ভ্যাংকুভারে আসার পর এখানের এক একুশে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠানে যেয়েই প্রথম জানতে পারি যে রফিকুল ইসলাম এবং আবদুস সালাম নামে নতুন প্রজন্মের যে দুইজন ভাষা সৈনিকের প্রশংসনীয় উদ্যোগে আমাদের 'শহীদ দিবস' 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে তারা এখন এখানেই থাকেন। তখন থেকেই ব্লগের জন্য তাদের সাক্ষাৎকার নেয়ার একটি সুপ্ত ইচ্ছা ছিল। মুস্তাফিজ ভাইরা ভ্যাংকুভারে চলে আসার পর আমাদের নানা ফর্মে প্রায় সবসময়ই সচলাড্ডা চলতে থাকে। এ রকমই একটা আড্ডায় তাঁদের সাক্ষাৎকার নেয়ার ইচ্ছার কথা প্রকাশ করায় মুস্তাফিজ ভাই বেশ উৎসাহিত হয়ে ওঠেন। এই উৎসাহের রসে জারিত হয়েই ২০শে ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় মুস্তাফিজ ভাই আর আমি মিলে রফিক ভাইয়ের বাসায় সাক্ষাৎকার নিতে হাজির হই। একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষ্যে ইউনিভার্সিটি আব ব্রিটিশ কলাম্বিয়া'তে একটি অপূর্ব শহীদ মিনার তৈরির কাজে নেতৃত্ব দেয়ার দায়িত্ব পড়ায় ত্রিমাত্রিক কবি শান্তর সঙ্গ থেকে আমরা বঞ্চিত হই। ব্যস্ততার কারণে সুজনদার সঙ্গও আমাদের পাওয়া হয়ে ওঠে না। অফিস শেষ করে আমাদের সাথে যোগ দিতে আনিকারও একটু দেরি হয়ে যায়। রফিক ভাইয়ের বাসায় এসেই সে আমাদের জানায় যে তার কাছে সালাম ভা্ইয়ের একটি অটোগ্রাফ আছে -- ২০০০ সালে একুশে পদক গ্রহণ করার পর চট্টগ্রাম কলেজের প্রাক্তন ছাত্র সালাম ভাই যখন এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম কলেজে যান সে সময় সেটি সে নিয়েছিল।
আড্ডায় উপস্থিত হয়েই মুস্তাফিজ ভাই তাঁর ভিডিও ক্যামেরাটি বের করে মাতিসের হয়ে রফিক ভাইয়ের কাছে তাঁর মুক্তিযুদ্ধের সময়কার স্মৃতি জানতে চান। বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (বিএলএফ)বা মুজিব বাহিনীর হয়ে যুদ্ধ করা রফিক ভা্ই তাঁর ছোট ভা্ইয়ের শহীদ হওয়ার কাহিনী বলতে বলতে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন -- আড়চোখে চোখের কোণা মুছতে দেখি সালাম ভাইকেও। এরপর সালাম ভাই মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতা তাঁর পরহেজগার বাবাকে পাক বাহিনীর তুলে নিয়ে যাওয়া, ইলেকট্রিক চেয়ারে বসিয়ে শক দিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা এবং পরবর্তীতে কিভাবে তিনি দৈবক্রমে বেঁচে যান সেসব গল্প শোনান। এরপর আমরা সাক্ষাৎকারটি শুরু করি --
আনিকা মাহমুদ - আমরা নিজেদেরকে খুবই সৌভাগ্যবান মনে করছি আজ যে তিনজন আমরা এখানে আছি।আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ১৯৯৭ সালে যে অসম্ভব সুন্দর একটি উদ্যোগ নিয়েছিলেন আপনারা তার ইতিহাসটুকু জানা।
রাজিব মোস্তাফিজ - আমি যে প্রশ্নটি প্রথমে করতে চাই সেটি হচ্ছে একুশে ফেব্রুয়ারিকে যে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা যায় এ ধারণাটি আপনাদের মাথায় প্রথম কিভাবে আসে? কবে নাগাদ?
