মহম্মদ আলি পার্কে প্যান্ডেলের বাঁশ লেগে গেছে। রাস্তার জনতার চেহারাও কেমন একটু খুশিখুশি। এদিকে অনেক ঠেলাওয়ালা দেখা যায় বড়োবাজারগামী, দেখে মনে হচ্ছে ঠ্যালা ঠেলতেও আজ তাদের আপত্তি নেই, নীল আকাশ আর রোদ্দুরের গুণই হবে। ভিড় ঠেলে বাস থেকে নেমে পড়লো অদিতি। চাপা একটা ঘামঘাম গন্ধ থেকে বেরিয়ে এসে ডিজেলপোড়া বাতাসে নিঃশ্বাস নিতেও ভালো লাগলো। মেট্রো নিলে তার বিশেষ সুবিধা হয় না, বাড়ি থেকে সেই ভিড় বাসে চেপে শ্যামবাজার আসতেই হয়, তারপর সিঁড়ি ভেঙে নেমে মেট্রো ধরে আসা। তার চেয়ে বাসে উঠে কোনোভাবে শান্টিং হয়ে গেলে একেবারে এখানে এসে নামা যায়। কলেজ স্ট্রীটটা ওয়ান ওয়ে হয়েই কেলো হয়েছে, আবার খানিকটা হাঁটতে হয় এখান থেকে কলেজে পৌছতে। হাঁটতে সমস্যা নেই তার, হিন্দু হস্টেলের মুখোমুখি কলেজের ছোটো গেটটা দিয়ে টুক করে ঢুকে গেলেই হলো, কিন্তু দেরি হয়ে গেলে ঐ কয়েক মিনিটের হাঁটার সময়টাও অনেক লম্বা মনে হয়। তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে গেটটার কাছে পৌছে আজকেও ছোকরাকে হস্টেলের দরজার সামনে দেখতে পেলো। অদিতির কলেজে আসার সময়টা বোধ হয় হিসেব করে দাঁড়িয়ে থাকে ফুটপাতে। চকরাবকরা জামা আর অতো লম্বা জুলফি নিয়ে আজকাল মেয়ে পটানো মুশকিল, জানে কি ছোকরা? মনে মনে হাসলো অদিতি। হাসিটা তৃপ্তিরও বটে, প্রশংসা নীরব হলেও ভালো তো লাগেই। তবে সে হাসি দেখতে দেওয়া চলবে না, তাহলেই উৎসাহের বাতাসে এই সব মফস্বলী যুবকেরা কল্পনার ঘুড়ি ওড়াতে শুরু করবে। তার চেয়ে এই ভালো। কলেজের হাতায় ঢুকে আরো জোরে পা চালালো অদিতি। এম বি দেরিতে এলে যে সব বাণী শোনান সেগুলো শোনার সখ নেই তার।
****
নতুন অধ্যক্ষ এসে অবধি নানা রকম নোটিস জারি করে মেইন বিল্ডিংয়ের দেওয়ালে রাজনৈতিক ঘোষণা লেখা বন্ধ করেছেন। পরিচ্ছন্ন দেওয়াল দেখে ভালো লাগছিলো নয়নার। এমনটাই হওয়া উচিত, তার প্রবাসী চোখ এর অন্যথা মেনে নিতে পারে না। বাবা দিল্লি থেকে কলকাতায় বদলী না হলে সে আজ ঝলমলে মিরান্ডা হাউসের চত্বরে চেনা সখিপরিবৃত হয়ে মহানন্দে দিন গুজরান করতো। এখানে বন্ধুবান্ধব হয়েছে কিছু, কিন্তু পুরোনো বন্ধুর কি আর বিকল্প আছে? মেইন বিল্ডিংয়ের বাঁ পাশ দিয়ে হেঁটে প্রমোদদার ক্যান্টিনের দিকে যাচ্ছিলো সে। এই জায়গার জমিটা মস আর শ্যাওলায় ঢাকা, পা টিপে টিপে এগোতে হয়, বিশেষতঃ তার সরু হিলের জন্যেও। ভূ-নিবদ্ধ দৃষ্টি নিয়ে শুনতে পেলো চিল চিৎকার করে তার নাম ধরে ডাকছে কেউ। অদিতি, ক্যান্টিনের কাছে দাঁড়িয়ে হাত নাড়ছে আর চেঁচাচ্ছে। এই দিলখোলা হুল্লোড়বাজ মেয়েটার সাথেই ভালো করে দোস্তি হয়েছে তার। মেয়েটা উচ্ছল ধরনের, সারাক্ষণ হাসছে, আর মুখেরও বিশেষ রাখঢাক নেই, ছেলেদের সামনেও ঝপাঝপ গালাগাল দিয়ে দেয় নির্বিকার চিত্তে। কাছাকাছি যেতেই নয়নাকে বগলদাবা করে ফেললো সে, তারপর ক্যান্টিনের টানা বারান্দা পেরিয়ে ঢুকে টেবিল বেঞ্চি ও অনেকগুলো যুবককে আক্ষরিক ও হৃদয়গত ধাক্কা লাগিয়ে প্রমোদদার দরবারে দুটো এগরোলের অর্ডার দিয়ে নিজের গ্যাংয়ের টেবিলে ধপ করে বসে পড়লো। উৎপল ওদিকে গিটার বাজিয়ে তার নিজের কথাসুরে জীবনমুখী গান ধরেছে তারস্বরে, সুমন এ যে কী সর্বনাশ করলো বাঙালির! সুদীপ বেতালে টেবিল চাপড়াচ্ছে, এ জিনিস চলবে যতক্ষণ না