ফরেন থেকে ...

রায়হান আবীর এর ছবি
লিখেছেন রায়হান আবীর (তারিখ: সোম, ২৪/০৬/২০১৩ - ৯:৪০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ডিসেম্বরের সাতাশ তারিখ দুই সুটকেসে জীবনটাকে ভরে সামিয়া উঠে পড়লো ভাড়া করা সাদা রঙের টয়োটা গাড়িটায়। আগে এই ধরনের রজনীগন্ধা সজ্জিত গাড়ি রাস্তায় চলতে দেখতাম, আর এবার গাড়ির ভেতর থেকে দেখলাম রাস্তাটাকে। সেই রাস্তাটা, রাস্তাগুলোকে পার করে একসময় চলে আসলাম মিরপুরের এক চিপায় তুরাগ নদীর পাড়ের এক বাড়িতে, যে বাড়িটা আমার মা-বাবা বানিয়েছিলেন তাদের জীবনীশক্তি নিঃশেষ করে দিয়ে। ডিসেম্বরের সাতাশ তারিখ মধ্যরাত থেকে সেই ছোট বাড়ির ছোট এক ফ্ল্যাটে শুরু হলো আমার আর সামিয়ার সংসার। যে সংসারে আমাদের প্রতিদিনের জন্য বরাদ্দ তিন বালতি পানি। সকাল সাতটায় উঠে সেই পানি ধরতে হয়, সারাদিন আর পানির দেখা মেলে না, মেলে আবার পরের দিন ভোরে। ভাগ্য ভালো থাকলে সে পানি হয় সত্যিকারের পানির মতো, অন্যান্য দিন ঘোলা কিংবা আমার গায়ের রঙের মতো।

বিয়ে উপলক্ষে উপহার পেয়েছিলাম মাইক্রো-ল্যাবের একটা ছোট স্পিকার। সেই ছোট স্পিকারে রাহিন ভাইয়ের বাঁশি আর আনন্দ ভাইয়ের কণ্ঠের শঙ্খ শুনে ঠিকই আমরা বেঁচে থাকা শুরু করেছিলাম, বেঁচে থাকা শুরু করেছিলাম বুক ভরা আনন্দ নিয়ে। একটা মাস পার করে আমরা চলে এলাম ফেব্রুয়ারিতে, আমাদের প্রিয় ফেব্রুয়ারিতে। ফেব্রুয়ারির শুরুতেই দুর্দান্ত এক ব্যাপার ঘটে গেলো, জয় আমাকে চেনালো সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে লুকিয়ে থাকা মুক্ত মঞ্চ। সে মঞ্চে বিকালের পর সবাই আসে মুক্ত হতে, কেউ গিটার হাতে, কেউ তাস নিয়ে, কেউ বা শুধুই ঘাস পাতা নিয়ে। ফেব্রুয়ারির চার তারিখে সন্ধ্যায় ডান পাশে বইমেলা রেখে বাম পাশের মুক্ত মঞ্চ পরিষ্কারে ঝাড়ু হাতে নেমে পড়লাম সামিয়া, জয়, সাফি, জারিফ, সুইডেনের এরিকা ও অন্যান্যদের সাথে। শতবছরের পড়ে থাকা আবর্জনা আমরা ঝাড়ু হাতে এক পাশে সরাতে থাকলাম। এরিকার হাতে ঝাড়ু ছিলো না সেদিন, সে তাই হাত দিয়ে সেই ময়লা ঢোকাতে থাকলো বস্তায়। একটা সময় পর আমাদের মুক্ত মঞ্চ পরিষ্কার হয়ে গেলো, গিটার হাতে ততক্ষণে চলে এসেছে ফরহাদ। পরিষ্কার সেই মুক্ত মঞ্চে মুক্ত হয়ে যখন আমরা ফরহাদের কণ্ঠে শুনতে থাকলাম মহীনের ঘোড়াগুলি, তখন তিন বালতির কথা ভুলে গিয়ে আমরা স্বীকার করে নিতে বাধ্য হলাম জীবনানন্দময়। এরপর আমরা দলবেঁধে গেলাম বইমেলাতে, প্রাণের মেলাতে। মুক্ত মঞ্চে থাকতেই টুটুল ভাইয়ের ক্ষুদে বার্তা পেয়েছিলাম, মেলায় চলে এসেছে 'মানুষিকতা'- আমার প্রথম আস্ত বই। সামিয়া সবাইকে সরিয়ে দিয়ে প্রথম বইটা কিনলো, তারপর জয়, জারিফ, লীনা। ঠিক যেমন হবার কথা ছিলো ফেব্রুয়ারির, তেমনই হচ্ছিলো সবকিছু।

