এই সিনেমাটা নিয়ে অনেকদিন থেকেই লেখার ইচ্ছে ছিলো, কিন্তু হয়ে উঠছিলো না। সেই জন্যই আজ আবার দেখে ফেললাম সিনেমাটা। এতো বিভিন্ন লেভেলে টাচড হয়েছি যে সবার সাথে ভাগ না করে পারা যাচ্ছে না।
আমার নিজের ধারণা জীবনটা আসলে খুব জটিল গল্প নয়। ফেলিনি বার্গম্যান ত্রুফো মাথায় থাকুন, কিন্তু জীবন চিনতে ওঁদের ছাড়াও চলে। আবার এতো জলবৎ তরলম কিছুও নয় যে শাহরুখ খান মার্কা ফর্মুলায় আঁটানো যাবে। লিটল জিজু দেখে মনে হলো জীবনটা আসলে এই রকম, মালগুড়ি ডেইস-এর মতো ঈশপের গপ্পো যার অন্তে কোনো মোরাল দেয়া নেই, কিম্বা চৌখুপ্পি সাদাকালো পেনস্কেচে আঁকা গ্রাফিক নভেল যেখানে মনে কুচিন্তা এলেও সেটা ভাবনা বেলুন হয়ে ভেসে ওঠে। সেইজন্যেই হয়তো সুনী তারাপোরেওয়ালা এমন সহজ সুন্দর ছবি আঁকতে গিয়ে সারনাথ ব্যানার্জির কলম কাজে লাগিয়েছেন। এই সেই গ্রাফিক নভেল লেখক যাঁর প্রথম বই করিডোর-এর কথা আগে একদিন বলেছিলাম। তবে সব আগে পরে হয়ে যাচ্ছে লিখতে গিয়ে, সবার প্রথমে ছবিটার কাহিনীসূত্রের কথা সংক্ষেপে বলে নিই।
বম্বে তথা মহারাষ্ট্রে অনেক পার্সী পরিবার বাস করে বহু বছর ধরে। এ এক ক্ষয়িষ্ণু সম্প্রদায়, অর্থ ও শিক্ষায় যথেষ্ট অগ্রসর এরা অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর সাথে মিশ্রণ কম হওয়ার ফলে সংখ্যায় বাড়ে নি এঁরা। এমন এক কালচার ও সমাজের পটভূমিকায় এই ছবি বানানো, পরিচালক ও কলাকুশলীরা অধিকাংশই পার্সী হওয়ায় অথেন্টিসিটি প্রশ্নাতীত। ছবিটা এক পার্সী বালকের চোখ দিয়ে দেখা, যে ফুটবলার জিদানের বিশাল ভক্ত। জিদান বা জিজু বম্বেতে না এসে বাংলাদেশেই এলো কেন এই দুঃখে সে মূহ্যমান। শুরু থেকে শেষে ভয়েসওভারে তার কন্ঠ, তার দৃষ্টিতেই আমরা দেখি অন্য চরিত্রদেরকে এবং প্রচন্ড গতিময় ও মজার সব ঘটনাগুলোকে। সেখানে পড়শিমেয়ের নীরব প্রেমিক তার দাদা, ধর্মব্যবসায়ী বাবা ও তাঁর গার্ল ফ্রাইডে নিবেদিতপ্রাণ পার্সোনাল অ্যাসিসট্যান্ট, পাশের বাড়ির কটকটে বালিকা যে তার মা কেন এই মাতৃহীন বালককে এতো স্নেহ করে সেই নিয়ে ঈর্ষাণ্বিত, মুক্তচিন্তার লড়াইয়ের সৈনিক পত্রিকা সম্পাদক যিনি বৌয়ের সাথে সালসা নাচ জুড়ে দেন কথায় কথায়, একা এক পরিত্যক্তপ্রায় হোটেল চালানো এক প্রাণোচ্ছল প্রৌঢ়া, এবং আরো অনেক অনেক অসাধারণ রক্তমাংসের চরিত্র নিয়ে বোনা এক নকশি কাঁথার গল্প বুনেছেন কাহিনীকার-তথা-পরিচালক। সংলাপ মূলত ইংরিজিতে ও কিছু হিন্দি ও পার্সী ভাষায় যাকে আমরা 'বাবালোগোঁকা বোলি' বলি, সাবটাইটেল আছে সেসব ক্ষেত্রে। অভিনয় সব্বার