[নাবালক বয়সে শুনা সাবালকী কৌতুকের তৈরি গল্পরূপ]
বিবাহের বয়স পার হইয়া যাইতেছে, কিন্তু ছেদন মিয়ার জন্য যোগ্য পাত্রীর সন্ধান পাওয়া যাইতেছে না। পরিবার পরিজন তো আছেই, পাড়া-প্রতিবেশীসহ আশে পাশের কাছে দূরের ময়-মুরব্বী পরিচিত অপরিচিত সবাইকেই প্রায় খবর দেওয়া হইয়া গেছে ছেদনের জন্য একটি রূপসী, বিদূষী, সর্বগুণে গুণান্বিতা, সকল কাজে পারদর্শি এবং যোগ্য একটি পাত্রীর সন্ধান করিয়া দিতে। কিন্তু কেহই সুবিধা করিয়া উঠিতে পারিতেছে না। কারণ, পৌরুষ যতই থাকুক, পুরুষের স্বাভাবিক দেহাবয়বের চাইতেও ছেদনের আকার অতিশয় ছোট এই সংবাদ জানিবামাত্রই পুঁচকে অসভ্য মেয়েগুলো এককথায় বাঁকিয়া বসিতে লাগিল। স্বচ্ছল পিতা-মাতার একমাত্র পুত্রসন্তান হিসাবে আল্লাহর দেয়া সহায়-সম্পদও কিছুমাত্র কম নহে। প্রাকৃতিক জ্ঞানের বহরে তাহাকে গ্রামের সকলেই তোয়াজ করিয়া চলিতে হয়। চার টাকা তিন আনা সের দরে সোয়া তিন সের দুধের পাঁচ বণ্টনে প্রত্যেকের ভাগে কত করিয়া মূল্য পরিশোধ করিতে হইবে খাতার দেড় পৃষ্ঠা ভরিয়া কী সব হিসাব নিকাশ আর আড়াই ঘণ্টা ব্যয় করিয়া পাই-পয়সা সহযোগে যে ব্যাপক ধৈর্য্য সহযোগে বলিয়া দিতে পারে, তাহাকে তোয়াজ না করিয়া উপায় আছে ! কিন্তু এইসব কারণ গৌন হইয়া সেই আকৃতিগত ছোট্ট একটা কারণই বড় হইয়া দেখা দিলো ! পড়ালেখায় তাহার আন্তরিকতায় এতটুকু ঘাটতিও কেউ কখনোই দেখে নাই। তথাপি প্রতিবারেই পরীক্ষা পূর্ণ হইবার আগেই ভাগ্যবিড়ম্বনায় অপরের দোষ ঘাড়ে লইয়া নকল করিবার দায়ে পরীক্ষার হল হইতে বহিষ্কার হইয়া গেলেও পঞ্চমবার ঠিকই মেট্রিক পরীক্ষাটি সম্পূর্ণভাবে দিতে পারিল বটে। কিন্তু পরীক্ষার খাতাকেই কেবল জ্ঞানের প্রকাশিত ক্ষেত্র হিসাবে অদূরদর্শী বিবেচনায় যাহারা অবমূল্যায়ন করিয়া অভ্যস্ত, তাহারা ছেদনের প্রতিভার সাক্ষাৎ পাইবে কী করিয়া। ফলে মেট্রিকে যে অকৃতকার্য হইবেই তাহা কি আর বলিবার বাকী থাকে ! এইসব বুঝিয়া শুনিয়া তাই বৃথা চেষ্টা আর না বাড়াইয়া ছেদন মিয়া অবশেষে প্রকৃতিকেই জ্ঞানার্জনের শ্রেষ্ঠতম উৎস হিসাবে বাছিয়া লইলো। অতএব প্রকৃতি-শিক্ষকের নিকট হইতে লব্ধ জ্ঞানের ব্যাপক চর্চার মাধ্যমে ছেদনের জ্ঞানের চতুর্মুখী সাম্রাজ্য ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাইতে লাগিল। কিন্তু প্রকৃতি হইতে প্রত্যক্ষ বৈবাহিক জ্ঞান অর্জন এবং তৎপরবর্তী ফলাফল হাতে-নাতে পাইবার কোন উপায় ছেদনের জানা না থাকায় বাধ্য হইয়াই সে বিবাহ করিবার সিদ্ধান্ত লইয়াছে।
চারিদিক হইতে কেবল নৈরাশ্য আর হতাশার সংবাদ পাইতে পাইতে সবাই যখন হতোদ্যম হইয়া পড়িতেছে, ঠিক সেই মুহূর্তেই একটি পাত্রীর সন্ধান পাওয়া গেল। এই পাত্রীও কখন আবার বাঁকিয়া বসে, তাই কালবিলম্ব না করিয়া একপায়ে খাড়া ছেদন তাৎক্ষণিক বিবাহ করিয়া ফেলিল এবং ধুমধাম করিয়া কন্যা লইয়া গ্রামে ফিরিল। সে নিজেও হয়তো ভাবিতে পারে নাই যে এইরকম সুশ্রী স্বাভাবিক আকারের একটি পাত্রী সে অকস্মাৎ পাইয়া যাইবে। কন্যা দেখিতে গ্রামের সবাই ভাঙিয়া পড়িল। কেহই আর উপস্থিত হইতে বাকী রহিল না। বরের পাশে কন্যাকে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখিয়া সবাই কন্যার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হইয়া উঠিতে লাগিলো। কিন্তু একই সাথে সবার মুখে হঠাৎ করিয়া একটি আফসোসও ঝরিয়া পড়িল- আহা, কন্যা তো ঠিকই আছে, কিন্তু ছেদা যে ছোট !