কিন্তু এখানেই ফেব্রুয়ারি থেমে গেলো না। পরের দিন জন্ম নিলো শাহবাগ, আমাদের সবাইকে সে এক নিমেষে গ্রাস করে নিলো। সকালে বিশ্ববিদ্যালয় আসা, চা খাওয়া, বিড়ি খাওয়া, বিকাল না হতেই ছবির হাট পেরিয়ে শাহবাগ। সামিয়া চলে আসে অফিস থেকে এমনকি তৌহিদও তার ভুড়িটা দোলাতে দোলাতে হাজির হয় নিয়ম করে। তারপর টিএসএসি থেকে জাদুঘর পর্যন্ত ক্রমাগত হাঁটাহাঁটি, পথে মধ্যে পাওয়া চিংড়ি বড়া, ঝালমুড়ি সহ যাবতীয় যা পছন্দ হয় তা ভক্ষণ, রাতকে গভীর করা এবং এক সময় আবার সেই তিন বালতির কাছে ফিরে আসা। তরুণ প্রজন্ম যখন একাত্ম যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবীতে তখন অনেকেই বলা শুরু করলেন দেশে তেল নাই, গেস, নাই, বিদ্যুৎ নাই। আমার আর সামিয়ারও কিছু ছিলো না, কিন্তু আমরা সে কথা বলতে পারি না। আমরা বিচার চাই, বিচার চাই আমাদের দেশটাকে যারা ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলো তাদের, আমার দেশের মানুষকে যারা হত্যা করেছিলো তাদের, যারা ধর্ষণ করেছিলো আমার দেশকে, আমরা তাদের বিচার চাই।

হাজার হাজার, কখনও লাখ লাখ মানুষ মিলে আমরা শাহবাগকে আগলে ধরে রাখলাম। নিলয় এরমধ্যে গঠন করলো 'শহীদ রুমী স্কোয়াড'- উদ্দেশ্য শহীদ জননীকে গণজাগরণের কেন্দ্রবিন্দুতে প্রতিস্থাপন করা। চারুকলার ছাদকে সাক্ষী রেখে শুরু হলো কাজ। জননীর ছবি আঁকা শেষে সেটাকে প্রতিস্থাপনের চ্যালেঞ্জ। 'আর্কিটেকচার' সামিয়া সহ আরও অনেকে উপায় খোঁজে। সেই উপায় খোঁজার দলে থাকে রাজীব ভাই, আমাদের থাবা বাবা। রাজীব ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয় আরও হয়তো বছর খানেক আগে কোনো এক আড্ডায়। নিয়মিত দেখা হওয়া শুরু শাহবাগ আন্দোলনের সময় থেকে। সোনালী ফ্রেমের চশমা, উশকো খুশকো চুল নিয়ে রাজীব ভাই শাহবাগেই থাকতেন, কখনও চটপটির দোকানে বিপ্লব ভাইয়ের সাথে, কখনও একা। একদিনের কথা মনে পড়ে। শাহবাগের প্রথম সপ্তাহেই- পরিচিত এক জটলায় আলাপ হচ্ছিলো একটা গ্রুপ নাকি গঠিত হয়েছে যারা মগবাজারে জামাতের কার্যালয় ঘেরাও করবে, আরও অনেক কিছুই করবে, তারা সুইসাইড স্কোয়াড। সেই আলাপে রাজীব ভাই সবাইকে বোঝাচ্ছিলেন, এমন সহিংস আন্দোলনে না যেতে, সহিংস আন্দোলন কখনই ভালো কিছু বয়ে আনবে না।

দিন রাত শাহবাগ শাহবাগ করে, প্রতিদিন গভীর রাতে বাসায় ফিরে যখন আমরা একটু ক্লান্ত সে সময় হুট করেই পরিকল্পনা হলো সুন্দরবন দেখার। আমি কখনও সুন্দরবন দেখি নাই। ফেব্রুয়ারির তেরো তারিখে শাহবাগে শহীদ জননী জাহানারা ইমামকে রেখে আমরা ছুটলাম এয়ারপোর্ট রেল স্টেশনের দিকে- খুলনা যাবার ট্রেন ধরতে। আমি, সামিয়া, জামান, আমিন ভাই, তানভীর ভাই, ইমতিয়াজ, লাজিমা, নিলয়, এরিকা এবং নিলয় যাতে এরিকার সাথে নজিরবিহীন বেলেল্লাপনা করতে না পারে তাই তার মা।

