এই যে আমার হাতে ধরা
দিগন্ত প্রসার ক'রে ছুটে যায় সাতরঙা ঘোড়া,
এই যে আমার নিঃশ্বাসে
মন্দার বিচূর্ণ হয়, বাসুকীর আর্তনাদ ভাসে,
নিরুদ্বেগ প্রশান্ত ইথার
আমার দৃষ্টিতে জ্বলে দাবানল, হয় ছারখার
পাখির কাকলি, গাছ, শিশুরা নিষ্পাপকন্ঠে হাসে,
মধুর হাওয়ায় ভাসে ফুলের সুবাস মধুমাসে,
অগণ্য বেকারকুল, বিধবার কর্মফলগাথা,
মর্মরমূর্তিতে বিষ্ঠা, বিস্মরণ, ঝরে যাওয়া পাতা।
চিতার উত্তাপে হাত সঁেকে নেয় আমার সন্তান,
গীর্জার অলিন্দে বাজে আমার সম্মানে বৃন্দগান।
গৃহযুদ্ধ উগ্রবাদ, আর্তনাদে কাঁপে মর্ত্যলোক,
রক্তে ভেজা উত্তরীয়ে অশ্রু মুছি আমিই অশোক।
মায়ানিদ্রা তবু রয়, তবু বয় বিপন্ন বাতাস,
তবুও বিষের বাষ্প, বিস্ফোরণ, আত্মীয়বিনাশ।
তবুও তান্ডব নৃত্য, তবু লাস্য, অনঙ্গমহিমা,
অনন্তের মাঝে আমি এঁকে চলি আপন ত্রিসীমা।
মন্তব্য
শুরুর টোনটা আমার পছন্দের... গত বছর লিখা দু'তিনটে বাংলা কবিতার একটি এভাবেই শুদ্রু হয়েছিল... 'এই যে...'
আরো লিখা দিন... এখনো আমি অস্বস্তিতে আছি আপনার কবিতায়... এবার একটু কম...
আরে মশাই কবিতা লেখায় তো খাটনি কম, কাজেই দিতে আমার সমস্যা নাই, কিন্তু লোকে বেশি পড়তে চায় না যে। এই যে দেখেন না, এতক্ষণে আপনেরটা ছাড়া আর কোনো মন্তব্য নাই। দুঃখে চোখে জল আইস্যা যায়।
উদ্ধৃতি
আরে মশাই কবিতা লেখায় তো খাটনি কম, কাজেই দিতে আমার সমস্যা নাই।
গ্রামে একটা কথা প্রচলিত আছে, যে দেশে চোকিদারি করতে পারে, চাঁদে তার চোকিদারি করা সহজ।
আর যে জানে তাঁর কাছে কবিতা কেন সব কিছুই সহজ। অর্থাৎ জানলে পানি , না জানলে আসমান আর জমিন। আপনার সৃষ্টি তো তথ্যে ঠাসা।
উদ্ধৃতি
তবুও তান্ডব নৃত্য, তবু লাস্য, অনঙ্গমহিমা,
অনন্তের মাঝে আমি এঁকে চলি আপন ত্রিসীমা।
আপনি একক সত্বা (অদ্বৈত) প্রতিষ্ঠা করতে তাণ্ডব, লাস্য, অনঙ্গমহিমা দিয়ে গণ্ডি দিয়েছেন। আপনি দয়া করে লাইন দুইটির ব্যাখ্যা দিয়ে একটু খোলাসা করবেন।
শিব-শিবা নৃত্য বিদ্যার মা-বাপ বলে খ্যাত। তণ্ডু নামে শিব ভক্ত মহাদেবের কাছ থেকে যে নৃত্য শিখেছিলেন তা তাণ্ডব নামে প্রখ্যাত। আর পার্বর্তী উষাকে লাস্য শিক্ষা দিয়েছিলেন। তাই এটি লাস্য নৃত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। সেই হিসেব মত আপাত দৃস্টিতে দেখতে পাছ্ছি তাণ্ডব পুরুষ আশ্রয়ী নৃত্য, আর লাস্য নারী আশ্রয়ী। কিন্তু নৃত্য গুরু খগেন্দ্রনাথ বর্মনের মতে নৃত্য বিদ্যার উপাদানিক বস্তু-কর্ম পক্ষে স্ত্রী-পুরুষ অনুযায়ী বিদ্যমান ভেদ (তাণ্ডব ও লাস্য) থাকতে পারে না। আর অনঙ্গমহিমা তো নিরাকার ব্যাপার স্যাপার। থাহলে কি এখানে তিনে মিলে ফানাফিল্লা (একে লীন) হবার কথা বুঝান হয়েছে?
