ফ্লোরিডা ভ্রমণের তৃতীয় ও অন্তিম পর্বে এসে নামটা একটু গণ্ডগোলের শোনাচ্ছে। এভারগ্লেডস এলাকায় বালুকাবেলা আদৌ নেই, কিন্তু সিরিজের ধারাবাহিকতা রাখতে ঐ নামটাই রাখলাম। বাঙালির কাছে ম্যানগ্রোভ অরণ্য নতুন কিছু নয়। তবু কয়েক বছর আগে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকে এভারগ্লেডসের একটা অসামান্য ফোটোগ্রাফ দেখে একে অবশ্যগন্তব্যের তালিকায় জুড়ে দিয়েছিলাম। যদিও ঐ ছবিটা আসল জায়গার তুলনায় বড়ো বেশি সুন্দর ছিলো, কিন্তু জায়গাটাও মন্দ নয় কিছু, গিয়ে মনে হয়নি কেন এলাম, বরং বেশ উপভোগ্যই লাগলো।
দিনটা ছিলো ঝলমলে, বিকেলের দিকে খানিকটা বৃষ্টি হওয়া ছাড়া আর কোনো সমস্যা হয় নি। অবশ্য বৃষ্টিও আসলে সমস্যা নয়, বরং তারপর সবুজ ধুয়েমুছে আরো সবুজ হয়ে গেলো। সকালের আকাশ একেবারে মায়াবি নীল, তাতে সাদা মেঘেরা চমৎকার ফূর্তির মেজাজে ভেসে বেড়াচ্ছে। পথে গাড়ি খুব কম বলে পাখির ডাক শুনতে কোনোই বাধা নেই। তবে যতো জলাভূমি এগিয়ে আসে, পোকামাকড়ের উৎপাত অসম্ভব রকমের বেড়ে যায়। ক্রান্তীয় অঞ্চলের মানুষ হলেও এমন অভিজ্ঞতা ছিলো না, মশা যে এমন তেএঁটে বজ্জাত ও নাছোড় হতে পারে কে জানতো, বেটাদের প্রাণের কোনো মায়াই নেই। ঝাঁকে ঝাঁকে কামড়াতে আসছে, মেরেও তাড়ানো যায় না এমন! গাড়িতে তবু রক্ষা ছিলো, পৌছে নৌকাভ্রমণের খোঁজ ও টিকিট নিতে গিয়ে প্রাণ ওষ্ঠাগত। শেষে এক ভদ্রলোক তাঁর পোকাতাড়ানি স্প্রে ধার দিয়ে সাময়িকভাবে রক্ষা করলেন। তাড়াতাড়ি গিয়ে এক বোতল কিনে সর্বাঙ্গে মেখে খানিক শান্তি হলো।
নৌকা মানে আসলে লঞ্চ, যাত্রী তাতে আট-নয় জন, এছাডা় চালক নর্থ ক্যারোলিনার এক বয়স্ক অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় ভদ্রলোক ও তাঁর সহকারি একজন ভদ্রমহিলা। কর্পোরেট জীবন কাটিযে় এখন অবসর নিযে় হাজির হযে়ছেন এখানে, বাসনা একটা লঞ্চ কিনে নিজেই চালানো। তাছাডা় নাকি রেস্তোরাঁও খুলতে চান, কর্মোদ্যমের বহর দেখে দিব্বি লাগলো।
খাল কেটে কুমির আনা যে স্রেফ কথার কথা নয়, নৌকাসফর শুরু করে সেটা বুঝলাম। অ্যালিগেটর ফার্মের মতো ঝাঁকে ঝাঁকে না হলেও খালের জলে কয়েকজন কুমির বাবাজির দর্শন মিললো।
