কবিতাকথন ১: নন্দনতত্ত্বের ভাষা, শরীরের গান

মূলত পাঠক এর ছবি
লিখেছেন মূলত পাঠক (তারিখ: সোম, ২০/০৪/২০০৯ - ১:০৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

রূপালি জোছনা
জানলাকপাট গ'লে এসে পড়ে তোমার কপালে,
মধ্যরাতের যতো শিশিরের স্বেদবিন্দু
সে আলোয় জ্বলে আর শ্রান্ত ঘাসেরা
ঘুমিয়ে পড়েছে সব, হারানো সে ভ্রুভঙ্গিমা খুঁজে ।
তোমার ঘুমন্ত চোখ দে'খে দে'খে জেগে রই
শিয়রস্বপ্নেরা
জাগে যতো কার্তিকের আকাশপ্রদীপ ।
আমার পবিত্র লাগে, নদীর মতন,
তোমার পায়ের পাতা স্পর্শ ক'রে বয়ে যাই
সারা রাত ধ'রে ।

যে নিঃশ্বাসে বৈশাখী ঝড়
এখন সে কথা কয় ফিসফিসে, হাওয়ার ভাষায়,
লাইটহাউসের ধ্রুবতারা
বাতিটাতি বন্ধ ক'রে সমুদ্রের আলো জ্বালে, নাভিমূলে বৃষ্টির আঘ্রাণ
অরণ্যপর্বতনদী পার হয়ে শরীর খুঁজেছে,
অনেক সুগন্ধি রাত উন্মনা কাটিয়ে
অলিগলি বুনো পথে হারিয়েছে পথ,
আমিও উন্মাদদিন পার হ'য়ে এসেছি অনেক ।

তারপরে বৃষ্টিশেষে গোধূলির আলো
করুণার মতো কার হাসি স্বর মোহনঅঙ্গুলি
বাসনালাস্য ভুলে শান্ত হয়ে রয়,
আমার শরীরে ভাসে তোমার সুবাস,
স্পর্শ তাপ ভালোবাসা বালুতটে পদচিহ্ন, আকাশের চাঁদ
সেই দে'খে রাতকাব্য লেখে।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

বাহ! বেশ ভালো।

নাহার মনিকা

মূলত পাঠক এর ছবি

ধন্যবাদ, নাহার মনিকা ।

কীর্তিনাশা এর ছবি

দারুণ লাগলো ! চলুক

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

মূলত পাঠক এর ছবি

ধন্যবাদ, কীর্তিনাশা ভাই। হাসি

তাহসিন আহমেদ গালিব এর ছবি

কিছু কিছু শব্দ পড়তে গিয়ে ছন্দ হারিয়ে ফেলছিলাম। তার পরও অনেকটা সময় নিয়ে পড়েছি, উপলব্ধিও হয়েছে।

আপনার 'হারান হারিয়ে গেল কোথায়' এর পর সম্ভবত এটা কবিতাধর্মী লেখার আরেকটি প্রয়াস। লিখে যান পাঠক ভাইয়া... আছি আপনার-ই সাথে...

মূলত পাঠক এর ছবি

ধন্যবাদ তাহসিন, আমার লেখা এতো যত্ন ক'রে পড়ার জন্য। ছন্দের সমস্যা কোথায় চোখে পড়েছে একটু জানান, পাঠকের কথা শোনা যায় ভালো ক'রে ব্লগে লেখার এটা একটা বিশাল সুবিধা।

কাল আবার ছড়ার দিন। দেখা হবে।

মূলত পাঠক এর ছবি

আজকের কবিতা আর ছবিটা কেমন লাগলো সেটা জানার আগ্রহে রইলাম। কালকের পোস্ট এই ফাঁকে রেডি হয়ে গেলো, পদ্য গদ্যের পর এবার ছদ্য = ছড়া + খাদ্য (নামটা যেমন গোঁজামিলের, ছড়াটা আশা করছি ততোটা বদখৎ হবে না )।

সকালে দেখা হবে।

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

তোমার ঘুমন্ত চোখ দে'খে দে'খে জেগে রই
শিয়রস্বপ্নেরা
জাগে যতো কার্তিকের আকাশপ্রদীপ ।
আমার পবিত্র লাগে, নদীর মতন,
তোমার পায়ের পাতা স্পর্শ ক'রে বয়ে যাই
সারা রাত ধ'রে ।

চলুক

০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০
"আমার চতুর্পাশে সবকিছু যায় আসে-
আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা!"

