অনেক দিন লেখা হয় না কিছু। শুধু সচলে নয়, লেখালেখিই বন্ধ। কেন কী বৃত্তান্ত সে কথা থাক। কিন্তু এ জিনিস তো চলতে দেওযা় যায় না, অতএব আবার কলম ধরার দরকার হলো। লেখাহীন বন্ধ্যা দিনরাত সরীসৃপের মতো শীতল ও শ্লথ, এই ব্যক্তিগত কুযা়শায় সূর্য উঠুক আজ। আনন্দ হয় এই দেখলে যে আমার অনুপস্থিতিতে কযে়কজন সচলের বন্ধু আমার অভাব বোধ করেছেন, বা অন্ততঃ ভুলে যান নি। ধন্যবাদ না দিয়ে বরং কৃতজ্ঞতা জানাতেই জানিযে় যাই স্নিগ্ধা-তুলিরেখা-সিরাত-মামুন-ইশতি-রণদীপম বসু, এঁদের নাম।
৩৭৭ ধারায় মানবতার নিরন্তর অপমান নিয়েই এই লেখা। অন্য ঘটনাটি নিয়ে এখনো যথেষ্ট লেখা পেলাম না নেটে, তবে উল্লেখ করা জরুরি ছিলো।
১৮৬০ সালে ব্রিটিশ শাসকের ভিক্টোরিয়ান মতাদর্শের আলোয় (নাকি অন্ধকারে) প্রণীত হয়েছিলো এই আইনটি। বিশদ পাবেন উইকি ও অন্যান্য বহু জায়গায়। এই আইনে সমকামের উল্লেখ না থাকলেও এবং এর কাগজে কলমে কোনো প্রয়োগ সাম্প্রতিক কালে না হলেও এর অপব্যবহার হয় প্রতিনিয়তই। যে দেশে সাবালক নারীপুরুষকে পার্কে বসতে দেখলেও হাবিলদার এসে হুমকি দিয়ে পয়সা আদায় করে, সেখানে এমন সোনার ডিম-পাড়া হাঁসকে লালনপালন করেন না আইনরক্ষকেরা এ কথা যাঁরা বিশ্বাস করেন তাঁরা মনে মনে অন্ততঃ রামরাজ্যের বাসিন্দা। মজার ব্যাপার হলো যাঁরা এ আইনের প্রবক্তা তাঁদের দেশে এ আইনই যে শুধু তামাদি ও বাতিল হয়ে গেছে তাই নয়, সেখানে এখন সমকাম বিবাহ আইনসিদ্ধ। আমরা অবশ্য সাহেবদের তাড়ালেও ভক্তি কিছু কমতে দিই নি, এবং সম্প্রতি যখন সে আইনের জোর খাটিয়ে লখনৌতে এই ঘটনাটি ঘটে তখন হর্ষোৎফুল্ল অবধি হয়েছি। ৩৭৭ ধারা নাকচ করার জন্য বহু বছরের প্রচেষ্টার ফল যখন ফলতে চলেছে তখন এই আমরাই আবার মুখর হয়েছি নানা প্রশ্ন নিয়ে।
জেসিকা থম্পসন তাঁর ব্লগে এই বিরুদ্ধ মত ও প্রশ্নগুলি একত্র করেছেন এবং সাধ্যমতো উত্তরও দিয়েছেন। সংখ্যালঘুর অধিকারের প্রশ্ন যেখানে জড়িত সেখানে ওঁর মতো এমন সহিষ্ণুতা আমি দেখাতে পারি না। তাই চাইলে ওঁর জবাবগুলো পড়ে নিতে পারেন, আমার মত শুনলে বিরুদ্ধবাদীরা আহত ও অপমানিত হবেন নিদারুণভাবে।
পাঠকদের প্রেরিত এই প্রশ্ন/মতগুলো ছিলো এই রকম:
১) এই বস্তুটা অস্বাভাবিক বা অপ্রাকৃতিক, অতএব পাপ। মানসিক ব্যাধি বই তো কিছু নয়, একে আইনসিদ্ধ করা চলতে পারে না।
২) এ হলো বড়োলোকের ঘোড়ারোগ। গরীব দেশে এ সব নিয়ে নাচার কী আছে?
