চট্টগ্রামের সম্ভ্রান্ত সওদাগর পরিবারে পিতা দুলা মিয়া সওদাগর ও মাতা সুফিয়া খাতুনের নয় সন্তানের মধ্যে তৃতীয় যে সন্তানটি ১৯৪০ সালের ২৮ জুন এই পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হলো, কেউ কি কল্পনায়ও ভাবতে পেরেছে তখন, এই ছেলেই একদিন স্বপ্নের বাতিঅলা হয়ে বিশ্বের শীর্ষ মর্যাদাসম্পন্ন নোবেল শান্তি পুরস্কার জয় করে বিশ্বমানচিত্রে বাংলাদেশকে নিমেষেই অভূতপূর্ব মর্যাদায় আসীন করে দেবে ! আর কেই বা বাঙালীর দ্বিধার জড়তা ভেঙে আবারও পূর্ণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে সেই সাহসী মন্ত্র উচ্চারণ করবেন- আমরা পারি... !
তিনি প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। আমাদের স্বাপ্নিক পুরুষ। মায়ের কড়া শাসনের মধ্যে শৈশবে তাঁর মধ্যে যে শৃঙ্খলাবোধ গড়ে ওঠে, আজীবন তাই তাঁকে একটা সুশৃঙ্খল কর্মে চিন্তায় ও জীবন যাপনে সার্থকভাবে চালিত করে। ছোটবেলা থেকেই সাহিত্য সংগীত চিত্রকলা ও বিজ্ঞানের প্রতি তাঁর ছিলো তীব্র ঝোঁক। লামারবাজার অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয় দিয়ে যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার শুরু, তারপর থেকে সব পর্যায়েই অসাধারণ মেধার স্বাক্ষর রাখতে শুরু করেন তিনি। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে থাকতেই তেরো বছর বয়সে বয়স্কাউটের জাতীয় সমাবেশ জাম্বুরিতে যোগদানের জন্য ১৯৫৩ সালে করাচি ভ্রমন করেন। বয়স্কাউট হিসেবে ১৯৫৫ সালে কানাডা ও ১৯৫৯ সালে ফিলিপাইন ও জাপান সফর করেন। এভাবেই তাঁর মধ্যে নেতৃত্বগুনের বিকাশ ঘটে। ১৯৫৫তে চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হয়ে ‘দু’পাতা’ নামে একটা লিটল ম্যাগাজিনের সম্পাদনা শুরু করেন। এ সময় তিনি কলেজের ‘সম্মিলিত ছাত্র প্রগতি সংঘের’ নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। ১৯৫৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন এবং ১৯৬১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক হয়ে মাত্র ২১ বছর বয়সে ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। এরই মধ্যে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের যাবতীয় শিল্পজাত দ্রব্যের জন্য আবশ্যক প্যাকেজিং সামগ্রির পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আমদানি নির্ভরতা কমানোর জন্য ১৯৬৪ সালে একটি প্যাকেজিং শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন যা প্যাকেজিং সামগ্রির চাহিদা মেটাতে অনেকটা সক্ষম হয় এবং লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৬৫ সালের মাঝামাঝি উচ্চশিক্ষার জন্য ফুলব্রাইট বৃত্তি নিয়ে আমেরিকায় পাড়ি জমান এবং ভেন্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। আমেরিকায় থাকাকালীন তিনি কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয় ও মধ্য টেনেসি রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকতায় নিযুক্ত থাকেন। এবং ১৯৭০ সালে তিনি রাশান বংশোদ্ভুত আমেরিকান নাগরিক ভিরা ফোরোস্টেনকোর সাথে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন।
১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি আমেরিকায মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আত্মনিয়োগকরেন। অর্থ সংগ্রহ আন্দোলন, প্রচারণা ও জনমত গঠনে অন্যতম অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশ নাগরিক সমিতির সচিব ও দলের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং স্বাধীনতার স্বপক্ষে প্রকাশিত সংকলন সম্পাদনার দায়িত্বও পালন করেন। অত্যন্ত গভীর দেশপ্রেম তাঁর। উচ্চতর লেখাপড়া এবং অধ্যাপনার সুবাদে পৃথিবীর সবচে’ উন্নত দেশের দেয়া সুযোগ ও আকর্ষণীয় সুবিধা সে দেশে তাঁকে স্থায়ীভাবে থেকে যাওয়ার জন্য প্রলুব্ধ করতে পারে নি। ঘরের ছেলে ঘরেই ফিরে এসেছেন।
১৯৭২ সালে দেশে ফিরে সরকারের পরিকল্পনা কমিশনে যোগ দেন। অফিসে পেপার পড়া ছাড়া আর কোন কাজ না থাকায় কর্মহীন দিনগুলো কর্মপাগল ইউনূসকে ব্যথিত করে তোলে। এক পর্যায়ে কমিশনের দায়িত্বে ইস্তফা দিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব নিয়ে তিনি চট্টগ্রামে চলে যান। আর এটাই ছিলো তাঁর জীবনের অন্যতম টার্নিং পয়েণ্ট।
যেভাবে একটি স্বপ্নের শুরু