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

মূলত পাঠক এর ছবি

ধন্যবাদ। হাসি

তাহসিন আহমেদ গালিব এর ছবি

দুঃখিত আমি "হারান হারায়া গেলো ক্যাম্নে?" ছড়াটার নাম ভুল লিখেছি। মার্জনা করবেন।

ঠিক ছন্দের সমস্যা নয় যেমন ধরুন- ভ্রুভঙ্গিমা, মোহনঅঙ্গুলি, বাসনালাস্য শব্দগুলো কবিতার লাইনে কোন অর্থে বুঝিয়েছেন সেটা। দ্বিতীয়ত, দে'খে দে'খে শব্দটিতে থামতে হয়েছে বরং দেখে-দেখে লিখলে ভাল দেখাতো...এই আর কি!
তাছাড়া এই প্যারাটার অর্থ ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না।

শিয়রস্বপ্নেরা
জাগে যতো কার্তিকের আকাশপ্রদীপ ।
আমার পবিত্র লাগে, নদীর মতন,
তোমার পায়ের পাতা স্পর্শ ক'রে বয়ে যাই
সারা রাত ধ'রে ।

আমি আমার মতামত জানালাম। আপনার লেখা পড়ি বলেই জানালাম। কথাগুলো অন্যভাবে নেয়া ঠিক হবে না। হাসি

মূলত পাঠক এর ছবি

অন্যভাবে নেয়ার প্রশ্নই নেই। আমি বিশদে উত্তর দিচ্ছি পরে, সোমবারের সকালে সময়ের একটু টানাটানি, বুঝতেই পারছেন। হাসি

মূলত পাঠক এর ছবি

ভ্রুভঙ্গিমা, মোহনঅঙ্গুলি, বাসনালাস্য, এই জাতীয় জোড়া শব্দ আমার নিজের খুব পছন্দের। অর্থ যা বোঝানোর তা তো বোঝায়ই, তার সাথে কবিতার পরিমন্ডল তৈরি হয় একটা, সেটা কাজে দেয়। এখানে এই শব্দগুলো খুব গোপন বা জটিল কোনো অর্থ বহন করছে না, প'ড়ে যা মনে হচ্ছে তাই বলতে চেয়েছি। ভ্রুভঙ্গিমা বা কটাক্ষ তো প্রেমরসের ভিয়েনে পাক দিতে খুবই কার্যকরী। প্রেয়সীর চাঁপাফুলের মতো আঙ্গুল যা আশ্লেষে উত্তেজনায় নখরদংশনে সুপার-অ্যাকটিভ ছিলো, এখন শ্রান্ত ও শান্ত। আর লাস্য হলো তান্ডবের কাউন্টারপার্ট, পার্বতীর নেত্য।