উৎপল চাঁটিয়ে থামাবে তাকে। তাতে অবশ্য তার লজ্জাটজ্জা নেই, হ্যা হ্যা করে ক্যাবলা হাসি হাসতে থাকবে। গান শেষ হতেই বৈভবী পাশ থেকে নেকুপুষুমুনু সুরে উৎপলকে আরেকটা গান গাইতে বললো। মেয়েটা একেবারে নাক বরাবর হিটিং অন হিম, অদিতি মুখ বেঁকিয়ে নয়নার কানে কানে বললো ফিসফিস করে। সেটা অবশ্য অজানা কিছু নয়, বৈভবীও লুকোনোর চেষ্টা করে না। ধনীর দুলালী টাইপ, এমনিতে তাদের গ্রুপে এর থাকার কথা নয়, বরং কয়েক সখী মিলে আলগা আলগা থাকার কথাই ছিলো, ওদের সাথে সেঁটে গেছে উৎপলের আকর্ষণে। তবে উৎপলও ঘোড়েল মাল, এতো সহজে পটবে না সে, উল্টে ল্যাজে খেলাচ্ছে। অবশ্য গান গাইবার অনুরোধ রাখতে তার কোনো অসুবিধা নেই। এবারের গানটা অবশ্য ওর নিজের সৃষ্টি নয়, বেশ আবেগটাবেগ দিয়ে ধরলো "কাঁপে কাঁপে আমার হিয়া কাঁপে"। শুরু হতেই খ্যাক খ্যাক করে হাসি জুড়ে দিলো অনির্বাণ, তোর এই কাপ্পে কাপ্পেটা কিন্তু জব্বর, উতু! উৎপল তার ইংলিশ মিডিয়াম-মার্কা বাংলা নিয়ে একটু লজ্জায় থাকে, তবে পাবলিকের সামনে সে কথা মেনে নেওয়া মানে আওয়াজ খাওয়ার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করা, কাজেই সে গায়ে না মেখে আরো আবেগের সাথে গাইতে থাকলো ক্যান্টিনের হল্লার মাঝেই। এর মধ্যে প্রমোদদার একটা বাচ্চা খাবার দিয়ে গেলো, সাথে সাথে সুদীপের আঁকশি হাত পৌঁছে গেছে, এক চাপড় মারলো অদিতি তার হাতে, নইলে তার কপালে কিছুই জুটবে না। অগত্যা নয়নার প্লেট থেকেই আধখানা রোল ঝেড়ে দিলো সুদীপ। কাল ফিজিক্স ক্লাসে প্রক্সি লাগবে তো বলিস, বললো নয়নাকে। বিনিময়প্রথায় বিশ্বাসী সে, কর্জ রাখবে না।
এই সময় দেখা মিললো ইন্দ্রনীলের, ক্যান্টিনের দরজা দিয়ে হইহই করতে করতে প্রবেশ তার, রোজকার মতো। বেলঘড়িয়া থেকে ট্রেন ধরে শেয়ালদা হয়ে হেঁটে আসে সে, ট্রেনের ভিড় এড়াতে আদ্ধেক দিনই সকালের ক্লাসগুলোয় ডুব দেয়। যানবাহনের অবস্থার উন্নতি না হলে সে অভ্যাস বদলাবে এমন সম্ভাবনাও নেই। তার সাথে একটি লম্বামতো অচেনা যুবক, তাকে দেখেই বোধহয় গান থামালো উৎপল। ইন্দ্রনীল আলাপ করালো, এ কণাদদা, তোকে বলেছিলাম না উৎপল, লক্ষ্নৌ থেকে এসেছে কলকাতায়, দাদার বন্ধু। নীলের দাদা অমিতকে কমবেশি অনেকেই চেনে, যাদবপুরে পড়ে। মাঝেমাঝে এই প্রেসির ক্যান্টিনেও আড্ডা মারতে আসে, তাছাড়া ফেস্টে গেলে দেখা হয়, সে 'সংস্কৃতি'র পাণ্ডাদের একজন। সুদীপ গলা বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো, অমিতদা আসেনি? পাত্তা না দিয়ে নীল বললো, আসার সময় দেখলাম মহাবোধি সোসাইটির দিকটায় কী যেন বাওয়াল হচ্ছে, প্রচুর ভিড়, জানিস কিছু?
নয়না জানে আজ কলকাতার অনেক বৌদ্ধরা দালাই লামার সমর্থনে ওখানে জমায়েত হয়েছে, এর বেশি জানে না। ওদের পাশের ফ্ল্যাটের আঙ্কেল বৌদ্ধ, তিনি বলছিলেন কাল রাতে। তবে সে স্বভাবত মুখচোরা নতুন লোকেদের সামনে, তাই একটু আমতা আমতা করে বললো ব্যাপারটা। কণাদ অবশ্য লাজুক নয়, অচিরেই মিশে গেছে দলের মধ্যে, সে-ই বেশি আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইলো ব্যাপারটা কী। কলকাতার ছেলেরা মিছিল নিয়ে ততো কৌতূহলী নয়, স্বাভাবিক কারণেই। সুদীপ পট করে তাকেও দাদা বানিয়ে ফেললো, আজ বিকেলে স্পিকম্যাকের প্রোগ্রাম আছে অরুণ ভাদুড়ির, আসবে না কি কণাদদা?
