গোড়ার কথা:
এই সিরিজ এর প্রথম অধ্যায় আমরা আকাঁআঁকির সরঞ্জাম ও অ্যাকশন লাইন নিয়ে জেনেছি। আজকে জানবো কী করে একটা ক্যারেক্টারের কাঠামো দাঁড় করাতে হয়। অ্যানাটমির জটিলতা এড়িয়ে কীভাবে সঠিক ও সহজভাবে মানুষ আঁকা শুরু করা যায়। ‘অ্যাকশন লাইন’ কী জিনিস যাদের এখন পড়া হয়নি, এখানে গিয়ে দুই-চার লাইনে লেখা আছে পড়ে জেনে নিন আবার। যারা আঁকতে ভয় পাচ্ছেন যে তাদের আঁক/দাগ লাইন সোজা হয় না তাদের জন্য বলি, চোখ বন্ধ করে এঁকে যান। দাগের ব্যাপার আমরা পরে দেখব। আগে জিনিসগুলো বুঝি।
আঁকতে যা লাগবে:
স্কেচ খাতা অথবা A4 কাগজ,পেন্সিল এবং ইরেজার।
আজকের প্রসঙ্গ: স্টিক-ফিগার Vs জেসচার ড্রইং
মানুষ আঁকতে হলে শিল্পীরা এই দুইটির একটি দিয়েই আঁকা শুরু করেন স্টিক-ফিগার অথবা জেসচার, অনেকে দুইটি মিশিয়েও কাজ করেন। তবে, শুধু ঝানু আর্টিস্টরা জেসচার দিয়ে আঁকা শুরু করেন, কারণ স্টিক-ফিগারের ব্যাপারস্যাপার তাদের মাথায় থাকে। কেউ শুধু স্টিক-ফিগারেও আঁকতে ভালোবাসেন। আমি তাদের মধ্যে একজন যারা দুইটা মিলিয়ে আঁকে। আমরা স্টিক-ফিগার দিয়ে আঁকা শুরু করব। স্টিক-ফিগার ও জেসচার আঁকার উদ্দেশ্য হলা কম সময় সহজে ক্যারাকেটারের ভঙ্গি, অবয়ব ও কাঠামো তৈরি করা, যাতে শিল্পী পুরো ছবিটিই আঁকার আগে বুঝতে পারেন যা আঁকছেন ঠিক আছে এবং ভুল হলে তা দ্রুত ঠিক করতে পারেন। এর আরেকটি উদ্দেশ্য হলো রাস্তাঘাটে বসে প্র্যাকটিস করতে কম সময়ে মানুষ আঁকা যায় এবং পরে বাসায় ফিরে ডিটেল করা সম্ভব হয়। নিচে স্টিক-ফিগার ও জেসচার আলাদাভাবে বর্ণনা করছি।
স্টিক-ফিগার: এর সহজ মানে মানুষের শরীরের কাঠামো/হাড়ের অবস্থান কাঠিদাগের মাধ্যমে প্রকাশ করা। ‘স্টিক-ফিগার’ মানুষের কাজের ভঙ্গি সঠিক ও সহজভাবে আঁকতে সাহায্য করে। কেউ লাফ দিলে অথবা দৌড় দিলে তার ভঙ্গি কী হবে অথবা হবে না এটা খুব ডিটেল আঁকার আগেই আমরা স্টিক-ফিগার এঁকে বুঝে ফেলতে পারি। নিচের ছবিটিতে স্টিক-ফিগার আঁকার ধাপ বিস্তারিত আঁকা আছে, ছবিটির নিচে একের পর এক বর্ণনা দিচ্ছি আপনারা ছবি দেখে মিলিয়ে পড়ে নিন।
[img=auto][/img]
১.