পনেরো তারিখ রাতে যখন আমরা রাত দুইটায় মাথায় উপর লক্ষ-কোটি তারা নিয়ে শুয়েছিলাম লঞ্চের ছাদে, দুইপাশে সুন্দরবনকে রেখে ঠিক তখন জানতে পারলাম রাজীব ভাইকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। রাজীব ভাই মরে গেছে, নিথর হয়ে পড়ে আছে পলাশ নগরের সেই রাস্তায়, যেই রাস্তা দিয়ে দুপুরেই তিনি যখন হেঁটেছিলেন তখন ছিলেন জীবিত, ছিলেন স্বপ্নবাজ এক তরুণ। আনন্দময় সেই রাত রূপ নিলো গভীর বিষাদে, সামিয়ার সারা রাত কান্না, আমাদের সবার হতভম্বতা। ঢাকায় ফিরে শাহবাগে আর রাজীব ভাইকে দেখবো না।

প্রথম সপ্তায় শাহবাগ সবাইকে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো। ফেসবুকের আরিফ আর হোসাইনের মতো ছুপা ছাগুরাও বাধ্য হয়েছিলো শাহবাগ সম্পর্কিত কিছু একটা লিখে, শেয়ার করে নিজেকে জাতে উঠাতে, রাজীব ভাইয়ের মৃত্যুর পর সে স্রোত কমে গেলো, আলোচনায় চলে আসলো মাহমুদুর রহমান, বাঁশের কেল্লা, হেফাজত এবং সেই চিরায়ত আস্তিকতা, নাস্তিকতা। রাজীব ভাই নাস্তিক হওয়া না হওয়ার সাথে শাহবাগের আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক ছিলো না, এ আন্দোলন হায়েনাদের হাত থেকে দেশকে বাঁচানোর আন্দোলন ছিলো- যাদের কোনো ধর্ম নেই, যারা স্বার্থান্বেষী শয়তান, ঈশ্বরের নাম ভাঙ্গিয়ে যারা সকল ধরনের খারাপ কাজ করতে পারে, যারা আর যাই হোক, মানুষের মঙ্গল চায় না কখনও। অথচ এই কথাগুলো স্পষ্টভাবে না বলে শাহবাগও টুপি পরে ফেললো নিরাপদে। ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের মতো প্রাণের দাবীকে সঙ্গোপনে সরিয়ে ফেলা হলো। রাজীব ভাইয়ের লেখাগুলো তার নিজের নয় এই প্রোপাগান্ডা চালানো হলো কিছুদিন তাকে নিরপরাধ বানাবার খায়েশে, মৃত্যুর পর তাকে আবার মুসলমানি করানো হলো। রাজীব ভাই যা লিখেছিলেন, সেটা লেখা তার অধিকার, সেটা কোনোভাবেই কোনো অপরাধ নয়, অথচ তাকে নিরপরাধী হিসেবে দেখাতে আমরা তাকে মুসলমান বানালাম, আমরা ভুলে গেলাম বাক-স্বাধীনতার কথা, আমরা ভুলে গেলাম যেমন ইচ্ছা, যা ইচ্ছে তাই লেখার আমাদের কবিতার খাতার কথা।

তারপরও রয়ে গেলাম শাহবাগে। আর কিই বা ছিলো আমাদের? তেলে, গেস, পানি না থাকলেও আমাদের শাহবাগ ছিলো, একবুক হতাশার মাঝে একটুখানি আলো ছিলো। কিন্তু যাবতীয় জরা-জীর্ণতা-হিপোক্রেসিকে গ্রাস করার বদলে একসময় আমরাই গ্রাস হয়ে গেলাম হিপোক্রেটদের দ্বারা, একটু একটু করে। টুপি পরেও বাঁচতে পারলো না শাহবাগ। আরিফ আর হোসাইন ও তার বন্ধুরা মাথা উঁচু করে দাঁড়ালো বাঁশেরকেল্লাকে পেয়ে। তেল, গেসের পর শাহবাগে তাদের কাছে নতুন এক সমস্যা দেখা দিলো। শাহবাগ ভালো না, ওখানে 'ড্রাগস' হয়, 'রেপ' হয়।

