[রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতিসৌধ
এই সে বধ্যভূমি। ১৯৭১ সনে মুক্তিযুদ্ধ বিজয়ের উষালগ্নে পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার আলবদর বাহিনীর বাঙালি-বুদ্ধিজীবী নিধনের এ সেই স্থান। এখানেই নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে বাঙালি জাতির বিবেক, চেতনা, মননশীলতা, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক- এ মাটির শ্রেষ্ঠ সন্তান- বুদ্ধিজীবীদের। পরিত্যক্ত ইটের ভাটার এ বধ্যভূমি থেকে আজো ভেসে আসে শৃংখলিত হাত পা, উৎপাটিত চোখ, বেয়নেটবিদ্ধ শহীদের আর্তনাদ; শোনা যায় স্বাধিকার প্রত্যাশী প্রতিবাদী কণ্ঠের গোঙানি আর মানুষরূপী রক্তলোলুপ হায়েনার মারণ-উল্লাস। এখানে আকাশ থমকে আছে, বাতাস ভারী, পত্রপল্লব অনড়, শোক ভাষাহীন। এ নির্বাক শোক, আর বেদনারই বিমূর্ত প্রতীক এ স্মৃতিসৌধ।
“সোনার বাংলা আমরা গড়বোই”- এই হোক নাম জানা, অজানা অসংখ্য শহীদের অতৃপ্ত আত্মার প্রতি আমাদের শেষ অঙ্গীকার।]
রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে স্মৃতিসৌধ এলাকায় বাঁ দিকের প্রধান গেট দিয়ে ঢুকতেই পাশে দেয়ালের গায় উপরের এই হৃদয়-নিংড়ানো লেখাগুলো সহজেই চোখে পড়বে সবার। তবে সোনার বাংলা গড়তে হলে প্রথমেই যে সেই সব কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী ঘাতকদেরকে বিচারের কাঠগড়ায় তুলতে হবে, সে কথাটি বধ্যভূমির দেয়ালে লেখা না থাকলেও স্বজনহারানো প্রতিটা বাঙালির বুকে উৎকীর্ণ হয়েই আছে। এই অমোচ্য দাগ সহজে মোছার নয়, তা সেই যুদ্ধাপরাধীরা যেমন ভালো করেই জানে, তেমনি আমাদের সরকারগুলো তা হৃদয় দিয়ে কতটুকু বোঝে বা বোঝার চেষ্টা করে, আমরা জানি না।
দেয়ালে উৎকীর্ণ লেখাগুলোর ঠিক নীচে দেয়া তথ্য-ফলক থেকে আমরা জানতে পারি, এই ‘রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতি সৌধ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ৩০শে অগ্রহায়ণ ১৪০৩, ১৪ ডিসেম্বর ১৯৯৬।’ এবং ৩০শে অগ্রহায়ণ ১৪০৬, ১৪ ডিসেম্বর ১৯৯৯-এ তিনিই এর শুভ উদ্বোধন করেন।
স্থপতি মোঃ জামী আল-সাফী ও স্থপতি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ-এর প্রণীত স্থাপত্য-নক্সা অনুযায়ী গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের গণপূর্ত অধিদপ্তরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়িত এই রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতিসৌধটির বিশাল ব্যাপ্তি নিয়ে ভিন্নমাত্রিক নির্মাণশৈলী এক অন্যরকম মনোবিক্ষেপ তৈরি করে দেয়। এক ভাবগম্ভীর শোক-বিহ্বলতা ছড়িয়ে আছে সবখানে। সৌধ এলাকায় পা রাখলেই বিশাল কালো শোকস্তম্ভটির মতোই এক বিশাল শূন্যতা এসে গ্রাস করে ! স্বজন-হারানো বাঙালির বুকের গভীরে রাখা পাথর-চাপা কষ্টগুলোই উন্মুক্ত হয়ে পড়ে যেন। আকাশে বাতাসে কেবল শূন্যতা আর শূন্যতা...।
গোটা আবহই বলে দেয়, এটা কোন হল্লা করার জায়গা নয়। মৌনতার গুঞ্জনে দোলে কষ্ট-ক্ষরণের জন্যই এখানে আসতে হয়। আর কান পেতে শুনতে হয় সেই কথাটি, প্রজন্ম’৭১-এর কষ্ট-মিছিলে একাত্তরের শহীদদের সন্তানেরা যে প্রশ্ন-ফলকটি গেথে দিয়েছে দেয়ালের গায়- ‘তোমাদের যা বলার ছিল বলছে কি তা, বাংলাদেশ ?’