রফিকুল ইসলাম - আমার বড় সৌভাগ্য যে আমি বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি, বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করার সুবাদে আমার জীবনে অনেকবার একুশে ফেব্রুয়ারিকে দেখেছি। আমি কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেছি; সেখানে একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করেছি। তারপর ঢাকাতেও একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করেছি। একুশের চেতনা আমাকে সবসময় গর্বিত রেখেছে। আমি ১৯৯৫ তে কানাডাতে ইমিগ্র্যান্ট হয়ে চলে আসি - সেই থেকে আমি কানাডাতেই আছি। মাল্টিকালচারিজম কানাডার একটা অন্যতম প্রধান দিক। এখানে আমার কর্মজীবনে অনেক দেশের অনেক মানুষের সাথে আলাপ হয় এবং বিভিন্ন সময় ভাষা নিয়ে আলাপ হয়। তো এরকম করে দক্ষিণ আমেরিকার এক লোকের সাথে একবার খুব গভীর আলাপ হচ্ছিল যেখানে সে খুব দু:খ করে বলেছিল যে তারা স্প্যানিশে কথা বলে যদিও এটা তাদের মাতৃভাষা নয়। তাদের নিজস্ব একটি মাতৃভাষা আছে যেটা এখন হুমকির সম্মুখীন।এটা শুনে আমার একটু মন খারাপ হয়। তারা আবার আমাদের ভাষার কথা জানে এবং বলে যে তোমরা খুব সৌভাগ্যবান যে তোমরা তোমাদের মাতৃভাষা ব্যবহার করতে পারছ। সেইসময় আমি একটা চিঠি লিখি জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানকে।এই চিঠিতে আমি উল্লেখ করি যে আমাদের পৃথিবীতে এখন ছয় থেকে সাড়ে ছয় হাজার বিভিন্ন ভাষা আছে -- সেগুলোকে রক্ষা করার জন্য একটা 'ইন্টারন্যাশনাল মাদার ল্যাংগুয়েজ ডে' ঘোষণা করা যায় কিনা। এর সাথে আমি আরেকটা জিনিস যোগ করি ওই চিঠিতে -- যে বাংলাও একটা ভাষা যেটা একসময় একটা সংকটে পড়েছিল; সেসময় বাংলাদেশের মানুষেরা তাদের প্রেম দিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে এবং জীবন দিয়ে এই ভাষাটাকে রক্ষা করেছিল। সেই স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ২১শে ফেব্রুয়ারিকেই 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে ঘোষণা করা যায় কিনা। এর কিছুদিন পর আমি একটি চিঠি পেলাম যেটা কফি আনানের পক্ষে তার প্রধান তথ্য কর্মকর্তা লিখলেন। চিঠিটি পেয়ে আমি একটু হতাশ হয়ে পড়লাম। কারণ চিঠিটিতে [লিংক] তিনি বললেন -- "ধন্যবাদ আপনাকে জাতিসংঘের কার্যক্রমে আগ্রহ প্রকাশ করার জন্য। কিন্তু জাতিসংঘ কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের সাথে কাজ করে না, শুধুমাত্র এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সাথে কাজ করে। তাই আপনাকে যদি আবেদন করতে হয় আপনার সরকারের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে।" চিঠিটি পেয়ে আমার মনে হল আমি আবেগের বশে হয়ত একটু অবাস্তব কাজ করে ফেলেছিলাম।
সা্লাম ভাই আমার খুব বন্ধু মানুষ। আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে থাকি। একদিন একটা অনুষ্ঠানে আমি সালাম ভাইকে ব্যাপারটি বলি। শুনে সালাম ভাই খুব উৎসাহিত হয়ে ওঠেন। বলেন - রফিক ভাই, এটাতো খুব ভালো একটা কাজ হয়েছিল। আমি তাকে বললাম - সালাম ভাই, চিঠিটা পেয়ে একটু মন খারাপ হয়েছে। সালাম ভাই আবারও বললেন -- রফিক ভাই, এটাতো খুব ভালো কাজ হয়েছে; এটাতো হওয়াই উচিত।সালাম ভাইয়ের কথা শুনে আমি আবার নতুন করে যেন প্রাণ পেলাম। আমি ওনাকে আমার লেখা চিঠিটা দেখালাম। সালাম ভাই বললেন রফিক ভাই চলেন আবার এইটা নিয়ে কাজ শুরু করি। আমাদের মনে হলো একটা গ্রুপ তৈরি করলে ভালো হবে। আমরা ৫টি ভাষার ২ জন করে প্রতিনিধি নিয়ে ১০জনের একটা গ্রুপ তৈরি করি। পরে আরও ২টি ভাষা যোগ করে ৭টি ভাষা করা হয় কিন্তু সদস্য সংখ্যা ১০ জনই রাখা হয়। আমরা আবার সেই চিঠিটা নিয়ে কাজ শুরু করলাম। সালাম ভাই অসম্ভব ভালো ড্রাফটিং করেন। আমার সেই সহজ ভাষার সাদামাটা চিঠিটাই সালাম ভাইয়ের হাতে পড়ে এক অনবদ্য রূপ লাভ করে -- ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাণ্ডার্ড এর একটা চিঠিতে পরিণত হয়। আমরা চিঠিটি আবার কফি আনানকে পাঠালাম। সেই সাথে চিঠির একটি কপি পাঠালাম জাতিসংঘে কানাডার স্থায়ী প্রতিনিধি রবার্ট ফাউলার এর কাছে যাতে উনি আমাদের প্রস্তাবকে সমর্থন করেন। কিন্তু তিনি সেটাকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিলেন এবং সেখানে আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রিতায় পড়ে প্রায় এক বছরের মত চলে গেল কিন্তু জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধিকে আর এটা জানানো হলো না। এদিক দিয়ে যখন কোনো অগ্রগতি হলো না তখন আমি আবার জাতিসংঘের মহাসচিবের প্রধান তথ্য কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করলাম। তাঁর নাম হাসান ফেরদৌস। উনি আমাকে বললেন -- শোনেন, এটা যদি করতে হয় তাহলে এখান থেকে কিছু হবে না; আপনাকে ইউনেস্কোর সাথে যোগাযোগ করতে হবে।ওনার কাছ থেকে আমি ঠিকানা, ফোন নম্বর নিয়ে ইউনেস্কোর সাথে যোগাযোগ করলাম।তখন ইউনেস্কো থেকে পল নামে একজন আমার সাথে যোগাযোগ করে বলল আনা মারিয়া মাইলোফ নামে একজন ভদ্রমহিলার সাথে যোগাযোগ করার জন্য। আনা মারিয়া মাইলোফের সাথে কথা বলেই আমার মন ভরে গেলো, মনে হলো একদম ঠিকঠাক একজনের কাছে যেয়ে ব্যাপারটা পড়েছে। আনা মারিয়া মাইলোফ আমাদেরকে চিঠি লিখে খুব উৎসাহ দিলো, কিন্তু আবার এ প্রস্তাব যে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আসতে হবে এ কথাটিও আবার বলল। কানাডা, বাংলাদেশ, ভারত, ফিনল্যান্ড এবং হাঙ্গেরি এ পাঁচটি দেশ তখন ইউনেস্কো ন্যাশনাল কমিশনে সদস্য ছিল। তাই আমরা এই পাঁচটি দেশের কাছে লিখলাম। এ সময় তারা আমাদেরকে জানালো যে ১০ই সেপ্টেম্বরের মধ্যে যে সমস্ত প্রস্তাব আসবে শুধুমাত্র সেগুলোই বিবেচিত হবে।
মুস্তাফিজ -- এটা কি ৯৯ সাল?
রফিকুল ইসলাম -- হ্যাঁ, ১৯৯৯ সালের ১০ই সেপ্টেম্বর। তখন আমি প্রতিদিনই অনেক রাত করে বাংলাদেশ, ভারত প্রভৃতি দেশের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি । এ সময় প্রথম হাঙ্গেরি থেকে একটা চিঠি আসে যেটা ইউনেস্কোকে পাঠানো হয়েছে এবং আমার কাছে এর অনুলিপি পাঠানো হয়েছে। এ চিঠিতে তারা বলেছে যে আমাদের সংগঠন 'মাদার ল্যাংগুয়েজ লাভার্স অব দ্য ওয়ার্ল্ড' যে প্রস্তাব করেছে তারা সেটিকে সমর্থন করে। এ চিঠি পেয়ে তো আমি খুব খুশি হয়ে উঠলাম। সালাম ভাইকে বললাম -- সালাম ভাই, হয়ে গেছে। মারিয়ার সাথে যোগাযোগ করে বললাম মারিয়া তুমি যা বলেছিলে সেটাতো হয়ে গেছে। কিন্তু মারিয়া বললো শুধু প্রস্তা্ব সমর্থন করলে তো হবে না -- কোনো একটা রাষ্ট্রকে তো প্রস্তাবটা করতে হবে। এটা শুনে আমার মন আবার তো খারাপ হয়ে গেলো। তখন আবার অনেক কষ্ট করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদের সাথে যোগাযোগ করলাম। উনি বললেন এরকম কোনো চিঠি তো উনি পান নাই -- ওনাকে কি আমি চিঠিটা পাঠাতে পারব কিনা। এ কথা শুনে আমি ওই রাত্রেই নিজাম ভাইয়ের বাসা থেকে তাকে চিঠিটা ফ্যাক্স করে দিলাম। আমি পরদিনই সচিব সাহবেকে ফোন দিয়ে দেখি তাঁর কণ্ঠে উল্লসিত ভাব। বললেন, দেখি কি করা যায়। সচিব এটা তৎক্ষণাৎ পাঠিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী এ এইচ এস কে সাদেকের কাছে। শিক্ষামন্ত্রী পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। প্রধানমন্ত্রী এটা দেখে বলেছেন -- এটা তো খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, জড়িত মন্ত্রণালয়গুলো থেকে মতামত নিয়ে এটা পাঠানো হোক। এদিকে আগস্ট শেষ হয়ে সেপ্টেম্বর চলে আসছে, আমরা সেপ্টেম্বর ১০ এর ডেডলাইন ধরার জন্য তাড়াহুড়ো করছি। বাংলাদেশে আবার ফোন করে জানতে পারি সচিব দেশের বাইরে আছেন--বিকল্প হিসেবে আমাদের ন্যাশনাল কমিশনের কফিলউদ্দিন আহমেদ সাহেবের সাথে যোগাযোগ করতে বলা হয়।