ভেতরে ঢুকে একটু এগিয়ে গেলেই চোখে পরে উজ্জল লাল রং এর দেয়ালে ঘেরা একটি জায়গা। সেখানে নানারকম স্যুভেনিয়র বিক্রি হয়। বিগত বছর গুলোতে শান্তি পুরুস্কার প্রাপ্ত লরিয়েটদের উপর লেখা বই সহ, ভিউকার্ড পোস্টার ফেস্টুন ইত্যাদি পাওয়া যায়।
পিস সেন্টারের সামনে বাক্স ভর্তি আলু রাখা আছে ড্রামে কাঠ কয়লা দিয়ে আগুন ধরানো। যার ইচ্ছে সে আলুপোড়া খাচ্ছে। (তবে এ ব্যবস্থা প্রতিদিনের জন্য নয়)
ঢোকার মুখে এই লোহালক্করের সাংবাদিক মার্কা রোবটের মত মূর্তিটি আপনাকে ক্যামেরা কাধে অভ্যর্থনা জানাবে
এটি খুব সম্ভবত আগের ভাস্কর্য্যটির পরিবার; রোদে কালো হয়ে যাবার ভয়ে ছাতা মাথায়।
সিমেন্টের ব্যাগ থেকে বানানো অফিস ব্যাগ; এটি বাংলাদেশের একটি সুভ্যেনিয়র। এটির দাম এখন বাংলাদেশি টাকায় চার হাজার পাঁচশত টাকা মাত্র
লোকজন ঘুরে ঘুরে স্যুভেনিয়র দেখছে। কেউ কিনছে বলে মনে হলো না।
বিগত বছর গুলোর নোবেল লরিয়েটদের ভিউকার্ড। ভিউকার্ডের যুগ প্রাইমারী স্কুলে পড়ার সময় চলে গেছে; তাই কেউ আর এগুলো কিনে না। নিজের দেশের লরিয়েট থাকলে তাঁর একটা ছবি তুলে নেয় শুধু।
পিস সেন্টারটির নিচের তলায় নানারকম প্রদর্শনী চলে সারা বছর। এবার চলছিলো ইউরোপিয়ান আইডেনটিটির উপর একটি ফটোগ্রাফিক ছবির প্রদর্শনী। ১২ জন ইয়াং ফটোগ্রাফারদের বলা হয়েছে এমন কিছু ছবি তুলতে যাতে সেই ছবি গুলোতে ইউরোপের আইডেনটিটি ফুটে উঠে। তারা বিভিন্ন জন বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে নানারকম ছবি তুলেছেন। কেউ ইউরোপের প্রকৃতিকে ছবির উপজীব্য করেছে, কেউ তারুণ্য কে, কেউ করছে ইউরোপিয়ান শহরের ক্রম বর্ধমান ইমিগ্রেন্ট জনগনকে। এসব ক্রিয়েটিভ চিন্তার আরেকটু এডভান্স লেভেলে গিয়ে আরেকজন ফটোগ্রাফার ইউরোপের কোন ছবি তুলেনি! তিনি সরাসরি চলে গিয়েছেন হলিউডে। তার বক্তব্য হচ্ছে বর্তমান জেনারেশনের সব চিন্তা ভাবনা, পোষাক পরিচ্ছদ সব কিছুই যেহেতু আসলে প্রভাবিত হচ্ছে হলিউড থেকে তাই ইউরোপিয়ান আইডেন্টেটেটির ছবি তুলার জন্য সে হলিউড কে বেছে নেয়! নিচে সেই এক্সিবিশনের ছবি গুলোর ছবি গুলোর কিছু ছবি তুলে দিলাম।
উপরের তলাতে সর্বশেষ নোবেল বিজয়ীর কাজের উপর ভিত্তি করে পুরো হল ঘরটি একটি মিউজিয়ামের মত করে সাজানো থাকে। এই ঘরের প্রতিটি জিনিস প্রদর্শনীর পেছেনে একটি গল্প থাকে। সর্ব শেষ শান্তি পুরস্কারটি যেহেতু ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন পেয়েছিল তাই প্রদর্শনীর থীম ইউএন কে নিয়ে।