কবিতা লেখার সময় অনেক ব্যক্তিগত অনুভূতি, স্মৃতি বা পূর্বপাঠ লেখায় ছাপ ফেলে। শিয়রস্বপ্নটা সেই রকম, গুলজার/হৃদয়নাথের সৃষ্ট লতার গাওয়া একটি গান (যার কথা কিছুদিন আগে কোনো মন্তব্যে লিখেছিলাম) "মেরে সরহানে জ্বলাও সপনে/মুঝে জরা সি তো নিন্দ আয়ে", তার কলি ছায়া ফেলে গেছে এখানে। হিন্দু বাঙালির একটা রীতি আছে (মুসলমান বাঙালি করে কি না জানা নেই), গোটা কার্তিক মাস প্রতি রাতে স্বর্গগত পিতৃপুরুষের উদ্দেশে গৃহশীর্ষে প্রদীপ জ্বালানোর। সেই সারারাত জ্বলে থাকা প্রদীপের মতোই রমণস্মৃতি শিয়রের কাছে জেগে থাকে নিদ্রাজাগরণের মাঝে স্বপ্নের মতো। সেই প্রেম শরীরী অনুভূতিকে স্বেদ ক্লেশ থেকে উত্তরণ দেয়, শরীরের উত্তেজনা ভালোবাসায় ধুয়ে পবিত্র হয়, ঘুমন্ত নারীকে ঘিরে বয়ে যায় সেই অনুভব।

কিছু কি বোঝানো গেলো? না বুঝলেও ভাববেন না, এটা নেহাৎই আমার ব্যাখ্যা, আপনারটা সমান গুরুত্বপূর্ণ, এবং সেটা আলাদা হলেও কিছুমাত্র ক্ষতি নেই। এই মন্তব্য পড়লে জানাবেন এখানে; পুরোনো লেখার মন্তব্য চোখ এড়িয়ে যেতেই পারে কিন্তু তাহলে উত্তর যথাস্থানে পৌছলো না এই খেদ থাকবে।

তাহসিন আহমেদ গালিব এর ছবি

সর্পনাশ... আপনি তো ভাই বিজ্ঞানী মানুষ। চোখ টিপি

আপনার বিশদ বর্ণনায় শব্দগুলোর বিষয়ে আরও জানতে পেরে উপকৃত হলাম। আপনার ভাষা খুবই সমৃদ্ধ, বলতে ক্ষতি নেই। অতন্দ্র প্রহরী ভাই এর একটা মন্তব্যে সেটা আরও প্রকাশিত হয়েছে। আপনার মঙ্গল কামনা করছি।

মূলত পাঠক এর ছবি

বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলাম, তাই ব'লে বিজ্ঞানী? ধুপ্ ক'রে আওয়াজ হলো শুনলেন? পড়ে গেলাম সোফা থেকে!

ভালো থাকুন।

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

কবিতা বুঝি না। তবে কোনো কবিতা ভালো লাগলে সেই ভালোলাগাটুকু জানিয়ে যাই। কবিতার সমালোচনার কর্ম্ম আমার নয়। তবে পাঠকের ভালো লাগার নিশ্চয়ই একটা মূল্য আছে। সে কবিতা ভালো বুঝুক কিংবা না বুঝুক। এটা মনে হয় আপনার দ্বিতীয় কোনো কবিতা যা আমি পড়লাম। আমার খুব ভালো লেগেছে, সেই মুগ্ধতাটুকু জানিয়ে গেলাম। হাসি

মূলত পাঠক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ পান্থ। ভালো লাগার মূল্য সবচেয়ে বেশি।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

আপনার বিপুল প্রতিভায় মুগ্ধ হবার পাশাপাশি হিংসা করা শুরু করব নাকি ভাবছি।

কবিতা আর ছবি - দুটোই চমৎকার লেগেছে।

মূলত পাঠক এর ছবি

হা হা হা !

প্রহরী ভাই, এমন প্রশংসা করলে কী কী ঘটবে বলি:
- জমির থেকে দু-ইঞ্চি উপর দিয়ে হাঁটা যাবে, জুতোর খরচা কমবে ।
- মাসল-টাসল ফুলিয়ে একাকার কান্ড হবে, হাল্কের মতো ফটাস-ফটাস ক'রে জামা ছঁিড়বে, খরচা আবার বেড়ে গেলো যাহ্ !
- লেজ মোটা হয়ে যাবে, তখন নিজেকে মানুষের চেয়ে বেশি কুমির বা ক্যাঙ্গারু লাগবে ।