ছাত্রদের অর্থনীতির পাঠ দিতে গিয়ে তাত্ত্বিক অর্থনীতির সাথে ব্যবহারিক অর্থনীতির যে বৈষম্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে, তা তাঁকে ভীষণভাবে ভাবিয়ে তোলে। বিশেষ করে ১৯৭৪ সালে সৃষ্ট বাংলাদেশের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের হাত ধরেই ড. ইউনূসের চিন্তা জগতে উন্মেষ ঘটে নতুন ভাবনার। ক্ষুধায় মারীতে মানুষের এতো মৃত্যু দেখে ভীষণ বিব্রত তিনি উপায় খুঁজতে গিয়ে প্রথমেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে বিনাচাষে পড়ে থাকা বিস্তীর্ণ আবাদযোগ্য জমিতে প্রয়োজনীয় ফসল ফলানোর উদ্যোগ হিসেবে ‘নবযুগ তেভাগা খামার’ আন্দোলন শুরু করেন এবং এতে সুফলও পান। পরবর্তীতে শ্রমসম্বল দরিদ্র মানুষগুলোকে মহাজনী জোঁকের হাত থেকে উদ্ধার করার নিমিত্তে কাজ করতে গিয়ে প্রথমে যে বোধোদয়টি তাঁর হলো, প্রচলিত নিয়মে যাদের অর্থ আছে, জামানত দেয়ার যোগ্যতা আছে তারাই ব্যাংক থেকে ঋণ পাবেন, যার নেই তিনি পাবেন না। তাহলে রাষ্ট্রের এতোগুলো ব্যাংক কার স্বার্থে ? তিনি এ বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে উঠলেন এবং সদম্ভে ঘোষণা করলেন, ‘ঋণ মানুষের মৌলিক অধিকার।’ কিন্তু রাষ্ট্রের এখানে কিছুই করণীয় নাই জেনে এবার নিজেই উল্টো স্রোতের কাণ্ডারি হয়ে ওঠলেন। স্থানীয় জোবরা গ্রামের ৪২টি হতদরিদ্র পরিবারকে নিজের পকেট থেকে মাত্র ৮৫৬ টাকা দৈনিক কিস্তিতে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে তিনি ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম শুরু করলেন। এর সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে ১৯৭৬ সালের আগষ্ট মাসে চট্টগ্রামের বুড়িশ্চর ইউনিয়নের এই জোবরা গ্রামেই একটি প্রায়োগিক গবেষণা প্রকল্প হিসেবে এককালে বিশ্বখ্যাত হয়ে ওঠা এই গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্পের শুরু।
১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের সমর্থনে প্রকল্পটি টাঙ্গাইলের সুরুয গ্রামে সম্প্রসারণ ঘটে। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল (ইফাদ)-এর আর্থিক সহায়তায় ১৯৮২ সালে প্রকল্পটি ঢাকা, রংপুর এবং পটুয়াখালী জেলায় সম্প্রসারিত হয়। সাফল্যের সাথে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হওয়ার প্রেক্ষিতে ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রকল্পটিকে গ্রামীণ ব্যাংক নামকরণ করে একটি বিশেষায়িত ঋণদান প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের জন্য বাংলাদেশ সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সে অনুযায়ী গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ ১৯৮৩ জারি করা হয় এবং একটি স্বতন্ত্র ব্যাংক হিসেবে গ্রামীণ ব্যাংকের আত্মপ্রকাশ ঘটে। অনেক কাঠখড় পোড়ানো অদম্য ইচ্ছা, অটুট মনোবল আর দৃঢ় আত্মবিশ্বাসের মধ্য দিয়ে অতঃপর পেরিয়ে গেলো আরো প্রায় পঁচিশটি বছর, সিকি শতাব্দি। ইতোমধ্যে ড. ইউনূস হয়ে ওঠলেন বিশ্বজয়ী ক্ষুদ্রঋণের স্বপ্নদ্রষ্টা, প্রায়োগিক অর্থনীতির রূপকার একজন বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব। প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থার বিরুদ্ধে জামানতবিহীন ঋণ প্রদানের ঘোষণা দিলে যাঁকে একদিন অনেকেই ‘পাগল’ সম্বোধন করতেও দ্বিধা করে নি, তাঁরাই চোখ কপালে তুলে হাঁ করে দেখতে লাগলো কীভাবে কালে কালে ঈর্ষণীয় সমৃদ্ধিতে ভরে ওঠলো ড. ইউনূসের স্বীকৃতির ঝুলি। বিশ্বের সব সেরা স্বীকৃতি ও পুরস্কার অর্জনে বাদ না পড়া ইউনূসের সত্তরেরও অধিকটি পুরস্কার ও এওয়ার্ডের সুদীর্ঘ তালিকার ধারে কাছেও পৌঁছতে পারে এমন ব্যক্তি গিনেজ বুক অব রেকর্ডসেও আর কেউ নেই। বিশ্বমানচিত্রে যেন ড. ইউনূস ও বাংলাদেশ মিলে মিশে একাকার হয়ে আছে।
ব্যক্তিগতভাবে মাত্র ৮৫৬ টাকা দিয়ে যে স্বপ্নের শুরু, তাই কালে কালে আজ জোবরা থেকে বিশ্ব জয় করে অসলোতে গিয়ে ছুঁয়েছে তার আলো। নতুন নতুন চিন্তা ও ধ্যান ধারণা নিয়ে আজীবন স্রোতের বিপরীতে চলা এই বাঙালী সন্তান প্রচলিত অর্থে কখনোই বিতর্কের উর্ধ্বে থাকেন নি যদিও, বলা যায় সবসময়ই নিজকে দেশ জাতি ও মানুষের প্রশ্নমুখর মনোযোগের কেন্দ্রে রেখেছেন এবং রাখছেনও, তবু রবীন্দ্রনাথের পর আর কোন বাঙালী দেশ ও জাতিকে বিশ্বমানচিত্রে মর্যাদার এতোটা উঁচুতে তুলে নিতে পেরেছেন বলে মনে হয় না। আর তাই এ জাতির সন্তান হিসেবে তাঁর কাছে আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। চলমান আবেগ, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি চিন্তাচেতনা, সংকীর্ণ স্বার্থপরতা দিয়ে মেধা ও মননে বলীয়ান ড. ইউনূসের মতো একজন নির্লোভ নিরহঙ্কারী সৃজনশীল ব্যক্তিত্বের মূল্যায়ন হয়তো সম্ভব নয়। এ জন্যে আমাদেরকে সময়ের নিরপেক্ষ সিদ্ধান্তের জন্য হয়তো আরো বহুদিন অপেক্ষা করতে হবে। অথচ ‘দুনিয়ায় কেউ গরীব থাকবে না, গরীব না থাকাই মানুষের অধিকার’- এই স্বপ্নের ফেরিওয়ালা ড. ইউনূস ক্ষুদ্রঋণ বা মাইক্রো ক্রেডিটের জনক হিসেবে বিশ্বস্বীকৃত। তাঁর হাত ধরেই ১৯৮০ সালের পর ডিকশনারিতে যোগ হয় ‘micro-cradit+’ শব্দটি। তবে বর্তমানে এটিকে ‘micro finance’ নামেও অভিহিত করার আলোচনা চলছে। বাংলাদেশের প্রায় ২ কোটি দরিদ্র মানুষ সহ বিশ্বের ১৩১ টি দেশের ১২ কোটিরও অধিক মানুষ তাদের ভাগ্যোন্নয়নে বর্তমানে এই ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির আওতায় এসেছে। ড. ইউনূসের এ ক্ষুদ্রঋণতত্ত্বের সাফল্য গাঁথাকে স্বীকৃতি দিতে জাতিসংঘ ২০০৫ সালকে ‘আন্তর্জাতিক ক্ষুদ্রঋণ বর্ষ’ হিসেবেও পালন করে।
