পাখি হলো একটা অডিও-ভিস্যুয়াল ব্যাপার, তার ছবি অসম্পূর্ণ থাকে যদি ডালে বসে পুচ্ছ নাচিয়ে সে কিচিরমিচির না-ই করলো। তবে কি না সুন্দরী ললনাদের ক্ষেত্রে দুর্জনে বলে (আমি কিন্তু বলি না একদম, কেউ রাগ কইরেন না) হিস্ট্রি জিওগ্রাফি দুটো একসাথে ভালো হওয়া একটু কঠিন। পাখির ব্যাপারটাও খানিকটা তাই, দেখতে সুন্দর পাখিগুলোর ডাক একেবারেই এলেবেলে, আর যারা গান শোনায় তারা পাতার ফাঁকে লুকিয়ে থাকে দেখতে তেমন নয় বলেই বোধ হয়। আমি নিশ্চিত এর ব্যতিক্রম আছে, প্রকৃতিপ্রেমিক জানাবেন শিগগিরই, তবে আমার মতো পাখি-অজ্ঞ লোকের কাছে ময়ূর আর কোকিল এই থিয়োরির প্রমাণ। যাক আর কথা না বাড়িয়ে একে একে পাখিদের হাজির করা যাক। প্রকৃতিপ্রেমিক ইতিমধ্যেই এদের প্রায় সকলেরই নামধাম দিয়ে দিয়েছেন, সেই তথ্য লেখায় জুড়ে দিচ্ছি।
১) এইটে সম্ভবতঃ লালমুণ্ডু শকুন (Red-headed Vulture), যদিও উইকির ছবিতে পাখির ঠোঁট কালো আর আমার দেখাটির সাদা। উইকি লিঙ্ক
২) আমেরিকান রবিন (American Robin)। উইকি লিঙ্ক।
এইটা বাড়ির সামনে টুকটুক করে হঁেটে বেড়াচ্ছিলো, পোকাটোকার খোঁজেই বোধ হয়। চেহারা তো শালিখ কি ময়নার মতো, ওদের মার্কিনি মাসতুতো ভাই (বা বোন) হবে হয়তো।
৩) ম্যালার্ড, স্ত্রী (Mallard)। উইকি লিঙ্ক
এই ছবিটা একটু পুরোনো, বস্টনে তুলেছিলাম, ক্যামেরাও আলাদা ছিলো। জলের ধারে নার্সিসিস্টিক হাঁস, নিজের ডানার শোভা দেখে নিজেই মূর্চ্ছা যাচ্ছে।
৪) রেড-উইঙ্গড ব্লাকবার্ড (Red-winged Blackbird)। উইকি লিঙ্ক।
এটাও পুরোনো ছবি। ছোটো পাখি, এই কম্পিটিটিভ দুনিয়ায় ডানার ঐ লাল ছোপটুকু ছাড়া ওর জাহির করার বিশেষ কিছুই নেই। তাই নিয়েই ঘাসের মধ্যে তিড়িংবিড়িং করে লাফিয়ে বেড়াচ্ছে।
৫ ব্লু জে (Blue Jay) উইকি লিঙ্ক
এবারের ভদ্রলোকের দু খানা ছবি (নাকি ভদ্রমহিলা?)। কাজলটানা চোখ নিয়ে ফোটো তোলা দেখছে, ভাবখানা এমন যেন, ছবি তুলছো তোলো তবে বেশি কাছাকাছি এসো না, তাইলে কিন্তু কেটে পড়বো ফুরুৎ করে।
ঐ মহাশয়েরই ছবি, পেছন থেকে নেওয়া। ডানাজোড়া আর লেজ এতো সুন্দর রঙবাহারি যে চোখ ফেরানো যায় না।
৬) পানকৌডি় (Cormorant)। উইকি লিঙ্ক
এই ছবিটা কী ওয়েস্টের পথে, গাড়ি থেকে তোলা, ছবির মান তাই তেমন সুবিধার নয়।
৭) সী গাল (Sea gull)। উইকি লিঙ্ক
