সচলভাষা ১ নিয়ে অনেক মন্তব্য হয়েছে, আলাদা করে উত্তর দেয়া হয় নি। তাছাড়া মন্তব্য পড়তে পড়তে অনেক প্রশ্ন মনে এসেছে। চৈনিক ফিসফাসের মতো গল্প ঘুরে গিয়ে এমন জায়গাতেও পৌঁছেছে যেখানকার কথা আমি আদৌ বলি নি শুরুতে। লেখার নিচে এতো কথা লেখার চেয়ে আলাদা পোস্ট দেয়াই সঙ্গত মনে হলো। অতএব সচলভাষা দুই। যাঁরা যাঁরা প্রথম ভাগ পড়েছেন ও মন্তব্য করেছেন, এইখানে তাঁদের সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাখি। কোনো কোনো সুলিখিত মন্তব্য পড়ে খুব ভালো লেগেছে, কিন্তু সে কথা এখানে বলতে বসলে এই লেখার মূল ফোকাস থেকে সরে যেতে পারি, তাই সে আলোচনা করার লোভ সংবরণ করলাম। পুরো আলোচনার সূত্রপাত এক অর্থে হিমুর এক লেখার সূত্র ধরে, এবং হিমু তাঁর মন্তব্যে যে উপলব্ধির কথা বলেছেন তাতে আমার আগের নিবন্ধটি লেখা অনেকাংশেই সার্থক হয়েছে। তারপরেও অনেক কথা থেকে যায়, সে সব নিয়েই আজকের লেখা।
প্রথমে খুব সংক্ষেপে আরেকবার বলি আমি কী বলেছিলাম:
১) অন্য কিছু ব্লগ সাইটের উদাহরণ থেকে আমার মনে হয়েছে এখানের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য একটা সাধারণ গাইডলাইন আমাদেরই অনুসরণ করা উচিত। এটি যেহেতু মডারেটেড সাইট, সেজন্য মডারেশন করেন যাঁরা তাঁদের এতে কিছু ভূমিকা থাকবে, কিন্তু লেখেন যাঁরা তাঁদের দায়িত্বই সর্বাধিক।
২) রাজনৈতিক নিবন্ধের ভাষা এবং গল্প উপন্যাসের ভাষা এক হবে এমন কথা নেই, অন্ততঃ আমার যতটুকু পড়া আছে তাতে সেই রকমই মনে হয়। সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই ঐ বিশেষ বাক্যাংশটি অসঙ্গত (ইন্যাপ্রোপ্রিয়েট) ঠেকেছিলো।
অনেকের মন্তব্যের মধ্যে থেকে একটা কথা বারবার উঠে এসেছে, নৈতিকতা আপেক্ষিক, অনেকাংশেই লেখকের অভিরুচির ব্যাপার। কারো একে স্রেফ এস্থেটিক বা নান্দনিকতার বিষয়ের বেশি কিছু মনে হয় নি। কথাটা ভুল নয়, এই ইম্পার্ফেক্ট পৃথিবীতে বেশির ভাগ নীতিই আপেক্ষিক। তার পরেও মানুষ নীতি বানায়, জীবন চালাতে গেলে তার দরকার হয় বলেই বানায়। এবং আপেক্ষিকতার অনিশ্চয়তার মধ্যে দাঁড়িয়েই কিছু নিরপেক্ষ গণ্ডি টানে। এ সপ্তাহে বিল মারের রিয়াল টাইমে ভ্যান জোনস প্যানেলিস্ট হয়ে এসেছিলেন, এক জায়গায় তিনি বললেন, এই যে অর্থনৈতিক ঝঞ্ঝা ঘটে গেলো তার দায় আমাদের। আপেক্ষিকতার মতোই এই কথাটাও ভুল নয়। কিন্তু এটা অতি জেনেরিক, এবং শেষ কথা প্রতিপন্ন হলে মুশকিল। আমাদেরই খুঁজে দেখার দায়িত্ব রয়েছে গণ্ডগোলটা হয়েছে ঠিক কোনখানে। কাজেই আপেক্ষিক বলে ছেড়ে না দিয়ে খুঁজে দেখতে চাই কোনো পথ আছে কি না। আমার ধারণা সে পথ বেরিয়ে আসবে আলোচনার মধ্যে দিয়েই।
এবার এস্থেটিকের কথা। এই সাথেই কেউ কেউ বলেছেন লেখালেখির নিয়মকানুন বানানোর চেয়ে সোজা কাজ যার যেটা পছন্দ নয় সে লেখাটা এড়িয়ে যাওয়া। নিঃসন্দেহে এটা সোজা কাজ, এর চেয়ে সহজ সমাধান হয় না সে কথা একবাক্যে মানি। কিন্তু সোজা পথ খুঁজছি না এ কথাও বলাই বাহুল্য। এবং এতো কথা শুধু নান্দনিকতার প্রসঙ্গেও বলি নি। হিমুর লেখা আরেকটি গল্পের উদাহরণ এ ক্ষেত্রে আনবো, একটি চমৎকার কল্পবিজ্ঞানের গল্প যার নাম "মাদার্চো"। আগামী সাইফাই সংকলনে এই গল্পটি গেলে সংকলনের মান উন্নততর হবে, এমনকি নান্দনিকতার বিচারেও, পাঠক হিসেবে এই আমার মত। লেখালেখির মধ্যে গালিগালাজ থাকলেই সেটা খারাপ, এমন সরলীকরণের প্রয়োজন আমি ব্যক্তিগত ভাবে বোধ করি না সেটা খোলসা করতেই এতো কথা। তার চেয়ে যেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো স্থানকালপাত্র বিচার। সে কথা তাসনীম বলেছেন রাতপোশাকের উদাহরণ দিয়ে। সচেতন লেখালেখির ইচ্ছে যাঁরা রাখেন, তাঁদের কাছে এই দাবিটুকু রাখতে আমার দ্বিধা নেই।
এবার এড়িয়ে যাবার কথায় আসি। এড়িয়ে যাওয়ার মতো সোজা কাজটা আমার চিন্তায় আসে নি, এমনটা মনে করার সময় অন্য সম্ভাবনাগুলোর কথা ভাবলে এই প্রসঙ্গটাই আসতো না। প্রশ্নটা আমার ব্যক্তিগত রুচির নয়, সেই রকম লেখা আমি এড়িয়েই যাই, তা নিয়ে ভাবগম্ভীর প্রবন্ধ লিখতে বসার দরকার হয় না। কিন্তু এখানে বিষয়টা সচলায়তনের পরিবেশ। এড়াতে এড়াতে শেষে হাতে পেনসিল পড়ে থাকুক এইটা আমার কাঙ্ক্ষিত নয়। হয়তো অন্য পাড়াতেও এই জাতীয়ই কিছু হয়েছিলো, পাঠকেরা হয়তো প্রথমে এড়িয়েই গিয়েছিলেন কিছু গলিপথ, মানিয়েরা মেনে নিয়েছিলেন একধার থেকে, ক্রমে এখন তাঁদের গোটা পাড়াটাই এড়িয়ে যেতে হয়। আন্তর্জালে খবরের বাইরে বাংলা পড়া ও লেখার জায়গা আমার এই একটাই, আমি এর পরিবেশ নিয়ে ভাবিত হই সঙ্গত কারণেই। হিমু নিজে পরিবেশ কলুষিত করতে আগ্রহী হবেন এমন আমার আশঙ্কা নয়। কিন্তু জনপ্রিয় বলেই ওঁর অনুসারী যাঁরা তাঁদের সংখ্যা অনেক, এবং সে কারণেই ওঁর লেখার উদাহরণ টেনে এতো কথা বলা। আমি খুশি যে ভাবপ্রকাশের সীমিত ক্ষমতা নিয়েও সে কথাটুকু ওঁর কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি। এই সাথেই আরেকটা কথা বলা যাক। দুটি মন্তব্য উদ্ধৃত করি।
"বরং শেষ লাইনটা পড়ার আগে আমার নিজেই মনে মনে ঐ লাইন আওড়াইছিলাম, পরে দেখি আমার মনে ক্ষোভটা যেভাবে প্রকাশিত হইছিল লেখক সেটা শেষ লাইনে লিখে দিছেন।" অর্থাৎ বুলস আই! তাহলে এতো কথা কেন? সে কথায় যাওয়ার আগে এই মন্তব্যটা শুনুন:
"ঐ বাক্য ব্যবহার না করে, লেখক তাঁর যে নির্দিষ্ট আবেগটুকু প্রকাশ করতে চেয়েছেন, তা কি অন্য কোন বাক্যে প্রকাশ করা সম্ভব? আমার তো মনে হয় না।" দুটি মন্তব্যে পরস্পরবিরোধিতার কথা দর্শিয়ে খুশি হচ্ছি না, কিন্তু পাঠক হিসেবে এবং যৎকিঞ্চিত লেখার (যার প্রায় সবটাই সচলে) অভিজ্ঞতাতে বলি, পাঠকের মনে যদি আমার কথাটুকু জাগিয়ে তুলতে পারি না লিখেই, তাহলে তো কেল্লা ফতে হয়েই গেছে, সেখানে "অন্য কোন বাক্যে প্রকাশ করা"র প্রয়োজনই গিয়েছে ফুরিয়ে। জানি, তবু তার পরেও সমাপ্তির ভাবটুকু আনতে হয়, নিবন্ধ তো ছোটো গল্প নয় যে শেষ হয়েও অশেষ থেকে যাক এটা কাম্য হবে। কিন্তু সে কাজটুকু করার অনেক রকম পন্থাই এক জন লেখকের চিন্তায় আসে, আর যাই হোক ঐ নান্যপন্থার বিপাকে তিনি পড়বেন না এ কথা বলতে সমস্যা হয় না। এবং এই যে লেখককে অন্য পথের কথা ভাবতে অনুরোধ করা হচ্ছে একে সিঁদুরে মেঘ ভাবারও কোনো কারণ নেই, এমন কি তথাকথিত "ফেসবুক ব্যানিংএর সাম্রাজ্যে"ও। পাঠকের তরফে অনুরোধকে রাজপেয়াদার হুকুম ভাবার কারণ ভেবে পেলাম না।