M আর F আলাদা করে পুরুষ ও মেয়ে বোঝানো হয়েছে। স্টিক-ফিগার আঁকতে সবসময় অ্যাকশন লাইন দিয়ে শুরু করব। মানুষের শরীরে ৮টি জোড়া থাকে M ফিগারে সেই ৮টি জোড়া চিহ্নিত করেছি। (i) মাথা ও মেরুদণ্ডের জোড়া। (ii) হাতের সাথে কাঁধের জোড়া (iii) হাতের কনুইয়ের জোড়া (iv) হাতের কব্জির জোড়া (v) কোমরের এই জোড়াটি মেরুদণ্ড থেকে এসে কোমরের হাড়ের সাথে যুক্ত হয়েছে। এখানে মনে রাখতে হবে পুরুষের এই হাড়টি খুব বেশি দৃশ্যমান হয় না। কিন্তু শুধু মেয়েদের এই হাড়টি একটু বাইরের দিকে থাকে, F ফিগারটিতে হাড়টি গোলাপি রঙ দিয়ে চিহ্নিত করেছি। (vi) উরু ও কোমরের জোড়া (vii) হাঁটুর জোড়া (viii) পায়ের পাতা/গোড়ালির সাথে পায়ের জোড়া। খেয়াল করে দেখবেন দাগ কোন দিকে বাঁক নিয়েছে, কোনটা বড় বা কোনটা ছোট। বুকের অংশ প্রায় দুইটা মাথার আকারের থেকে অল্প ছোট হবে।
F ফিগারে আমি চিহ্নিত করেছি আঁকার পর্যায়। স্টিক-ফিগারের কোন অংশের পর কোন অংশ আঁকলাম তাই চিহ্নিত করেছি (i-xii পর্যন্ত)।
২.
M ও F ফিগারের মাঝে দুইটি দাগ আছে, একটি কমলা ও একটি হলুদ। হলুদ দাগটার ব্যাপারে আগেও বলেছি এটি হলো ‘অ্যাকশন লাইন’ যেটা দ্বারা ক্যারেকটারের গতি ও কাজ এক দাগে প্রকাশ করা হয়।
কমলা দাগটি হলো ‘প্লাম্ব লাইন’ বা ভারবাহী দাগ। স্টিক-ফিগার আঁকার সময় এই দাগটি আঁকার প্রয়োজন নেই, শুধু বোঝার সুবিধার্থে এটি দেওয়া। কমলা দাগটি নির্দেশ করে, শরীরের ভারসাম্য ও ভর। প্লাম্ব লাইন ভূমি থেকে ৯০ ডিগ্রি হয়ে উপরে উঠে যাবে।
৩.
ছুটন্ত অবস্থায় স্টিক-ফিগার কীরকম হবে দেখান হলো।
৪.
পাশ থেকে একটি স্টিক-ফিগার দেখান হলো। এখানে মানুষের মেরুদণ্ডের বাঁক কীরকম হয় সেটা দেখানো হয়েছে।
৫.
স্টিক-ফিগারের মাথার আকার অনেকটা ডিমের মতো। তবে আমরা যেভাবে আঁকি তা হলো, একটি চোঙার উপর একটি বৃত্ত জুড়ে দিলে মানুষের মুখসহ মাথা হয়ে যায়। যে ব্যাপারটি খেয়াল রাখতে হবে, মানুষের ঘাড় শুরু হয় কানের নিচ থেকে।
৬.
পিঠের এই মেরুদণ্ডের অংশটাই আমরা মধ্যরেখা বা অ্যাকশন লাইন হিসেবে চিনি। সবুজ দাগ টেনে, দাগ টানার দিক নির্দেশ করা হলো।
জেসচারের উপর স্টাডি করতে নিয়ে নিচের ছবিটি আঁকা হয়েছে। এটি বিদেশি একজন আর্টিস্টের স্টাডি, এটা দেখে আমি এর পরের ছবিতে স্টিক-ফিগার আঁকা প্র্যাকটিস করি। আপনারাও, দেখে দেখে আঁকতে পারেন।
[img=auto][/img]
নিচের ছবিটিতে আমি প্রথমে অ্যাকশন লাইন এঁকে পরে স্টিক-ফিগার এঁকেছি। আপনারা উপরের ছবি দেখে নিচের ছবির মতো করে স্টিক-ফিগার আঁকবেন।
[img=auto][/img]
নিচে ‘Andrew Loomis’ এর বই থেকে স্টিক-ফিগার প্র্যাকটিসের দুইটি ছবি
[img=auto][/img]
স্টিক-ফিগার শেষ। আগামী পর্বে জেসচার নিয়ে লিখে এই অধ্যায় শেষ করব। উপরের যা যা আছে এঁকে ফেলবেন। নিচে বাড়ির কাজ দিচ্ছি।
বাড়ির কাজ :
নিচের জেসচার ছবি গুলো থেকে থেকে স্টিক ফিগার বের করুন। উপরের ছবিগুলোসহ এইগুলো এঁকে মেইল করুন। শুধু উপরের জেসচারে আঁকা ব্যালেন্সের ছবিটা বাদে।