দাদাফাদা বলতে হবে না ভাই, কণাদ-ই যথেষ্ট, বললো সে, আর হ্যাঁ আসতেই পারি, টিকিট না লাগলে। লক্ষ্নৌয়ের ছেলে, পাকা গানে তার আগ্রহ আছে মালকড়ির শর্টেজ থাকলেও।
বিগলিত হাসি সুদীপের, না না সে সব ব্যাপার নেই। যাক বোসো বোসো, বলে অদিতিদেরকে ঠেলেঠুলে জায়গা করে দেয়। অদিতি মনে মনে দাঁত কিড়মিড় করছিলো, এই ছেলেটাকে সহ্য করা বেশ কঠিন, গায়ে-পড়া বলতে যা বোঝায় ঠিক তাই। মেয়ে দেখলে লালেঝোলে হয়, তবে দাবড়ানি দিলে সামলে নেয় এই যা বাঁচোয়া। নয়নাকে ঘাঁটালে তাকেই সামলাতে হতো, মেয়েটা দিল্লির হলেও অতি ক্যাবলা এই সব ব্যাপারে। তবে ইংরিজিটা একেবারেই বলতে পারে না সুদীপ, আর নয়নার ক্ষেত্রে সেটা দরকারি বলেই হয়তো হাত বাড়ায় নি সেদিকে।
গীটারটা দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড় করিয়ে রেখে উৎপল জানতে চাইলো, গাঁজা আছে না কি কারো কাছে? এই সব ক্লাসিকাল ফ্লাসিকাল শালা গাঁজা না খেয়ে টলারেট করা মুশকিল। ঘ্যাস ঘ্যাস করে একমাথা চুলের মধ্যে আঙুল চালাচ্ছিলো সে, বিসর্গ নামক নতুন এক গানের দলে পারফর্ম করে সে, ঐ চুলের বিস্তার সে কাহিনীর প্রয়োজনেই।
নীল বললো, আমার স্টক শেষ বস্, কিচ্ছু নেই। একে একে দেখা গেলো কারোর কাছেই কিছু নেই, মায় অনির্বাণ অবধি, যার সকালে কোষ্ঠ সাফ হয় না গাঁজার ধোঁয়া পেটে না গেলে। শেষমেশ অদিতিই ভলান্টিয়ার করলো, আমি নিয়ে আসতে পারি কলাবাগান থেকে। তবে মালকড়ি ছাড়তে হবে সবাইকে, সুদীপের দিকে তাকিয়ে বাক্য শেষ করলো, তোকেও।
বিস্ময়ে নয়নার চোখ গোলগোল, তুই আনতে যাবি?
কণাদ অদিতির দিকে ঝুঁকে পড়ে বললো, আমি যেতে পারি সঙ্গে, কদ্দূর জায়গাটা?
সুদীপ বললো, তুমি বোধ হয় জানো না, বেশ গোলমেলে জায়গা ওটা, পাকিস্তান জিতলে ওখানে ফ্ল্যাগ ওড়ে।
সেখানে তুমি একা যাবে নাকি? একদম না, বললো কণাদ। উৎপল একমনে গিটার টিউন করছে, এই হৈচৈয়ের মধ্যে সেটা অসম্ভব প্রায়, তবু হঠাৎ সে কাজটা খুব জরুরী হয়ে পড়েছে।
অবশেষে কণাদ চললো অদিতির সঙ্গে, নয়নার অনেকবার বারণ করলেও কিছু হেরফের হলো না। অদিতি মনস্থির করে ফেললে বিশেষ কিছু করার থাকে না।
*****
ডিরোজিও হলের পেছনদিকে ওদের একটা নিজস্ব খুপরি আছে, অনেকেই এটার অস্তিত্ব জানে না বলে ভিড় হয় না এখানে। একটা ছোটো হলদে বাতি জ্বলে, সে আলোয় ভুতুড়ে দেখায় জায়গাটা। গানবাজনা শুরুর আগে সেখানে ধোঁয়ায় ধোঁয়াক্কার, সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে। অদিতির কানে সেতারের ঝালা বেজে চলেছে একটানা, যদিও সন্ধ্যার প্রোগ্রাম শুরু হয়নি। এ এক অনন্ত ঝালা, থামার নাম নেই। কলাবাগানের গাঁজা যে এতো পোটেন্ট কে জানতো! একটা ভাঙা বেঞ্চে দেয়ালে ঢেলান দিয়ে ফুঁকে চলেছে, কনুইটা কণাদের ঘাড়ে, সে মেঝেতে থেবড়ে বসে পড়েছে। গাঁজায় একেক জনের একেক রকম প্রতিক্রিয়া হয়, কণাদের মাথা ঝুঁকে পড়েছে, সযত্নে সিগারেটে টান দিচ্ছে সে। মনোযোগ দিয়ে তার ফর্সা ঘাড়টা দেখছিলো অদিতি, যেন এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটছে না এই মুহূর্তে পৃথিবীতে। লম্বা লম্বা চুল এসে পড়েছে কণাদের ঘাড়ে, বাঁ হাতের আঙুল দিয়ে সরিয়ে দিতে গেলো অদিতি, লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে হাতটা গিয়ে পড়লো কণাদের ঘাড়ে। সারা দিনের দৌড়োদৌড়িতে গাঁজার গন্ধে মিশেছে ঘামের গন্ধ, নেশাগ্রস্ত অবস্থাতেও অদিতি নিজের শরীরে একরকম চাঞ্চল্য বোধ করছিলো।
