ঘটনার সূত্রপাত আমার স্ত্রী এর স্নাতোকত্তর লেখাপড়ার ইচ্ছা থেকে। হুট করেই আমাকে বিপদে ফেলে দিয়ে একদিন তিনি গবেষণা সহযোগী হিসেবে স্নাতকত্তোর পড়ার বৃত্তি (scholarship: কেন জানি ঋ-কার দেখাচ্ছেনা!) যোগাড় করে ফেল্লেন। এদিকেতো আমি পড়ে গেলাম মুশ্কিলে, সারা জীবন (মানে ছাদনাতলায় যাবার আগে যতদিন জীবিত ছিলাম) মা 'মাস্টার্স মাস্টার্স ' করে প্রাণাতিপাত করলেও আমি নিজ লক্ষে অবিচল ছিলাম : স্নাতক জীবন শেষ, তো পড়াশোনাও শেষ। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বেশ পছন্দসই একটা চাকুরীতে ঢুকে পড়েছিলাম বলে ধরেও নিয়েছিলাম এ জীবনে আর হয়ত পড়াশোনার শিকল আমায় পড়তে হবেনা। কি্ন্তু বিধি বাম।
প্রাচীনকালে জ্বালাময়ী মুনি ঋষিরা বিভিন্ন আহ্লাদ-আব্দার নিয়ে যখন ধ্যান করে ব্রক্ষা/শিবের আসন কাঁপিয়ে দিতেন, তখন একমা্ত্র নারী জাতিরই ক্ষমতা ছিল সেই ধ্যান ভাঙানোর। সেই সব অন্যায্য আব্দার মেটানোর ভয়ে, ধ্যান ভাঙাতে মেনকা রম্ভারা পৃথিবীতে প্ররিত হলেই 'ধ্যানের গুষ্টি কিলাই' বলে তাঁরা সব সাধনা জলাঞ্জলী দিতেন। সুতরাং আমিতো কোন ছাড় ! আমিও প্রস্তুতি শুরু করে দিলাম বউ্য়ের পিছু পিছু মোটকুদের দেশে যাবার।
বার বার মোটকু মোটকু করছি বলে সবাই আবার ভেবে বসেন না যে আমি মানুষটা ক্ষীনকায়, দৈর্ঘ্যে শাহেনশাহের চেয়ে বেশী হলেও প্রস্থে কিছুমাত্র কম নই বরং নজরুল ভাইয়ের চেয়ার ভাঙ্গার পরে চেয়ারের দু:খে বেটা একটু শুকায় গেসে। যাই হোক মূল গল্পে আসি - সকল কাগজপত্র তৈরী করার পরে মোটকুদের দেশে (বার বার শুনতে কেমন বিরক্তিকর লাগছে! এখন থেকে বলবো মোটুদেশ) প্রবেশাধিকারের জন্য আবেদন করলাম এবং জানতে পারলাম তাঁহারা আগামী পাঁচদিন পর আমার সাথে দেখা করতে সম্মত হয়েছেন। এ ঘটনা পরিচিত মহলে জানাজানি হবার পরেই পরিচিত পরিজনেরা বিভিন্ন বিচিত্র পরামর্শ দেওয়া শুরু করল যেমন :
১। " বিয়ের ছবি নিয়ে যাবা, একটা বিয়ের একটা বউভাতের। এমন ছবি নিবা যাতে তোমারে চেনা যায় আবার বউয়ের গহনাও দেখা যায়। ও তোমাদের তো আবার এংগেজমেন্ট ও হইসে। ভাল, আরেকটা প্রোগ্রাম বাড়লো। ওইটার ও ছবি নিবা।"। 'গায়ে হলুদ নিবোনা?' আমি নির্দোষভাবে প্রশ্ন করলাম। "হ্যা, নিতেও পার তবে তেমন ইমপর্টেন্ট না। বিয়ে বৌভাত দেখলেই কাজ হয়ে যাবে" -- কে জানত এমন মুশকিলে পড়তে হবে? তাহলেতো বেটাদের বিয়েতেই দাওয়াত দিতাম।
