আজব পরীক্ষার হল, অভূতপূর্ব উদ্ভাবন !
পরীক্ষা হলের নমূনা দেখে ততক্ষণে চোখ কপালে উঠে গেছে আমার ! কৌতুকও বোধ করলাম বৈ কি ! আমাদের ঢাকা শহরের ব্যস্ত রাস্তাগুলোয় এরকম বাস গাড়ির দেখা পাওয়াটা একটুও বিচিত্র নয়, যেগুলোর একটা ফিটিংসও তার আদিরূপে অবশিষ্ট নেই আর। বরং মরিচায় খাওয়ার বাকি থ্রিকোয়ার্টার দরজাটা পেরিয়ে যে সীটটাতে বসলেন, ক্ষয়ে যাওয়া পাটাতনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে নীচের দিকে চেয়ে হয়তো পেছনে ধাবমান কালো রাস্তার গতিটা পরখ করছেন মনোযোগ দিয়ে ; বুঝতে না বুঝতেই সীটসহ সামনের যাত্রীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন ! অর্থাৎ ড্রাইভার ব্রেক কষেছে। তাও ভাগ্য যে সমূহ সম্ভাবনা থাকা সত্তেও পাটাতন ভেঙে গাড়ির নীচে রাস্তায় পড়ে যান নি। গাড়ির এরকম আনুষঙ্গিক দুরবস্থার বর্ণনা আর নাই দিলাম। যাক্, ময়-মুরব্বির দোয়া বরকতে ভালোয় ভালোয় গাড়ি থেকে নেমে ভাবছেন- এ গাড়িগুলো রাস্তায় ওঠলো কী করে ! আপনাকে নিশ্চিত করতে পারি যে, চিন্তা আপনার পথ হারিয়েছে, ওল্টো হাঁটছে। কেননা ওগুলো রাস্তা থেকে নামলে তো ওঠার প্রশ্ন আসবে ? বরং উত্তর খুঁজোন- শরীরে আর কতটুকু কাপড় আটকে থাকলে তাকে নেংটা বলে। এই যখন আমাদের অত্যাবশ্যকীয় পরিবহন ব্যবস্থার নৈমিত্তিক চেহারা, তখন কোন্ অবস্থার প্রেক্ষিতে একটা পরিবহন বাসকে ব্যবহার-অযোগ্য করে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয় ভাবতে পারেন ?
মহাখালী থেকে বিমান বন্দর রোড ধরে এগিয়ে গেলে খিলক্ষেত বাজারের ঠিক আগেআগে বাঁ দিকে নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকার লাগোয়া বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থা বি আর টি সি-র বাস ডিপোটা অনায়াসে চোখে পড়বে। গেট দিয়ে সোজা ভেতরে ঢুকে যান। টিনশেড লম্বা পাকা একতলা স্কুলঘরের মতো অফিসটা ছাড়া আর যা দেখবেন তা হচ্ছে ভেতরে সারি সারি পড়ে থাকা বি আর টি সি-র অনেকগুলো পরিত্যক্ত ডবল-ডেকার বাস। সর্বশেষ সংযোজন যেটা, অন্যগুলোর মতো বিধ্বস্ত চাকাগুলো তখনও মাটিতে ন্যাচারালি দেবে যায় নি বা পুরোপুরি অদৃশ্য হয়ে যায় নি। তখন পর্যন্ত ভেতরের সীটগুলো নাটবল্টু হারিয়ে উধাও হয়ে যায় নি। এর পূর্ববর্তী সংযোজনগুলোর বর্ণনা দিতে গেলে হয়তো আমার ভাষা ব্যবহারের নাটবল্টুই ঢিলা হয়ে যেতে পারে। ঢাকা বা ঢাকার বাইরে বিভিন্ন থানা বা পুলিশস্টেশনগুলোতেও এই পরিচিত দৃশ্যটা প্রতিনিয়তই চোখে পড়বে। পুরান লোহালক্কর বা স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রি করলেও সরকারের হয়তো কোটি কোটি টাকা