সাঁতার

রকিবুল ইসলাম কমল এর ছবি
লিখেছেন রকিবুল ইসলাম কমল [অতিথি] (তারিখ: শুক্র, ২৫/০৭/২০১৪ - ১১:৪০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আম্মুর খালাতো ভাই, আবুল মামা তখন অনেক ছোট। এলোপাতাড়ি ছুটে বেড়ানোই তার প্রধান কাজ। বড় বোন হিসেবে আমার আম্মু তাকে চোখে চোখে রাখে, যাতে বর্ষাকালে বাড়ির নামায় বেড়ে ওঠা পানিতে আবার পরে না যায়। কিন্তু আশংকাকে সত্যি করে দিয়ে মামা ঠিকই পানিতে পড়ে যায় এবং সাঁতার না জানার জন্যে মাটির ঢেলার মত তলিয়ে যায়। আর কারো চোখে না পড়লেও সেটা আম্মু দেখে ফেলে। যদিও আম্মু তখন সাঁতার জানেনা।

কিন্তু ছোটো ভাই বলে কথা। তাকে বাঁচানোর জন্যে সে পানিতে ঝাঁপ দেয়। তলিয়ে যাবার ব্যাপারে সেও আবুল মামা থেকে কোন ব্যতিক্রম নয়। এক জনের জায়গায় দু´জনে মিলে হাবুডুবু খেতে থাকে। তবে এতে করে যে সুবিধাটি হলো, সেটা হলো পানির আন্দোলন বেড়ে গেল। সৌভাগ্যক্রমে পথের পাশ দিয়ে যাওয়া একজন মধ্যবয়স্ক মানুষ পানিতে সেই হুটোপুটির শব্দ এবং অস্বাভাবিক বুদবুদ দেখতে পেয়ে বুঝতে পারে কেউ একজন পানিতে ডুবে গেছে। এবং সেই লোক এক জন পড়েছে ভেবে নামলেও বিষ্ময় নিয়ে আবিস্কার করে পানির নিচে ডুবতে বসেছে দুই জন। যদিও বহু বছর পরে আম্মু সে ঘটনাটি তার ছেলে মেয়েদের বলার সময় হাসতে হাসতে খুব মজা করে বর্ণনা করতো। কিন্তু ঘটনাটি আম্মুর মুখে শোনার সময় মধ্যবয়স্ক সেই মানুষটি এসে তাদেরকে উদ্ধার করার আগের অংশ পর্যন্ত আমার নিজেরই দম আটকে থাকতো। শুধু মনে হত উদ্ধারকারী মানুষটি আসতে এবার দেরি করে ফেলবে না তো! এর কিছুদিন পরই নানাভাই আম্মুকে সাতার শেখায়।

গ্রামের বাড়িতে প্রতি বছর শীতে যাওয়া হলেও বর্ষায় যাওয়া হত কম। কিন্তু একবার কোন এক বর্ষায় আম্মু সহ যখন আমরা আমাদের গ্রামের বাড়িতে গেলাম। তখন বাড়ির সামনের বাসের ঘাটলা বাঁধানো পুকুরে আম্মুকে সাঁতার কেটে দেখাতে বলেছিলাম। আম্মু যে কী চমৎকার করে ভরা বর্ষার পুকুরের পানিতে সাতরে দেখালো। ছোট্ট আমি পাড়ে বসে গালে হাত দিয়ে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে ছিলাম। তখন কী জানতাম যে, এই দৃশ্যটি আমার মনে এমন ভাবে গেথে যাবে যে এত বছর পরও চোখ বন্ধ করে ভাবলেই আমি সেই টলটলে পানিতে হিজল ফুলের মত আম্মুর ভেসে বেড়ানোর দৃশ্যটি দেখতে পাবো!

