১।
দৃশ্য এক:ঝুমু আপু নিহিমকে স্কুল এর পড়া শেখাচ্ছে...
- আমাদের হাত কয়টা?
-দুইতা
-পা কয়টা?
-দুইতা
-চোখ?
-দুইতা
-আম্মু, নুনু?! এইতা কেন বলা হল না! (ভ্যাজাল!)দৃশ্য দুই:
- আমাদের বয়সে বড় যারা তারা আমাদের গুরুজন, গুরুজন মান্য করবো।
- আম্মু , হাম্বা?! (নিবিড় ইতিমধ্যে হাম্বা হাম্বা বলে মেঝে তে হাঁটছে! )দৃশ্য তিন:
ঐ তে ঐরাবত!
আমি - "ঐরাবত কি"!!
উপরের দৃশ্য গুলো আমি চোখে দেখিনি। আমার ছোটভাইয়ের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে হুবুহুব কপি করা। দৃশ্যগুলো না দেখলেও, আমি সে সময়ের প্রতিটি মুহূর্ত কল্পনা করতে পারি। আমি ঠিক জানি ঐ সময় নিহিমের চেহারাটা কেমন হয়েছিল। আমি জানি নিবিড় কেমন করে গরু সেজে মেঝেতে হেঁটেছে। ছোট ভাই রিয়েল নিহিম-নিবিড়ের কান্ড দেখে বিটকেলে হাসি হেসে ঝুমু আপুকে আরেকটু খ্যাপানোর জন্যে ঐরাবতের মানে জিজ্ঞেস করছে।
২।
নিবিড় বেশ বড় হয়ে গেছে। সকালে উঠে স্কুলে যায় প্রতিদিন। ওর নিজস্ব একটা জগত হয়েছে। সেখানে সে গভীর মনোযোগ দিয়ে একা একা খেলে, নানান কিছু আবিস্কার করে। স্কাইপের ভিডিওতে আমাকে দেখে সে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে না। তবে মাঝে মাঝে মনের মাঝে জমে থাকা প্রশ্ন করে। আমেরিকার চোর কই? রাস্তায় ঘোরা গুলো পাথরের কেন? রাস্তার পাশে কি কি বিক্রি করে দেখাও। একদিন ´আমারিকায় টিনটিন´ বইটি নিয়ে এসে সেখানে তুষার জমে থাকা রাস্তার ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলো আমি সেখানে থাকি কিনা। কোন একদিন জানালা দিয়ে তুষার পড়া দেখিয়ে ছিলাম। সেটা সে কতটুকু মনযোগ দিয়ে দেখেছে তখন বোঝা না গেলেও, ঠিকই আবার বইয়ের ছবির সাথে মিলিয়ে আমাকে দেখানোর জন্য অপেক্ষা করে ছিলো আমার স্কাইপ কলের জন্য।
নিবিড়ের কাজ নিহিম কে পর্যবেক্ষন করা আর সেটা কে ইম্প্রোভাইজ করে কিভাবে সবার মনযোগ আকর্ষন করা যায় সেই চেষ্টা করা। নিবিড় স্কাইপের যাদুতে মুগ্ধ। আমার মনে হয়, সে আমার সাথে কথা বলার জন্য অপেক্ষায় থাকে। আমি কিছুদিন কল দিতে না পারলে নিজেই আমার সাথে কথা বলবে বলে তার মা´মুনি বা ছোট মামাকে স্কাইপে কল দেয়ার জন্য ব্যাস্ত করে ফেলে।
এরকমই একদিন, দুপুরের খাবারের পর কফি খেতে খেতে ভাগ্নে নিহিম এবং নিবিড়ের সাথে স্কাইপে গল্প করছিলাম। 'কি করতেছ মামা?', নিবিড়ের প্রশ্নের উত্তরে একবার বলেছিও যে কফি খাচ্ছি। তখন সেটা নিয়ে খুব আগ্রহ দেখালো না। কফি চিনতে পারলো কিনা তাও বুঝতে পারলাম না। তারপর অন্য নানান অদ্ভুত বিষয়ে কথা হলো। কিন্তু ১০/১৫ মিনিট পরে হাতের কাপ দেখিয়ে আবারও একই প্রশ্ন করলো,
: মামা কি খাও?
আমাদের বাসায় কফির চেয়ে চা বেশি খাওয়া হয় বলে আমি এবার ওদের সহজে বুঝবার জন্য কফি না বলে বললাম, চা খাই।
: দেখি? দেখাও আমাদের।
ক্যামেরার সামনে কাপটা ধরে দেখালাম।
: না, হয় নাই। কাপের ভেতরে দেখাও।
ওয়েবক্যামের সামনে কাপটা কাত করে ধরে ভেতরে দেখালাম। দুই ভাই অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, মিথ্যা কথা বলতেছো কেন? এটা তো কফি!!
৩।
নিহিম ছবি আঁকতে পারে। তার সব ছবিতেই একটি গল্প থাকে। নিচের ছবিটি সে দেয়ালে এঁকেছে।
বর্ষায় বৃষ্টিতে ঘরে পানি চলে আসে। তাই বাসাটা দোতালা করার কাজে হাত দেয়া দরকার এরকম কথা হয়তো সে তার মার মুখে শুনে থাকতে পারে বিভিন্ন সময়। সেটাই হয়তো তার এই ছবিটি আকার অনুপ্রেরণা।
নিহিমের নিজের বর্ণনায় ছবির বিষয়বস্তু জানার পর তাকে জিজ্ঞেস করলাম, - ছবিতে লাল-লাল গোল্লা গুলো কি?