১৩ অক্টোবর ২০০৬ তারিখে পুরস্কার ঘোষণার প্রাক্কালে নোবেল শান্তি পুরস্কার কমিটির চেয়ারম্যান প্রফেসর ওলে ডানবোল্ট মিউস তাঁর সাইটেশনে বলেন-
“নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি ২০০৬ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার মুহাম্মদ ইউনূস এবং গ্রামীণ ব্যাংকের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন প্রচেষ্টায় অবদানের জন্য এ পুরস্কার দেয়া হচ্ছে।
বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে দারিদ্র্যের চক্র ভেঙে বের করে আনার পথ দেখাতে না পারলে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি অর্জন সম্ভব নয়। ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি সে রকমের একটি পথের দিশা। এ পথে আনা উন্নয়ন গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের অগ্রগতিকেও গতিশীল করে। শুধু বাংলাদেশেই নয়, পৃথিবীর অনেক দেশেই কোটি মানুষের স্বার্থে স্বপ্নের বাস্তব প্রয়োগে মুহাম্মদ ইউনূস নিজের নেতৃত্ব গুনের প্রকাশ ঘটিয়েছেন। জামানত ছাড়াই দরিদ্র মানুষকে ঋণ দেয়া অসম্ভব একটি ধারণাই ছিলো। তিন দশক আগে যাত্রা শুরু করে গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে ইউনূস প্রথমবারের মতো এ অসম্ভব ধারণাকেই শুধু ভাঙেন নি, তিনি ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচিকে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি হাতিয়ার হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত করেছেন।.............”
এ ঘোষণার পরপরই বিশ্বের সবক’টা মিডিয়ায় যে ভাবে ড. ইউনূস ও বাংলাদেশকে বিরাট কৌতূহল নিয়ে প্রত্যক্ষ করলো সবাই, নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করলো, দেশে বিদেশে অভিনন্দনের স্রোত বইলো তাতে ড. ইউনূসকে নিয়ে আমাদের যতো বিতর্কই থাকুক না কেন, বাঙালী হিসেবে আমাদের বুকের ছাতিটা সত্যিই দশগুন বড় হয়ে যায় বৈ কি। আর সর্বশেষ সেদিন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং ক্যামব্রিজ প্রোগ্রাম ফর ইন্ডাস্ট্রির (সিপিআই) ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি করা তালিকায়ও বিশ্বের ৫০ জন অগ্রণী চিন্তকের অন্যতম চিন্তক হিসেবে ঘোষণা করা হলো প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নাম।
কেউ কি জানে, এরকম আলোকিত আরেকটা সন্তানের জন্য একটা জাতিকে কতোকাল অপেক্ষা করে থাকতে হয় ?
২৮ জুন তাঁর শুভ জন্মদিন। এই দিনে তাঁকে জানাই আনত শ্রদ্ধায় মোড়ানো কৃতজ্ঞ শুভেচ্ছা। আরো অনেক অনেক কাল আমাদেরকে আলোকিত করে রাখুন তিনি।
মন্তব্য
রণদীপম,
পন্ডিতি করে আপনার লেখার ছবিটা ঠিক করে দিলাম। আশা করি মনক্ষুন্ন হবেন না।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
অনেক ধন্যবাদ মুর্শেদ ভাই। মনক্ষুন্ন হবো কেন ! বরং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সচলে এর আগে কোন পোস্টে ছবি এড করি নাই তো, তাই এর উত্তর দক্ষিণ বুঝি না।
শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
এই লেখাটা প্রথম পাতায় আসে নাই?
কী যায় আসে একটু না হয়
বাড়ল আরো ঋণ..!
শুভ জন্মদিন
@ রণদীপম বসু লেখাটা প্রথম পাতায় দিলেন না কেন? আজকেই তো ইউনূস সাহেবের জন্মদিন! কিছু মনে করবেন না তীব্র সমালোচনার মুখে পড়বেন বলে কি দিলেন না, নাকি কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা আছে? যদি সম্ভব হয় প্রথম পাতায় দিন। হোক উনার জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোটা একটু ভিন্নধরনের। আসতে থাকুক তীব্র সমালোচনা আর কটাক্ষ; তাও প্রথম পাতায় প্রকাশ করুন। আমরা যদি একে অপরের মতামত প্রকাশে বিশ্বাসী হই, তবে সব কিছুরই মুক্ত প্রকাশ প্রয়োজন।
‘ঋণ মানুষের মৌলিক অধিকার’
গোটা বিশ্বে এই চিন্তার প্রায়োগিক প্রবক্তাকে জানাই জন্মদিনের প্রাণঢালা শুভেচ্ছা।
(যদিও তিনি হয়তো কোনদিন জানবেন না তার কাজের সমালোচনার পাশাপাশি প্রশংসাও করে কিছু কিছু বাঙ্গালী)
আবারো @ রণদীপম বসু এই তথ্যবহুল লেখাটার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। তবে লেখাটাতে আনত শ্রদ্ধাবোধটা দৃষ্টিকটু লাগে। এ ছাড়া কি প্রশাংসা করা যায় না?