সব মিলিয়ে সেটা খুব ঘাঁটা ব্যাপার হবে, তবে তা জন্য আপনাকে মন্তব্য (পড়ুন প্রশংসা) করতে বারণ করছি না, কী যে ভালো লাগে শুনতে তা আর কী বলবো। থ্যাঙ্কু থ্যাঙ্কু হাসি

রানা মেহের এর ছবি

কবিতা সৌন্দর্য

লাইটহাউস থেকে বাতিঘর অনেক ভালো শোনায় না?
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

মূলত পাঠক এর ছবি

তা শোনায়। তবে ঐ সময় ঐ শব্দটাই এসেছিলো মাথায়, বিদেশবাসের কুফল হয়তো। আর এখন বাতিঘর বসাতে গিয়ে মাত্রা কম পড়ছে দেখছি, সেক্ষেত্রে ঘুরপথ লাগতো, এইরকম কিছু: "বাতিঘর সাগরের তীরে"।

সৌন্দর্য জানিয়া আহ্লাদ পাইলাম। হাসি

তারেক এর ছবি

তোমার ঘুমন্ত চোখ দে'খে দে'খে জেগে রই
শিয়রস্বপ্নেরা
জাগে যতো কার্তিকের আকাশপ্রদীপ ।
আমার পবিত্র লাগে, নদীর মতন,
তোমার পায়ের পাতা স্পর্শ ক'রে বয়ে যাই
সারা রাত ধ'রে ।

খুব ভালো লেগেছে হাসি
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

মূলত পাঠক এর ছবি

ধন্যবাদ, তারেক। হাসি

তীরন্দাজ এর ছবি

বাহ্ বাহ্! দারুন সুন্দর কবিতাকথন!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

মূলত পাঠক এর ছবি

আপনাদের ভালো লাগলেই লেখা সার্থক। হাসি

জিফরান খালেদ এর ছবি

বেশ লাগলো...

আবার এইটাও সত্য, এই কবিতা আমার ভিতর অস্বস্তি তৈয়ার করলো... আমি কবিতা খুঁজতেসিলাম বলেই কিনা জানিনা...

আপনার আরো ভিন্ন ধরণের কবিতা পড়বার আশা রইলো...।

মূলত পাঠক এর ছবি

অস্বস্তিটা কী আশা পূরণ না হওয়ার? নাকি অন্যকিছু? জানতে ইচ্ছা হয়।

ভালো লেগেছে জেনে আনন্দ পেলাম। নিশ্চয়ই লিখবো আরো। আগ্রহ নিয়ে পড়ার পাঠকদের জন্য না লিখলে আর লেখার কী কারণ থাকতে পারে। হাসি

আপনার কঠিন সময় কেটে যাক, সমস্যাসঙ্কুল রাত পার হয়ে আনন্দের দিন আসুক প্রার্থনা করি।

জিফরান খালেদ এর ছবি

কবিতার ভাষা, ভঙ্গি - এইগুলা আমার জন্যে বাঁধা তৈয়ার করসে... 'কবিতা'র যে ব্যাপারটা আমি ধরতে পারি একটা টেক্সটে, এইটা ধরতে পারি নাই বইলা
আমার অস্বস্তি... 'আশা' তো একটা -প্রি-ডিফাইন্ড স্ট্যাটাস, তাই না? সেইটা যে ধারণ করি না, তা কেমনে বলি? সেই জায়গা থেকেই হয়তো আগে থেকেই 'কবিতা' বইলা কিছুর একটা ধারণা থাকে, এবং ক্রমশঃ সেই ধারণার সাথে মিলায়া লইতে গিয়া হোঁচট খাই...

সে যাক,এইটা আপনার টেক্সটের লগে আমার ব্যাপার-স্যাপার... আপনার আর হাত নাই এইটাতে তেমন...

আর, আমার 'টেক্সট' 'টেক্সট' দেইখা সেমান্টিক্সের উপর ভর কইরা দাঁড়ানো পাঠক ভাইবা ডরায়েন্না...