৩) দেশের সব বড়ো বড়ো সমস্যা কি মিটে গেছে যে এখন এই সব তুশ্চু ইস্যু খুঁজে বার করতে হবে?
৪) আমাদের সনাতন ধর্মের ও সংস্কৃতির বিরোধী এই পাশ্চাত্যের আবর্জনা আমার উঠোনে কেন?
৫) আমি তো গে নই, আমার কী এসে যায়?
আমার উত্তরগুলো যথাসাধ্য নম্র ভাবে দিই। অতিসংবেদনশীল বিরুদ্ধবাদীরা নিজ দায়িত্বে পড়বেন।
১) প্রথম প্রশ্ন নিয়ে সচলায়তনেই অনেক কাল আগে সুদীর্ঘ আলোচনা হয়েছে, পাতার ঠিকানা দিলাম:
অভিজিৎ: পর্ব-১ পর্ব-২ পর্ব-৩ পর্ব-৪
এক সাথে আরো দুটি লেখার খোঁজও দিলাম, যদিও এঁরা বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব নিয়ে লেখেন নি।
স্নিগ্ধা
জ্বিনের বাদশা
যাঁরা "ওরিয়েন্টেশন" না বলে একে "চয়েস" বলেন বা "সেক্সুয়াল প্রেফারেন্স", তাঁদের জন্য ঐ ব্লগটি থেকে একটি চিঠির অংশ তুলে দিলাম, পত্রলেখক অভি শাকিল সেখানে এই গণ্ডমূর্খ রক্ষণশীলদের চমৎকার বিদ্রুপ করে লিখছেন: আজ যদি সমকামিতাকে আইনতঃ আর অপরাধ বলে না মানা হয় তাহলে তো মহা সর্বনাশ, দেশসুদ্ধ সব্বাই তাহলে গে হয়ে যাবে না? হবেই তো, কারণ তাহলে সারা জীবন লোকের ব্যঙ্গবিদ্রুপের শিকার হওয়ার সৌভাগ্য হবে। কোন মানুষটা না চায় যে তার আত্মীয়পরিজন তাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিক আর বন্ধুরা করে দিক পর? ভালোবাসবে কাকে আর জীবন কার সাথে কাটাবে তার এই সিদ্ধান্তের জন্য মন্দির-মসজিদ-গীর্জা থেকে বিতাড়িত হবার এমন দুর্দান্ত সুযোগ ক'জন ছাড়তে পারবে? How can you not choose such a life?
২) তো সখ করে না হয় নাই হলো, কিন্তু আমাদের মধ্যবিত্ত বা গরীব ঘরে কটা এমন গল্প শুনতে পাই? ধনীসমাজে যে বেশি শোনা যায় তার কারণ সেখানে চক্ষুলজ্জার উপদ্রব কম। একটা আইন এসে সে সমস্যা মিটিয়ে দেবে রাতারাতি এমন বলছি না, তবে সব আশা ত্যাগ করারও কারণ দেখি না।
৩) তুচ্ছ সমস্যাই বটে। কিন্সে সাহেবের হিসেব মতো দশ শতাংশ মানুষ সমকামী হয়, তবে ঐটে মূলত সার্ভে, এর কোনো নির্ভুল হিসাব করা যায় নি। অনেকের মতে ভারতে সত্তর মিলিয়ন মতো নাকি সমকামী মানুষ রয়েছে (ঐ ব্লগেই পেলাম)। অন্নবস্ত্রজনিত পাঁচজনের সমস্যা যা তা তো তাঁদের ভুগতেই হয়, তার উপর এই ব্যাপারটা। কল্পনা করুন, আপনি মাঝারি মেধার এক ছাত্র, বাপের সম্পত্তির ভরসা নেই অতএব এই দুর্দিনে চলনসই একটা চাকরি জোটাতে পারবেন কী করে সেই নিয়েই আপনি কমবেশি উদ্বিগ্ন, তার উপর একটা তুশ্চু চ্যালেঞ্জ হাল্কা করে দিয়ে রাখা হলো, চাকরিবাকরি একটা জুটেও যদি যায় তো তারপরে আপনাকে একটা মোচদাড়িওলা লোমশ মদ্দাপুরুষের সাথে কাটাতে হবে বাকি জীবনটা, শুধু দিনেই নয়, রাত্তিরে বিছানাতেও। দেশে এতো বড়ো বড়ো সমস্যা আছে, এখন এই তুচ্ছ বিষয় নিয়ে আর ঝামেলা বাড়াবেন না, ও সব পরে ভেবে দেখবো যখন অন্য সব ঝঞ্ঝাট মিটেটিটে যাবে। হেটেরো হিসেবে এইটে খুব তুশ্চু মনে হবে কি কারোরই?
