সাভানা গল্পের এটা শেষ পর্ব। মাঝে কমিক্সস্রোতে একটু ভেসে গেছিলাম তাই এই বিলম্ব। সিরাত বলেছিলেন সাভানার ইতিহাস নিয়ে একটু কথা বলতে, যৎসামান্য হলেও সেই প্রসঙ্গ আসবে। তবে মূল বিষয় সাভানার আর্ট কালচারের উপর ফোটোগ্রাফি।
জেনারেল জেমস এডওয়ার্ড ওগ্লথর্প রাজা দ্বিতীয় জেমসের ঔপনিবেশিক প্রতিনিধি হিসেবে সাভানা নদীর দক্ষিণ তীরে পৌছোন। তাঁর এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য ছিলো ক্যারোলিনাকে স্পেন-অধিকৃত ফ্লোরিডা ও ফরাসি-অধিকৃত লুইসিয়ানার হাত থেকে বাঁচাতে মাঝখানে একটা দুরত্ব সৃষ্টি করা। শতাধিক সঙ্গীসমেত জেনারেল সাহেব ১৭৩৩-এ জাহাজে চেপে তিন মাসের সমুদ্রযাত্রার শেষে পৌছোলেন এখানে এবং পত্তন করলেন এই শহর।
এরপর আরো নানা ইউরোপীয় অভিযাত্রী ও ঔপনিবেশিকেরা দলে দলে পৌছান এবং এখানে শেকড় গেড়ে বসে পড়েন। এর সুফল হিসেবে পাওয়া যায় আজকের সাভানার মিশ্র জনজাতিগত ও সাংস্কৃতিক চরিত্র। প্রথম বিশ বছর দক্ষিণী আতিথেয়তার পরাকাষ্ঠা দেখালেও এরপর সাভানা রয়াল কলোনি হয়ে যায়, এবং তার পরের ইতিহাস খুব চেনা। বণিক ও শ্রমিকের আগমন শুরু হয়, নিচু জলাভূমিতে ধানক্ষেত বানানো হয় পশ্চিম আফ্রিকার ক্রীতদাসের ঘাম, রক্ত ও অভিজ্ঞতার মূল্যে, ন'বছরে এখান থেকে ইউরোপে রপ্তানি হয় পাঁচ লাখ হরিণের চামড়া। চার্লসটনকে হারিয়ে দিয়ে সাভানা হয়ে ওঠে দক্ষিণের প্রধান বন্দর।
সিভিল ওয়ারের সময় ১৮৬৪তে জেনারেল শেরম্যানের নেতৃত্বে সাভানা কব্জা করা হয়, কিন্তু এই লড়াই সহজ হয় নি। প্রায় একশ মিলিয়ন ডলারের ক্ষয়ক্ষতির মূল্যে অর্জিত এই শহর ছিলো জেনারেল শেরম্যানের তরফ থেকে লিঙ্কনকে ক্রিসমাস উপহার। সাভানার অর্থনৈতিক উন্নতির ইতিহাস দক্ষিণের অন্যান্য অঞ্চলের মতোই তুলোচাষের সূত্রে গাঁথা। সাম্প্রতিক কালে সাভানার মুখ্য আয় ভ্রমণ থেকে আসে। সেন্ট প্যাট্রিকস ডে এখানে একটা বড়ো পার্বন, আইরিশ জনগোষ্ঠির সংখ্যাধিক্যের কারণেই। গত বছর ঐ দিনটায় সাভানায় থাকার সৌভাগ্য হয়েছিলো আমার, মধ্যদিনের সূর্যের নিচে সবুজ রঙে ছয়লাপ এক শহর ভর্তি মাতালের হুল্লোড়ে সাভানার ছবিটা একেবারে অন্যরকম থাকে সেই একটা দিনে।
সাভানার ইতিহাস আরো জানতে হলে পড়ুন এখানে।