নানা ঘটনা বুকে বেঁধে চলতে চলতে একসময় আমার দেশ ছাড়ার সময় এসে গেলো, সময়টা যেনো ঠিকই ছিলো, আর নিতে পারছিলাম না। নেহাতই ভালো টাইমিং, পরিকল্পনা আরও অনেক আগের। যদিও আমার মাঝারি ফুফু, আমার বিবাহের আগে যিনি আমার হবু শ্বাশুড়িকে ফোন করে জানিয়েছিলেন, আমি নাষ্ঠিক বোগার, বাড়িহীন, গাড়িহীন বেকার যুবক তিনি পারিবারিক সম্মেলনে জানালেন আমি জার্মানি পালিয়েছি। আপনারা যারা নাষ্ঠিক বোগার আছেন, তারাও আমার মতো প্লেনের চাক্কা ধরে এইভাবে জার্মানি পালিয়ে আসতে পারেন, আর পাকিস্তানের উপর দিয়ে যখন যাবেন তখন চরম উদাস দা যা বলছে তা কইরা ফেলবেন, লারে লাপ্পা। যাইহোক, পরিকল্পনা ছিলো এপ্রিলে জার্মানিতে বায়োইম্পিডেন্সের এ বছরের কনফারেন্সে পেপার উপস্থাপন করবো, তারপর সেখান থেকে যাবো নরওয়ে, অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে। যাবো প্ল্যানেট ডিজাইনার স্লার্টিবার্টফাস্টের পুরস্কার জেতা ফিওর্ডগুলোর কাছে। সেখানে শুয়ে শুয়ে আরেকবার দ্য হিচ হাইকার্স গাইড টু দ্য গ্যালাক্সি পড়বো, অথবা হেডফোনে শুনবো ডগলাস অ্যাডামসের কণ্ঠ। ফিওর্ডকে সাথে করে এক রাত হয়তো কাটানো সম্ভব, সম্ভব সাত রাত কাটানো কিন্তু থাকার জন্য বাসা তো দরকার। সেই বাসা পেতে বাঁধলো বিপত্তি। অসলোতে ফ্যামিলি বাসা পাওয়া নিতান্তই চাঁদের বুকে সাঈদীকে দেখার মতো অলৌকিক ব্যাপার, যা পাওয়া যায় মাসিক ভাড়ায় সেটা চাঁদের সমান উঁচু। তড়িঘড়ি করেই, অসলো যাবার পরিকল্পনা বাদ দিলাম, সিদ্ধান্ত নিলাম থেকে যাবো জার্মানিতেই। যেই ইন্সটিটিউট এবারের কনফারেন্স হোস্ট করছে তাদের সাথে কথা বললাম, সুপারভাইজার রাজি হলো এবং বাসা পাওয়া সমস্যা হবে না, এমন জানালো।

আবারও সেই ভিসা। দুই বছর আগে স্পেনে কনফারেন্স উপলক্ষে যাবার কথা ছিলো, ভিসা পেতে দেরি হওয়ায় যেতে পারি নি। আমি এমন মানুষ, পর পর দুদুবার ভারতের ভিসার আবেদন নাকচ হবারও অভিজ্ঞতা আছে। এবার তাই একটু আগে ভাগেই আবেদন করলাম জার্মান দূতাবাসে, আমি এবং সামিয়া। শুরু হলো অপেক্ষার পালা। মাস পেরিয়ে একসময় উনিশে এপ্রিল চলে এলো, ভিসার সিদ্ধান্ত তখনও পেন্ডিং। স্যারের ভিসা হয়ে গেছে, আমার সাথে আরেক আপু ছিলেন কনফারেন্সের সঙ্গী, তার ভিসা নাকচ, আমি পেন্ডিং। ধরেই নিলাম কনফারেন্স মিস। স্যার চলে গেলেন আমাদের রেখে। উনিশে এপ্রিল দিনটা ছিলো শুক্রবার, রাতে ফ্লাইট, দুপুরের দিকে ভিসা না পাবার বেদনা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি এমন সময় ইমেইল পেলাম জার্মান সুপারভাইজারের কাছ থেকে। উনি ইমিগ্রেশন অফিসে ফোন দিয়েছেন, আর তাতেই কাজ হয়েছে। মেইল করে জানালেন, একটু পরেই আমি ভিসা পাবো। কিন্তু সেদিন পবিত্র দিন, অপবিত্র জার্মানি সেদিন খোলা থাকলেও বাংলাদেশ বন্ধ। তাই ভিসার জন্য অপেক্ষা করতে হবে রবিবার পর্যন্ত। তাও নিশ্চিত নই, আদৌ রবিবারে পাবো কিনা। সংশয় নিয়েই টিকেট পরিবর্তন করলাম রবিবার রাতে, সামিয়াকে আপাতত রেখে যাবার সিদ্ধান্ত নিতে হলো- এক সপ্তাহ পরে আসবে ও। শনিবারে দূতাবাস থেকে ফোন পেলাম ভিসা হয়ে গেছে, রবিবারে সত্যিই ভিসা পাচ্ছি। কিচ্ছু গোছানো হয় নি, সামিয়া দ্রুত সব কিছু সুটকেস বন্দী করতে শুরু করলো, এবং সুটকেস গোছানো শেষ হতে হতেই রবিবার সন্ধ্যায় এমিরেটস এ চেপে বসলাম। এমিরেটস এ দুবাই হয়ে ফ্রাঙ্কফুর্ট। তারপর যেতে হবে গোটিংগেন হয়ে হাইলিঙ্গেনস্ট্যাড নামের ছোট এক শহরে।

