ভিনদেশী পত্রিকায় স্বদেশ

রকিবুল ইসলাম কমল এর ছবি
লিখেছেন রকিবুল ইসলাম কমল [অতিথি] (তারিখ: রবি, ০৪/০৮/২০১৩ - ৯:০১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

লিসবেথ নামের আমাদের এক বয়স্ক সহকর্মী তার প্রতিদিনের পত্রিকাটি পড়া শেষ হলে আমার বউ এর টেবিলে রেখে যায় যেন অন্তত হেডলাইন গুলোতে চোখ বুলাতে গিয়ে অথবা কোন পৃষ্ঠার ছবি দেখে উৎসাহী হয়ে খবরটি পড়ার চেষ্টা করে এবং ধীরে ধীরে নরওয়েজিয়ান ভাষাটা শিখে ফেলে! আমাকেও নানান ভাবে উৎসাহ দেয় যাতে তাদের ভাষাটি শেখার চেষ্টা করি। আমাদের এখনকার কাজের জন্য ভাষা শেখা জরুরী না হলেও, লম্বা সময় এদেশে থাকতে চাইলে ভাষা শিখে নেয়াটাই ভালো। আমরা বুঝতে পারি নিয়মিত এই পত্রিকা রেখে যাওয়াটা আমাদের প্রতি তার স্নেহের বহিঃপ্রকাশ। এই বিদেশ বিভূঁইয়ে আমরা তাদের ভাষা শেখার চেষ্টা করছি, আধো-আধো বোলে তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করছি। এসব নিশ্চয়ই তাকে আনন্দ দেয়। বাসায় টেলিভিশনে এনআরকে (এখানকার বিটিভি!) ছেরে রাখি যাতে লিসেনিংটাও ফাঁকতালে ইমপ্রুভ হয়। আমি সপ্তাহে একদিন ক্লাশ হয় এমন একটি কোর্সের লেভেল ওয়ান শেষ করেছি কেবল। আর বউ শেষ করেছে লেভেল থ্রি। সে এক বছর বয়সী নতুন কথা বলা শেখা শিশুর মত টুকটাক কথা বলতে পারে, নিজের জানা ভোকাবুলারির মধ্যে থাকলে কিছু কথা বুঝতেও পারে। ভিনদেশি ভাষায় নতুন নতুন কথা বলা মানুষকে সে দেশের সবাই খুব উৎসাহ দিবে এটাই স্বাভাবিক। এ জন্যেই সহকর্মীরা উঠে পরে লেগেছে যাতে শিগগিরি তাদের সাথে তাদের ভাষায় কথা বলতে পারি। কিন্তু বাস্তবতা হলো এ বয়সে নতুন একটি ভাষা শেখা খুব একটা সহজ নয়। তাই খুব স্বাভাবিক ভাবেই পত্রিকা গুলো টেবিলেই জমতে থাকে, কখনো পড়া হয় না। খুব বেশি স্তুপ হয়ে জমে যাওয়ার আগেই সেগুলু আমি ব্যাগে করে বাসায় এনে রাখি। নইলে হয়তো লিসবেথের স্নেহের দান অবহেলায় পরে থাকতে দেখে মন খারাপ করবে।

এরই মাঝে দুদিন বাংলাদেশ নিয়ে পত্রিকাটির প্রথম পাতা জুড়ে বিশাল নিউজ হলো। রানা প্লাজা নামক ভবন ধ্বসের মন খারাপ করা খবর। অন্য আট-দশ জন প্রবাসীর মত আমারও টেলিভিশন-পত্রিকায় বাংলাদেশ শব্দটি দেখলে বা শুনলে দৃষ্টি আটকে যায়, কান খাড়া হয়ে যায়। ডিকশনারি খুলে হোক, গুগোল ট্রান্সলেটর দিয়ে হোক কিংবা এদেশী কোন বন্ধু কে জিজ্ঞেস করে হোক বোঝার চেষ্টা করি খবরটিতে কী বললো।

আজ হঠাৎ মনে হল পুরোন খবরের কাগজে আর কি কি খবর এসেছিলো বাংলাদেশের তা খুজে দেখলে কেমন হয়। এ খবর গুলো পড়েই তো এখানকার মানুষদের আমাদের এবং আমাদের দেশ সম্পর্কে প্রথম ধারনাটা তৈরী হয়।

