ইয়োগা চর্চায় বহুল ব্যবহৃত এ আসনটিকে দেখতে অনেকটা প্রস্ফুটিত পদ্মের মতো মনে হয় বলে একে পদ্মাসন (Padmasana) বলা হয়। সব্জির মধ্যে আলু যেমন সকল কাজের কাজী, সব কিছুতেই মানিয়ে যায়, তেমনি যোগ-ব্যায়ামের যে কোন আসনের সাথে জুড়ে যাবার প্রয়োগযোগ্যতার কারণে লব্ধ জনপ্রিয়তার সাথে সাথে এই রহস্যময় পদ্মাসন চর্চায় বহু বৈচিত্র্যও লক্ষ্য করা যায়।
পদ্মাসন মূলতঃ তিন প্রকার: মুক্ত-পদ্মাসন, বদ্ধ-পদ্মাসন ও উত্থিত পদ্মাসন।
(১) মুক্ত-পদ্মাসন
পদ্ধতি:
সামনের দিকে পা ছড়িয়ে শিরদাঁড়া সোজা করে বসুন। এবার বাঁ পা হাঁটু থেকে ভেঙে ডান উরুর উপর এবং ডান পা একইভাবে বাঁ উরুর উপর রাখুন। হাত দু’টোর চেটো উপুড় করে বা চিৎ করে অথবা ধ্যান করার ভঙ্গিতে দু’হাঁটুর উপর রাখুন (আসনের এই ভঙ্গিকে সিদ্ধাসনও [siddhasana] বলা হয়)। অথবা নমস্কারের ভঙ্গিমায় বুকের উপর রাখুন। এখন দৃষ্টি নাসিকার অগ্রভাগে এবং জিহ্বার অগ্রভাগ মাড়ির শেষদিকে স্পর্শ করে রাখুন। সহজভাবে যতক্ষণ পারা যায় ঐ অবস্থায় থাকুন। পদ্মাসনে বেশি সময় থাকলেও কোন ক্ষতি নেই। শ্বাস-প্রশ্বাস অবশ্যই স্বাভাবিক থাকবে।
এবার পা বদল করে অর্থাৎ প্রথমে ডান পা হাঁটু থেকে ভেঙে বাঁ উরুর উপর এবং বাঁ পা একইভাবে ডান উরুর উপর রাখুন এবং আগে যতক্ষণ অভ্যাস করেছেন ততক্ষণ এ অবস্থায় থাকুন। এরপর ধীরে ধীরে পায়ের বাঁধন খুলে প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।
উপকারিতা:
যোগশাস্ত্র মতে আসনটিতে সর্বরোগ দূর হয়। হৃদপিণ্ড ও ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ফলে হাঁপানি রোগ হতে পারে না, আর থাকলেও অল্পদিনে সেরে যায়। মেরুদণ্ড সোজা ও সরল রাখে। চিন্তাশক্তি, স্মৃতিশক্তি ও ইচ্ছাশক্তি বৃদ্ধি করে এবং মনের একাগ্রতা আনে। পায়ের পেশী ও স্নায়ুজাল সতেজ ও সক্রিয় রাখে। দেহে বাত বা সায়টিকা আক্রমণ করতে পারে না।
(২) বদ্ধ-পদ্মাসন
পদ্ধতি:
প্রথমে মুক্ত-পদ্মাসনে বসুন। এবার ডান হাত পেছনদিক দিয়ে ঘুরিয়ে এনে ডান পায়ের বুড়ো আঙুল এবং একইভাবে বাঁ হাত পেছন দিয়ে ঘুরিয়ে এনে বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুল ধরুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে। এভাবে কিছুক্ষণ এই আসনে থেকে হাত-পা বদল করে আবার করুন এবং শেষ হলে প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।
উপকারিতা:
পদ্মাসনের সব গুণ এ আসনটিতে বর্তমান। এতে দ্রুত ফল পাওয়া যায়। এছাড়াও আসনটি কাঁধ ও বুকের খাঁচার গঠনগত দোষত্রুটি দূর করে।
(৩) উত্থিত পদ্মাসন
পদ্ধতি:
মুক্ত-পদ্মাসনে বসুন। এবার দু’হাত পাছার দু’পাশে রাখুন। এখন হাতের জোরে দু’হাতের চেটোর উপর ভর রেখে শরীরকে কিছুটা উপরে তুলুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে এই অবস্থায় ২০-২৫ সেকেন্ড থাকুন। পা বদল করে আবার করুন। প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।
উপকারিতা:
মুক্ত-পদ্মাসনের প্রায় সব গুণ এতে বর্তমান। উপরন্তু পেটের বাড়তি চর্বি কমিয়ে ক্ষিদে বাড়ায়, হাতের ও কাঁধের পেশী পুষ্ট করে এবং হাতে প্রচণ্ড শক্তি আনে।
পদ্মাসনের এই মূলানুগ চর্চার বাইরেও ব্যবহারবৈচিত্র্যে নতুন নতুন প্রক্রিয়ায় পদ্মাসন চর্চিত হতে দেখা যায়। এইসব সৃষ্ট আসনের মধ্যে অর্ধ-পদ্মাসন, উর্ধ্ব-পদ্মাসন, অর্ধ বদ্ধ-পদ্মাসন অন্যতম।
