দেশের ধারণা, বদলেছে 'ঢাকায় থাকি' ব্যাপারটার অনুভূতির তাপমাত্রাও। ঢাকা থেকে দূরে ছিলাম। ছয়বছর কলেজ জীবন আর চারবছরের বিশ্ববিদ্যালয়। জীবনের প্রায় বিশাল একটা সময়। গত দুইবছর আমি ব্যাক টু দ্য প্যাভিলিয়ন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কামলা খাঁটি, আর ঢাকা থাকি, ঢাকার রাস্তায় চলাচল করি।
মাস চারেক আগে ল্যাবে অ্যাড্রিয়ান নামে এক ব্রিটিশ প্রফেসর এসেছিলেন। রব্বানী স্যার আমাদের অন্যতম ফান্ডিং বডিদের কাছে এক্সটেনশনের এপ্লাই সংক্রান্ত কাজে সুইডেন। ল্যাবের প্রত্যেকে একদিন করে তাকে ডিনারে নিয়ে যাবে এমন একটা বন্দোবস্ত হলো।
আমি উনাকে নিয়ে গেলাম গুলশান দুই। সামদাদো নামক রেস্তোরাটার আমি খুব ফ্যান, যদিও ব্যক্তিজীবনে অত্যন্ত ক্ষ্যাত হওয়ায় আমি এখনও চপস্টিক দিয়ে বাদাম খেতে পারিনা। যাই হোক, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সন্ধ্যা সাতটায় রওনা দিলাম গুলশান দুই এর দিকে। ঘণ্টায় দুই কিলোমিটার বেগে সেখানে পৌঁছে তারপর আবার দুই কিলোমিটার বেগে রাত সাড়ে দশটায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরলাম। ফেরার পথে আন্ড্রিয়ান বলে, তোমরা সন্ধ্যা কাটাও কীভাবে? আমি জানালার কাঁচ দিয়ে বাইরে তিন নম্বর বাসের দিকে তাকাই, আর ভাবি, আসলেই তো, আমরা সন্ধ্যা কাটাই কীভাবে?
আমাদের কী সন্ধ্যা আছে? সপ্তাহান্ত আছে? বান্ধবীর কোলে মাথা রেখে নদীর পাড়ে আকাশের দিকে চেয়ে শুয়ে থাকা আছে? আমার আর স্যামের খুব প্রিয় একটা জায়গা ছিলো বাউনিয়া। মাথার উপর দিয়ে প্লেন উড়ে যেতো, আমরা হাত ধরে বসে থাকতাম। এক কী দেড় বছরের বিরতিতে সেদিন আবার গেলাম সেই প্রিয় জায়গায়। গিয়ে বুঝে গেলাম, মানুষজন চিনে ফেলেছে বাউনিয়া। যেমন করে তারা চিনে ফেলেছিলো বেড়িবাঁধ! ঢাকা শহরে মানুষজন সব চিনে ফেলেছে, এখানে একটুকু নিস্তব্ধতা নেই, চারপাশের আমরা মানুষেরা গিজ গিজ করছি, আমরা গিজ গিজ করে সবকিছু ভরিয়ে ফেলেছি।
এই সবের মাঝেও হয়তো একধরণের জীবনের সুর বেজে ওঠে। সে জীবন আমাকে টানেনা। আমি ঢাকাকে চোখে বুঝে সহ্য করি, সহ্য করি এর মোবাইলের বিজ্ঞাপনে মোড়া কদর্যরূপকে। সহ্য করি ঢাকার ধূলায় প্রতিনিয়ত ট্রিগার হওয়া মাইগ্রেন পেইনকে।