আর যারা উনার তীব্র বিরোধীতাকারী তাদের কাছেও আশা করি তথ্যবহুল আলোচনা পাব। এমন কি কেউ যদি তার গ্রামীন ব্যাংকের অপকর্মের ইতিহাস প্রমাণসহ হাজির করেন, তাও হতে পারে সবদিক থেকে তার কাজের সঠিক মূল্যায়ন।
খেয়াল করলে আমার নামের পাশে ব্রাকেটে অতিথি শব্দটি লেখা আছে দেখবেন। অতিথির ক্ষমতা আর দৌড় কট্টুক, তা নিশ্চয় জানেন। অতএব আপনার প্রথম প্রশ্নের জবাব নিশ্চয়ই এ থেকেই পেয়ে যাবেন।
আর দ্বিতীয় অংশের জবাবে বলতে হয় যে, আমরা যখন গ্লাসটার দিকে তাকাবো, অর্ধেক খালি থাকার পাশাপাশি অর্ধেক যে ভরা আছে সেটাও নিশ্চয় দেখতে হয়। নইলে দেখায় সাম্যতা আসে না। দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচকতা আর নেতিবাচকতা দুটো দিকই তো রয়েছে। আমি না হয় একটু ইতিবাচক দিক থেকে বিশ্লেষণ করলাম। আর আনত শ্রদ্ধাবোধের বিষয়টা আসে শ্রদ্ধা জানানোর ভঙ্গির ক্ষেত্রে। বহু বিতর্ক রয়েছে তাঁকে নিয়ে। কিন্তু তিনি কি জাতিকে দেন নি কিছুই ?
সমালোচনার পাশাপাশি কৃতজ্ঞতাবোধটাই যদি হারিয়ে যায় আমাদের, তবে আর কী থাকলো ?
ধন্যবাদ ধ্রুব আপনার চমৎকার সব মন্তব্যের জন্য।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
দুঃখিত দাদা! আসলেই আমি আপনার নামের পাশে অতিথি লেখাটা খেয়াল করিনি। ব্যক্তিগতভাবে আমি গ্লাসের ভরা অংশের পাশাপাশি খালি অংশটিও দেখতে চাই বলেই ঐ অনুরোধ করেছিলাম। ভালো থাকুন।
কী যায় আসে একটু না হয়
বাড়ল আরো ঋণ..!
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
ভরা গ্লাস, খালি গ্লাসের উদাহরণ আমরা প্রায়ই শুনি। গ্লাসের ভরা আধেকের দিকে তাকিয়ে অপটিমিস্ট হওয়ার উপদেশ, অনুরোধও আমর প্রায়ই পাই। কিন্তু ডঃ ইউনুস ফ্যানক্লাবীরা গ্লাসের খালি অংশের কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে ভরা আধেককে কোনো গাঁজন প্রক্রিয়ায় এমন ফোলাতে-ফাঁপাতে থাকে যে, খালি আধেক পুরা হয়ে গ্লাস উপচে পড়ে ভরা বন্যা হয়ে যায়। যেমনটি হয়েছে আপনার এই লেখায়। খালি অংশের ছিঁটেফোঁটাও পেলাম না। সুতরাং লেখাটি ডঃ ইউনুস সম্পর্কে 'সত্য' বলতে পুরোপুরি ব্যর্থ।
আমি যতোটা বুঝি, ডঃ ইউনুস একজন শতকরা ১০০ ভাগ ব্যবসায়ী মানুষ। লাভ থাকলে তিনি সেখানে বিনিয়োগ করবেন, লাভ না থাকলে করবেন না। দেশের মানুষের মঙ্গল, দরিদ্র মানুষের স্বনির্ভরতা এগুলো সবই তার ব্যবসায়ের বিজ্ঞাপন। এ বিষয়ে উদাহরণ হিসেবে, তার রাজনীতিতে আসার ইচ্ছা এবং পরবর্তীতে পিছুটানকে নেয়া যায়। এই ইস্যুটাকে আমি যেভাবে পড়েছি, সারা দেশের মানুষ যখন আম্লীগ, বিএনপির ওপরে তিতিবিরক্ত, তিনি তখন সদ্যপ্রাপ্ত অর্থনীতির-ফর্মূলায়-শান্তির নোবেল পেয়ে নিজেকে হঠাৎ জনপ্রিয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার মতলবে ছিলেন। দেশে-বিদেশে, পাড়া মহল্লায় সুশীল (সুবিধাবাদী) সার্টিফিকেটধারীদের ডঃ ইউনুস ফ্যানক্লাব গড়ে ওঠা শুরু হয়।
ডঃ ইউনুস হিসেবী মানুষ। প্রথম থেকেই একটু সন্দেহও ছিলো তার মধ্যে। তিনি একটু মিসরিড করেছিলেন। সাধারণ মানুষকে যতোটা ভোদাই হিসেবে এক্সপেক্ট করা হয়েছিলো, সাধারণ মানুষ ঠিক ততোটা বেকুব কিসিমের ছিলো না। এদেশের মানুষগুলা বড় বেশি পোঁড় খাওয়া, সুশীলকে বিশ্বাস করতে তারা সঙ্গত কারণেই ভয় পায়। ডঃ ইউনুস দেখলেন, লাভ নাই। শর্টকাটে প্রধানমন্ত্রী হওয়া হবে না। তিনি কেটে পড়লেন। এখানে একটা পয়েন্ট টু বি নোটেড। জনকল্যাণ নিয়ে তার বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা থাকলেও তিনি এভাবে কেটে পড়তেন না, বিশেষ করে দুইদলের অত্যাচারে পাবলিক যখন বিপর্যস্ত, মাঝখান থেকে উত্থান ঘটছে দেশবিরোধীদের, তখন তিনি জনগণের পাশে এসে দাঁড়াতেন।