লঞ্চচালক ভদ্রলোক গাছ চেনালেন, সবুজ লালচে ও কালচে তিন রঙের পাতাওয়ালা গাছ, জলের ধার বরাবর স্তরের মতো রয়েছে। গাছে গাছে কুঁড়ি এসেছে, ফুল ফোটা শুরু হলো বলে। ম্যানগ্রোভের পাতার মধ্যে দিয়ে রেচন প্রক্রিয়ায় লবণ ত্যাগ করে গাছ, ঝরে পড়া পাতার নিচের পিঠে তার ক্রিস্টাল গজিয়ে থাকে। গাছের এঁকাবঁেকা ডালপালা দেখে অবন ঠাকুরের কাটুমকুটুমের কথা মনে পড়ে।
খাল শুরুতে খুবই সরু, ধীরে ধীরে চওডা় হযে় এক সময় বিশাল হ্রদের মধ্যে গিযে় পডে়। বিশাল আকাশের নিচে বিশাল জলাশয় দিগন্ত বিস্তৃত, মাঝে মাঝে দ্বীপের মতো জেগে আছে ম্যানগ্রোভ গাছের স্তুপ। চরাচর সম্পূর্ণ নিঃশব্দ, জলের সামান্য কুলকুল ছাড়া আর কোনো যন্ত্রধ্বনি নেই। এই অভিজ্ঞতা খুব দুর্লভ।
গাছে গাছে অনেক পাখি উড়ে বেড়াচ্ছে, কয়েক জন পোজ দিতে রাজি হলো, তাদের ছবি দেখাই আপনাদের।
দেখেটেখে বিকেল পেরোলো, বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ড্রাইভ করে মায়ামি ফিরে ফেরার ফ্লাইট ধরলাম।
মন্তব্য
ছবিগুলো অসাধারন।
ধন্যবাদ, প্রজাপতি।
তল্পিতল্পা নিয়ে নতুন শহরে পাড়ি দেওয়া বাবদ বাড়ি খোঁজা, প্যাকিং ইত্যাদিতে ব্যস্ত আছি কিছুটা, লেখালেখির সময় পাওয়া যাচ্ছে না। তবে পড়ছি সবার লেখা যতোটা সম্ভব, বিশেষত মজার লেখাটেখাগুলো। সবাই ভালো থাকুন।
লেখা এখনো পড়িনি। পড়ে মন্তব্য করবো। কুমিরের ছবিতে আমিই মন্তব্য করেছিলাম
ও হো তাই কন
এরপর একটা পাখির ছবি নিয়ে পোস্ট দেবো, আপনার জন্য। পাখির নাম আপনাকে বলতে হবে, আমি কিছুই চিনি না কাক চড়াইয়ের বাইরে।
হা হা .. ঠিকাছে। আমি দক্ষিণ এশিয়ার মোটামুটি আড়াইশ প্রজাতির পাখি চিনি (আসলে চিনতাম বলাই ভালো)। আমেরিকার হয়তো ২০টি প্রজাতি চিনতে পারি। দেখা যাক, চেষ্টা করে দেখব।
লেখা পড়লাম। ভালো লাগলো আপনার বর্ণনা।
আমার দেখা পাখিগুলো খুব সুদুর্লভ হবে না বলেই মনে হয়, ঘরের আঙিনাতেই এদের দেখা পেয়েছি।
লেখা ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো।
অবশেষে! ভালো লেগেছে। প্রথম সাদাকালো ছবিটা সবচেয়ে ভালো লাগলো।
খুব দুঃখিত দেরির জন্য। ইদানিং সময়ের সমস্যা ছিল, খানিকটা কমেছে এদ্দিনে।
আপনার ভালো লেগেছে জেনে আনন্দ পেলাম।
গত মার্চে গেছিলাম। অসাধারণ জায়গা।
ছবিগুলো খুব সুন্দর তুলেছেন মুলোদা।
আরে এ তো দেখি পাকাপাকি মুলো খাওয়ানোর তাল করছেন, ওটা শীতের সব্জি, এই ভরা গরমে পান কোথায়?