এতো বেশিরকমের ভালো যে আলাদা করে কার নাম বলবো। এখানে স্বপ্ন দেখা মানুষ আছে, সারাক্ষণ মজার মজার সংলাপ আছে, আর সবার মধ্যে আছে প্রচুর প্রচুর প্রাণের উচ্ছ্বাস। এক অসাধারণ জয় রাইড যেখানে জীবনের গভীর কথা অবলীলায় বলা হয়, কোথাও কিচ্ছু আরোপিত লাগে না, এবং জীবনের প্রতি নিখাদ এক ভালোবাসা সারাক্ষণ দর্শককে ঘিরে থাকে। যাঁরা দেখেছেন তাঁরা বলুন তাঁদের মতামত, আর যাঁরা দেখেন নি তাঁরা শিগগির দেখে ফেলুন। আপনি জানেন না আপনি কী মিস করছেন!
কমিকস তথা গ্রাফিক নভেলের ভক্তদের জন্যও এ ছবি একটা মহাভোজ, বালকটির দাদা তার জীবনকে আঁকে এই মাধ্যমে। সেই ছবিগুলো সব সারনাথের আঁকা, আর সেই সারনাথকে নিয়েও লিখবো শিগগিরই। পৃথিবীতে এতো প্রতিভাবান লোকের ভীড়, সবাই এতো সব চমৎকার চমৎকার জিনিস বানিয়ে পরিবেশন করে চলেছেন, ক্রমেই বুঝতে পারছি যে সব কিছু দেখতে জানতে পড়তে শুনতে সারা জীবনটাও যথেষ্ট হবে না!
--------------------------------------------------
Little Zizou (2008)
Direction: Sooni Taraporevala (Scriptwriter of Namesake, Salaam Bombay!, Mississippi Masala)
Cast: Jahan Bativala, Boman Irani, Imad Shah, Sohrab Ardeshir, John Abraham, Shernaz Patel, Zenobia Shroff, Dilshad Patel, Kamal Sidhu
মন্তব্য
ছবিটা কি সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ?? জানাবেন...
দেখার আশা রাখি।
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!
২০০৮-এ মুক্তি পেলেও ভারতে এবছরই রিলিস করেছে। ইউটিউবে পাবেন, তাছাড়া অনলাইন হিন্দি মুভির সাইটগুলোতেও পাবেন।
অবশ্যই দেখুন, ভালো লাগবে গ্যারান্টি।
পরশু দেখলাম 'দ্য সেভেনথ সীল'। অসাধারণ বললে কম বলা হয়।
আর কালকে দেখা হলো 'ওয়ানস আপন এ্য টাইম ইন দ্য ওয়েষ্ট'।
দেখি নি এই ছবি দুটো, কিছু লিখুন না কেন ভালো লাগলো তাই নিয়ে।
লিটল জিজু ইউটিউবে পেয়ে যাবেন, যাঁরা দেখতে চান তাঁদের জানাই।
দেখতে হয়।
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
নিশ্চয়ই।
আপনার গদ্যের হাত তো অসম্ভব ভালো! অবশ্য সচলে আমার অনেক কিছুই জানার বাকি। কিছুদিন গেল আস্তে আস্তে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে আশা করি।