এবার বিনির্মাণের প্রসঙ্গ। সাহিত্যের ছাত্র নই বলেই এই জাতীয় শব্দ আলোচনায় এলে সতর্ক হয়ে যাই, যাতে অজান্তে ভুল কিছু বলে না ফেলি। তাই সংজ্ঞাটা আগে দেখি। Deconstruction is an approach that rigorously pursues the meaning of a text to the point of exposing the contradictions and internal oppositions upon which it is apparently founded and showing that those foundations are irreducibly complex, unstable or impossible. গদ্যাংশই হোক বা লিখনরীতি, তার অবিরত ও নির্মম কাটাছেঁড়াই বিনির্মাণ, যার মধ্যে দিয়ে লেখার মধ্যেকার স্ববিরোধটুকু প্রকাশিত হবে, এবং ভাঙতে ভাঙতে আমরা পৌঁছে যাবো সেখানে, যেখানে তার ভিত্তিকে আর সরল করে বলা যাবে না, যেখানে গিয়ে সেই রীতিনীতিতত্ত্ব হয়ে যাবে সব রকম বাহুল্যবর্জিত। তত্ত্ব হিসেবে এটি যতোটা চমকপ্রদ, প্রয়োগ ততোটাই কঠিন। তবু চেষ্টার ত্রুটি না হোক এটাই কাম্য। ব্লগ নিঃসন্দেহে একটি নবীনতর মাধ্যম, মুদ্রিত মাধ্যমগুলোর তুলনায়। এর রীতিনীতি স্বতঃপরিবর্তনশীল, এবং সেই সব পরিবর্তনের সবই যে সঠিক তাও নয়, তবু নদীর মতোই পাড় ভেঙে এগোয় সে। তার মধ্যেও আমরা নিয়ম বানাই, ভাঙি, এবং দেখতে থাকি কোন দিকে এগোয় সেই প্রবাহ। বিনির্মাণের অর্থ তাই নিয়মহীনতা নয়, বরং স্বাভাবিক প্রবাহের গতি। আর সব কিছুর মতোই এই স্বাভাবিকতাও আপেক্ষিক। কাজেই ব্লগেও আমরা কিছু তথাকথিত অস্বাভাবিকতার প্রয়োগ করি, ঐ নিয়মনীতির খাতিরেই। সচলায়তন থেকেই একটা উদাহরণ দিই। লেখায় যথাসাধ্য বাংলা শব্দের ব্যবহার এখানে কাম্য বলে ধরা হয়। রোজকার জীবনের সাথে তুলনা করলে এটাও সেই অর্থে স্বাভাবিক নয়, কথা আমরা যে ভাষায় বলি তাকে বাংলিশ বলাই উচিত। বাংলিশ লিখলে তাহলে প্রশ্ন ওঠে কেন? ব্লগ জীবনের প্রতিচ্ছবি বলে তাতে গালিকে সমাদর করলে বেচারা বাংলিশ কী দোষ করেছিলো? এই প্রশ্নের উত্তরের খোঁজ না জানলে সব বিনির্মাণ বৃথা যাবে। যে ভাষাকে প্রতিদিন ভিনদেশি ভাষার হাতে নিপীড়িত হতে হয়, তার প্রতি ভালোবাসার চেয়ে বড়ো কোনো কারণ সচলে সবাইকে টেনে এনেছে বলে আমার মনে হয় না। সেই ভালোবাসা থেকেই এই ইচ্ছা হয় যে আমার এই ভাষা থাকুক নিষ্কলুষ, যদিও সবাই মনে মনে জানি যে ভাষা ঐ প্রবাহিনীর মতোই প্রতিনিয়ত পাড় ভেঙে বয়ে চলেছে। এছাড়াও একটা কথা থাকে। বিনির্মাণের প্রথম শর্ত বোধ হয় নির্মাণ, 'ভাঙাগড়া' কথাটায় পরে থাকলেও গড়ার কাজটাই আগে করতে হয়। পিকাসোর জীবনে কিউবিজম আর ফভিজমের আগে এসেছিলো ব্লু পিরিয়ড। ছন্দ ভাঙার আগে আমাদেরও বোধ হয় খান কতক ছন্দের ক্লাস করে নেওয়া দরকারী।
আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের কথাটা খোলসা করা যাক এবার। আশা ছিলো এটা বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন হবে না, কিন্তু সব আশা কি আর পূর্ণ হয়! যে রীতিনীতির কথা আমি বলেছি সে পথেই ইলিয়াস আসেন, মল্লবর্মন এবং ঘোর নাগরিক সুনীলও। মাঝগাঙে ভিজে ত্যানা-জড়ানো জেলে শহুরে ভাষায় কথা বলুক ঠোঁট টিপে, এ কথা আমার বক্তব্যে কোথায় ফুটে উঠলো সেটা খুঁজে পেলাম না। তেমনই, নাগরিক ড্রইংরুমে ছৌনাচের মুখোশ একই কৃত্রিমতাদোষে দুষ্ট। এর কোনোটাই সচলের গাইডবুক হোক আমি চাই না। সংলাপের ভাষায় আসুক গালি, বাংলিশ, এবং যা যা স্বাভাবিক তার সব কিছু, সাদর আমন্ত্রণ জানিয়ে রাখলাম সন্দিহান যাঁরা তাঁদের সকলকেই এমন লেখা লিখবার জন্য। যে কথা আমি বলেছিলাম তা হলো আত্মনিয়ন্ত্রণের, সচলেরই স্বার্থে, যেহেতু এখানে নানা বয়সী নানা মানের লেখক লেখেন। এতে করে নিজের লেখার মান তাতে কমে যাবে এই আশঙ্কা যাঁদের আছে তাঁদের বলি আরেকবার 'অপুর সংসার' দেখতে, কলমের (বা ক্যামেরার) জোর থাকলে চুলের কাঁটা দিয়েও আশ্লেষছবি আঁকা যায়। তবে ঘটনা হলো এই যে ঐখানে শয্যাদৃশ্য থাকলেও আমার নান্দনিকতাবোধ আহত হতো না। হতো, যদি সুকুমার রায় তথ্যচিত্রে থাকতো। স্থানকালপাত্রের কথাটা আলগোছে এই রকম ভাবেই বলা যায়। আরো খোলসা করলে যা হয় তা রীতির গণ্ডির বাইরে যাবে, ঢুকবে নীতির এলাকায়, লেখার শেষে সে কথায় আসবো।
মাহবুব মুর্শেদ যে ভূততাড়ানি মন্ত্রের কথা লিখেছেন, শুনতে সেটা যতো হাস্যকরই হোক, ওর মধ্যেই রয়েছে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথাটা। স্নিগ্ধাও এনেছেন সে প্রসঙ্গ। কতোটা হলে ঠিক, আর ঠিক কোনখান থেকে ভুলের শুরু, এ কথা বলে দেবে কে। আপেক্ষিক এই মেঘের রাজ্যে চকখড়ির দাগ টানবো কোথায়? পাঠকেরা এই প্রসঙ্গে আলোচনা করলে কাজ হতো। কিন্তু তার বদলে এসে গেলো পাঠকরুচির হাইপোথেটিক্যাল চরিত্রের কথা। পাঠকের কোমল মনে আঘাত লাগার আশঙ্কায় গালিনিয়ন্ত্রণের অনুরোধ, এই কথাটা যে এলো কোন পথে ভেবে পেলাম না। বয়স্করা ভিন্নরুচির মানুষ, তাঁদের রুচিকে 'কেটার' করার কথা ভেবে সবাই লিখবেন এমন উদ্ভুট বাসনা আমি পালন করি না। আমি সাহিত্যরীতি ও ব্লগীয়গতির কথা ভেবে এই প্রসঙ্গ এনেছিলাম। এবং স্রেফ পাঠকের রুচির কথা ভেবে লেখা যেমন কাজের কথা নয়, তেমনি পাঠকের রুচির ঠিক বিপরীতে গিয়ে কোমর বেঁধে দাঁড়াতে হবে এটাও ততো পরিণত পথ বলে ঠেকে না। এবং কিছু বৈপ্লবিক মন্তব্যে বিস্মিত না হয়েও পারি নি, যেখানে 'সাধারণ সংবেদনশীলতা', 'পরিচ্ছন্ন' ও 'রুচিশীল পরিমণ্ডলের' মতো বিষয়ও পাঠকের পীড়াদায়ক বলে মনে হয়েছে। তবু 'সৌজন্যের সীমারেখায়' দাঁড়িয়েই এই মতানৈক্য মেনে নিই, যেহেতু ঐ সীমারেখা আমাকে পীড়া দেয় না, পীড়া দেয় তার অভাবই। ওল্ড ফ্যাশনড আর বলে কাকে! যাক, এ জন্মে আর হাংরি জেনারেশন হওয়া হয়ে উঠলো না।
শেষে দুটি অসাধারণ মন্তব্যের কথা বলে শেষ করি। মন্তব্য দুটি আমার মতের সাথে মেলে, কিন্তু এদের অসাধারণত্ব সেখানে খুঁজি নি। দেশাত্মবোধ ও স্বাজাত্যপ্রেমের সংকীর্ণ পরিসরের পরেও ন্যায় বিচারের এলাকা থাকে, এবং যাঁরা গালাগালের পক্ষে তাঁদের এই ন্যায় বিচারের দাবি কিছুতেই অস্বীকার করা যায় না। যুধিষ্ঠির ও ধ্রুব বর্ণন এই দাবির বিরুদ্ধে নন অবশ্যই, কিন্তু তাঁরা যে কথা বলেছেন আমার বিশ্বাস আরো অনেকেই সে কথা মনে করেন, কিন্তু বলে উঠতে পারেন না। এবং কেন বলেন না, তার কারণ স্রেফ সাহসের অভাব বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কেন? তার উত্তর যুধিষ্ঠির দিয়েছেন তাঁর মন্তব্যে, 'যথাসময়ে' না থামলে কী হতে পারে সেই কথা শুনিয়েছেন। মন্তব্যের ঘোলা স্রোতে গালিগালাজ দেয়া যায় নির্দ্বিধায় ও নির্ভয়ে, কিন্তু মানবতার কথা বলতে গেলে ভয় থাকে অনেক রকম: সাহসী মন্তব্যের জন্য ওঁদের প্রশংসা করতে গিয়ে মনে এলো এই ভয়ানক কথাটা। সবাইকে অনুরোধ, এই নিয়ে বলতে যাওয়ার আগে ভেবে দেখুন একবার, এই পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত হবার যথেষ্ট কারণ খুঁজে পান কি না। এ কথা যদি সত্যও হয় যে ঘৃণার চর্চাটাই ইতিহাসের প্রথম পাঠ, অন্ততঃ বিশেষ কোনো কোনো ক্ষেত্রে, তাহলেও এই প্রশ্ন কি আমাদের তাড়া করে না, যে মানবতার কণ্ঠগুলি এতো ভীত থাকবে কেন! ছদ্মবেশী শত্রুদের চিনে নিতে গিয়ে আমরা যদি ভিন্নমতের চর্চার সমস্ত পথই আটকে দিই, তাহলে লেখার ভাষা, নান্দনিকতা, সাহিত্যচর্চা, সব কিছুই কি তাৎপর্য হারায় না?
