এটা কি বিডিআর বিদ্রোহ, না কি কোন জঙ্গি পরিকল্পনার বাস্তবায়ন...!

রণদীপম বসু এর ছবি
লিখেছেন রণদীপম বসু (তারিখ: শনি, ২৮/০২/২০০৯ - ৮:৫৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ বাংলাদেশ রাইফেলস তথা বাংলাদেশের ইতিহাসের যে ভয়াবহতম নৃশংস ঘটনা ঘটে গেলো তাকে একেবারে প্রাথমিকভাবে বিডিআর জওয়ানদের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ বিদ্রোহ হিসেবে তাৎক্ষণিকভাবে আখ্যায়িত করা হলেও ধীরে ধীরে ভেতরের লোমহর্ষক ঘটনাগুলো মিডিয়ার মাধ্যমে একে একে উন্মোচিত হতে থাকলে তা যে আদৌ কোনো বিদ্রোহ ছিলো কিনা সে হিসাবটাই এখন গরবর হতে শুরু করেছে। অন্তত এটা বুঝা গেলো যে বিডিআর-এর মধ্যে মিশে থাকা তৃতীয় কোন গোষ্ঠী এই ঘটনাধারাকে জনসাধারণের মধ্যে অত্যন্ত সফলভাবে ভিন্নখাতে দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল বলেই মনে হয়। ইতোমধ্যে ঘটনার যেটুকু আমরা জানতে পারছি তাতেই এর ভয়বহতায় আৎকে উঠছি ! এরই মধ্যে জিম্মি অবস্থা থেকে মুক্ত অনেকের ভাষ্যও মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারছি আমরা। যদিও সবটুকু শোনার সুযোগ আমাদের নেই বা এগুলোর সত্যাসত্য যাচাইয়ের কোন উপায় আমাদের নেই। তবু শুরু থেকে সাধারণ নাগরিকদের কাছে প্রকাশিত ঘটনাচিত্র, জওয়ানদের বিভিন্ন সময়ে উৎক্ষিপ্ত উক্তি, দাবী-দাওয়া এমনকি সামগ্রিক বডিল্যাংগুয়েজের সাথে ঘটনাপরবর্তী আংশিক উন্মোচিত বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করলে সামগ্রিক পরিস্থিতির গভীরে ভয়ঙ্কর একটা পূর্ব-পরিকল্পনার চিহ্ণগুলো ক্রমেই যেন স্পষ্ট হয়ে উঠছে। সংগত কারণেই মনের মধ্যে এই প্রশ্নটাই গুমড়ে গুমড়ে উঠছে- এটা কি সত্যিই বিডিআর জওয়ানদের তাৎক্ষণিক বিদ্রোহ ছিলো, না কি গভীর কোন জঙ্গি পরিকল্পনার বাস্তবায়িত অংশ ?

ঘটনার সূত্রপাত থেকে যাঁরা বিষয়টির প্রতি গভীর মনোযোগ সহকারে নজর রাখছিলেন তাঁদের কাছে হয়তো এর কোন সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা থাকতে পারে। তবে টিভি মনিটরে ভাসমান ঘটনার উল্লেখযোগ্য ছবিচিত্র দেখে অনেকগুলো হিসাব জট পাকিয়ে যাচ্ছে। যুক্তির প্রশ্নে বেশ কিছু ঘটনা ইতোমধ্যে রহস্যময় ঠেকছে যাতে মনে হওয়া খুবই স্বাভাবিক যে এটা বিডিআর-এর আভ্যন্তরীণ বিষয়ের বাইরে সুদূরপ্রসারী কোন ষড়যন্ত্রের অংশ। এরকম অংকে না মেলা কিছু প্রশ্ন আমরা হয়তো রিভিউ করে দেখতে পারি।

১.০ ফেব্রুয়ারি ২৪ বিডিআর সপ্তাহ উদ্বোধনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে সম্ভাব্য পূর্ণ বিপজ্জনক একটা পরিস্থিতির মধ্যে অবস্থান করছিলেন তা হয়তো আমরা এখন বুঝতে পারছি। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও কি আমাদের মতোই এখন এসে তা বুঝতে পারছেন ? গোয়েন্দারা কি সত্যিই কোন আলামত আগে থেকে টের পান নি ? এটা কি আমরা বিশ্বাস করবো ?