তাও ভালো যে, পুরো বছরটা এমন যায়না। ফেব্রুয়ারি এলে মনটা ভরে ওঠে। তখন ঢাকার প্রতি ভালোবাসা জাগে। ঢাকার গন্ধ তখন ভালো লাগে, 'ঢাকায় থাকি' বলে ভালো লাগে।
পরিকল্পনা করলাম এবার বইমেলা নিয়ে নিয়মিত ব্লগ লিখবো। প্রথম দিন মেলায় যাইনি। গতবারও না, তার আগের বার কিংবা তার আগেরবারও না। প্রথম দিনের মেলাটা লীগের লীগের লাগে। চারপাশের পুলিশ, র্যাব, মিছিল। ভালো লাগেনা। দ্বিতীয় দিন থেকে শুরু হলো আমার মেলা।
মেলার গেট খুলবে তিনটায়। চান্দিনা থেকে নব্বই কিলোমিটার বাইক উড়ায়ে দুপুরে ল্যান্ড করে ক্লান্ত দেহে ঘুমানোর জন্য গেলাম বুয়েটে সৌরভ দ্রিগ বন্ধুর রুমে। ঘুম থিকা উইঠা ওর সাথে যাবো মেলায়। কিন্তু মন একটু খচখচ করে। ক্যানো করে? শেষ দুইবছর মেলায় ঢুকেছি স্যামের সাথে। এইবার তিনি ভীষণ ব্যস্ত। ফেব্রুয়ারির বাইশ তারিখ তার ফাইনাল ইয়ার জুরি। বই মেলাকে কোরবানি করার মাধ্যমে অশেষ নেকি হাসিল করা ছাড়া আর কোনো উপায় ওর সামনে খোলা নাই। তয় মনে মনে তার জন্য একটা প্ল্যান কইরা রাখলাম।
স্যাম হোসেনের বদলে বন্ধু দ্রিগের সাথে বিকেল পাঁচটায় পুরি, মাংস খেয়ে বইমেলায় ঢুকলাম। মেলায় ঢোকার পথে নানা জাতের কারুকার্য। আমি শালা কী মাল, আমার পাশে হাঁটা দ্রিগ বন্ধু ও তার দল নাকি এইগুলা গত কয়েকদিন ধইরা বানাইছেন, ডিজাইন করছেন। বসদের সাথে চলাফেরা করি। তবে তিনি আমাকে ছবি তুলতে দেন নাই, তার কাছে মনে হয় এইগুলাকে 'আপ টু দ্য স্ট্যান্ডার্ড' লাগে নাই।
From Drop Box |
সচলায়তন এবং বই প্রকাশের সূত্রে গত কয়েকবছর শুদ্ধস্বর আমার বইমেলার সেইফ হোম। বরাবরের মতো প্রথমেই শুদ্ধস্বরে গেলাম। শুদ্ধস্বর এবার চমৎকার জায়গায় স্টল পেয়েছে, এবং এবার প্রথমবারের মতো তিন ইউনিট। স্টলের ডিজাইন করেছে বুয়েটের রাজীব, এবারও অতি মনোরম স্টল। স্টলের সামনে কালোমানিক টুটুল ভাই দাঁড়ানো।
: টুটুল ভাই, এবার তো সেইরকম জায়গায় স্টল। কতো কোটি কামাবেন বইলা মনে হয়?
আমি টুটুল ভাইকে জিজ্ঞেস করি। টুটুল ভাই কবি মানুষ, অল্পতেই দুঃখে ভারাক্রান্ত হয়ে যান। উনি বলেন, কমায়ে বলেন ক্যান ভাই, ফেসবুক স্ট্যাটাসে আরেকটু বাড়ায়ে বইলেন। তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে হয়তো মনে মনে একটা কবিতা লিখে ফেলেন, বোসন কণা বোঝো, প্রকাশকের দুঃখ বোঝোনা?