সবার সব রকম প্রাসঙ্গিক মন্তব্য আলোচনাকে স্বাগত জানিয়ে শেষ করছি। অনুরোধ, মতামত জানানোর সময় খোলা মনে লিখবেন, অন্য মতটার কথাও একবার ভাববেন সম্ভব হলে। আলোচনার পথেই বেরিয়ে আসুক নতুন পথের খোঁজ।
মন্তব্য
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একমত। ধন্যবাদ রাজর্ষিদা।
ঐ
অভদ্র মানুষ
পাঠুদা,
ভীষন ভীষন জরুরি আর জটিল কিছু কথা এত সহজ বোধগম্যতায় ধরে দেয়া কেবল আপনাকেই মানায়----
সচলভাষা-১ নিজেই একটি পরিপূর্ণ লেখা ছিল। কিন্তু মন্তব্যের ঘরে বেশ কিছু অন্ধলোকের কড়া নাড়া দেখেই বুঝেছিলাম আপনাকে আরো একটা লেখা লিখতে হবে।
আশা করছি এইবারে আপনার মূলভাবটি সকল ঘরে গিয়ে পৌঁছাবে।
আর যদি তা নাও ঘটে--আপনি মন খারাপ করবেন না। এইটা আপনার লেখার ব্যর্থতা নয়। এইটা ওদের অক্ষমতা,অন্ধতা,অপারগতা।
মুর্শেদের মন্তব্যটার সুর ধরেই বলছি---আপনি যেটা সত্য ও ন্যায় বলে জেনেছেন, তার সপক্ষে দাঁড়ানোটা আপনার অধিকারের পর্যায়ে পড়ে, তার সপক্ষে যুক্তি দেখানোটা আপনার দায়িত্বের পর্যায়ে পড়ে। এবং আপনি সেই দায়িত্বটা অসাধারণ ভাবেই পালন করেছেন।
আপনাকে তারা-টারা দেবার কোন মানে হয় না---আপনার আকাশ এমনিতেই নক্ষত্রখচিত।
তাই আপনার জন্যে রইল ভুবনডাঙ্গার খোলা মাঠ---
আনন্দম!
এই অংশটিকে যথারীতি 'সুশীল ভাষায়' ব্যক্তি আক্রমণ হিসেবে দেখছি। কমেনটে আপত্তি জানানো হলো।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
সমর্থন জানাচ্ছি।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ভীষন রকম একমত, নজু ভাই!
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
এখানে দুটো প্রশ্ন :
১. কারা সেই দূর্ভাগা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী?
২. দৃষ্টির প্রতিবন্ধকতা তাঁদের কী কী দেখতে দিচ্ছে না?
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
হাওয়ার উপর দিয়ে অভিযোগ দায়ের করা খুব কাজের কথা না । অন্ধ লোকদের নামগুলো বলেন । সেটা দেখে অভিযুক্তরা স্বপক্ষে কিছু বলতে পারুক ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
অনিকেত,
সচলায়তনে আপনার অ্যাকাউন্ট ১ সপ্তাহের জন্য মডারেশনের আওতায় আনা হলো। ভবিষ্যতে সহসচলদের বিরুদ্ধে অসংযত ভাষায় আক্রমণ করলে আপনার বিরুদ্ধে কঠোরতর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সহমত পাঠকদা। এমনকি ভাষাপ্রয়োগের ক্ষেত্রেও কখন, কোথায় সীমারেখা টানবো এটা নির্ণয় করতে পারা জরুরী।
শব্দের কাঁধে অশলীলতা বা গালির দায় চাপানো যায় কিনা, সেই বেসিক প্রশ্নের উত্তর পেলাম না। হতাশ এবং ১ তারা।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
ছোট্টো একটা কথা বলি,
বাংলিশ আর বাংলা লোকজ গালি/বুলি কিন্তু সমতুল্য নয়। একটা বহিরাগত আরেকটা অন্তর্গত। একজনকে ঠেকিয়ে দিলে পরিশুদ্ধি আরেকজনকে মুছে দিলে পঙ্গুত্ব। এমনটা কি মনে হয় না আপনার?
বরাবরের মতই খুব গুছিয়ে লিখেছেন, পরে বাকি অংশ নিয়ে আলোচনাতেও অংশ গ্রহনের আশা রাখি।
শুভেচ্ছা।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
আপনার প্রতিমন্তব্যটি আমার মন্তব্যের নিচে দিলে আলোচনার সুবিধা হতো। (এধরণের গণকবরে অন্যলোকের মৃতদেহের সাথে মিলেমিশে থাকতে অবশ্য ভালই লাগছে)। আমার মনে হচ্ছে আমি আমার মন্তব্যে আমার অবস্থান পরিস্কার করতে পারিনি। আমি কেবল বলতে চেয়েছি, আমার সংবেদনশীলতার সীমা নির্ধারণ আমি নিজে করার অধিকার রাখি। তাই, যদি আপনার লেখার প্রশ্নাতীত সুবোধ শব্দগুলোও আমাকে পীড়িত করে তাহলে কারো কিছু বলার নেই। বোঝাতে পারিনি। কিন্তু আমি কোনো 'বিপ্লব' করতে যে আসিনি, এবিষয়ে আশ্বস্ত করছি।
হাংরি জেনারেশনের কথা বললেন।
কেউ মানুষের হাতে রাজনৈতিক নপুংসক হয়েছে
কেউ কবিতাকে ধর্মের সমান দেখাতে চেয়ে
নিজেকে নপুসক করেছে
হাংরি কবি দেবী রায়ের এই লাইনগুলো মনে পড়ল। (বিনীতভাবে বলছি এই উদ্ধৃতির ভেতর যে পুরুষতান্ত্রিকতা রয়েছে, সেটির দায় আমি নেব না)
অনেক ধন্যবাদ।
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
সচলভাষা-১ এ সুন্দর-সহজ আলোচনা ছাড়া আর কিছু ছিল বলে তো মনে পড়ে না। আপনার সাথে একমত না হলেই আন্ধা, অক্ষম, অপারগ হয়ে যেতে হবে?
আপনার এই কাব্যিক, শুদ্ধ ভাষার উদ্ধৃতিটি অত্যন্ত অশালীন, আক্রমণাত্মক, হামবড়াই পূর্ণ, সহ ব্লগারদের প্রতি অবমাননাকর।
.........
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা
এখানে কেবল ভোটই দেখছি, কিন্তু, আলোচনা সীমিত, কেন? যাঁরা মৃদু ভোট দিলেন, তাঁদের কি একটু কারণটা ব্যাখ্যা করা উচিত ছিল না?
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!
(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!
(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)
অপরিহার্য শব্দ গুলো ইংলিশ (অথবা অন্য ভাষা) থেকে নিয়ে এসে বাংলায় "বিদেশী শব্দ" হিসেবে ব্যবহার করায় আমার আপত্তি নেই। আমরা তো কম্পিউটার, মাউস, কি-বোর্ড ইত্যাদি অহরহ ব্যবহার করছি। আর বিদেশী শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমি একটা জিনিস খেয়াল করি/রাখি তা হল বাংলা ভাষার নিজের যেই ছন্দটা আছে সেটা যেন নষ্ট না হয়। এই কথাটা ঠিক বুঝিয়ে বলতে পারলাম কিনা জানিনা, ব্যপারটা আমি অনুভব করি কিন্তু কোন বৈজ্ঞানিক সূত্রের মত করে প্রকাশ করার পদ্ধতিটা আমার এখনো অজানা।
আমি বাংলিশ বলতে বুঝি বাংলার স্বাভাবিক ছন্দটা নষ্ট করে দিয়ে যত্রতত্র এক গাদা ইংলিশ (অথবা অন্য ভাষার) শব্দ বা বাক্যাংশ ঢুকিয়ে কথা বলার যেই অদ্ভূত রীতিটা মাঝে মাঝে দেখা যায় সেটাকে। যেমন কিছুদিন আগে একটা FM রেডিওর জকিকে বলতে শুনলাম, "উত্তরা থেকে অমুক লিখেছে তার ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা মারতে আর গান লিসেন করতে খুব ভাল লাগে, অনুরোধ করেছে তমুক সং টা তার ফ্রেন্ডদের জন্য। এখানে কোথায় ছন্দপতন হচ্ছে সেটা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হয়না। আমি এটাকেই বাংলিশ বলি এবং অপছন্দ করি। লেখায় অশ্লীল শব্দের ব্যবহারের নিয়মটাও এরকম একটা 'inexact science' বলে আমার মনে হয়। ঠিক কত মাত্রায় অশ্লীল, তার একক কত ইত্যাদি আমরা হিসাব কষে বাস্তব অথবা কাল্পনিক সংখ্যায় প্রকাশ করতে পারিনা (এখন পর্যন্ত) কিন্তু সাধারণ জ্ঞান থেকে বোঝা যায় কোন শব্দ বা বাক্যটা কোন স্থান-কালে অশ্লীল আর স্থান-কালে শ্লীল।
