ক্লাশ টু’র ছাত্র প্রান্তিক, তার স্কুলের বাংলা বইটা এগিয়ে দিয়েই বললো- ‘বাপি, এ বই কে লিখেছে ?’
কে লিখেছে মানে ?
একটা বাচ্চা ছেলেকে যেভাবে যেটুকু বুঝানো যায় সে চেষ্টাই করলাম। শিশুদের কাছে যে সবকিছুই পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশ্লেষণ করতে হয়, তাও মাথায় ছিলো। কিন্তু বেশিদূর আগানো হয় নি, তার আগেই নির্দিষ্ট একটা পৃষ্ঠা দেখিয়ে তার দ্বিতীয় প্রশ্ন- ‘এটা কে লিখেছে... ?’
প্রচ্ছদ পেরিয়েই প্রথম পাতার ভেতরের পৃষ্ঠায় ‘জাতীয় সংগীত’ শিরোনামে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত আমাদের প্রিয় জাতীয় সংগীতের প্রথম দশটি লাইন উৎকীর্ণ। এত্তটুকুন ছেলে যে এরই মধ্যে এতগুলো ছড়াকবিতা ও গল্পের বই পড়ে ফেলেছে, অথচ সে কিনা বইয়ে মুদ্রিত জাতীয় সংগীত দেখিয়ে এমন গর্দভের মতো বলে- এটা কে লিখেছে ! ফাজলামো করছে না তো ? মনঃক্ষুণ্ন তো বটেই, হতাশাযুক্ত ক্ষোভ নিয়ে ধমকে দিতে যাচ্ছিলাম প্রায়...। থমকে গেলাম, নীচে মুদ্রিত রচয়িতার নামটিতে চোখ পড়তেই !
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক ২০০৩ সাল থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তকরূপে নির্ধারিত ‘আমার বাংলা বই’ দ্বিতীয় ভাগ বইটি এতগুলো বছর যাবৎ জাতীয় সংগীত রচয়িতার নাম এভাবে 'রবীন্দ্রাথ ঠাকুর' হিসেবে বিকৃত ভুল ছাপা নিয়েই গোটা দেশের স্কুলগুলোতে পঠিত হয়ে আসছে ! কারো চোখেই কি পড়লো না এটা ! আর যদি পড়েই থাকে ? ধিক্ অকৃতজ্ঞ আমাদের লজ্জাহীন এমন হীন বৈশ্যবৃত্তিকে, যারা একটিবারও আবশ্যকবোধ করলো না এই বিকৃত মুদ্রনটাকে সংশোধন করতে ! কিন্তু আমাদের জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এর দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজ্ঞ(!) কর্মকর্তাদের দায়িত্বটা কী ? এরা কি এতোটাই অথর্ব হয়ে গেলেন ! ভাষাপ্রেম, দেশপ্রেম আর শিশুশিক্ষায় এদের দায়িত্ববোধের এই নমূনাকে কী দিয়ে সংজ্ঞায়িত করবো ? দুঃখে লজ্জায় অবোধ সন্তানের চোখে যেন কল্পনায় আমাদের প্রতি তার নিষ্কলুষ ধিক্কারই দেখতে পেলাম !
রবীন্দ্রনাথ আমাদের চিরকালীন অহঙ্কার। তাঁর ১৪৭তম জন্মজয়ন্তীতে এসে তাঁর কাছে অনিবার্য কৃতজ্ঞতায় যতই নতজানু হই না কেন, এই ক্ষমাহীন অযত্ন অবহেলাকে কী দিয়ে মোচন করবো আমরা ?
এটাকে কীসের অবমাননা বলবো ? কেউ কি জবাব দেবে এর ??
(১২/০৫/২০০৮)
মন্তব্য
অমার্জনীয় একটা অপরাধ!
লজ্জা, লজ্জা!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
এই ঘৃণা প্রকাশের জন্য আমার একটা শব্দ দরকার
কেউ কি আমাকে একটা শব্দ ধার দেবেন?
লীলেন ভাই, সে শব্দটা তো আমিও খুঁজে পাচ্ছি না !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
- রং পারসন ইন দ্য রাইট প্লেস!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
লীলেন ভাই - "শুয়ার!" এ হয়?
এদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশের জন্য একটা শব্দের যতটুকু ঘৃণা ধারণ করার ক্ষমতা দরকার। আমার পরিচিত কোনো শব্দই তার ৫% ঘৃণা ধারণ করে না
কেউ কি একটা নতুন শব্দ খুঁজবেন?
বিকৃত মহাজনরাই তো এ কাজ করবেন। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড-কে দোষ দিয়ে লাভ কি? আর তাছাড়া আমি মনে করি না এর জন্য গোটা প্রতিষ্টানকে দায়ী করতে হবে।
আমাদের এ স্বভাব কবে ধ্বংস হবে?
কেন আমরা একজনের দোষে অন্যদেরকেও দোষী টাউরাই?
যে প্রতিষ্ঠানে কোন জবাবদিহিতা বা দায়বদ্ধতা নেই, সে প্রতিষ্ঠানও কি দায়ী নয় ?
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
রণদীপম দা
আপনার ছেলে যে ধরতে পেরেছে সেটা কম কী! সরকারী লোকজনের কাছে কিছু আশা করতে নেই।
কিন্তু আমাদেরকে তো কোথাও না কোথাও আশা করতেই হবে। সেটা কোথায় ?
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
না, ঠিক আছে।
একটা বানান ভুল ঠিক করতে গিয়ে যা লিখবে, ওখানে আরো বানান ভুল হয়ে যাবে। কী দরকার রিস্ক নেয়ার!!!
শিমুল,
কেমনে বেটা পারিল সেটা জানতে !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
ধিক! ধিক সেইজনকে যার ভুলে এই ক্ষমার অযোগ্য ব্যাপারটি ঘটেছে!
ফেরারী ফেরদৌস
নতুন মন্তব্য করুন