আমার নিজের ধারণা জীবনটা আসলে খুব জটিল গল্প নয়। ফেলিনি বার্গম্যান ত্রুফো মাথায় থাকুন, কিন্তু জীবন চিনতে ওঁদের ছাড়াও চলে। আবার এতো জলবৎ তরলম কিছুও নয় যে শাহরুখ খান মার্কা ফর্মুলায় আঁটানো যাবে। লিটল জিজু দেখে মনে হলো জীবনটা আসলে এই রকম, মালগুড়ি ডেইস-এর মতো ঈশপের গপ্পো যার অন্তে কোনো মোরাল দেয়া নেই, কিম্বা চৌখুপ্পি সাদাকালো পেনস্কেচে আঁকা গ্রাফিক নভেল যেখানে মনে কুচিন্তা এলেও সেটা ভাবনা বেলুন হয়ে ভেসে ওঠে। সেইজন্যেই হয়তো সুনী তারাপোরেওয়ালা এমন সহজ সুন্দর ছবি আঁকতে গিয়ে সারনাথ ব্যানার্জির কলম কাজে লাগিয়েছেন। এই সেই গ্রাফিক নভেল লেখক যাঁর প্রথম বই করিডোর-এর কথা আগে একদিন বলেছিলাম। তবে সব আগে পরে হয়ে যাচ্ছে লিখতে গিয়ে, সবার প্রথমে ছবিটার কাহিনীসূত্রের কথা সংক্ষেপে বলে নিই।
এই পুরো অংশের গদ্যবলার স্টাইলটা আমার ভালো লেগেছে। আরো কিছু সিনেমা বিষয়ক লেখা লিখে আমাদের চমকে দিন। এবং আপনি সেটা পারবেন।:)
হুম! দেখতে হয় তাহলে।
অবশ্যই। লিঙ্ক লাগলে বলবেন। আর দেখে যদি জানান কেমন লাগলো তা'লে তো কথাই নেই।
হুঁ দেখছি
"গুলাল' দেখলাম৷ আমার তো বেশ লাগল৷
--------------------------------------------------
"নিভন্ত এই চুল্লিতে মা
একটু আগুন দে
আরেকটু কাল বেঁচেই থাকি
বাঁচার আনন্দে৷'
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
আপনি একটা যুক্তির পথে লিখুন না গুলালের রিভিউ। আমি খুব চেয়েছিলাম যাতে ভালো লাগে, কিন্তু লাগলো না। আর রিভিউ পড়তে গিয়ে দেখলাম সমালোচকেরা দুই শিবিরে বিভক্ত। একদল আমার মতো যাদের ভালো লাগে নি। আর অন্য দল অনুরাগ কাশ্যপের অন্ধ ভক্ত। তাঁরা দেখার আগেই শতাব্দীর সেরা ছবি দেখা হলো এটা স্থির করে বসে আছেন (প্যাশন ফর সিনেমা নামক সাইটে গেলে এঁদের প্রচুর ভিড় দেখতে পাবেন)। আমি এমন রিভিউ পড়তে চাইছিলাম যেখানে অন্ধভক্তি থাকবে না কিন্তু ভালোলাগা থাকবে। আপনি লিখলে সেই সৌভাগ্য হতে পারে।
নেমসেক দেখছিলাম, এটাও খুঁজবো। ছবিটা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
সম্প্রতি অনেকগুলো সিনেমা দেখলাম। রিভিউ লিখবো লিখবো করে আলসেমিতে লেখা হয় না। কেউ যখন লিখে পড়ে আরাম পাই।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
লিখুন না সংক্ষেপে, অন্তত কীরকম লাগলো এই সারটুকু। সিনেমার গল্প লেখায় খাটনি বেশি আর লেখা উচিতও না, ভালোলাগাটা শেয়ার করতেই পারেন।
হুম, দেখি তো, আজকে সিনেমার দোকানখানায় খুঁজবো। পেলে তো হলই।
আ্যালান মুর আর ফ্র্যাংক মিলারের বিখ্যাত সব গ্রাফিক্স নভেলগুলো হাতে নিয়ে বসে আছি রে ভাই। ওগুলি আগে পড়ি, তারপর আপনার এগুলি পড়ার ইচ্ছা রইলো। কি পরিমান কমিক্স যে আমার পড়া বাকি! প্রিচার, স্যান্ডম্যান, লুসিফার, ফেবলস, ফ্রম হেল, ব্ল্যাক অর্কিড, থার্টি ডে'স অফ নাইট - আহ, কি শান্তি!