৪) এইটা একটা সুদীর্ঘ আলোচনা, এখানে তার পরিসর নেই। তাছাড়া আমি ঘোর নাস্তিক, ধর্ম নিয়ে আমার কারবার থাকে একমাত্র ইন্টারভিউ কি পরীক্ষার দিনে। ধর্ম থেকে দুনিয়ার যা ক্ষতি হয়েছে তার পরে এর একমাত্র ব্যক্তিগত ও একান্তে ব্যবহার ছাড়া আর কোনো প্রয়োজন আমি দেখি না। আর সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে পরিবর্তনশীল না ভেবে সনাতনের জয়গান গাইতে গেলেই সুর আর তাল কেটে যায়। কাজেই এর উত্তর আমি দেবো না। আগ্রহীরা আন্তর্জালে প্রচুর লেখা পেয়ে যাবেন। তারপরেও যদি আরো কেউ খোঁজ চান তো বলতে পারেন, নিশ্চয়ই জানাবো। এই লিঙ্কটা দিই, কিছু বিখ্যাত ভারতীয় গে আইকনের সম্পর্কে জানতে চাইলে দেখতে পারেন।
৫) এই প্রশ্নেই আমার গাত্রদাহ সর্বাধিক হয়। ভারত যে পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র, উঠতে বসতে দু বেলা আমরা সে ডঙ্কা বাজাই দেশে ও বিদেশে। ডেমোক্রেসিতে সিদ্ধান্ত জনমতের ভিত্তিতে হয় আর অধিকাংশ ভারতীয় সমকামকে মেনে নেয় না (এইটা নিয়ে আমার সন্দেহ নেই), তাহলে এই ঝঞ্ঝাট দূর করা হবে না কেন? একটা অন্য দিক থেকে ব্যাপারটা দেখা যাক। পটলবাবু এসি ছাড়া ট্রেনে ট্রাভেল করতে পারেন না, এদিকে অসংরক্ষিত কামরা সব ভিড়ে উপচে পড়ে। এইবার স্টেশন চত্বরে কেউ যদি ভোট নেয় (কিংবা গোটা দেশেও, গরীবেরা যদ্দুর জানি এখনো মেজরিটি), তাহলে জনমত বলবে সব কটা কামরা সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হোক। কাজেই ঐ যুক্তিটা খাটে না। তার দুটো কারণ। এক নম্বর, আপনার ব্যক্তিগত জীবন আমাকে কোনো ভাবে অসুবিধায় না ফেললে ডেমোক্রেসি আমাকে অধিকার দেয় না আপনাকে জেলে পাঠানোর। আর দুই, ডেমোক্রেসি সংখ্যালঘুর অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। কার্যক্ষেত্রে যে তা সব সময় হয় না সে তো বলাই বাহুল্য, কিন্তু আইনের চোখেও যদি সেটুকু প্রতিষ্ঠা না করতে পারি তাহলে আর ডেমোক্রেসির বড়াই না করাই ভালো। দাঙ্গায় মাইনরিটি কচুকাটা হয়, আইনের রক্ষকেরা বেআইনিভাবে হাত মেলায় খুনিদের সাথে। কিন্তু আইনও যদি নিরপেক্ষ না থাকে তাহলে কী হয় সংখ্যালঘুর একবার কল্পনা করার চেষ্টা করলে শিউরে উঠতে হয়!