ময়-মুরব্বী যে-ই দোয়া-আশির্বাদ করিতে আসিল, সেই আফসোসটাও ধ্বনিত হইতে থাকিল, কন্যা তো ঠিকই আছে কিন্তু ছেদা যে ছোট ! প্রথমে তাহার নাক-মুখ-চোখ লজ্জায় রক্তিম হইয়া অতঃপর ধীরে ধীরে তাহার সর্বাঙ্গ রাগে লাল হইয়া উঠিতে লাগিল। এই কোথাকার বর্বর দেশে আসিয়া পড়িয়াছে সে ! তাহাদের কাহারো জিহ্বার লাগাম তো নাই-ই, বুঝিতে পারিতেছে না স্রষ্টা ইহাদের চোখ দুইটিকে কী উপাদান দিয়া বানাইয়া পাঠাইয়াছে ! বিবাহপূর্ব জীবনে স্পষ্টভাষিণী উপাধিধারী মেয়ে হইয়া এইরকম সর্বৈব মিথ্যা অপবাদ সে সহ্য করিবে কী করিয়া ! ধৈর্য্যরে বাধ ভাঙিতে ভাঙিতে শেষ কাণায় আসিয়া ঠেকিয়াছে। ঠিক সেই মুহূর্তে গ্রামের দাদী সম্পর্কীয়া বৃদ্ধাটিও যখন তাহাকে নাড়িয়া-চাড়িয়া সামনে পিছনে ডানে বামে হইতে ভালো করিয়া যাচাই বাছাই করিয়া অবশেষে বলিয়া উঠিল- আহা, কন্যা তো সুন্দর, সবকিছুই ঠিক-ঠাক আছে, কিন্তু এই তুলনায় ছেদা তো ছোট ! কন্যা আর সহ্য করিতে পারিল না।
গ্রামবাসী যে ছেদন মিয়াকে আদর করিয়া ছেদা বলিয়া ডাকিতো, এই কথা নববধুকে না জানাইলে সে জানিবে কী করিয়া !
মন্তব্য
হায়, ভগবান!!!
খুব একটা ভালো লাগে নাই। গল্পের শেষের অংশটুকুই মনে হয় গল্পের চুম্বক অংশ অথচ সেই অংশটুকুই স্থূল মনে হয়েছে।
ইয়োগাতে ফিরে যান স্যার
এইটা একটা টেস্ট কেস বস। এগুলো আমার চর্চার বিষয়ও নয়। একটা বিশেষ বিষয় জানার চেষ্টা করছি।
ইয়োগা সিরিজ চলবে। কাচামাল প্রস্তুত আছে।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
- ছেদা কি আসলেই ছোট?
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
মনে তো হয়না...
_______________
::সহজ উবুন্টু শিক্ষা::
ঞঁ!
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
হাহাহাহা। খারাপ হয় নাই দাদা। চালাতে পারেন।
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
ইয়োগাই ঊপাদেয়।
ছবিটা কাহিনীর সাথে একদম যায় না।
প্রিয় রনদীপম,
স্যাটায়ার/রসরচনা লেখায় মুন্সিয়ানার অভাব থাকলে পাঠকের কাছে আনন্দের বদলে চরম বিরক্তি ঠেকতে পারে। সর্তকতা অবলম্বন করতে অনুরোধ করা হল।
_________________________________
সচলায়তন.COM কর্তৃপক্ষ
_________________________________
সচলায়তন.COM কর্তৃপক্ষ
ধন্যবাদ সচলায়তনকে।
মনোবিকলন তত্ত্বের রুচিবৈকল্যের একটি বিপজ্জনক টেস্ট করতে গিয়ে পোস্টের শেষে যে চারটি বাক্য জোর করে সেটে দেয়া হয়েছিল, তা আবার ছেটে দেয়া হলো।
আমার যেটুকু জানার চেষ্টা ছিল, তা হয়তো জেনে গেছি। আশার কথা, এখনো আমাদের রুচিবোধের ভরাডুবি হয় নি।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
নতুন মন্তব্য করুন