কোষাগারে জমা হতো, আয় হতো। কিন্তু যুগ যুগ ধরে মাটির খাদ্য বানিয়ে রাষ্ট্রের সম্পদ অযথা অপচয়ের পাশাপাশি আশেপাশের যৎকিঞ্চিত খালি জায়গাগুলোকে এইসব বর্জ্যের আধার বানিয়ে পরিবেশ দুষণের উৎস করে ফেলে রাখা হচ্ছে। তবে বাঙালির উদ্ভাবনী ক্ষমতা যে কী মারাত্মক, তার নজির আবারো পাওয়া গেলো বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বি আর টি এ-র কর্মকর্তাদের অভূতপূর্ব মেধার বাহারি ব্যবহার দেখে ! এক কথায় দারুণ ! এই পরিত্যক্ত বাসগুলোকেই তারা বানিয়েছে সাম্প্রতিক ড্রাইভিং লিখিত পরীক্ষা নেয়ার উল্লেখিত আজব হল ! গত ২৩ এপ্রিল থেকে নাকি মিরপুর-১৩ এর নির্ধারিত দপ্তরের বদলে এখানে খিলক্ষেতে শুরু করা হয়েছে এই বিশেষ ব্যবস্থায় পরীক্ষা নেয়ার প্রক্রিয়া।
অফিস থেকে ছুটি নিয়ে আমিও কি আর এমনি এমনি গিয়েছি ? জীবনের কতো সখই তো অপূর্ণ রয়ে গেছে ! সম্ভাবনা স্তিমিত হয়ে আসা কার-ড্রাইভের এই সখটা যে পুরা করতেই হবে এমন তো কথা নেই। তবু সম্ভাবনা যখন নিঃশেষ, তখনি হঠাৎ কেন জানি সখটা মাথাচারা দিয়ে ওঠলো। ধাম করে ড্রাইভিং স্কুলে ভর্তি হয়ে সাধটাকে ঘোল খাইয়ে নিলাম। আর স্মৃতিটাকে চিহ্নিত করতেই অপেশাদার চালক হিসেবে লাইসেন্স পরীক্ষায় আমার এই হাজির হওয়া।
বিভিন্ন বয়েসী শত শত পরীক্ষার্থীর কাতারে লাইন ধরে উঠে বসলাম ডবল-ডেকারের সীটে। একটা গাড়ি গাড়ি ভাব। আহা, এমনটাই তো হওয়া উচিৎ ! বিষয়ের সাথে অনুষঙ্গের কী দারুণ মিল ! জীবনের ক্রমহ্রাসমান বৈচিত্রের মাঝে অন্যরকম এক আমেজে সামান্য কিছুটা সময়ের জন্যে হলেও কৌতুককর অভিজ্ঞতাটা বেশ উপভোগ করলাম। বেরিয়ে যেতে যেতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে কৌতুকের সুরে বললাম যখন- আহা ! পরিত্যক্ত আবর্জনাকে ব্যবহার উপযোগী করার কী দারুণ উদ্ভাবনা আপনাদের ! তিনিও কৌতুক হেসে জবাব দিলেন- ‘এমন আচানক মজার গল্প করার মওকা এক মাস পরেও আর পাবেন না। আপনারা দারুণ ভাগ্যবান।’
ভাগ্যবান ? হা হা হা ! তাই তো ! নইলে এখন এই ব্লগরব্লগরটাই বা করতাম কোত্থেকে !
(১৮/০৫/২০০৮)
মন্তব্য
আইডিয়া তো ভালই ঠেকে আমার কাছে। অপচয় তো একটু হবেই, আমাদের অনেক আছে। আর আপনি কি এলের পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলেন?
আরিব্বাপ!! পুরা শিবরাম চক্রবর্তীর বুদ্ধি দেখি।
কি মাঝি? ডরাইলা?
বুদ্ধিটা দারুণ
কিন্তু এদেরকে অনুসরণ করে যদি স্যানিটেশন সংক্রান্ত চাকরির ইন্টাভিউ কেউ ড্রেনে কিংবা ময়লার ডিপোতে আয়োজন করে তাহলে?
হা হা হা!
এক নাজমুল বেহুদা ভাঁড় জেলে থাকলে কি হয়, যোগাযোগ মন্ত্রনালয়ে কি রগুড়ে লোকের অভাব?
নতুন মন্তব্য করুন