মাইনরিটির সমস্যা যে নিজে টের পায় নি তার পক্ষে বোঝা কঠিন। একটা অপেক্ষাকৃত সুশীলতর উদাহরণ দিই। সচলায়তন যেহেতু বাংলাদেশি বাঙালিদের তৈরি এবং তাঁদের দ্বারাই পরিচালিত, পশ্চিমবঙ্গীয় হিসেবে আমি এখানে মাইনরিটি। সুখের কথা হলো এই ফোরামে অধিকাংশ লেখক ও পাঠক মুক্তমনা বা অন্ততঃ ভদ্র, কাজেই মাইনরিটির সমস্যা প্রকট হয় না। কিন্তু তার পরেও অ-সুখের কথা থেকে যায়। সব্বাই তেমনটি ভালো হলে ভালো হতো, কিন্তু বাস্তবে তো তা হয় না, তাই কখনোই বাতাসে অস্বাচ্ছন্দ্যের বাষ্প পাওয়া যায় না এ কথা বুক ঠুকে বলতে পারি না। সকারণে হলেও ঘৃণা ঘৃণাই থাকে, মনেপ্রাণে করলে রাজনৈতিক বিদ্বেষ ব্যক্তিগতভাবে আঘাত করে। কিন্তু মোদ্দা কথাটা হলো, এর সমাধান কী। এবং সমাধানের আদৌ প্রয়োজন আছে কি না সেটাও। ঠিক যে ভাবে এখানে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী কথাবার্তা মেনে নেওয়া হয় না, সেই রকমই ভাব ও ভাষাকে সংবেদনশীলতার গাইডলাইনের মধ্যে রাখার প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয়। এ নিয়ে বিশদে লেখার ইচ্ছে ছিলো যখন ফারুক ওয়াসিফ-সংক্রান্ত বিতর্ক চলছিলো। কিন্তু তখন সচল হই নি বলে এটা অনধিকার-চর্চা হয়ে যাবে বোধ হওয়ায় লিখি নি। আজকের লেখায় এর বেশি বিশদে লিখলে মূল প্রসঙ্গ থেকে দূরে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাই থামতে হচ্ছে, ভবিষ্যতে মতামত খুলে বলা যাবে না হয়।
যাক বহুদিনের অনুপস্থিতির খেসারত হিসেবে লেখাটা আকারে মন্দ হলো না। মায়ামি-বৃত্তান্ত অসমাপ্ত রেখে এই গায়েব হয়ে যাওয়ার জন্য দুঃখপ্রকাশ করে শেষ করি, সে পর্বও আসিতেছে।
মন্তব্য
হুঁ ...............
আমাদের দেশের সেক্ষপোসী জনতা, যে কোনরকম সেক্ষের গন্ধ পাইলেই হিংস্র হইয়া উঠে৷ দিল্লী শহরে প্রকাশ্যে চুমু খেলে ৫০০ টাকা ফাইন হওয়ার নিয়ম চালু হয়েছিল এই বছর তিনেক আগে৷ সেটা বাতিল হয়েছে বলে তো শুনিনি৷ ধারা ৩৭৭ নিয়েও অনেক গালিগালাজ, গরল উদগীরণ চলছেই৷ তবু অন্তত আইনটা য
এ ঠিকঠাক হল সেটাও অনেক ----- এই আর কি৷
কবে যেন চন্দ্রিলের "Y2K বা সেক্স ক্রমেই আসিতেছে' নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল না? তো, আগে একবার এরকম এক আলোচনার সময় একজন মন্তব্য করেছিলেন "স্রেফ চড় দিয়ে চাপার দাঁতগুলো ফেলে দিতে হয় এইধরণের অম্বুলেগোছের হ্যা হ্যা পার্টিদের -------------' ইত্যাদি ইত্যাদি৷ সিনেমাটা আমাদের অনেকেরই পছন্দ হয় নি৷ কিন্তু এক্ষেত্রে অপছন্দের প্রকাশভঙ্গী লক্ষ করুন ----- সোজা ফিজিক্যাল ভায়োলেন্স৷ তো, এই প্রবণতাই তো সর্বব্যপী৷
----------------------------------------------
"নিভন্ত এই চুল্লিতে মা
একটু আগুন দে
আরেকটু কাল বেঁচেই থাকি
বাঁচার আনন্দে৷'
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