যাহোক, তার জন্মদিনে ততোটাই শুভেচ্ছা, যতোটা আমাদের পাড়ার মোশাররফ হোসেন মোশার জন্য। গলির মোড়ে মোশার একটা মুদি দোকান আছে, তিনি মানুষকে উদার হাতে টাকাও ধার দেন। ১০০ টাকায় তাকে প্রতিমাসে মাত্র সাড়ে ৩ টাকা সুদ দিতে হয়।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
মন্তব্যে জাঝা
মুদী মোশাররফ ব্যবসায়ী হইলেও সুশীলতার পরিভাষা দিয়া প্রতারণা করেন না, যেইটা ইউনুস মহাজন করেন। সুতরাং মোশাররফ সাহেবের সাথে নোবেলচীর তুলনা না করাই ভালো। তাতে নোবেলচীর দাম বাড়ে।
ঈশ্বরাসিদ্ধে:
অজ্ঞাতবাস
অছ্যুৎ বলাইয়ের কথাগুলো আসলে আমারই কথা। আমাকে আর কষ্ট করতে হলো না। কেবল দুঃখ নিজের জন্য- আমরা আসলে বুঝি না নিজেদের অস্তিত্বকে বিকিয়ে দিয়ে হলেও সাম্রাজ্যবাদ-ব্যবসায়ী-পুঁজিবাদের ঝাণ্ডাকে কতো তীব্রবেগে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি! আমাদের হাতে 'বিশ্বায়ন' নামক মুলোর ঝুঁড়ি, পেছন দিয়ে টপ টপ করে পড়ছে লাল পতাকার লাল।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
ব্লগস্পট ব্লগ ::: ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
অচ্ছুত বলাই-এর মন্তব্য দুর্দান্ত। কেবল এটকু যোগ করতে চাই, গ্লাসটা ভরাও না ফাঁকাও না। গ্লাসটার তলাই নাই। যা-ই সেখানে ঢালবেন চলে যাবে অন্য জায়গায়_যারা গ্রামীণের ফাইনান্সার, যাদের সঙ্গে গ্রামীণের কর্টোরেট মহব্বত। সেই পিনোশের টাকা পাচারের সঙ্গী সিটি গ্রুপ, সেই বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের সঙ্গী আইএফসি, সেই কৃষিতে সর্বনাশা মনসান্তো, সেই প্লানেট ফাইনান্স আর জর্জ সোরোসের দল।
ইউনুস হাসেন, তার হাসি দেখে আমরাও হাসি!
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
গিলাশটাই কি আছে?
ঈশ্বরাসিদ্ধে:
অজ্ঞাতবাস
হাসি হাসি পড়বো ফাঁসি। দেখবে দেশবাসী।
---------------------------------------------------------
আমাকে ডাকে আকাশ, বোঝে মাটি হাওয়া জল
বোঝে না মানুষ আর বিনাশী মুদ্রার ছল
---------------------------------------------------------
ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.
উনিশ বছর বয়সে এক সাথে অরওয়েল, স্টাইনবেক আর ইউনুসের সাথে পরিচয় হয়। প্রথম দুইটা বইয়ের মাধ্যমে, শেষেরটা ইউনিভার্সিটির এক কোর্সের মাধ্যমে। এই তিনের লেখনী আর উদাহরণ না থাকলে আমি জীবনে অর্থনীতিতে আগ্রহী হতাম না, এই বিষয়ে লেখালেখি কি, পড়াশুনাও হয়তো করতাম না কোনদিন। এতটুকু দায় স্বীকার করি।
কিন্তু শেষ বিচারে লোকটা ভন্ডই। কি আইডিয়ালিজম নিয়ে সে গ্রামীণ ব্যাংক শুরু করছিলো, তা আজকে বিলীন হয়ে গেছে। এখন সে দুনিয়ার জেট সেট ক্লাবের সদস্য, নিউ ইয়র্ক থেকে লন্ডন থেকে ডাভোস ইত্যাদি নানান জায়গায় আকাশ কুসুম স্লোগান আর বক্তৃতা দেওয়াই তার ফুল-টাইম পেশা। তার হাস্যকর / বিরক্তিকর কথাবার্তার উদাহরণ - মার্কিন টিভিতে জন স্টুয়ার্টের সাথে এই ইন্টারভিউ।
গ্রামীণ সহ আরো শত সহস্র এনজিওর দল গত ৩০ বছর ধরে দেশ এফোঁড়-ওফোঁড় করলো। প্লাস-মাইনাস করে কি বাকি থাকলো, সেই হিসাব করার সময় আসছে। দুই আনার ফকিররে চার আনার ফকির বানাইলেও সে ফকির-ই থাকে। বাকি পয়সা যায় কই, আর ডানিডা-ডিফিড সিডা-কেয়ারের দৌরাত্ম্যই বা আর কয়দিন?