বিশ্ববাসী প্রতি বছর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে নোবেল পুরস্কারের খবর জানার জন্য। এবার পুরস্কার ঘোষনার কে পুরস্কারটি পায় তা নিয়ে। এ বছরের ঘোষণাটি আসবে আর মাত্র কিছুদিন পর। সাহিত্য বাদে আর সব গুলো বিষয়ের উপর নোবেল প্রাইজ ঘোষনার দিনক্ষণ ঠিকঠাক এখন শুধু ঘোষণাটি বাকি।
শরীর বিদ্যা বা ঔষধ- ৭ই অক্টোবর, সোমবার সকাল ১১ঃ৩০
পদার্থ বিজ্ঞান- ৮ই অক্টোবর, মঙ্গলবার সকাল ১১ঃ৪৫
রসায়ন বিজ্ঞান- ৯ অক্টোবর, বুধবার সকাল ১১ঃ ৪৫
শান্তি- ১১ই অক্টোবর, শুক্রবার সকাল ১১ঃ০০
অর্থনীতি- দিনক্ষণ পরবর্তীতে ঠিক করা হবে (টেকনিকালি এটি নোবেল প্রাইজ না। আলফ্রেড নোবেল স্মরনে সুইডেনের একটি ব্যাঙ্ক পুরস্কারটি দেয়। এইটুকু পার্থক্য ছাড়া আর সবকিছুই নোবেল প্রাইজ গুলোর মতই।)
উপরের প্রত্যেকটি পুরস্কার সুইডেন থেকে দেয়া হলেও শান্তির পুরস্কারটি নরওয়ের অসলো থেকে দেয়া হয়। আলফ্রেড নোবেল তার জীবদ্দশায় কখনো অসলোতে আসেননি। তবু কেন তিনি পুরস্কারটি দেয়ার দায়িত্ব নরওয়েকে দিয়েছিলেন সেটা এখনো একটি রহস্য। হয়তো সে সময় ইবসেন সহ আরো বেশ কয়েক জন পিস এক্টিভিস্টদের কাজে উৎসাহিত ছিলেন। হয়তো ভেবেছিলেন এখান থেকে পিস প্রাইজ দিলে তারাও এটির সাথে যুক্ত হবেন। এসবই শুধু মাত্র ধারনা। আলফ্রেড কেনো নোবেল শান্তি পুরস্কারটি অসলো থেকে দিতে বলেছিলেন এখন আর হয়তো তা কোন দিনই জানা যাবে না। এসব ঐতিহাসিক ব্যাপার জানা যাক আর না যাক। বাংলাদেশ থেকে আমরা একটি পুরস্কার পেয়েছি অলরেডি তাতে আমি খুশি। আবার কেউ পেলে আবারও খুশি হব।
কাল থেকে নোবেল প্রাইজ ঘোষনা শুরু। অদূর ভবিষ্যতে বিজ্ঞানের কোন বিষয়ে বাংলাদেশের কেউ নোবেল প্রাইজ পাবে এমন একটি দিনের স্বপ্ন নিয়ে আছি।
মাঝের ছবিতে ইউ এর কয়েকজন ফাউন্ডার মেম্বার কে চেয়ারে বসে গল্প করতে দেখা যাচ্ছে
খুব সম্ভবত বার্লিন ওয়াল ভেঙ্গে ফেলার একটি মুহূর্ত
এই ছবিটিতে ট্রেনের উপরের দিকে এক সময় ইউরোপে ঘটে যাওয়া যুদ্ধের গুলির দাগ; ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন হবার পর সেই ট্রেনেই যাত্রীদের ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অবাধ যাতায়াত। ইউ এর অবদানের একটি সিম্বলিক শট।।
এটি একটি চমৎকার ইন্টারেক্টিভ স্ক্রিন। এখানে সহজ কিছু নব ঘুরিয়ে সকল শান্তি নোবেল লরিয়েটদের গুরুত্বপুর্ণ নথি পত্র ব্রাউজ করা যায়।
মন্তব্য
যাক, আপনার বদৌলতে মুফতে ঘোরা হয়ে গেল পিস সেন্টার।
আলু পোড়া দেখে প্রাচীন প্রবাদও মনে পড়ে গেল, "ঘড় পোড়ার মাঝে আলুপোড়া" (এখানে যে কোন ঘর পুড়ছে, কে জানে?)
ছবি প্রদর্শনীর ঘরটা বাদে, লালের আধিক্য মনে হল সব জায়গায়।
এর মর্ম ঠিক বুঝলাম না, এর কারণটা কি লেখা ছিল কোথাও ?