আজকের এই পোস্টটি মুলত আফটেনপোস্টেন নামের বহুল জনপ্রিয় একটি নরওয়েজিয়ান দৈনিক পত্রিকা থেকে ছবি, টুকরো খবর আর ক্যাপশন নিয়ে করা হয়েছে। আরেকদিন লিখবো এদের ন্যাশনাল টেলিভিশন চ্যানেলে আমাদের দেশ নিয়ে কী ধরনের প্রোগ্রাম দেখায় তাই নিয়ে।

২০ মার্চ ২০১৩

presedent
৮৪ বছর বয়সে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসারত অবস্থায় বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ইন্তেকাল করেন।

২৩ মার্চ ২০১৩

বাংলাদেশে টর্নেডো, কমপক্ষে ২০ জন মৃত

৯ মে ২০১৩

গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে আগুন, মৃত ৮ জন।

afp000523866-CR_DSmpa7E

১০ মে ২০১৩

বাংলাদেশে ভবন ধ্বসে নিহত ১০০০ এর উপরে।

afp000535637

১৭ দিন পর ধ্বংসস্তুপ থেকে উদ্ধারকৃত রেশমা

Reshma

১৫ মে ২০১৩

৮ মিলিয়ন মানুষ সাইক্লোনের ঝুঁকিতে

টর্নেডো

২ জুন ২০১৩

১৫ বছরের নাজমা তোমার সস্তায় কেনা জামাটি তৈরী করেছে। বাংলাদেশে তার কাজ-

নাজমা

* প্রতি সপ্তাহে ছয়দিন ১০-১২ ঘন্টা করে
* প্রতি ঘন্টায় ১ ক্রোনা (নরওয়েজিয়ান এক টাকা) করে
* অসুস্থতাকালীন ছুটি নেই
* কাজ চলাকালীন সময় সর্বোচ্চ তিনবার টয়লেটে যাবার ব্রেক পায়।

৬ জুন ২০১৩

afp000538265-V5Fv1YJzZ6
প্রতি সপ্তাহে হরতালের কারণে বাসারের চুলকাটার দোকানের ব্যবসায়ও মন্দা।

ঢাকার রাস্তায় ধীর পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ঐতিহ্যগত ভাবে মডারেট মুসলিমের এই দেশটিতে বিগত সময়ের চেয়ে বেশি নারীরা নেকাব পরছে।

afp000538609-4exKzaqAjN

(এই ছবিটির নিচে তিনটি প্যারায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করা হয়েছে।)

১। `পরিবারতন্ত্র´ই দেশ পরিচালনা করছে
২।  চারিদিকে শুধু ভিক্ষুক
৩। বাংলাদেশে কি ইসলামিস্টদের উত্থান হচ্ছে?

২৩ জুন ২০১৩

বাংলাদেশে শিশু মাতৃত্ব: ১৩ বছরের শিশুরা অনেক বেশি ছোট মা হবার জন্য

১৩ বছরের শিশুরা অনেক বেশি ছোট মা হবার জন্য
শায়লার (২৩)  মেয়ে নিপার যখন জন্ম হয় তখন তার বয়স ছিলো মাত্র ১৩ বছর। টেক্সটাইল ফ্যাক্টরি রানা প্লাজা ধ্বংস হবার সময় তার হাত ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তিনি তখন ৫ম তলায় কর্মরত ছিলেন।

laizu
বাংলাদেশে প্রতি ৫জন মেয়ের মাঝে ১ জনের বিয়ে হয় ১৫ বছর পার হবার আগেই: লাইজুর বিয়ে হয় ১৩ বছর বয়সে।

kathal
কাঁঠাল বাংলাদেশের জাতীয় ফল: গ্রামের অন্যতম প্রধান অর্থকরি ফল।

khelte khelte kaj
খেলতে খেলতে কাজ: লক্ষ্মীপুরে এটি একটি পানির পাম্প যেখানে শিশুরা বসে উঠানামা খেলার সাথে সাথে মিঠা পানি পাম্প করছে।