২.০ পিলখানার বিডিআর সদর দপ্তরের দরবার হলের অনুষ্ঠানে গোটা দেশ থেকে সবগুলো সেক্টর, ব্যাটেলিয়ান ক্যাম্পের উর্দ্ধতন অফিসার এবং অনেক জওয়ান অংশগ্রহণ করে থাকে, এটা হয়তো সবাই জানে। কিন্তু সবাই কি সবাইকে চেনে ? পিলখানার ব্যারাকে প্রবেশ এবং অবস্থানকালীন তাদের পরিচয়গুলো কিভাবে মিমাংশিত হয়ে থাকে ? একজন জঙ্গি বাইরে থেকে বিডিআর পোশাক কিনে (শুনেছি বাইরে নাকি আর্মি ও বিডিআর-এর পোশাক কিনতে পাওয়া যায়) নিকটতম সমমনা কোন হাবিলদার বা এ ধরনের কারো সহায়তায় অবস্থান করা কি সম্ভব নয় ?

৩.০ দরবার হলে কেউ অস্ত্র নিয়ে যেতে পারে না বা যাওয়ার রেওয়াজ নেই বলে শোনা যায়। তাহলে পিলখানার গেটের ভেতর থেকে জওয়ানরা মিডিয়াকে উচ্চস্বরে যে বক্তব্য রেখেছিল- ডিজি প্রথমে গুলি করে জওয়ানদের উপর, তারপরই জওয়ানরা বিদ্রোহ করে; কথাটা মিথ্যা এবং পরিকল্পিত। কেন এই পরিকল্পিত মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছিল তারা ? একইভাবে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধেও জনমনে একটা আতঙ্কজনক ধারণা তৈরির চেষ্টা করেছিল। কেন ? এমনকি প্রধানমন্ত্রির সাথে বিডিআর সদস্য প্রতিনিধিরা মিথ্যে তথ্য প্রদান করে সাধারণ ক্ষমার আশ্বাস নিয়েছিল। বিদ্রোহীরা কি এরকম ক্ষেত্রে কখনো মিথ্যে তথ্য বলে, যা নাকি যৌক্তিক সময় পরেই ফাঁস হয়ে যাবে ?

৪.০ একজন ডিজির বিরুদ্ধে কথিত দুর্নীতি বা দুর্ব্যবহারকে উপলক্ষ্য করে বিপুল সংখ্যক চৌকস নিরস্ত্র সেনা কর্মকর্তাকে, যাঁরা জঙ্গি বিরোধী ভূমিকায় প্রশংসনীয় সাহসী অবদান রেখেছিলেন, তাঁদেরকে ব্রাশ ফায়ারে গণহত্যা করা তাৎক্ষণিক বিদ্রোহ হিসেবে কতোটা অনুমোদনযোগ্য ? আসলে কি এটা বিদ্রোহ, না কি কোন ব্যাপক ষড়যন্ত্রের অংশ ?

৫.০ ঘটনা ঘটার পরপরই অনেক জওয়ানদের মুখমণ্ডলে লাল কাপড় বাঁধা থাকতে দেখা গেলো। কোন্ আশ্চর্য প্রদীপের ছোঁয়ায় এগুলো হঠাৎ করে সবার কাছে বেরিয়ে এলো ? আধা সামরিক বাহিনী হিসেবে মুখে কাপড় বাঁধার জঙ্গি স্টাইল না হয় বাদই রাখলাম, কাপড়গুলো কখন সংগৃহিত হলো ?

৬.০ যতটুকু জানা যায়, অস্ত্রাগারের চাবি নাকি কোন উর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছেই রক্ষিত থাকে এবং এমুনিশান বা গোলাবারুদের মজুতখানাও নাকি অস্ত্রাগার থেকে বেশ দূরে। আগে থেকে অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহে না থাকলে দরবার হলে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো এতো দ্রুততার সাথে আদৌ কি ঘটানো সম্ভব ?

৭.০ বেঁচে ফিরে আসা প্রত্যক্ষদর্শী কোন কোন অফিসারের ভাষ্যে জানা গেল যে অনেকগুলো সশস্ত্র ঘাতক জওয়ানদেরকে অপরিচিত মনে হয়েছে। একজন সেনা কর্মকর্তার চোখে অপরিচিত কথা বৈশিষ্ঠ্যমূলক বৈ কি ! তবে কি বাইরের কোন গ্রুপ সংশ্লিষ্ট ছিলো ?