শেষতক, আমিও কবিতার যে অংশটা ব্যাখ্যাহীন, তা'তেই মজি...

স্নিগ্ধা এর ছবি

'কবিতা'র যে ব্যাপারটা আমি ধরতে পারি একটা টেক্সটে

একটু কি বুঝায় বলা যাবে, 'কবিতা'র 'ব্যাপার'টা কী? কিভাবে ধরা যায়/পড়ে? হাসি

জিফরান খালেদ এর ছবি

এত গ্যাজাইলাম ঐদিন, তারপরো আরো প্যারা খাওনের শখ?? এই বালিকারে লয়ে কই যাইতাম?

এইটা এই অর্থে বলা যে, একটা টেক্সট যখন আমার কাসে কবিতা হয়া ওঠে, বা, 'কবিতা' বইলা যে ধারণাটা আমি ধারণ করি, সেইটা যখন একটা টেক্সটে আমি পাই, ... ঐদিন যে বললাম, একটা টেক্সট আসলে আমি পড়বার সময় 'আমার' টেক্সট হয়া ওঠে, সেই প্রিটেক্সটে বলা...

অধিবিদ্যক উপায়ে এইভাবেও এইটারে বলা যায় যে, 'কবিতা' সমেত যে 'ভাব' বা 'বোধ' আমি আইডেন্টিফাই করতে চাই, সেইটারে 'ব্যাপার' কওন হইসে...

এইসব হাবিজাবি আর কি!

কামলা আসে, আইসা আবার বসবনে... ইত্যবসরে, কোন প্যারাটা খারাপ লাগসিলো ঐটা কনতো দেখি...

তারেক এর ছবি

কিন্তু কেউ যখন কবিতা লিখে তখন সে কোন না কোনভাবে জানে এটা একটা কবিতা হয়ে উঠছে। যদি ধরি তার চিন্তায় সেটা ছিলো না, বা পরবর্তীতে কবিতা বলে মনে হয়েছে, তাহলেও কবিতাকে নিজের মতো করে ডিফাইন করার একটা ব্যাপার থাকেই। ভান/ ভনিতা যাই হোক, সব কবির মনেই বোধহয় কবিতার একটা স্বতন্ত্র টেম্পলেট থাকে। একটা কবিতাকে "কবিতা" হিসেবে স্বীকৃতি পেতে হলে সেই ফ্রেম থেকে সেইটাকে উত্তীর্ণ হতে হচ্ছে, একটা স্ট্যান্ডার্ড অতিক্রম করতে হচ্ছে। এখন এই ব্যাপারটা কবিতাকে তার নিরেট ভাবনা থেকে কতোটা বিচ্যূত করে সেটা তো পাঠকের জানার কথা না।
হয়তো পাঠকের কাছে সেটা নিরেট ভান। অথচ কবির কাছে নিরেট সত্য।
কবিতার শিল্পগুন কী হবে, এইটার একটা সার্বজনীন স্ট্যান্ডার্ড সেট করা তো কঠিন ছিলো সবসময়। যমি যদি বলি, ভানহীনতাও একটা শিল্প, তাইলে মূলত প্রচলিত শিল্পগুন অস্বীকার করার বিষয়টারে উলটা যুক্তি দিয়ে বরবাদ করে দেওয়া যায়।

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

মূলত পাঠক এর ছবি

আপনাদের বিদ্বজনের আলোচনা শুনে এই ভেবে আনন্দে চিৎপাত হলাম যে এর সূচনা আমার লেখা অকিঞ্চিতকর কবিতা (বা তার খামতি) ঘিরে। সত্যি বলতে জিফরানের কথা সবটা বুঝতে পারি নি। তবু যতটুকু বুঝেছি তার ভিত্তিতে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করি।

কবিতার ভাষা, ভঙ্গি - এইগুলা আমার জন্যে বাঁধা (বাধা?) তৈয়ার করসে... 'কবিতা'র যে ব্যাপারটা আমি ধরতে পারি একটা টেক্সটে, এইটা ধরতে পারি নাই বইলা আমার অস্বস্তি...