এরপর বহুবার গ্রামে গিয়েছি। বড়দের কাছে শুনতাম সাতার আর সাইকেল চালানোটা একবার শিখলে আর কোনদিন কেউ ভুলে না। একবার সাহস করে শিখে নিতে পারলেই হল। যত বার সুযোগ পেয়েছি পানিতে নেমেছি। অল্প পানিতে দাপাদাপি করতে করতে বড় হয়ে গেছি কিন্তু ঠিকঠাক মত সাতার শিখতে পারিনি। (বহু কসরত করে শুধু সুমিং পুলের এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত যেতে পারি কেবল। এটা কে সাতার পারি বলা যায় কিনা ঠিক নিশ্চিত নই।)

প্রাইমারি স্কুলে থাকতেই সাইকেল চালানো শিখে ফেললাম। প্রায় একই বয়েসে আমার অন্য বন্ধুরাও (শুধু ছেলেরা) সাইকেল চালানো শিখলো। কিন্তু কেউই সাতার শিখলো না। আমিও শিখলাম না। আসলে সাতার শেখার ট্রেন্ডটিই আমাদের প্রজন্মে মিসিং। ঠিক যেমন মেয়েদের সাইকেল চালানো শেখার ট্রেন্ডটাও আমাদের দেশে অনুপস্থিত। ইদানিং খুব অল্প কয়েকজন মেয়ে কে দেখছি যাদের মাঝে আগ্রহ তৈরী হচ্ছে। কেউ কেউ সাইকেল নিয়ে অনেকদূর ঘুরতেও চলে যায়। কিন্তু সেই সব মেয়েদের সংখ্যা এত কম যে এদেরকে খুব সহজেই ´ব্যাতিক্রমী´ ক্যাটাগরিতে ফেলে দেয়া যায়। অনেক মেয়েদেরই ইচ্ছে আছে সাইকেল চালানো শেখার কিন্তু ইচ্ছেটাকে কাজে পরিণত করার মত দৃঢ়তা নেই।

আমার ধারণা সাঁতার শেখার ব্যাপারে ঠিক একই ঘটনাটা ঘটছে ছেলে এবং মেয়ে উভয়ের বেলায়। এ কারণেই হয়তো সাঁতার শেখার সুযোগ সামনে আসলেও সেটাকেও কাজে লাগানো হয় না। এমনকি কখন কখন সুযোগটা কেউ খেয়ালই করে না।

পরিবার থেকে আরেকটু বেশি সচেতনতা এবং সমবয়সীদের মাঝে সাঁতার শেখার একটি ট্রেন্ড থাকলে অল্প বয়সেই বেশির ভাগ ছেলে মেয়ে সাতার শিখে ফেলবে বলে আমার ধারণা। সাইকেল চালানোটা যেমন দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে ঠিক তেমনি সাতার শেখাটাও জনপ্রিয় করা দরকার। ছোট বড় সকলকে সাঁতারের ব্যাপারে উৎসাহ দেয়া দরকার। তাহলে যে জিনিসটি ১৩ বছর বয়েসে খুব স্বাভাবিক ভাবে শিখে ফেলার কথা; সেটি শেখার জন্যে ৩১ বছর পরও কাউকে কসরত করে যেতে হবে না।

সাঁতার জনপ্রিয় করণের একটি ছোট্ট পদক্ষেপ হিসেবে এই লেখাটি লিখলাম এবং সহ ব্লগার এবং পাঠকদের অনুরোধ করছি আপনার সাতার কাটার দৃশ্যটি ভিডিও বা ছবি তুলে মন্তব্যের ঘরে যোগ করুন; যোগ করে সাঁতার না-জানাদের হিংসাতুর করে দিন। সাঁতারকে জনপ্রিয় করুন। আপনার মনের আনন্দে সাতার কাটার দৃশ্য আরেকজনকে হয়তো সাতার শিখতে উৎসাহী করবে।

এবার দেখুন আমার দুর্দান্ত সাঁতারের দৃশ্য।

তীরহারা এই সুমিং পুল
পাড়ি দিব রে...


