হোটেল বুক করা হয়ে গিয়েছে, এর পর দেখা গেলো উইকেন্ডের আবহাওয়া অতিশয় মনখারাপ-করা। বেড়াতে গিয়ে বৃষ্টি হলে সব মাটি, কিন্তু উপায়ান্তর না পেয়ে রওনা হয়ে গেলাম। প্রথম দিনটা কাটালাম টাইবি আইল্যান্ডের সমুদ্রতটে। খুব আলাদা কিছু না, আর আমি নিজে সমুদ্রের তেমন ভক্ত নই, খুব তাড়াতাড়ি বোরড হয়ে যাই, তবু গেলাম।
২
৩
মেঘলা আকাশ আর ঝিরঝিরে বৃষ্টি, অনেক লোকজন থাকলেও পুরো ব্যাপারটা বেশ ম্যাদামারা, বাংলায় যারে কয় ডাল। কয়েকটি বালক আর যুবক সার্ফ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলো, যদিও ঢেউ ঠিক পর্যাপ্ত ছিলো না বলে অনেক ক্যামেরা তাক করেও তাদের সার্ফিংক্ষণের ছবি পেলাম না, আলসের মতো উপুড় হয়ে ভেসেই গেলো তারা।
৪
৫
বালিকারা স্বল্পবেশ, আর কেন কে জানে, প্রচুর পৃথুলা মহিলার সমাহার। পিয়রের উপর থেকে অনেকে মাছ ধরছে, এক বয়স্ক নবদম্পতি সেখানেই অল্প কিছু বন্ধুজনের উপস্থিতিতে বিয়ের সাজে ছবিটবি তুলছে।
৬
৭
শেষে একটা সময় ধেত্তেরি বলে খেতে গেলাম এক সী-ফুড রেস্তোঁরায়, সেও কিছু মনমাতানো হলো না। গাড়ির কাছে ফিরে এসে দেখি পার্কিং টিকিট খেয়ে বসে আছি! সব মিলিয়ে বেশ মুড অফ টাইপ অবস্থা। আমার সঙ্গী যে সদা সর্বদা ননসেন্স জোকস মেরে যায় সেও দেখলাম মুষড়ে পড়েছে খানিকটা।
৮
৯
হোটেলে ফিরে সে ছোকরা টিভি চালিয়ে লেপের ভেতর সঁেধিয়ে গেলো। আমি একটু মন চাঙা করার জন্য হোটেলের বারের দিকে হাঁটা দিলাম। ফোর পয়েন্ট মোটামুটি ভদ্রস্থ হোটেল, বারটাও ভালো, বেশি ভিড়টিড় নেই, আর পানীয়ও খুব মহার্ঘ নয় সেখানে। বারটেন্ডারের নাম টিম, হাস্যময় আর বন্ধুত্বপূর্ণ হওয়ায় ভালো আড্ডা মারা গেলো তার আর বারের বাকি জনতার সাথে। আমি একটু চিন্তায় ছিলাম, একটা গোটা দিন কাটানোর মতো জায়গা আছে কিনা এই ছোট্টো শহরে সেই কথা ভেবে। টিম দেখলাম উল্টোটাই বললো, এবং তার উপদেশাবলী পালন করে পরদিন দেখেছি তার কথা সত্যি। সাভানায় অনেক ইতিহাস আছে, এবং আর্ট-কালচারেরও অনেক দ্রষ্টব্য রয়েছে। তবে ছুটে ছুটে দেখলে সাভানার মুডটা ধরা মুশকিল। এই দক্ষিণে জীবন ধীর লয়ের, ম্যানহাটান-স্টাইলে দৌড়ের উপর ঘুরলে সে মজা মাটি হয়। কাজেই রয়েসয়ে বিকেল পার করে ডাউনটাউন যাওয়া গেলো। জ্যাজড বলে একটা জ্যাজ বার কাম টাপাস রেস্তোঁরার নাম শুনেছিলাম, কিন্তু সেখানে জায়গা পাওয়া গেলো না। পলা ডিনের বিখ্যাত লেডি অ্যান্ড সন্সে আগের বারের অভিজ্ঞতা তেমন কিছু মনে হয় নি। তাও সেখানে চেষ্টা করলাম, কিন্তু লং উইকেন্ডে সর্বত্রই এক দশা। অতএব ডাউনটাউনে ঘুরতে ঘুরতে আর ছবি তুলতে তুলতে চোখ খোলা রাখলাম, ভালো কোনো খাওয়ার জায়গার জন্য। শেষে ব্রাউটন স্ট্রীটে রুয়ান বলে একটা থাই রেস্তোঁরায় ঢোকা গেলো, এবং চমৎকার খাবার খেয়ে মনপ্রাণ চাঙা হয়ে উঠলো। আমি কায়দা মেরে সুপার-হট জাতীয় বানাতে বলেছিলাম, সে এক রাক্ষুসে ঝাল, হুশহাশ করে খেলাম। তবে পোর্ক স্কিউয়ারটা অসামান্য বানিয়েছিলো, কেউ যদি যান ওটা খেতে ভুলবেন না।
১০
১১