২। "ভাল কাপড় জামা পরে স্যুটেড বুটেড হয়ে যাবা। আর শেভ করে যাবা, তোমার তো শেভ করার কোন নাম গন্ধ দেখিনা। এই রকম দাড়ি দেখলে এক কথায় তোমারে তালেবান বানায় দিবে" -- এই কথা অনেকেই বলেছেন, হার বিবেচনা করলে এই উপদেশ প্রথম হতো।
৩। "তোমাদের যা যা সম্পত্তি আছে সব দলিল নিয়ে যাবা। তোমার প্লাস তোমার আব্বা আম্মার ব্যাংক স্টেটমেন্ট নিয়ে যাবা। তুমি জানি কত বেতন পাইতা? বেতনের একটা সার্টিফিকেট নিয়ে যাবা " -- বেতনের ঘটনা আসায়, একটা ছোট ঘটনা মনে পড়ে গেল। আমরা চাকুরীতে ৪ সহপাঠী একত্রে ঢুকেছিলাম সমান বেতনে। যখন বেতন বাড়ানোর সময় এলো তখন উর্ধতন কর্মকর্তা যিনি কিনা বেতন নির্ধারনের দা্য়িত্বে ছিলেন আমাকে আলাদা করে ডেকে নিয়ে বল্লেন আমার কাজে কর্মে তাঁরা এতই খুশী যে আমার বেতন বাকী ৩ জনের তুলনায় বেশী বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতরাং আমরা যেন বেতন নিয়ে নিজেরা আলোচনা না করি আর তাছাড়া "বেতন নিয়ে আলোচনা করা আর সেক্স লাইফ নিয়ে আলোচনা করা একই ব্যপার"। আমার অবশ্য এখন পর্যন্ত ধারণা উনি বাকী ৩ জনকেও একই সবক দিয়েছিলেন।
৪। এইসব আগডুম বাগডুম কথা লিখতে যেয়ে ৪ নং টা প্রায় ভুলেই গেছিলাম, তাই খানিকক্ষণ অপেক্ষা করে মনে করত হল। "যা কাগজ পত্র নিয়ে যাবা ওরা যদি দেখতে নাও চায় তাও দেখাবা, বলবা এক্সকিউজ মি, ডু ইয়ু ওয়ান্ট টু সি মাই ওয়েডিং পিকচার?" -- ভাবখানা এমন আমি ইংরেজী পারিনা মুখস্থ করে যেতে হবে!
যত্তসব আজাইরা কথা। তবে বলাই বাহুল্য আমি প্রায় সব উপদেশই মেনে চলেছিলাম। শুধু ৪নং আর জামা কাপড় বা শ্মশ্রু এর বেলায় ছাড়া। খুবই সাধারন নিত্যদিনের পরিহিত জিন্স আর টি-শার্ট পড়েই গেলাম সাক্ষাৎকার দিতে এবং সৌভাগ্য বা দূর্ভাগ্যক্রমে ২-৩ মিনিট কথা বলেই জানতে পেলাম আমি মোটুদেশের প্রবেশাধিকার পেয়ে গেছি। কোন কাগজপত্রই দেখানো লাগলোনা। কথপোকথনের এক পর্যায় জিজ্ঞাসা করেছিলো "তুমি কি বউ এর কাছে যাচ্ছ নাকি পড়তে যাচ্ছ?" উত্তরে বলেছিলাম "পড়তেই যাচ্ছি তবে, বউ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে বলে, আমিও এইখানেই যাচ্ছি নইলে হয়ত অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয় পছন্দ করতাম" । উত্তরটা দেবার পরে নিজেরে খুব বুদ্ধিমান লাগছিলো তাই চামে দিয়া আপনাদের জানায় দিলাম ।
অবশেষে দুবাই মার্কেটের বদনা (আমার এক সহপাঠী সেদিন আমায় জিজ্ঞাসা করেছে কেন আমি গাছে পানি দেবার যন্ত্র শৌচাগারে রেখেছি) আর বঙ্গবাজারের পোশাক নিয়ে একদিন উড়াল দিলাম মোটুদেশের পানে। দেশটার নাম কেন মোটুদেশ সেটা নামার পরে উপলব্ধি করেছিলাম আগামী পর্বে সে নিয়ে চাপা মারা হবে।