ওদিকে সুদীপ সযত্নে সিগারেটের তামাক বের করে গাঁজা মিশিয়ে আবার ঢোকাচ্ছে সিগারেটের পেটে, ওদিকে জনগণ ফুঁকে চলেছে, কমিউনিটি কিচেন যেন। নয়না বাড়ি গেছে, সন্ধ্যায় অনুষ্ঠানের আগে চলে আসবে। মেয়েটা মানুষ হলো না, ভাবছিলো অদিতি। নয়না গাঁজা খাবে এতো দূর আশা করে নি সে, তবে বাবামাকে ফোনে জানিয়ে দিয়ে কলেজে থেকে গেলেই পারতো, তা না, দৌড়লো বাড়ি। কদ্দিন থাকতে পারে এমন গুডি গুডি, দেখার ইচ্ছে আছে। যাক, আপাতত তার সময় সুযোগ কোনোটাই নেই সে সব নিয়ে ভাবার। একদিকে গাঁজার দম, আর অন্যদিকে কণাদের বিরতিহীন সঙ্গ, দম ফেলার সুযোগ সত্যিই নেই। ছোকরার বোধ হয় বীরাঙ্গনা টাইপের মেয়ে পছন্দ, কলাবাগানে অদিতিকে গাঁজা কিনতে গিয়ে দরাদরি করতে দেখে ছোকরা খুব ইমপ্রেসড। কণাদের স্তুতিমাখা দৃষ্টির কথা ভেবে এই ধোঁয়াধোঁয়া আলোআঁধারের মধ্যে নিজেকে ডমিনেট্রিক্সের বেশে চাবুক হাতে একবার দেখেও ফেললো অদিতি। পায়ের কাছে কণাদ হামা দিচ্ছে শেকল-গলায়, দেখে হাসি চেপে রাখা কোনোভাবেই সম্ভব না, হাসতে হাসতে কণাদের ঘাড়েই ঝুঁকে পড়ে গেলো সে। ধ্যানভঙ্গ হওয়া ঋষির দৃষ্টিতে কণাদ দেখলো তাকে, ওপাশ থেকে জড়ানো গলায় অনির্বাণ জিজ্ঞেস করলো, আর য়ু ওকে অদিতি? এই সময় স্ট্যাটসের দেবা লাফাতে লাফাতে এসে জানালো, এরপরে গেলে আর সামনের দিকে সীট জুটবে না। সবাই দল বেঁধে অডিটোরিয়ামে ঢুকে পড়া গেলো।
গানবাজনা জমে উঠেছে, অন্ধকার অনুষ্ঠানঘরে হঠাৎ মৃদু হাসির আওয়াজে নয়না একটু চমকে উঠলো। অনুষ্ঠান শুরুর আগেই পৌঁছে গিয়েছিলো সে, বন্ধুরা তার জন্য আসন রাখায় সমস্যা হয় নি। সে রাগসঙ্গীতের বিশেষ ভক্ত এমন নয়, বিলম্বিত আলাপ অংশে জোর করে মনোযোগ দিতে হয় তাকে। তবে দ্রুতলয়ের অংশ শুরু হলে ভালোই লাগে, গতিময় ছন্দের সাথে উপভোগ্যই লাগে। তার বাঁ পাশে বসেছে অদিতি আর ডান দিকে দেবা, অদিতির ওপাশে কণাদ। চমকে গিয়ে নয়না লক্ষ্য করলো, হাসির শব্দটা অদিতির, একমনে খুকখুক করে হাসছে সে। কী এমন মজার কথা হলো এমন ওস্তাদী গানের মাঝখানে, তার মাথায় ঢুকলো না। তবে ব্যাপারটা বিসদৃশ হচ্ছে সন্দেহ নেই। বাঁ হাত দিয়ে অদিতির হাত চেপে ধরে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করলো নয়না, তাতে অদিতির হাসি থামলো না আদৌ, তবে সাময়িক ভাবে মিউট বাটন চাপার কাজটুকু হলো। লোকজনের মাঝখানে সে-ও অনেক লাভ। একটু ঝুঁকে কণাদকে দেখার চেষ্টা করলো নয়না। দু চোখ বুজে সীটে হেলান দিয়ে গান শুনছে সে, নাকি ঘুমিয়ে পড়েছে কে জানে। উৎপলকে দেখা গেলো না, সে বোধ হয় উঠে চলে গেছে বোরড হয়ে।
আরো এক ঘন্টা পরে যখন গান শেষ হলো, নয়নার মনে তখন আর এই সব কিছু নেই। অপূর্ব এক অভিজ্ঞতা তার জন্য, আক্ষরিক অর্থেই। সঙ্গীতে বুঁদ হয়ে যাওয়া কাকে বলে আজ প্রথমবারের মতো টের পেলো সে। মারু বেহাগের কারুকার্য অডিটোরিয়ামের আকাশবাতাসে আলপনা এঁকে রেখেছে, গান থেমে গেলেও করতালির শব্দ ছাপিয়ে সে ছবি ভেসে আছে। আলো জ্বলে উঠছে একে একে সভাঘরে, ধীরে ধীরে সেই ধোঁয়ার আলপনা মিলিয়ে যাচ্ছে যেন। সারি দিয়ে বাইরে বেরোনো অবধি কথা বলছিলো না তারা কেউই।
তাদের গাড়িটা অপেক্ষায় আছে, কাজেই নয়না অদিতিকে লিফট দিতেই পারে। কিন্তু বলাই বাহুল্য, উত্তরের উল্টো পথে অদিতি কিছুতেই গাড়ি নেবে না। তবু বললো নয়না, আশ্চর্যের বিষয় যে অদিতিও রাজি। দুজনে গুটিগুটি এগোবে, তখন কণাদ অদিতিকে একটু ডেকে নিলো। কয়েক মিনিট পরে যখন ফিরে এলো অদিতি, তখন তার মত বদলে গেছে। গোঁয়ার অদিতিকে চেনে নয়না, কিন্তু এই প্রেমপ্রেম ভাব বড়োই নতুন। এর কতোটা নেশার প্রভাব আর কতোটা শরীরী গল্প, বোঝা দুষ্কর। হয়তো গানের নেশাও আছে, কে জানে। কণাদ শক্ত ধরে আছে অদিতির বাহু, যেন ছেড়ে দিলে সে