From Drop Box |
আমি আর দ্রিগ দুঃখ বুঝিনা। টুটুল ভাইকে পেছনে রেখে শুদ্ধস্বরের বইয়ের তাকে চোখ বুলাই। সাইফ ভাইয়ের 'অলখ আমেরিকা' চলে এসেছে। বইটার প্রকাশনার ম্যানেজমেন্টে জড়িত ছিলাম বিধায় প্রথমদিনই বইটা দেখে শান্তি লাগলো। চক্কর শুরু করার আগে বিড়ির তৃষ্ণা পায়। আমরা পুকুর পাড়ে বিড়ি খাইতে যাই। আমরা বিড়ি খাই আর ভাবি। বাংলা একাডেমির নতুন ভবনটার শিল্পগত মূল্যায়ন কেমন হওয়া উচিত সেটা ভাবি কিংবা পাশ দিয়ে মৃদুল আহমেদ ভাইয়ের হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যাবার কারণ ভাবি। বিড়ি খাওয়া শেষে চক্করে বের হই। বইমেলা ডিজাইনারদের একজন হওয়ায় দ্রিগ বইমেলার নাড়ি নক্ষত্র আগের কয়েক রাত ধরে চিনে রেখেছে। সে এই কারণে আমার সাথে প্রচণ্ড ভাব নিতে শুরু করে। আমি বইমেলার গলি ঘুপচিতে আউলায়ে যাই, এক জায়গায় এইমাত্র গিয়ে পরক্ষণেই আবার একই জায়গায় যাওয়া শুরু করি নতুন জায়গা ভেবে। দ্রিগ আমারে গাইলায়, আমারে নিয়া হাসে, মক করে। সে আমারে কয় আমি নাকি কিচ্ছু চিনিনা, এমনকি দুইবছর ঢাকা ভার্সিটিতে পইড়া বুয়েটের স্যাম হোসেনের সাথে প্রেম কইরা আমি এখনও নাকি বুয়েট থিকা কার্জন হল চিনিনা। সে ফর্সা আর আমি কালো বইলা সে আমারে নিয়া মক করে। এইসব ঠিক না, আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।
From Drop Box |
অলক আমেরিকা, অবিশ্বাসের দর্শন
মেলা থেকে অল্প স্বল্প বই কেনা শুরু করি। এতো তাড়াতাড়ি নতুন বই আসবেনা। হরিশংকর জলদাসের 'কৈবর্তকথা' র কথা অনেক শুনেছি, এবার কব্জা করলাম। দ্রিগ কিনলো মুক্তমনার সংকলন 'বিশ্বাস ও বিজ্ঞান'। আমারে উপহার দিলো গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস এর 'নিঃসঙ্গতার একশ বছর'। বইটা দেখতে চমৎকার, পড়তেও চমৎকার হবে নিশ্চিত। আমরা হেঁটে চললাম প্ল্যান বাস্তবায়নের পথে। ঐ যে উপরে বলে আসলাম, স্যামের জন্য করা একটা প্ল্যানের কথা।
From Drop Box |
বিশ্বাস ও বিজ্ঞান
গতবার আমরা দুইজন খুব সখ করেছিলাম ছফা সমগ্রটার জন্য। কিন্তু ভাগ্যের করাল গ্রাসে গতবার বোধহয় আমরা সাতাইশ টাকা একেবারে একসাথে চোখেই দেখিনাই। এইবার খান ব্রাদার্সের সামনে যেয়ে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ছফা সমগ্রের দাম কতো? ভয়ের কারণ আছে। বাসা থেকে মিরপুর এক নাম্বার রিকশা ভাড়া গত বছর এ সময় ছিলো দশ টাকা, এখন পঁচিশ। দোকানদার বললেন, এবার একটা বই বেশি আছে। সর্বমোট নয়টা বই। দাম সাতাইশ! বাহ! চমেৎকার। বগলদাবা করে ফেললাম। স্যাম হোসেন বইমেলাকে কোরবানী দেওয়ায় মহান ল্যাম্পপোস্ট খুশী হয়ে আজকে তার রুম বইয়ে ভরে দেবে, মহান ল্যাম্পপোস্ট সব জানেন, সব বুঝেন।
From Drop Box |
ছফা সমগ্রটা এমনেই রাখা ছিলো। কবিরা কী এইসব ঘটনারেই আইরনি উপাধি দেন না?
সমগ্রের বিশাল কার্টন কোলে করে আবার চক্কর দেওয়া শুরু করলাম। ব্যাগে ভরলেই হতো। কিন্তু কোলে করে মেলায় ঘুরতে অন্যরকম অনুভূতি। নিজেরে নজরুল ভাই মনে হয়। ঘুরতে ঘুরতে এবার মহান 'অন্যপ্রকাশ' এর সামনে আসলাম। অন্যপ্রকাশ এবার তাদের তাজমহল রূপ ত্যাগ করেছে। পাঠকরা 'অন্যপ্রকাশ' কে ত্যাগ করেন নি, করবেই বা ক্যানো?