আমি তাড়াতাড়ি করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি -- কিন্তু সম্ভব হয়ে ওঠে না। পরে কফিলউদ্দিন সাহেবের সাথে যোগাযোগ করলে উনি এটি আবার শিক্ষামন্ত্রীর নজরে আনেন, শিক্ষামন্ত্রী এটা সেপ্টেম্বরের ৪ অথবা ৫ তারিখের দিকে আবার প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনেন। ডেডলাইনের কথা শুনে প্রধানমন্ত্রী বলেন -- তাহলে আর সবার মতামতের দরকার নেই, আমি অনুমতি দিয়ে দিচ্ছি -- আমাকে পাঠিয়ে দেন আমি অফিসে যেয়ে সাইন করব।তারপর অন্য সব ফর্মালিটিজ শেষ করে এটা পাঠাতে পাঠাতে ৯ তারিখ হয়ে যায়। প্যারিস বাংলাদেশ থেকে ৫ ঘন্টা পেছনে বলে তারা ৯ তারিখ পুরো দিনই এটা নিয়ে কাজ করতে পারে এবং ১০ তারিখ নির্দিষ্ট সময়ের আগেই এটাকে প্রস্তাব হিসেবে জমা দিতে পারে। প্রক্রিয়াটি শুরু হয়ে যায়।
প্রক্রিয়াটি শুরু হয়ে যাওয়ার পরে ওইখানে কয়েকজন লোক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। টনি হক বলে একজন ভদ্রলোক আছেন, আরেকজন হলেন আমাদের তখনকার হাই-কমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী(সম্ভবত সৈয়দ মুজতবা আলীর ভাইয়ের ছেলে)।একটা সুপার-ডিপ্লোম্যাটিক কাজ ওনারা করেছেন। মাঝে মাঝেই আমাদেরকে জানাচ্ছেন যে, এতগুলো দেশ আমাদেরকে সাপোর্ট করেছে। 'কমিশন টু' নামে একটা কমিশন আছে যেটা কোনো প্রস্তাবের টেকিনিক্যালিটি পরীক্ষা করে এবং তারা অনুমোদন দিলে সেটা পাশ হয়ে যায়। এই 'কমিশন টু' তে প্রস্তা্বটা পাশ করানোর জন্য তাদের পুরো টিমটা যেভাবে বাধা-বিপত্তিগুলোকে যেভাবে সামলেছেন সেটা আমি বলব সত্যিই অসাধারণ। নভেম্বর মাসের ১২ তারিখ প্রস্তাবটা 'কমিশন টু'তে পাশ হয়। নভেম্বরের ১৭ তারিখ ২৯টা দেশের সবগুলোর সমর্থনে এ প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হয়। ২৯ টা দেশের মধ্যে পাকিস্তানও ছিল।
আজ আমি এইখানে বাবু ধীরেন দত্তের(ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত)কথা স্মরণ করব ১৯৪৮ সালের ২৫ আগস্ট পাকিস্তান গণপরিষদে অধিবেশনের সকল কার্যবিবরণী ইংরেজি ও উর্দুর পাশাপাশি বাংলাতেও রাখার দাবি উত্থাপন করার জন্য। আমি ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলনের আমাদের সব অগ্রজকে স্মরণ করছি, সব ভাষা শহীদ আর সৈনিককে স্মরণ করছি।
মুস্তাফিজ -- ধন্যবাদ রফিক ভাই। আমরা অনেক কিছু জানতে পারলাম। আমার মনে হচ্ছে আমরা যদি আপনার সাথে একটা পুরো দিন কাটাতে পারতাম তাহলে ভালো হতো।
রফিকুল ইসলাম -- আমি এখানে একটা কথা বলি -- সালাম ভাই কিন্তু এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। সালাম ভাইকে যদি আমরা না পেতাম তাহলে কিন্তু কাজটা হয়ত হতো না।এখানে আমি আরও ধন্যবাদ জানাচ্ছি অন্যান্য ভাষা-ভাষী যারা আমাদের এ উদ্যোগের সাথে শুরু থেকে জড়িত ছিল।
মুস্তাফিজ -- আমরা এখানে সালাম ভা্ইকে অনুরোধ করব কিছু বলার জন্য -- বিশেষ করে রফিক ভাই যদি কোনোকিছু বাদ দিয়ে থাকেন যেটা আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় সে জিনিসগুলোও আপনার বক্তব্যে যোগ করে দেয়ার জন্য অনুরোধ করব।
আবদুস সালাম -- রফিক ভাই যখন আমাকে প্রথম ব্যাপারটা বললেন ১৯৯৮ সালের জানুয়ারির ২৩ তারিখের দিকে -- আমি তাঁকে উৎসাহ দেয়ার চেষ্টা করলাম। সেই্সাথে আমরা অন্যান্য ভাষাভাষী মানুষদেরকে একসাথে করে একটা সংগঠন তৈরি করলাম 'The Mother Language Lovers of the World' নামে।যে দশজন মানুষ নিয়ে সংগঠনটি তৈরি হয়েছিল তাঁরা হলেন --
Albert Vinzon(Mother Language : Filipino), Carmen Cristoba(Mother Language : Filipino), Jason Morin(Mother Language : English), Susan Hodgins(Mother Language : English),Dr Kelvin Chao(Mother Language : Cantonese),Nazneen Islam (Mother Language : Kachi), Renate Mertens(Mother Language : German), Karuna Joshi (Mother Language : Hindi), Rafiqul Islam(Mother Language : Bangla) এবং Abdus Salam(Mother Language : Bangla)।