পুনশ্চ: মোটুদেশে যাওয়া নিয়ে কোন সমস্যার সম্মুখীন হতে না হলেও, ওদের সাক্ষাৎকার নেবার দূর্গে প্রবেশ করতে বিস্তর ঝামেলা পোহাতে হয়েছিলো। পকেটে মুঠোফোন এবং সামান্য একখানা পেন ড্রাইভ থাকার কারণে জানতে পারলাম এই অত্যাধুনিক মরণাস্ত্রদ্বয় সাথে নিয়ে প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে নিষেধ এবং নিরাপত্তারক্ষীদের কাছে স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি গচ্ছা রাখাও মোটামুটি হারাম, তাই আমাকে নিকটস্থ ভাগাড় দেখিয়ে বলা হল "এখানে ফেলে যান, ফিরে এসে যদি পান তাহলে নিয়ে নিয়েন"। আমি জিজ্ঞেস করলাম "আর না পেলে?" উত্তরে শুনলাম "এখন যদি কেউ ওখান থেকে নিয়ে যায় তাহলে আমরা কি বা করতে পারি?" -- দু:খটা এখানেই। সবাই এতো উপদেশ দিলো কিন্তু আসল উপদেশখানাই কেউ দিলনা, তাই মোটুদেশে গমনেচ্ছু সকলের জন্য আমার উপদেশ - " ভুলেও কেউ ব্যপক বিধ্বংসী অস্ত্র নেবেন না।"
মন্তব্য
ভালো লাগলো বস। পরের পর্বের অপেক্ষায়
ধন্যবাদ, তবে অপেক্ষা দীর্ঘায়িত হবার আশংকা আছে
-হোমওয়ার্ক ফালায় কি ব্লগিং করেন!
-
-লেখা মজারু হইছে।পরের পর্ব তাড়াতাড়ি দেন!!
---------------------
আমার ফ্লিকার
আপনে পচুর বুদ্ধিমান দেখা যায়
পুচ্ছে বেঁধেছি গুচ্ছ রজনীগন্ধা
হে হে, আবার জিগায়। হাসির গল্প শুনলে গুনে গুনে তিনবার হাসি
যদিও সেই একই গল্প, তবুও ভালো লাগলো আপনার লেখনীর গুনে। নিয়মিত লিখতে থাকুন।
ধন্যবাদ, চেষ্টা করবো।
ব্যাপক মজারু পোস্ট, হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে গেছে
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
অশেষ ধন্যবাদ ডাক্তার সাব্
অনেক মজার একখান লেখা...ভীষণ আমোদিত হইলাম
গোবেচারা টাইপের একটা মাইয়া বিয়া কইরা দেশেই খায়া পইরা বাচঁতে চাই ভাই...আর মোটুদেশের গল্প শোনানোর জন্য আপনারা তো আছেনই
চোখগুলো বড় বড় করে তাকিয়ে আছে পরের গল্পটা দেখার আশায়
ভন্ড_মানব
ভাইরে মাইয়ারা যদি গোবেচারাই হত, তাহলে বিবাহিতরা আর বেচারা হইতনা। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, পরের পর্ব টেরিফিক জ্যামে পরসে
বিয়াপক মজা পাইলাম। আপনেতো দেখা যায় খুবই উচ্চমার্গীয় বুদ্ধিমান ব্যাক্তি।
আমার 'পরিবার'ও উচ্চশিক্ষার জন্য ভিনদেশে গমন করার অভিপ্রায় প্রকাশ করছে। ইয়া মা'বুদ, কই যে যাই। আমি ধ্বংসাত্বক কথা কইছি দেইখা আমারে থ্রেট দিছে যে আমারে বলে লয়া যাইবোনা !!!
---------------------------------------------------------------------
সকলই চলিয়া যায়,
সকলের যেতে হয় বলে।
==========================================================
ফ্লিকার । ফেসবুক । 500 PX ।
পড়াশোনা কেমন চলছে সাফি ভাই?
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
আপনার লেখা পড়ে মজা পেলাম অনেক।
ভিসার জন্য গিয়ে সবারই নানা অদ্ভুতুড়ে অভিজ্ঞতা হয় দেখছি। এই নিয়ে মন্তব্য না করে বরং একটা গোটা পোস্টই দেবো'নে।
অপেক্ষায় রইলাম পাঠুদা।
ভালো লাগছে, পরের পর্ব দেন জলদি।
দিতাছি, লেকিন আপনিও নাম দেন জলদি
সাফি ভাই আপনার লেখা পড়ে ব্যাপক মজা পাইলাম , পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
-----------------------------------------------------
ছিন্ন পাতার সাজাই তরণী, একা একা করি খেলা ...
ছিন্ন পাতার সাজাই তরণী, একা একা করি খেলা ...
ধন্যবাদ প্রজাপতি আফা
তুই ও কইলাম ভালোই শুকাইসোস!
জোশ লিখসোস।
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
হ দোস্ত বুদ্ধি ভালা, দুজনেই দুজনরে কমু শুকাইসি। অত:পর সুখে শান্তিতে খাওন দাওন চালায়ে যামু
গ্রেট অ্যাসেস ফার্ট এলাইক
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
- বস, আপনের পরিবারের কোনো ছোট বইন নাই? অটকুমটকু যেকোনো দেশে থাকলেই হৈলো। চাট্টিবাট্টি গোল কইরা এনশাল্লাহ, রওনা হয়া যামু বাদ ফযর।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
হেহে ধুগোদা, স্বভাব যায়না মলে, শালিতো আছেই লেকিন আধি ঘরওয়ালির জন্য আমি একাই মাশাল্লাহ
অতিশয় রসালো গল্প; গোগ্রাসে গিলিলাম।
ধন্যবাদ যানবেন।।
সাফি ভাই, কবে বিবাহ করলেন, কবে বৈদেশ গেলেন, তার কিছুই জানলাম না ( আপনার মুখ থেকে)। নিদেন পক্ষে বিয়ের খাওয়াটা তো পাওনা আছে।
তাই পোস্ট ভালো লাগা সত্বেও আপনাকে ব্যাপক মাইনাস।
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
আমিতো জানতাম সবজান্তা সবই জানে
ভাই রে আমার ওই দেশের ভিসা প্রাপ্তির কাহিনীও কম করুন না। দুই বছরে শালারা মোট ১৫ বার (১৬ ও হতে পারে) ওই লাল দুর্গের তাওয়াফ করাইছে। ওই রকম এলেম থাকলে এই নিয়ে দুই একটা রামায়ণ মহাভারত রচনা করে ফেলতাম।
শুরু করে দেন আবির ভাই, বিন্দু থেকে সিন্ধু হবে
আমি কিন্তু আমার ভিসাকাহিনী লিখে ফেলেছি, আপনার ২য় পর্ব আর এলো না!
আপনারটা পড়ে ফেলেছি, আমারটা সবে রওনা দিলো দুদন্ড সবুর করলেই পেয়ে যাবেন
কই? এখনও তো পরের পর্ব এলোনা!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
ঢাকায় যেয়ে জ্যামে পড়সে, আগামী উইকএন্ডেই পৌছে যাবে
কেন রেট করতে পারিনা? ব্যাপক অন্যায় (
অদ্বিতীয়
লেখা পছনৃদ হইছে (আবার জিগায়! )
অদ্বিতীয়
আপ্নেও আছেন দেখি!
সাফি ভাই লেখা তো সেই রকম,হাসি আর থামে না আমার
উত্তল দর্পণ
হা হা!
খুবই মজা পেলাম।
একটানে পড়ে গেলাম।
ভাল আছি, ভাল থেকো।
ভাল আছি, ভাল থেকো।
ধন্যবাদ মাশীদ আপু এবং উ্ত্তল দর্পণ
নতুন মন্তব্য করুন