যিনি লেখক, লেখার একটি শব্দ কাটতে অথবা বদলাতেও তার অনেক মায়া লাগবে, এটাই স্বাভাবিক। কষ্ট আরো বেশি হবে যদি মডারেটর নামের "অন্য একজন" সেই কাটাকুটি গুলো করে। অতএব লেখক নিজেই লেখার সময় একটু যত্নশীল হলেই মনে হয় ভাল হয়।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
আমার তুচ্ছবাক্য স্মরণ করেছেন দেখে বিনীতবোধ করছি। আপনার আগের লেখাটি পড়ার পর আমি ব্যাপারটার একটা সাধারণ সমাধানের কথা ভাবতে গিয়ে প্রথমে বোঝার চেষ্টা করলাম - নিজে ব্যাপারটাকে কিভাবে দেখি, কেন দেখি। তারপর আবার অন্যের চশমাও নিজের চোখে পড়ে দেখার একটা চেষ্টা করলাম। অত্যন্ত নিষ্কপটভাবে অনুভব করলাম, প্রতিটি ভিন্নমতধারী তার চিন্তার প্রতি নিজের মত করেই কমবেশি সৎ। এমন নয় যে আমার বোধটা সবচেয়ে শুদ্ধ, অন্যরা কপট, অশুদ্ধ। ভিন্নমতের যুক্তি, আচরণ, উচ্চাবেগ আমার কাছে যতই বিরক্তিকর লাগুক, ওগুলো আমার নিজস্ব চশমাটার এই পাশেই কেবল এমন দেখায়। বুঝতে পারি, অন্য চশমা পড়ে আমার নিজের আচরণটাও সমান বিরক্তিকর মনে হওয়া সম্ভব।
ফলে আমার সচলভাষা ১ এর পাঠ হলো - ব্যাপারটা সাবজেক্টিভ। কার চশমা বেশি ঘোলা, সেটা এখানে বিচার করা যায় না। কিন্তু তাতে আমি সন্তুষ্ট ছিলাম না। আমার কাছে মনে হয়েছে হয়তো এটা শেষ কথা নয়। এরপরেও হয়তো আলোচনা সম্ভব, এই ভিন্নতার মাঝে ঐক্য সম্ভব। বিশেষ প্রকাশভঙ্গির ঘাত-প্রতিঘাত, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াগুলো সুচারুরূপে নির্ণয় করা সম্ভব। ভাষার মুখে সুশীলতার বেড়ি পড়ানোটা অবশ্যই ন্যাক্কারজনক। কিন্তু বিশেষ-ধরনের প্রকাশভঙ্গির বিভিন্ন মেয়াদী পরিণামগুলো যদি আমাদের জানা থাকে, তাহলে একজন লেখক নিজে "স্বাধীনভাবেই" বিচার করে নিতে পারবেন। প্রয়োজনে - নিজের কাছে অনাকাংক্ষিত - এমন কোনো পরিণাম এড়াতে সেটার সূচনা করতে পারে এমন প্রকাশভঙ্গিকে স্বেচ্ছায় সংবরণ করবেন। এটাই আকাঙ্ক্ষিত। কেউ নিজে উপলব্ধি না করে কেবল রাজন্যের হুকুমে ভাষা সংবরণ করলে তখন সেটা অধিকার হস্তক্ষেপ বলেই অনুভূত হয়। আপনার লেখায় প্রতিবার এই বক্তব্য স্পষ্টই।
আপনি সচলভাষা ২ লেখার প্রয়োজন অনুভব করলেন। সেটা হয়তো কিছু ছোটখাটো মনোমালিন্যের সাথে আরো একটু আলোচনার সুযোগ দেবে। এইসব আলোচনা থেকে সবাই তাদের নিজস্ব পাঠ নিজ ইচ্ছায় গ্রহণ করে নেবেন, বা নেবেন না।
আমার পাঠ: প্রকাশভঙ্গি সাবজেক্টিভ। ফলে এই ব্যাপারটাকে আমি কিভাবে দেখি, সেটা আরেকজনের কাছে বড়জোর চিত্তাকর্ষক বা বিরক্তির কারণ হতে পারে, কিন্তু ভুল ঠিকের মাপকাঠি হতে পারে না। তাই ব্যাপারটা আমি কিভাবে দেখি, গালাগাল না করে আমি মহৎ বোধ করি নাকি কপট বোধ করি, সেটা দিয়ে অন্যের প্রকাশভঙ্গি বিচার করা যায় না। আমার বোধ, অভিরুচি, আরেকজনের কাছে অন্যেরটাই মতই মূল্যহীন। তবে যে জ্ঞানটি একাধিক মানুষের কাছে মূল্যবান হতে পারে, তা হলো - ক্রিয়ার পরিণাম সম্পর্কে পূর্বানুমান। জানা থাকা, কোন ক্রিয়ার বিভিন্ন মেয়াদী প্রতিক্রিয়া কী। যেমন - 'চ' করলে আমার তৃপ্তি হয়। কিন্তু 'চ' করলে সচলায়তনের 'ফ' হয়। সচলায়তনের 'ফ' হওয়া আমার কাছে অনাকাংক্ষিত। এগুলো মূল্যবান জ্ঞান। এগুলো জানা থাকলে নিজের কর্ম আরো বলিষ্ঠ হয়। কারণ মানুষকে তার অভিরুচির জন্য জবাব দিতে না হলেও, নিজের কর্মের পরিণামগুলোর জন্য অন্তত সময়ের কাছে জবাব দিতেই হয়।
আপনাকে সাধুবাদ জানাই যথাসম্ভব ব্যক্তিকে আঘাত পেতে না দিয়ে এই আলোচনাটাকে সামনে আনার জন্য। আর সচলভাষা ১ এ করা হিমু ভাইয়ের মন্তব্যটার জন্য ওনার অসংখ্য ধন্যবাদ প্রাপ্য। অন্যের চশমা, জুতো কে পড়তে চায়? পৌনঃপুনিক চাপ ও অভিযোগের মুখে থেকেও বিবেচনায় বরং মূল্যবান জ্ঞানটিকে অর্থাৎ ক্রিয়ার সুদূরপ্রসারী পরিণামকে যেভাবে প্রাধান্য দিলেন, তাতে ওনার দায়িত্ববোধ আর দূরদর্শিতা প্রকাশ পায়।
এ কয়টি ঘটনা এই পরিবার নিয়ে আমাকে উচ্চাশী করে রাখার জন্য যথেষ্ট।
সবকিছু শেষেও লেখক কী লিখবেন, কীভাবে তার ভেতরের কথা বাহিরে প্রকাশ করবেন, তা আমি লেখকের বিবেচনার ওপরই ছেড়ে দিতে চাই।
এই পোস্টের একটি কমেন্টে সচলভাষা ৩ ভূমিষ্ঠ হবার ইঙ্গিত নিহিত রয়েছে।
আমার লেখা "পাকিস্তানী খানকির পোলাদের মায়রে চুদি"র পাশে এই পঙক্তিসম্ভার যথেষ্ঠ শালীন এবং সভ্যচক্রে উপস্থাপনীয় বলে মনে হতে পারে, কিন্তু আমি এই ধরনের প্রকাশকে আরো কুরুচিকর বলে মনে করি। সচলে আমি পাকিস্তানীদের সঙ্গত কারণে প্রচুর গালি অতীতে দিয়েছি, বর্তমানে দিচ্ছি, ভবিষ্যতেও দেবো। কিন্তু সহসচলদের [এখানে অতিথি সচলদের কথা বলছি না] কখনো তাদের দ্বিমত পোষণের কারণে চ-বর্গে যাওয়া তো দূরের কথা, "অন্ধ", "অক্ষম", "অপারগ" ডাকা, বা বিপক্ষের তার্কিকদের বক্তব্যকে গণহারে "অন্ধলোকের কড়ানাড়া" বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছি, এমন উদাহরণ কেউ দিতে পারবেন না।
মিষ্টি শব্দের আড়ালে বিষদাঁতের ব্যবহার অন্যান্যদের মতো আমিও ভালোই জানি। কিন্তু সেটি কি সচলায়তনে কাম্য? চ-বর্গীয় শব্দাবলির পরিবর্তে ওপরের উদাহরণে যে অ-বর্গীয় প্রচ্ছন্ন কিন্তু অপরিচ্ছন্ন ব্যক্তি আক্রমণ, সেগুলো কি সচলায়তনে চলতে পারে? মন্তব্যের প্রত্যুত্তরে নয়, আমি মূলত পাঠকের কাছ থেকে "সচলভাষা ৩" শিরোনামে একটি পৃথক পোস্টে এ ব্যাপারে মনোজ্ঞ আলোচনার জন্যে সাগ্রহে অপেক্ষা করছি। ব্যস্ততা যে তাতে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না, সে ব্যাপারে সচলভাষা ২ আমাদের আশ্বাস যোগায়। মূলোদাকে অগ্রিম ধন্যবাদ।
এই লাইনটা আমাকে কষ্ট দিলো...
হু হু করে কান্দেন
এটাকেই ক্ষমতার দম্ভ বলে! ভালো লিখতে পারার ক্ষমতার।
সচলায়তনে অতীতে একটা পোস্ট বা কমেন্টও যে করে নাই, আচমকা ঝামেলার গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে এসে আহ্লাদি আবেগ কপচাচ্ছে, তাকে দুঃখ দিতে পেরে রীতিমতো পুলকিত বোধ করছি। এরকম বড়সড় আরেকটা ঝামেলা আরেকটা না লাগলে আপনাকে আবার দেখা যাবে, সে আশাও খুব একটা করি না। কাঁচা বাংলায় এই ধরনের চরিত্রকে বলে গুয়ের মাছি, জানেন তো?