এরপর ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের যে রাষ্ট্রদূত ছিলেন সেই কে এম শাহাবুদ্দিন সাহেবকে আমি ফোনে যোগাযোগ করি এবং তাকে ব্যাপারটা সংক্ষেপে জানাই। উনি বললেন যে আপনারা আমার কাছে চিঠিটা পাঠিয়ে দেন, আমি আমার দূতাবাসের সিল দিয়ে এটা জাতিসংঘে আনোয়ারুল করিম চৌধুরীর কাছে পাঠিয়ে দেবো। এরপর আমি রবার্ট ফাওলারকেও ফোন করেছিলাম যিনি জাতিসংঘে কানাডার রাষ্ট্রদূত।
রফিক ভাই তো বলেছেন যে আমরা তখন ইউনেস্কো ন্যাশনাল কমিশনে যে পাঁচটি দেশ সদস্য ছিল তাদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিলাম এবং সবার আগে হাঙ্গেরি এর পক্ষে ইতিবাচক উত্তর দিয়েছিল। এরপর ফিনল্যান্ডও আমাদের জানিয়েছে যে যদি অন্য কোনো দেশ এটার প্রস্তাব করে তাহলে তারাও এটা সমর্থন করবে। কিন্তু ভারত এবং কানাডা আমাদের জানিয়েছে যে তারা এখনও সিদ্ধান্ত নেয় নাই। এরপর আমরা বাংলাদেশের সাথে যোগাযোগ করি এবং নিশ্চিত করার চেষ্টা করি যেন ১০ই সেপ্টেম্বরের মধ্যে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবটি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যায় যেটা রফিক ভাই আপনাদের বলেছেন। ইউনেস্কোতে প্রস্তাব তোলার পর যে সমস্ত কারণে এটি আটকে যেতে পারত সেগুলো খুব সুন্দরভাবে হ্যাণ্ডেল করেছেন সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী, জনাব তোজা্ম্মেল হক বা টনি হক, ইখতিয়ার আহমেদ চৌধুরী প্রমুখরা। এখানে আরেকজনের নাম না নিলে নয় যিনি ছিলেন একজন অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল এবং ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারল -- কলিন এন পাওয়ার। এই ভদ্রলোক প্যারিসে বাংলাদেশের হাইকমিশন এবং শিক্ষামন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ থেকে যে ডেলিগেট গিয়েছিল তাদেরকে অনেক সাহায্য করেছিলেন। শেখ হাসিনাকেও আমি অনেক ধন্যবাদ জানাই কারণ উনি কিন্তু অনেক ফর্মালিটিজ বাদ দিয়ে অনেক দ্রুত কাজটি করে দিয়েছেন যাতে আমরা ডেডলাইনটি ধরতে পারি। এখানে একটা কথা আমি বলতে চাই -- ১৯৫২ সালে কিন্তু আমাদের জাতির Dough টা তৈরি হয়েছিল(কেক বানাতে হলে প্রথমে যেমন Doughটা তৈরি করতে হয় সেইরকম), ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সেই Doughটা থেকে কেক হয়েছে, ১৯৯৯ সালে ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হওয়াতে সেই কেকটাকে যেন একটু সাজিয়ে দেয়া হলো। যদি বাংলাদেশ না হতো তাহলে কিন্তু ২১শে ফেব্রুয়ারিকে এমন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো না। আমাদের দেশে বাংলা ছাড়াও আরও যে ৩৮টির মত ভাষা আছে সেগুলোর দিকে যদি আমরা যথাযথ যত্ন না নিই তাহলে কিন্তু 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' এবং শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি যথাযথ সম্মান আমরা প্রদর্শন করতে পারব না।
এখানে আরেকটি কথা বলি -- আমাদের সবার সিগনেচারসহ পিটিশনটা কিন্তু আমরা অনেক বড় করে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে পাঠিয়েছি যেন এটা করিডোরের দেয়ালকে শোভিত করে রাখে। এরপর আমরা ২০০১ এ বাংলাদেশ থেকে ঘুরে আসার পর কিন্তু আমরা জাতিসংঘের মহাসচিব, ইউনেস্কোর প্রধান সবার কাছে বিস্তারিত বিবরণ পাঠিয়েছি কিভাবে আমরা একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করি তার উপর -- বিভিন্ন দেশের শিক্ষামন্ত্রণালয়ের সাথেও আমাদের কিন্তু গত ৭-৮ বছর নিয়মিত যোগাযোগ ছিল এটা নিয়ে।
মুস্তাফিজ -- আমি এখানে মাতিসের স্কুলে যেয়ে ওর ক্লাস টিচারের সাথে কিন্তু এটা নিয়ে কথা বলেছি।