--------------------------------

[ গ্রাহক ফরম ]


মন্তব্য

তারেক অণু এর ছবি

হুম্ম, আমি নরওয়ের যে নিউজপেপারে প্রথম বাংলাদেশের নাম দেখেছিলাম তাতে খবর ছিল এক অসলোবাসী বাঙ্গালী মহিলার পরিবারের চাপে শুধুমাত্র ধর্মের কারণে এক পাকিস্তানি কে বিয়ে করে এবং পরে সেই পাকিস্তানি স্বামীর অত্যাচারে পুলিশের কাছে আশ্রয় নেয়া।

রকিবুল ইসলাম কমল এর ছবি

হুম। আপনার একটি লেখায় বা ফেইসবুকের স্ট্যাটাসে উল্লেখ্য করেছিলেন। এসব পড়লে খুব অসহায় লাগে।

তানিম এহসান এর ছবি

শেষ ছবি’টা খুব মজা লাগলো। অবাক বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশের ভাল ভাল খবরগুলো ছাপা হয় না, আমাদের অর্জন কিন্তু কম নয়।

রকিবুল ইসলাম কমল এর ছবি

অবশ্যই আমাদের অর্জন কম নয়। কিন্তু ভালো খবর গুলো হয়ত আমাদের খারাপ খবর গুলোর ইনটেনসিটি ছাপিয়ে আন্তর্জাতিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ খবর হয়ে উঠতে পারে না!?

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হুমম... পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

রকিবুল ইসলাম কমল এর ছবি

লিখব শিগগিরি।

মেঘা এর ছবি

আমাদের সফলতার খবরগুলো ঢাকা পড়ে যাচ্ছে অনেকটা প্রচারের কারণেও। দেশের পত্রিকাগুলো দেখবেন বেশির ভাগ খারাপ, ব্যর্থতার খবরগুলো মোটা হেডলাইনে ছাপায়। আমরা নিজেরাই তো নিজেদের সফলতার কথা বলি না। সেখানে ওদের আর দোষ কি?

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

রকিবুল ইসলাম কমল এর ছবি

ওদের কে দোষ দিচ্ছি না। বিদেশের মানুষ পত্রিকায় আমাদের সম্পর্কে কি পড়ে তাই শুধু তুলে ধরতে চেয়েছি।

আমাদের সফলতার পরিমান আরো বাড়াতে হবে। ভালো কাজের সুফল যখন নিজেদের ছাড়িয়ে বহির্বিশ্বের মানুষরাও পেতে থাকবে, তখন সেই খবর গুলোও বিভিন্ন দেশী পত্রিকায় আসতে থাকবে নিশ্চয়ই।

আপনার মন্তব্যের সাথেও একমত। সব কিছুর বহুল প্রচারের এই যুগে নিজেদের সফলতা গুলো প্রচারেও মনযোগী হওয়া উচিৎ।

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

হুমম - মনটা খারাপ হলো

রকিবুল ইসলাম কমল এর ছবি

নিজেদের দেশ সম্পর্কে নেগেটিভ খবর প্রচার হতে দেখলে মন তো খারাপ হওয়াটাই স্বাভাবিক। আরো কষ্টের বিষয় হলো খবর গুলো মিথ্যে নয়। পজেটিভ খবর বাড়ানোর জন্যে আমাদের নিজেদেরকেই আরো বেশি বেশি পজেটিভ কাজ করতে হবে।

আয়নামতি এর ছবি

মন খারাপ

রকিবুল ইসলাম কমল এর ছবি

মন খারাপ

রণদীপম বসু এর ছবি

আমরাও কি বাইরের ভালো খবরগুলো খুব একটা পাই ! খারাপ খবরগুলোরই প্রচার অগ্রাধিকার পায় সংবাদ-মাধ্যমগুলোতে। মনে হয় এটাই দেশে-দেশে প্রধান মিডিয়া-ট্রেন্ড !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

রকিবুল ইসলাম কমল এর ছবি

মনে হয় তাই হবে। খারাপ খবর গুলোই তো তুলে ধরা উচিৎ যাতে ভুল শুধরে নেয়া যায়, ভুল থেকে শিক্ষা নেয়া যায়। কিন্তু সাথে ভালো খবরও যদি পত্রিকার পাতায় নিজ যোগ্যতায় জায়গা করে নেয় তাহলে এতটা অপমানিত লাগে না!

