ছবির মতো শহর সাভানা: ১

মূলত পাঠক এর ছবি
লিখেছেন মূলত পাঠক (তারিখ: বুধ, ২৭/০৫/২০০৯ - ৫:৪৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

উদ্যানকন্যাউদ্যানকন্যা

কখনো এমন হয়নি আপনার কোনো জায়গার কথা শুনে, যে এই জায়গাটায় যেতেই হবে? গেলে নিশ্চিতভাবে ভালো লাগবে এই বিশ্বাস মনে আসে নি? সাভানার ব্যাপারে ঠিক তাই হয়েছিলো আমার। জন বেরেন্ডট-এর বেস্টসেলার বইয়ের ভিত্তিতে তৈরি ভালোমন্দের বাগানে মধ্যরাত (Midnight in the Garden of Good and Evil) সিনেমাটায় সাভানা নিজেই একটা চরিত্র, প্রধান চরিত্র। কেভিন স্পেসি, জুড ল আর জন ক্যুসাকের মতো অভিনেতাকে ছাপিয়ে এই শহর রঙেরসে প্রাণবন্ত হয়ে সেই ছবিতে। বইটা না পড়লেও সিনেমাটা দেখে অবধি সাভানা যাওয়ার ইচ্ছেটা ছিলো প্রবল।



আগে একবার পথে মধ্যাহ্নভোজনার্থে থামলেও শহরটাকে ভালো করে দেখা হয়ে ওঠে নি। এতোদিনে সুযোগ হলো, এবং না দেখেও যে প্রেমে পড়েছিলাম, তার ভ্যালিডেশন হলো এমন প্রবলভাবে যে মেঘবৃষ্টির অত্যাচারেও তার বর্ণচ্ছটার কোনো ঘাটতি হলো না। এতো ছবি তুলেছি যে একদিনে দিলে অবিচার হয়ে যাবে, তাই সাভানা সিরিজ শুরু করছি।



আজ চলুন হাঁটি এর সবুজ গাছে ঢাকা রাস্তাঘাট ধরে, মাঝে মাঝে থেমে দেখি স্থাপত্য আর শিল্পের নিদর্শন অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতকের ম্যানসনগুলো, অনুভব করি এই পুরোনো শহরের প্রাণস্পন্দন।



নদীর নামও সাভানা, তারই দক্ষিণে শহর। ১৭৩৩ সালে শহরের পত্তন হয়। ঔপনিবেশিক ইতিহাস শুনিয়ে লেখা দীর্ঘ করতে চাই না, তবে সিভিল ওয়ার শেষ হওয়ার পর থেকে সাভানার চেহারা বিশেষ বদলায় নি, তাই ইতিহাস এখানে দৈনন্দিনতার অঙ্গ হয়ে রয়ে গেছে।



উত্তর-দক্ষিণ-পুব-পশ্চিম মিলিয়ে গোটা শহরটাই পায়ে হঁেটে ঘোরা যায়। কাউন্টি কোর্টহাউসের কাছে বহুতল দুখানা পার্কিং লটে গাড়ি গুঁজে দিয়ে বেরিয়ে পড়ুন, কোনোকিছুই হাঁটা দুরত্বের বাইরে নয়।


১০


১১

আর পাঁচটা আমেরিকান শহরের মতো যাতে না দেখায় সে অভিপ্রায় নিয়ে এর পরিকল্পনা করা হয়েছিলো বলেই পথঘাটের নক্সাও একদম অন্যরকম। অনেকগুলো স্কোয়ার আছে শহরের মাঝে, পথের মাঝে যেমনভাবে আইল্যান্ড থাকে সেইরকম, কিন্তু আকৃতি চতুষ্কোণ, আকারে ছোটোখাটো পার্ক একেকটা।


১২


১৩

স্কোয়ারগুলো গাছের ছায়াঘেরা, সেখানে রঙিন ফুলের কেয়ারি করা পথের পাশে কাঠের বেঞ্চি পাতা, আর মাঝখানে স্তম্ভের উপর মর্মরমূর্তি, কিম্বা জলছেটানো ফোয়ারা। কুকুরসাথে প্রেমিকপ্রেমিকা কিম্বা অবসরউপভোগী প্রৌঢ়াসখিদল দুদণ্ড জিরিয়ে নেয় সেখানে।


১৪


১৫

রাস্তার দুধারে বড়ো বড়ো গাঢ় সবুজ গাছের ক্যানোপি। প্রাচীন সেই সব গাছের ডালে ঝুলে আছে পরগাছা, সব মিলিয়ে বেশ একটা জঙ্গুলে আবহাওয়া তৈরি হয়। ঘোড়াগাড়ি ছুটে যাচ্ছে মাঝে মাঝেই, কাঠের ট্রাম আর কোচগাড়িও আছে।