আবদুস সালাম -- হ্যাঁ, আমি এখানে বিভিন্ন স্কুলের দেয়ালে দেখেছি আমাদের অ,আ এর আদলে বিভিন্ন ভাষার বর্ণমালা লাগানো আছে।
মুস্তাফিজ -- আমাদের এখনকার প্রশ্ন শাহবাগ আন্দোলন নিয়ে। আমরা জানি ভ্যাংকুভারে শাহবাগের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে সমাবেশটি হয়েছিল আপনারা দু'জনই সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আপনাদের উপস্থিত থাকার কথা শাহবাগের আন্দোলনকারীরা জেনেছে -- জেনে অনুপ্রাণিত হয়েছে। আপনাদের অভিজ্ঞতা থেকে শাহবাগ আন্দোলন নিয়ে যদি কিছু
বলতেন।
আবদুস সালাম -- আমি নিজে কখনো রাজনীতি করিনি, কিন্তু আমি খুব আগ্রহ নিয়ে রাজনীতি অনুসরণ করি -- শুধু বাংলাদেশের না, সারা পৃথিবীর রাজনীতি। কারণ, আমি একজন বিশ্ব নাগরিক -- আমি বুঝতে চাই আমার চারপাশে কি হচ্ছে, কেন হচ্ছে? শাহবাগের আন্দোলন আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে যে আমাদের তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের আসল ইতিহাসটি জানতে পেরেছে। বিভিন্ন সময় আমাদের দেশে ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা হয়েছে -- যেটা কখনোই উচিত ছিল না -- তারপরও তারা প্রকৃত ইতিহাসটি জেনেছে। আমি তাদেরকে স্বাগত জানাই-- ৪২ বছর পরে হলেও আমাদের দেশের মানুষ জেগে উঠেছে। শুধু কিছুজন ছাড়া-- যারা জানে যে তারা বিভ্রান্তিতে আছে; জেনেশুনে ভুল একটা জিনিস ধরে আছে। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি কোনো দেশের জন্য কোনোদিন কোনো কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না -- এতে মানুষে মানুষে শুধু হানাহানিই হয়; অন্য মানুষকে ছোট করে দেখা হয়। আমরা দেখেছি ইসলামের নামে আমাদের দেশে জামাতে-ইসলামী একটি চিহ্নিত স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি হয়েও কিভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। তারা যে কত বিষাক্ত হতে পারে ১৯৭১ তারা সেটা দেখিয়েছে -- এখনও দেখাচ্ছে। কোনো একজন মানুষকে হত্যার জন্য আমাদের দেশে কারও যদি ফাঁসি হতে পারে -- তাহলে এই জঘন্য অপরাধীদের ফাঁসি হবে না কেন? শাহবাগের ব্লগারদেরকে নাস্তিক আর ধর্মবিরোধী হিসেবে আখ্যা দিয়ে তারা একইভাবে তাদের ঘৃণ্য উদ্দেশ্যে ধর্মকে ব্যবহার করতে চা্চ্ছে যেমনটি তারা একাত্তরে করেছিল।আমি জামাতের প্রতিষ্ঠাতা্ আবুল আলা মওদুদীর ছেলের সাক্ষাৎকার দেখেছি যেখানে তিনি বলেছেন যে মানুষ যেমন করে ড্রাগস থেকে নিজের ছেলেমেয়েকে দূরে সরিয়ে রাখে মওদুদীও তেমন করে তার নয় ছেলেমেয়েকে সব সময় সে জায়গা থেকে দূরে সরিয়ে রাখতো যেখানে সে জামাতের ডকট্রিন প্রচার করত। তাই আমি মনে করি বাংলাদেশে যারা জামাতে ইসলামী করছে তারা জানে না তারা বিষাক্রান্ত হয়ে আছে -- তারা আসল ইসলাম থেকে অনেক দূরে আছে এবং তাদেরই উচিত আসল ইসলামটা ফলো করা। অন্যদেরকে নাস্তিক বলার অধিকার তাদের নাই, অন্যদেরকে মুরতাদ বলার অধিকার তাদের থাকতে পারে না -- ঠিক যেমন আমার কোনো অধিকার নাই কাউকে মুরতাদ বলার; এটা আল্লাহ বিচার করবে। আমার মূল বক্তব্য হচ্ছে -- রাজাকারদের বিচার বকেয়া হয়ে আছে ৪২ বছর ধরে -- এদের বিচার হওয়া উচিত এবং সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত যাতে করে দেশের মানুষকে যেন আর বিভ্রান্ত না করা যায় এবং দেশে যেন শান্তি আসে। কারণ, তারা তাদের ভুল ডকট্রিন দিয়ে দেশকে বিভক্ত এবং পোলারাইজ করে ফেলছে এবং দেশকে উন্নতির দিকে এগিয়ে যেতে দিচ্ছে না।
রফিকুল ইসলাম -- শাহবাগ আন্দোলনের সাথে পূর্ণ একাত্মতা ঘোষণা করে আমি এখানে হিটলারের অন্যতম সহযোগী আইখম্যানের বিচারের কথা বলব। আমরা জানি আর্জেন্টিনায় পালিয়ে থাকা আইখম্যানের বিচার ইসরাইল কি দৃঢ় সংকল্পতার সাথে করেছিল। সেই উদাহরণ টেনে আমি এখানে তিনটি কথা বলব -- ১. গণহত্যা,গণধর্ষণের মত জঘন্য মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত রাজাকারদের সর্বনিম্ন শাস্তি যেন মৃত্যুদণ্ড হয়, ২. রাজাকারদের সম্পত্তি যেন বাজেয়াপ্ত করে সরকারিকরণ করা হয় এবং ৩. কোনো রাজাকারকে যেন বাংলাদেশের মাটিতে কবর দেয়া না হয়। আমার ছোট ভাই স্বাধীনতা যুদ্ধে জীবন দিয়ে গেছে, আমার জীবনের অনেক বড় গর্ব আমি স্বাধীনতাযুদ্ধ করতে পেরেছি, আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে ধন্যবাদ জানাই আমি একটি সু্স্থ, সুন্দর জীবনযাপন করতে পেরেছি। গত দু'বছর ধরে যদিও একটু শরীর খারাপ যাচ্ছে -- আমার ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়েছে, ১৯ টি কেমোথেরাপি দিতে হয়েছে, আমার বোন রিনা বাংলাদেশ থেকে এসে তাঁর বোন-ম্যারো আমাকে ডোনেট করেছে যেটি দিয়ে আমি এখন বেঁচে আছি। আমি এখন কানাডিয়ান, কিন্তু আমি বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমি প্রার্খনা করি বাংলাদেশের মানুষ যেন সুখে, শান্তিতে আর ন্যায়পরায়ণতার ভিত্তিতে থাকতে পারে। বিকৃত ইতিহাস থেকে মুক্ত হয়ে যেভাবে তারা চায় সেভাবে যেন থাকতে পারে এবং তরুণ প্রজন্মের যে নব জাগরণ হয়েছে তাকে অন্তরের অন্ত:স্থল থেকে সাধুবাদ জানাই।
বাদিক থেকে মুস্তাফিজ ভাই, রফিকুল ইসলাম, আবদুস সালাম এবং আনিকা
একুশে পদকের সাথে রফিক ভাই এবং সালাম ভাই
একুশে পদকের সম্মাননা পত্র
মন্তব্য
খুব ভাল ১টা কাজ হয়েছে এটা, সাথে থাকতে পারলে খুব খুশি হতাম।
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
আপনি সবসময় আমাদের সাথেই আছেন এবং আশা করি আপনি নিজেও সেটা জানেন
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
সালাম ভাই ও রফিক ভাই, অসীম শ্রদ্ধা আর ভালবাসা আপনাদের জন্য।
মুস্তাফিজ ভাই, রাজিব ও আনিকা, আপনাদের সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ এই সাক্ষাৎকারটির জন্য।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
অনেক ধন্যবাদ জাহিদ ভাই।
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
ধন্যবাদ দিয়ে আনিকা আপু আর মুস্তাফিজ ভাই-১ ও ২ কে ছোট করবো না।
সালাম ভাই ও রফিক ভাইকে অসীম শ্রদ্ধা।
__________
সুপ্রিয় দেব শান্ত
ধন্যবাদ শান্ত ভাই। আছেন কেমন?
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
'৫২-এর রফিক-সালামের কণ্ঠ শোনা দূরে থাক, তাঁদের একটা ভালো ছবি পর্যন্ত দেখতে পাইনি। আজ '৯৯-এর রফিক-সালামদের কথ্য-ইতিহাস পড়লাম, ছবি দেখলাম। তাঁদের কণ্ঠ শুনতে না পেয়ে মন ভরছে না। সাক্ষাতকারটির অডিও বা ভিডিও আপলোড করার দাবি জানাচ্ছি।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ভিডিয়ো করা হয়েছে মাতিসের কম্প্যাক্ট জি৯ দিয়ে। পরবর্তিতে উনাদের নিয়ে আবারো সারাদিন কাটানোর কথা, ভিডিয়ো গুলো সেসময়ই দেখা যাবে। আর অডিয়ো ফাইল ডাউনলোডের ব্যবস্থা হলেই দিয়ে দিবো।
আপাততঃ উনার কিছু কথাবার্তার ভিডিয়ো দিলাম।
...........................
Every Picture Tells a Story
পাণ্ডবদা,
মুস্তাফিজ ভাই তাঁর ভয়েস রেকর্ডারের ক্যাবল খুঁজে পেলে হয়ত সাক্ষাৎকারের অডিও ক্লিপটি আপলোড করা যাবে। হাসান মামুন ভা্ই আমাকে তাঁদের দুইজনের সাক্ষাৎকারের একটি ভিডিও ক্লিপ পাঠিয়েছেন যেটি একুশে ফেব্রুয়ারি 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে ঘোষিত হওয়ার পর পরই ধারণ করা হয়েছিল --
http://www.youtube.com/watch?v=PEq_WYDYlo0&feature=youtu.be
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
"আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো" গানটাকে কি সুর অবিকৃত রেখে বিশ্বের নানা ভাষায় অনুবাদ করে ছড়িয়ে দেয়া যায়? ... ... (আমরা করব জয়- গানটা কিন্তু একই সুরে সার্কের সাত দেশের সাত ভাষায় চালু আছে)... ... ... সরকারী ভাবে না হলে অন্তত আমরা যে যে ভাষা জানি তা দিয়ে শুরু করা যেতে পারে কি??