'সেক্ষপোসী জনতা'র ব্যাপারটা খানিকটা কারণ হতে পারে, আর সর্বগ্রাসী চারিত্রিক হিংস্রতা সব পরিবর্তনের আলোচনাকে অঙ্কুরে বিনাশ করে সে-ও সত্যি। কিন্তু এর পরেও যে কারণটা এ সব বদরোগের উপর আরেকটা ছাতা ধরে তা হলো অজ্ঞানতা আর গোঁড়ামির একটা মারাত্মক মিশ্রণ। আমরা জানি না অনেক কিছুই কিন্তু সেইটা নিয়ে কোনো লজ্জা তো নেই-ই, নতুন কিছু জানার বা শেখার আগ্রহও অনুপস্থিত। আর গোঁড়ামির একটা লক্ষণ তো "স্টাটাস ক্যো"বদলাতে না দিতে চাওয়া, পরিবর্তনের নাম শুনলেই গেল-গেল করি।
সব মিলিয়ে ভয়াবহ অবস্থা। তাই সামান্য পরিবর্তনেও খুশি হই, কিছু তো বদলাচ্ছে এই ভেবে।
আগে আপনাকে স্বাগত জানাই। মিস করেছি আপনার নানা ধাঁচের লেখাগুলো।
আর লেখার বিষয়বস্তু নিয়ে তেমন কিছু বলার নেই। নানা জনের নানা মত এ বিষয়ে। বরণ্চ আপনাকে অনেক দিন পর পেয়ে ভালো লাগলো, সেটাই জানিয়ে রাখলাম। আবার লিখতে থাকুন পুরোদমে।
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
অনেক ধন্যবাদ ভুতুম।
ভিন্নমতের স্থান যেখানে নেই সে আলোচনা নয়, একপেশে ভাষণ। একমাত্র ঠুলি-অাঁটা একবগ্গা ঘোড়া ছাড়া সবার মত-ই শুনতে চাই, কাজেই নানা জনের নানা মতের মধ্যে আপনার মতটাও শুনতে আগ্রহী।
পাঠক দা, ওয়েলকাম ব্যাক---!
আপনাকে মিস করছিলাম---
শুভেচ্ছা
অনেক ধন্যবাদ অনিকেত।
যাইনি কোথাও, লগ্ড ইন ছিলাম এবং লেখা পড়ছিলাম তবে লিখতে ইচ্ছে হচ্ছিলো না। গরমকালে কি আর শীতঘুম হয়?
লাজবাব।
ধন্যবাদ ফারুক হাসান।
পাঠক,
আপনাকে ফিরে পেয়ে খুব, খুব ভালো লাগছে। আপনার লেখাগুলো বিচিত্র আর তথ্যপূর্ণ হয় কিন্তু ভারের মতন এসে ঘাড়ে পড়ে না বলে খুব ভালো লাগে।
এই ধরনের জটিল বিষয় নিয়ে দেখেছি কত জায়গায় আলোচনা শেষ পর্যন্ত অপরিচ্ছন্ন হয়ে দাড়ায়, অনেকে দেখেছি সামাজিক, মানসিক, জৈববৈজ্ঞানিক সমস্যাকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে না দেখে নিজেরাই একধরনের বিকৃত কামরস উপভোগ করে বিশ্রি অর্থহীন আলোচনা করে। কেউ বাধা দিয়ে আলোচনা ফলপ্রসূ দিকে ঘোরাতে চাইলে তাকে দলবদ্ধভাবে নেকড়ে হায়েনা লেলিয়ে তাড়ায়। আবার সেই বীরত্বের বিজ্ঞাপণ দিয়ে যায় অসঙ্গতভাবে। বাকি সব কথা না হয় মেইলেই বলবো, এখানে এই সুন্দর পরিবেশে সেই ভয়ানক কথা বলতে প্রবৃত্তি হয় না।
সৌভাগ্যক্রমে সচলে লেখাগুলি উজ্জ্বল সুন্দর, ফলপ্রসূ।
অভিনন্দন রইল।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আপনার ভালো লেগেছে সেইটা খুব আনন্দের কথা। এরকম পুরস্কারের জন্যই লেখা।
মুক্ত আলোচনা যেমন দরকারি, তেমনি প্রাসঙ্গিক রাখার প্রয়োজনটাও কিছু কম নয়, এবং এই জন্য সেন্সরশিপকে আমি স্বাগত জানাই। নোংরামি গালিগালাজ মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অংশ নয়, এবং শুধু সচলেই নয়, সর্বত্রই সেই আবহাওয়া বজায় রাখার জন্য গাইডলাইনের প্রয়োজন আছে। সেই কারণেই ভুতুমকে লেখা মন্তব্যে যা বলেছি তা আরেকবার বলি, একমাত্র ঠুলি-অাঁটা একবগ্গা ঘোডা় ছাডা় সবার মত-ই শুনতে চাই। ইনসেনসিটিভ মন্তব্য যা একজন পাঠককেও আহত করতে পারে সেই জাতীয় কিছু এলে ঘ্যাচাং করতে আমার দ্বিধা হবে না।