পড়ে খানখান হয়ে যাবে। অদিতি ঢলে আছে কণাদের দিকে, ঝুপসি গাছের ছায়ায় মিশে গেছে দুজনে। নয়নার অস্বস্তি হচ্ছিলো, কোথাও একটা গণ্ডগোল হচ্ছে। জোর করা তার স্বভাব নয়, তবু টেনে নিয়ে যেতে ইচ্ছে হচ্ছিলো অদিতিকে। কলেজের গেটের বাইরে বেরিয়ে সে মোড় ঘুরবে হেয়ার স্কুলের দিকে, গাড়িটা ঐ দিকেই দাঁড়ানোর কথা। কলেজ স্ট্রীট এই সময় বেশ নির্জন হয়ে আসে, ফুটপাথের বইয়ের দোকান সব বন্ধ হয়ে যায় বলে, একপ্রান্তে হ্যারিসন রোডের আলোগুলো জেগে থাকে শুধু। আজ তবু গানের হাট ভেঙে লোকের ভিড় আছে কিছুটা, তাদের কলরোলে বটগাছের পাখিরা ত্রস্ত হয়ে চেঁচাচ্ছে কর্কশ স্বরে। তার মধ্যেই ট্রাম লাইন পার হয়ে কণাদ আর অদিতি চললো বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রীটের দিকে। কলকাতার পথে এ জাতীয় ঘনিষ্ঠভাবে কাউকে চলতে দেখে নি নয়না। অন্ধকারে তাদের চেহারা মিলিয়ে যাওয়া অবধি অপেক্ষা করলো সে, তারপর হাঁটা দিলো গাড়ির দিকে। মনটা কুডাক ডাকছিলো তার।
পরের ভাগ আসিতেছে, যদি দেরি হয় সেই ভয়ে সবুর আর মেওয়ার গল্পটা মনে করিয়ে দিলাম।
মন্তব্য
ঝরঝরে শুরু। বাকিটুকুর জন্যে অপেক্ষায় রইলাম।
ঐখানেই ইক্টু বাঁকা আছে। গল্পমাসি কোনদিকে যে নিয়ে যাবেন হাত ধরে কে জানে। সিমন বলেছিলো তার কলেজ স্ট্রীট নিয়ে একটি বিশেষ কারণে আগ্রহ জন্মেছে, তার কথাতেই লিখতে বসা। তারপর সে লেখা পাখা মেলে উপন্যাস হয়ে গেলে ভালোই হয়।
গল্পমাসির গন্তব্য নিয়ে কোনো দাবিদাওয়া নাই, শুধু আগ্রহ আছে।
আগ্রহের হাওয়ায় ঘুড়ি উড়বে অবশ্যই।
অপেক্ষায় আছি...।
আসিতেছে পরের পর্ব.......
একটা বড়োসরো ভালো উপন্যাসের অপেক্ষায় রইলাম...
হুমম, আমারো দুশ্চিন্তা সেটা নিয়ে, যা জিনিস ফেঁদে বসেছি তাতে ছোটোর মধ্যে শেষ করতে পারবো বলে মনে হচ্ছে না।
তারপর?
---------------------------------------------
ফুল ফোটে? তাই বল! আমি ভাবি পটকা।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
আসিতেছে পরের পর্ব....... শীঘ্রই!
নাশেষকর্লেকিন্তু বেজায় বিরক্ত হবো, হুম!
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
সে আশঙ্কা যে একেবারে নেই তা নয় , তবে কোনোদিন সিরিজ-খেলাপি হই নি এখনো, তাই একবার হওয়ার কোটা অন্তত পাওনা আছে, কী বলেন?
মূলোদা, সমস্তটা লেখা হয়ে যাবার পরেই এই লেখাটা পড়া শুরু করা উচিত্ ছিলো, এখন আবার পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকতে হবে!
ভীষণ ভালো লাগলো। বিসর্গ তে গান করে? হাহহাহাহা!
আমার বাবার খুব ইচ্ছা ছিলো প্রেসিডেন্সিতে পড়ি, শেষ পর্যন্ত পৃথিবীর অপরপ্রান্তে চলে এলাম। আমর এক প্রাণের বন্ধু কিন্তু প্রেসির ছাত্রী, অনেকটাই নয়নার সাথে মিলে যায়।
-----------------------------------------------------
আর কিছু না চাই
যেন আকাশখানা পাই
আর পালিয়ে যাবার মাঠ।
-----------------------------------------------------
আর কিছু না চাই
যেন আকাশখানা পাই
আর পালিয়ে যাবার মাঠ।
বিধিসম্মত সতর্কীকরণ দেওয়া হয় নি যে তার কারণ কোথাও কোথাও বাস্তব ঘটনা ও চরিত্রেরা ছায়া ফেলে যাবে এ কাহিনীতে। তবে চরিত্রেরা মিলেমিশে আছে, যেমন ঐ উৎপল কোনো এক জন নয়, আমার চেনা নানা জনের একটু একটু নিয়ে গড়া সে। কাজেই "বিসর্গ"র কথা এসেছে (এখানে চোখ-টিপি ইমো)। অধিকাংশের ক্ষেত্রেই সে কথা খাটে। তবে নয়না এখনো অবধি সবটাই কল্পনা।
সবটা আমি বসে বসে লিখবো তার পর পড়তে শুরু করবেন, এমন ইচ্ছা ছিলো? কী সর্বনাশ! একটু না হয় অপেক্ষা করলেনই, তা বলে এতোটা পথ লিখিয়ে-কে একা ছেড়ে দেবেন?
