"বিশ্বজিৎকে ছাত্রদল মেরেছে বস, খোঁজ নিয়ে দেখেন।"
"শুধু বিশ্বজিৎকে নিয়ে সবাই মাতছে কেন? ঐদিন তো আরো ৩জন মারা গেছে হরতালের সহিংসতায়। সুশীল/মানবতাবাদীরা শুধু বিশ্বজিৎকে নিয়ে পরে আছে কেন?"
"বিশ্বজিৎকে যারা মেরেছে তারা শিবির, ছাত্রলীগে ইনফিল্ট্রেট করেছে। ছাত্রলীগের বদনাম করতে।"
"ছবিতে একজন টুপিওয়ালা দেখা গেছে, ও শিবিরের সাথী। ভিড়ের মাঝে সে ছুড়ি মেরে গেছে, আর এর পর ছাত্রলীগ শুধু মেরেছে"
"ঠিক আছে আওয়ামী লীগ খারাপ, তাহলে চলেন আমরা জামাত বিএন্পিকেই ক্ষমতায় আনি - আপনারা তো তাই চান - যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করতে হবে তো"
"ঘটনার এত এঙ্গেলে ছবি কেন? নিশ্চয়ই এটা পূর্ব পরিকল্পিত, সরকারকে বিপাকে ফেলতে আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে একটা ইস্যু তৈরী হলো।"
"বলেছিলাম না? দেখেছেন তো ব্যাকগ্রাউন্ড। এই ছেলের পরিবার শিবির, ঐ ছেলে পড়েছে আলীয়া মাদ্রাসায়। বুঝেন তাহলে তারা কেমনে ফাঁসাইসে।"
বিশ্বজিৎ এর হত্যার পরে এই হলো মোটামুটিভাবে একদল ব্লগারদের বক্তব্য। বেশীর ভাগ বক্তব্যেই অবাক হয়েছি - হয়ত আরো দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশিত ছিল। বিশ্বজিৎ এর ক্ষেত্রে কোন দল কেন হত্যা করেছে এই হিসাব কী গুরুত্বপূর্ণ? একটা মানুষ মারা গেছে। প্রকাশ্য দিবালোকে, পুলিশ সাংবাদিকের সামনে তাকে কিছু অমানুষ পিটিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে। ঘটনার ২৪ ঘন্টার মধ্যে আমরা পত্রিকা মারফত এদের সবার নাম পরিচয় জানতে পেরেছি। এদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা কি খুব কঠিন? এরা যে দলের ই হোক, শাস্তি নিশ্চিত করা কি সরকারের দায়িত্বের মধ্যে পরেনা? সরকার এদের শাস্তি দেওয়ার উদ্যোগ নিলে এরা শিবির বা দলই হোক আর লীগই হোক, সরকার ভাবমূর্তি তাতে বাড়ে বৈকি কমে না। এই পুরো ঘটনা জামাত শিবির সাজালে, বলতে হবে তারা পুরোপুরি সফল। ঘটনার মোটামুটি পুরো সময়টার ছবি আছে, ভিডিও আছে। হত্যাকান্ড তাদের পরিকল্পিত হোক না হোক, এর খবর/ছবি/ভিডিও ছড়িয়ে দিতে তারা বিন্দুমাত্র সময়ক্ষেপন করেনাই। সেই ছবি/ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়া ব্লগ/ফেসবুকের মাধ্যমে সবাই দেখেছে। বিশ্বজিৎ এর দৌড়ে পালানোর চেষ্টা, বাঁচার আকুতি, অবাক দৃষ্টি বেশীরভাগ মানুষকেই ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছে। কিন্তু খুনীদের আপাত পরিচয় তারা ছাত্রলীগার, এই পরিচয়ের কারণেই কি মানুষ এত ক্ষুব্ধ হচ্ছে? নিশ্চয়ই না। তাদের আসল পরিচয় তারা সবাই খুনী। আর এই খুনের বিচার করার দায়িত্ব সরকারের। এত ছবি ভিডিও, প্রতক্ষ্যদর্শী থাকতে এই খুনের বিচার হতে আর কী প্রমাণ করা লাগে? আমাদের দেশে মৃত্যু এতই সুলভ, মৃতু্য এখন আর আমাদের নাড়া দেয়না। বিশ্বজিৎ এর হত্যার ছবি ভিডিও না দেখলে - সেও ঐদিনে নিহত আরো অনেক "সাধারণের" মাঝেই হারিয়ে যেত - আমি নিশ্চিত।
আমরা একটা ক্রান্তিকাল পার করছি। এই সরকারের মেয়াদের আছে মাত্র ১ বছর। জামাত শিবির মরিয়া হয়ে গেছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে। আর তাই পদে পদে তাদের ষড়যন্ত্রের জাল যে বুনছে তারা তাতে কোন সন্দেহ নাই। সরকারকে বিপদে ফেলার প্রতিটা সুযোগ তারা নিজেদের কাজে লাগাতে চাইবে, বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য যতটা তাদের সাধ্যে কুলাবে ততদূর যাবে। কিন্তু দিনশেষে ট্রাম্পকার্ড সরকারের হাতেই, সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে এই বিচারের ম্যান্ডেট নিয়ে। তাই বিচার থেকে সরে গেলে চলবেনা বরং আরো কঠোর হতে হবে। ছাত্রলীগের গুন্ডাদের অথবা ছাত্রলীগ নাম ধারী গুন্ডাদের যদি সরকার আশ্রয়/প্রশ্রয় দিতে চায়, সন্দেহ নাই তাতে নিজের অবস্থান আরো নাজুক হবে। সরকার পরিবর্তন হলে এই গুন্ডাগুলোই হাসতে হাসতে দল পরিবর্তন করবে, আর বিএনপি জামাত জোট ক্ষমতায় এলে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে কি প্রহসন হবে তা বলাই বাহুল্য। আমাদের স্বার্থেই সময় এসেছে ডিনাইয়ালের এই বুদবুদ ফাটানোর - এখন সময় কিছু করার, কারণ আওয়ামী লীগ হারলে যে সারা দেশ হেরে যাবে।
মন্তব্য
আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকেরা কি এইটা বুঝে না??
এইবার বিচার শেষ করতে না পারলে আর কখনও হবে না।
আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ এবং আরও অন্যান্য অঙ্গ-সংগঠনের যে কার্যকলাপ তাতে জনগণ হতাশ। তারপরও শুধুমাত্র যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে এখনও আওয়ামী লীগের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। তাই আমি বলি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হতেই হবে।
এই চিন্তা আওয়ামী লীগের আছে তো?
লীগের লোকজন বলছে লীগ বিশ্বজিৎ হত্যা দায় নেবে না। দায় যদি না নিস, তাহলে খুনীদের গ্রেফতার করে বিচারের ব্যবস্থা কর জলদি। সেইটা করিস না কেন?
অথচ এই খুনীগুলোর বিচার করলে আখেরে লীগেরই উপকার হতো। মানুষের হারিয়ে যাওয়া আস্থা কিছুটা হলেও ফেরত আসতো। প্রধানমন্ত্রীর আশে পাশে কি ধরনের চাটার দল এক্ত্র হয়েছে তা এই ঘটনা থেকেই বোঝা যায়।
ফারাসাত
"আওয়ামী লীগ হারলে যে সারা দেশ হেরে যাবে"
আপনি এই উপসংহারে কিভাবে আসলেন খুব জানতে ইচ্ছা করে।
নতুন মন্তব্য করুন