এই সেই বহুল আলোচিত জল্লাদখানা ! যাকে এখন সবাই জানে ‘জল্লাদখানা বধ্যভূমি ১৯৭১’ নামে। মিরপুর দশ নম্বর গোলচক্কর থেকে এগার নম্বরের দিকে কিছুটা আগালেই মিরপুর বেনারশি পল্লীর প্রথম গেট ধরে পাকা রাস্তাটা আধা কিলোতক যেখানে গিয়ে শেষ হয়েছে, ঠিক সেখানেই একটা বড়সড় সাইনবোর্ডের কালো জমিনে সাদা সাদা বড় হরফে উপরোক্ত কথাটি চোখে পড়বে- ‘এই সেই বহুল আলোচিত জল্লাদখানা।’
পাশের ‘zaf’ চিহ্ণিত দালানটিই একাত্তরের সেই কুখ্যাত ‘পাম্পহাউজ’। যার কূপের সামনে একাত্তরের ঘৃণ্য আলবদর রাজাকাররা বহু নিরপরাধ বাঙালিকে ধরে এনে শিরচ্ছেদ ও হত্যা করে পাম্পহাউজের পানি ভর্তি কূপ-গহ্বরে নিক্ষেপ করতো। এলাকার বিভিন্ন স্থানে শহীদ হয়েছেন এমন আরো অনেকের লাশও টেনে এনে ফেলা হতো এখানে।
১৯৭১ সালে বিহারী অধ্যুষিত মিরপুরের অনেকগুলো জায়গাই হয়ে উঠেছিলো বধ্যভূমি। এমনি দুটি স্থানে পরে ১৯৯৯ সালে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর খননকাজ চালায়। স্থানীয়ভাবে এই জায়গা দুটি পরিচিত ছিল জল্লাদখানা ও নূরী মসজিদ বধ্যভূমি হিসেবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ৪৬ স্বতন্ত্র পদাতিক বিগ্রেডের সহযোগিতায় এই জল্লাদখানা বধ্যভূমি থেকে ৭০টি মাথার খুলি ও ৫৩৭২টি অন্যান্য অস্থি উদ্ধার করা হয়।
আর নূরী মসজিদ বধ্যভূমি থেকে উদ্ধারকৃত খুলি ও হাড়গোড়ের সঙ্গে পাওয়া গিয়েছিল ছিন্ন জামা-কাপড়, ওড়না-শাড়ি-ফ্রক, জুতো স্যান্ডেল, মানিব্যাগ, তসবি ও ব্যক্তিগত ব্যবহারের অনেক জিনিস। তার কতক নমূনা এই জল্লাদখানা বধ্যভূমির মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সর্বসাধারণের প্রদর্শনের জন্য রাখা হয় সেই অভিশপ্ত কূপটির পাশে। এবং কূপটিকে সিমেন্ট বাধাই করে ভারী কাঁচ দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে বর্বরতার স্মারক চিহ্ণ হিসেবে। সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এই স্মৃতিভূমি আজো ফিরে ফিরে স্মরণ করিয়ে দেয় গণহত্যার শিকার প্রত্যেক শহীদের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা।
এই শোকস্মৃতিকে ধরে রাখতে পাম্পহাউজ চত্বরে নির্মিত ‘জীবন অবিনশ্বর’ নামের স্মারক ভাস্কর্যটির দিকে তাকালে থমকে যেতে হয় ! এর পরিকল্পনা ও নির্মাণে শিল্পী রফিকুন নবী ও মুনিরুজ্জামান। গোটা চত্বর জুড়ে শানবাঁধানো ফলকে অঙ্কিত রয়েছে এ যাবৎ খুঁজে পাওয়া দেশের বিভিন্ন বধ্যভূমির তালিকা, বহু শহীদের নাম এবং বিংশ শতাব্দিতে ঘটে যাওয়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উল্লেখযোগ্য বর্বর গণহত্যার তথ্য। এ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন বধ্যভূমি থেকে সংগৃহিত মাটি এনে কাঁচের আধারে সযত্নে সংরক্ষণ করা হয়েছে স্মৃতি হিসেবে।
জল্লাদখানা বধ্যভূমির গেট দিয়ে ঢুকেই মনে হবে গা শিন শিন করা কোন এক নিঝুমপুরীতে বুঝি পা রাখলাম ! এখানকার আবহটাই এমন যে, হাতে গোনা দর্শনার্থীরা এসে অজান্তেই কী এক নির্জন নীরবতার মধ্য দিয়ে ঘুরে ঘুরে এই ছোট্ট পরিসরের মধ্যেই এক শোকবিভোর উপলব্ধিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েন। কেউ কেউ মন্তব্য বইয়ে লিখে যান ইচ্ছেখুশি, অনেকেই মনের কথা মনে চেপেই ফিরে যান।