সোমবার সকাল নয়টায় ফ্রাঙ্কফুর্ট পৌঁছলাম, এবার ট্রেন। প্রথমে এয়ারপোর্ট ট্রেন স্টেশন থেকে, ফ্রাঙ্কফুর্ট এর প্রধান স্টেশনে। সেখান থেকে ট্রেনে গোটিংগেন, গোটিংগেন থেকে আরেক ট্রেনে আইচেনবার্গ, আইচেনবার্গ থেকে হাইলিঙ্গেনস্ট্যাড। ফ্রাঙ্কফুর্ট স্টেশনে এসে ট্রেনের টিকেট কাটবো। গোটিংগেনের G, লেখার পর O দিলাম কিন্তু বিধি বাম, গোটিংগেন আর আসে না। বঙ্গদেশি খেতটাকে বাঁচাতে এবার এক ভদ্রলোকের আবির্ভাব, G এর পর দুই নকতাওয়ালা O লিখে এবার তিনি ঠিকঠাক গোটিংগেন নিয়ে এসে আমাকে টিকেট কেটে দিলেন। হাইলিঙ্গেনস্ট্যাড যখন পৌঁছলাম তখন প্রায় বিকাল তিনটা। কনফারেন্সে আসা হচ্ছে না বিধায় আগে থেকে বুকিং দিয়ে রাখা হোটেল রুম বাতিল করা হয়েছিলো, শেষ সময়ে আবার আসার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর আর রুম খালি পাওয়া যায় নি। থাকবো তাই রাব্বানী স্যারের সাথে এক রুমে। সেই রুমে ব্যাগ রেখে রওনা দিলাম কনফারেন্সের উদ্দেশ্যে। পাঁচ মিনিটের হাঁটার রাস্তা পার হলাম ট্যাক্সি করে, বঙ্গদেশি খেত বলে কথা। ট্যাক্সি থেকে নেমে কনফারেন্সের হলে দিকে যাচ্ছি, বাইরে দেখলাম এক লম্বুকে, আমার নরওয়েজিয়ান বন্ধু, এক মনিটর দূরত্বে থেকে যার সাথে প্রায় বছর খানেক কাজ করছি সেই ফ্রেড। আমি প্রথম দেখায় চিনতে না পারলেও ও ঠিকই চিনে ফেললো। আবীর! চইলা আসতে পারলা তাইলে। ওয়েলকাম টু জার্মানি!

ততক্ষণে প্রথমদিনের সকল প্রেজেন্টেশন শেষ, আছে বাকি বিয়ার সেমিনার। শুরু হলো জার্মান জীবন! প্রোস্ট!