১৬


১৭

সুন্দর সুন্দর নানারঙের বাড়িঘর, লোহার কারুকাজে সাজানো রেলিং, জানালায় পটারিতে পিটুনিয়া জারবেরা বিগোনিয়া ফুটে আছে, কোথাও আইভিলতায় ঢাকা দেয়াল। পথের ধারে অজস্র ম্যাগনোলিয়া গাছ, এখন তাদের ফুল ফোটানোর সময়, সাদা বড়ো বড়ো ফুল ফুটে আছে গাছ আলো ক'রে।


১৮


১৯

আজ এই পর্যন্তই থাক, কাল ছবি দেখা যাবে সাভানার শিল্পসংস্কৃতির। তার পরেও হাতে আরো থাকবে ছবি, কাজেই যাঁরা কাছাকাছি থাকেন তাঁরা এই বেলা বেড়ানোর পরিকল্পনাটা বানিয়ে ফেলুন। গরম বাড়লে কিন্তু দক্ষিণে বেড়ানো কঠিন হয়ে যায়।


২০

ছবিগুলো তোলা হয়েছে ক্যানন রেবেল এক্স এস আই (ডিজিটাল)-এ ক্যানন ইওএস৩০০(নন-ডিজিটাল)-এর ৭৫-৩০০ মিলিমিটার লেন্স ব্যবহার করে। ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য, যেমন ডেস্কটপ, অনুমতির প্রয়োজন নেই, আমি বরং আহ্লাদিতই হবো তাতে। ছবির মাঝের বর্ণনা ক্যাপশন নয়, বরং লেখা ও ছবি দুটি সমান্তরাল ধারার মতো বয়েছে এই পোস্টে।


মন্তব্য

ধুসর গোধূলি এর ছবি
মূলত পাঠক এর ছবি

দুঃখ কইরেন না, ইউরোপে এইরকম সুন্দর বাড়িঘর অনেক আছে, এইরকম সবুজ হয়তো নাও হইতে পারে কিন্তু স্থাপত্যের হিসাবে এরে টেক্কা দেয়া কিচ্ছু না তাগো পক্ষে।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

এদের দেশে ৯০-১০০ ভাগ বাড়ি-ঘরই পুরানা আমলের। তবে কতটা ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য তা আমার ঢের সন্দেহ আছে। কালো টাকা আর ট্যাক্স ফাঁকির ব্যবস্থা থাকলে এখানেও অলিতে গলিতে মার্কেট উঠতো।

মূলত পাঠক এর ছবি

কানাডার কথা বলছেন? সে তো ভালো জানি না। আমেরিকায় তো এই সব নিয়ে ভালো কড়াকড়ি আছে, চাইলেই ভাঙা বা নবনির্মাণ সম্ভব নয়, অনেক ঝঞ্ঝাট আছে বলেই জানি।

ভুতুম এর ছবি

ছবির মতো সুন্দর কী করে বলি, কারণ ছবিই এতো সুন্দর তো বাস্তবে আরো সুন্দর হবার কথা। আপনাকে বেশ হিংসা হচ্ছে, বেশ ঘুরেফিরে বেড়ালেন।

-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি

মূলত পাঠক এর ছবি

না না বাস্তবে এতো কিছু না, আমার ক্যামেরার গুণেই এমন চমৎকার লাগছে হাসি

(এইখানে হেসে মাটিতে গড়াগড়ির এবং হাসতে হাসতে হঁেচকি উঠে যাওয়ার ইমো কল্পনা করতে হবে)

সিরাত এর ছবি

দারুন লাগলো রাজর্ষিদা! আমেরিকান সাউথ আসলেই একটা ব্যাপক ইউনিক এলাকা। কিছুদিন আগেও 'নর্থ এ্যান্ড সাউথ' টিভি সিরিজটা দেখছিলাম, সাভানার বাড়িঘর দেখে প্ল্যানটেশন ওউনারদের কথা মনে পড়ে গেল! চার্লস্টোনের সাথে মিল আছে দেখা যায়! সব ইতিহাসেরই একটা ডার্ক সাইড থাকে আর কি।

