পারভেজের একটা গিটারও ছিলো, সবুজ রঙের। একদিন আমাকে কবিতা পড়ার প্রহর এসেছে গানটি কিভাবে তুলতে হবে সেটা শিখিয়ে দিলো। এরপর থেকে কোথাও গিটার দেখলেই এই গানের সুর তুলে আসেপাশের সবাই কে একটু চমকে দিয়ে এমন একটি ভাব করতাম যেন গিটারের টিউনটা চেক করলাম; এখন ঠিক মুড নাই বলে আর কিছু বাজাচ্ছি না।
ওর গিটার এবং ছবি আঁকার খাতার প্রতি ছিলো আমার চিরকালীন ঈর্ষার দৃষ্টি। আমিও ছবি আঁকা শিখবো বলে একদিন নিউ মার্কেট থেকে একটি স্কেচবুক কিনে নিয়ে এলাম। আমার আগ্রহ দেখে পারভেজ মাঝে মাঝে আমাকে ছবি আঁকার এটা সেটা শেখাত। ভালো আর্টিস্ট হবার প্রথম ধাপ হিসাবে, অনেকদিন পর্যন্ত শুধু লম্বা করে আর আড়াআড়ি ভাবে পেন্সিলে দিয়ে পৃষ্ঠাজুড়ে দাগ দিতে বলতো। দাগ দিতে দিতে আমি বিরক্ত হয়ে যেতাম কিন্তু পারভেজ বলত - এই দাগ সোজা হয় নাই, এটা কেঁপে গেছে, এই দাগে পাওয়ার বেশি হয়ে গেছে ইত্যাদি নানান কথা। ক্রমাগত সরলরেখা, বক্ররেখা এঁকে আমার মন ভরে না। আমার ইচ্ছা করে এক ধাক্কায় টাইটানিকের নায়কের মত কেট উইন্সলেটের স্কেচ করে ফেলতে। কিন্তু বদমাইশটা আমারে সরলরেখা আর বক্ররেখা দিয়ে ঘটি-বাটি আর গাছের পাতা ছাড়া আর কিছু আঁকা শেখায় না।
শেষমেশ পারভেজের উপর রাগ করে রাতারাতি ছবি আঁকা শিখে ফেলার জন্য আজিজ সুপার মার্কেট থেকে স্কেচ এর উপর তিনটি প্রাথমিক বই কিনে নিয়ে এলাম। সেই বই গুলোর পাতা জুড়ে নানান ভঙ্গিমায় নগ্ন মানব মানবীর স্কেচের টেমপ্লেটে ভরপুর! তাই এই বই বাসায় আনা মাত্র সেগুলি তালা বন্দি করে রাখতে হল আমার পড়ার টেবিলের ড্রয়ারে।
এসব তো আর সবার চোখের সামনে রেখে অঙ্কন প্র্যাক্টিস করা যায় না। অথচ ঘরে সিটকিনি তুলে দরজা লাগিয়ে ছবি আঁকতে বসলে, দুই মিনিট পার হতে না হতেই বড় বোন বা মা দরজায় নক করে বলে, দরজা বন্ধ করে কি করিস কমল? এই প্রশ্নের কী কোন মানে আছে! যদি বলতেই পারতাম দরজা বন্ধ করে কী করছি তাহলে কি আর দরজা বন্ধ করে সেটা করতে হয়!
রুদ্ধদার অনুশীলনের অভাবে কত বিরল পতিভার অধিকারী হবু চিত্রশিল্পীরা শুধু ইট-কাঠ-পাথর আর চেয়ার-টেবিল-টেলিভিশন এঁকে জীবন পার করে দেন তার খোঁজ কী কেউ রাখে!
আজ পেন্সিল, তুলি, রং ছাড়াই কেবল আই-প্যাডে তর্জনী ঘসে অবশিষ্ট কিছু বিরল পতিভার সাক্ষর রেখে গেলুম:
[ গ্রাহক ফরম ]
মন্তব্য
ভাগ্য এখনওআইপ্যাড এনে দিতে পারেনি, তবে পড়ে বেশ মজা পেলাম। আমার ক্ষেত্রেও এইসব হয় এখনো। ক্লাসে স্যার যাই বগর বগর করুক না কেন, খাতার পিছনে আমার আঁকিবুঁকি চলছেই !!!
আর্টিস্ট পারভেজ আর তার সবুজ গীটারের কি খবর এখন?
