জর্জ ওরওয়েলের এনিমেল ফার্ম

সাফি এর ছবি
লিখেছেন সাফি (তারিখ: রবি, ০৪/০৮/২০১৩ - ৫:২৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

200xমোটামুটি বলা যায় দুই নিঃশ্বাসে পড়ে শেষ করলাম জর্জ ওরওয়েলের এনিমেল ফার্ম বইখানা। এক কথায় অসাধারণ। মাত্র একশ পাতা। অর্থাৎ অফিস যাওয়া আসার পথে এক এক দুই ঘন্টার জ্যামকে আনন্দদায়ক করার জন্য যথেষ্ঠ। বইটি ব্রিটিশ কৃষক জোনসের 'ম্যানর ফার্ম' এর পশুপাখিদের জীবনের গল্প। এদের মাঝে বৃদ্ধ এবং জ্ঞানী বলে পরিচিত বৃদ্ধ মেজর এক রাতে স্বপ্ন দেখে, মানুষের হস্তক্ষেপ, শোষণ-বঞ্চনাবিহীন পশুদের দ্বারা পরিচালিত, পশু খামারের(Of the people, by the people and for the people)। গভীর রাতে এক সভায় মেজর তুলে ধরে - কিভাবে পশুদের কঠোর পরিশ্রম নিজের ভান্ডারে তোলে মানুষ, অথচ তারা নিজেরা কোনরকম উৎপাদনে অক্ষম।

“Man is the only creature that consumes without producing. He does not give milk, he does not lay eggs, he is too weak to pull the plough, he cannot run fast enough to catch rabbits. Yet he is lord of all the animals. He sets them to work, he gives back to them the bare minimum that will prevent them from starving, and the rest he keeps for himself."

মেজরের দেখানো স্বপ্লে আর উস্কে দেওয়া বিদ্রোহের জোড়ে, সমস্ত পশুরা মিলে একদিন তাড়িয়ে দেয় খামার মালিক জোনসকে। প্রতিষ্ঠা করে নিজেদের খামার, এনিমেল ফার্ম। যেখানে সকল পশুরা নিজেদের সামর্থ মত কাজ করবে, পাবে পর্যাপ্ত বিশ্রাম আর খাবার। খামারের জন্য ৭টা মূলনীতি সকলে আলোচনা করে নির্দিষ্ট করে, বোর্ডে লিখে রাখে। এর মাঝেই পশুদের নেতৃস্থানীয় হয়ে ওঠে খামারের দুই বরাহ স্নোবল এবং নেপোলিয়ন। প্রায় সকল ক্ষেত্রেই খামার পরিচলনা নিয়ে তাদের মাঝে মত বিরোধ দেখা যেতে থাকে। খামারের পশুদের মঙ্গল চিন্তায় স্নোবল যখন নিজেকে নিয়োজিত রাখে এবং বিদু্যৎ উৎপাদনের জন্য বায়ুকলের স্বপ্ন দেখতে থাকে, তখন তার তীব্র বিরোধিতা করে নেপোলিয়ন। সদ্য ভুমিষ্ঠ গোটাদশেক কুকুর ছানাকে নিয়ে সে ব্যস্ত থাকে, নিজের অনুগত বাহিনীতে পরিণত করতে। এর মাঝে একদিন কুকুর লেলিয়ে দিয়ে স্নোবলকে সে খামারছাড়া করে এবং খামারের একচ্ছত্র কতৃত্ব নিজের হাতে নিয়ে নেয়। নেপোলিয়নের নেতৃত্বে খামারের পশুদের নতুন জীবন শুরু হয়।