মূলোদা, হঠাৎমনে পড়ল, আমার নয়নার যিনি নয়ন, তাঁর কিন্তু আপনারই নামে নাম! পদবীটা ঠিক জানা নাই অবশ্য। তারা দু'জনেই আমার ব্যাচ, অর্থাৎ২০০৭, মাস্টার্স ধরলে ২০০৮। অনুমান করছি (শুধুমাত্র আপনার জ্ঞানের পরিসরে! মাইন্ড খেতে পারবেন না বলে রাখলাম!) আপনি বেরিয়ে গেছেন তার কিছু আগেই?
সম্পূর্ণ অফ টপিক: পুরোনো কিছু লেখা পড়তে পড়তে আপনার আর নজু ভাইয়ের একটা মন্তব্য-প্রতিমন্তব্যে সুবিনয় রায়ের গলায় এই গানটার কথা বলছিলেন। আমার খুব প্রিয় গানটা, লিংকটা এখানে দিলাম:
http://www.hummaa.com/music/song/Aakaash+Aamay+Bhorlo+Aaloye/87615#
-----------------------------------------------------
আর কিছু না চাই
যেন আকাশখানা পাই
আর পালিয়ে যাবার মাঠ।
-----------------------------------------------------
আর কিছু না চাই
যেন আকাশখানা পাই
আর পালিয়ে যাবার মাঠ।
আমার প্রত্যক্ষ চেনার মধ্যে ঐ নামে কোনো নারী নেই, নামটা সুন্দর বলেই ব্যবহার করলাম গল্পে। আর যে সময়ের কথা লিখেছেন তার অনেক আগেই বেরিয়ে গিয়েছি, সেই অনুযায়ীই সালতারিখ দিচ্ছি লেখায়। আর আমার নামের লোকেরা সব্বাই ভীষণ ভীষণ ভালু হয়, কাজেই নয়নার নয়ন যে যারপরনাই ভালু লুক তাতে কোনো সন্দেহই নেই।
গানটা চমৎকার, অনেক ধন্যবাদ। তবে ডাউনলোড করলাম না, অচেনা সাইটে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে সাহস হয় না।
চলুক,হাঁটুক,দৌড়াক
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
এই তো, দৌড় দিলাম বলে!
হ, চলুক,হাঁটুক,দৌড়াক
.........................................
I think what I think because that's how I am. You think what you think because that's how you are.
...........................
Every Picture Tells a Story
আপনেও?
আইতাছে পরের পর্ব.......
চমৎকার!!!
শীগগীর শীগগীর পরের পর্ব দেন গো, অপেক্ষায় থাকা খুব চাপের ব্যাপার।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
এই সপ্তাহেই যতোটা পারি নামিয়ে ফেলতে হবে, আগামী সপ্তাহটা একেবারে সময় থাকবে না। তবে স্নিগ্ধা আমাকে বলেন (আপনাকেও বলেন, আপনাকে একটু বেশিই বলেন) যে আমি নাকি দু হাত পায়ে লিখতে পারি (অর্থাৎ ছাইপাঁশ যাই হোক প্রোডাকশনে বেশি সময় লাগে না, এইটা আমার ব্যাখ্যা, আমার লেখা নিয়ে, আপনাকে নিয়ে বল্লাম্নাকিন্তু)। কাজেই তাড়াতাড়ি নামাতেই হবে, সেই সু/দুর্নাম বজায় রাখতে।
আপনার ভাল্লেগেছে জেনে আহ্লাদ হলো।
আপনাকে বহুদিন ধরেই একটা অনুরোধ করে আসছি - নিতান্তই আয়ুক্ষয় করছি জেনেও দেশ ও জাতির স্বার্থে এই আত্মত্যাগ আমি করেই যাচ্ছি - দয়া করে একটু বাকসংযম প্র্যাক্টিস করেন!!! পয়সা তো লাগে না, তেমন বিরাট কোন সাধনাও কর্ত্তে হবে না - সিম্পলি সবসময় সবখানে কূটনামি করার যে একটা অদম্য বাসনা আপনার হয়, সেটা না করে ওই সময়টাতে নিজের দুই হাত দুই কানের সাথে বেন্ধে রেখে একটু সৎচিন্তা কর্ব্বেন - এইইই ... আর কিছু না!
তুলিরেখা - মূলত পাঠককে আমি একাধিকবার বলেছি যে আপনার এবং ওনার অনেক লিখতে পারার ক্ষমতাটাকে আমি ঈর্ষা করি। সত্যিই করি। আমার মুখটা, বলতে নেই, শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে সারাদিনই চলতে থাকে, লেকিন কিছু লিখতে গেলেই কোমরের বাত কেন যে হাতে এসে জড়ো হয় ...
আমার সেই কম্পলিমেন্টকে যে মূলত কুচিন্তক এভাবে ইন্টারপ্রিট করবে তা কে জানতো ......