বিবর্ণ সময় এর ছবি

চমৎকার বৈদেশিক জীবন চলছে দেখি চোখ টিপি নরওয়েজিয়ান শিখতে পারলে সেইটার উপর ইতিহাস নিয়ে আরেকটা লেখা দিয়েন

রকিবুল ইসলাম কমল এর ছবি

ভাষা শেখায় ব্রেক পরতে যাচ্ছে। আম্রিকা যাইতাছি গা। এইবার ইংলিশ শিখবো। তুমি লেখা দাও না কেন? তোমার লেখার হাত তো বেশ ভালো। আগামি ৩ দিনের মধ্যে তোমার একটা লেখা দেখতে চাই সচলে। চাল্লু

বিবর্ণ সময় এর ছবি

‌ছোট খাটো একটা চাকুরী শুরু করলাম। ব্যাপক দৌড়ের উপড় আছি মন খারাপ

অতিথি লেখক এর ছবি

আকর্ষণীয় খবর হিসেবে খারাপ খবর সবসময়-ই ভাল খবর-কে টেক্কা দেবে। তাই খবরের ব্যাবসায়ীর কাছে খারাপ খবরের বিশেষ খাতির থাকবেই। সেটা নিয়ে বেশী গুরুত্ব দিয়ে কাজের কাজ কিছু হবে না। অনেক গুরুতর কথা হল খারাপ-গুলো এত খারাপ কেন যখন কি না সেগুলো আদতে হবার-ই কথা ছিল না! আর, চিহ্নিত করার পর-ও যে সেগুলো পাল্টায় না, উপমহাদেশের দেশগুলোর জন্য সেটাই সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডী।
- একলহমা

রকিবুল ইসলাম কমল এর ছবি

কথা হল খারাপ-গুলো এত খারাপ কেন যখন কি না সেগুলো আদতে হবার-ই কথা ছিল না! আর, চিহ্নিত করার পর-ও যে সেগুলো পাল্টায় না

চলুক

একটি দুটি ভালো খবরও কি আন্তর্জাতিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে না? মন খারাপ

আয়ন এর ছবি

খুব আগ্রহ নিয়া লেখা গুলা পড়লাম, এটুকু ভেবে আশ্বস্ত যে আমাদের দুই নেত্রির চুলাচুলির খবর তারা এখনো জানে না ! চিন্তিত

রকিবুল ইসলাম কমল এর ছবি

জানেনা আবার!

নজমুল আলবাব এর ছবি

ভালো লাগলো পোস্টটা।

ছাইপাঁশ  এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে

অতিথি লেখক এর ছবি

ভিনদেশী পত্রিকার আমাদের সম্পর্কে কি ধারনা দেখে মন খারাপ হল। আসলে আমরাই এর জন্য দায়ী, আমাদেরকেই পজেটিভ খবর তৈরি করতে হবে, লেখা ভাল লাগলো চলুক
ইসরাত

ছাইপাঁশ  এর ছবি

ধন্যবাদ ইসরাত।

দিগন্ত এর ছবি

এইটা আমি আমেরিকাতেও দেখি, বাংলাদেশ নিয়ে পজিটিভ নিউসের অভাব।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

রকিবুল ইসলাম কমল এর ছবি

সব জায়গায় বোধহয় একই রকম।

অতিথি লেখক এর ছবি

আচ্ছা, নরওয়ের সাধারণ মানুষের ভাবনাতে বাংলাদেশ কোন জায়গায় আছে?

-এস এম নিয়াজ মাওলা

রকিবুল ইসলাম কমল এর ছবি

এক কথায় আমার পক্ষে বলা মুসকিল। যাদের বাংলাদেশ সমন্ধে কোন ভাবে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ বা যাতায়াত আছে তাদের অনেকের কাছে ভালো ভালো কিছু কথাও শুনেছি। এমনো হতে পারে আমি বাংলাদেশ থেকে তারা আমাকে আমার দেশ সম্পর্কে কিছু ভালো কথা বলেছে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।