[img=auto][/img]
বাড়ির কাজ যেভাবে দিবেন: স্ক্যানার থাকলে স্ক্যান করে দিবেন। না থাকলে ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলে দিবেন। একটাও না থাকলে কোনোদিন যদি দেখা হয় অপেক্ষায় থাকলাম। যাদের ফটোশপ নেই আজকেই ইন্সটল করেন। আমাদের কাজে লাগবে।
যাদের ফটোশপ আছে তাদের জন্য আজকের ফটোশপ টিপস দিচ্ছি. তোলা ছবি অথবা স্ক্যান করা ছবি ফটোশপ এ খুলে Ctrl + Alt + Shift + S একসাথে চাপ দিলে Save for web and device নামে একটি উইন্ডোও খুলবে সেখানে GIF থাকলে সেটাকে JPG করে সেইভ করতে হবে। এই পদ্ধতিতে ছবির আকার না কমলেও ওজন অনেক কমে যায়।
পাঠাবেন এই ঠিকানায় : r.hasan.artworkঅ্যাটgmail.com
*ই-মেইলে সচল এর নাম উল্লেখ করে দিলে ভালো হয়।
[img=auto][/img]
মন্তব্য
ভাল লাগলো।বুয়েটে গ্রাফিক্স কোর্সে সিন গ্রাফ(scene graph) ব্যবহার করেছিলাম মানুষ মডেল করার জন্য। যার জোড়া গুলো স্টিক মডেলের মত।
রিক্তা
--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।
দারুণ ১টা সিরিজ হচ্ছে।
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
সুজন্দা,
ধন্যবাদ।
============================
শুধু ভালোবাসা, সংগ্রাম আর শিল্প চাই।
============================
শুধু ভালোবাসা, সংগ্রাম আর শিল্প চাই।
হ
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
খুবই ভালো লাগছে সিরিজটা। কিপিটাপ!
.........
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা
.........
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা
জোস!!! ট্রাই মারতে হবে দেখি।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
============================
শুধু ভালোবাসা, সংগ্রাম আর শিল্প চাই।
============================
শুধু ভালোবাসা, সংগ্রাম আর শিল্প চাই।
প্রিয় আঁকাইন,
সিরিজ দুর্দান্ত হচ্ছে। আমি এই হিউম্যান ফিগার ড্রইং নিয়ে খুব পাছড়া পাছড়ি করেছিলাম। যে বই গুলোর কথা বলছেন সেগুলোও আমার আছে। ষ্টিক ফিগার ড্রইং করতে গিয়ে সবচে বড় যে ঝামেলায় পড়েছিলাম সেটা হলো এইরকম বাড়ির কাজ না পাওয়া। শেষে পেপারের ছবি দেখে ষ্টিক ড্রইং করতাম। তখন মনে হলো একটা কাডের পুতলা হলে ভালো হতো। তখন গোটা ঢাকায় কতো খুঁজলাম, পেলাম না। দিনকতক আগে আমার আঁকিয়ে কার্টুনিষ্ট বন্ধু তার আরেক বন্ধুর মাধ্যমে সেই সুইজারল্যান্ড থেকে কাডের পুতলা এনে দিয়েছে। সমস্যা একটাই এখন আর আঁকার সময় পাইনা। আফসোস ! ভাই সিরিজটা চালিয়ে যান। আঁকাআকির লাইনে আমি গন কেইস। শুধু পোর্টেট ড্রইং করি। নতুন যারা আসবে তাদের জন্য আপনার এই সিরিজ খুব কাজের হবার কথা। আর ভাই, কাডের পুতলা বা ম্যানিকিন টা বাংলাদেশে সুলভে পাবার কোন ব্যাবস্থা কি করতে পারবেন? তাহলে অন্যদের খুব সুবিধা হবে। ভাল থাকবেন। আপনি নিজেই ব্যাবসা শুরু করতে পারেন যাতে উঠতি আঁকিয়ে দের আঁকতে সুবিধা হয়। ভাল থাকবেন।