র.নাহিয়েন
আর্টিস্ট পারভেজ সুখে শান্তিতে সংসার করছে।
মাঝের ছবিটার সাইকেলগুলো দারুণ হয়েছে।
শুধু ইট কাঠ আঁকতে আঁকতে দম রাখতে পারবেন না। চুরি করে হলেও রুদ্ধ দ্বার অনুশীলন করতে হবে।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
একদম ঠিক বলছেন! তাই তো বলি এক বসায় একটি ছবি শেষ করতেই হাঁপিয়ে যাই কেন? দম ধরে রাখার ছবিও আঁকতে হপে মাঝে মাঝে।
আমি একদম গ্যান্দাকাল থেকে যুদ্ধংদেহী ভঙ্গিতে বলতাম-- ফাইন আর্টস নিয়ে পড়ব।
একটু বড় হয়ে নজ্জানজ্জা মুডে সখীদের জানাতুম-- আর্টিস্ট পুলা ছাড়া বিয়াই করুম না।
কিয়ের ঢাবি চারুকলা, মা'য়ে ঘাড় ধরে চাইলডাইল বেচার ইশকুলে দিল ভর্তি করে। কই যে গেল মোর স্কেচের খাতা, শিল্পকলার ক্লাস আর পোস্টার রঙের ডিব্বাগুলো...
আপাতত যাবতীয় চিত্রাঙ্কনের নমুনায় কুটিল মনের নিখাদ হিংসা ছড়িয়ে বেড়াই।
তাতে চিত্তের ঈষৎ আরাম হয়।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
বলেন কী! পারভেজ তো আগেই বিয়া কইরা ফালাইছে! আগে জানলে তো অন্তত আপনার একটা শখ পুরোনে হেল্পো করার চেষ্টা করা যাইতো!
খুব ছোটবেলায়, জুয়েল ভাই নামে ক্লাস ফোর পড়ুয়া আমাদের এক বড়ভাই হাতের তালুতে কলম দিয়ে এই সরল রেখা আর বক্র রেখা একটা একটা করে জোড়া দিয়ে কেমনে কেমনে জানি একটা রবীন্দ্রনাথ কিংবা কোনো একটা গ্রামের নদীর তীর আর তার উল্টা দিকে ডুবন্ত সূর্য এঁকে দিতো! দেখে মনে হতো কত্তো সহজ একটা কাজ। নিজে করতে গিয়ে কাগের ঠ্যাং বগের ঠ্যাংএর বেশি কিছু করতে পেরেছি বলে মনে পড়ে না। মনে পড়লে আজকে এই মন্তব্যটা একজন পাবলো পিকাসোই করতো!
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আমিও যদি রুদ্ধদার অনুশীলনটা ঠিক মত করতে পারতাম তাহলে আপনাকে আজ লিওনার্দোর (ভিঞ্চি অথবা ডিক্যাপ্রিও যাই হতাম না কেন!) পোস্টেই মন্তব্য করতে হতো।
"পেন্সিল, তুলি, রং ছাড়াই কেবল আই-প্যাডে তর্জনী ঘসে"
একটি-ই কাজ করার আছে আমার:
- একলহমা
খাইছে আমারে! তাহলে তো সব সময় এনকারেজিং মন্তব্যের জন্যে আপনাকেও জাপানি সম্ভাষণ!
জোস হৈছে।
..................................................................
#Banshibir.
বলছেন?!
লেখা সুখাদ্য। ছবিও বেশ। আরেকটু টাইম দিলে তো মনে হয় আপনে পুরাই লাইনে চলে আসবেন। আমার লাইন এখনও লাইনে আসল না, আমার লাইনে আসা তো বহুত দূরের কথা।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
টাইমটুম কোন ঘটনা না! কেবল মাত্র রুদ্ধদার অনুশীলনই পারে একজন শিল্পীকে লাইনে নিয়ে আসতে!
এখন তো বড় হয়ে গেছেন, এখন আর রুদ্ধদ্বারে অসুবিধা কী?
বড় হইয়া তো আরেক জালা। এখন কি শুধু দ্বার রুদ্ধ করলেই কি হপে? ছবির মডেল লাগপে না?
কোন অ্যাপ দিয়ে এঁকেছেন স্কেচগুলো?
পেপার।
লেখা খুব ভাল লাগলো আর তিনটি ছবিই দারুণ। ইচ্ছে করছে, "অলস সময়" ছবিটা এখনই সুন্দর করে বাঁধিয়ে আমার স্টাডি'র দেয়ালে টাঙ্গাই
[আমার তো আপনার মন্তব্যটাই বাঁধাইয়া রাখতে ইচ্ছে করছে!]