From Drop Box |
প্রথমদিনের বই মেলা এইটুকুই। আজকের কয়েকটা ছবি আমার অছাম মোবাইলের ক্যামেরা দিয়ে তোলা, যদিও খুব একটা সুবিধার হয়নি। স্যাম হোসেন আমাকে আগামীকাল তার ক্যামেরা দিবেন, পরেরবার হয়তো আরেকটু পরিষ্কার ছবি দিতে পারবো। সুন্দরীদেরও
মন্তব্য
বইমেলা নিয়ে পোস্টের জন্য মনডা আকুলি বিকুলি করছিলো।
চমৎকার চমৎকার চমৎকার লাগলো।
আমারও বেড়ে ওঠা ঢাকা শহরে যদিও কয়েক বছর পরপর দেশে ফিরে আর সেই শহরটাকে চিনতে পারি না। তবুও ফেব্রুয়ারি এলেই মনটা ছটফট করে - বইমেলার জন্য।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
ধন্যবাদ তাসনীম ভাই
ইন্টারেস্টিং আলোচনা। বইমেলার আপডেট চাই প্রতিদিন। দুধের স্বাধ ঘোলেই মেটাই...
আপনি আমার লেখাকে ঘোল বললেন? আমার লেখানুভূতি আঘাত পেয়ে চুরমাচার হয়ে গেলো। এ আপনি কী বললেন মুর্শেদ ভাই, ক্যানো বললেন
darun likhchish....jhamelay achi...ebar jaowa hobe ki na janina...tor lekha theke dhure ashbo...
মাস শেষে আপনারে ঘোরানোর বিল পাঠায়ে দিমুনে
আহা বই মেলা আহা ঢাকা...
লেখা মজার হয়েছে!!! চলুক!
"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"
ধন্যবাদ *না
ব্লগ এমনই হয়.. সাধাসিধা ব্যস্ততাহীন। ঢিলে ভঙ্গিতে হেঁটে বেড়ানোর মতো। শুধু চোখ দিয়ে চাখা আর এখানে এসে বলে যাওয়া।
চলুক।
চালাইতে চাই
আমি আজকে আবার গিয়েছিলুম। পকেটে আর কিছু টাকা বাকি ছিলো, সেইটা মরহুম আজাদ সাহেবের স্মরণে উড়িয়ে দিলুম, আর দাঁত কিড়মিড় করতে করতে ধুধু পকেটে হেঁটে হেঁটে হলে ফিরলুম। তুই থাকলে আজকে আবার ধার নেওয়া যাইতো।
আজকে গিয়ে একটা ভালো জিনিস খেয়াল করলাম। মানুষজন কঠিইন সাজগোজ দিয়ে বইমেলাতে আসে। আমার মতো নির্লোভ মহাপুরুষেরও মাঝে মাঝে বেজায়গায় চোখ চলে যাচ্ছিলো। এবং তাতে খুব একটা মনক্ষুন্নও হই নাই!
সবার জন্য সতর্কবার্তা- হয়রানা বীর মোটা মানিব্যাগ নিয়ে এবারের বইমেলাকে টার্গেট করেছে। সে খাতির করে দাওয়াত দিয়ে বইমেলাতে নিয়ে গেলে খুশি হবেন না, সে সাতাইশশ' টাকার পাত্থরপ্রমাণ বইয়ের বোঝাটা আপনাকে দিয়ে বওয়াবে। সাধু সাবধান!! (হয়রানাবীরের ইজ্জতের লেহালুয়া ১.০ - চেক)
_____________________________________________________________________
বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।
বেজায়গায় খারাপ ছেলেরা চোখ দেয়।
ভালো লাগলো আপনার চোখে বইমেলা দেখা।
মানুষের মস্তিষ্কের কিছু ক্ষেত্রে ক্ষমতা দেখলে তাজ্জব হয়ে যেতে হয়। লেখা পড়ে অন্যের চোখ দিয়ে দেখা
ভালো লিখেছিস।
ধন্য
এইটাকে বলে ব্লগ। খাঁটি ব্লগ।
খুব ভালো লাগল রায়হান ভাই। আপনার সঙ্গে মেলা ঘুরলাম। তবে ভাবী সঙ্গে নাই বলে মন খারাপ লাগলো!
তয় শুদ্ধস্বরের স্টলে গুরুত্বপূর্ণ বই তো একটাও দেখলাম না
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
শুদ্ধস্বরে গতবছর প্রকাশিত এবার পেপারব্যাক সংস্করণ এইরকম একটা বই দেখলাম, পেছনে স্তূপ করে রাখা। সব বইই কয়েকটা করে কপি, শুধু এই বইটা স্তূপ। বোঝেন!
_____________________________________________________________________
বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।
রতনদা,
হে হে হে হে। আমি ভাবীরে সঙ্গে নিয়া ঘুরতে চাই। কবে হপে সে সুযোগ?