এই কবিতাটার মোদ্দা কথা খুব পুরোনো ও সনাতন, খোলসা ক'রে বলে দিলে মনে হবে, ওঃ এই! এর জন্যে এতো বাঙ্খাম?
অদ্বৈতবাদের মূল কথা হলো সবই সেই এক সৃষ্টির নানা প্রকাশ। বিষ্ণুর পৌরাণিক অবতার অথবা কুরুক্ষেত্রে কৃষ্ণের বিশ্বরূপ, এরই ডেমনস্ট্রেশন। যে মারে আর যে মরে, দুই-ই এক। অশোকের অশ্রু যখন কলিঙ্গবাসীর রক্তে মেশে তখন সেই অদ্বৈতের চেহারাই ফুটে ওঠে। এবং এতো কিছুর পরেও মায়াজাল কাটে না, আর সেই ট্রাডিশন সমানে চলে, ধ্বংসের ও সৃষ্টির। তবু তান্ডবনৃত্যে ধ্বংসের ভেরী বাজে আবার লাস্যেহাস্যে অনঙ্গ/মদনের জয়ের সূচনা হয়, এই ভাবে কালচক্র ঘুরতে থাকে। আর অনন্ত কালের ধারাকে এইভাবে খন্ডমুহূর্তের বাঁধনে বঁেধে আমরা অদ্বৈতের ধারণাকে পরোক্ষে স্বীকার করি।
কিছু কী বোঝাতে পারলাম? আর নৃত্যের ব্যাপারে বলি, আমি একেবারেই অজ্ঞ ও বিষয়ে। যদি টেকনিক্যাল ত্রুটি হয়ে থাকে তো অনবধানে, সেজন্য দুঃখপ্রকাশ করে রাখলাম এইখানে।
এমন পাঠক চায় মূলত পাঠক
যাকে লেখা যায় নিকোনো আচড়-
আপনার কবিতার পাঠক কম হোক
তবে এমন পাঠক হোক যাতে ভাবিত্য কিছু নাহি রয়
পানি পানি হয় জল সারা ময়, তবে
নৃত্যে উপাঙ্খ শিখলাম আপন বলয়ে
কবি তো কবিতা বোঝে, বোঝে রূপ তার
সম আলোচনা করে- বোঝা (বুদ্ধি) আছে যার।
মরণ রে তুহু মম শ্যাম সমান.....