এটা ঠিক যে আমি আগে মন্তব্য খুবই কম করেছি। তবে একদমই করিনি তা ঠিক নয়।
http://www.sachalayatan.com/riton/30608।
ওই পোস্ট-এর ৯৩তম মন্তব্যটা আমার করা।
আরো দুএকটা পোস্টে মন্তব্য করেছি।
মডারেটরদের এখনো অনুরোধ করব এই পোস্টে করা আমার মন্তব্যগুলি মুছে দিতে।
মন্তব্যগুলো থাকুক। ক্ষমতার দম্ভ নিয়ে এর রেফারেন্স দিয়ে পরবর্তী হট্টগোলে ভনভন করতে পারবেন।
মডারেটরদের অনুরোধ করব আমার কমেন্টস গুলি মুছে দিতে (২য়টা এখনো প্রকাশিত হয়নি)। আমার দুর্বল লেখনি নিয়ে শক্তিমান একজন লেখক এর সাথে মন্তব্য চালাচালি অন্যদের শুধুই বিরক্ত করা ছাড়া আর কোনো কাজে আসবে না।
সচলভাষা ৩ আসবে না এমন কথা বলার জন্য এই মন্তব্য নয়। কিন্তু আরেকটি উত্তপ্ত আলোচনা এবং ফলাফল হিসেবে আরো কিছু মনোমালিন্য যাতে না ঘটে যায় তার আগে, সেই চাওয়া থেকেই এইখানে অনুরোধ করছি সবাইকে, আলোচনার মূল উদ্দেশ্য যে সচলায়তনের ভাষা কী হবে সে বিষয়ে আলাপ, সেইটা না ভুলতে। কেউ হয়তো একে সুশীলতার দাবী মনে করবেন, তাতে সমস্যা নেই, তবে আলোচনা প্রাসঙ্গিক ও নৈর্ব্যক্তিক রাখার চেষ্টা করাটা নিন্দনীয় নয় সে কথাটা বোধ হয় মেনে নিতে তাঁদেরও অসুবিধা হবে না।
এখানে মনে পড়লো হিমুর পোস্টটার কথাই, যেখানে মূল প্রসঙ্গ আর বিষয় বাদ দিয়ে শেষ বাক্যটা নিয়েই সবাই ব্যস্ত হয়ে গেছিলো।
আর আমি মনে করি সচল ভাষা নিয়ে আলোচনা করতে হলে এটা নিয়েও করতে হবে। আগেই বলেছি, শব্দর কাধেঁ শ্লীল অশ্লীলতা চাপতে পারে না। দেখুন অনিকেতদার বাক্যটা। আপনি যেসব শব্দকে আপত্তিকর বলছেন, তার একটাও সেখানে নাই, কিন্তু আমার কাছে এটা যে কোনো অশ্লীল গালির চেয়ে বেশিই লেগেছে।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
অ মা! এইটা আবার আলোচনার সিরিজ নাকি! আপনি বলে না দিলে বুঝতাম না। আমি ভাবতেছিলাম এইটা ধন্যবাদ, একমত আর সহমতের পোস্ট। আলোচনা যা হওয়ার আগেই হয়ে গেছে।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
ধন্যবাদ একমত সহমত শুধু দেখলেন? একটা গোটা অভিধান লেখার পরিকল্পনা হয়ে গেলো সেটা নজর এড়িয়ে গেলো! সেটার প্রাসঙ্গিকতার কথা না হয় না-ই বললাম।
আসুক আরো সচল ভাষা সিরিজ, ক্ষতি নেই ! একে বলে কোয়ালিটি কন্ট্রোল, এভাবেই শোধন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা বেছে নিয়েছি পুর্বেও, ভবিষ্যতেও ব্যতিক্রম হবে না।
ব্যক্তিগত ভাবে আমার মনে হচ্ছে এই গালিগালাজ পাকিদের দুয়ারে না পৌছে আমাদের ই বিভ্রান্ত করছে ।
পাঠক এর সাথে একমত।
আমি অনেকভাবেই প্রাচীনপন্থী মানুষ। আমার কেমন মনে হয় লেখার ভাষা বিষয়বস্তু আর বক্তব্যই নির্ধারণ করে দেয়। সেক্ষেত্রে সচলভাষা ১ আর ২ এর মন্তব্যগুচ্ছের অনেকটাই ভাট বকে টাইম্পাস।
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
আপনার দৃষ্টিভঙ্গী, এবং তার চেয়ে বেশি, দৃষ্টিভঙ্গীর ব্যাখ্যা, এবং তার চেয়ে বেশি, এসব প্রকাশের ভাষা আমার খুব মজাদার লেগেছে। মুগ্ধ হয়ে লেখাটা পড়েছি। আগেরটাও, তবে এটা আরো বেশি মজা লাগলো কেন যেন। 'চালান' বলতে পারছি না, কিন্তু ভাল লাগলো রচনাশৈলি।
মূলোদা, দুই পর্ব একসাথে পড়ে ফেললাম অফিসে কাজ ফেলে। কিছু বলতে চাই, আশা করি বন্ধুত্বপূর্ণভাবে নেবেন।
আপনার মূল বক্তব্যটা বা আলটিমেট ভিসনটা আসলে কী? আপনি কি চাচ্ছেন সচলে একটা প্রি-ডিফাইন্ড ফরমেট থাকুক যেখানে কিছু বাক্যবন্ধ ও শব্দসম্ভার অটোফিল্টার হয়ে যাবে এবং সবাই সেই ফরমেট মেনে লেখার চেষ্টা করবে? তাহলে আমাদের আজেবাজে গালি দেখতে হয়না, বা রূচিশীলতার মাত্রাছাড়ানো কমেন্ট না আসে, তাই তো?
যত নগন্যই হই না কেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই না কোন অটোফিল্টার। লেখার ফিল্টার হবে পাঠক। পাঠক গ্রহনযোগ্যতার সীমারেখা কেউ ঠিক করে দিতে পারে না। অধিকাংশ পাঠক যদি মনে করে লেখা অশ্লীল, তাহলে তারা সেই অনুযায়ী মতামত বা ফিডব্যাক লেখককে দেবে এবং লেখক ভবিষ্যতে নিজের প্রয়োজনেই নিজের লেখার পরিশুদ্ধি ঘটাবে। কারণ, ব্লগ জগত আউল-ফাউল কিছু লিখে পার পাওয়া মুশকিল। এই মর্ফোলজির মধ্য দিয়েই সচলায়তনের ভবিষ্যৎ ডিফাইনড হবে। কোন ধরণের ফরমেটের প্রয়োজন দেখছি না।
=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;
=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;
@ফাহিম, বন্ধুত্বপূর্ণ ভাবেই নিচ্ছি। তবে বিশদে এক্ষুণি উত্তর দিতে পারছি না। মন্তব্য করলাম আপনি মূল বক্তব্যটা খোলাখুলি জানতে চেয়েছেন এই দৃষ্টিভঙ্গীর প্রশংসা করে। আগামী ভাগ (সেটা যবেই আসুক) এই পথেই লেখার ইচ্ছে, যদিও এ সপ্তাহে সে হবার নয়।
বেশ ইন্টারেস্টিং একটা পরিস্থিতি!
বলাই আমার মন্তব্য কে বলেছেন
হিমু বলেছেন এটা 'কুরুচিকর' ইত্যাদি ইত্যাদি।
সচলায়তনে ভাষা ব্যবহার নিয়ে এই যে ক'দিন ধরে তর্ক-বিতর্ক চলেছে, সেটার মূল প্রতিপাদ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে এইঃ
১।লেখককে তার মত প্রকাশ করতে দেয়ার সময় বিধি-নিষেধ আরোপ করা উচিত? নাকি অনুচিত?
২। প্রকাশভঙ্গীতে শালীনতা-অশালীনতা নির্ণীত হবে কিভাবে?
আমি আমার অবস্থানটা এখানে অল্প কথায় তুলে ধরছি।
১ নং এর ক্ষেত্রে আমি দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলতে চাই---একজন লেখক তার মত বিনা বাঁধায় প্রকাশ করতে পারার অধিকার সংরক্ষন করেন।কিন্তু স্থান-কালের গন্ডি অনেক সময়েই সে অধিকারকে সীমিত এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে সম্পূর্ণ রহিত করেছে। এইটা ইতিহাসের একটা দুঃখজনক কিন্তু বাস্তব পাঠ।
২ নং এর ক্ষেত্রে এসে ব্যাপারটা আসল জটিলতায় প্রবেশ করে। কারণ শালীন-অশালীন অনেক সময়েই ব্যক্তি নির্ভর প্রপঞ্চ। একেকজন একেক ভাবে জিনিসটা দেখেন।
আমি নিজে জিনিসটা যেভাবে দেখি সেটা হল আমার রাগ-ক্ষোভ-ঘৃণার প্রকাশ ক্ষেত্র বিশেষে ভিন্ন হবে। এবং হ্যাঁ এই জিনিসটা পাকিদের নিয়ে হলেও সত্যি। আমি আমার বন্ধু সকাশে যে ভাষায় পাকিদের নিয়ে কথা বলি, সেটা আমার বন্ধুরা ভালই অবগত আছেন। কিন্তু সেই আমিই কিন্তু এখানে লিখতে গেলে আমার অভিব্যক্তির রাশ টেনে ধরি।
কেন?
কারণ আমি মনে করি, মুখ খারাপ না করেও আমি আমার ঘৃণা প্রকাশ করতে পারি। মুখ খারাপ না করেও শুধুমাত্র প্রকাশভঙ্গী দিয়ে বক্তব্য যথাস্থানে পৌছানো যে সম্ভব---আমার উপরে করা মন্তব্য খুব সম্ভবত সেইটার একটা (দুর্বল হলেও) উদাহরণ। শুধুমাত্র 'অন্ধলোক' এবং আরো কিছু নিরীহ শব্দ নিচয় বলাইসহ আরো অনেকের কাছে যথেষ্ট আপত্তিকর ঠেকেছে।
আমার মনে হয়েছে পাঠক'দা এই ব্যাপারটাই বলতে চেয়েছেন তার লেখাতে।আমরা আমাদের মনের কথা অবশ্যই প্রকাশ করব। কিন্তু স্থান-কাল-পাত্র ভেদে তার প্রকাশ ভঙ্গী নির্দিষ্ট হওয়া উচিত।
আমি নিশ্চিত এই সহজ জিনিসটা বোঝার মত ক্ষমতা এইখানে সবারই আছে। তবুও অনেকেই নারাজ। অনেকেই তর্ক করে চলেছেন।
কেন?
আমার মনে হয়---তার পেছনে এই ভাষা প্রয়োগনীতির আলোচনাটা মুখ্য নয়। এইখানে মুখ্য হল--পাকিদের প্রতি আমাদের অন্তর্গত ঘৃণা। আমি প্রায় নিশ্চিত, হিমু'র ঐ লেখাটা পাকি নিয়ে না হয়ে যদি অন্যকিছু নিয়ে হতো, এবং সেইখানে সে যদি ঐরকম শব্দবন্ধ ব্যবহার করত---সকলে না হোক, অনেকেই হাঁ হাঁ করে তেড়ে আসতেন। কিন্তু লেখাটা যেহেতু পাকি নিয়ে, এইখানে আমাদের অনুভূতি ভিন্ন খাতে বয়।
পাকি নিয়ে আমাদের ঘৃণার প্রকাশ খাপখোলা হবে--সেইটাই স্বাভাবিক। আমার মনে আছে, জীবনে প্রথমবারের মত এক পাকির সাথে সাক্ষাতের ঘটনা। তার পরিচয় না জেনে তার সাথে হাত মিলিয়েছিলাম আমি। কিন্তু পর মুহূর্তে যখনি জেনেছি যে সে পাকি, আমি তার সামনেই ছুটে গেছি বাথরুমে---হাত ধুতে। হ্যাঁ, এই ছিল আমার প্রথম অভিব্যক্তি এক পাকি সম্পর্কে। ওইখানে আরো কিছু ভিনদেশীয় লোক উপস্থিত ছিলেন। তারা রীতিমত আমার ব্যবহারে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু আমি সেটার তোয়াক্কা করিনি।
সেই আমি এখন হয়ত অতটা তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাই না।
কেন?
আমি কি পাকমনপেয়ারু হয়ে যাচ্ছি? না। এই জীবনে বা তারপরবর্ত্তী কোন জীবনেও (যদি থেকে থাকে) সেইটা সম্ভব নয় আমার পক্ষে।
তাহলে?