থাংকু।
কী করবো বলুন? আপনাকে "মূলত পাঠক" বলতে কোথায় যেন আপত্তি টের পাই। আপনি যদি পাঠক হন তাহলে আমি দেখক হয়ে যাই যে। তাই আপাতত "মুলোদা"তেই থাকি।
'দেখক' খারাপ কিসে? আপনি অবজার্ভার! 'পর্যবেক্ষক'। হাহ হাহ!
আরেকখান দারুণ কমেন্ট। লেখা লাগবে না, এমনে কমেন্টাইতে থাকেন, তাইলেই হবে।
খুব চমৎকার লাগলো। এমন লেখা পড়লে পড়তে পড়তে একটা ভ্রমণ ও হয়ে যায়।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
থাংকু তুলিরেখা।
- ফিরে আসলেন? থাকতেন আরও কয়েকটা দিন। আরও কিছু ছবি দেখে নিতাম এই ফাঁকে।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ছবি দেখার পথে আমি বাধা হলাম কেম্নে?
- বস, খালি নদী, নালা, খাল, বিল, গাছ, পালা- এইসবের ফটুকই তুলছেন?
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আজ্ঞে এভারগ্লেডসে আর কিছু নাই যে। খালি পোকামাকড়ের ছবি ছাড়া আর কিছু বাদ দেই নাই।
চমৎকার লাগলো - ছবি ও লেখা দুটোই।
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
অনেক ধন্যবাদ, ভুতুম।
মূলোদা, রাগ করবেন কিনা জানি না, কিন্তু ছবিগুলো আমার সুন্দর বনের মত লেগেছে, প্রথম তিনটে ছবি বাদে। আপনার মনে আঘাত দিয়ে থাকলে ক্ষমাপ্রার্থী, হয়ত বাংলাদেশ মনের মাঝে এমন গেড়ে বসেছে যে, সবখানেই মিল খুজি। ছবিগুলো দুর্দান্ত হয়েছে
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
আরে রাগ কী দুঃখে করবো, সুন্দরবনের মতোই তো লাগার কথা, দুটোই যে ম্যানগ্রোভ অরণ্য। বাংলাদেশ আপনার মনে গঁেড়ে না বসলেও মিল দেখতে অসুবিধে হতো না।
এইখানে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ নিয়ে তথ্য পাবেন।
ছবি ভালো লেগেছে জেনে আনন্দ পেলাম।
ধন্যবাদ, মূলোদা
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
খাসা!
সাব্বাশ! সাব্বাশ বাঙ্গা... থুরি... মার্কিনি!
বিগ সিটি নিয়ে বিগ লেখার প্রত্যাশায়। না দিলে...
এখনো তো যাত্রাই শুরু হয় নি, কর্ণধার এসে অলরেডি কর্ণাকর্ষণ করলে চলবে কী করে?
আর, খাসার জন্য থাংকু।
আরে ভাই আপনে দেখি খালি জটিল পোস্ট দেন!!
_________________________
সর্বাঙ্গ কন্টকিত-বিধায় চলন বিচিত্র
_________________________
সর্বাঙ্গ কন্টকিত-বিধায় চলন বিচিত্র
কী যে কন শল্লকীভাই, এইটা তো সহজ সরল ভ্রমণ কাহিনী (তাও ঠিক না, ছবির সাথে অল্প অল্প লেখা), জটিল কী পাইলেন এইটায়?