জীবাণু দেখলাম স্টলে
মন ছোঁয়া লেখা, প্রতিদিন পেলে কি দারুণই না হত !
facebook
স্যাম কি সেই বালিকা যাকে একদিন ইফতারের পরে দেখেছিলুম উত্তরা বিএফসি তে?
স্যাম ছাড়া তো এই কালো পোলার লগে কেউ থাকেনা
@অনু ভাই, আপনার মন্তব্য পাইলে তো আবেগে ইমোশনাল হয়ে যাই
ছফা সমগ্রের দুরবস্থা দেখে খুব দুঃখ লাগলো।
লিখায় পাঁচতারা
..................................................................
#Banshibir.
ধন্যবাদ সত্যপীর বাবা
রায়হান কাম হয়রান আবীর, এত স্বাদু ভাষায় আপনি লিখতে পারেন !
গতকাল ইতস্তত হাঁটাহাঁটির উদ্দেশ্যে রাস্তায় বেরিয়েছিলাম, একটু পর দেখি পা দুটো বিধাতার অমোঘ আদেশে যন্ত্রচালিতের মত বইমেলার দিকে ছুটেছে।
কিনবনা কিনবনা করেও কিনে ফেললাম দুটো বই। তাজউদ্দীন- নিঃসঙ্গ এক মুক্তিনায়কঃ ইমতিয়ার শামীম। তাজউদ্দীনের মেয়ের লিখা বইটা (নামটা সম্ভবত- বাবাকে যেমন দেখেছি) খুঁজে পেলাম না। আরেকটা সরদার ফজলুল করিমের 'সঙ্গ প্রসঙ্গের লিখা'।
আহমদ শরীফের একটা সমগ্র দেখলাম, দাম ছয়শ টাকা শুনে স্টলওলার দিকে তাকিয়ে শুষ্কং কাষ্ঠং করুণং হাসি দিলাম একটা।
জয়, বই দুটো আগাম নুকিং দিয়ে রাখলাম
-------------------------------------------------
ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
স্বাদু ভাষার স্বাদ ক্যামন?
ঢাকায় থাকি না- এ কারণে মাঝেমধ্যেই আমি নিজের ভাগ্যকে ধন্যবাদ দেই। তবে ফেব্রুয়ারী চলে এলেই মেজাজ সপ্তমে চড়ে যায়! সবাই প্রতিদিন বইমেলায় ঢু মারে আর আমি এতো দূর থেকে গিয়ে মাত্র ক'টা দিন থাকতে পারি।
_________________
[খোমাখাতা]
পার্থে আইসা একটা ধুলার কণাও দেখিনাই। ঢাকার রাস্তায় ১০ মিনিট হাটলে নব্য পলিশ করা কালো জুতো সাদা হয়ে যায়। গতকাল পথ হারায় দেড় ঘন্টা হেটে অফিস গেসি। আবার আসছি। জুতা যেরকম ছিলো সেরকমই আছে। রাস্তায় গাড়িই নাই জ্যামের তো প্রশ্নই আসেনা।
কিন্তু এখানে এসে এখন আমার ঢাকার জ্যামই ভাল্লাগে, ধুলা আরো বেশি ভাল্লাগে।
আহমদ ছফা সমগ্র দেইখা ব্যাপক মজা পাইলাম সবই উনার ইচ্ছা
তাড়াতাড়ি ধূলোর আখড়ায় চলে আয়
তুই জুতা পরস?
এইখানে ড্রেস কোডের মধ্যে একটাই আছে সেটা হল জুতা পড়তে হবে। অন্য সব অফিসে শার্টপ্যান্ট মাস্ট। এইখানে তাও টিশার্ট জিন্স পড়া যায়
মনে হলো সবই শ্যাম হোসেনের কৃপা।
সবার তো আর শ্যাম থেকেনা । তারা কূল নিয়েই ব্যস্ত।
স্যাম হোসেন কই থিকা কৃপা করলো। কৃপা তো করলো মহান ল্যাম্পপোস্ট।
আপনি ভাইয়া আইডিয়াল স্কুল কোন ব্যাচ? আমি এসএসসি '০৪। আমাদের সময় এমন কোন বৈষম্য ছিল না বলেই মনে পড়ে
মেলা প্রাঙ্গনে বিড়ি খাওয়া নিষেধ বলেই জানি।
আপনার লেখা বরাবরই চমৎকার হয়। প্রতিদিন বইমেলা নিয়ে লেখা চাই
-------------------------------------------------
ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
আইডিয়ালে আমি প্রথম শ্রেনীতে ঢুকেছি ১৯৯৩ সালে। ৯৯ তে চলে আসি হারমান মেইনারে।
মেলা প্রাঙ্গলে বিড়ি খাওয়া নিষেধ। পুকুর পাড়ের আড়ালে খাই, তাতে কী। মেলায় তো খাওয়া হইতেছে। আচ্ছা বিড়ি ক্যানো খাই। বিড়ি না খাইলে কী হয় ...