সময়ের সাথে সাথে আমি আমার আবেগের প্রকাশ নিয়ন্ত্রণ করতে শিখেছি কিছুটা। সাথে সাথে এইটাও জেনেছি, পৃথিবী জুড়ে 'সাধারণ' মানুষ কম বেশি প্রায় এক রকমই। হ্যাঁ, সব কিছুর পরও একটা জাতিগত বৈশিষ্ট্য আমরা ধারণ করি বটে। কিন্তু মোটের ওপর সাধারন বৈশিষ্ট্যগুলো সব খানেই 'সাধারণ'।
আমাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় আমার দেশের আর পাকিদের 'সাধারন' মানুষদের মাঝে কি তফাত নেই? আমি বলব আছে। এইখানে হয়ত আমার স্বাজাত্যভিমান কিছুটা চলে আসছে বলে অনেকে ভাবতে পারেন। কিন্তু আমার নিজের পক্ষে যতটা নির্মোহ হওয়া সম্ভব, ততটা হয়ে আমি ভেবে দেখেছি---আমরা আসলেই ওদের চেয়ে ভিন্ন এবং বলতে দ্বিধা নেই---আমরা আসলেই ওদের চেয়ে বেশ খানিকটা ভাল। কেন এবং কোন কোন দিক থেকে ভাল তার লিস্টিতে না গিয়ে শুধু একটা কারণই উল্লেখ করা যায়---আমরা যা পেরেছি তারা সেটা গত ৩৯ বছরেও পারে নি। সামনে পারবে বলেও মনে হয় না।
আর সেটা কী জিনিস?
আমরা দেখাতে পেরেছি--ধর্মের চেয়েও গভীরতর কিছু বন্ধন আছে এই পৃথিবীতে। সেটা হল আমাদের কৃষ্টি, আমাদের সংস্কৃতির বন্ধন।এইটা সত্যি
যে আমরা বার বার বিপাকে পড়েছি। কিন্তু আমরা ঠিকই কিন্তু বেরিয়ে এসেছি। ধর্মান্ধতা পাকিদের পেয়ে বসেছে। আমাদের নয়।
আমি মনে করি সুস্থ মস্তিষ্কের যে কোন বাংলাদেশিই পাকিদের ব্যাপারে ঘৃণা পোষনে দ্বিতীয়বার চিন্তা করবেন না। কিন্তু যা আমাদের মাথায় রাখতে হবে সেটা হল, আমরা ঘৃণার প্রকাশটা যেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারি কিছুটা। আমাদের ঘৃণার শক্তি নিজেদের মাঝে তর্ক-বিতর্কে ক্ষয় না করে সেইটা সন্নিবিষ্ট করা যেতে পারে যুদ্ধপরাধিদের বিচার কার্য ত্বরান্নিত করার কাজে,আন্তর্জাতিক মহলে পাকিদের কুকীর্ত্তিগুলো তুলে ধরে তাদের উপর ক্ষমা প্রার্থনার চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে, সরকারী পর্যায়ে অভিঘাত সৃষ্টি করে সরকারকে এইটে আত্মস্থ করার মাধ্যমে যে পাকিদের সাথে কোনরকম কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষা করার প্রয়োজন নেই। আমরা ইজরায়েলের সাথে কূতনৈতিক সম্পর্ক রাখি না।সেই জায়গায় পাকিদের সাথে সম্পর্ক রাখছি---এইটা হাস্যকর নয়, অবমাননাকর।
আমার কাছে মনে হয়েছে, এই জিনিসগুলো এমন কোন জটিল কিছু নয় যা আমরা বুঝতে পারব না। সেটা না করে নিজেদের মাঝে যদি আমরা এইসব আপাত নিষ্ফলা তর্কে সময় কাটাই সেইটা একটা অপচয়। একটা গালি দিয়ে বীরত্ব জাহির করা যায় না। সেইটা দুর্বলতা অশক্ততার পরিচায়ক।
এই ব্যাপারটা না বুঝতে পারার কোন কারণ নেই।
যারা বুঝতে পারছেন না অথবা বুঝতে চাইছেন না তারা স্বেচ্ছা অন্ধত্ব বরণ করছেন বলে আমি মনে করি।
এই বিষয়ে আমি আর কোন বক্তব্য দেব না।
যারা আমার মন্তব্যে আহত হয়েছেন, তাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।
যারা এই নিয়ে আরো তর্ক চালাতে চান আমার সাথে, তাদের অনুরোধ করছি, আমার সাথে ব্যক্তিগত ইমেইলে যোগাযোগ করতে।
সবার মঙ্গল হোক।
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
আফছুছ, এই কথাগুলোই আপনার বক্তব্যকে পুরা নাঙ্গা করে ফেললো। একইসাথে মূলোদার দুই সিরিজের লেখা, যাতে আপনি একমত, সহমত জানিয়ে আসছিলেন এবং কেউ ধন্যবাদ দিলে আপনি সেই ধন্যবাদের সাথেও ভীষণ আকুতি নিয়ে একমত হচ্ছিলেন, সেই লেখাকে ভাঁগাড়ে ঠেলে দিলো।
এখান থেকেই বুঝা যায়, শালীনতার সাথে শব্দের কোনো সম্পর্ক স্ট্যাটিক নয়, শালীন অশালীন, গালি-অগালি নির্ধারিত হয় শব্দের ব্যবহারে!
এখন শব্দমাত্রই অশলীল না হলে দেখি হিমুর পোস্টে ওই শব্দগুলোর ব্যবহার। সেখানে পাকিদের প্রতি তীব্র ঘৃণা প্রকাশ দরকার ছিলো?
১) যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে whatever শব্দই ব্যবহৃত হোক, সেই ঘৃণা প্রকাশিত হয়েছে। ব্যস, খেল খতম।
২) আর যদি ঘৃণা প্রকাশটা দরকার না থেকে থাকে, তখন অন্য পথে আলোচনা যায়।
এখন আপনি যদি আপনার মনের ভেতরের নোংরামি সুগার কোট দিয়ে আপনার ভাষায় শালীন শব্দমালার মাধ্যমে প্রকাশে দক্ষতা অর্জন করে থাকেন, সো বি ইট। কিন্তু আরেকজন সেই কাজে দক্ষ না হলে বা সেটা করতে ইচ্ছা না করলে তাতে আপনার সমস্যাটা কোথায়? এখানে তো পাকিদের মায়েদেরকে বলাৎকারের কথা হচ্ছে, আপনার আমার মায়ের কথা হচ্ছে না। কেউ বলাৎকারটাকে সুগার কোটিং দিয়ে লাভমেকিং বলুক, কেউ চ-বর্গে প্রকাশ করুক, সেটায় আপনার সমস্যাটা কোথায়?
এই 'নিজেদের' মাঝে তর্ক-বিতর্কের সূত্রপাতটা কারা করে? পাকিদের ঘৃণা করে একজন একটা 'গালি' দিলে সেই গালিটার প্রতিবাদ করে খাপখোলা তরবারি হয়ে কে এগিয়ে যায়? নিজের দিকে তাকান, নিজের কাজকে বিশ্লেষণ করুন। আমি পাকিদের গালি দিলে আপনিও যদি তাদের ঘৃণা করেন, তাইলে আমার ওপর আপনার চড়াও হওয়ার কারণ কি? আপনি মোলায়েম ভাষায় 'পাকিরা দুষ্টু' বললে আমি তো আপনাকে অ্যাটাক করতে যাই না; কিন্তু আমি পাকিদের মায়েকে বলাৎকার করতে চাইলে আপনি সেটা নিয়ে আমার সাথে ক্যাচাল করবেন আবার এটাকে 'নিজেদের' মধ্যে তর্ক-বিতর্ক ট্যাগিং করবেন, এটা কি ঠিক?
চোখ খুলে তাকান, তাইলে দেখবেন, ছানিটা আসলে কোথায় পড়েছে।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
একটা ভালো কায়দা শিখলাম। প্রকাশ্য সচলায়তনে কয়েক হাজার পাঠকের সামনে কাউকে গালি দিয়ে নিভৃত সঙ্গোপনে মেইলে আর ফেসবুকে এ নিয়ে বাকি আলাপ চালানো। এটা যে বীরত্বের লক্ষণ, তাতে কোনো সন্দেহ নাই আমার। আমি ভোদাই দেখে কাউকে গিয়ে বলতে পারলাম না, আসেন আমরা সচলে কোনো কিছু নিয়েই কথা না বলে মেইলে বলি। ধিক এ ভুদাই জনম।
একটা কার্টুন আছে এ প্রসঙ্গে। পোস্ট করলাম। মূলোদা আপত্তি জানালে আমি সরিয়ে দেবো।
এই মন্তব্যে ব-বর্গীয় অশালীন শব্দ আছে, মডুরা কই?
তাছাড়া রসুনের কার্টুনে একটা বেসিক ভুলও আছে। এখানে রসুন একটাই থাকবে, প্রত্যেকটা কোয়ার জন্য আলাদা কী-বোর্ড লাগবে। একটা পুরো রসুনকে একটামাত্র কী-বোর্ড দেয়ায় মানবতা লঙ্ঘিত হয়েছে।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
"ভীষণভাবে সহমত" কি এখানে বলবো, না ইমেইল করে জানাবো?
ও আচ্ছা, এইখানে কার্টুনটা দেখে মানে বুঝলাম৷
খোলাপাতার জিনিস নিয়ে ই-মেইল চালাচালি করাটা বেসিক্যালি পাতি চুকলি কাটা৷এরকম লোকজনের সাথে আমার ব্যক্তিগতভাবে ঠিক পোষায় না৷
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
"সচলভাষা" শব্দটি অস্বস্তি দিচ্ছে। এখানে যারা লিখবেন, আমি চাই তারা লিখবেন "নিজের ভাষায়", কোনও "সচলভাষায়" নয়। লেখক কোন শব্দ ব্যবহার করবেন, সেটা সম্পূর্ণ তার নিজের বিবেচনাবোধ। পাঠক তার কী "অর্থ" করবেন, সেটা পাঠকের নিজের বিবেচনাবোধ। এই সম্পূর্ণ মোকাবিলাটুকু শুধু লেখক আর পাঠকের, আর সময়ের।
সচলায়তনের কাছে আশা থাকবে, লেখার "মান" নিয়ন্ত্রণের, "ভাষা" নিয়ন্ত্রণের নয়।
গত রাতে এই পোস্ট দেখেই আমার অপ্রয়োজনীয় মনে হয়েছিল। মন্তব্য করতে চাইনি স্নোবল এফেক্ট এড়াতে। কিন্তু স্পষ্টতঃ সেটা আর এড়ানো গেলোনা।
আমার যদি ঠিক মত বুঝতে পারি তাহলে আপনার মতামতের একটা হচ্ছে কখন থামতে হবে সেটা বোঝা। আয়রনি হচ্ছে, কোথায় থামতে হবে এই ব্যাপারটা সেটা নির্ধারন করা বোধকরি আপনার জন্যও কঠিন ছিল। সুতরাং বুঝতেই পারছেন বিষয়টা সহজ নয়।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
শ্লীল ভাষায় কেমনে চোদা যায় অনিকেত'দা দেখিয়ে দিলেন। তাইলে লাভ কী এইসব পোস্টের?
