অনেক দিন পরে লিখতে বসে লেখকদের কলম সরে না বলে শুনেছি। লেখক নই বলেই বোধ'য় আমার অন্য রকম সমস্যা হচ্ছে, মাথায় নানা কথা একসাথে ভিড় করছে। লেখায় যে একটা ফোকাল পয়েন্ট থাকবে তার জো নেই, কোন দিক থেকে শুরু করি সেটাই হয়েছে ফ্যাসাদ।
এতো কথা যা নিয়ে সেটা একটা সিনেমা। রাত্তির জেগে দেখলাম, এমন সিনেমা যা ঘুমটুম উড়িয়ে তো দেয়ই, উপরন্তু সিনেমা থামিয়ে নেট ঘেঁটে পড়তে বসতে হয়, এ সব পরিচালকের কষ্টকল্পনা কিম্বা তারান্তিনোর বর্ণিত বিকল্প ইতিহাস জাতীয় বস্তু কি না জানার জন্য। ফলে উপরি পাওনা নবলব্ধ জ্ঞান।
চিত্রকলায় আমি ইম্প্রেশনিস্টদের একনিষ্ঠ ভক্ত। কিউবিজম, পয়েন্টিলিজম কি ফভিজম, এই সব নেড়েঘেঁটে দেখেও শেষ পর্যন্ত সেই স্কোয়ার ওয়ানেই ফেরত গেছি। লন্ডনের বছরগুলোতে তাই ন্যাশনাল আর্ট গ্যালারিতে বারবার গেলেও নদী পেরিয়ে দালির কাজ দেখতে যেতে মন চাইতো না। লন্ডন ছেড়ে যাবার আগে গেলাম জন্মের শোধ মেটাতে। কিন্তু সত্যি কথাই বলি, গিয়ে পড়ে গেলাম বেজায় ধর্মসঙ্কটে। এমন অচিনপুর মার্কা পাগলামিকে নস্যাত করা অসম্ভব! কিছু কিছু খেপামোকে উড়িয়ে দিলেও দিতে পারি, কিন্তু তাঁর বজ্রনির্ঘোষ উপস্থিতিকে অগ্রাহ্য করার কোনো জো নেই। সে এক অন্য জগত, ঢুকলে বাঁধা পড়তে হয় সারা জীবনের জন্য।
লোরকা বিশেষ পড়ি নি। ছবি দেখা থামিয়ে তাঁর একটা ছোট্টো কবিতা অনুবাদ করলাম, যাঁরা এই লেখা পড়ছেন তাঁদের পাতে দিয়ে দিই এই বেলা।
ভোরের আগে
কিন্তু সে তীরন্দাজেরা
অন্ধ তারা সবাই
প্রেমের মতন
সবুজ রাত্রি চিরে
ছুটে গেছে তীর,
লিলির পালকে
রেখে গেছে দাগটুকু তার।
বেগুনি মেঘের ঝাঁক
ভেঙে ভেঙে
চাঁদ ভেসে চলে,
এবং তাদের
তূণ ভরে আছে আজ
রাতের শিশিরে
হায়, তবু প্রেমের মতোই
তীরন্দাজেরা আজ অন্ধ সকলে!