এই ছবিটা ওশেন সিটির কাছে সমুদ্রতীরে তোলা। পাখি হিসেবে এর মাহাত্ম্য তেমন কিছু নেই, তবে ছবি হিসেবে আমার পছন্দের, তাই দিয়ে দিলাম। লেখার শুরুতেই সী গালের আরেকটা ছবি আছে, শিকাগোর পীয়ারে তোলা। নন-ডিজিটালে এক ক্লিকে ঐ ছবি তুলে খুব তৃপ্তি হয়েছিলো। এই ছবিটাও নন-ডিজিটালে তোলা (ক্যানন ইওএস ৩০০)।
৮) নর্দার্ন কার্ডিনাল, পুরুষ (Northern Cardinal)। উইকি লিঙ্ক
শেষ করি এই লাল-টুকটুকে পাখির ছবিটা দিয়ে। যে বারান্দার বনের কথা আগে একবার লিখেছিলাম, এই রূপসী সেখানেই দর্শন দিয়েছিলো। সেখানে একটা বাসাও আছে তার, তবে সেইটা বোধ হয় সামার হাউস। মাঝে মাঝে ঘুরতে আসে, রোজ ফেরে না। তবে যখন আসে, রূপে আলো করে দেয় ঐ এক চিলতে বনানীকে।
মন্তব্য
১। চেক করতে হবে। শকুন বা ঈগল হতে পারে। ঈগল হবেনা, কারণ ঈগলের ঠোঁট এরকম নয়।
২। আমেরিকান রবিন
৩। সম্ভবত ম্যালার্ড (স্ত্রী)
৪। রেড-উইঙগ্ড ব্ল্যাকবার্ড (লাল-ডানা কালো পাখি)
৫। ব্লু জে
৬। পানকৌড়ি, ঠিকাছে।
৭। দেখতে হবে
৮। নর্দার্ণ কার্ডিনাল (পুরুষ)
অসাধারণ! আপনি একটা যা-তা লোক। এর উত্তরে সামান্য ধন্যবাদ যথেষ্ট নয়।
আপনার দেওয়া নাম উইকির লিঙ্ক-সমেত লেখায় জুড়ে দিচ্ছি, পাঠকের জ্ঞাতার্থে।
কমন পড়ে গেছে ভাই
আমার কোন ক্রেডিট নাই।
হা হা, এরেই কয় বিনয়।
একমত!
____________
অল্পকথা গল্পকথা
এক নাম্বার ঈগল হতে পারেনা। শকুনও হবে কিনা আমার সন্দেহ আছে। মাথার দিক দিয়ে গৃধিনীর সাথে মিল থাকলেও গলা আর পালক দেখে সন্দিহান হয়ে পড়ছি। ভাবগতিকে উনাকে Old World Vulture-এর বদলে New World Vulture বলেই বেশি মনে হচ্ছে। পিপি কী বলেন?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
একই ধারনা। ঈগল তো নয়ই, শকুনের গলায় তো এত পালক থাকার কথা নয়। গায়ের পালকও একটু যেন বেশী মনে হচ্ছে। ভিন্ন এ্যঙগেলের ছবি পেলে বোঝা যেতো। তবে শকুনই হবে এবং এটা অবশ্যই New World Vulture। কারণ ছবিটি বড় করে দেখলে বামের শকুনটার নাকের ছিদ্র দেখা যায়, যা এপাশ থেকে ওপাশে খোলা (pervious nostrils)। উইকি থেকে তাই জানা গেলো।
উইকির লিঙ্কের ছবিটা দেখেন, বেশ মিল আছে কিন্তু।
আপনার লিংকটা আমেরিকায় থাকার কথা নয়। ওটা তো কিং ভালচারের ছবি। আমি যে লিংকটা দিয়েছি সেটার সাথে আপনি যেমনটা দেখেছিলেন তার মিল হয়? মনে পড়ে কিছু?
...............................