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
ধন্যবাদ ধ্রুব হাসান, অচ্যুৎবলাই, সুমন চৌধুরী, গৌতম, ফারুক ওয়াসিফ, আহমেদুর রশীদ ও সুবিনয় মুস্তফী আপনাদের সুচিন্তিত এবং নিজস্ব মতামতসমৃদ্ধ মন্তব্যের জন্য। আমি দারুণভাবে কৌতুহলী ছিলাম আমাদের মেধাবী পাঠকদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে দেয়া মন্তব্যগুলোর জন্য। মাওলা ব্রাদার্স থেকে প্রকাশিত মুহাম্মদ ইউনূসের 'গ্রামীণ ব্যাংক ও আমার জীবন' শিরোনামের ঢাউস বইটি পাঠোত্তর আমার কাছে মনে হয়েছিলো যে, ড. ইউনূসকে নিয়ে আমাদের বুদ্ধিজীবী মহলে প্রায় পুরোটাই নেতিবাচক যে লেখালেখিগুলো হচ্ছে তা আসলে বিস্ময়করভাবে একপেশে এবং খণ্ডিত। এমন মানুষ কি হয় যার গোটা অস্তিত্বটাই নিগেটিভ ? নোবেল প্রাপ্তির পর প্রায় সবার মধ্যে যে উল্লাস আর গর্বের প্রতিফলন দেখেছি তা কি এতোই ফাঁপা আর অর্থহীন ছিলো ?
আপামর মানুষের যে ভালোবাসায় তিনি অভিষিক্ত হয়েছিলেন, রাজনীতিতে আগ্রহী হয়ে ওঠার সাথে সাথেই তাতে ভাটা পড়তে লাগলো। এটাই আমার কাছে বিস্ময়কর মনে হলো যে, এতো স্তুতি এতো প্রশংসা এতো উচ্ছ্বাস কেবল তাঁর রাজনীতির করার আগ্রহ প্রকাশের কাছে বা সাপেক্ষে নিমেষেই সব ফানুস হয়ে গেলো ! তাঁর যা কর্মযজ্ঞ সবই তো নোবেল পাওয়ার আগেই । তাহলে কি রাজনীতি না করলে তিনি মহাপুরুষ থাকতেন, আর রাজনীতি করতে নামলেই অধম পুরুষ ? তিনি তো আগেও যা, এখনো তা-ই। যদি বলি আসলে এই তফাৎটা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিগত বিচ্যুতির মধ্যে, তবে কি ভুল হবে ?
জন্মদিনের উইশকে কেন্দ্র করে আমি আসলে এ বিষয়টাকেই তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি। আমার এ লেখাটা যে কোন মৌলিক লেখা নয় তা সবাই বুঝতে পেরেছেন। একটা আংশিক প্রোফাইল মাত্র। এখানে নতুন কিছুই লিখিনি আমি। বরং অনেক অনেক বেশি লেখা হয়েছে তখন। আমি কেবল দু-একটা তুলে এনে এখানে বসিয়েছি কেবল। এবং লিখেছেন আমাদের মহামান্য বিদগ্ধজনেরাই। এখন প্রশ্ন, তারা যা লিখেছিলেন, আদৌ কি নিজেদের প্রতি সৎ ছিলেন তারা ? না কি রবীন্দ্রনাথের ভাষায় সেই- আমরা যা বিশ্বাস করি তা বলি না, যা বলি তা করি না, যা করি তা বিশ্বাস করি না !
হা হা হা ! মাঝে মাঝে খুব ধন্ধে পড়ে যাই আমি, আমাদের নমস্য ব্যক্তিরা আজ যা বলছেন, আসলে কি কিছু বলছেন তারা ? না কি...?
প্রশ্নটা এখানেই।
পৃথিবীতে এমন কোন কর্ম বা সৃষ্টি টিকে থাকা আদৌ সম্ভব নয়, যদি তা কেবলই ক্ষতির কারণ হয়। ড, ইউনুস যা করে দেখিয়েছেন,তার চে বেটার কিছু, কই আর কেউ তো করে দেখাতে পারছি না ! একেবারেই ভিত্তিহীন কিছু কি দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব ?
আমি আমন্ত্রণ জানাই আপনারা অবশ্যই গোটা বিষয়টাকে নির্মোহ দৃষ্টিতে ব্যবচ্ছেদ করুন। তবে নিজের প্রতি সৎ থেকে এবং যার যা প্রাপ্য তা স্বীকার করেই।
আসলেই এখন তা যাচাই করে নেয়ার প্রয়োজন বৈ কি। আপনাদের আলোচনার প্রসঙ্গতে আরো কিছু টপিক সংযোজন করার জন্যেই এই প্রতিমন্তব্য করলাম। আপনাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণকে আমার কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আলোচনা যতই তীব্র হোক না কেন, আশা করি আমাদের নিজেদের মধ্যে কোন ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ তৈরি করবে না। এটাই সৃজনশীলতার অন্যতম শর্ত হোক।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
রণদীপম , আপনার এই পোষ্টের প্রেক্ষিতে পুরনো একটা পোষ্ট তুলে এনেছি । সময় করতে পারলে দেখে আসবেন ।
ধন্যবাদ ।
-------------------------------------
বালক জেনেছে কতোটা পথ গেলে ফেরার পথ নেই,
-ছিলো না কোন কালে;
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
আপনার পোস্ট পড়ে প্রাসঙ্গিক যে মন্তব্যটি প্রসঙ্গক্রমে করে এসেছি তা এখানেও মন্তব্য হিসেবে কপি করে রাখলাম। কেননা একটা চমৎকার ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে আগামীতে আলোচনাটি মনে হয় চলতে থাকবে এবং সে ক্ষেত্রে এ মন্তব্যের তথ্যটা প্রয়োজন হতে পারে।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
দাদা এইটা দেখেন।
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
হা হা হা ! দেখেছি দাদা। বহুৎ মজা পাইলাম।
দুটো বিষয় মাঝে মাঝে আমার ভাবনায় নাড়া দেয়-
১) আমাদের দারিদ্র্য দূর করার বিষয়টিকে আমাদের নমস্যশ্রেণীর ব্যক্তিরা কি আন্তরিকভাবে চিন্তা করেন, না কি কর্পোরেট ব্যবসার পূজি হিসেবে পণ্যজ্ঞানে ব্যবহার করেন।
২) যারা দারিদ্র্য দূর করার স্বপ্ন দেখেন বলে প্রচার করেন, তাদের কথিত আন্তরিক ইচ্ছা বা উদ্যোগকে আমরা নিরপেক্ষ যাচাই না করেই অযৌক্তিক আবেগে প্রভাবিত হয়ে নির্মম কটাক্ষের মাধ্যমে একটা সম্ভাব্য উদ্যোগকে অনুৎসাহিত করছি কি না।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
নোবেল পুরস্কার পাবার পর শ্রদ্ধেয় ড. ইউনূস কয়েক ঘন্টা বিনম্র হাসি মুখে নিয়ে বসে থাকলেও তাঁর দন্তরুচি কৌমুদী বিকশিত হতে বেশি সময় লাগেনি। এরপর মনোযোগ দিয়ে শুনলাম তাঁর একটি বাণী।
"আমাদের বন্দর উন্মুক্ত করে দিতে হবে। আমরা সবাই মিলে উন্নতি করবো।"
তারপর দেশে মারপিট শুরু হয়েছে, এক রাজনৈতিক দল আরেক রাজনৈতিক দলের ওপর দাঁতনখ বার করে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, নরওয়েতে এনটিভির সুপণ রায় প্রশ্ন করলেন এই মহানুভবকে, আপনার এ সম্পর্কে কী প্রতিক্রিয়া?