মাথা শর্ট সার্কিট হয়ে গেলো। পানি দিয়া আসি
১.
এই লেখাটা পড়লে বোঝা যায়, কেন বইমেলাকে প্রাণের মেলা বলে।
২.
আচ্ছা আগের বারের মত এইবার, কোনো 'থীম সং' নাই?
৩.
ভাবসিলাম মেলায় দেশে আসবো না। পয়সা বাঁচাবো। কিন্তু এমন লেখা দিলা। যাই টিকেট কাটি গিয়া...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
চইলা আসেন। আপনারে ছাড়া খালি খালি লাগে মিয়া।
বিরস ভার্সিটি, বেছে বেছে বছরের সবচেয়ে রঙিন মাসটাতেই পরীক্ষা ফালাইছে...
ছয়বছর আমিও ঢাকার বাইরে ছিলাম, এর মাঝে শুধু একবারই বইমেলার প্রথম দিনটা ধরতে পেরেছিলাম। কলেজ পাশ করে ব্যাক টু ঢাকা, এখন মশকরা করে বুড়োবিদ্যালয়। এই জীবনে একটা ফুরুফুরে বইমেলা যে কবে পাবো...
পাইতে হৈলে ফাল দিয়া ছোবল দিতে হবে
বইমেলা এখন একটা দীর্ঘশ্বাস, লেখেন প্রতিদিন বইমেলা নিয়ে
অ,ট, আচ্ছা আপনি আইডিয়াল কোন ব্যাচ?
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
আইডিয়ালে আমি প্রথম শ্রেনীতে ঢুকেছি ১৯৯৩ সালে। ৯৯ তে চলে আসি হারমান মেইনারে। তখন আইডিয়ালের পাশে সনিক্স নামে একটা ফাস্ট ফুড রেস্তোরা ছিলো
হা বইমেলা, হা সনিক্সের সেই দিনগুলি আপনি তাহলে সনিক্স খুব বড়বেলায় পাননি, সনিক্স এর আসল মজা মিস করেছেন [অ্যাকাডেমিক্যালি আমি আপনার দু'বছর অগ্রজ, ২০০১ এ এসএসসি দিয়েছি। সনিক্সের মজা পুরাদমে :D]
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
আর আমি ১৯৯০ এসএসসি ব্যাচ, আপনাদের থেকে দশ বছরের ছোট
আমি এই ব্লগের ছবিগুলো দেখতে পারছি না। ব্রাউজার (ক্রোম) কয়েকবার রিফ্রেশ করলাম, এমনকি একটা ছবি নতুন ট্যাবে খুললাম, তারপরও দেখতে পারছি না। বুঝলাম না ব্যাপারটা কি। অন্য ব্লগ, যেমন তারেক অণুর ব্লগের ছবি দেখতে সমস্যা হচ্ছে না।
বলেন কী! ছবিগুলো পিকাসা ওয়েব এলবামে আপলোড করা। এই লিংকটা একটু ট্রাই করবেন?
আরিব্বাস, আপনি তো ভয়ানক ভালো লেখেন। দাঁড়ান এইবার আপনার সব লেখা একটানে পড়ে ফেলতে হবে। দারুণ লাগলো। কিন্তু ছবি দেখতে পাচ্ছিনা কেনো ? আমার কি চোখের দোষ ?
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
প্রশংসা পেতে সবারই ভালো লাগে, আমিও সবাই
ছবি ছাড়া তো লেখাটা মাইর। এই লিংকে একটু ক্লিক করে দেখেন তো, কাজ হয় নাকি?
সাবাশ বেটা! অতিশয় উপাদেয় হইছে। রোজই যেন একটা করে পাই।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
রোজ একটা করে পাওয়ার স্বপ্ন সফল হোক। সোনার বাংলাদেশ জিন্দাবাদ
সুন্দরীদেরও
বই - বইমেলা - পাগলামি ......