প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর জন্য নিয়োগ দেওয়া হয় আরেক বরাহ স্কুইলারকে। যে কিনা দক্ষতার সাথে পশুদের মাঝে নেপোলিয়নকে নায়ক এবং স্নোবলকে খলনায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে যেতে থাকে। নতুন নেতৃত্বে খামারের পশুদের জীবনে তেমন পরিবর্তন আসেনা, স্নোবলের দেখানো বায়ুকলের স্বপ্নে বিভোর তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যেতে থাকে একটি বায়ুকলের প্রতিষ্ঠার জন্য। এর জন্য যত ত্যাগ তিতিক্ষা সহ্য করা লাগুক না কেন, হাসিমুখেই তারা তা মেনে নেয় - ভবিষ্যত সুখের আশায়। পশুদের মাঝে পরিশ্রমীর প্রতিনিধি ঘোড়া বক্সার, বায়ুকল প্রতিষ্ঠার জন্য নিজের মনে কাজ করে থাকে। তার জীবনে দুইটাই অপ্তবাক্য -

" Napoleon is right and I must work harder"

এভাবে খামারের পশুদের জীবন চলতে থাকে। একদিকে খামারের প্রাণীদের মাঝে জোনসের ফিরে আসার ভয় যেমন ছড়ানো হতে থাকে, আরেকদিকে থাকে ভবিষ্যতের সুখ স্বপ্নের হাতছানি। খামারের সকল দূর্ঘটনার জন্য দায়ী করা হতে থাকে স্নোবলকে আর বীরোচিত হতে থাকে নেপোলিয়ন - যাকে একসময় সম্বোধন করা লাগে নেতা হিসেবে। সেই সাথে বদলে যেতে থাকে খামার প্রতিষ্ঠার মূলনীতিগুলো - বদলাতে বদলাতে একসময়ে একমাত্র মূলনীতি হয়ে যায় -

" All animals are equal, but some are more equal than others"

অল্প খানিকটু পড়ার পরেই মনে হচ্ছিল, গল্পের চরিত্রগুলো হয়ত শুধুই খামারের প্রাণীগুলো নয়। অন্তর্নিহিত চরিত্রগুলো অন্তর্জাল ঘেঁটে বের করার পরে, বইটা আরো আনন্দদায়ক হয়ে উঠতে থাকে। ১৯৪৫ এ রচিত ওরওয়েলের বইখানা আসলে তুলে ধরে স্তালিনের রাশিয়াকে। বিভিন্ন চরিত্রের মাঝে ফুটে উঠে টরস্কি, জার, মার্ক্স এর দর্শন - পরিশ্রমী জনগণের রুপে আবিভর্ূত হয় বক্সার। বইয়ে বর্ণিত খামারের প্রাণীদের দিয়ে লেখক তুলে ধরেন সমাজতন্ত্রের লক্ষে প্রতিষ্ঠিত স্তালিনের রাশিয়া কিভাবে ধীরে ধীরে একনায়ক পরিচালিত পুঁজিবাদে রুপান্তরিত হয়। বইটা পড়তে আগ্রহী হলে, সচল তীরন্দাজের অনুবাদ পড়া যাবে সচলায়তনেই। আশা করি বইটা পড়লে ভালো লাগবে।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

ক্লাস সেভেনে থাকতে এই বইটার অনুবাদ পড়েছিলাম বড় বোনের কল্যাণে। প্রথমে কিছু না বুঝলেও বোন বুঝিয়ে দিয়েছিল ।দারুণ লেগেছিল তখনই ।আপনার রিভিউ পড়ে আবার পড়ার ইচ্ছে জাগল। এবার আসল মজা নেয়ার জন্য ইংরেজিতেই পড়ব। হাসি

---------------------
সুবোধ অবোধ

সাফি এর ছবি

আশা করি পড়লে ভাল লাগবে।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

বক্সারের জন্যে শেষে যে কী খারাপ লাগে মন খারাপ

সাফি এর ছবি

মন খারাপ

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক
১। হুমম... প্রেক্ষাপট রাশিয়ার হলেও... চারপাশে তাকালেই মেজর, নেপোলিয়ন, স্নোবল, স্কুইলার, বক্সারদের দেখতে পাই... সকল দেশে... সকল কালে ইয়ে, মানে...
২। নিচ থেকে ৫ নাম্বার লাইনে "টরস্কী" লিখেছেন... এটাই কি সহীহ উচ্চারন?... বাংলায়া এতদিন "ট্রটস্কি" পড়ে এসেছি... রাশান তো জানিনা মন খারাপ