অর্ধ-পদ্মাসন:
এই আসন-পদ্ধতিতে এক পা হাঁটু থেকে ভাঁজ করে অন্য পায়ের উরুর উপর রাখা হলেও অন্য পা মুক্ত-পদ্মাসনের ভঙ্গিতে আরেক পায়ের উপর না উঠিয়ে ভাঁজ করে মাটিতেই রাখা হয়।
উর্ধ্ব-পদ্মাসন:
এ আসন-পদ্ধতি মুক্ত-পদ্মাসনের ঠিক উল্টো অর্থাৎ মুক্ত-পদ্মাসনের আসন ভঙ্গিটিকে উপর-নীচে ঠিক উল্টে দিয়ে কাঁধের উপর শরীর ধারণ করে আসনবদ্ধ পা উপরে উঠিয়ে দিয়ে এর চর্চা করতে হয়।
অর্ধ বদ্ধ-পদ্মাসন:
এ আসন-পদ্ধতিতে এক পা অন্য পায়ের উপর স্থাপন করে বদ্ধ-পদ্মাসনের নিয়মে হাত পেছন দিক থেকে ঘুরিয়ে এনে উপরে রাখা পায়ের বুড়ো আঙুলকে এই হাত দিয়ে ধরতে হবে। তবে অন্য পা সামনে সোজা রেখে আরেক হাত দিয়ে সরাসরি বুড়ো আঙুল ধরবে।
অথবা মুক্ত-পদ্মাসনে বসে বদ্ধ-পদ্মাসনের নিয়মে এক হাত পেছন দিক দিয়ে ঘুরিয়ে পায়ের বুড়ো আঙুল ধরলেও অন্য হাত স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে।
নতুন অনুশীলনকারী যারা প্রাথমিক অবস্থায় মুক্ত-পদ্মাসন বা বদ্ধ-পদ্মাসন চর্চা করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না বা সমর্থ হন না, তারা এই অর্ধ-পদ্মাসন বা অর্ধ বদ্ধ-পদ্মাসন অনুশীলনের মাধ্যমে শরীরের নমনীয়তা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে দেহকে প্রস্তুত করে তুলতে পারেন। এতেও উপকারে কোন ঘাটতি হবে না।
[Images: from internet]
(চলবে...)
মন্তব্য
এই জিনিস আমার দ্বারা সহজে হইবে নাকো , এই মহিলারা কেমনে করল কে জানে ! তবে হ্যাঁ উহারা কয়েকজন দেখিতে আসলেই প্রস্ফুটিত পদ্মের ন্যায় !!
-----------------------------------------
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
আপনার দ্বারা অত্যন্ত সহজেই হবে, এই বিশ্বাসটা থাকলেই হবে।
ইচ্ছে করলেই আপনিও এমন পদ্মনাভি হয়ে যেতে পারেন। মহিলারা পারবে আর আপনি পারবেন না, এটা কোন কথা নয়। সাম্যের গান গান।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
দাদা ছবি গুলো কি পাওয়া যাবে আর লেখা গুলো কি চাওয়া যাবে..........যা অন্য কাউকে দাওয়া যাবে। কারণ এই ছবি দেখে যদি কেউ সুমোদের খাতা থেকে নামটা যদি কাটায়,তাই এ আকুতি...............ভালো থাকুন।
মরণ রে তুহু মম শ্যাম সমান.....
ছবিগুলো ভাই আমারও নয়, ইণ্টার্নেট থেকে সংগৃহিত। পোস্টের নীচে বলেই দিয়েছি। অতএব...
আর লেখাগুলো তো আপনাদের জন্যই। এ তো আমার কোন মৌলিক সম্পত্তি নয়। অতএব...
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
ছবিগুলি ভালো....
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
এইসব করতে গেলে তো হাড্ডি-গুড্ডি সব নড়বড়ে হয়া যাবে
চলুক...
সমস্যাটা তো ওখানেই !
সবাই মনে করে যে হাড্ডি-গুড্ডি বুঝি সব শক্ত হয়ে এঁটে থাকবে।
কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো হাড্ডি-গুড্ডি সব নড়বড়ে থাকা, যাকে বলে নমনীয় থাকা। চর্চা করতে করতে যখন মনে হবে যে আপনার শরীরে বুঝি হাড়গোড়ই নেই, বুঝবেন আপনি পারফেক্ট অবস্থায় উন্নীত হচ্ছেন।
তাহলে শুরু করে দিন এবার !
চিন্তা নেই, এটা একটা মেগাসিরিয়াল। হরেক রকমের আসনই পাবেন সামনে। যদি বেঁচেবর্তে থাকি শেষপর্যন্ত।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
একটাও পারবো না।
মাফ চাই... ;(
নতুন মন্তব্য করুন