ঢাকা বইমেলায় একবারতো যেতেই হবে ।
ডাকঘর | ছবিঘর
ফেব্রুয়ারি ঢাকার সুন্দরতম মাস, এই কথাটা আমিও বলে বেড়াই সবসময়। ফেব্রুয়ারি এলে মনটা ভরে ওঠার মূল কারণটা অবশ্যই বইমেলা। তবে আমি শীতের শেষ আর বসন্তের শুরুর এই আবহাওয়াটাও উপভোগ করি। গাছে-গাছে নতুন পাতার নতুন সবুজ, পয়লা ফাগুনের হলুদ-কমলা, একুশের লাল... এই রংগুলা, ঘটনাগুলাও ফেব্রুয়ারির অভিজ্ঞতার অংশ হয়ে থাকে। একেবারে যাকে বলে “বর্ণে-গন্ধে-ছন্দে-গীতিতে...মাধুরী এবং মদিরা দুটারই টানে...”...ফেব্রুয়ারি আমার খুব পছন্দের মাস। আপনার কথা সত্য, ছোটবেলায় এই শহরে ঝড়ে গাছ পড়ে যেতে দেখতাম, অনেকদিন হয় শুধুই বিলবোর্ড পড়ে যেতে দেখি। তবে এই বর্ণ-গন্ধের ব্যাপারটা এখনো কিন্তু টের পাবেন খেয়াল করলে। আমার ঢাকাবাসী বন্ধুরা অধিকাংশই ছাতিম ফুলের গন্ধ চিনেনা, আবার যারা চিনে তারা কিন্তু বলে দিতে পারে যাতায়াতের পথে কোথায় কোথায় ছাতিম গাছ পড়ে, ওই মাতাল করা গন্ধটা এড়িয়ে যাবার কোন উপায় থাকেনা তাদের।
এক কথা বলতে যেয়ে আরেক কথা বলে ফেললাম…... এই যে আপনি বইমেলার জোরে ঢাকা সুন্দর হয়ে ওঠার কথাটা বললেন, এই কথাটা খুব দারুন ভালো লাগলো। একটা শহর একটা অভিজ্ঞতা। যেকোন জায়গা বা যেকোন পরিসর (space) আমাদের কাছে স্থান (place) হয়ে উঠে ওই অভিজ্ঞতা বা ঘটনার জোরেই (place দেখবেন তাই একটা ক্রিয়াপদও বটে।)। ঢাকাকে (অন্তত মধ্যবিত্তের ঢাকাকে) যেই ঘটনা বা অভিজ্ঞতাগুলা ঢাকা করে তোলে বইমেলা সম্ভবত তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।
কখনও কখনও দেখবেন এমন মনে হয় যে, ট্রাভেলএন্ডলিভিং-এর একটা ভ্রমণ-ডকুমেন্টারি থেকে, অনেক গুণী লেখকের লেখা কোন বিস্তারিত ট্রাভেল-নোটের থেকে... ওরহান পামুকের গল্পে ইস্তাম্বুল বা উডি এলানের চলচ্চিত্রে নিউইয়র্ককে একটু যেন বেশিই দেখা যায়, চেনা যায়। শহর ব্যাপারটাই হয়তো এরকম, তাসনীম ভাই এর ‘স্মৃতির শহর’ এর মত, স্মৃতি বা অভিজ্ঞতার গল্প দিয়েই শহরের ছবি সবথেকে চমৎকার করে আঁকা যায়।
তবে এক বইমেলাতেই যার ঢাকায় থাকার অভিজ্ঞতাটা মধুর হয়ে উঠতে পারে, তাকে বাকিটা বছর চোখ-মুখ বুজে ঢাকাকে সহ্য করে নিতে হয়, আর কোন আনন্দময় অভিজ্ঞতা এই শহরে তার জন্য বরাদ্দ থাকেনা, এই ব্যাপারটা কতটা দুঃখজনক ভেবে দেখছেন! এই কথাটাও ওই ওরহান পামুকের ... “To be unhappy is to hate oneself and one’s city.”
খুব খুব ভালো লাগলো লেখাটা।
আপনার মন্তব্যও খুব খুব ভালো লাগলো
খুব ভাল লাগল...
এই পর্বটা অতিরিক্ত অসাধারণ লিখছস।
নতুন মন্তব্য করুন