সে কপাল কুচকে বললো, - ´আমি কী জানি? ওগুলা তো নিবিড় দাগাইছে।´
নিবিড় সাথে সাথে করুণ মুখ করে বললো, - দাগাই নাই তো। আমিও ছবি আঁকছি।
নিহিম বিরক্ত ভঙ্গিতে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে বলে, - গোল্লা গোল্লা দাগ কি কোন ছবি হইলো?
নিবিড় তারাতারি কিছু একটা ভেবে সাথে সাথেই উত্তর দিলো, - এগুলো হচ্ছে চুড়ি। মা´মণির হাতের চুড়ি!
আমি তের হাজার দুইশ বিয়াল্লিশ কিলোমিটার দূরে বসে আমার দুই ভাগ্নের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকি। হাঠাৎ করে নিবিড় বলে উঠে, মামা তোমাকে দেখা যায়, তোমার কথা শোনা যায় কিন্তু তোমাকে ধরতে পারি না কেন?
৩।
এবার নিহিমের গান শুনুন তার ছোট মামার সাথে গলা মিলিয়ে(?) গাইছে:
আর নিবিড় অক্ষর চেনার আগেই বাংলা শব্দ বানান করে শোনাচ্ছে:
মন্তব্য
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
নিহিমের তো ম্যালা গুণ। বিরাট আঁকিয়ে আবার সঙ্গীত শিল্পী।
বাচ্চাকাচ্চা ভালু পাই।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
সে ইদানিং চিত্র শিল্পী হয়েছে। ঘরের দেয়াল থেকে শুরু করে সব জায়গায়ই তার চিত্রকর্ম। তবে জন্মগত ভাবে সে গিটারিস্ট। ঠিকমত কথা শেখার আগে সে গিটার কেনার জন্য কঠিন বায়না ধরছিলো, তাও ব্যাটারি চালিত হলে হবে না। স্ট্রিং আলা গিটার লাগবে। বহু ঝামেলা করে ছোটদের সত্যিকারি গিটার যোগার করতে হয়েছে। আগামিতে নতুন কি প্রতিভার স্ফুরণ ঘটে সেটাই এখন দেখার বিষয়।
ব্যাখ্যাটা চমকপ্রদ। নিবিড়ের বানানগুলোও কম চমকপ্রদ না!
ওরা বড় হলে এ লেখাটা দেখলে খুব মজা পাবে, আর তাদের মানসম্মান 'ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়া'র জন্য 'তীব্র প্রতিবাদে মুখর হবে' এমন সম্ভাবনাও আছে
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
বানায়াইয়া বানাইয়া কথা বলতে এরা ওস্তাদ। ছবির একটা কাহিনী দাঁড়া করা তো এদের কাছে কোন ব্যাপারই না।
নিবিড়ের বানান রীতি শুনে ছুডুবেলার আরবি শিক্ষার মক্তবের কথা মনে পড়ে গেলো। আলিফা জবর আ, আলিপ জেরি, আলিপ্পেশুন আ-ইয়ি-উুন টাইপের বানান করলো নিডিড়।
নিহিমের ছবির প্রাসঙ্গিকতা দারুণ। র্যাপ গানে সহকারী ভোকালেও ভবিষ্যত উজ্জ্বল দেখছি
ছোটমামা গিটার টা ভালোই বাজায়
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
হা হা হা।
ছোট মামাকে জানিয়ে দিবো খুশী হবে নিশ্চয়ই।
অপ্রস্তুত অবস্থায় তার গিটারের কিছু শব্দ রেকর্ড করে রেখেছিলাম। আপনার প্রসংশা শুনে খুশিতে সেই ভিডিও গুলোও এমবেড করে দিলাম।
বাচ্চা ভয়ংকর আর কাচ্চা ভয়ংকর, দুইটাকেই অনেক আদর
[অটঃ নিহিম মানে কি? ]
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
যদিও নামটা আমারই দেয়া। কিন্তু সে এক বিড়াট ইতিহাস। কোনদিন সেটা নিয়ে কিছু লিখলে আপনাকে নক করবো। আলাদা করে এই নামের কোন মানে নাই।
আমার দুই বাচ্চার টুকরো গল্পগুলো আমি মায়ের ডায়েরিতে লিখে রাখি। মন খারাপ বা অবসর বা খুব অস্থির সময়ে পড়ে আপনমনে হাসি। আর বাসার দেয়ালগুলোতো ওদের ড্রয়িং খাতা, রাফখাতা আর ডায়েরি। খুব ভাল লাগল ভাগ্নেদের দুষ্টুমি আর মিষ্টুমির গল্প-গান।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
ডায়েরিটা বড় হয়ে ওরা হাতে পেলে দারুণ হবে।
ভাবুন একবার, এই স্কাইপে না থাকলে প্রবাসজীবন কী ভয়াবহ হয়ে উঠতো!
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
সেটাই।
(মাঝে মাঝে ভাবি স্কাইপহীন প্রবাসজীবন আমার বাবা কেমন করে কাটালো!)
বাচ্চারা মিথ্যা বলেনা কখনো তাই তাদের অনুভূতিও সত্য ও সুন্দর ।
-নাজিয়া ফেরদৌস
ওরেরেরেরে
এইগুলারেতো মিস করে গেছিলাম। চরম! চরম! চরম!
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
আজ সকালটা ভরে গেল এই লেখাটা পড়ে।
দুই গুণীর এখন খবর কি?
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
নতুন মন্তব্য করুন