পতিভাকে দরজা বন্ধ করে পুষতে পারেনি কি হয়ছে এখন দরজা খুলে দিয়ে দেখুন পতিভাকে প্রতিভা হিসাবে দাড় করানো যায় কিনা?হা হা
লেখা টা ভালো হয়েছে,আপনার ছবি আকতে অনেক দম লাগলেও আপনার লিখা এক দমে পড়ে ফেলেছি।সেই জন্যে আপনাকে ।ভালোথাকবেন।পতিভা নয় প্রতিভায় ভরে উঠুক দেশ।
মাসুদ সজীব
একটি র-ফলার জন্যে সংগ্রাম চলছে চলবে।
, নিজে মোটেই আঁকতে জানি না তাই সবসময় দুনিয়ার তাবৎ আর্টিস্টরাই হিংসার পাত্র , আপনার ছবি দারুন
ইসরাত
লেখাটা ভাল ছবি গুলা আর ভাল
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
থেঙ্কু।
দারুণতো স্কেচগুলা।
বলছেন!?
হুম, আর কেমন কইলে বিশ্বাস যাইবেন?
বিরক্ত হইয়েন না। এমনেই কথার কথা বলছিলাম।
ভালো কথা বললে এক চান্সেই বিশ্বাস যাই।
আরে বিরক্ত হইছি কেডা কইলো।
দারুণ। লেখা এবং স্কেচ দুইটাই চমৎকার। এবং বন্ধ ও রুদ্ধ ঘর ছেড়ে এবার বাইরে আসুন
ডাকঘর | ছবিঘর
থেঙ্কু
খালি টাইটেল ঝুলে... ছবি দেখিনা ক্যান? ... বিমূর্ত চিত্রকলা বুঝি?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
নির্ঘাত আপনার ব্রাউজারে সমস্যা। অন্য ব্রাউজারে ওপেন করে দেখুন তো।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
আমি প্রবল আগ্রহ নিয়া বসে থাকি কখন তুমি লেখা দিবা!! এইবারের লেখাটা অন্যরকম হইছে
তুই লেখা দিস না কেন?
নতুন কিছু আসলে মাথায় ঠিকই লিখে ফেলব
যদি বলতেই পারতাম দরজা বন্ধ করে কী করছি তাহলে কি আর দরজা বন্ধ করে সেটা করতে হয়! - হা হা হা। দু:খ এই যে বড়রা আজো এটা শিখলো না!!
অলস সময়ের পা-টা কি আপনার? মানে ঐ ভঙ্গীতে আধশোয়া হয়েই কি এঁকেছেন?
আই প্যাডে হাত ঘষেই যা এঁকেছেন, জোশ লাগছে দেখতে।
____________________________
ঠিক ধরেছেন। ছবির পা জোড়া আমার।
মোক্ষম কথা।
লেখা দারুন হয়েছে। আমার আবার শুধুই বক্র রেখার পারদর্শীতা। রুলার দিয়েও আমি একটা সরল রেখা আঁকতে পারিনা
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
অনেক ধন্যবাদ।
আপনি তো মারাত্মক আঁকিয়ে!! আই প্যাডে এত সুন্দর ছবি আঁকা যায় সেটা এই ছবি দেখার আগে মাথায় আসেনি। আপনি ভায়া জাত শিল্পী। এই অভ্যেস চালু রাখেন দেশ ও জাতির স্বার্থে।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
সর্বনাশ!
সবাই যখন আশকারা দিচ্ছেন দেশ এবং জাতির স্বার্থে না হয় আইপ্যাডে মাঝে মাঝে আঙুল ঘষবো।
ক্যাঠায় কইছে আপ্নে ছুবি আকপার পারেন্না, আপ্নে ছিল্পী না। আপ্নে ছিল্পী, ছিল্পী, ছিল্পী।
ছবগুলা ছুবি জোস হইসে। এক্কেরে ফাটাইয়া ফ্যালছেন গো বাই। ছাথে লেকাও জোস্।
------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ
থেঙ্কু
লেখা, ছবি বেশ ভাল্লাগ্লো
লেখা এবং আঁকা, দুটোই অসাধারন।
প্রতিভা আলার্জির মত, যতই চুলকাইবেন ততই দৃশ্যমান হইবে।পাছে লোকে কিছু বলিবে বলিয়া আড়ালে চুলকাইবেন না।তাতে শুধু নিজে জলিবেন কেউ জানিবেনা।
হাতের কাজ এবং আংগুলের কাজ দুটিই ভাল হয়েছে কমল ভাই!
-শাকিব
দারুণ লাগলো আপনার কমেন্টটা!
দুটো্ই চালিয়ে যান। লেখক এবং চিত্রকর দুইরুপেই দেখতে চাই।
পর পর দুজন শাকিব। আমি তো আগের জনকে তুমি ভেবে ফেলছিলাম!
আগের জনও তো শাকিব, তাই শাকিব কে শাকিব ভেবে ফেল করেননি। আগেরজন, পরেরজন, দুইজনই একজন-আপনারই আপনজন শাকিব।
নতুন মন্তব্য করুন