আজ ৫ জুন, বিশ্ব পরিবেশ দিবস। জাতিসঙ্ঘ ২০১১ সালকে International Year of Forests ঘোষনা করেছে, আর তার সাথে সংগতি রেখে এ বছরের পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য "Forests: Nature at Your Service"। ১৯৭২ সালের ৫-১৬ জুন অনুষ্ঠিত UN Conference on Human Environment-এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী প্রতিবছরের এই দিনে পালন করা হয় পরিবেশ দিবস।
আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রধান উপাদান বন। কাজেই পরিবেশ রক্ষার জন্য অনেক করণীয়র একটা হচ্ছে এই বন রক্ষা করা। পৃথিবীর নানাপ্রান্তে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোয়, বন কমছে প্রতিনিয়ত। পৃথিবীই জুড়ে মোট বনভূমির পরিমান প্রায় ৪ বিলিয়ন হেক্টর যা মোট স্থলভাগের এক-তৃতীয়াংশের একটু বেশি। আর বন ধংসের হার বছরে প্রায় ১৩ মিলিয়ন হেক্টর। অর্থাৎ, বাংলাদেশের মোট আয়তনের (১৪,৭ মিলিয়ন হেক্টর) প্রায় সমান আয়তনের বন প্রতি বছর উজাড় হয়ে যাচ্ছে।
পৃথিবীর ইকোসিস্টেমগুলোর (ecosystems) উপর এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় গবেষনামূলক যে কাজ হয়েছে তা Millenium Ecosystem Assessment (MEA) নামে পরিচিত। এ প্রকল্পের আওতায় পৃথিবীর সব ধরনের ইকোসিস্টেমের অতীত, বর্তমান ও সম্ভাব্য ভবিষ্যত সিনারিও নিয়ে কাজ করেছেন প্রায় দেড় হাজার বিজ্ঞানী এবং এর ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে ৫টি টেকনিক্যাল ভলিউম ও ৬টি সিনথেসিস রিপোর্টে। MEA-এ Ecosystem and their services চ্যাপটারে বিস্তারিত বলা হয়েছে প্রতিটি ইকোসিস্টেম থেকে আমরা কি কি বস্তু (Goods) এবং সেবা (Services) পেয়ে থাকি। আমি নিচে বনাঞ্চল থেকে প্রাপ্য ৪ ধরনের সেবার কথা সংক্ষেপে লেখার চেষ্টা করছি।
প্রথমত বস্তুগত সেবা বা Provisioning services। বস্তুগত সেবাগুলো আমরা সহজেই বুঝে নিতে পারি কেননা সেগুলো দৈনন্দিন জীবনে আমাদের সরাসরি কাজে লাগে। যেমন- খাদ্য, কাঠ, জ্বালানি, ঔষধ, মধু, মোম, মাছ, কাঁকড়া ইত্যাদি। বন থেকে আমরা নানান বনজ দ্রব্য পেলেও সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক পণ্য হচ্ছে কাঠ। এফএও-র ২০০১ সালের তথ্য মতে প্রতি বছর আন্তর্জাতিক বাজারে ১৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাঠ কেনাবেচা হয়। তবে আমি নিশ্চিত গ্রামের কৃষক তার বাড়ির ভিটা থেকে যে গাছ কেটে বাজারে চেরাই করে ঘর বানাচ্ছে, সেই গাছের হিসাব এই মার্কিন ডলারে নেই এবং আমার ধারণা এই 'দেখা যায়না এমন (unseen)' কাঠের বাজারমূল্য এফএও-র হিসাবকে দ্বিগুন করে দিবে।
শুধু কি কাঠ? এফএও-র আরেক পরিসংখান অনুযায়ী বনাঞ্চলগুলো থেকে বছরে ১.৭৫ বিলিয়ন ঘনমিটার জ্বালানি কাঠ আহরণ করা হয় যার ৯০ ভাগ আসে উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে (আগে বলা হয়নি- আন্তর্জাতিক বাজারে বেচাকেনা করা কাঠের ৮০ ভাগ আসে উন্নত বিশ্বের বন থেকে. আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা (International Energy Agency) বলছে পৃথিবীর মোট ব্যয়িত শক্তির ১১ ভাগের উংস জৈব পদার্থ বা বায়োমাস, যা প্রধানত জালানি কাঠ থেকে আসে।