আপনার সাম্প্রতিক লেখায় মন্তব্য করা হয় নি বিশেষ, তবে ভালো লেগেছে পড়ে, সেইটা এখানে জানিয়ে রাখলাম।
পৃথিবীটা বড় কঠিন রে ভাই। মানুষের বিভিন্ন মতামত থাকবেই। থাকবে বাড়াবাড়ি, টেক্কা মারার প্রচেষ্টা। যে কোন ফোরামের বা প্লাটফর্মের জন্যে দরকার মানুষ হিসেবে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ। সেইটুকু বজায় রেখে সবাই তার মত প্রকাশ করুক নি:সংকোচে, যুক্তির মাধ্যমে সেটাই কাম্য।
৩৭৭ ধারার উপর রায় নিয়ে আমার বক্তব্য হচ্ছে এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ যে ভুল আইনটিকে শোধরানোর চেষ্টা হচ্ছে। সমকামীতা ঠিক না বেঠিক সে নিয়ে বিতর্ক চলতেই পারে কিন্তু সেটিকে অপরাধ হিসেবে চিন্হিত করা ব্যক্তি স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ। কিন্তু এই রায় টি পরবর্তীতে কিভাবে কার্যকরী হবে তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। এটিকে রাজনীতিকরণ করা হবে না এটির গ্যারান্টি কে দিতে পারে?
অনেকেই জানে না বাংলাদেশে ফতোয়া দেয়া আইনত নিষিদ্ধ করা হয়েছে ২০০১ সালে। কিন্তু এখনও বাংলাদেশে ফতোয়ার নজির পাওয়া যায়। কেউকি আইনের আশ্রয় নিচ্ছে? না। কেন? আমারও প্রশ্ন তাই।
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
ঠিকই বলেছেন রেজওয়ান, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ জিনিসটা থাকলে মতানৈক্য নিয়ে বিতর্ক হয়, বিবাদ হয় না। শ্রদ্ধা আয়ত্ত করা যদি কঠিনও হয়, চরিত্রে ও ব্যবহারে কিছুটা সেনসিটিভিটি / সংবেদনশীলতা আনার চেষ্টা করা যেতেই পারে। যদিও আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ হলো, সেনসিটিভিটি ঠিক আমাদের ফোর্টে নয়। আমরা আবেগপ্রবণ, ভালোওবাসি প্রাণ খুলে, কিন্তু ছোটো ছোটো ব্যাপারে অন্যে আহত হতে পারে কিসে তা নিয়ে মাথা বিশেষ ঘামাই না। যে সব দেশের লোকেরা এ নিয়ে ভাবে তাদের আমরা টাচি-ফিলি বলে পেছনে বিদ্রুপও করি।
মানবতার স্বার্থেই ডিক্রিমিনালাইজেশন জরুরী ছিলো, এবং এ কাজ এখনো শেষ হয় নি, বল এখন প্রধানমন্ত্রীর কোর্টে। তবে সামাজিক পরিবর্তন হলো আসল কথা। কিন্তু সে যাই হোক, এক পা-ও যদি এগোয় আমার দেশ, আমি গর্বিত বোধ করি।
একটা কথা ভালো বুঝতে পারলাম না, "এটিকে রাজনীতিকরণ করা" বলতে কী আশঙ্কার কথা আপনি বলেছেন? একটু ব্যাখ্যা করুন না।
সমস্যা হল, ফাতোয়া দেয়া ইসলাম ধর্মমতে নিষিদ্ধ করা সম্ভব না। এই আইনের অথরিটিই মানে না মানুষজন। এ কারণেই গোলমাল।
কথা ছাড়া পাঁচ! সাবাশ রাজর্ষিদা, সাবাশ!