আহা কমপ্লিমেন্টই তো বলছি, আগে শুনতাম কাদের খান দু হাত দু পায়ে চিত্রনাট্য লিখতে পারেন আর আজকাল আমার নামে আপনার এই 'কমপ্লিমেন্ট' শুনছি। যুদ্ধের বাজারে যা পাই তাতেই বিগলিত হই, আপনি চিন্তা করবেন না।
আপনার বাত মনে হয় না এম্নি ধরণের ওষুধে সারার, কিন্তু ঠানদিকে লাঠৌষধির কথা বলিই বা কোন সাহসে? আঠারো নম্বর লেখা তো ২০১০-এ পাবো মনে হচ্ছে, যদি কপাল ভালো থাকে।
'উপন্যাস' ট্যাগ দেখে আর পড়লাম না৷ শেষ হোক, তারপরে পড়ব৷ একটা কৌতুহল, উত্তর দিতে না চাইলেও কিচ্ছু মনে করব না৷ আপনি কি "জতুগৃহের পাখী'দের সমসাময়িক?
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
এইটা ফেয়ার হলো না কিন্তু, পড়া থামালে লেখার উৎসাহ কমে যাবে যে। পড়তে থাকুন না, আর সাথে সাথে মতামতও জানাতে থাকুন।
জতুগৃহের পাখি'র সময়টা ঠিক জানি না, তবে আমি এ গল্পে সালতারিখ মোটামুটি মানছি, কাজেই তা থেকেই বুঝতে পারবেন। বিসর্গ থেকে অন্য একটি বর্ণ বের করে নিন না।
আরে না না 'বিসর্গ'দের চিনি তো৷
এমনিই আপনাদের কলেজেরই তো, তাই মনে হল ওদের কথা৷ এই সচল-শমিতদের সমসাময়িক ওরা৷
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
নাঃ, পাখিদের চিনি না একেবারেই। "বিসর্গ"দের একজন আমার ক্লাসেই ছিলো, সে অবশ্য ওরা বিখ্যাত হবার পরেপরেই দল ছেড়ে বিদেশ পাড়ি দেয়, এখন অবশ্য আবার দেশে আছে। বং কানেকশন ও আরো কিছু ছবিতে তার নাম দেখা যায়। তখন আমি খুউব খুউব উন্নাসিক ও রক্ষণশীল ছিলাম সঙ্গীতের ব্যাপারে, কাজেই ওদের গান শুনে মুগ্ধ হতাম না কিছুতেই। তার কারণও ছিলো, "কাঁটাগাছ"-এর কনসার্ট শুনে এমন ভয়ানক বাজে লেগেছিলো যে সামান্য যা সম্ভাবনা ছিলো সেটুকুও বিনষ্ট হয়েছিলো। তাদের নিয়ে আমার মত এখনো বদলায় নি। "বিসর্গ"দের গানের অবশ্য ভক্ত হই শুনতে শুরু করেই।
গল্পের উৎপল অবশ্য আমার সে বন্ধুর আদৌ রেপ্লিকা নয়, গানটুকু বাদ দিলে একেবারেই অন্যরকম সে, অন্ততঃ এই অধ্যায়ে যা দেখা গেছে সেই হিসেবে।
লিক্ষা যান, থাইমেন না!
------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
লিচ্চয় লিচ্চয় ফক্সিয়ালভাই, থামাথামি নাই।
অনেকদিন বাদে আজ নিয়ত করেছি নীড়পাতার সবকয়টা পোস্ট পড়বো এবং মন্তব্য করবো। কিন্তু আপনারটা আধেকটুকু পড়ে রেখে দিলাম। এখন পড়লে পরের পর্ব আসতে আসতে সবটুকু ভুলে যাবো, (দৌড়ের উপরে থাকি, বাপের নাম ভুলে যাই, আর তো উপন্যাস) তখন খেই ধরতে আবার এটা পড়তে হবে।
তাই পরের পর্বসমেত পড়বো। ততদিনে দৌড় একটু কমবে বলেই মনে হয়
আমার এই দৌড় কিন্তু মোটেও কাজের দৌড় না। আলসেমির দৌড়। আমি যখন অনেক কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকি, তখন সচলে সবচেয়ে বেশি পোস্ট পড়ি আর মন্তব্য করি। যখন কাজ করি না, তখন সচলের ধারে কাছ থেকেও দূরে থাকি। খালি আরাম করি।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
না না এতো দৌড়ানো ভালু না যে পিতাশ্রীর নাম বিস্মরণ যাবে। আপনি বরং একটু দম নেন।
আর ওই আলসেমির দৌড়টা কিন্তু সবার জন্যই সত্যি। ফাঁকা সময়ে ফাঁকি মারি সবচে' বেশি।
উপন্যাস কিন্তু অনেক লম্বা হবে বলেই মনে হচ্ছে, কাজেই শেষ হলে একসাথে পড়ার পরিকল্পনা থাকলে শেষের সে দিন কিন্তু ভয়ঙ্কর হবে, বলে রাখলুম।
ক্যান্টিন আর কলাবাগান (ডিরোজিও হলের পেছনের জায়গা)-এদুটোর বর্ণনা এতো খুঁটিয়ে দিলেন যে উপন্যাসের ট্যাগটা স্বার্থক বলে মনে হচ্ছে...। আসুক তবে পরের পর্ব- সামাজিক একটা চমৎকার উপন্যাসের আশায় রইলাম।
______________________________________________________
মধ্যরাতের কী-বোর্ড চালক
ডিরোজিও হলের পেছনের ঐ ঘরটা কাল্পনিক, কিন্তু মোটামুটি বাকি সবটাই বাস্তব, মায় ঐ শ্যাওলা ঢাকা জমিটাও। আমার জীবনের তিন বছর কেটেছে ঐখানে, অনেক অনেক স্মৃতি আছে যার অনেকটাই বাদ দিতে হবে লেখায়, প্রাসঙ্গিকতা ও আয়তনের কথা ভেবে।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ। সাথে সাথে মতামতও জানাতে থাকুন।
হুমমম ...... দেখি পরের পর্বে কী আসে ......