(নাকি অ্যাস্থেটিক ব্যাপার আছে কে জানে)।
আর, সিমেন্টের বস্তার ব্যাগটা দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো; ইস, বাংলাদেশ থেকে ব্যাগ নিয়ে ওখানে বিক্রি করলে তো বিশাল ব্যবসা দাঁড় করিয়ে ফেলা যেত। [রসিকত করলাম। আপনি অবশ্য বলেই দিয়েছেন, এরকম স্যুভেনির আসলে তেমন একটা বিক্রি হয় না]
ঘুরিয়ে আনার জন্য, আবারও ধন্যবাদ।
ভালো থাকুন, শুভেচ্ছা
পিস সেন্টারের এই সেটআপ আজই শেষ। নতুন নোবেল বিজয়ীর কাজের উপর ভিত্তি করে আবার নতুন করে সাজানো হবে সব কিছু।
ধন্যবাদ মেঘলা মানুষ।
লেখা ভালো লাগল। সবচেয়ে ভাল লেগেছে ক্যামেরা কাঁধে, অভ্যর্থনা জানানো লোহালক্করের সাংবাদিক মার্কা রোবটের মত মূর্তিটি।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
এই মূর্তি দুটো আমারও বেশ পছন্দ!
ধন্যবাদ।
ভাল লাগল , সবচেয়ে বেশি ভাল লাগল রোবট মূর্তি আর তার পরিবার।
ইসরাত
ধন্যবাদ ইসরাত
ভালো লাগলো । নতুন কিছু জানতে পারলাম ।
বাংলা লেখা দেখে বুকটা ভালো লাগায় ভরে গেল । হোক না তা সিমেন্টের ব্যাগের দ্বারা স্যুভেনির ।
শুভেচ্ছা জানবেন ।
জেসমিন পলাশ ।
আপনেকেও শুভেচ্ছা জেসমিন পলাশ।
অসলো ঘুরতে গিয়েছিলাম ২০০৬ সালের আগস্টে, পিস সেন্টারেও ঢু মেরেছিলাম একবার! আশেপাশের দর্শণীয় স্থানগুলিও ভালো লেগেছিল!
মাসদুয়েক পরেই ইউনুস চাচার কপাল খুলে যায়.....
......জিপসি
চোখ টিবির মানে কি? মনে তো হৈতাছে আপনিই বুঝি নোবেল কমিটিতে সুপারিস কৈরা আসছিলেন.... [পাল্টা চোখটিবির ইমো]
বাহ্!!
ম্যালা কিছু জানলাম।
আপনারে
হ্যাঁ, অনেক কিছু জানা হলো। ছবিগুলোও দারুণ !
ধন্যবাদ।
আমিও সেই আশা আর স্বপ্নটা, ডঃ মাকসুদুল আলম কিংবা তার দেখানো পথ ধরে অন্য কেউ।
মাসুদ সজীব
ভালো লাগলো।
কয়েক জায়গায় প্রাইজ, প্রাইস হয়ে গেছে।
____________________________
ধন্যবাদ। ঠিক করে দিয়েছি।
ছবিগুলো বেশ উপভোগ করেছি। অনেক কিছু জানলাম! আপনাকে ধন্যবাদ
সৈয়দ মনজুর মোর্শেদ
পড়ার জন্য আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
বাহ, বার দুই গেছি এটার আশে পাশে, কিন্তু ভিতরে যাওয়া হয় নি
facebook
আবার আসার দাওয়াত রইলো। আমাদের বাসা এখান থেকে ট্রামে করে ১৫ মিনিট দূরে।
হু, নোবেল "শান্তি কমিটির" তাইলে আলুর দোষ আছে কইবার চান?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
লেখার মইধ্যে কিছুই কইবার চাই নাই। আমি জিঞ্জার ক্রয়-বিক্রয় করি ভাই।
অনেক কিছু জানা হলো। লাল রং-এর ব্যাপারটা আমার জানতে মন চায়!
ভালো থাকুন খুব, আর ঈদের শুভেচ্ছা রইলো।
-এস এম নিয়াজ মাওলা
এর পরের বার ঢুকলে লাল রং এর ব্যাপারটা ওদের জিজ্ঞ্যেস করবো নে। আপনাকেও ঈদের শুভেচ্ছা।
নতুন মন্তব্য করুন