এভারগ্লেডসের নাম খুব শুনেছি। সবচেয়ে ভালো লাগে এই নামটাই। অদ্ভুত সুন্দর একটা নাম। ইচ্ছা আছে সামনে কোনো সময় ঘুরতে যাওয়ার।
ভার্জিনিয়া ছেড়ে যাচ্ছি, ন্যাটজিও ম্যাগাজিনগুলো ফেলে যেতে হবে। পুরনোগুলোর পাতা উল্টাতে উল্টাতে পরশু রাতেই একটায় দেখলাম এভারগ্লেডসের কথা, আর আজকেই পোস্ট দিলেন।
এই "এভারগ্লেডস" নামটার ইতিহাস লেখার আগে উইকি-তে পড়েছিলাম, সেখান থেকে বলি। ব্রিটিশ জরীপকার জন জেরার্ড ডি ব্রাহ্ম ১৭৭৩ সালে ফ্লোরিডার সমুদ্রতট অঞ্চলের মানচিত্রে এই এলাকার নাম রেখেছিলেন "রিভার গ্লেডস"। মানচিত্রকারেরা পরে যখন মানচিত্র বানালেন (১৮২৩ সালে), তাঁরাই এই নাম বদল ঘটিয়ে ফেললেন, ইচ্ছা করে বা হয়তো ভুল করেই। তখন নাম হলো "এভার গ্লেডস"। পরে এই শব্দ দুটো জুড়ে একসাথে "এভারগ্লেডস" হয়ে যায়। এই এলাকার অন্য নাম Pa-hay-okee, অর্থাৎ "তৃণময় জলভূমি" বা "ঘেসো জলা"। আমার লেখার প্রথম সাদা-কালো ছবিটা দেখুন, সার্থক নামকরণ যে তা নিয়ে সন্দেহ থাকবে না।
ন্যাট জিও ফেলে দেবেন? আহা, বড়ো ভালো জিনিস। আমি তো পুরোনো "দেশ" পত্রিকা ফেলতেই কিন্তু-কিন্তু করছি, এতোগুলো সংখ্যা নিয়ে যাওয়াও তো দুরূহ কাজ হবে, অগত্যা নিরুপায় হয়ে ফেলতেই হবে।
মুলোদা, আপনার তথ্যবহুল লেখাগুলো আজকাল পাচ্ছি না কেনো ??
...যাই হোক, এটার ছবিগুলো অসাধারণ হয়েছে। তবে উপরে সাইফ ভাইয়ের মত বলি, কিছুটা আসলেই সুন্দরবনের মত- হয়তো ম্যানগ্রোভ বলেই।
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!
আমার তথ্যবহুল লেখা? কোনগুলোর কথা বলছেন? আমি তো অধিকাংশ সিনেমা রিভিউ, কবিতা, ফোটোগ্রাফ ইত্যাদি নিয়েই লিখি। মার্গসঙ্গীতের সিরিজটার কথা বলছেন কি?
ছবি ভালো লেগেছে জেনে আনন্দ পেলাম।
হ্যাঁ- ওটার কথাই বলছিলাম...
তবে আপনার সিনেমা রিভিউ গুলো ও কিন্তু আম্য বেশ টানতো। সময় করে নতুন ভালো ছবি দেখলে রেকমেন্ড করবেন কিন্তু...
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!
অনেক ধন্যবাদ শব্দশিল্পী।
সিনেমা অনেক দেখলাম, তবে লেখা হচ্ছে না তো তেমন। লিখবো অবশ্যই।
খুব ভালো লেখা, অসাধারণ সব ছবি!!
থাংকু মামুন ভাই।
ছবি এবং লেখা, দু'টোই উপাদেয়। আমি দিন দিন আপনার বড় ফ্যানদের একজন হয়ে যাচ্ছি মূলোদা
ধন্যবাদ, শাহেনশাহ সিমন।
আচ্ছা মূলত পাঠক, আপনি কিভাবে মূলোদা হয়ে গেলেন?
পাঠকদা ও তো হতে পারতেন!
----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
কতো কিছুই তো হতে পারতাম কিন্তু যাঁরা রঁেধেছেন তাঁরা মূলোঘন্ট ভালোবাসেন বোধ হয়। বেশি মুলো খেলে পেটে কী যেন হয় না? সে সব বলেও কি বোঝানো গেলো তাঁদের?
তবে ভালো দিকটাও দেখুন, পাঁঠাচচ্চড়িও তো হতে পারতো পাঠকদার পরিবর্তে।
দারুণ ছবি। মনে হলো যেন পাঠ্যবইয়ে বিষয়বস্তুর সাথে দেয়া প্রাসঙ্গিক ছবি দেখছি
অনেক ধন্যবাদ প্রহরী ভাই।
নতুন মন্তব্য করুন