এই কথাটা মনে হয় বুঝতে পেরেছি। ধরেন বিরিয়ানির কথা। কলকাত্তাই বিরিয়ানি খেয়ে বড়ো হয়েছি আমি, এবং শাস্ত্রমতে উচ্চাঙ্গের যে সব বিরিয়ানি, এটা তার থেকে খুব আলাদা নয় (যেমন লক্ষ্ণৌয়েরগুলোর কাছাকাছি)। কাজেই প্রথমবার হায়দ্রাবাদি বিরিয়ানি খেয়ে মনে হয়েছিলো এইটা কী হিসেবে বিরিয়ানি! মাখা মাখা ঝোলঝোল তায় পুদিনা দিয়ে টুথপেস্টের মতো বানিয়ে ছেড়েছে, রামোঃ! আমার পরেও যে ওটা খুব ভালো লেগেছে বিরিয়ানি হিসেবে তা নয়, কিন্তু বস্তুটা যে খেতে খারাপ তা কিন্তু না। এটাই হলো মাইন্ডসেট থাকার সমস্যা, যদিও ও বস্তু থাকবে না এমনটাও হয় না। যেমন আপনি লিখেছেন, 'আশা' তো একটা -প্রি-ডিফাইন্ড স্ট্যাটাস, তাই না? সেইটা যে ধারণ করি না, তা কেমনে বলি? সেই জায়গা থেকেই হয়তো আগে থেকেই 'কবিতা' বইলা কিছুর একটা ধারণা থাকে, এবং ক্রমশঃ সেই ধারণার সাথে মিলায়া লইতে গিয়া হোঁচট খাই...

আমি যখন কবিতা লিখি তখন তার একটা ধাঁচ থাকে, একাধিকও হতে পারে, তবে সেই স্টাইলটা পছন্দ না হলে (বা পাঠকের পূর্বধারনার সাথে না মিললে) খুব কিছু করার থাকে না। করা যেতো যদি সব পাঠক এই বিষয়ে সহমত হতেন, কিন্তু সে তো সম্ভব নয়। আপনিও সেকথাই লিখেছেন, এইটা আপনার টেক্সটের লগে আমার ব্যাপার-স্যাপার... আপনার আর হাত নাই এইটাতে তেমন...

আমার 'টেক্সট' 'টেক্সট' দেইখা সেমান্টিক্সের উপর ভর কইরা দাঁড়ানো পাঠক ভাইবা ডরায়েন্না...
ডরানোর প্রশ্নই নেই, বরং কবিতাকে সব আলোচনার ঊর্দ্ধে তুলে রাখতে হবে এ কথা আমার পছন্দ হয় না। যিনি লিখছেন তাঁর কাছে প্রতিটা শব্দের অর্থ থাকতে হবে, ব্যাখ্যা করা কঠিন হতে পারে কিন্তু ব্যাখ্যা একটা থাকতে হবে এই আমার বিশ্বাস। কাজেই কাটাছঁেড়া না করলে সে কথা বোঝা যাবে না।