মুক্তিযুদ্ধের ন’মাসের রক্ত আর মৃত্যুর নদী পেরিয়ে স্বজন হারানোর আর্তি আর বিজয়োল্লাস যখন একাকার, তখুনি অকস্মাৎ যে ভয়াল বিষাদের ভারে গোটা জাতি স্তম্ভিত মুহ্যমান হয়ে পড়ে, তা হলো একের পর এক অসংখ্য বধ্যভূমির আবিষ্কার ! বর্বর নিষ্ঠুর কায়দায় পড়ে থাকা স্বজনের বীভৎস বিকৃত গলিত লাশের গন্ধে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠে ! ভারী হয়ে উঠে জাতির হৃদয়, বিশ্ব মানবতার বিবেক হয়ে যায় স্তব্ধ ! সে ভার আর কখনো নামানো যায় নি এ জাতির বুক থেকে। দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত পর্যন্ত সবখানেই ওঠে আসে বধ্যভূমি আর বধ্যভূমি ! সোনার বাঙলাকে সত্যিই শ্মশান করে দিয়েছে ওরা !
এই সব ভয়াল গণহত্যার হোতা ঘৃণ্য যুদ্ধাপরাধীরাই একদিন আবার এ জাতির হর্তাকর্তারূপে আবির্ভূত হতে দেখা গেলো। এক সাগর রক্ত আর লক্ষ লক্ষ মৃত্যু আর মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে পাওয়া লাল সবুজের পতাকা শোভিত হয়ে অপমানের পাশাপাশি এই কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীদের দ্বারা মহান জাতীয় সংসদও কলঙ্কিত হলো। যেসব ভণ্ড প্রতারক শাসকগোষ্ঠী এই স্তম্ভিত জাতির আর্তিকে তোয়াক্কাও না করে সেই বর্বর যুদ্ধাপরাধীদেরকে পূনর্বাসন পৃষ্ঠপোষকতা করে করে আবারো বিকৃত দানবে পরিণত করার ষড়যন্ত্রে ইন্দন জুগিয়েছে, তারাও আজ সমান অপরাধী।
তাই আজ গোটা জাতির একটাই প্রত্যাশা, সব সহযোগীসহ একাত্তরের ওইসব মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদেরকে অবিলম্বে বিচারের কাঠগড়ায় তুলতে হবে। এ জাতির কপাল থেকে লজ্জাকর কলঙ্কের দাগ মুছতে হলে একটাই পথ- একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই-ই চাই ! কেননা যতক্ষণ বিচার না হবে, আগামী প্রজন্মের কাছে বিশ্বমানবতার কাছে আমরাও যে ক্ষমার অযোগ্য পশুই থেকে যাবো..! মানুষ হতে পারবো না..!
(জল্লাদখানার আরো ছবি)
মন্তব্য
সুযোগ বার বার আসবেনা, এখন সুযোগের সদ্ব্যভার করতে না পারলে এজাতি চিরদিন ধিকৃত হবে এবঙ স্বাধীনতা তার প্রকৃত অর্থ হারাবে । যারা ৭১ এর অপশক্তিকে পূনর্বাসিত করেছে তারা অবশ্যই সমান অপরাধী । ধিক্কার দেই অপরাজনীতিকে ।
রণদা সিরিয়াসলী ক্যামেরা কিনেন, কিনতে না চাইলে আমার থেকে নেন্। বিশেষ বিশেষ জায়গায় যেতে চাইলে আওয়াজ দিয়েন, যেতে না পারলেও সাথে দুএকজন কে দিয়ে দিব, ছবি তোলা, কথা বলা সাথে সাথে ছোট খাট কারিগরী বিষয় সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবেন।
আপনার মেইলের অপেক্ষায় রইলাম।
...........................
Every Picture Tells a Story
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
রণ'দা, মুস্তাফিজ ভাই ঠিক কথাই বলসেন।
এবার দেশে এলে অবশ্যই যাবো এখানে। আপনার পেষ্টের জন্যে ধন্যবাদ!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
*********************************************************
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
কয়েকদিন আগে ফয়েজ লেকের বধ্যভূমিতে গিয়েছিলাম।
ফয়েস লেক বধ্যভূমির মাটিও সংরক্ষিত আছে এখানে...