বন থেকে প্রাপ্ত দ্বিতীয় সেবাটিকে বলা হয়েছে রেগুলেটিং সার্ভিস (Regulating service)। এর আওতায় উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বৈশ্বিক জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ। বনাঞ্চল আমাদের স্থানীয়, আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক জলবায়ুকে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করে। আমরা সবাই জানি নিয়ন্ত্রনহীন কার্বন নি:সরনই হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারন। জেনে অবাক হবেন, পৃথিবীর বনাঞ্চলগুলো যে পরিমান কার্বন ধরে রাখে তার পরিমান বায়ুমন্ডলের মোট কার্বনের প্রায় দ্বিগুন। অথচ বন উজাড় হওয়ার কারনে প্রতি বছর ১,৫ Pg C (১,৫ বিলয়ন টন) বাতাসে মিলিয়ে যাচ্ছে। (Science-এর এই পেপারটিতে চমৎকার কিছু তথ্য আছে, পড়ে দেখতে পারেন)। আর স্থানিক জলবায়ুর উপর বনের প্রভাব (আসলে বনহীনতার প্রভাব) বুঝতে হলে বেশিদূর যাওয়ার দরকার নেই, একটু উত্তর-পশিমাঞ্চল (রাজশাহী বিভাগ) থেকে ঘুরে আসুন।
তৃতীয় সেবাটি হচ্ছে Cultural service (সাংস্কৃতিক সেবা? বাংলা করলে আসল অর্থটা বোঝা যাচ্ছে না)। পৃথিবীর অনেক বনবাসিই বনকে দেবতা হিসেবে জানে ও পূজা করে; আমরা নিজেদেরকে রিফ্রেশ করার জন্য বনে ছুটে যাই, বনের সৌন্দর্য দেখলে মুগ্ধ হই, ফটোগ্রাফি করি; বিশ্বের অনেক দেশই বন ভিত্তিক পর্যটন (ecotourism) থেকে বিপুল রাজস্ব আয় করছে- এ সবই এই Cultural service-এর আওতার মধ্যে।
বনের সবশেষ সেবাটিকে বলা হচ্ছে Supporting service। এই সেবাটা মানুষ সরাসরি ভোগ করে না, কিন্তু বন না থাকলে বোঝা যেত কিভাবে এ সেবাটাও আমাদের জন্য অপরিহার্য। বন সরাসরি মাটি তৈরিতে (soil formation) এবং ভূমিক্ষয় রোধে নিরবে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। পৃথিবীর বন্য জীবজন্তুর বাসস্থান দিচ্ছে বন, সংরক্ষণ করছে প্রাণ বৈচিত্র। সবচেয়ে বড় তথ্য হচ্ছে- ইট-কাঠের জঞ্জালে নিশ্বাস নিতে নিতে আমরা 'আধুনিক' মানুষেরা যখন হাঁপিয়ে উঠছি, ঠিক সেই মুহুর্তে পৃথিবীর ৩০০ মিলিয়ন মানুষ বনের ভেতরের মুক্ত হওয়ায় জীবন যাপন করে যাচ্ছে। আমাজনের রেইন ফরেস্ট থেকে শুরু করে আফ্রিকার গহীন বনাঞ্চল কোথায় নেই মানব বসতি (বিস্তারিত অন্যদিন হবে)? আর পৃথিবীর ১.৬ বিলিয়ন মানুষের জীবিকা কোনো না কোনোভাবে বনের সাথে সম্পৃক্ত।
খুব সংক্ষেপে যদি বলি, বন আমাদের কি কি উপকার করে সেটা বোঝার ভালো উপায় হচ্ছে গাছপালাবিহীন একটা ন্যাড়া পৃথিবী কেমন হতে পারে সেটা কল্পনা করে নেয়া।
'বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০১১' সবাইকে সচেতন করে তুলুক।
মন্তব্য
বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০১১ সফল হোক। ধন্যবাদ লেখার জন্য।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
ধন্যবাদ আপনাকেও।
-
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
লেখার জন্যে
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
আপনাকেও
বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০১১ সফল হোক। মানবজাতি পূর্বের যে কোন সময়ের চাইতে বেশি গ্রীনহাউজ গ্যাস তৈরি করুক। আমিন!
আমিন!
ধন্যবাদ
একটা সুন্দর বাংলা শিরোনাম করে দিন না, আরো ভালো লাগবে।
চমৎকার লেখা।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
উমমমমম দিলাম।
বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রাক্কালে তরমুজ খাওয়া চলছে।
ওফফ দারুন ছবি!
অনেকদিন চুপচাপ যে?
খাইসে!
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
লেখায়
ধন্যবাদ
নতুন মন্তব্য করুন