শেষতক, আমিও কবিতার যে অংশটা ব্যাখ্যাহীন, তা'তেই মজি...
সত্যি বলতে কী, কবিতাঘরের পেছনের আঁধার ঘুপচিটা, কিংবা তোরঙ্গের পুরোনো গন্ধ, এগুলো আমাদের মধ্যে অনেক পুরোনো স্মৃতির অনুভূতি জাগিয়ে তোলে, সব হাত দিয়ে ধরা যায় না কিন্তু কোনোটাই অকারণ নয়। অনেক কিছু আমরা ভুলে যাই কিন্তু অবচেতন মনে রাখে। সবচে' মজার ব্যাপার হলো এই সব ধোঁয়াশাগুলো কবি কিন্তু লোক ঠকাতে লেখেন নি, তাঁরও কোনো অর্ধবিস্মৃত অনুভব থেকে বেরিয়েছে, যার সাথে পাঠকের অনুভূতি আদৌ এক নয় হয়তো। অন্যরকম ভালো লাগা সেটা, কিন্তু তাতে ক'রে কারোর কিছু সমস্যা তো হলো না। সেইরকম আর কি। তবে মোটের উপর ব্যাখ্যা না পেলে আমি সে কবিতা ভালোবেসে পড়তে পারি না, ছেড়ে দিয়ে চলে যাই, খারাপ কবিতা ভেবে নয়, এই ভেবে যে এটা আমার জন্য লেখা না। তা বাঙলা দেশে কি কবির অভাব, আর কারোরটা খুলে পড়তে থাকি হাসি

আপনি যে আমার মতন ছেড়ে যান নি বরং চেষ্টা করেছেন তাতে কৃতজ্ঞবোধ করছি। আমার আরো কিছু কবিতা চাইলে পড়তে পারেন পরবাস-এ, মুশকিল এটা ইউনিকোড নয়, হয়তো নাও খুলতে পারে। তবে এই কবিতাটা খুলবে (ইমেজ, টেক্সট নয় বলে)।

ভালো থাকুন।

জিফরান খালেদ এর ছবি

পাঠক ভাইঃ

বিদ্বজন, বিরিয়ানীর কথা কইয়া যে স্বাদ তৈরি করলেন, কথা দিলাম, আমিও আপনার কবিতা-অপসন্দে যে অভ্যাস, সেইটা তৈয়ার করবো...

বাকিগুলার ব্যাপারে কিছু বলতে টায়ার্ড লাগতেসে... ব্যাখ্যার উপস্থিতির কথা যা শুনলাম, তাতে আগ্রহ হারাইলাম... সেইটা অবশ্য ব্যাখ্যায়, আপয়ান্র কবিতায় না...

'সান্ধ্যসঙ্গীত' কবিতাটা বেশ চমতকার...

মূলত পাঠক এর ছবি

ধন্যবাদ, জিফরান।

জিফরান খালেদ এর ছবি

তারেক, প্রথমতঃ 'কবিতা লিখতেসে', 'কবিতা হয়া উঠতেসে' এই ব্যাপারগুলারে ভাষার যে মজমা, বা এইটার নন্দন, সৌন্দর্যে এইগুলাতে যে প্রভাব, সেইটা লয়া বাংলা কবিতার মর্তবা বুঝনের এখন দরকার বইলা মনে করতাসি... স্বাতন্ত্র্যের যে বয়ান, সেইটা একটা এক্সটেন্ট পর্যন্ত সত্য, তারপর, যেকোনো শব্দেরই একটা সাধারণ রূপ বা ধারণা আমরা প্রত্যাশা করি সবার কাস থেইকাই... 'কবিতা' শব্দটাও সেইটার মধ্যেই পড়ে... কবির লগে শেষাবধি পাঠকের কোনো সম্পর্ক আমি দেখি না... পাঠক যখন কবিতা পড়ে, সেইটা কোনোমতেই কবির না কিন্তু, সে আসলে তার জমিতে দাঁড়ায়া তার চউক্ষে যে টেক্সট ধরা পড়তাসে, তা-ই দেখতাসে... এই অর্থে বলা যায়, 'টেক্সট' পাঠকের হয়া ওঠে... 'কবি কি বোঝাতে চাইসেন' জাতীয় ইরাদাগুলাও পাঠকের টেক্সট এর সাথে যে নিজের সম্পর্ক, সেইটা দিয়া হয়...