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

তিথীডোর এর ছবি

হ্যাঁ, আম্মো তো 'ট্রটস্কি'-ই জানি।

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

আয়নামতি এর ছবি

আরে বাপু ওনার তো স্লিপ অব ফিঙ্গার হইতে পারে নাকি!

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

না না... তা তো হইতেই পারে... আবার আমরাও ভুল জানতে পারি... জর্মন/ফরাসী অনেক নামই দেখি আগে যা জানতাম তার ধারে কাছেও না... তাই জানতে চাচ্ছিলাম সেরকম কোন ব্যাপার কিনা

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সাফি এর ছবি

উচ্চারণ আসলে ট্রটস্কিই হবে। বাঙালী জিহ্বায় ভুল হৈয়া গেছে খাইছে

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হাসি ব্যাপার না

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

আয়নামতি এর ছবি

বেশ লিখেছেন চলুক সাথে অনুবাদের লিংক জুড়ে দেবার জন্য উত্তম জাঝা!

সাফি এর ছবি

হাসি

তারেক অণু এর ছবি

১৯৮৪ পড়া আছে নাকি? সেটা নিয়ে আলোচনার অপেক্ষায় থাকলাম

সাফি এর ছবি

এখনও পড়িনি, তবে তালিকায় আছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার পড়া হয় নি। আপনার লেখা পড়ে পড়ার আগ্রহ জন্মালো। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

-এস এম নিয়াজ মাওলা

সাফি এর ছবি

পড়লে আশা করি ভাল লাগবে।

ফুজিয়ামা এর ছবি

"যেই যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ", এনিম্যাল ফার্ম পড়ে প্রথমেই এই কথাটা মাথায় এসেছিল। জর্জ অরওয়েলের এই ফেবলটি বিশেষ প্রেক্ষাপটে লেখা হলেও এটাকে একটা ক্ল্যাসিক বলা যেতে পারে।এনিম্যাল ফার্মের মহান বিপ্লবী নেতারা ক্ষমতা আর ব্যক্তিগত সুবিধা উপভোগের মোহে একসময় আদর্শ টাদর্শ ভুলে নিজেদের গড়া সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য নিয়ম ভাঙ্গা শুরু করে দেয়।

সাফি এর ছবি

দিন শেষে সেই একই লুপ।

রণদীপম বসু এর ছবি

ক্ষমতা মানেই আধিপত্য, তা যার হাতেই থাকুক না কেন ! এই অমৃত (?) যে একবার পেয়ে যায় সেই নিজেকে অমর ভাবে !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

সাফি এর ছবি

সেখানেই সমিস্যা।

অতিথি লেখক এর ছবি

দারুন, বইটা পড়া ছিল না কিন্তু এখন পড়তে হবে, অনেক ধন্যবাদ লিঙ্ক দেওয়ার জন্য, কেন জানি বাংলাতে পড়তেই বেশি ভাল লাগে
ইসরাত

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

সব রসুনের গোড়া এক জায়গায় - তাই মনে হয় বইটা পড়তে পড়তে।

____________________________

ওডিন এর ছবি

আমি এখনো এনিমেল ফার্ম পড়ি নাই। মন খারাপ

রিভিউ পড়ে মনে হচ্ছে পড়তেই হবে। চলুক

মুদ্রা সংগ্রাহক এর ছবি

দারূণ একটা বই, তবে কিছুটা ক্যাপিটালিজম পক্ষপাতদুষ্ট।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।