৮.০ যে লোমহর্ষক অবস্থায় বহু সেনাকর্মকর্তার মৃতদেহ ম্যানহোল, স্যুয়ারেজ বা স্বল্প সময়ে খোড়া গণকবর থেকে উদ্ধার হচ্ছে, এই সংস্কৃতিতে বিডিআর জওয়ানরা কি পূর্ব অভিজ্ঞ বা অভ্যস্ত ? যদি না হয়ে থাকে এই অভ্যস্ত সংস্কৃতির ঘাতক গ্রুপের পরিচয় কী ?

৯.০ পিলখানার বিভিন্ন জায়গা থেকে যে পরিমাণ লুকানো গোলাবারুদ, গ্রেনেড বা ধ্বংসাত্মক এমুনিশান উদ্ধার হচ্ছে সেগুলো কি বিডিআর মজুদখানার সরবরাহ ? জওয়ানরা আত্মসমর্পণ যদি করবেই তাহলে এসব আবার লুকিয়ে ফেলার কারণ কী ? নাকি ওগুলো আসলেই লুকানো ভাণ্ডার, যা আগে থেকেই সংগ্রহ করা হয়েছিলো ?

১০.০ ডিজি’র বাসা এবং অফিসার কলোনি বা মেসগুলো ব্যাপক লুটপাট ও পুড়িয়ে সম্পূর্ণ ভস্ম করে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থান থেকে সাধারণ পোশাকে ধৃত জওয়ানদের কাছ থেকে লুটপাটকৃত স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধারও করা হয়েছে কিছু কিছু। সাধারণ জওয়ানের মনস্তত্ত্বে কর্মএলাকায় এসব লুটপাট কতটুকু সাযুজ্যপূর্ণ ? এরা কি সত্যিই বিডিআর জওয়ান ছিল ?

১১.০ শোনা যাচ্ছে প্রথম রাতেই অনেক বিদ্রোহী জওয়ান ব্যারাক ছেড়ে পালিয়ে গেছে। এজন্যই কি পিলখানার আশেপাশে বা ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সেনা অবস্থানের তীব্র বিরোধিতার শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীকে ? এরা কি সত্যি কোন বিদ্রোহী জওয়ান, না কি বাইরের কোন গ্রুপ ? নিরাপদে পালানোর সুযোগ চাচ্ছিল ?

১২.০ শুধু দরবার হলেই নয়, কলোনিগুলোতে তল্লাশি চালিয়ে কর্মকর্তাদের হত্য করা হচ্ছিল। এমনকি যেসব জওয়ান এর বিরোধিতা করেছে তাদেরকেও সাথে সাথে হত্যা করা হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। জ্বালিয়ে পুড়িয়ে যে নারকীয় কায়দায় ছারখার করে দেয়া হচ্ছিল, মুহূর্তের মধ্যে সহকর্মী সহযোদ্ধা জওয়ানদের এরকম পাল্টে যাওয়া ঘাতকমূর্তি ধারণ করা কি আদৌ সম্ভব ? এই ঘাতকেরা কি বিডিআর সদস্যই ছিল ?

১৩.০ আগের দিনের সদর দপ্তরের কথিত বিদ্রোহ পরের দিন দেশের অন্যান্য বিডিয়ার সেক্টর ব্যাটেলিয়ন ক্যাম্পগুলোতে নাড়া দেয়া শুরু করলো। এই সময় ফ্যাক্টরে কোন রহস্য লুকিয়ে আছে কি ?

সময়ের সাথে সাথে এরকম আরো বহু প্রশ্ন হয়তো দেখা দেবে। এসবের উত্তর আমাদের সাধারণের জানা নেই। তবে যেসব নৃশংস আলামত একে একে পাওয়া যাচ্ছে, কোন ঘৃণ্য জঙ্গি গ্রুপ ছাড়া একটা সুশৃঙ্খল বাহিনীর সাধারণ জওয়ানদের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশকে কোন্ মনস্তত্ত্ব দিয়ে বিশ্লেষণ করা হবে ? এগুলোর মধ্যে যে সুদূরপ্রসারী গভীর ষড়যন্ত্রমূলক পরিকল্পনার স্পষ্ট লক্ষণ আমাদের সাধারণের নজরে এসে যায় কেবল দেখে বা শুনে, বাস্তবে তা যে আরো অনেক বেশি ভয়ঙ্কর চেহারায় রয়েছে তা কেবল আঁচ করতে পারি আমরা। আর কেঁপে কেঁপে ওঠি। কতদিন থেকে কী পরিমাণ অর্থায়নে কিভাবে এসব জঘন্যতম পরিকল্পনা হচ্ছিল, কে বা কারা এর পেছনে সক্রিয় ছিল বা আছে, সেই কালো হাতগুলোকে চিহ্ণিত করা কি সরকারযন্ত্রের জন্য খুব বেশি কষ্টকর বিষয় ?