প্রিয় মানিকদা,
কেমন আছেন? ডাক্তারিতে হিউম্যান ফিগার নিয়া যে পাছড়া পাছড়ি আছে তাতে সন্দেহ নাই। আপনার আঁকিয়ে বন্ধুরে প্রকৃতি কী গুন দেয়নাই,সেইটাই মাঝে মধ্যে ভাবা হয়। 'ম্যানিকিন' এর ব্যাপারে উদ্যোগ আপনার আঁকিয়ে বন্ধুরে নিতে বলেন। আমিতো তার আশেপাশেই আছি।
আপনার অনুবাদ ভালো লাগে। ভাল থাকবেন
ধন্যবাদ।
============================
শুধু ভালোবাসা, সংগ্রাম আর শিল্প চাই।
============================
শুধু ভালোবাসা, সংগ্রাম আর শিল্প চাই।
প্রিয় আঁকাইন,
নিজের সুন্দর ডাকনামটা ছেড়ে এই নাম কেন নিলা? খেলুমনা। এইডা কাইন্ঠামি। তুমি মিয়া লেখা শুরু করছো আগে কইবানা? অ্যানাটমি যদি তোমার হাতে কলমে দেখা লাগে তাইলে জানাবা। আমাদের অ্যানাটমি ডিসেকশন রুমে তোমারে নিয়া যাবো। কাডাকুডা দেখলে আবার ডরাইবানা তো? সিরিজ চলুক। ভালো থাইকো।
সত্যিকার অর্থে আমি আঁকা শিখিনাই হুট করে শুরু করছি। নিজে নিজে দুনিয়া ঘাইটা জানতে হইছে কিভাবে আঁকতে হয়। ভুতের রাজার বরের মত অনেকটা। তাই নাম নিলাম আঁকাইন নাম।
============================
শুধু ভালোবাসা, সংগ্রাম আর শিল্প চাই।
============================
শুধু ভালোবাসা, সংগ্রাম আর শিল্প চাই।
পাঁচ তারা।
ছোটবেলার সময় এবং ধৈর্য ফুরিয়ে গেছে। আকাআকি বন্ধ!
আবার কখনো যদি ইচ্ছে হয় তাই প্রিয়তে নিয়ে রাখলাম।
চমৎকার পোস্ট।
=================================
"রঙিন কাফনে মোড়া উৎসুক চোখে
ছায়া ছায়া প্রতিবিম্ব দেখি
মানুষ দেখি না।।"
=================================
"রঙিন কাফনে মোড়া উৎসুক চোখে
ছায়া ছায়া প্রতিবিম্ব দেখি
মানুষ দেখি না।।"
সুপার কাম হইতেসে ...
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
চালায় যাও মিয়া! আমি ফাঁকিবাজ, বাড়ির কাজ করতাম না! পোট্রেইট আঁক্তেই বেশী মজা পাই!
-----------------------------------------------------------------------------------
...সময়ের ধাওয়া করা ফেরারীর হাত থিকা যেহেতু রক্ষা পামুনা, তাইলে চলো ধাওয়া কইরা উল্টা তারেই দৌড়ের উপরে রাখি...
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
প্রিয় আকাঁইন ভাই,
অতি শীঘ্র আমি আপনাকে বাড়ির কাজ জমা দিবো... আকাআকিঁর শখ আমার অনেকদিনের, ছোটখাট আকাআকিঁ এম্নিতে পারি... আপনার সিরিজটা দারূন হচ্ছে, অনুরোধ থাকবে এটা চালিয়ে যাওয়ার...
আরেকজনকে আকানো শিখাতে এই সময়টুকুন দেবার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ...
ভালো থাকবেন...
এক কথায় লা জওয়াব! দারুন কাজে দিবে।
অনন্ত
ব্যস্ততার কারণে পড়তে দেরি হয়ে গেল
এই পয়েন্টার্স দুইটা আমার জন্যে বেশ কাজের মনে হয়েছে। একটু ফ্রি-টাইম পেলেই হোমওয়ার্ক পাঠাবার আশা রাখছি।
* প্রিয়-তে পাঠিয়ে দিলাম।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
নতুন মন্তব্য করুন