সারা দেশের মানুষ তখন ইউনূসের মুখের দিকে তাকিয়েছিলো। আমিও ছিলাম। তিনি চমকে উঠে সুপণের কাঁধে চাপড় দিয়ে সাথে সাথে হনহনিয়ে মাঝপথে সাক্ষাৎকার থামিয়ে চলে গেলেন উল্টোদিকে, তাঁর নোবেল পুরস্কারের দিকে। দেশবাসীর উদ্দেশ্যে একটি কথাও বললেন না। হয়তো তিনি ভরসা পাননি নিজ থেকে কিছু বলার।
পরে খোদার ইশারায়, কিংবা হয়তো খোদার কাছাকাছি কারো ইশারায় তিনি রাজনৈতিক দল করার সিদ্ধান্ত নিলেন। পাড়ায় পাড়ায় "ডঃ ইউনূসের সমর্থকগোষ্ঠী" খোলার আহ্বান জানালেন। তারপর সেই উদ্যোগেও এক সময় ক্ষান্ত দিয়ে নিজের কাজে আবার ফিরে গেলেন। নোবেল পুরস্কারের মূলার রাজনৈতিক সালাদ জনগণকে গেলাতে না পেরে।
আমি তাঁর মতো শ্রদ্ধার পাত্রকে এ ধরনের কিছু ডিগবাজি খেতে দেখে আহত হয়েছিলাম। বন্দর উন্মুক্ত করে দেয়ার আহ্বানকে কাছার কাপড় তুলে পাছা উন্মুক্ত করে দেবার আহ্বানের মতোই মনে হয়েছিলো। হয়তো আমার অশান্তিপ্রিয় মন এই আহ্বানের পেছনের অর্থনীতি ধরতে পারেনি, হয়তো এ কারণেই আমি কখনো শান্তিতে বা অর্থনীতিতে নোবেল পাবো না। কিন্তু ইউনূস সাহেবের ওপর শ্রদ্ধা অনেকাংশে হারিয়েছি। পরে শুনেছি বিভিন্ন দেশে কর্মরত পেশাজীবীরা তাঁর রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়ে রাতারাতি মেরিটোক্র্যাট হওয়ার লোভে কামড়াকামড়ি শুরু করে দিয়েছিলো, জানি না তাদের সেই মোহ এখনও বজায় আছে কি না।
ইউনূস সাহেবের দারিদ্র্যহনন, তাঁর নোবেলজয় তাঁকে ডুবিয়েছে, তাঁর এমন একটা চেহারা বার করে এনেছে, যা দেখলে বিতৃষ্ণা জাগে।
হাঁটুপানির জলদস্যু
আমি জানিনা কথা আপনি কিভাবে নেবেন, তবে চট্টগ্রামের মানুষ কিন্তু এই বন্দর ব্যবহার করেই ঘরে সমৃদ্বি আনতে চাই। আর যে যেভাবেই নিক না কেন, চট্টগ্রামের একটা বৃহত্তর জনগোষ্ঠী কিন্তু ব্যবসাকে নিজের ধর্ম বলেই মনে করে (এবং তা মুনাফা গুনেই)। তাই বন্দরের সর্বোচ্চ বাণিজ্যিক ব্যবহার তারা যেকোন উপায়ে করতে চায়। দেখবেন একসময় এই অঞ্চলটির সাথে ততকালীন রেঙ্গুনের বর্তমানে বার্মার বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিলো। আর পাকিস্তান হওয়ার পর থেকে সেই কেন্দ্র সরে গিয়ে ধীরে ধীরে আজ সিঙ্গাপুরে গিয়ে ঠেকেছে। তারা প্রায়ই সিঙ্গাপুরকে উন্নয়নের উপমা হিসেবে টেনে বিভিন্ন সরকারের সাথে দরকষাকষি করে। বন্দরকে আরো মুক্ত আর অধিক মুনাফামুখী বানাতে গত দশ বছরের শুধু চট্টগ্রাম চেম্বারের তদবির আর লবিংগুলোর দিকের তাকালেই চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের দৃষ্টিভঙ্গির প্রমান পাবেন।
ধ্রুব'র সাথে একমত। এই বন্দরের অনেক পোটেনশিয়াল ছিল - সিঙ্গাপুর হংকং না হইলেও অন্তত পোর্ট ক্লাং বা কাওহ্সিউং হইতে পারতো। কিন্তু আমরা যেহেতু জাতিগতভাবে পিছনে চলতে পছন্দ করি, তাই এই বন্দর যেই তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই থাকবে। কিন্তু তাতে কার কিই বা যায় আসে। 'দেশ বেঁচা' তো বন্ধ করা গেছে! ঐটাই বড় স্বার্থকতা!