মন্তব্য

নীলকান্ত এর ছবি

ফরেনার ভাই হাসি
এইটা যে কতবার হইছে, যেইখানেই যাই মনে হয় প্লেন নয় ট্রেন মিস হইবো। পরে ট্যাক্সি নিয়া দেখি, ২ মিনিটে নামায়া দেয়, ৫-১০ মিনিট হাঁটা। বংদেশি খেত বইলা কথা। মন খারাপ


অলস সময়

রায়হান আবীর এর ছবি

দেঁতো হাসি

উদ্ভ্রান্ত পথিক এর ছবি

যাবো প্ল্যানেট ডিজাইনার স্লার্টিবার্টফাস্টের পুরস্কার জেতা ফিওর্ডগুলোর কাছে।

কইসসা মাইনাস রেগে টং

---------------------
আমার ফ্লিকার

রায়হান আবীর এর ছবি

এখনও যাইতে পারি নাই, তবে এনশাল্লাহ যাবোই যাবো দেঁতো হাসি

উদ্ভ্রান্ত পথিক এর ছবি

দুজকেও তুর জায়গা হবে নারে মমিন শয়তানী হাসি

---------------------
আমার ফ্লিকার

রণদীপম বসু এর ছবি

শেকড় ডুবিয়ে যতোই গভীরে যাই, তবু দেখি ছিন্নমূল আমার আবাস !

কী আর বলবো রায়হান, ভালো থাকেন। এটুকুই তো বলতে পারি !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

রায়হান আবীর এর ছবি

ধন্যবাদ রণদা হাসি

মনি শামিম এর ছবি

শেষ লিখেছিলেন গত বছরের একত্রিশে মে। আজ ২০১৩ সালের ২৬ শে জুন। এত দেরী করে লেখা দিলে তো মুশকিল। পাঠকদেরও তো কিছু চাওয়া পাওয়ার হিসেব নিকেষ থাকে। নয়কি? এবার কি আবার স্বাগতম বলে খানিক লজ্জা দিতে হবে?

রায়হান আবীর এর ছবি

নিজে নিজে চড় খেলাম দেঁতো হাসি

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

অ-জীবিত জীবনে প্রথমবার বোল্গ দিয়া ইন্টারনেট চালাইলি মনে হয় চিন্তিত

রায়হান আবীর এর ছবি

সহমত! দেঁতো হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনাদের পরম সৌভাগ‌্য রাজীব-এর মত একজন মানুষকে অত কাছে পেয়েছিলেন। তার শরীরটা ধ্বংস করা বাঙালীর চিরাচরিত আত্মঘাতের আরো একটি উদাহরণ। কিন্তু রাজীবদের শেষ করা যায় না।
দেশকে হৃদয়ে রেখে আপনার বিদেশ বাস সফল হোক। এই রকম চমৎকার আরো অনেক লেখার আশায় থাকলাম।
- একলহমা

রায়হান আবীর এর ছবি

একেবারে চলে আসিনি অবশ্য, ফিরছি কয়েক মাস পরেই!

চরম উদাস এর ছবি

চলুক
পরেনে স্বাগতম।
প্রথম কয়েক প্যারাতে শাহাবাগ এর ফ্ল্যাশব্যাক দেখতে পেলাম। এর চেয়ে সোজাসাপ্টাভাবে মনে হয় না আর বলা যেত কিছু। খালি দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবি, শালার লাইপ ইজ এ Game of throne ...

রায়হান আবীর এর ছবি

আসলেই! লাস্ট দুইটা পর্ব দেইখা মনে হইলো, শালা লাইফটাই এইরাম মন খারাপ

অনেক কথাই লেখা যাইতো, কিন্তু মনের মধ্যে হাজার কথা তাই মনে হয় লিখতে বসলে আজীবন লেইখাই যাইতে হবে, তারচেয়ে একটু জিরায়া নেই। এই করতে করতে পাহাড় হয়ে যায় পর্বত ...

অতিথি লেখক এর ছবি

হ, পুরাই একমত।
- একলহমা

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

কালা(তো ভাই)রে কৈরো মানা, সে যেন আর জার্মান যায় না দেঁতো হাসি

রায়হান আবীর এর ছবি

দেঁতো হাসি

বেচারাথেরিয়াম এর ছবি

হিটলুনানার দ্যাশে স্বাগুতম, বেড়াইয়া যাইয়েন।

রায়হান আবীর এর ছবি

বেচারাথেরিয়াম, দাওয়াত দিলেন কিন্তু রাস্তা দেখাইলেন না? মন খারাপ

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক ,আপনার লেখা পড়ে শাহবাগ নিয়ে আবার নতুন করে কষ্ট লাগলো মন খারাপ

রায়হান আবীর এর ছবি

গেম অফ থ্রনস!

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আছে বাকি বিয়ার সেমিনার

এই সেমিনারে কী হয়?