ধন্যবাদ, সিরাত ভাই।
আপনার ফুলাইন্যা ছবিটা দেখতে পাইরা যা লাগতেছে না! কি মিয়া যান গা টান গা। আর যাইবেন না! মারামারি করবেন, যাইবেন না! ঠিকাছে??
আর শোনেন, আমারে ভাই ডাকলে খেলুম না! আমারে সিরাত ডাকবেন।
একেই বলে লস্ট ইন ট্রান্সলেশন, আমাকে রাজর্ষিদা ডাকলে আমার দেশের হিসাবে আপনি ভাই-ই হবেন, যদিও আপনার দেশে ভাইয়ের অর্থ আলাদা। যাক, ঠিকাছে, সিরাতই সই।
আর মারামারি তো কিছু হয় নি। একটু বিরামকাল চললো, কিন্তু যাক সে সব কথা।
আপনে লোকটা কেমুন জানি। আমাকে কলকাতায় সব্বাই তুমি বইলা ডাকলো, রাস্তার বয়-বেয়ারাও! আপনে ডাকনে আপনি, সঙ্গে ভাই! কি আর কমু।
মারামারি করলে মজা লাগে, তাই বললাম।
বিক্রম শেঠের বই পড়া হচ্ছে না। কিছু রিকমন্ডেশন দেন না।
আমি তো ওঁর কোনো লেখাই পড়ি নি অল্পস্বল্প এক্সার্পটস বাদ দিলে। তবে সচলে পেয়ে যাবেন আশা করি। আমার এক সাহিত্যপ্রেমী বন্ধু শেঠ মশায়ের বড়ো ফ্যান, সে তো স্যুটেবল বয় পড়ে গদগদ হয়ে গিয়েছিলো। তার কথা মানলে ঐটে পড়তে পারেন, তবে সে ডায়াস্পোরিক লেখার একটু বেশিই ভক্ত।
ইউটিউবের এই ভিডিওটা এই প্রসঙ্গে যে সব আপত্তি সচরাচর উঠে থাকে তার উত্তর একসাথে দিয়েছে, আগ্রহীরা দেখতে পারেন।
আমার একটা চিন্তা আছে। বলি।
ইসলাম ধর্মে সমকামীতা কঠিন শাস্তি বহন করা পাপ। ইসলামী দেশগুলোতে ইসলামী আইন মানা হয়, বা অন্তত সেটার বিরোধী কোন আইন আদৌ প্রনয়ণ করা হয় না।
এক সময় কি এমন দেখা যাবে, যে বাকি দুনিয়া সমকামীত্ব বৈধ বা ডিক্রিমিনালাইজ করে বসে আছে, আর ইসলামী দেশগুলো কিছু করছে না, ফলস্বরুপ সংঘাত বা এক্সোডাস?