হোটেলে ফিরে বারে বসে লেকার্সের ম্যাচের শেষটা দেখলাম, সিয়েরা নেভাদা অতি উত্তম বীয়ার সেটাও এই বেলা বলে রাখি তাঁদের জন্য যাঁরা পেল এল ভালোবাসেন। টিম এবারও উপকারে এলো, আমার সঙ্গীকে এইটে বোঝাতে যে উল্ভেরিন ছবিটি প্রায় লাভ স্টোরি, কাজেই সে অতঃপর আমাকে ওই বস্তুটি দেখতে যাবার জন্য ঘ্যানঘ্যান করবে না জেনে আশ্বস্ত হলাম।
১২
১৩
পরদিন সকালে দেরি করে ঘুম থেকে উঠে ডাউনটাউন পৌছে কফি হাতে টহল দিতে বেরোলাম। রিভার ফ্রন্ট জায়গাটা বেশ প্রাণোচ্ছ্বল, নদীতে রঙচঙে জাহাজ, নদীতীরে অনেক ছোটো ছোটো আর্টওয়ার্কের দোকান এবং গ্যালারি। সেখানে ঘুরে এবার আবার শহরের ভেতরে ঢোকা গেলো। তার কিছু ছবি কাল দেখেছেন, আরো কিছু, এবং এই শিল্পময় শহরের আর্ট-কালচারের ছবি নিয়ে কালকের পর্ব হবে। সকালে একবার ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নেমেছিলো, তার ছবি দিয়ে শেষ করি আজকের পর্ব।
১৪
ছবিগুলো তোলা হয়েছে ক্যানন রেবেল এক্স এস আই (ডিজিটাল)-এ ক্যানন ইওএস৩০০(নন-ডিজিটাল)-এর ৭৫-৩০০ মিলিমিটার লেন্স ব্যবহার করে। ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য, যেমন ডেস্কটপ, অনুমতির প্রয়োজন নেই, আমি বরং আহ্লাদিতই হবো তাতে। ছবির মাঝের বর্ণনা ক্যাপশন নয়, বরং লেখা ও ছবি দুটি সমান্তরাল ধারার মতো বয়েছে এই পোস্টে।
মন্তব্য
বাহ। খুব সুন্দর ছবি আর পরিচ্ছন্ন বর্ননা। আপনি মূলত পাঠক হলেও লেখত হিসেবে একেবারেই কম নন!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
অনেক ধন্যবাদ তীরন্দাজ স্যার।
খুবই সাবলীল লেখা, এক নি:শ্বাসে পড়ে শেষ করলাম, আপনার লেখাটা, আর ছবির কথা কি বলব, থাকি ডেলাওয়ার, ১২-১৮ ঘন্টার ড্রাইভেও যদি যাওয়া যেত, এখনই ছুটে যেতাম।
আরে আরো অনেক ভালো জায়গা আছে, আপনার শহরের কাছেও, বেরিয়ে পড়েন না!
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
স্বল্পবেশ বালিকাদের ছবি কই??? এইসব ঠিক না, এক্কেবারে ঠিক না।
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
স্বল্পবেশ বালিকার ছবি তুলে মার খাই আর কি! আপনে আসেন, স্বচক্ষে দেখেন।
তবে সেই দিন স্থূলাঙ্গিনীর সংখ্যা একটু বেশি ছিলো এও সত্যি।
ভাল্লাগছে! ইতিহাসে ভরা শহর, দেখলেই বোঝা যায়। সিভিল ওয়ারের সময় শেরম্যান ভাই সাভানারে পুড়ায় নাই? ক্যান?
ইতিহাসের সাথে মিলায় একটু বর্ণনা দেন না!
সত্যি বলতে কী, এই সফরে শহরটা বাইরে বাইরে থেকে দেখলাম, ইতিহাস জানার জন্য আরেকটু ভেতরে ঢুকতে হয়। আবার যাবো একসময়, বেশি দূর না, ঘন্টাচারেক ড্রাইভ করলেই পৌছে যাওয়া যায়। টেলফেয়ার মিউজিয়ামটাও দেখবো তখন, এবার সময় পাই নি।
তবে আপনার কথা মতো নেক্সট এপিসোডে হিস্ট্রি চ্যানেল চালানো যাবে'খন।
প্রথম ছবিতে তীব্র পোতিবাদ ও দিক্কার।
দ্বিতীয় ছবিতে জুম ব্যবহার না করায় দিক্কার।
চতুর্থ ও পঞ্চম ছবিতে বালিকার পরিবর্তে পুরুষ মডেল ব্যবহার করায় দিক্কার।
৬-১৪ ছবিগুলোতে জাঝা।
পোস্ট নিয়ে কী বলবো, খাড়ান! ভাইজান যাইতাছি আগামী মাসেই!!!!!!!!!