নিসর্গ
আসলে ছবি ছাড়াও, শকুন যা দেখেছি তার সাথে এই পাখিগুলোর চেহারা বা চলাফেরার বিশেষ মিল পাই নি। অবশ্য সব শকুন এক রকম হবে তা হয়তো ঠিক নয়।
এভারগ্লেডস থেকে একটা তথ্যপুস্তিকা এনেছিলাম, তাতে খুঁজে এর কাছাকাছি যা পেলাম তা হলো আমেরিকান কালো শকুন (উইকি)। সেটা আপনার ও ষষ্ঠ পাণ্ডবের বর্ণনা/লিঙ্কের নতুন জগতের শকুনই একরকম। কাজেই, আবার কমন পড়ে গেলো।
এক্টার ও নাম জানিনা
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
আরে আমিই কি ছাই জানি! তাই তো পিপিমশায়ের শরণাপন্ন হলাম।
মূলোদা, আপনে এভাবে ছবি তুলে তো পিপিদার ভাত মারবেন দেখি, মূলত পাঠক থেকে মূলত লেখক, আর্টিষ্ট, এরপর ফটুক-গ্রাফার, আপনে নমস্য,
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
পাগল নাকি, ক্যামেরা থাকলে ছবি তো সবাই তুলতে পারে, তাই বলে ঘরে ঘরে সালিম আলি গজায় নাকি!
নমস্য-টমস্য কইয়া লজ্জা দিয়েন না রে ভাই।
মনে দুইটা প্রশ্ন;
০১। মুলোদা, খুব কাছে যেতে হয়েছিলো কী ছবিগুলো তোলার সময় ?? নাকি ক্যামেরার জুম ??
০২। পিপিদা এত কমন ফেলেন কীভাবে ??
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!
নাঃ খুব কাছে যেতে হয় নি, ৩০০ জুম থাকায়। পাখিরা বেশি কাছে যাবার আগেই ফুড়ুৎ হয়। তবে দু-একটা ছবি তোলা হয়ে গেলে পা টিপে টিপে কাছে গেছি, যদি আরো ক্লোস-আপ পাওয়া যায় এই আশায়।
- সমুদ্রের পাড়ে রৌদ্রস্নানে মগ্ন কোনো পাখির সিনারি নাই মূলাদা?
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ঐ তো, সী গাল আছে আপনার জন্য। সমুদ্রের পাড়, রৌদ্রস্নান, সবই পাবেন।
চমৎকার ছবি। আর প্রকৃতিপ্রেমিক ভাইকেও ।
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
ধন্যবাদ ভুতুম।
আমাকে আবার ঝামা দিয়ে ঘষে কেনে?
খুব সুন্দর। যেমন লেখা তেমনি ছবি। অপূর্ব!
পাখির ছবি আমি নিজে তুলতে পারি না, কাছে গেলেই উড়ে পালিয়ে যায়।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ঐ জন্যই তো জুম লাগে।
ধন্যবাদ আপনাকে।
দুর্দান্ত সব ছবি।
অফ টপিকঃ মূলোদা নামটা আমার প্যাটেন্ট করা, রাজু ভায়াকে এক মাত্র আমিই ঐ নামে ডাকার বৈধ অনুমতি প্রাপ্ত। সুতরাং জনগণ আপনারা এই অলৌকিক প্রতিভাবান লোকটির জন্য নতুন নতুন নিকনেম আবিষ্কার করে নিন, আমার দেয়া নামে হাত দিবেন না
মূলত পাঠক-কে মুলোদা ডাকার ফলে উনি যদি কোন ডলা দেন সেটা তাহলে তোমার একই হজম করতে হবে, মনে থাকে যেন।
তাইওয়ানের এক নম্বর গ্যাংস্টারকে ডলা দেবো, আমার ঘাড়ে কয়টা মাথা!
...............................
নিসর্গ
থ্যাংক য়ু মামুন ভাই।
অলৌকিক প্রতিভা? ঘোড়ায় হাসবো কত্তা!
খুব ভালো।
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
ধন্যবাদ, বিপ্লব রহমান।
প্রত্যেকটা ছবিই চমৎকার !
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
অনেক ধন্যবাদ, সুলতানা পারভীন শিমুল।
ব্লু জে'র ছবিটা দুর্দান্ত লাগল। বাকিগুলোও সুন্দর।
ধন্যবাদ প্রহরী ভাই।
লাল-ডানা কালো পাখি সবচেয়ে মনে ধরলো। ডানার ঐ এক চিলতে লালেই যাদু।
আর ভালো লেগেছে নর্দার্ণ কার্ডিনাল।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
অসাধারণ !!
মুক্ত বিহঙ্গ
নতুন মন্তব্য করুন