আজকের সাভানায় শিল্পসংস্কৃতির উপস্থিতি সাদাচোখেও ধরা পড়ে। শহরটা খুব ছোটো হলেও মিউজিয়াম ও আর্ট গ্যালারি আছে অনেকগুলো। এছাড়া নদীতীের শিল্পীরা পথের ধার দিয়ে তাঁবু বানিয়ে ছবি বেচছে। বড়ো আর্ট গ্যালারিতেও ছবি ও ভাস্কর্য বিক্রি হচ্ছে। এই রকম একটাতে ঢুঁ মেরে আলাপ হলো এক শিল্পীর সাথে যার নাম অ্যান (সারনেম গেছি ভুলে)। সে ছোটো ছোটো শিল্পকর্ম বানিয়েছে দেয়ালে টানানোর বা টেবিল/ম্যান্টেলপিসে বসানোর মতো, এমনকি গয়নাটয়নাও আছে, উপাদান ধাতু, পাথর, রঙ এবং কাঁচ। একটা রঙিন ফুল দেখে কৌতূহল হলো, অনেকটা আমাদের দেশীয় মিনাকারির মতো। অ্যান তার নির্মানকৌশল যা বললো শুনে খুব ফারাক দেখলাম না, সেই অশুদ্ধতাযুক্ত (যা থেকে রঙ আসে) কাঁচের গুঁড়ো ধাতুর পাতের উপর ছড়িয়ে সেটা গলিয়ে দিয়ে বর্ণচ্ছটা ফোটানোর সেই একই রকম পদ্ধতি।
সিটি মার্কেট চত্বরে গানবাজনার মুক্তাঙ্গন আসর। এক প্রৌঢ় দম্পতি তাদের গানের তালে নাচ জুড়ে দিলেন শেষ দুপুরের আলোয় সব মিলিয়ে দিব্বি লাগছিলো। ঐ এলাকায় অনেকগুলো বিস্ত্রো জাতীয় খাবারের দোকানের একটায় মরা রোদ্দুরে বসে চমৎকার সী-ফুড খেয়ে তৃপ্তির ঢঁেকুর তুলে সাভানাকে বিদায় দিয়ে বেরিয়ে এলাম।
মন্তব্য
ভালো লাগলো সিরিজটা। লেখা ছবি সবই। অনেকদিন পর সচলে কেউ একটা সিরিজ সম্পূর্ণ করলো।
হা হা, ধন্যবাদ যুধিষ্ঠির। মাঝে মাঝে সিরিজ শেষ হয়, অনেকেই করেন, তবে চীনদেশে চা আবিষ্কৃত হওয়ার পর থেকে ব্যতিক্রম কিছু কিছু দেখা যাচ্ছে।
আমার এক বন্ধুর জন্য এমন একটা ওয়েবসাইটের খোঁজ চাই যেখানে আমেরিকা-নিবাসী বাংলাদেশীদের জন্য রিয়াল এস্টেট, রেন্টাল ও সাব-লিজের খোঁজ পাওয়া যায়। আমার এক বন্ধু একটি দক্ষিণ এশিয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাথে যুক্ত, সেই বাবদ আমেরিকাবাসী বাঙালী মেয়েরা যাঁদের সহায়তা দরকার হয় তাঁদের জন্য এই তথ্যটি কাজে লাগবে। কেউ জানলে জানাবেন দয়া করে।
আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য আলাদা কোন ওয়েবসাইট আছে কিনা জানা নেই। তবে ক্রেইগসলিস্ট দিয়ে উপরোল্লিখিত কাজগুলো করা যেতে পারে।
http://www.craigslist.org/about/sites
ধন্যবাদ আপনাকে। ওঁরা কোনো আলাদা ওয়েবসাইট খুঁজছেন, বিশদে না জানলেও সেইরকমই মনে হয়।
ইতিহাস ছবি ভাস্কর্য প্রকৃতি মানুষ সব কিছু দারুণ মুনশিয়ানায় মিশানো খুব মায়ামায়া লেখা। খুব ভালো লাগলো। তবু আরো পাবার সাধ থেকে যায়, যেন সেই দাড়িবুড়ার কথার মতন, "শেষ হয়ে হইলো না শেষ"।
ভালো লেগেছে, এমন আরো সিরিজ পাবার আশা জাগে মনে।
----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
এমন প্রশংসা পেলে খুব ভালো লাগে, বলাই বাহুল্য, বিশ্বাসও প্রায় করে ফেলি।
অনেক ধন্যবাদ।
বিশ্বাস তো করতেই হবে রজর্ষি'দা। কারণ তুলি'দি তো সত্যিই বলেছেন।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
আপনাকেও ধন্যবাদ তা'লে, কীর্তিনাশা
মুহুহুহুহুহুহুহু!!!!!!!