আমিও দেখি পরের পর্বে কী কমেন্ট আসে ......
দিল্লী থেকে আসায় প্রবাসী মানে?
এ উপন্যাসের শুরুটা চেনা আরেকটা উপন্যাসের মতি লাগলো। নাম + লেখকের নাম ভুলে গেছি। একদল কলেজের ছেলেমেয়ের গল্প। সেখানে একটা মাথাগরম মেয়ে থাকে ভালো নাচে। টেবল টেনিস খেলে আরেকটা মেয়ে।
প্রথম পর্ব পড়ে আগ্রহ তৈরী হলো।
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
প্রবাস বলতে সাধারণভাবে (ঢিলেঢালা অর্থে) বাংলার বাইরে বোঝায়, শুধু বিদেশিই নয়। সে অর্থেই ব্যবহার করেছি শব্দটা।
বাণী বসুর কলেজ জীবন নিয়ে উপন্যাস আছে, একুশে পা (নাচ ও টেবিল টেনিসের কথা মনে নেই)। তার সাথে পরিমণ্ডলগত মিল পাবেন, অন্ততঃ প্রথম পর্বে। আগামীতে আমরা দূরে সরে যাবো, তবে কোনদিকে সেটা এখনো ভেবে ঠিক করি নি।
আগ্রহী পাঠক ঠেলে নিয়ে যাবে এই আশাতেই লিখতে সাহস পেলাম।
পুস্তকটার নাম একুশে পা- ই। গাধু সেটা ভুলে গেছে। কঠিন পুস্তক। অন্তত সেসময় তাই মনে হয়েছিলো। আবার পড়তে মন চাইছে। কিন্তু বিলাতে যাবার সময় খান্ডালনী সেই বই ফেরত দিয়ে যায়নি। আমার হার্ট এবঙ পুস্তক সবি সাথে করে নিয়ে গিয়েছে।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
তুই কার কথা বলছিস অপু?
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
এর ট্যাগে 'নভেলা' কেন?
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
প্লট কী হবে তা নিয়েই দ্বিধায় আছি, দু রকম থ্রেড মাথায় ঘুরছে। কাজেই লেখার দৈর্ঘ্য তো একেবারেই অজানা। তাই অপশন খোলা রেখেছি, বড়ো না হলে নভেলা বলে যাতে চালিয়ে দেওয়া যায়।
পড়লাম। আরও দুয়েক পর্ব পড়ে মন্তব্য দেবো, মানে যদি আরও পর্ব আসে আর কি। ট্যাগে নভেলা লেখা, চলবে চলবে ভাব, কিন্তু 'চলবে' লেখা নেই দেখে একটু সন্দিহান
'চলবে' অবশ্যই, অন্ততঃ ইচ্ছে সেই রকমই। নভেলা/উপন্যাসের ব্যাখ্যা এইমাত্তর রানা মেহেরকে দিলাম, উপরে। মতামত জানাতে থাকুন, ব্লগোপন্যাস এক অর্থে বারোয়ারি রচনা, আপনাদের মন্তব্য জানলে সেই ভাবে এগোনোর কথা ভাবার ইচ্ছে আছে।
ঝপ করে শেষ হয়ে গেল কেন?
শেষ হয় নি তো, এইটা উপন্যাসের প্রথম ভাগ। বাকি আসিতেছে।
ধন্যবাদ মূলোদা, আবদার রাখার জন্য
আমার কাজ এটুকুতেই হবে, তবে নির্ঘন্ট (অর্থাৎ মহাবধি সোসাইটি, শান্টিং, বিসর্গ- এগুলোর অর্থ) দিলে আমার কাজ আরো ইজি হয়
দৌড়ের উপ্রে, তাই সময়মত পড়তে পারি নাই। তবে আজকের দিনটাও খারাপ না।
আপনাকে জন্মদিনের বিশাল শুভেচ্ছা।
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
নির্ঘন্ট এইরূপ:
মহাবোধি সোসাইটি: উইকি থেকে তুলে দিলাম: The Mahabodhi society at Colombo was founded in 1891 but it offices were soon moved to Calcutta the following year in 1892. One of its primary aims being the restoration of the Mahabodhi Temple at Bodh Gaya, the chief of the four ancient Holy sites to Buddhist control
শান্টিং এসেছে বোধ হয় ট্রেনের কামরা একটার সাথে একটা জুড়ে দেওয়ার থেকে। এই কনটেক্সটে মানে হবে কোনো মতে ঠেলে গুঁতিয়ে সেঁধিয়ে যাওয়া।
বিসর্গটা খুলে বললাম না, ওর কাছাকাছি একটা বর্ণ আছে, সেইটা হিন্ট।
উপন্যাসের নাম থেকেই বোঝা সম্ভব, কলেজ স্ট্রীট আবারো আসবে ঘুরে ফিরে। ভাবছি একটা ম্যাপ দিয়ে দেবো নাকি।
শুভেচ্ছার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আপনে বহুদিন লেখেন না দেখা যায়!
৩৯ সপ্তাহ আর ৬ ঘন্টা ধরে অপেক্ষায় এর পরের পর্বের জন্যে। আপনে কই মূলোদা?
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
নতুন মন্তব্য করুন