কোথায় সাভান, কোথায় সেন্ট পল! হাসি

মূলত পাঠক এর ছবি

ঠিকই, ইচ্ছে ছিলো চার্লসটনটাও যাবো ফেরার পথে, সাভানা থেকে মাত্র দু ঘন্টা খানেক। কিন্তু একই জিনিস দুবার একই ট্রিপে দেখতে ইচ্ছে হলো না। তার বদলে ফিরে এসে ভালো মন্দ খেলাম আর স্টার ট্রেক (থিয়েটারে) আর ডাব্লিউ (ডিভিডিতে) দেখে লং উইকেন্ড সেলিব্রেট করলাম। হাসি

দ্রোহী এর ছবি

জুনের শেষ সপ্তাহে সাভানাতে ক্যাম্পিংয়ের প্ল্যান করেছি। আমার এখান থেকে ঘন্টা পাঁচেকের ড্রাইভিং দূরত্ব। দেঁতো হাসি

মূলত পাঠক এর ছবি

বাহ্ বাহ্, এই তো স্পিরিট!

ঐ সময় ছাতা নিয়ে যাবেন, যাতে রোদে অসুবিধা না হয়। শহরটা হঁেটে দেখাই ভালো, গাড়ি নিয়ে সুবিধা হবে না।

ক্যাম্পিং গ্রাউন্ডটা কোথায়, সাভানার কাছে? ওই আইল্যান্ডগুলোর কোনোটায়?

দ্রোহী এর ছবি

গিন্নি হচ্ছেন ট্রিপ প্ল্যানার। আমি তেমন কিছু জানি না। যতদূর জানি দ্বীপগুলোর কোন একটাতেই।

আটলান্টাতে কোথায় নিবাস আপনার? আমি আটলান্টা থেকে মাত্র দেড় ঘন্টা দূরেই থাকি।

মূলত পাঠক এর ছবি

আমি আটলান্টায় থাকি না এখনো, এখন থাকি অ্যাথেন্সে। পড়াশুনা বাবদ।

মূলত পাঠক এর ছবি

দেরি কিসের? হাসি

মুস্তাফিজ এর ছবি

একদিন যাবো নিশ্চয়ই

...........................
Every Picture Tells a Story

মূলত পাঠক এর ছবি

অবশ্যই। জানাবেন, তাহলে গাড়োয়ান আর আটলান্টায় থাকার ব্যবস্থা হয়ে যাবে।

বিপ্লব রহমান এর ছবি

আমিও বড়ো হলে সাভানা যাবো!! খাইছে


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

মূলত পাঠক এর ছবি

নিশ্চয়ই স্যার হাসি

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

দেখেই বেড়াতে যেতে ইচ্ছে করছে। খুব সুন্দর লাগল শহরটা, আপনার ছবিগুলো। আরো সাভানা দেখার অপেক্ষায় থাকলাম। হাসি

মূলত পাঠক এর ছবি

সত্যি সুন্দর জায়গা। আজ আরেক পর্ব লিখবো ভাবছি, কিন্তু আমার লেখাটা ২য় পাতায় যাচ্ছে না আপনারা কম কম লিখছেন বলে। এদিকে একটা গোটা গল্প লিখে দু-তিন জন সচলের মতামতের আশায় আছি, সেইটা একটু অদলবদল করে লিখে ভাগে ভাগে পোস্টাবো, তার ছবি এঁকে ফেলেছি। তাছাড়া স্টার ট্রেক দেখে অবধি মুগ্ধ, কিন্তু সেইটা নিয়ে লিখতে চাই না, ভুতুম লিখলেই ভালো হয়, তার কমিক্সাভিজ্ঞতা-সহকারে।

এখন কারে ছেড়ে কারে ধরি!

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ইচ্ছে করেই শুধু ছবিতে চোখ বুলিয়ে ছেড়ে দিচ্ছি এই সিরিজটা। সময় হলে পোস্ট (এবং লেখক) খুঁড়ে বের করবো। আশা করি আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই সময়টুকু হবে। চোখ টিপি

যতদূর জানি, ২৪ ঘন্টায় একটি করে লেখা দেওয়াই যায়। লেখা কম বলে দ্বিতীয় পাতায় যেতে সময় লাগতে পারে, কিন্তু এর মধ্যে ২৪ ঘন্টা হলে পোস্টিয়ে দিয়েন। নীড়পাতায় দুই বা ততাধিক লেখা চলে এলে পুরনোগুলোকে "নিজের ব্লগ"-এ প্রকাশ করে দিতে পারেন।

মূলত পাঠক এর ছবি

নিশ্চয়ই, এই দিকে এলে লেখককে খুঁজে বের করতে সময় লাগবে না বিশেষ। আসছেনই তো।

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

সব সুন্দর।
খুব সুন্দর।
চলুক

___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

মূলত পাঠক এর ছবি

ধন্যবাদ। হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।