অনেক ধন্যবাদ অম্লান অভি, এমন ভালো ভালো কথার জন্য। "ভাবিত্য" কিছু না থাকুক এইটা অবশ্য আমার কামনা নয়, তবে ভাবনার শুরুটা মূল জায়গা থেকে হোক এইটা চাই। আর পাঠক কম হলে ভারি দুঃখ পাই, আমার কবিতা ভালোমন্দ যাই হোক যাতে দুর্বোধ্য না হয় সে চেষ্টা সবসময় থাকে। তাই গদ্যের সাথে পাঠকসংখ্যায় অনেক পিছিয়ে থাকলে সেটা আমার না-পসন্দ একটা ঘটনা হয়। দেখি, পরের বার কবিতা দিলে এমন কিছু করার কথা ভাববো যাতে আরো বেশি পাঠককে আকৃষ্ট করা যায়। আমার কবিতা ভালো যাঁদের লাগে না তাঁদের সাথে জোর করার ইচ্ছা নেই, কিন্তু যাঁরা কবিতা পড়ি না বলে চলে যান তাঁদেরকে এতো সহজে ছেড়ে দিচ্ছি না।
ব্যাখ্যার জন্য ধন্যবাদ। বিষয়টি সম্পর্কে একেবারেই নাদান ছিলাম। পাদটিকা না দিলে অধমদের গলধকরণে কষ্ট হয়।
অদ্বৈতবাদের বিষয়ে বলছেন? বিবেকানন্দের লেখায় এ নিয়ে বিশদ আলোচনা আছে, পড়তে পারেন আগ্রহ থাকলে। কোন বইয়ে আছে সেটা মনে পড়ছে না যদিও, সম্ভবতঃ ভক্তিযোগে।
কবিতার পাদটিকা দিলে আবার অনেক পাঠক মনঃক্ষুন্ন হবেন, তাঁদের জ্ঞানবুদ্ধিকে আন্ডার-এস্টিমেট করা হচ্ছে ব'লে। একটা অন্য রাস্তা খুঁজে বার করতে হবে যাতে দু কুলই থাকে।
কবিতা ভালো লেগেছে মূলত পাঠক।
ব্যক্তিগতভাবে আমার কেন জানি মনে হয় কবিতা পড়ে যে মুগ্ধতা, যে শিরশিরানি, যে অব্যখ্যাত আশ্চর্য অনুভব, সেটা কেন জানি ধরে রাখতে ইচ্ছে করে।মনে হয় ব্যাখায় সেটা যেন হারিয়ে গেলো। তাই কবিতা ব্যবচ্ছেদে যেতে চাই না।
কবিতা যে কবি লিখলেন তিনি যেমন নিজের হৃদয দিয়ে লিখে প্রকাশ করলেন, তেমনি যখনই সেটা পাঠকের কাছে এলো তখন পাঠকের মন তাকে নিজের মতন করে পুনরায় সৃজন করলো! আমার মনে হয় এইটাই কবিতার মূল ম্যজিক!
ভালোলাগার মধ্যে ভালোবাসার মতন একটা ম্যাজিকদরজা আছে, বেশী খোঁচাখচি করলে দরজাটা হারিয়ে যায়।
দুপুরের রোদে ঝলমল করে ওঠা ফুলের বাগান, কোনো দুটো লুকানো পাখির সাড়া মেলানো গান, কোনো এক ভুলে যাওয়া হেমন্তসন্ধ্যায় মায়ের মুখে উনানের লাল আগুনের আভা কি মায়া তৈরী করেছিলো-এগুলো কি বিশ্লেষণের জিনিস? ডিএনএ ডাবল হেলিকস দিয়ে কেউ হয়তো অপরাজিতার রূপ বুঝতে পেরে খুশী হন, কেউ হয়তো নাইট্রোজেন হাইড্রোজেনের পারসেন্টেজ খোঁজেন গোলাপের ব্যাখায়, আমি তাদের একজন নই।
ভালোবাসায় যে মায়ার মেঘকুয়াশা তা সরে গেলে কিকরে কিছুই অনুভব করবো? ভালোলাগাও তারই মতন, বিশেষ করে কবিতা ভালোলাগা।
সবই ব্যক্তিগত মত,কিছু মনে করবেন না যেন।
আমি কোনো কোনো কবিতা পড়ে শিহরিত হয়ে উঠি, সময়ে সময়ে লাইন গুলো উড়ে উড়ে এসে ছুঁয়ে যায়, সেই আমার পরম পাওয়া। নাই বা হলো অর্থ বোঝা!