'সত্য' 'শিল্প' এইগুলা কিভাবে আগায়, আমি জানি না আসলে... একটা সাধারণ ধারণা আমি ধারণ করি, সেইটা মানুষ বইলা... কিন্তু, 'কবিতা'রে শিল্প বইলা আমরাই একটা ইনহেরেন্ট স্পেকট্রাম তৈয়ার করি... 'ভান' একটু হিংস্র হয়া যায়, বরঞ্চ বলি 'সিম্বল' বা 'আড়াল'... 'আড়ালহীনতা' আমার আরাধ্য বস্তু না এইখানে... টেক্সট কবিতা, নাকি নিজেই একটা আড়াল, কে কার উপর চড়াও হইলো, এইগুলা... সরল হওয়া করির নিজের নন্দনের কাসে জরুরী বইলা আমি মনে করতাসি এখন... সেইটার কোনরূপে আসবে ওইটা কইবার পারি না... ভানহীনতাও একটা শিল্পগুণ হইবার ফারে, তবে, সেইটা 'শিল্পের' মধ্যকার যে 'সু'-তে আমরা বান্ধা, সেইতারে ব্যাপক প্যারা দিবে।

যাউকগা, পাঠক ভাই 'বিদ্বজন' উচ্চারণ কইরা ফেলসেন, আলোচনা দম পাইতেসে না...

বাকিটা তোতে আমাতে গ্যাজানো হইবেক...

রণদীপম বসু এর ছবি

বাপরে ! কবিতার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ দেখে আমার রীতিমতো প্রেশার বেড়ে গেছে ভাই ! কবিতাকে আমি কেবল উপলব্ধির বিষয় হিসেবেই মানি। এর বাইরে কিছু হতে গেলে তা আদৌ কবিতা থাকে কিনা, বিজ্ঞজনেরাই বলবেন। আর আমি বলি এভাবে-

হতচ্ছাড়া কবিতা
রণদীপম বসু

তিনি একজন ডাকসাইটে কবিতা বিশ্লেষক;
ব্যবচ্ছিন্ন করতে করতে কী এক অদ্ভুত দক্ষতায়
গোটা শরীরটাকে খুলে ফেলেন অনায়াসে,
প্রতিটা বাক্যের খাঁজে খাঁজে সেটে থাকা শব্দ অক্ষর এবং
রূপ রস গন্ধ বর্ণ মাত্রা তাল ছন্দ আর
সংযোজিত অনামিক উপকরণ যতো
পলকেই ছিন্ন ভিন্ন করে
অলৌকিক বিজ্ঞতার আঙুলে দেখিয়ে দেন তিনি
কবিতার রহস্য তন্ত্র মন্ত্র সব !

গণিতের সূত্র টেনে আমরা যারা দর্শক
অর্থাৎ ইতোমধ্যেই শ্রোতা থেকে দর্শকের কাতারে হাজির
এক অভূতপূর্ব বিস্ময়ে বুঝে ফেলি-
চিত্রকল্প মানেই কি তবে অযাচিত কতকগুলো
যুক্তিহীন অক্ষরের নির্বোধ বিন্যাস !

যুক্তিতে অবজ্ঞা এলে মানুষ কি সুস্থতা হারায় !
তুমুল বিশ্লেষণে সেদিন
শ্রোতা থেকে আগাগোড়া দর্শক হয়েছিলাম যারা-
সেই থেকে কবিতার খাতাটা- কী আশ্চর্য-
রয়ে গেলো ফাঁকাই ! #

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

জিফরান খালেদ এর ছবি

ভাইরে, ভাল মতো খেয়াল করলে হয়তো দেখবেন, আমার পক্ষ থেকে যে আলোচনা সেইটাতে এই কবিতার ব্যবচ্ছেদের কোনো চেষ্টাই করা হয় নাই... কবিতা, বা কবিতা যে শব্দেগুলাতে ধরা পড়ে, পাঠকের পাঠ...

'উপলব্ধি'-র যে মাঠ, সেইটাতে হাঁটন-নড়ন এইগুলাই তো...

সে যাক, আপনার স্যাটায়ার ভাল হইসে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।