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

তিথীডোর এর ছবি

টেডিবিয়ার গিফট করে মনে হয়। খাইছে

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

রায়হান আবীর এর ছবি

খাইছে

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

অনেকদিন পর লিখলা। বৈদেশ জীবন আনন্দময় হোক। ইচ্ছামতো ঘোরাঘুরি করো, নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করো। এবং মাঝেমাঝে ভুল করে সেগুলা পোস্ট করে ফেলো এইখানে। হাসি

স্পর্শ এর ছবি

একই কথা আমারো।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

রায়হান আবীর এর ছবি

আপনাদের দুইজনের মন্তব্য পাইয়া আবেগে ইমোশোনাল হাসি

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

হায়রে শঙ্খ! খাইছে

সাবধানে থাক, আর বস্তা ভর্তি টেডিবিয়ার নিয়া তাত্তাড়ি ফেরত আয় ভাই!

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

রায়হান আবীর এর ছবি

ঢাকাতেই কতো পাওয়া যায় টেডিবিয়ার দেঁতো হাসি

guest_writer এর ছবি

ঝরঝর করে পড়লাম।
আপনার জন্য শুভকামনা। ভালো থাকবেন।

-কামরুজ্জামান পলাশ
(রাত-প্রহরী)

রায়হান আবীর এর ছবি

ধন্যবাদ কামরুজ্জামান পলাশ হাসি

আশালতা এর ছবি

কি দারুণ করে লেখা! চলুক

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

রায়হান আবীর এর ছবি

হাসি

নজমুল আলবাব এর ছবি

সবাই চলে যায়...

আরামদায়ক লেখা। আরও বেশি বেশি বৈদেশী লেখা পড়তে চাই।

রায়হান আবীর এর ছবি

হাসি

বাপ্পীহায়াত এর ছবি

বহুতদিল পরে লিখলেন - আপনার লিখার স্টাইলটা খুব ভাল লাগে তাই আশা করি নিয়মিত হবেন
প্রবাশ জীবন সুখের হোক!

পুন্শচ: হাল সিটি মাল সিটি তো আবারও প্রিমিয়ারে প্রমোশন পাইছে, এবার আপনাদের গুনার্স থুক্কু গানার্সরে কে বাঁচাবে দেঁতো হাসি

রায়হান আবীর এর ছবি

বাপ্রে। কী লেখা খুঁইড়া বাইর করলেন, ভুইলাই তো গেছিলাম। ডর্টমুন্ডের খেলা দেখার ইচ্ছা আছে এই সিজনে আপাতত সেই স্বপ্নে বিভোর দেঁতো হাসি

স্যাম এর ছবি

চলুক চলুক

রায়হান আবীর এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

তারেক অণু এর ছবি

ছন্দময় লেখা, রাজীব ভাইয়ের হত্যার জায়গাটুকু ছাড়া খুব ভাল লেগেছে, =একেবারে তরতর

রায়হান আবীর এর ছবি

হাসি

শাফায়েত এর ছবি

শুনলাম আপনি আর সামিয়া আপু নাকি ধুমায় জার্মান ঘুরে ফেবুতে ছবি পোস্ট করতেসেন! শাহবাগের কথা মনে পড়লো, এটা এখন একরাশ হতাশা ছাড়া কিছু না, কত আশা নিয়ে সকাল থেকে ওখানে পড়ে থাকতাম আর কি পেলাম? আমাদের উপর "ডিভাইড এন্ড কোনকোয়ার" অ্যালগোরিদম চালিয়ে হাজার ভাগে ভাগ করে ফেলা হয়েছে চোখের পলকে।

রায়হান আবীর এর ছবি

শোনা কথায় কান দিতে নাই। মোটে তো দুইটা ছবি আপলোড করলাম দেঁতো হাসি

ফাহিম হাসান এর ছবি

জার্মানি ভ্রমণ শুভ হোক, বাভারিয়ান বিয়ারে চুমুক দেওয়ার সময় আমাদের ইয়াদ করেন।

রায়হান আবীর এর ছবি

ব্যামবার্গ এ যেয়ে বাভারিয়ান বিয়ারে চুমুক দেওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিলো। অসাধারণ তার টেস দেঁতো হাসি

রানা মেহের এর ছবি

লেখাটা চমতকার লাগলো ভাইয়া। অনেক সুন্দর।
(বিয়ার হারাম। হালাল খাবার খাও) খাইছে

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

কল্যাণ এর ছবি

চলুক

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।