এবারেরটাও ভালো হয়েছে। তবে কথা হচ্ছে কী না--
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
থাংকু
১, ৪, ৫: এই মুলুকে মাইয়ারা সার্ফিং করে দেখি নাই। পশ্চিমতটে গেলে ধিক্কারের প্রতিকার হতে পারে।
২: এতে জুম না থাকলেও অন্য ছবিতে ছিলো, তবে সেগুলি এই পাব্লিক ফোরামে দিলাম না বালিকাদের প্রাইভেসির কথা ভেবে।
জাঝার উত্তরে খুশি হইলাম। আচ্ছা, এই জাঝা কি কোনো শব্দের সংক্ষিপ্তরূপ?
আগামি মাসে দেখুম'অনে, কতো স্বল্পবসনা বালিকার ছবি পোস্টান।
স্বল্পবসনা বালিকার ছবি পাওয়ার সম্ভাবনা নিতান্তই শূন্য। কারণ, ওটা গিন্নির ডিপার্টমেন্ট। আমি ক্যামেরা-ম্যামেরার চাইতে চর্মচক্ষুর ব্যবহারেই বেশি উৎসাহী।
সুন্দর - সবই!
থাংকু লুৎফুল আরেফীন সাহেব।
হুম।
সব ছবি আর লেখাই একেবারে ছবির মতো!
___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
অনেক ধন্যবাদ।
আহা, কী সুন্দর! প্রথম ছবির লোকটাকে দেখে আমি ভাবলাম বুঝি লেখক নিজেই।
)))
----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আহা তা ভুল কী ভাবলেন, ওইটা তো সেল্ফ পোর্ট্রেটই ছিলো। মানে আমি নিজে নিজের ছবি আঁকলে ওই জাতীয়ই কিছু আঁকতাম। আমি তো প্রায় ওই রকমই দেখতে, সিক্সপ্যাকটা শুধু বাকি আছে।
বললে বলতাম - ছবিগুলা খুবই সুন্দর!
তবে কিনা - আমার জন্য সাভানা'র গপ্পো ইট্টুস 'মা'র কাছে মাসীর গল্প' করার মতো হয়ে যাচ্ছে, তাই কিসুই বললাম না .......
বললে বলতেন? তা-ও বলবেন না? কিছুতেই না?
- আমি কমেন্ট করলেতো মেম্বরের কমেন্টের কপি হৈয়া যায়, তখন আবার গমচুরির মামলায় ফাইসা যামু। তয় ভাই, কামটা আপনে এক্কেরেই ভালো করেন নাই, দুই নাম্বার ফটুকটার মতোন আরও কয়েকটা 'দুই নাম্বার' ফটুক আমাদেরকে না দেখায়া!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আরে মিয়া শেষে আমি মাইর খাই সেই রমণিকূলের হাতে এই চান?
আমিও কিন্তু প্রথমে তাই ভেবেছিলাম যে শুরুর ছবিটা আপনার নিজেরই!
খুব ভাল লাগল। খুব সুন্দর হয়েছে। তবে ছবিগুলোর ব্যাপারে আরো একটু উদারতা দেখালে আরো ভাল লাগত
আহা এতো জনের এতো আশাভরসার মান রাখতে এইবার একখানা সিক্সপ্যাক বানাতেই হবে মনে হচ্ছে।
আর ভায়া, আমেরিকার সমুদ্রতটে গণপ্রহারে বিকৃতচিত্ত বাঙালির মৃ্ত্যু, এই খবরটা পড়ার খুব সখ হচ্ছে নাকি?
সুন্দর ।মূলত পাঠক দেখি মূলত লেখক হিসেবেও কম যান না
অমাবস্যা
মে ২৯ , ২০০৯
ধন্যবাদ, অমাবস্যা।
এই শহরে যাইতে না পারার দুঃখে, আপনাকে তীব্র দিক্কার।
অবশ্য পোস্টে
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
আরে সুন্দর জায়গা সবখানেই আছে, বোঁচকা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন না আশেপাশের কোনো জায়গার উদ্দেশে।
উত্তম জাঝা'র জাঝা জিনিসটা কী বলেন তো?
জাঝা সহ আরো অনেক প্রশ্নের উত্তর পাবার জন্য পড়ুন এখানে।
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
আহা কী দেখালেন! জ্ঞানার্জন আর হেসে গড়াগড়ি, দুই-ই হলো।
@ সবজান্তা - আমি গেছি, একাধিকবার
নতুন মন্তব্য করুন