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...
__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...
আপনার এই ছবি সিরিজ টা কি রকম যে একটা উদ্যোগ, কতটা চমতকার আর অসাধারণ একটি কাজ, বলে বোঝাতে পারব না । সবাই পারে না । হ্যাটস অফ... ভাই ।--------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন
---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন
অসাধারণ একটা প্রামান্য চিত্র। আপনাকে হাজার সালাম।
এই সিরিজটা যে কত ভাল হচ্ছে বলে বোঝানো যাবেনা।
....................................................................................
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ভালো একটা কাজ হচ্ছে!
...................................................................................................................
রণ'দা চালিয়ে যান।
আপনার এই অভিযানে আমিও সঙ্গি হতে চাই। সবগুলোতে হয়তো পারবো না। তবে অন্তত কিছু কিছু যাত্রায় তো থাকতে পারবো। ডাক দিয়েন বস্ ।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
আমি সেই যুগের মেয়ে যারা বয়ফ্রেন্ড নিয়ে শহীদ মিনারে যায় ডেটিং এ.....পায়ের জুতা তাদের পায়েই থাকে..। এ যুগের মেয়ে হয়ে কেন যেন এগুলো আমি পারিনা । যে মুক্তিযুদ্ধ চোখে দেখিনি সেই মহান মুক্তিযুদ্ধের কোন ডকুমেন্ট চোখে পরলে বুকটা ভারী হয়ে যায় । জাদুঘরে গেলে ভাষা শহীদদের নিদর্শন গুলোর সামনে গেলে হঠাৎ করে মনে হয় যেন সেই সময়টায় চলে গেছি । চোখ প্রচন্ড জ্বলতে থাকে ........মুখ ঘুরিয়ে নেই পাছে কেউ দেখে ফেলে চোখের পানি.....আপনার লেখাটা পরে ভালো লেগেছে....
( জয়িতা )
রাজাকার,আল-বদরগো কু্ত্তার বাচ্চা গালি দিলেও কুকুরকে আপমান করা হবে।
এই নরকের কীটদের বিচার চাই।
সংসদের প্রথম আধিবেশনে রাজাকারদের বিচারের আইন পাশ করা হউক।
দুঃখ আর গর্বের কী যে এক মিশ্র অনুভূতি হয় এগুলো দেখলে!
এই ভেজালের দুইটা উপাদানই কেন যে আমাদের অ্যাতো বেশি!
ছবি-লেখা দুইটাই অনেক ভালো হইছে দাদা।
ধন্যবাদ।
০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০
"আমার চতুর্পাশে সবকিছু যায় আসে-
আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা!"
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
যাইনি। সাহস পাইনা যাওয়ার...
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
আমি জায়গাটার কথা আবছাভাবে জানতাম। কখনো যাইনি! চমৎকার লেখা ও ছবির জন্য ধন্যবাদ।
রাজাকারদের শাস্তি চাই!
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
একলা পথে চলা আমার করবো রমণীয়...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
পোস্টটা আগেও পড়েছিলাম। এই ইতিহাসগুলো নিয়ে বারবার লেখা প্রয়োজন, বারবার শেয়ার করা প্রয়োজন যাতে ভুলে যাওয়ার অদ্ভুত প্রবণতা থেকে মুক্ত থাকে আমাদের মন।
কিন্তু ছবি ছাড়া মানাচ্ছে না রন'দা। কোনভাবে ছবির লিংকগুলো হারিয়ে গেছে মনে হয়। আগে যেখানে আপলোড করেছিলেন ছবিগুলো, সেখান থেকে আরেকবার লিংক নিয়ে পোস্ট এডিট করে বসিয়ে দেন পুনরায়। আর না হলে, ফ্লিকার বা পিকাসায় আর একবার আপলোড করে তারপরে সেখান থেকে লিংক দিয়ে দেন।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
হুমম ! ঠিকই বলেছেন। আবারো ঠিকঠাক করে দিতে হবে। তবে শুধু এই পোস্টই না, বহু বহু পোস্ট থেকেই ছবি মুছে গেছে, সমস্যাটা সেখানেই !!
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
ধন্যবাদ। আবারো ছবি জুড়ে দিলাম।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
নতুন মন্তব্য করুন