খাড়ান!! যাইতাছি অতি শীঘ্রই!
একেবারে গুছিয়ে পরিকল্পনা বানিয়ে চলে যান। আমি কয়েকটা জিনিস বাদ দিয়েছি, যেমন মিউসিয়াম। ওগুলো সব পরের বার হবে।
লাঞ্চ ডিনার যদি বিশেষ কোথাও খেতে চান তো পারলে টেলিফোনে বুক করে যেতে পারেন।
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
থাংকু
আপনার বদৌলতে নতুন একটা শহর দেখা হলো, জানা হলো। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
আর, সিরিজটা যে শেষ করেছেন, তা তো আমাদের অনেকের জন্যই বিরাট অনুপ্রেরণা, যাদের কি না আবার একটু চা খাওয়ার ব্যামো আছে।
আপনাদের পড়ে আর দেখে ভালো লেগেছে জেনে তৃপ্তি হলো।
আরে চা তো ভালো জিনিস। চায়ের জোরেই সিরিজ শুরু হয়, চায়ের কাপে চুমুক দিয়েই লেখার আইডিয়া আসে, কাজেই মাঝে একটু চা খাবে না লোকে?
চায়ের কাপে চুমুক দিয়েই লেখার আইডিয়া আসা খারাপ না, কিন্তু কারো কারো লেখা না শেষ করার আইডিয়া চলে আসে, তখনই বিপদ।
___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
থাংকু
খাঁটি কথা।
সাউদার্ন একটা শহর এত কালচারালি রিচ, ভাবতেই অবাক লাগে।
১০ কোটি ডলার নষ্ট সেই ১৮৬৪তে! উফফ! আমেরিকান সিভিল ওয়ারটা বড়ই ট্রমাটিক ছিল গো ওই জাতির জন্য।
আমার ছোট চাচার প্রাক্তন স্ত্রীর ওখানে থাকার কথা... ... :(। ওনার ছেলে দুইটা ঢাকায় না সাভানায় থাকবে তা নিয়ে তর্কাতর্কিও হচ্ছে মনে হয় কিছু। কে জানে কি হবে। তবে সাভানায় দারুন ভাবে জীবন কাটানোর সব উপাদানই আছে দেখা যাচ্ছে।
সাভানার সাথে নিউ ইয়র্ক বা বস্টনের সংস্কৃতির ধরনটা ঠিক হয়তো তুলনীয় নয়। তবে কালচারের তো রকমফের হয়ই, খুব গোঁড়া মতাবলম্বী না হলে দু রকমকেই উপভোগ করা যায়।
ব্যক্তিগতভাবে আমি সাভানায় বেড়াতে যেতে, ভেকেশন কাটাতে চাইলেও থাকতে চাইবো না। জীবন আরেকটু বেশি গতিশীল হওয়া দরকারি।
সুন্দর বর্ণনা। পড়তে পড়তে বেড়াতে যাবার লোভ জাগে।
_________________________________________________________
খাতার দিকে তাকিয়ে দেখি,এক পৃথিবী লিখবো বলে-একটা পাতাও শেষ করিনি।
_________________________________________________________
খাতার দিকে তাকিয়ে দেখি,এক পৃথিবী লিখবো বলে-একটা পাতাও শেষ করিনি। ( জয় গোস্মামী)
ধন্যবাদ।
বেরিয়ে পড়ুন তল্পিতল্পা নিয়ে (নাকি সে সব ছাড়াই, সিরাত তো বলেন দেখি কিচ্ছু না থাকলেও দিব্বি চলে)।
সুন্দর শহর সুন্দর বর্ণনা।
অনেক ধন্যবাদ পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ওয়েলকাম।
নতুন মন্তব্য করুন