ওগুলির সাথে আমার উল্লেখ করাগুলির মিল যৎসামান্য, এগুলি অনেক সাদামাঠা। ঐ সব ধুমধারাক্কা পড়ার পর এইগুলি পড়তে ঘুম পাবে। আগেই জানায়ে রাখলাম।
দেখতে হবে লিস্টে টুকে নিলাম
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
আপনি মশাই শুধু টুকেই যাচ্ছেন, না কি দেখছেনও?
এর আগে কোনো এক লেখায় এই সিনেমার কথা উল্লেখ করেছিলেন। এখনও দেখা হয়নি। দারুণ রিভিউটা পড়ে দেখার আগ্রহ বাড়লো অনেক।
আমি এখনও টিভি সিরিজেই পড়ে আছি। 'টু অ্যান্ড আ হাফ মেন'-এর পাঁচটা সীজন শেষ করে 'দ্য ক্লাস'-এর ফার্স্ট সীজন শেষ করলাম। এরপর দেখি কী দেখা যায়।
সিরিজের ফাঁকেই টুক করে দেখে নেন, মন ভালো হয়ে যাবে!
আরে, আমার তো শুধু সচলের লেখাপত্র পড়ার জন্যও এই এক জীবন অপ্রতুল লাগছে বড়!
তাই, ঢুকে আপনার মাপের তুলনায় বেশ ছোট (কেবল দৈর্ঘ্যের কথাই বলছি) লেখা দেখে অনেক আরাম বোধ করলাম।
শালার কোনদিকে যে দিনটা চ'লে যায় কাজের বিপন্ন ভাঁজে ভ'জে, লিখবো তো দূরের কথা, অন্যকিছু পড়বোও তো দূরের কথা, এই অঞ্চলের লেখাগুলোতেও ঠিকঠাক চোখ বুলাতে পারি না!
যাক, লেখা ছবির ডিভিডি'র ফ্ল্যাপের মতোই প্রিসাইজ, অ্যাপিলিং আর গ্র্যাবিং হয়েছে।
সো, দেখার ইচ্ছাও হয়েছে, আবার ছোট কলেবরের মধ্যেও না-দেখা চোখকেও ছবিটির একটা হাই-ফাই (টেকস্ট-)ট্রেলার দেখানো আসোলে হয়েও গ্যাছে আপনার।
বেশ ভালো।
___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
আসলে এই ছবিটা অনেক গভীর কথাও অবলীলায় বলে যায়, মৌলবাদ ধর্মান্ধতা এই সব নিয়ে। সে সব নিয়ে বিশ্লেষণ করার দরকার থাকে না, তাই লেখার দৈর্ঘ্য বাড়াই নি সে পথে গিয়ে। তাতে যে আপনার উপকারই হবে এইটা অবশ্য আগে ভাবি নি
সময় কম থাকলেও এই ছবিটা দেখতে পারেন, ছোট সিনেমা আর খুব উপভোগ্যও বটে।
"Writer of Namesake'
ঞঁ??
স্ক্রিপ্ট রাইটার বলতে চাইছেন?
----------------------------------------------------
"নিভন্ত এই চুল্লিতে মা
একটু আগুন দে
আরেকটু কাল বেঁচেই থাকি
বাঁচার আনন্দে৷'
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
আরে রামোঃ এ তো মহা সুপার ব্লান্ডার! থাংক য়ু ধরিয়ে দেওয়ার জন্য, ঠিক করে দিলাম।
নতুন মন্তব্য করুন