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
মনে করার প্রশ্নই নেই, আমি আলোচনার পক্ষে। আর আপনি যে কথা বলেছেন তার সাথে আমিও সহমত। তবে আপনি যে উদাহরণগুলো দিয়েছেন সেগুলো ছবির মতো, সেখানে ব্যাখ্যার প্রয়োজন বা অবকাশ বিশেষ নেই। আমি বলতে চাইছিলাম অপেক্ষাকৃতভাবে বেশি বিমূর্ত কবিতার কথা, যেখানে একটা ভাবনাকে প্রকাশ করা হয়। সেখানেও কবি আর পাঠকের ভাষ্য আলাদা হতে পারে, এবং তাতে কোনো সমস্যা তো নেই-ই বরং সে আর ভালো কথা, কিন্তু কবির নিজস্ব একটা ব্যাখ্যা থাকা দরকারি ব'লে মনে হয় আমার। এ কথা বলছি কারণ প্রচুর ভেজাল কবি আছে যারা একটা প্যাটার্ন শিখে যায়, আর তাতে ফেলে অনেক গ্যাসবেলুন কবিতার নামে চালিয়ে দেয়। খারাপ কবিতা, কাঁচা হাতের লেখা, এ সব নিয়ে আমার আপত্তি নেই, কিন্তু এই বেলুনওয়ালারা সেইসব অবোধ্য বা অর্থহীন জিনিস লিখে গম্ভীর হয়ে বিজ্ঞতার পেডেস্টালে চড়ে বসে থাকলে আমার ইচ্ছে হয় পিন ফোটাতে। এই ব্যাখ্যা চাওয়াটা সেই প্রক্রিয়ার অংশ।
একদম ঠিক। কিছু কিছু কবিতা এত বাজেরকম মিথ্যা জটিলতার জাল আর আঁতলামির আখড়া, যে আমার সেইসবদের ধরে ধরে থাপড়িয়ে দাঁত ফেলে দিতে ইচ্ছা করে। মুন্ডুগুলো ঠুকে দিতে ইচছা করে। কিছু কিছু গানও আজকাল এরকম হয়ে গেছে যে আচ্ছা করে রামধোলাই দিতে ইচছা করে।
একটা সময় ছিলো তখন আমরা ক্লাস সেভেন কি এইট। দেশ টেশ এ আজেবাজে জটিল কবিতা বের হতো, দেখলেই পাতা উল্টে অন্যদিকে চলে যেতাম। এই অহেতুক আঁতলামি আর জটিলতার থেকে উদ্ধার করলেন জয় গোস্বামী। তার সেই অদ্ভুত সুন্দর পংক্তি "অতই সহজ আমাদের মেরে ফেলা?/ আমাদের পায়ে রাত্রিচক্র ঘোরে/ আমরা এসেছি মহাভারতের পর/ আমরা এসেছি দেশকাল পার করে।"
এইসব ভালো ভালো কবিতা আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে এলো।
"প্রতি সন্ধ্যায় আজো ধ্রুবতারা ওঠে/ সন্ধ্যার মতন নারী চায় অপলক/ তার খোঁপা ঘিরে শেষ শতাব্দী জ্বলে/পরেছে সে নীলকন্ঠ পাখির পালক।"
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
চমৎকার দুটো কবিতা শোনালেন।
তবুও তান্ডব নৃত্য, তবু লাস্য, অনঙ্গমহিমা,
অনন্তের মাঝে আমি এঁকে চলি আপন ত্রিসীমা।
খুব সুন্দর! যদিও নিজেকে অনেক কিছুর সঙ্গে আনঅরিয়েন্টেড লাগে ব'লে এইগুলা কঠিনও লাগে, তবু ভালোও লাগে।
০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০
"আমার চতুর্পাশে সবকিছু যায় আসে-
আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা!"
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
ভালো লাগলেই যথেষ্ট, এই যৎসামান্য কবি তাতেই পুলকিত
বিনয়ের পর্তিযোগিতা দিতার্তাম্না এহন!
০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০
"আমার চতুর্পাশে সবকিছু যায় আসে-
আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা!"
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
আরে না না বিনয় না সত্য কথাই কইলাম কিন্তু আপনে তো পর্তিযোগিতা ভাবলেন, যাউগ্গা ।
সব মিলিয়ে ভালো লেগেছে কবিতাটা। তবে শুরুর অংশটা বেশি ভালো লাগল।
অনেক ধন্যবাদ, অতন্দ্র প্রহরী
নতুন মন্তব্য করুন