থেকে থেকে মা বোন শিশুদের কান্নার রোল আর কতো বেশি গগনবিদারী হলে রাষ্ট্র এই অপশক্তিগুলোকে খুঁজে খুঁজে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে ? এরকম আর কতো ভয়াবহ ট্র্যাজেডি এই দুর্ভাগা জাতিকে এমন অসহায়ভাবে দেখে যেতে হবে ?

অবশেষে যে কথাটা না বললেই নয়, আমাদের সেনাবাহিনী এবার যে সহনশীলতা আর জাতির প্রতি নিরঙ্কুশ বিশ্বস্ততার পরিচয় দিলেন, এতে তাঁদের ক্ষয়ে যাওয়া ভাবমূর্তি অবশ্যই জনমনে ভীষণ ইতিবাচক ভুমিকা রাখবে নিশ্চয়ই। এক বেদনাময় রক্তগাথা বুকে চেপে তাঁদের এ বিশ্বস্ততাকে আমরা কৃতজ্ঞচিত্তে সাধুবাদ জানাই। তাঁরা যে আমাদেরই ভাই। আর বিদ্রোহের নামে এমন নারকীয় পৈশাচিকতা কোন দেশপ্রেমিক বাহিনীর সদস্যের দ্বারা সংঘটিত হওয়া আদৌ কি সম্ভব ? পেছনের সেই কুৎসিৎ ছায়ামুখগুলোর মুখোশ উন্মোচন করাটা খুবই জরুরি এখন, রাষ্ট্রের নিরাপদ আগামীর জন্যই।


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফের ডীন নেলসন ইতোমধ্যেই সরকারের শাসনক্ষমতার ঊনতা নিয়ে ফতোয়া জারি করে বসে আছে। জবাব দিয়েছেন ম্যাশ



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

জেবতিক রাজিব হক এর ছবি

আপনার এই প্রশ্নের উত্তরগুলো আমাদের কখনই জানানো হবেনা।

রানা মেহের এর ছবি

২ এবং ৮ নাম্বার পয়েন্টগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এদুটো হিসেব কোনভাবেই মিলছেনা

চমতকার বিশ্লেষনের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

নদী এর ছবি

অসাধারণ পর্যবেক্ষণ।
২-৫ পয়েন্টগুলো অনেক প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দেয়।

নদী

হিমু এর ছবি

লে. কর্ণেল সৈয়দ কামরুজ্জামানের ভাষ্য অনুযায়ী, জওয়ানরা শুরুতে দরবার হল ঘেরাও করে এবং টুকটাক গুলি করে ভয় দেখায়। এরপর তাঁরা দেখেন আরো সৈন্য অ্যামিউনিশন নিয়ে আসছে। অর্থাৎ যে অস্ত্র শুরুতে ব্যবহার করা হয়েছে, তা বিডিআর এরই অস্ত্র। বাইরে থেকে হুবহু একই অস্ত্র সরবরাহ করা না হলে তো অ্যামিউনিশন ম্যাচ করতো না।

সব জওয়ান একসাথে দরবার হল ছেড়ে যাওয়া, এরপর মুখে লাল কাপড় বেঁধে আসা, এ থেকে বোঝা যায়, সবকিছুর ছক আগে থেকেই, এবং অন্তত একসাথে দরবার হল ত্যাগ করার ব্যাপারে প্রায় চার হাজার জওয়ানই অবগত ও সম্মত ছিলো।

এখন কথা হচ্ছে, যে জওয়ান হত্যার উদ্দেশ্যে নিরস্ত্র অফিসারের মুখোমুখি হচ্ছে, তাকে কেন মুখে কাপড় বাঁধতে হবে? সে তো জানেই যে এই অফিসারকে সে হত্যা করতে যাচ্ছে, তার আর সাক্ষ্য দেবার সুযোগ নেই। ব্যাপারটি কি এমন হতে পারে, সে নিজের মুখ আসলে অন্য জওয়ানদের কাছ থেকেও আড়াল করতে চাইছে? যাতে পরবর্তীতে কেউ বলতে না পারে, এই কুকর্মের হোতা কারা ছিলো? অথবা আদৌ কেউ তাকে চেনে কি না?

