সকালে অফিসে ঢুকেই জরুরি ফাইলটা নিয়ে বসের রুমে দৌঁড় দেবো প্রায়, কলমটা আর খুঁজে পাচ্ছি না। তালাহীন ড্রয়ারটা হাতরে তন্ন তন্ন করেও কলমটা খুঁজে পেলাম না। আগে টেবিল থেকে কলম হারিয়ে যেতো বলে এখন ড্রয়ারেই রেখে যাই। এখানেও তথৈবচ ! অন্যের বই বউ আর কলম, এই তিনের প্রতি শিক্ষিত বাঙালির আদি ঝোঁক যে এখনও অত্যন্ত প্রবল আবারো তার নমূনা এই জরুরি মুহূর্তে তারিয়ে তারিয়ে অনুভব করবো কী, সামনে পিয়ন কাউকে না পেয়ে নিজেই ছুটলাম দোকানের উদ্দেশ্যে। জরুরি ফাইল ; হয়তো এক্ষুনি এটা নিয়ে বসদের দৌঁড় ঝাঁপ শুরু হয়ে যাবে।
পাঁচ টাকা দামের বলপেন হাতে নিয়ে ফের অফিসে ঢুকেই দেখি পরিস্থিতি জটিল। পিয়নের বাঁকা চোখের ইঙ্গিত বসের রুমের দিকে। এরই মধ্যে দু দুবার জরুরি তলব হয়ে গেছে। প্রথমবারের নিম্নচাপ দ্বিতীয়বারে ঘূর্ণিঝড় হয়ে বয়ে গেছে এক দফা। এখন যে কী আছে কপালে, বিধাতাই জানেন। ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বরের নাম জপতে জপতে সোজা বসের রুমে।
অফিস ক’টায় ? বজ্রহুঙ্কারে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত !
স্যার, আমি অফিসে একবার এসে গেছি ; কলমটা...
অফিসে একবার মানে ? অফিস দিনে ক’বার...?
না.. মানে.. স্যার.. কলমটা...
অফিসটা কি শ্বশুরবাড়ির আড্ডাখানা...
আচমকা এমন তীব্রগতির বিরতিহীন বজ্রঝড়ে আমার তখন টালমাটাল অবস্থা। বিপজ্জনকভাবে হাইপ্রেশারের রুগী অফিস-বসের এই এলার্মিং অবস্থায় আমি আর আত্মপক্ষ সমর্থন করবো কী, প্রথম কথাটাই তো বলা হয়নি। ইতোমধ্যে যা-ই বলতে উদ্যত হচ্ছি, না মা-মা-মানে ইয়ে স্যা-স্যার আ-আমি ক-কলমটা.. আমার এসব আমতা আমতা অর্থহীন তোতলামোতে ঘূর্ণিঝড় প্রবল থেকে প্রবলতর হয়ে হ্যারিকেনের মাত্রাও ছাড়িয়ে গেছে। শেষপর্যন্ত বাঁচার আশা বাদ দিয়ে এই অদৃষ্ট-ঝড়ের হাতেই নিজেকে ছেড়ে দিলাম।
বাতাসের তোড়ে জীবিত না মৃত জানি না, বিধ্বস্ত অবস্থায় এক দায়িত্বহীন অপদার্থ অফিসারে পরিণত হয়ে আমি যখন ক্ষোভ দুঃখ অপমান নিয়ে বেরিয়ে এলাম, অসংখ্য কৌতুকপ্রিয় কৌতূহলী দৃষ্টির কেন্দ্র বানিয়ে বেআদব পিয়নটা হাজিরা খাতাটা বাড়িয়ে ধরলো আমার সামনে। আমি তখন প্রাণের স্পন্দন খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছি শুধু। দেখি খাতাটায় আমার নামের পাশে আজকের তারিখের স্বাক্ষরবিহীন ফাঁকা ঘরটাতে হাতে আঁকা এক রক্তাক্ত বৃত্তের মধ্যে একটা বিশাল প্রশ্নবোধক চিহ্ন, অসভ্য লাল !
(২৮/০৫/২০০৮)
মন্তব্য
যে দেরিতে অফিস গিয়ে ম্যানেজ করতে শেখেনি তার চাকরি করারই অধিকার নেই
অফিসে এমন পরিবেশ সৃষ্টি করবেন যে ভুলে কোনোদিন সময়মতো অফিসে চলে গেলে যেন সবাই অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে- কোনো সমস্যা?
(এটা আমার ক্ষেত্রে হয়। দুয়েকদিন সময়মতো অফিস চলে গেলে সবাই এসে একবার খোঁজ নিয়ে যায় আমি অসুস্থ কি না কিংবা কোনো সমস্যায় পড়েছি কি না)
আর অফিস থেকে বরে হবার আগে বসদেরকে এমন একটা জটিল কাজে পরামর্শ দিতে বলবেন যে পরের দিন বিকেল পর্যন্ত সে ওটার মধ্যেই হাবুডুবু খায়
এবং ভয়ে পরের দিন আপনার সামনে পড়তে না চায়
বড় চাকররা হামেশাই ভুলে যায় যে, তারাও চাকরি করে।
-জুলিয়ান সিদ্দিকী
- ব্যাপার না বস। অফিস থাকলে বস থাকবোই। আর বস থাকলে তাদের ঝায়-ঝারি বজায় থাকবোই। এইটা ইউনিভার্সেল ট্রুথ।
কোনোদিন যদি ঝারি টারি না খান, তাইলে বসের রুমে ফুকা দিয়া জিজ্ঞেস করে আইসেন, "হুজুর, কোনো সমস্যা? শইল ঠিক আছে তো!"
সকালে অফিস যাইবেন আর বসের ঝারি খাইবেন না, তাইলে আর চাকরী করার মজা কী!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
হা হা হা মজা হইছে। তবে বসদের কথা বলার থেকে শোনার অভ্যাস বেশি করা উচিত। তবে অপ্রিয় হইলেও সত্য যে, এই বাংলায় তাহা কোনোদিনই অবলোকন করা য়ায় নাই।
আপনি ভালো ফুটিয়ে তুলেছেন ব্যাপারটা।
পরশ পাথর
সিগারেটের দোকানের গ্যাস লাইটের মতো কলম সুতা দিয়ে নিজের টেবিলের সাথে বেঁধে রাখতে পারেন, উপকার হবে। নিজ মালিকানার সকল বই আলমিরায় রেখে তালা দিয়ে রাখবেন আর কেউ চাইলে বলবেন চাবি অমুকের কাছে (যিনি ঐ মুহুর্তে বাড়িতে নেই), উপকার হবে। আর বউ কে কি করলে উপকার হয় তা আমি জানি না, কেউ জানলে জানাবেন।
হা হা হা হা হা ! হাসি তো থামতেই চায় না ! বড়ো মজা পাইলাম বসেরা ! আপনারা তো ভাই বসেরও বস হইয়া বইসা আছেন একেকজন ! ইশ ! মূর্খ আমি কেন্ যে আপনেগো পরামর্শ না লইয়াই আগেভাগে বসের সামনে হাজির হইতে গেলাম ! (তবে ইহাকে গল্প
না বললে আমার সেই সহকর্মী আমাকে খুনই কইরা ফালাইবো! তাই আসল ঘটনা চাইপা আবারো বলিতেছি- ইহা গল্প!)
হা হা হা ! ভালো থাইকেন সবাই। ধন্যবাদ।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
নতুন মন্তব্য করুন