-----------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
এই কাজটা তুমিও করে দেখিয়েছ...এই পোস্টের ৬৮ নম্বর মন্তব্যে...
এই সহজ কথা আমাগো ভদ্দরলুকদের বোঝাবেন ক্যামতে?
মৃদুভাষীদেরকে সুশীল/ভদ্রলোক বলে ব্যঙ্গ করা নতুন নয়। কিন্তু এটা অন্ধলোকের কড়া নাড়ার মতই আপত্তিকর।
ব্লগের ভাষা বর্তমান প্রচলিত প্রিন্টেড মিডিয়ার ভাষা থেকে ভিন্ন এবং এটা একটা নিজস্বতা নিচ্ছে ধীরে ধীরে। মোটামুটি আমরা ঠিক যেভাবে কথা বলি সেটাই আসছে উঠে। কোন কোন সময় এই জিনিসটাতে অভ্যস্ত হতে আমার নিজের অসুবিধা হয়, কিন্তু সীমাবদ্ধতাটা আমার। এর ভেতরেও স্থান কাল ও পাত্র মনে রাখা দরকার, সেইটা মূলত পাঠক বলতে চেয়েছেন।
তবে ভাষাও একটা সচল জিনিস, এটাও পালটে যায় নিয়ত...আমাদের চোখ কপালে উঠে গেলেও। ভাষাটা জোর করে চাপানো যায় না...সেটা যেই ভাষাই হোক।
++++++++++++++
ভাষা হোক উন্মুক্ত
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
বাহ্
----------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
বাহবা প্রকাশ্যে দিলাম। ইদানীং মন্তব্যের দাঁতালো উত্তর দিলে ফেসবুক বা ই-মেইলে বাহবা পাওয়ার ঘটনা খেয়াল করলাম। স্পর্শ জানে।
----
পুরা অনুষঙ্গ উল্লেখ করে জিনিসটা লিখলে ভালো করতেন। খুবলাইয়া একটা লাইন তুলে আনলেন।
৪৪ | হাসিব | শনি, ২০১০-০৫-১৫ ০৯:৫০
পোস্ট এবং পোস্টের কন্টেন্ট ঠিকাছে । গালি একটা এক্সপ্রেশন এবং এইটার আক্ষরিক অর্থ করা অযৌক্তিক ।
৪৪.১ | শুভাশীষ দাশ | শনি, ২০১০-০৫-১৫ ০৯:৫৮
উদ্ধৃতি
গালি একটা এক্সপ্রেশন এবং এইটার আক্ষরিক অর্থ করা অযৌক্তিক ।
এই সহজ কথা আমাগো ভদ্দরলুকদের বোঝাবেন ক্যামতে?
৪৪.১.১ | স্বাধীন | শনি, ২০১০-০৫-১৫ ১০:২১
দুঃখ পাইলাম তোমার মন্তব্যে। ভদ্দরলুকদের মাঝে আমিও আছি কিনা তাই!
হিমুর পোস্টের গালিটা আমি একটা এক্সপ্রেশন ভেবেছি।
আমার ভদ্দরলুক গালিতে খারাপ লাগলে সেই পোস্টে জানাতেন। অন্ধলোকের কড়ানাড়ার জাস্টিফাইয়ের দরকার ছিল না।
------------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
অন্ধলোকের কড়ানাড়া আমার কাছেও আপত্তিকর মনে হয়েছে। মন্তব্যে সেটা বলেছি। ওটাকে জাস্টিফাই করিনি।
অনিকেতের বক্তব্যে যেমন আহত হওয়ার উপকরণ আছে, তেমনি উদাহরণ দিয়েছি যে তোমার মন্তব্যেও আহত হয়েছে মানুষ।
কিন্তু তোমার ভাষায় অনিকেত যদি সুশীল "XX" দেয়, তবে এই সুশীল রমণকর্মের কিছুটা তুমিও করেছ সেটা একটু মনে করিয়ে দিলাম। তোমার মন্তব্যের একটা লাইন তুলেছি ঠিকই কিন্তু লিংক আর মন্তব্যের নম্বর দিয়ে দিয়েছি।
হিমুর পোস্টে আমিও এক্সপ্রেশন হিসাবে নিয়েছি গালি, আমার মন্তব্যে দেখবে ওই পোস্টে, গালিটা নিয়ে কিছু বলিনি পোস্টের বক্তব্য নিয়ে বলেছি। আমি এই ব্যাপারে ক্রোধ ও আবেগটা বুঝি।
কিন্তু স্থান কাল ও পাত্রভেদে শব্দ চয়ন যে খুবই দরকার, তোমার উপরের মন্তব্যেটাই তার প্রমান।
++++++++++++++
ভাষা হোক উন্মুক্ত
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
তাইলে। ক্যামনে কী?
ভদ্রলোক সুশীল শব্দ। ভদ্দরলুক সুশীল নয়।
রমণকর্ম সুশীল শব্দ। চোদা সুশীল নয়।
সুশীল রমণকর্ম করার এত্তো বলো অপুবাদ দিয়েন না, বড় ভাই।
-----------------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
অপবাদ দিচ্ছি না রে ছোটভাই বোঝাতে চাইছি। আমি গালিকে এক্সপ্রেশন হিসাবে নিলেও অনেকে নেন নি। উনাদের মতামতকে সুশীল বা দুঃশীল কোন ভাষাতেই আঘাত করা উচিত নয়। নিজের স্ট্যান্ড পয়েন্টটা মনে হয় আহত না করেও প্রকাশ করা যায়।
++++++++++++++
ভাষা হোক উন্মুক্ত
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
শুভাশীষ দাশ,
ভবিষ্যতে সচলায়তনে কোনো অসহিষ্ণু পরিবেশের সৃষ্টি হলে যদি তাতে এ ধরনের উস্কানিমূলক মন্তব্য বা পোস্ট দিয়ে ইন্ধন যোগান, আপনার অ্যাকাউন্টটি ৭ দিনের জন্য মডারেশনের আওতায় আনা হবে। এ ধরনের আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়। বিস্তারিত জানতে হলে এখানে দেখুন।
মুলো'দা
আমার মনে হয় এই লেখাটির প্রয়োজন ছিল না। আগের লেখা এবং মন্তব্যেই মূল আলোচনা উঠে এসেছিল। আপনার নিজের কথাতেই বলি সচলভাষা একেই থামা উচিত ছিল। সেটা যেহেতু হয়নি, তাই দুইয়েই থামুন (ব্যক্তিগত অনুরোধ, আমি কোন মডু নই কিন্তু)। তা না হলে অন্ধলোকের কড়া নাড়া এর মত লেখা আসবে, তারপর সেই লেখাকে বিশ্লেষণ করে পক্ষে/বিপক্ষে লেখা আসবে।
অনিকেত'দা
ভিন্নমত মানেই শত্রুতা নয় এটা আমার আগের মন্তব্যেই লিখেছিলাম। দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে আপনি যেভাবে ভিন্ন প্রকাশভঙ্গিকে অন্ধতা হিসেবে ট্যাগিং করেছেন তার সাথে কোনভাবেই একমত হতে পারছি না। হিমু বা যারা হিমুর সেই ভাষার ব্যবহারকে সমর্থন করেছে তাঁদের সেই প্রকাশভঙ্গির সাথে একমত নই, কিন্তু তাই বলে তাঁদেরকে কোনভাবেই অন্ধলোকের বাসিন্দা হিসেবেও দেখি না। তাঁদের সাথে এই এক ব্যাপারে দ্বিমত আছে কিন্তু বাকি ৯৯ ভাগেই একমত হতে পারি , এক সাথে কাজ করতে পারি।
সেই সাথে একমত নই ব্যক্তিগত ইমেইল চালাচালির ব্যাপারটিও। সচলের যা কিছু তা সচলেই সমাধান করা উচিত বলে মনে করি। আশা করি মন্তব্যে ভুল বুঝবেন না।
মন্তব্য করতে চাইছিলাম। করলাম না। কেননা, আলোচনা মনে হয় রুক্ষতার দিকে চলে যাচ্ছে।
তার চেয়ে আমাদের সবারই মনে হয় এবার একটা বিষয় খুবই চর্চাযোগ্য হয়ে ওঠা উচিত- কোথায় থামতে হবে তা নির্ধারণ করা।
ব্রেক না থাকার চেয়ে ব্রেক ফেল করাটা মনে হয় মারাত্মক।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
ঠিক তাই!