পরবর্তীতে জওয়ানদের একটা অংশ যে অফিসার হত্যায় সক্রিয়ভাবে বাধা দিয়েছে, তা অফিসাররা নিজ মুখেই স্বীকার করেছেন। কিন্তু আটকে পড়া লুকিয়ে থাকা অফিসার মেজর মুনীর এর ভাষ্য অনুযায়ী, জওয়ানদের একটি অংশ বিভিন্ন ঘরে অবস্থান নেয়া অফিসারদের খুঁজে খুঁজে হত্যা করেছে।

আমার ধারণা, বাইরের প্রভাববলয়ের অধীন একটি ছোট কিলার ইউনিট অফিসার হত্যা ও মিডিয়ার সামনে এই "বিদ্রোহ" সম্পর্কে একটি ধারণা পৌঁছে দেয়ার কাজ করেছে। বাকি অস্ত্রধারী জওয়ানদেরকে নিজেদের পুটকি বাঁচানোর জন্য পিলখানার সীমান্ত পাহারায় পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে সেনাবাহিনীর ভয় দেখিয়ে। অধিকাংশ জওয়ান এই পরিকল্পনায় অফিসার হত্যার ব্যাপারটি সম্পর্কে অবগত ছিলো না বলেই আমার বিশ্বাস, কারণ সেক্ষেত্রে তা অফিসারদের কানে উঠতে বাধ্য। ঘটনা ঘটে যাবার পর লুটপাট যারা করেছে, তারা সুযোগসন্ধানী। পরবর্তীতে যখন প্রায় সব জওয়ানের হাতেই অস্ত্র চলে এসেছে, তখন পরিস্থিতি অন্যরকম হয়। কিন্তু ততক্ষণে মূল অপারেশন সম্পন্ন।

গোয়েন্দা সংস্থার ওপর দিকে রদবদল জরুরি। গোয়েন্দারা তাদের সহকর্মী অফিসারদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছেন নিজেদের অযোগ্যতার মাধ্যমে।

এই ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত ঘটানো উচিত। এবং এর ফল প্রকাশ করা উচিত। সেনাবাহিনী ও জনগণের মানসিক দূরত্ব তাতে হ্রাসই পাবে বলে আমার বিশ্বাস।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

দিগন্ত এর ছবি

আপনার বিশ্লেষণের সাথে একমত।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

শামীম এর ছবি

লে.ক. সৈয়দ কামরুজ্জামানের ভাষ্যের সাথে বেঁচে যাওয়া এবং দরবার হলে উপস্থিত অন্য অফিসারদের বক্তব্য কি মিলেছে? বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল এবং পত্রিকাতে প্রকাশিত সাক্ষাতকারগুলো কি ভেতরে ঘটা ঘটনাগুলোর একটা ছবিই উপস্থাপন করে?

গু.আজমের ছেলের ড়্যাংক কী?
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

এধরনের স্পেকিউলেটিভ পোস্ট দেয়াটা কতটা দায়িত্বপূর্ণ হচ্ছে তা ভেবে দেখার অনুরোধ করছি। সরকারের উপর আমাদের সবারই আস্থা রাখা প্রয়োজন।

রণদীপম বসু এর ছবি

সরকারের উপর অবশ্যই আমাদের আস্থা রয়েছে। আমরা সাধারণ চোখে যে সব উল্লেখযোগ্য পয়েণ্ট বা ঘটনাচিত্রগুলো সন্দেহজনক মনে করছি তা তুলে ধরছি। এতে তো বরং অনুসন্ধানে সহায়তাই হবার কথা ! এটা সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কারো কাজে লাগতেও পারে, নাও লাগতে পারে । আমি তো মনে করি যার কাছে যা খটকা বলে মনে হয় তা জানানো উচিৎ। এতে গোটা বিষয়টাকে বিভিন্ন দিক থেকে নিরীক্ষণ করা সহজতর হবে। তবে অবশ্যই যুক্তিহীন গুজব বা বানোয়াট তথ্য দেয়া থেকে আমাদের বিরত থাকা সুনাগরিক দায়িত্ব।

ধন্যবাদ প্রকৃতিপ্রেমিক, আপনার এ সতর্কবাণী আমাদেরকে অসংলগ্ন কিছু বলে ফেলার ক্ষেত্রে আরো সজাগ থাকতে সহায়তা করবে।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

রণদা, ধন্যবাদ আমার মন্তব্যটাকে সুন্দরভাবে দেখার জন্য। সবারই মন ভীষণ বিষন্ন। কামনা করি আসল সত্যটা বেরিয়ে আসুক।