মন্তব্য

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

সাইকেল চালানোটা যেমন দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে ঠিক তেমনি সাতার শেখাটাও জনপ্রিয় করা দরকার।

চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

রকিবুল ইসলাম কমল এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

মরুদ্যান এর ছবি

দেখে তো মনে হয় ভালই পারেন। সমস্যা কোথায়? মাথা যেহেতু উপরে রাখেন, দম নিতে সমস্যা হওয়ার কথা না। তাইলে?

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

রকিবুল ইসলাম কমল এর ছবি

সমিস্যা হলো খুব বেশি দূর যেতে পারি না।

অতিথি লেখক এর ছবি

সেই ছোট বেলায় মোটামুটি সম্পূর্ণ নিজের প্রচেষ্টায় সাঁতার এবং সাইকেল দুটোই শিখেছিলাম। আমার এক বন্ধু আছে এক টানা প্রায় ৫ ঘন্টা পুকুরে দাপাদাপি করে এক দিনের মধ্যেই সাঁতার শিখেছতারথচ আমার এই বন্ধুটিই এক সময় পানিতে নামতে ভয় পেত। আমার অনেক জোড়া জুড়ি করে তাকে পানিতে নামিয়েছিলাম। ছেলেটা সেই যে সাঁতার শিখল তারপর আর তাকে পায় কে? সাতরে আমাদেরকে পিছু ফেলে সে অনেক দূর চলে যেত।

যাহোক আপনার ব্লগ দেখে পুরানো দিনের কথা মনে পড়ল হাসি

ভাল থাকুন।

সোহেল লেহস

রকিবুল ইসলাম কমল এর ছবি

দারুণ। একটা সার্কেলে কয়কজন বন্ধু সাঁতার শিখলে; বাকিরা না শিখে উপায় আছে? হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

সাঁতার শিখা আর সাইকেল চালানো শেখা খুব কঠিন কাজ৷ ছোটবেলায় সাঁতার কাটা শিখতে যেয়ে যে কত পানি খেয়েছি এবং সাইকেল চালানো শিখতে যেয়ে যে কত আছাড় খেয়েছি তার ইয়ত্বা নেই৷ তবে এখন সব পারি৷
ধন্যবাদ সুন্দর লেখা টার জন্য!
__________
শরিফুল_93

রকিবুল ইসলাম কমল এর ছবি

আপনাকেও ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

অতিথি লেখক এর ছবি

দুটোই গুরুত্বপূর্ণ হলেও সাঁতার জীবনরক্ষায় বেশি গুরুত্বপূর্ণ। পত্রিকায় প্রায় পড়ি নদী কিংবা পুকুরে সাঁতার না জানার কারনে তরুণ কিছু প্রাণের ঝরে যাওয়া। ননানান কারণে আমাদের দেশের বিপুল জনগোষ্ঠি সাঁতার জানে না। বিশেষ করে গ্রামের জীবনের সাথে যাদের সম্পর্ক মজবুত নয় তাদের। তারপরও যখন-ই গ্রামে যাওয়ার সুযোগ থাকে সবারি উচিত সাঁতারটা শিখে নেওয়া। পরিবারকেও সেই বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত। দুটোই জানি, পারি হাসি , প্রমাণস্বরূপ ফুটুশপ ছাড়া একখান ছবি দিলাম

বান্দরবানের রিমাক্রি খাল

[img][/img]

মাসুদ সজীব

রকিবুল ইসলাম কমল এর ছবি

ধন্যবাদ। ছবির জন্য আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রথমেই ভাইয়া আপনাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই কারণ আপনার কারনেই সচলায়তনের সাথে আমার পরিচয়।