(এই মন্তব্য ইউনুসের মতামত বহির্ভূত।)
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
আমিও জানিনা আমার কথাকে আপনি কিভাবে নেবেন, কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দরকে "উন্মুক্ত" করে দিয়ে মুনাফার ভাগিদার সম্ভবত চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা হতে চান না। সর্বোচ্চ বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য কোন কিছু "উন্মুক্ত: করে দিতে হয় না, যা প্রয়োজন তা হচ্ছে বৈদেশিক সম্পর্কের উন্নয়নের পাশাপাশি বন্দরের কৌশল ও ব্যবস্থাপনাগত উন্নয়ন। ব্যবস্থাপনাগত উন্নয়ন আর উন্মুক্তকরণ এক কথা নয়, এটা একটা মূর্খ লোকেও বোঝে। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমিও চাই চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর প্রতিবেশী দেশগুলির বন্দরের তুলনায় অধিকতর দক্ষতার সাথে ম্যানেজ করা হোক। আমি চাই না, এই বন্দর উন্নয়নের ধুয়া তুলে "উন্মুক্ত" করে দিতে। নেপাল, পূর্ব ভারত ও চীনের সাথে বাণিজ্যিক দরকষাকষিতে এই দুই বন্দর আমাদের তুরুপের তাস, এদের সবচেয়ে দক্ষতার সাথে ব্যবহার করা হোক, এ-ই আমি চাই।
রেঙ্গুনের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্কের কথা বলে আপনি কী বোঝাতে চাইলেন আমি জানি না। চট্টগ্রাম বন্দর এক সময় প্রায় আরাকানের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিলো, সেই নিয়ন্ত্রণ লোপ পাওয়ার পরও স্বাভাবিকভাবেই আকিয়াব আর রেঙ্গুনের সাথে নৌযোগাযোগের কারণে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ভালো ছিলো। বার্মার রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে এখন তা কেবল চোরাচালানী আর জলদস্যুদের মধ্যে যোগাযোগে এসে ঠেকেছে। এর সাথে ইউনূসের কী সম্পর্ক?
চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর আমাদের সার্বভৌম নিয়ন্ত্রণ হ্রাস পাওয়ার পরিণতি কী হতে পারে বলে আপনি মনে করেন? বন্দর "উন্মুক্ত" করে দেয়ার ব্যাপারে চট্টগ্রামের একজন স্থানীয় স্পর্শকাতর নাগরিক হিসেবে আপনার কী মত?
হাঁটুপানির জলদস্যু
ইউনুসের স্বর্ণকার পিতা দুলা মিয়া সওদাগর গরীবের সোনার অলঙ্কার বন্ধক নিয়ে চড়া সুদে ঋণ দিতেন। ইউনুসের উত্তরণ এই যে, তিনি বন্ধক ছাড়াই ঋণ দেবার ব্যবস্থা করেন, তবে সেই চড়া সুদেই। ইউনুসের পিতা ঋণের কিস্তী না পেলে খুশী হতেন, কারণ তাহলে আর বন্ধকী গয়না ফেরত দিতে হতো না। ইউনুস বিদেশে পরিসংখ্যান দেখাবার তাগিদে ৯৯% ঋণ ফেরৎ পাওয়ার ব্যবস্থা করেন, যেভাবেই হোক।
ইউনুসের মায়ের কড়া শাসনের প্রশ্নই ওঠে না; তিনি মানসিক ভারসাম্যহীণ ছিলেন; কোন সন্তানকে কাছে ঘেঁষতেই দিতেন না।
ইউনুস অসাধারণ মেধাবী ছিলেন না কি ? তাঁর সহপাঠী ফখরুদ্দিন (এখন প্রধান উপদেষ্টা) প্রথম বিভাগে প্রথম হয়েছিলেন, মির্জা আজিজও প্রথম বিভাগ পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরীর সুযোগ পেয়েছিলেন। ইউনুস কোন বিভাগ পেয়েছিলেন ?
তাঁর স্ত্রীর আদিবাস ছিল, রাশিয়ায় নয়, লাটভিয়ায়। চাটগাঁয়ে হাঁপিয়ে উঠে বিচ্ছেদ, কন্যা মনিকা নিয়ে আবার যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত। এই মেয়ে দেশে ফিরল প্রথম বার বাবা প্রাইজ পাওয়ার পরে।
কড়া শাসন বা শাসন জিনিষটা মা ভারসাম্যহীন হলেও করা যায়। যতদূর জানি উনি যৌথ পরিবারের ছেলে। আর যৌথ পরিবারের শান্তি ও উন্নতির জন্যই কিছু পারিবারিক শৃংখলা মানতে হয়। আমার মনে হয় ওরকম পরিবেশেই তার বেড়ে উঠা।
......এই লাইনটা দিয়ে আপনি ঠিক কি বুঝাতে চাইলেন?
বজলুর রহমান চড়া সুদের যে বিষয়টি উল্লেখ করেছেন, সে প্রেক্ষিতে উপরে হাসান মোরশেদের মন্তব্যের প্রতিমন্তব্যে সুদ বিষয়ক কিছু তুলনামূলক তথ্য উপস্থাপন করেছি। দয়া করে ওই সংশ্লিষ্ট মন্তব্যটা পড়ে বলবেন কি সুদ বিষয়ক শুভঙ্করের ফাঁকিটা কোথায় ?
আপনাদের মন্তব্যের সাথে বাস্তবতার যে ব্যবধানটা আমার দৃষ্টিগোচর হচ্ছে, তা কি আমার বোঝার ক্ষেত্রে দৃষ্টিসীমার হ্রস্বতা, না কি অন্য কিছু ?
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
নতুন মন্তব্য করুন