অমিত এর ছবি

২। বাইরে থেকে ডিভিশনগুলা অফিসিয়ালি আসার সময় লুকিয়ে আসা একটু কঠিন কাজ হবে, ল্যান্সনায়েক, নায়েক অথবা কোনও না কোনও কমিশনড অফিসারের চোখে এটা ধরা পড়ার কথা। তবে ১৫০০০ সদস্যের মধ্যে লুকিয়ে থাকা খুব কঠিন কিছু না।থাকার ব্যবস্থা সম্ভবত তাবু খাটিয়ে হয়েছিল। আর কোন অংশ থেকে অফিসিয়ালি কারা কারা এসেছে সেটা বের করা সময়ের ব্যাপার মাত্র।

৪। এটা আসলে ডিটেইল অ্যানালাইসিস না করে বলা ঠিক হবে না।জঙ্গি দমন অভিযানে যারা মূল দায়িত্বে ছিলেন, তাদের মধ্যে কতজন এবার নিহত হয়েছেন ? সবাই ?

৫। বিডিআর সপ্তাহে লাল /কমলা কাপড়ের অভাব ছিল না। আর মুখ বাঁধার কারণ আর কিছুই না, যাতে পরে ট্রেস করতে না পারে।

৭। অপরিচিত ব্যাপারটা বুঝতে পারিনি। অপরিচিত বলতে কি বিদেশি বোঝাতে চেয়েছিলেন ? আর পুরো দেশ থেকে আসলে সবার মুখ নাও চেনা যেতে পারে। তবে একটা ব্যাপার। অভিজ্ঞতা সম্পন্ন চৌকস অফিসাররা সোলজারের বডি ল্যাঙগোয়েজ দেখে বলতে পারেন সে কি ধরণের ট্রেনিংপ্রাপ্ত।

৮। হেট ক্রাইম মানুষকে দানবে পরিণত করে। অনেক সময় দেখবেন গ্রামের সাধারণ মানুষই চোর বা ডাকাত ধরার পর তাদের পিটিয়ে চোখ উপড়ে মেরে ফেলে। আর বিডআর অথবা আর্মি মানুষ খুনে ট্রেনিঙপ্রাপ্ত। যুদ্ধে দয়া দেখাতে গেলে নিজেকেই আগে মরতে হবে।

১১। আসলে দুইটা হওয়াই সম্ভব। হস্টেজ সিচুয়েশনে পুলিশ অথবা আর্মিকে এরকম দূরে দূরে রাখতেই পছন্দ করে হস্টেজ টেকাররা, যাতে তারা অতর্কিত আক্রান্ত না হয়।

১২। হতে পারে আবার নাও পারে। ৭৫, ৮১ এর ক্যু গুলাতে কিন্তু সহযোদ্ধাদের হাতেই নিহত হয়েছিল অগণিত আর্মি সদস্য।

১৩। এই পয়েন্টটা আসলে এই ধারণাটাকেই শক্ত করে যে এটা আসলে একটা ছোট ইউনিটের কাজ। নাহলে একই সংগে হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। তবে অফিসারদের উপর রাগটা হয়ত আসলেই ছিল।

মাশীদ এর ছবি

কিছুই হিসেবে মিলছে না। মাথায় নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। সেগুলো সুন্দরভাবে তুলে ধরার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ, রণদা। ভাবছি, শুধু দাবী-দাওয়া আদায়ের জন্যই যদি বিদ্রোহ, তাহলে তো এতগুলো আর্মিকে আটকে ফেলে একটা হস্টেজ সিচুয়েশান তৈরি করাই যথেষ্ট ছিল, এভাবে নৃশংস খুন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে লুট আর আরো খুন, লাশের প্রতি এমন ভয়াবহ ট্রিটমেন্ট - এসবের তো দরকার ছিল না। তাহলে করল কেন? এইরকম একটা খুনীর দলে পরিণত হল বিডিআর বাহিনী? নাকি অন্য কেউ, অন্য কোন ব্যাপার?