"প্রায় একই বয়েসে আমার অন্য বন্ধুরাও (শুধু ছেলেরা) সাইকেল চালানো শিখলো। কিন্তু কেউই সাতার শিখলো না। আমিও শিখলাম না। আসলে সাতার শেখার ট্রেন্ডটিই আমাদের প্রজন্মে মিসিং। ঠিক যেমন মেয়েদের সাইকেল চালানো শেখার ট্রেন্ডটাও আমাদের দেশে অনুপস্থিত। ইদানিং খুব অল্প কয়েকজন মেয়ে কে দেখছি যাদের মাঝে আগ্রহ তৈরী হচ্ছে।" - আমার মনে হয় সাইকেল এবং সাঁতারে মেয়েদের আগ্রহের চেয়ে সমস্যাগুলোই বেশী দায়ী।
১। বাংলাদেশে বাচ্চাদের খেলাধুলারই জায়গা নাই, সাইকেল কোথায় চালাবে?
২। আমাদের মায়েরা তাদের ছেলেদেরই দূরে কোন মাঠে খেলতে দিতে চান না, মেয়েকে কিভাবে দূরের কোন মাঠে সাইকেল চালানোর অনুমতি দেবেন?
৩। পৃথিবীর সব বাচ্চারা বিকেল বেলা খেলে আর বাংলাদেশের বাচ্চাদের বিকেল বেলা টিচার আসে।
৪। বাংলাদেশে সাঁতার শেখার জায়গা অনেক কম।

আপাতত এই কয়টা কারণকেই মুখ্য বলে মনে হচ্ছে। ভালো থাকবেন।

ফাহিমা দিলশাদ

রকিবুল ইসলাম কমল এর ছবি

ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য। সচলায়তনের সাথে নতুন কাউকে পরিচয় করিয়ে দিতে পেরেছি এবং সে নিয়মিত লিখছে কমেন্ট করছে দেখে খুব ভালো লাগছে। নিয়মিত লেখা এবং গঠন মুলোক মন্তব্য করতে করতে খুব তারাতারি অতিথি সচল নিক পেয়ে যাবেন আশা করি।

আপনার উল্লেখিত সমস্যা গুলো অবশ্যই সাইকেল বা সাঁতার শেখার অন্তরায় হিসেবে কাজ করে। তবে এই সমস্যা গুলোর সমাধান না হওয়া সত্তেও (বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে আরো প্রকট হচ্ছে) ইদানিং দেখবেন সাইকেল চালাতে পারা ব্যাতিক্রমি মেয়েদের সংখ্যা বাড়ছে। এবং এটা বাড়ার পেছনে যেটা কাজ করছে সেটা নিজের ইচ্ছা এবং বন্ধুরা যখন সাইকেল চালাচ্ছে তখন সেটা নিজের ভেতর চ্যালেঞ্জ অথবা উৎসাহ হিসেবে কাজ করছে।

কোন ভাবে একবার বাংলাদেশের মেয়ে গার্মেন্ট্সকর্মীদের মধ্যে একবার সাইকেলে যাতায়াতের প্রচলন করতে পারলে মেয়েদের মাঝে সাইকেল চালানো শেখার ব্যাপারটা তরান্বিত হবে। আমার বিশ্বাস সমাজে এটার প্রভাব এতোই ব্যাপক যে এই নতুন ধারাটা নানান সমস্যা কাটিয়েও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাইয়া,আমি সচলায়তনে আছি বহু দিন ধরে,কিন্তু একটা জিনিস বুঝতেছিনা! কোন পোস্ট লিখলে সেটা Created হয়েছে লেখা আসে,কিন্তু পরে সেটা প্রথম পাতায় দেখায়না! এদিকে কমেন্ট করলে সেটা মডারেশনের পরে দেখায়৷
কি কারণে এমন সমস্যা হচ্ছে একটু বলবেন কি ভাইয়া?
____________
শরিফুল_93

মরুদ্যান এর ছবি

পোস্ট লিখলেই সেটা প্রথম পাতায় আসবেনা। লেখা মডারেশন পার হয়ে আসবে, সময়টা নির্ভর করে মডারেটর কখন দেখবেন তার উপর।

মন্তব্যের ক্ষেত্রেও একই কথা।

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

অতিথি লেখক এর ছবি

সাঁতার শেখাটা প্রত্যেকের জন্যই জরুরী, শেখার ইচ্ছে থাকলে খুব বেশী সময়ও লাগেনা লাগে শুধু কিছুটা সাহস।

অভিমন্যু .
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।