ইংরিজি অনুবাদ ও কিছু মূল স্প্যানিশ কবিতা এখানে পাবেন।
আর্ট হাউস ছবির দর্শকের কাছে বুন্যুয়েল সুপরিচিত নাম। ব্যক্তিজীবনে তিনি কেমন ছিলেন সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। ঋত্বিক ঘটকের ভাষায় বললে বুন্যুয়েল তাঁর জগতের ও সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলোকে সাহসের সঙ্গে শক্ত হাতে পাকড়েছেন ক্রমাগত, সৎভাবে আর কোনো সমঝোতা না ক'রে।
ইউটিউব থেকে বুন্যুয়েলের ১৯৬৭ সালে তৈরি সিনেমা Belle de Jour বা দিবসকুমারী'র প্রিভিউ এখানে পাবেন।
এঁরা তিন জন সে যুগের স্পেনের সংস্কৃতি জগতের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারকা। ছবি যখন শুরু হচ্ছে তখন এঁরা নব্যযুবক, কিন্তু অল্পবিস্তর পরিচিতি পেয়ে গেছেন ইন্টেলেকচুয়ালদের কাছে। কাজেই শিল্পীর পরিচিতি লাভের জন্য সংগ্রাম এ ছবিতে তেমন মুখ্য বিষয় নয়। যদিও ব্যক্তিগতভাবে সে ইতিহাস দেখতে পেলে আমি খুশিই হতাম, কারণ শিল্পীর সংগ্রাম এক সনাতন কাহিনি, যুগ বদলালেও তা অনেকাংশেই অপরিবর্তিত থাকে। কিন্তু এ ছবি অন্য এক লড়াইয়ের গল্প: সামাজিক গোঁড়ামি, অন্ধবিশ্বাস এবং সর্বোপরি রাজনৈতিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের গাথা। এই লড়াইয়ে এঁরা তিনজন সফল হয়েছেন বলা যায় না, এবং সফল বলতে আমি যুদ্ধজয়ের কথা বলছি না, বলছি আদর্শের পথে অটল থাকার কথা। এই ছবি সে স্খলনপতনেরও গল্প বলে। তবে ঘাবড়ে যাবেন না, এ ছবি শেষ পর্যন্ত এক প্রেমেরও গল্প। সিনেমা দেখার সাথে রোমান্টিকতা-সঞ্জাত বিনোদন যদি কাঙ্ক্ষিত হয় তো সে বন্দোবস্তও রয়েছে।
ছবি মূলত লোরকাকে ঘিরে, যদিও শুরুতে দালির আবির্ভাব গল্পের সূচনা করে। সে সত্যিই আগমন নয়, আবির্ভাব, যে ভাবে দালি প্রথম আসেন হস্টেলে। ছবির সুরটা বাঁধা হয়ে যায় তখনই, লোরকার মৃদুভাষ আর দালির ক্রেসেন্ডো। বুন্যুয়েল সে তুলনায় পার্শ্বচরিত্রের কাছাকাছি। তবে এঁরা তিন জন তিনখানা আলাদা জীবনদর্শনের প্রতিনিধি এ ছবিতে। লোরকা প্রতিবাদী কণ্ঠ, আদর্শের জন্য জীবন দিতেও পিছপা নন। বুন্যুয়েলের কাছে সারস্বত সাধনাই মুখ্য, তা সে স্পেনেই হোক আর প্যারিসে। দালি সবার থেকে আলাদা, পাগল-ধূর্ত-প্রেমিক-প্রতিভা, তিনি যে কী তা বোঝা দুষ্কর।এমন এক ব্যক্তিত্বের প্রেমে পপাত-চ হলেন লোরকা। সে সময়কার স্পেনে সমকামের জন্য আলাদা করে না হলেও সোডোমির শাস্তি পনের বছরের কারাদণ্ড, সামাজিক কলঙ্কের কথা তো রয়েইছে। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েও কবি লোরকা মুক্তকণ্ঠে জানান দালির প্রতি তাঁর প্রেমের সম্ভাষ, তাঁর কোমলকঠিন কাব্যের মাধ্যমে। একে মনসা তায় ধুনোর গন্ধ: সমপ্রেম, তায় সে গল্পে দালি আছেন, সে প্রেম যে অনন্য হবে সে আর আশ্চর্য কী! আমি ছবি দেখা থামিয়ে নেট ঘাঁটলাম খানিক, লোরকার কথা জানতাম, কিন্তু দালির ওরিয়েন্টেশন সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিলো না। পড়েটড়ে যা বুঝলাম তাতে মনে হয় দালি সম্ভবতঃ স্ট্রেইট বা বিষমকামীই ছিলেন, যদিও কেউ কেউ অন্য সন্দেহও করেছেন, তবে তার সমর্থনে দেওয়া যুক্তিগুলো অনেকাংশেই আন্দাজের বেশি কিছু নয়। তবে সে যুগের প্রেক্ষিতে এর বেশি প্রমাণ পাওয়াও সম্ভব কি না সে কথাও ফেলনা নয়। গার্ডিয়ানের এই লিঙ্কে গিয়ে এ জল্পনা সম্পর্কে জানতে পারবেন চাইলে।