খুব অস্থির লাগছে।


ভাল আছি, ভাল থেকো।


ভাল আছি, ভাল থেকো।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

চলুক

সব প্রশ্নের জবাব মিলুক অতি সত্ত্বর, এই কামনা করি।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

অনেক হিসেব মিলছে না। রণদা'কে ধন্যবাদ লেখাটার জন্য।

সায়েদ এর ছবি

প্রশ্নগুলোর উত্তর সত্যিই জানা বড় দরকার।
ধন্যবাদ।

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

ধন্যবাদ লেখাটির জন্য।
৯ নং পয়েন্টটি আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

সৌরভ এর ছবি

কিছু ভাবতে ইচ্ছে করছে না। এরা কারা? মানুষ? আমাদের মতো?


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

জিজ্ঞাসু এর ছবি

ইতিমধ্যেই ঘুমে ব্যঘাত শুরু হয়েছে। আবোল তাবোল স্বপ্ন দেখছি। ক্লান্তির কারণে। ঘটনার দিকে মনোযোগ দিতে গিয়ে উৎকণ্ঠা আর বেদনায় মন ভারাক্রান্ত। আমার উৎকণ্ঠা হল সম্পূর্ণ ঘটনার যারা উদ্যোক্তা তারা কিন্তু নিরস্ত হয়নি, তারা অ্যাকটিভ আছে। এখন বন্দী বিডিআর জওয়ানদের বিরুদ্ধে যেন কোর্ট মার্শাল বা দ্রুত বিচারের নামে তাদেরকে হত্যা করা না হয়। তাদেরকে খতম করলে ঘটনার সব আলামত নষ্ট হবে। ইতিমধ্যে অনেক আলামত নষ্ট শুরু হয়েছে। কোন কোন মৃতদেহের পোস্টমর্টেম করেই তাদের দাফন সম্পন্ন করা হচ্ছে। মৃতদেহের ফরেনসিক রিপোর্ট এবং মৃতদেহের সকল ধরনের আঘাতগুলো, ব্যবহৃত অস্ত্র, গুলি, গোলাবারুদ নিয়ে রিসার্চ করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাকে কীভাবে মারা হয়েছে সেটা দেখেও বিচার বিশ্লেষণের অনেক সুযোগ আছে। সেজন্যেই আমার উদ্বেগ কাটছে না। কোন বক্তব্যের সাথে কোন বক্তব্যের মিল পাচ্ছি না। ক্লান্ত আমি। উদ্বিগ্ন। ব্যারাকে অবস্থানকৃত এবং ধৃত সব বিডিআর জওয়ানদের আলাদা রেখে তাদের কাছ থেকে প্রকৃত তথ্য উদঘাটনের চেষ্টা এবং উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে। সেনাপ্রধান বলেছেন সারাদেশ থেকে তার কাছে কিছু পয়েন্ট (দাবী) এসেছে বা আসছে। এসব পয়েন্ট যদি হয় বিডিআর জওয়ানদের হত্যা করার পয়েন্ট তাহলেই সেখানে সন্দেহ করার অবকাশ থাকে। এমন পয়েন্ট না হলেই ভাল। যেহেতু ঘটনার সত্যতা রাতারাতি পাল্টে গেল এবং সংশ্লিষ্টদের বক্তব্যে ব্যাপক ব্যবধান পাওয়া যাচ্ছে তাতে সুষ্ঠু তদন্ত ছাড়া আমাদের সামনে আর কোন পথ খোলা নেই। এ মুহূর্তে কোন তথ্যই বস্তুনিষ্ঠ মনে করতে পারছি না। আপনি যেসব সন্দেহ পোষণ করছেন এমনই আরও অনেক কথা শুধু মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। প্রকৃত সত্য জানতে পারব কি?

___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে

শিক্ষানবিস এর ছবি

আমাদের সেনাবাহিনী এবার যে সহনশীলতা আর জাতির প্রতি নিরঙ্কুশ বিশ্বস্ততার পরিচয় দিলেন, এতে তাঁদের ক্ষয়ে যাওয়া ভাবমূর্তি অবশ্যই জনমনে ভীষণ ইতিবাচক ভুমিকা রাখবে নিশ্চয়ই। এক বেদনাময় রক্তগাথা বুকে চেপে তাঁদের এ বিশ্বস্ততাকে আমরা কৃতজ্ঞচিত্তে সাধুবাদ জানাই।

সেনাবাহিনীর দায়িত্বশীল আচরণ এবং তাদের সংহত চেইন অফ কমান্ড আমাকে মুগ্ধ করেছে।

নন্দিনী এর ছবি

রণদীপম, আপনার বিশ্লেষণ মূলক লেখাটির জন্য ধন্যবাদ ...
কিছু মন্তব্য করার মত ভাষাও যেনো হারিয়ে ফেলেছি...তবে যারা একে 'বিপ্লব' বলে আখ্যায়িত করার নানা চেষ্টা করছেন, তাদের বিশ্লেষণের 'অসাধারণ' ক্ষমতার প্রতি সত্যি করুণা হয় !