ধন্যবাদ, খুব ভালো একটি আইডিয়া দিয়েছেন কিন্তু। এবারের একুশে ফেব্রুয়ারিতে তো হিমু ভাই চাকমা, মণিপুরী আর রাখাইন ভাষায় গানটি গেয়ে আপলোড করেছেন। আশা করি তিনিসহ সচলায়তনের অন্য গায়করা এ ব্যাপারে এগিয়ে আসবেন ।
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
ধন্যবাদ, রাজিব ভাই... আইডিয়াটা আসলে বছর ৬ আগে আব্বা দিয়েছিলেন... এতদিন এমন প্লাটফর্ম খুজে পাইনি যেখানে বললে কাজ হতে পারে...
আর চমৎকার... এটা জানতাম না... হিমু ভাই কে
(আবারও হিমু ভাই ও অনিকেত দা'র স্মরণ নিচ্ছি... ) আর আমরা যে যা জানি তা দিয়ে কি অনুবাদের কাজটা শুরু করা যায়?? আপাতত নাহয় স্প্যানিশ/পর্তুগীজ/জার্মান/মান্দারিন/ফ্রেঞ্চ এমন বহুল প্রচলিত কিংবা জাতিসংঘের দাপ্তরিক ৬ টা ভাষা দিয়ে শুরু হোক... উইকি'র সংশ্লিষ্ট ভুক্তিতেও বিভিন্ন ভাষায় গাওয়া (আশা করি অচিরেই হয়ে যাবে ) গানের লিঙ্ক জুড়ে দেয় যায়
সালাম ভা্ই লেখাটি পড়ে আরও কিছু তথ্য যোগ করে আমাকে নিচের ইমেইলটি পাঠিয়েছেন --
Dear Rajib,
Thank You very much for the attachment. Hard work on the part of all three of you and which deserves lot of appreciation from me and Rafiq bhai.
May I point to a correction here about my Late father Dr. Shamshul Alam Chowdhury of Chittagong that he was in 1971 an EX Awami Leaguer and was not active in politics when he was picked up and taken to Chittagong Circuit House during the war.
If I may be excused to two omissions that I made in the interview and IF ONLY POSSIBLE may KINDLY be added as an addendum:
A) The Plaque sent out to United Nations, New York apart from the copy petition signed by the Mother Language Lovers of the World to UNESCO also contained the copy captioned: ‘Submission of Draft Resolution regarding declaration of an International Mother Language Day to be observed on 21st Feb every year throughout the world’ . REF BNCU/ED-25/99/424/Edn Dated 09.09.1999 tabled by Bangladesh signed by Prof. Kafiluddin Ahmed, the then Secretary of Bangladesh National commission for UNESCO.
Pls note this was done to highlight the fact that it was Bangladesh that submitted this Resolution.
B) Our organization on learning that the proposal was submitted on Sep 09th, 1999 did on their part also sent out a letter on Sep 09, 1999 to Ms. Vigdis Finnbogadotir, the then UNESCO Goodwill Ambassador for Linguistic diversity and Multi Lingual education to consider Bangladesh’s official proposal and solicited her optimium help for the consideration of that particular date.
I AM EXTREMELY SORRY FOR THE INCONVENIENCE THAT IT MAY HAVE CAUSED. Just thought it was important.
Thanks for your time.
With kind regards to all
Abdus Salam
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
সেটুকু যোগ বা পরিবর্তন করতে চান সেটুকু বাংলা করে এখানে বা contact@sachalayatan বরাবর ইমেইল জানালেই হবে।
সশ্রদ্ধ সালাম ।
তাদের জন্য শ্রদ্ধা রইলো।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
রফিকুল ইসলাম, আবদুস সালাম সহ তাদের দলের বাকি ৮জন মানুষের জন্য শ্রদ্ধা!
এবং আপনি সহ মুস্তাফিজ ভাই এবং আনিকা মাহমুদ এর জন্য
অনেক ধন্যবাদ
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
তাদের জন্য অনেক অনেক শ্রদ্ধা।
আপনাদের ধন্যবাদ।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
অনেক ধন্যবাদ
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
এই সাক্ষাৎকারটা জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাদেরকে।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ তাসনীম ভাই
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রূপকার রফিকুল ইসলামের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর প্রতিষ্ঠিত সংগঠন মাদার ল্যাংগুয়েজ লাভার্স অব দ্য ওয়ার্ল্ড সোসাইটির অনুষ্ঠানে তাঁকে নিয়ে লেখা কবিতা 'The Portrait of a Gentleman' আবৃত্তি করছেন তাঁর সহযোদ্ধা এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অন্যতম রূপকার জনাব আব্দুস সালাম ---
https://www.youtube.com/watch?v=g8ljuNbzHOE
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
নতুন মন্তব্য করুন