অনেক লড়াইয়ের পথ পাড়ি দিয়ে লোরকা সত্যের এবং মুক্তভাষণের পথে থেকে নিপীড়িত হলেন এবং শেষে বধ হলেন অত্যাচারী শাসকের হাতে, এবং বুন্যুয়েল পালিয়ে বাঁচলেন। শেষ জীবনে বুন্যুয়েলের নৈতিক স্খলন হয়েছিলো আরো বড়ো রকমের, তবে সে এই ছবির পরিধির বাইরে। তো এই হলো ছবির গল্প। হাতে সময় থাকলে এবং ছবি দেখার সুযোগ থাকলে দেখে নিতে পারেন, নেটফ্লিক্সে অনলাইনে রয়েছে এই ছবি। বিরাট কিছু মাস্টারপিস না হলেও ভালো নির্মাণ, কম বাজেটে তৈরি হলেও সে বাবদ কোনো দৈন্যের ছাপ চোখে পড়ে না। দালির চরিত্রে অভিনয় করেছেন টোয়াইলাইট-খ্যাত রবার্ট প্যাটিনসন, লোরকা হয়েছেন হাভিয়ের বেলত্রান। জ্যোৎস্নাপ্লাবিত এক রাতে মায়াময় সরোবরে একটি প্রেমের দৃশ্য আছে ঘোর লিরিকাল, বাতিকগ্রস্ত না হলে সে দৃশ্য ভালো লাগবে। সব মিলিয়ে চমৎকার ছবি।
সিনেমার নামটি দালির আঁকা একটি ছবির নামে, এইখানে গেলে দেখতে পাবেন সে ছবি।
মন্তব্য
পড়েই মনে হচ্ছে মাস্ট সী। নামাইতে দিলাম।
এইরকম রিভিউ মুভি দেখা ফরজ করে দেয়
.........
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা
.........
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা
দারুণ রিভিউ, পড়লেই দেখতে ইচ্ছে করে। ছবিটা নেটফ্লিক্সের ইন্সট্যান্ট কিউতে দিলাম, ডোরা দ্য এক্সপ্লোরারের ফাঁকে দেখতে হবে।
লোরকার কবিতা বেশি পড়িনি, যেটুকু পড়েছি সেটাই দারুণ লেগেছে।
অদ্ভুত সুন্দর।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
ডোরা দ্য এক্সপ্লোরারের ফাঁকে দেখতে হবে
খুবই সত্য কথা। আমরাও পাওয়ার রেঞ্জার, জ্যাক অ্যান্ড কোডি, হানা মন্টানা ইত্যাদির ফাঁকে মাঝে মধ্যে কিছু দেখতে পাই।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আপনি তো ভাগ্যবান তাহলে! আমার বন্ধুদের ২ বছরের পুত্রটি আবার ঘোর ব্র্যান্ড-লয়াল, তাই একটি মাত্র চ্যানেল ছাড়া দেখে না, ফলে টিভিতে সর্বদা একই প্রোগ্রাম ও একই কমার্শিয়াল চলে। মাঝে মধ্যে তার দয়া হয় যদি তো অন্য কিছু দেখা যায় হয়তো।
আমার বাসায়ও ব্রান্ড লয়ালটি ছিলো ততদিন পর্যন্ত, যতদিন অন্য অপশনগুলো তৈরি হয়নি। বয়স বাড়ার সাথে সাথে অপশন বাড়ছে তার সাথে সাথে এক চ্যানেল থেকে আরেক চ্যানেলে লাফ বাড়ছে। তবে আমাদের কপালে যে লবডঙ্কা ছিলো তা তেমনই আছে।
অনটপিকঃ নেটফ্লিক্স কী বস্তু তা ঢাকায় বসে বোঝা সম্ভব না। আমাদের দৌড় রাইফেলস্ কম্প্লেক্স আর বসুন্ধরা সিটির ওয়েস্টার্ন ক্রেজ, মুভি প্লাস, ফিল্ম ফেয়ার, ঘুড্ডি এইসব দোকানগুলোতে। সেখানে এই সব মুভি নিজে হাতড়ে খুঁজে বের করতে হয়। নয়তো সেলস্ম্যানকে জিজ্ঞেস করলে উত্তর শুনতে হয়, "এই সিনেমার নামও শুনি নাই"।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
নেটফ্লিক্সের কথা লেখার সময় আমার কিছুটা সংকোচই হয়। বিদেশি রেসিপিতে যেমন কঠিন কঠিন উপকরণের কথা থাকে যা কোথায় পাওয়া যায় সে খবর দেশে রাঁধতে গেলে ঠাট্টার মতো লাগে, এও অনেকেরই কাছে তেমন লাগতে পারে। মুশকিল হলো টরেন্ট বা ঐ জাতীয় সাইট আমি কখনোই ব্যবহার করি নি বলে তার খোঁজ দিতে পারি না। তবে এই ছবিটা ইউটিউবেই ভাগে ভাগে আছে, প্রিন্ট যদিও বেশ খারাপ।
আমার অবস্থা আরও খারাপ...। কোন এক মুহূর্তে টিভিতে আনইন্টারাপ্টেড একটা প্রোগ্রাম দেখার জন্য শিখালাম... এখানে লিখ youtube … তারপর এখানে লেখ oggy...। ব্যাস – আমও গেল, ছালাও গেল।
অনেক দিন পরে এলেন! ওয়েল্কাম্ব্যাক!
লেখা ভালো লাগলো। লিঙ্কগুলো দিয়ে তো মোটামুটি আগামী মাস দুয়েকের জন্য অন্য পড়াশুনা বা কাজ বন্ধ করে দিলেন! রিভিউয়ের উদ্দেশ্য যদি হয় মুভির ব্যাপারে পাঠককে আগ্রহী করে তোলা, তাহলে আপনি সফল। নেটফ্লিক্সের ডগায় তুলে রাখলাম।
সংসপ্তক, তাসনীম ও যুধিষ্ঠির,
অনেক ধন্যবাদ সহৃদয় মন্তব্যের জন্য।
লিঙ্কের প্রাচুর্যের প্রসঙ্গে বলি, নানা সূত্র ঘেঁটেঘুটে লিখে যখন বেশ তৃপ্তি আসে, তখন মনে হয় যখন ইন্টারনেট ছিলো না তখন লোকে এই কর্মটি করতো কেমন করে? এমন বদভ্যাস হয়েছে যে বই খুলে কিছু খুঁজতে বসলে কন্ট্রোল-এফ না থাকায় মেজাজ খারাপ হয়ে যায়! সে যুগের পরিশ্রমী গবেষণামূলক লেখা তাই এখন আরো বেশি শ্রদ্ধা জাগায়।
ছবিটা কেউ দেখলে নিজেদের প্রতিক্রিয়া একটু জানাবেন।
লেখাটা পড়া শুরু করলাম মূলা'দা। কিন্তু কিছুদূর গিয়ে মনে হলো, আগে সিনেমাটা দেখি, তারপর বাকিটা পড়বো। দুইটার সময় হ্যাপি আওয়ার শুরু হবে, তখন নামাবো। রাতে সুযোগ পেলে রাতেই দেখবো নাইলে, পরের যেকোনো একদিন। কিন্তু সিনেমাটা দেখে এই পোস্ট বাকিটা পড়ে একটা মন্তব্য রেখে যাবো, এনশাল্লাহ। দোয়া রাইখেন।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
রিভিউ খুব উপাদেয় তো বটেই, কিন্তু সেটা এতদিন লেখা না দেওয়ার যথেষ্ট ক্ষতিপূরণ হতে পারে না...
ধুগো,
দোয়া রাখলাম, সাথে সিনেমা দেখার পরে লেখা মন্তব্য পড়ার আশাও রাখা হলো। আমার লেখাটা ঠিক রিভিউ হয় নি, বরং ছবিটা দেখার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গোছের কিছু হয়েছে। কাজেই জানাবেন ছবি নিয়ে প্রতিক্রিয়া।
কৌস্তুভ,
সে কথা আম্মো মানি, কিন্তু ক্ষতিপূরণটা কী হলে ঠিক হয়?
ছবি, ছবি! কত্ত কত্ত দিন হয়ে গেল আপনার আঁকা দেখি না! সেই তুর্কী হারেম... আহ্!
সিরাতদা কইতেছিল, রাজর্ষিদা যাতে আবার লেখালিখি ধরেন তার লগে ঝুলাঝুলি চালাইতেসি। তাইলে আপনার ওয়েল্কাম্ব্যাকের দিনে সিরাতদারও কিছু ধনেপাতা প্রাপ্য।
কৌস্তুভ, ক্রেডিট লিবার চান্স পাইলে কি আমি আর ছাড়ি! আমার ফেসবুক ওয়ালে প্রমান আছে, আর রাজুদা, কিছু তো বলুন!
লেখা ভাল্লাগলো, যদিও একটু টেকনিকাল! এসব এক্সপেরিয়েন্সিয়াল লেখায় তা হয় বটে। তা-ও, আপনি লিখেছেন বলে অনেক স্বাদ আছে, যদিও কয়েক জায়গায় ডাইভারশন একটু বেশি।
আর, ওয়েলকাম ব্যাক তো বটেই।
কৌস্তুভ,
সেই সব ছবিটবির কথা মনে রেখেছেন দেখে আনন্দ হলো, কারণ এতো কিছু স্মরণীয় যে সেগুলো ছিলো না তা জানি। ছবি আঁকার অনেক হ্যাপা, বিশেষতঃ কাগজে আঁকলে। তবে একেবারে বাদ দেওয়ার জন্য সেটা যথেষ্ট ভালো কারণ নয়, তা মানি। অতএব চেষ্টা করা যাবে ভবিষ্যতে। ততোদিন ঐ সুজনটুজন কী সব ছোটোখাটো শিল্পী আছেন যেন, ওঁদের আঁকা দিয়েই কাজ চালান।
সিরাত,
এই লেখা তোমার টেকনিকাল লাগলো? আর রোজ যে সব লিখছো সেগুলি বুঝি জলভাত? এমন কথা বললে যখন তখন ঠিক করলাম, এরপর তোমার থেকে ডেন্টিস্ট-খর্চা নেবো, তোমার লেখা পড়ে দাঁতের ক্ষয়ক্ষতি-বাবদ।
আর এই ওয়েলকাম ব্যাক'টা থামাও দিকি (যদিও ধন্যবাদ জানালুম সে বাবদ এইখানে), গেলাম'টা কবে যে বলিউডি-প্রত্যাবর্তন হবে। লেখা না পোস্টালেও কমেন্ট তো থামে নি। আর লোকে কতো শীতঘুমে যায়, আমাদের বুঝি যাবার লোভ হয় না?
হে হে, আজ মূলোদা জবরদস্ত ফর্মে আছেন।
কথাটা ঠিক বলেছেন। তবে সুজনদা শুধু বড় শিল্পী না, বড় মানুষও। এ জন্মে আর বড় হয়েও সুজনদা হওয়া হয়ে উঠবে না, তাই ভেবে দেখলুম, এজন্মে আর বেশি পুণ্যটুণ্য করব না, যাতে পুনর্জন্মটা হয়, তাহলে একটা সেকেন্ড চান্স পাওয়া যাবে...
সিনেমাটা দেখলাম। একবার দেখার জন্য সিনেমাটা হয়তো ঠিক আছে। তবে বারবার দেখার মতো সিনেমা না এটা।
আর হ্যাঁ, আপনার কথা ঠিক হলে আমি বাতিকগ্রস্ত।
________________________________________________
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
প্রথম পয়েন্টে ঘোরতর সহমত, বারবার দেখার ছবি খুব বেশি হয় না এবং এটা আমার কাছেও একবার দেখার মতোই একটা ছবি। মাস্টারপিস কিছু না যে এটা সে কথা লেখায় লিখেওছি। তবে এই ছবি যে আমাকে আরো অনেক খোঁজখবর নিতে উৎসাহিত করেছে, আমার কাছে এইটা একটা বড়ো পাওনা ছিলো। খুব কম সিনেমা থেকেই এই জাতীয় প্রাপ্তি ঘটে।
দু নম্বর কথা এস্থেটিক পয়েন্টে হলে বলার কিছু নেই যেহেতু ওটা সবার সাথে সবার মিলবে এটা জরুরি নয়, হয়তো উচিতও নয়। আর যেহেতু গোটা ছবিটা দেখেছেন ধৈর্য ধরে, তাহলে এটাও ধরে নেওয়া যায় বোধ'য় যে সমপ্রেম বিষয়টায় আপনার অ্যালার্জি নেই, বাতিকগ্রস্ত বলতে আমি ঐ গোত্রের লোকেদের কথাই বলেছিলাম। (অবশ্য অ্যালার্জির উপশম হয়, একেবার নিরসন হয় না, কাজেই কারো সে সমস্যা হলে তার সাথে তর্কে যাবো না, বৃথা কালক্ষয় ভেবেই।) তো সেক্ষেত্রে নান্দনিক পয়েন্টে দ্বিমত হতে আর সমস্যা কোথায়।
ভাগ্য ভালো আপনি 'মূলত পাঠক' না হলে অনেকের লেখালেখি বন্ধ করে দিতে হতো!
"সবুজ রাত্রি চিরে
ছুটে গেছে তীর,
লিলির পালকে
রেখে গেছে দাগটুকু তার।..."
কি অদ্ভুত!! কবিতাটা শেয়ার না করে পারছি না---ঝরঝরে চমৎকার অনুবাদ!
কিউবিজম, পয়েন্টিলিজম, ফভিজম এগুলো সম্পর্কে লিঙ্ক না দিয়ে সহজ বাংলায় আপনি দু-একটা কথা বলতে আরো ভালো হতো- বুঝেনইতো আমরা আইলসা বাঙালী!
=================================
"রঙিন কাফনে মোড়া উৎসুক চোখে
ছায়া ছায়া প্রতিবিম্ব দেখি
মানুষ দেখি না।।"
=================================
"রঙিন কাফনে মোড়া উৎসুক চোখে
ছায়া ছায়া প্রতিবিম্ব দেখি
মানুষ দেখি না।।"
এ তো মহা প্রশংসা, যাক তাহলে নিকনেমটা বেশ জনহিতকর হয়েছে বলুন, কারো লেখালেখি বন্ধ হয় নি অন্তত।
কিউবিজম, পয়েন্টিলিজম, ফভিজম ইত্যাদি নিয়ে না হয় একটা পোস্টই দেওয়া যাবে কখনো।
আরে মূলোদা! অনেকদিন পর।
দারুন রিভিউ! মুভিটা দেখার আগ্রহ আছে কিন্তু দেখার সময় নাই
অনেকদিন পর লিখলেন। রিভিউটা চমৎকার লাগল।
লিটল অ্যাশেস দেখতে হবে, দেখার পর আবার লেখাটা পড়ব...।
বাউলিয়ানা আর নৈষাদ,
অনেক ধন্যবাদ এমন মন্তব্যের জন্য।
আহা !
কী চমৎকার আপনার লেখার হাত- আপনার অনুপস্থিতি আসলেই মিস করি। আপনার সেই রাগের পর্বগুলি আবার শুরু করতে পারেন না ?
সিনেমাটা দেখিনি- তবে আশা করছি দ্রুতই দেখে ফেলতে পারবো। কিছুদিন আগে শঙ্খ ঘোষের একটা লেখা পড়ছিলাম, সেখানে সিনেমার ব্যাপারে দারুণ কিছু আলোচনা ছিলো- বলতে পারেন শিল্পের সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। সেখানে বুনুয়েলের "দ্য এজ অভ গোল্ডের" প্রশংসা শুনে, বিশেষত কীভাবে দালির স্যুরিয়ালিজমের প্রভাব পড়েছে বুনুয়েলের উপর, সিনেমাটা দেখার ব্যাপারে বেশ আগ্রহ জন্মেছে। এটা যদি আপনার দেখা থাকে, দুই কলম লিখে ফেলুন।
আর লোরকার বোনাস অনুবাদের জন্য আলাদা ধন্যবাদ
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
সবজান্তা,
আরে আমার পরিস্থিতির কথা ভেবেই তো রবিবাবু লিখেছেন সেই প্রতীক্ষিয়া থাকা আর ধন্য করার গপ্পো। বেশ ধন্য হলুম।
"এজ অফ গোল্ড" দেখি নি ভায়া, কাজেই লেখার উপায় নেই। যাক, সিনেমার অভাব কী, হবে অন্য সব।
ধন্যবাদ।
বাহ, বেশ লাগলো। সমস্যা হচ্ছে এই জাতীয় ছবি সম্পর্কে পড়ে/জেনে যতটা আরাম পাই- দেখে কেনো জানি ঠিক ততটা আরাম পাইনে।
দালি আর লোরকা সম্পর্কে ভাসাভাসা কিছু জানি অবশ্য- স্পষ্ট জানার আগ্রহটা থাকলেও আলস্যটা কাটাতে পারি না কিছুতে।
তা যাক, সন্ধানে লোক লাগালাম। পারলে কোন এক ফাঁকে দেখে নেবো।
_________________________________________
সেরিওজা
এই জাতীয় ছবি বলতে কী মীন করেছেন সেইটা জানতে পারলে আরো কিছু বলা যেতো। এই ছবিটা ভয়ানক ভালো কিছু না হয়তো, কিন্তু পিরিয়ড পীস হয়েও শুকনো নয়, চরিত্রেরা বেশ মানুষ মানুষ যাদের চেনা যায়। আর এঁদের নাম জানলেও জীবন নিয়ে প্রচুর জ্ঞান অনেক দর্শকেরই নেই, তাই জানার স্পৃহাটা জাগে।
দারুণ রিভিউ! সিনেমাটা দেখা হয় নি এখনও। তবে ভীষণ ইচ্ছা জাগলো রিভিউটা পড়ার পর। দেখা হলে, জানাবো কেমন লাগলো।
আরে অপ্রভায়া যে! থাংকু থাকু।
আপনার বেশ মন তোলপাড় হয়েছে বুঝতে পারছি মুভিটা দেখে, আপনার পছন্দের আবেগটা সত্যিই চমৎকার ফুটিয়েছেন লেখায়। টিনেজারদের হৃৎকমলে ধুম লাগানো প্যাটিনসন যে সিরিয়াস মুভি করে বা করার কথা ভাবে তা তো জানতাম-ই না:-) জানানোর জন্য ধন্যবাদ। আমার ব্যক্তিগত কিছু সমস্যা আছে দালিকে নিয়ে, এটাই হল মুশকিল (স্পনের গহযুদ্ধ নিয়ে ১ সেমেস্টার পড়ার ফল!)। তাই দালিকে নিয়ে মাখোমাখো প্রেমের উপাখ্যান দেখতে পারবো কিনা বুঝতে পারছি না। দেখতে বসলেই তো মনে হবে ব্যাটাচ্ছেলে ভন্ড, লোভী, নারসিস্টিক, ফ্র্যাকো প্রেমী, হিটলার উপাসক নিপাৎ যা নিপাৎ যা।
ছুটলে কথা থামায় কে/আজকে ঠেকায় আমায় কে
আমার মন তোলপাড় কিছুটা হয়েছে, কিছুটা আনন্দও হয়েছে জ্ঞান আহরণের বাবদে, লিখে ফেললাম সে জন্যই। আমার ঐ সমস্যাটা হয় নি যেহেতু দালির ছবির বাইরে বিশেষ জানতাম না। বুন্যুয়েল ব্যাটাও বিশেষ সুবিধের না, সে খবরও জানা গেলো নেট ঘেঁটে। এই দুজনের পাশে লোরকা তাই আরো উজ্জ্বল হয়ে ওঠেন।
দারুণ উপভোগ্য একখান লেখা।
অবশ্য ফভিজম ব্যাপারটা ঠিক ক্লিয়ার হল না।
দেখি, আরো পড়াশোনা করতে হবে।
---আশফাক আহমেদ
দেখতে হবে দিকি!
-----------------------------------------------------------------------------------
...সময়ের ধাওয়া করা ফেরারীর হাত থিকা যেহেতু রক্ষা পামুনা, তাইলে চলো ধাওয়া কইরা উল্টা তারেই দৌড়ের উপরে রাখি...
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
আশফাক ও বালিকা,
ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
মুভি নিয়ে এইসব কথা লিখবেনই যদি, তাইলে সেটা ডাউনলোড করে বা বার্ণ করে ঢাকায় পোস্টে পাঠান!!!
আহা পারলে কি আর পাঠাই না? আর আমি এমন হিংসুক কেন? লিখুন না ঢাকায় কেমন কিমা পরটা খাচ্ছেন, আমি মোটেও বলবো না বার্ন করে এখানে পাঠান। পোড়া পরটা আমি খাই না।
নতুন মন্তব্য করুন