এই পথেই শেষ পর্বটি লিখবো ভেবেছিলাম, তাতে অনেক আশঙ্কা থাকলেও মূলতঃ যাঁদের মতামতকে আমি বেশি গুরুত্ব দিই তাঁদের স্থৈর্যের উপর আস্থা রেখেই লিখতাম। সমস্যাটা এখনো তাঁদের নিয়ে নয়। যাঁর লেখার প্রসঙ্গে এই আলোচনা শুরু, সেই হিমুও মূল বক্তব্যটা তথা সচলের দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যের জন্য একটা যৎসামান্য প্রচেষ্টা নিয়ে সম্মতি জানিয়েছেন একেবারে শুরুতেই। সবাই মিলে পংক্তিভোজনের আশা করি নি, সেটা যৌক্তিকও হতো না। বরং মূল কথাটুকু বোঝানো গেলেই আমি খুশি থাকতাম, এবং সে বিষয়টি সকলে না হলেও অনেকেই অল্প বা বিস্তর বুঝেছেন। কিন্তু এর মধ্যে সে কথা নানাদিকে ছড়িয়ে গিয়ে নতুন নতুন কলেবরে বটবৃক্ষ হয়ে যে ভাবে ঝুড়ি নামাচ্ছে তাতে সেই আলোচনার জন্য আমরা কতোটা প্রস্তুত সে সন্দেহ হয়। খুব সামান্য কিছু সোজা কথার এতো রকম নিহিতার্থ বেরোনোর পর ঐ তৃতীয় ভাগটির কথা আর ভাবতে চাই না, কারণ সেই ভাগে বক্তব্যটি এতো সামান্য থাকতো না।
সুশীল মানুষ হিসেবে ধন্যবাদ ও সহমত জানাতে আমার অসুবিধা নেই, কাজেই স্বাধীন ও মাহবুব মুর্শেদের বক্তব্যের সাথে সহমত জানিয়ে এই আলোচনায় ক্ষান্ত দিই। গড়গড়িয়ে চলা স্ফীতবপু তুষারগোলকটি এইবার বিশ্রাম পাক।
"অন্ধদের কড়া নাড়া" নিয়ে আপনি সচলভাষা ৩ না লিখলে আমি ব্যক্তিগতভাবে বঞ্চিত বোধ করবো, কারণ এ বিষয়ে আপনি কী বলেন তা সচলে পোস্ট আকারে পড়ার আগ্রহ আমার দ্বিগুণিত হয়েছে। তুষারগোলক আরো কয়েক সেন্টিমিটার চওড়া হলে এমন কোনো ক্ষতিবৃদ্ধি হবে না মনে হয়। আশা করবো আমাকে বঞ্চিত রাখবেন না।
হিমু,
এই বিষয়ে আমি নতুন কোনো বক্তব্য লিখবার পরিকল্পনা করি নি, তৃতীয় ভাগ লিখলে তার বিষয় অন্য হতো। কিন্তু আমার বক্তব্য যদি জানতেই চান তো খুব সংক্ষেপে বলি, তা এ বিষয়ে তাসনীমের বক্তব্যের সাথে মিলবে। আরেকটু বলি, অতি সংক্ষেপেই, যেহেতু আপনার প্রশ্নটা বুঝতে পারছি বলেই মনে হয়। হয়তো এতে অনেকের কথার উত্তরও দেওয়া হয়ে যাবে।
১) আক্রমণ যে কোনো ভাষাতেই আক্রমণ। শব্দ প্রয়োগ করতে জানলে কাঁচা খিস্তি বা পাকা চিমটি দুই-ই দেওয়া যায়, এবং শব্দ ব্যবহার আটকে দিলেই কেউ যে আহত হবে না সে ভরসা দেওয়া যায় না। অন্ধজন নিয়ে যখন অনিকেত নিজেই খুলে বলেছেন, এবং যাঁরা আহত হয়েছেন তাঁদের কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন, তখন এ প্রসঙ্গে আমার আলাদা করে আমার কিছু বলার থাকে না। খিস্তি একেবারে ব্যান হোক এ কথা আমি এমনকি ইঙ্গিতেও বলি নি, এবং ভদ্রভাষায় ভয়ানক কোনো আক্রমণ করার প্রিসিডেন্স যখন আমার নেই, তখন এ বিষয়ে এর চেয়ে বিশদে কিছু বলার প্রয়োজন থাকে না।
২) খিস্তি দিলেই যদি গেল-গেল রব ওঠে সেটাও কাম্য নয়। সে কারণেই ভূততাড়ানি মন্ত্র বাতিল হওয়াকেই আমি সমর্থন করি। তা বলে খিস্তি জিনিসটা এমন তুচ্ছ ফালতু নয় যে তার একটা স্থান কাল পাত্র থাকবে না।
৩) বাস্তব সংলাপ ইত্যাদি কিছু সাহিত্যক্ষেত্র বাদ দিলে সচলায়তনে গালিগালাজ কম হোক এটা যে আমি চাই তার কারণটা পূর্ব অভিজ্ঞতা। অন্যান্য কিছু সাইটে মুখখিস্তি এখন আর তীব্র ঘৃণার চিহ্ন হিসেবে নয়, বাক্যালঙ্কার অব্যয়ে পর্যবসিত হয়েছে, এবং যেহেতু ঐখানে প্রয়োজনটা ইলিয়াসী সাহিত্যসৃষ্টি নয় বরং স্রেফ খেউড় করা, আমি চাই না সেই জিনিসটা এখানে ঘটুক।
আশা করি আপনাকে বঞ্চনা থেকে মুক্তি দিতে পারলাম। এইখানে একটা স্মাইলি দেওয়া গেলে ভালো হতো, কিন্তু এমন ভাবগম্ভীর আলোচনার পর আর সে চেষ্টা করছি না।
ভালো থাকুন।
হতাশ হলাম।
পাকিদের গালি খেতে দেখলে "বিভ্রান্ত" হয় যারা, তাদের জন্য সচলায়তন একটা খুব ভ্রান্তিকর জায়গা।
১.
লেখার মূলবক্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করছি। আংরেজিতে একটা কথা শুনেছি,"Opinions are indeed like assholes, some are just bigger than others." আমার ফুটো বড় হোক ছোট হোক অন্যদের চাইতে আলাদা। এটুকুই শান্তি!
আমার ফুটোর মাপের কথা হচ্ছে, ধর্মগ্রন্থের বিষয়বস্তু যদি পাকিস্তান হয় তাহলে সেটায় গালি থাকাও জায়েজ। রাজনৈতিক নিবন্ধ সেই তুলনায় অনেক ছোট মাপের জিনিস!
হিমু আজ নতুন একটা গল্প লিখেছে। সেই গল্পে "পাকিস্তানি খানকির পোলাদের মায়েরে চুদি" বাক্যটা সুশীলভাবে খাপে খাপে বসে গেছে। এখন নিশ্চয়ই বাক্যটি নিয়ে মূলোদার কোন আপত্তি নেই?
ব্যাপার না। সবাই নিজের মাপের আকাশ দেশে। ফুটোর মতোই আকাশটাও মানুষভেদে বড় ছোট হয়।
২.
মানুষ বড় আজব প্রাণী! রাজনৈতিক নিবন্ধে "পাকিস্তানি খানকির পোলাদের মায়েরে চুদি" পড়ে অনেকের সুশীলবোধ আক্রান্ত হয়। অথচ সমালোচনামূলক পোস্টে অবলীলায় সহব্লগাদের "অন্ধলোক" হিসাবে অভিহিত করায় কোন দোষ নাই।
"অন্ধলোক" ট্যাগটা যখন মেরেই দেয়া হয়েছে তখন আগেভাগেই অন্ধলোকদের লিস্টটা জানতে পারলে ভাল হতো। আমি নিজে কোন দলে পড়ি তা জানা থাকা ভাল।
৩.
ইমেইল চালাচালি জিনিসটা বহুদিন পর ব্লগে আবার শুনলাম। পুরান জামাকাপড়ের ফ্যাশনের মতই পুরান জিনিসগুলো কেবলই ফিরে ফিরে আসে। এইটা ভালো।
আমার আম্মু যদি হিমু ভাইয়ের পোস্টটা খালি দ্যা-খে না-...
আচ্ছা একটা বাক্যে ব্যবহার সহ শব্দ ফিল্টার ডাটাবেইজ করা যাক। জাস্ট ফর ফান।
ুতমারাী > ভুততাড়ানী
"দেখছিস শালার ভুততাড়ানীটার কান্ড?"
ুদি > ঘুঁটি
"ওই বদমাশটাকে পেলে একেবারে ঘুঁটে দেবো!"
ুদাির পোলা > ঘুঁটেকুড়ানীর পোলা
"ঘুঁটেকুড়ানীর পোলা আমারে হাইকোর্ট দেখাস?"
ান ির পোলা > সানকির গলা
"সানকির গলা খালি সামনে আয়"
ায়েে ুি > ভায়েরে ঘুঁটি
"পাকিস্থানের ভায়েরে ঘুঁটি..."
োা মারা > গোঁগাঁ করা
"এইবার সামনে আসলে একেবারে গোঁগাঁ করে ছেড়ে দিবো"
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
ুদি > ঘুঁটি । যদিও একটু নৃশংস হয়ে যায়! তারপর ও বলবো ঠিকাছে
শব্দ ফিল্টারের পাশাপাশি বাক্য ফিল্টারের ব্যবস্থা করতে হবে।
যেমন ধরেন লেখার ট্যাগে "গল্প" উল্লেখ করা থাকলে "পাকিস্তানি খানকির পোলাদের মায়েরে চুদি" বাক্যটা ফিল্টার করার দরকার নাই। কারণ গল্পে প্রাসঙ্গিক ভাবে গালাগালি আসতেই পারে। সেক্ষেত্রে গালাগালি ফিল্টার করা সৃজনশীলতার উপর হস্তক্ষেপ করার মত বিষয়ে গিয়ে দাঁড়াবে।
কিন্তু ক্যাটেগরি হিসাবে যদি রাজনীতি, দেশচিন্তা উল্লেখ করা থাকে তাহলে "পাকিস্তানি খানকির পোলাদের মায়েরে চুদি" বদলে দিয়ে "পাকিস্তানি ভাইয়াদের আম্মিজানদের সালাম দিই" করে দেয়া যেতে পারে।
হে! হে! হে!
মন্দ হয়না
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
জানি জল অলরেডি ভয়ানক ঘোলা হয়ে আছে, নতুন কথা শোনার ধৈর্য বা ইচ্ছে মনে হয় কারুরই আর নেই, তবু ২ পয়সা রেখে যাই সব "পাঠকদের" জন্য। আপনি যদি সত্যিই মনে করেন এটা একটা রাইটার্স কম্যুনিটি, ভাল লেখার ও পড়ার স্পেস এবং আপনি চান যে সচলায়তন তাই থাকুক তবে বাগযুদ্ধ ও ব্যক্তিআক্রমন করার আগে ১ মিনিট ভেবে দেখুন আপনার প্রশ্ন, মন্ত্যব্য ও প্রতিমন্তব্য কি আদৌ pertinent? আমার কলেজের প্রথমকদিন এক অধ্যাপক বলেছিলেন "Whenever you write a paper, despite the very attractive nature of your random fecund thoughts you must compel yourself to ask, is this a literary question?" সেই অনুরোধ রইলো আপনাদের কাছেও সচলপাঠক।
কারো মন্তব্যের বিষয়ে কিছু বলবো না। ব'লে লাভ নেই ব'লে।
আপনাকে অকুণ্ঠ সাধুবাদ, এই লাভ-না-থাকার হতাশায় না ভুগে যথেষ্ট আশাবাদী থেকে এমন সুচিন্তিত সবিস্তার লেখাটি উপস্থাপনের জন্য। ইয়েস, ইট টেকস আ গ্রেট লট।
নিজে আরেক নির্বোধ নির্জ্ঞান হয়েও, আমিও আপনার আকাঙ্ক্ষার সাথে শতভাগ সহমত।
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি