১।
গ্রামে নতুন চেয়ারম্যান এসেছেন। উন্নয়নের জোঁয়ার বইয়ে দেবার প্রতিশ্রুতি নিয়ে। উন্নয়নটা নিজের না গ্রামের তা এখনও বোঝা যাচ্ছেনা। এমতাবস্থায় তিনি আবেদন পাঠালেন উপরমহলে - 'গ্রামে বিশুদ্ধ জলের বড়ই অভাব তাই একটা পুকুর খোড়া খুবই প্রয়োজন। সুতরাং অনতিবিলম্বে পুকুর কাটার মতন প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেওয়া হোক।' সরকারি অফিস, তাই সহজে কিছুই হয়না, চেয়ারম্যান সাহেব নিজেই দৌড়াদৌড়ি করে, এদিক ওদিকে চা-পানি খাইয়ে, টেবিলের তলা দিয়ে কিছু ডান হাত থেকে বাম হাতে পাঠিয়ে বরাদ্দ আনার ব্যবস্থা করলেন। গ্রামের লোক বলে সাধু সাধু।
২।
বছর শেষে বড়কর্তা এলেন পরিদর্শনে। চেয়ারম্যান সাহেবের বাড়িতে বিরাট আয়োজন। বড়কর্তা কাজ পাগল লোক। আগে কাজ তারপর অন্যকিছু। চেয়ারম্যানের সাথেই বেরোলেন এলাকার উন্নয়নকর্ম দেখতে। সামনে মাঠ দেখান চেয়ারম্যান সাহেব- 'এই দেখেন স্যার, এইযে ঠিক এইখানেই পুকুর কাটসিলাম'।
'পুকুর কোথায়? এখানে তো ধু ধু মাঠ' - বিস্মিত বড়সাহেব বলে ফেলেন।
হেহে করে বিগলিত হাসি হেসে হাত কছলাতে কছলাতে চেয়ারম্যান সাহেব এগিয়ে আসেন বড়সাহেবের দিকে, বরাদ্দের তালিকায় ইশারা করেন - 'স্যার ৫ নাম্বারে দেখেন, এলাকার মশক সমস্যার সমাধানকল্পে, মাঁজা পুকুর ডোবা ভরাট প্রকল্প। মশার এমন উৎপাত হয়েছিল স্যার সে কি বলব। ঘরে ঘরে ডেঙ্গু ম্যালেরিয়া। গ্রামবাসীর দুঃখের কথা চিন্তা করে পুকুর ভরাট করে ফেললাম। আগে মানুষের স্বাস্হ্য স্যার, তারপরে অন্যকিছু। কি বলেন?'
'না না তাতো বটেই, তাতো বটেই' - বলতে বলতে ঘড়ি দেখেন বড়সাহেব। এক জায়গায় এতো সময় নষ্ট করলে হবেনা, আরও কয়েক জায়গায় যেতে হবে। বড়সাহেবকে ঘড়ি দেখতে দেখেই শশব্যস্ত হয়ে ওঠেন চেয়ারম্যান সাহেব - 'স্যার আমার বাড়িতে কিন্তু দুটা ডাল ভাত খেয়ে যেতে হবে, নইলে স্যার আমার মিসেস স্যার খুব কষ্ট পাবে'।
নির্মল আনন্দে ভরে যায় বড় সাহেবের মুখ। 'এসবের আবার কি দরকার ছিল!' বলতে বলতে এগোন চেয়ারম্যান সাহেবের বাড়ির দিকে। ফেরার পথে পাজেরো গাড়ির পেছন ভরে ওঠে চেয়ারম্যান সাহেবের ক্ষেতের কলাটা মূলোটা দিয়ে। কপট রাগ দেখান বড়সাহেব 'চেয়ারম্যান সাহেব এসব কি করছেন, কি দরকার ছিল এতকিছুর? '
'না স্যার, আপনি এত কষ্ট করে আসছেন গ্রামে, আগের বারগুলাতেও দেখসি স্যার কেউ গ্রামে আসতে চায়না। আপনেরা স্যার এত কষ্ট করেন বলেই আমরা গ্রামের মানুষ দুটা খেয়ে পড়ে বেঁচে আছি।'
'সত্যিই তো!' এতক্ষনে একমত হন বড়সাহেব। পরিবার পরিজন ছেড়ে কি এই ধ্যাড়ধ্যাড়ে গোবিন্দপুরে পড়ে আছি। গাড়িতে শরীরটা এলিয়ে দেন। ড্রাইভারকে এসি আর রবীন্দ্রসংগীতের সিডি ছাড়তে বলেন। খাওয়াটা একটু বেশীই হয়ে গেছে- দুচোখ বুঁজে আসতে চাইছে। ভিতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস উঠে আসে - 'সরকারি চাকরিতে এতো কষ্ট!'
পরদিন রিপোর্ট লেখেন বড়সাহেব, 'চেয়ারম্যান সাহেব? - সাধু সাধু'।
৩।
এদিকে গ্রামের মানুষ অপেক্ষায় থাকে। একদিন পুকুর কাটানো হবে। গ্রামের মানুষের পানির কষ্ট কমবে। চেয়ারম্যান সাহেব নিজে দৌড়াদৌড়ি করে বড় অফিসে কাজ করে এসেছেন, বরাদ্দ এলো বলে।
৪।
উপরের গল্পটা সবার অনেকবার শোনা হয়ত। পুকুর চুরির গল্প। পুকুর চুরি প্রাচীন হয়ে গেছে। তাছাড়া সংবাদপত্রও এসেছে, ওরা হয়ত পুকুর না কাটলে দুকথা লিখে দিবে। তাই আমরা পুকুর ও কাটি তারপর ভরাট করি। প্লেনের গায়ে নতুন রং দেই আবার মুছি, আবার নতুন রঙ দেই। হাজার হলেও দেশে আর কোনো কাজ নেই। সরকারকে কিছু করতে হবেতো?