ডান দিকের অন্য গেট দিয়ে বেরিয়ে এলে দেয়ালে আটকানো আরেকটি ফলক চোখে পড়বে। ওখানে লেখা- ‘রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতিসৌধ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ৩০শে অগ্রহায়ণ ১৪০০ বাংলা, ১৪ই ডিসেম্বর ১৯৯৩ ইং।’
এটুকু পড়ে আমার মতো ইতিহাস-কানা’রা অবশেষে একটা বিভ্রান্তি নিয়েই ফিরবেন ! আর ভাববেন, দুই সময়কালের দুইজন প্রধানমন্ত্রী একই স্মৃতিসৌধের দুইবার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন ! কেন...?
মন্তব্য
হাহাহাহা দুজন দুবার করেছে কেন?
দারুন ছবি ভাইয়া, কখনো যাওয়া হয়নি, জানতে পারলাম অনেক কিছু
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
ভানুর কৌতুক শোনেন নাই !
পিলারে দুইটা এল বসালে নাকি পিলার মজবুত হয়..! এটাও সেরকম কিছু হয়তো..!
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
সুন্দর ছবি, দারুন লেখা, রণ'দা।
ভিত্তিপ্রস্তরের রাজনীতির আঁচর তাহলে এখানেও পড়েছে। তবে ভাগ্য যে অনেক কিছুর মতো এটাও ভিত্তি প্রস্তরেই থেমে থাকেনি।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
আঁচর এখানে পড়বে না..! আমাদের রাজনীতির কেন্দ্র তো এটাই, সেই মুক্তিযুদ্ধসময়কাল থেকেই !!
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
লেখা, ছবি - সবই অসাধারণ। এসব দেখলে নিজের ভেতর ঘুমিয়ে পরা সত্ত্বা ক্ষণিকের জন্য জেগে ওঠে। বারবার জাগিয়ে তোলার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার এই উদ্যোগ সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছুই নাই, শুধু শ্রদ্ধা জানিয়ে গেলাম।
ক্ষণিকের জন্য জাগলে তো হবে না ভাই ! যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না হওয়াতক আমাদেরকে যে জেগে থাকতেই হবে !! আমাদের অস্তিত্বের জন্য, বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের জন্য !!!
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
সেটাই তো রে ভাই। এমনিতে জেগেই থাকি, কিন্তু যেটা বোঝাতে চেয়েছিলাম, এইসব দেখলে মনে হয় সব ছেড়ে-ছুড়ে রাস্তায় নেমে যাই, এক্সট্রীম কিছু করতে ইচ্ছা করে...
হায়রে রাজনীতি...
___________________
আপনার পোস্টের জন্য ধন্যবাদ...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
খুঁজে যাই শেকড়ের সন্ধান...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ব্যাক্তিগত ব্লগ | আমার ছবিঘর
বিভ্রান্তি, ক্লান্তি ক্ষমা করো ...
অনেক ভালো উদ্যোগ দাদা। আমিও আমার একটু শ্রদ্ধা রেখে গেলাম। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের জন্য, মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদ আর নিপীড়িতের জন্য, এবং এভাবে এগুলো দেখানোর জন্য আপনাকেও।
০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০
"আমার চতুর্পাশে সবকিছু যায় আসে-
আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা!"
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
আপনাকে আবারও শ্রদ্ধাবনত ধন্যবাদ।
আপনি যে অনেক ভালো একটি কাজ করছেন তা কি আপনি জানেন?
জীবন জীবন্ত হোক, তুচ্ছ অমরতা
মহাকাল কাউকে না কাউকে দিয়ে প্রয়োজনীয় কাজটি করিয়ে নেয়। এখানে আমার তো কোন কৃতিত্ব নেই ভাই ! আমি তো সময়ের প্রতিনিধিত্ব করছি কেবল !
এখানে যেটুকু আমার, তা হচ্ছে ব্যক্তিগত আবেগ আর অন্তর্গত কষ্ট। সাথে কিছু ব্যর্থতা, সঠিক কথাটা সঠিকভাবে বলতে পারছি কই !!
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
নতুন মন্তব্য করুন