ভারতেই বা কি হবে? ভারতের ১৮ কোটি মুসলিমের অনেকেই বেশ রক্ষণশীল। এরা বেশিরভাগই গরীবও। এরা এই ডিক্রিমিনালাইজেশনকে তাদের ধর্মের উপর আঘাত মনে করবে (করতে পারে না, করবে)। তখন কি দুইরকম আইন হয়ে যাবে না? ফলে বেশি করে রাষ্ট্রবিরোধী কাজে লিপ্ত হবে মুসলমানরা।
ইসলাম ধর্মের মধ্য থেকে সমকামীতাকে বৈধ করার কোন উপায় দেখি না। ইজমা-ক্বিয়াস ইত্যাদি কোন কাজে দেবে না, এটা অকাট্যভাবে অবৈধ। কোরান-হাদিস দুই জায়গায়ই আছে। সমকামীদের শাস্তি হিসেবে সবচেয়ে কষ্টকরভাবে মৃত্যুর ব্যবস্থার কথা বলা আছে: উঁচু দালান থেকে ফেলে দেয়া বা পুড়িয়ে মারা।
আমি খুব নৈর্ব্যক্তিকভাবে বলার চেষ্টা করছি, কোন ধর্মকে সমালোচনা করা ছাড়া। উদ্দেশ্য হল জানা যে এ দুনিয়ার ২০০ কোটি মুসলিম রাষ্ট্রে বসবাসকারী লোকরা এ ব্যাপারে কি করতে পারে। আর এই ডিক্রিমিনালাইজেশন ভারতের মুসলিমদের উপর কি প্রভাব ফেলবে? যদ্দুর বুঝি - সবচেয়ে উদারপন্থী মুসলিম গ্রুপগুলোর পক্ষেও এটা মেনে নেয়া একেবারেই অসম্ভব, যেখানে কোরান-হাদিসে এর বিরুদ্ধে স্পষ্ট বলা আছে।
ধর্মালোচনা আমি এড়িয়ে চলি কারণ ধর্ম নিয়ে জ্ঞান ও আগ্রহের অভাব। কাজেই এ কাজ অন্য কাউকে করতে হবে। হিন্দুধর্ম ও মনুস্মৃতিতে এর কী বিধান তা নিয়ে সামান্য জানি, সে নিয়ে লেখা যেতে পারে কখনো।
স্বাগতম!
আপনার নানা রকম লেখাগুলো এই কয়দিন মিস করেছি।
_________________________________________________________
খাতার দিকে তাকিয়ে দেখি,এক পৃথিবী লিখবো বলে-একটা পাতাও শেষ করিনি।
_________________________________________________________
খাতার দিকে তাকিয়ে দেখি,এক পৃথিবী লিখবো বলে-একটা পাতাও শেষ করিনি। ( জয় গোস্মামী)
ধন্যবাদ শামীম রুনা।
পাঠুদা, একটু কাছেপিঠে থাকেন। নতুন নতুন লেখাও পাই, আর লেখাগুলো ফ্রিকোয়েন্সিতে ধরাও পড়ে!
একটু ঘঁেটে গেলুম যে, আমি দূরে থাকি এইটে সমস্যা, না লেখাগুলো আঁকশিতে ধরা পড়ছে না এইটে?
৩৭৭ ধারার কথা জানতাম না! "মানবতার নিরন্তর অপমান" - একদম ঠিক কথা!
সমকামিতা যে প্রকৃতিবিরুদ্ধ নয়, অস্বাভাবিক নয়, 'বিকৃতি' নয় - এটা মানতে আমাদের আরও যে কতদিন লাগবে ......
তবুও যে একটু একটু করে হলেও আগাচ্ছি, এটাই ভীষণ আশার কথা!
আমরা কেন যে চাই বাকি পৃথিবীটা ঠিক হুবহু আমার মতো হোক! সেই থেকেই তো এতো সমস্যা, অথচ বৈচিত্রে ভরা এই পৃথিবী যে কতো সুন্দর সে কথা কেবল ভুলে যাই, আর যাঁরা আমার থেকে আলাদা তাঁদের ধর্ম নিয়ে গাত্রবর্ণ নিয়ে ভাষা নিয়ে ঠাট্টা করি, বিদ্রুপ করি, এমন কি ঘৃণাও করি। এর থেকে মুক্তি তাই অধরা থেকে যায়।
নতুন মন্তব্য করুন