মন্তব্য
নতুন লোগোটা কিন্তু দারুণ হয়েছিল! আগেরটার সাথে খুব বেশী পার্থক্য ছিলনা। পটুয়া নতুন লোগোর বককে আমেরিকার ক্রেইন সারসের সাথে যে তুলনা দিলেন সেটা একেবারে ফেলা যায়না। আবার এটাও ঠিক যে আমাদের দেশের ইগ্রেটগুলোও অনেকটা ওরকমই।
আমি আসলে নতুন লোগো বা ডিজাইন/থিমের পক্ষেই ছিলাম। বিমানের বর্তমান যে ভাবমূর্তি সেখান থেকে নতুন করে যাত্রা শুরু করতে হলে সবকিছুই নতুনভাবে করাই বাঞ্চনীয় ছিল। সরকারি থেকে পাব্লিক লিমিটেড কোম্পানি হবার পরে লোগোর পরিবর্তনটা আমার কাছে এক্সপেক্টেড মনে হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কামরুল হাসানকে দিয়ে (পত্রিকান্তরে জয়নাল আবেদীন) লোগো করিয়েছিলেন বলেই আবার তাতে ফিরে যেতে হবে, এই ব্যপারটা দুঃখজনক।
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
মিয়া আমার লাগে কান্দন আর আপ্নে কিনা হাসেন?
হুমম আমারো আগের শোনা ।
খোমাখাতায় আপনার লিঙ্কু পড়ছিলাম , হায় শব্দটাই বের হইছিলো , আর কিছু না । এইগুলাই তো হয় । হয়ত হতেও থাকবে ।
_________________________________________
বোহেমিয়ান কথকতা
_________________________________________
ওরে! কত কথা বলে রে!
ভালো
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
আর কি বলার!
লক্ষভেদী লেখা
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে
খেলারামখেলেযালেখারামলিখেযাবেচারামবেচেযাদেখারামদেখেযা....
কিচ্ছু বলার নাই...
=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;
=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;
দেশের পতাকাবাহী বিমানসংস্থার গুনগতমান যখন রসাতলে তখন নাম-লোগো নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মাসে মাসে মন পরিবর্তন দেখলে আর হাসিও পায়না। এই সেদিনই না তিনি ঘটা করে এই নাম পরিবর্তন করলেন, তখন তো মনে হয়েছিল দেশে কোন শিল্পী-নকশাকার নেই।
আফসোস, এই দফায় বাংলাদেশ বিমানের নামটাও 'জয়-লাইন' বা 'পুতু-লেয়ার'এই জাতীয় কিছুতে পরিবর্তন করে নেয়া গেল না।
---
শোনা কথা, তাও বলি। নতুন লোগো লেগেছিল শুধু নতুন ভাড়ায় আনা বিমান চারটিতেই। সেই পরিবর্তনের দায়িত্ব ও খরচা বিমানের মালিকের ছিল। বিমানের গায়ে ছাপা ছাড়াও ব্র্যান্ডিং পরিবর্তনের সাথে আরো যে হাজারটা পরিবর্তন করতে হবে তার টেন্ডার জিতেছে যারা, তারা এতটাই কম দামে জিতেছে যে বিমান, বেবিচক (বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ) কে মোটা চাঁদা দেবার পরে হাতে আর টাকা বাকী নেই। তাই তারা দস্তানা ছুঁড়ে দিতে গিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর কাছে। প্রধানমন্ত্রী তাদের নাখোশ করার চাইতে পুরাতন লোগোতে ফেরত যাওয়াকেই যুক্তিযুক্ত মনে করেছেন।
"বলাকা" নামে এবং সৌন্দর্যে কখনও আমার কাছে একটুও খারাপ মনে হয় নাই।
আর কতদিন গেলে আমাদের মধ্যে এই নাম/লোগ পরিবর্তনের মানসিকতা পরিবর্তন হবে কে জানে!
বিমানের পুরনো লোগোটা আমার অনেক প্রিয়। প্রথম বার বিমানে চড়ার অনেক অনেক আগে সেই ছোটবেলায় ডায়রির পাতা ভরিয়েছিলাম বিমানের সেই লোগো এঁকে। সেটির প্রতি এই কারণে আমার রয়েছে এক অকারণ পক্ষপাত।
নাম পরিবর্তন, লোগো পরিবর্তন এসব নিয়ে তো আর কিছু বলার নেই। রাজনীতিবিদরা জনগণের চোখ দিয়ে কবে দেখতে শিখবেন আল্লাহ জানেন!
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
ভাল লাগলো
"ছুটলে কথা থামায় কে/আজকে ঠেকায় আমায় কে"
ছুটলে কথা থামায় কে/আজকে ঠেকায় আমায় কে
- আরেকটা জায়গায় নাম বদলের অনুশীলন চালু হলো আরকি!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
নতুন মন্তব্য করুন