দাবী জানাই এরা যেই হোক, খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক - দেশেরই স্বার্থে । আমরা আর এমন নারকীয় ঘটনা দেখতে চাই না...

নন্দিনী

কীর্তিনাশা এর ছবি

আমি এখনো বিচলিত, ভিষন বিচলিত।

আমাদের দেশটা সত্যিই কি কোন দিন নিজ মেরুদন্ডের ওপর খাড়া হতে পারবে? নাকি একের পর এক এরকম ভয়াবহ সব দুর্যোগ এসে আমাদের চলার পথ রোধ করে দেবে?

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

নন্দিনী বলেছেন-
যারা একে 'বিপ্লব' বলে আখ্যায়িত করার নানা চেষ্টা করছেন, তাদের বিশ্লেষণের 'অসাধারণ' ক্ষমতার প্রতি সত্যি করুণা হয় !

হুম। আমারও।

ঠিক লিখেছেন রণদা'।

মন খারাপ

০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০
"আমার চতুর্পাশে সবকিছু যায় আসে-
আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা!"

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

আরিফুর রহমান এর ছবি

হাঁটুপানির জলদস্যু'র ৫ নম্বর কমেন্টের সাথে পুরোপুরি একমত।

কিলার ইউনিট সম্ভবত 'ফার্স্ট ইনস্ট্যান্সে'ই হত্যা এবং মাটিচাপা দেয়ার কাজটা শেষ করে ফেলেছে।

ইনটেলিজেন্স এজেন্সিগুলি হয় অদক্ষতাজনিত দৌর্ব্যল্য দেখিয়েছে, অথবা ইচ্ছাকৃত বোধহীনতা।

যেটাই হোক দ্রুত শোধন প্রয়োজন।

হিমু এর ছবি

৬ মার্চ, ২০০৯ এর প্রথম আলোতে প্রকাশিত একটি প্রস্তাবনাপত্র।

পিলখানা ট্র্যাজেডি
আমিন আহমেদ চৌধুরী
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি খোলা চিঠি

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আপনি এক ধরনের যুদ্ধের মুখোমুখি হয়েছেন। শত্রুবাহিনী একটি নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং কিছুটা সফলও হয়েছে। কারণ, তারা পুরো দেশকে ধোঁকা দিতে সক্ষম হয়েছে। পরিস্থিতির বিশ্লেষণে স্পষ্ট যে যারা উচ্ছৃঙ্খলতা ছড়িয়েছে এবং হত্যাযজ্ঞ শুরু করেছে, তাদের বেশির ভাগই বিডিআরের সদস্য নয়। বাইরের কেউ তাদের মধ্যে মিশে গিয়ে এ কাজের নেতৃত্ব দিয়েছে।

অনুগ্রহ করে আপনি কঠোর পদক্ষেপ নিন। এমন জঘন্য অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে দ্বিধান্বিত হবেন না। মনে রাখবেন, আপনি তাদের ক্ষমা করলেও তারা আপনাকে ক্ষমা করবে না। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতাবিরোধীদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। কিন্তু সুবিধাজনক সময়ে তাঁকে ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিতে তারা দ্বিধা করেনি। এটাই তাদের বৈশিষ্ট্য। অনুগ্রহ করে জরুরি ভিত্তিতে বিচক্ষণ পদক্ষেপ নিন। সশস্ত্র বাহিনীর সব গোয়েন্দা শাখা, পুলিশ, সিআইডি, এসবি, র‌্যাব, বিডিআর, ডিজিএফআই, এনএসআইয়ের পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সর্বোপরি সচিবালয়কে পুনর্গঠন ও দক্ষ করে তোলা প্রয়োজন।
এ ধরনের কাজের ক্ষেত্রে তড়িৎ গতিতে যুগপৎ কার্যকর কার্যক্রম শুরু করাটাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর পাশাপাশি কিছু চমক, সময়োপযোগী ও কার্যকরভাবে সাহসের সঙ্গে সর্বশক্তি নিয়োগ করলে সফলতা নিশ্চিতভাবে অর্জিত হবে। ঘটনা ঘটার আগেই পূর্বাভাস অবলোকনের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে হবে। পূর্ণ তৈরি না হয়ে এবং শক্তি ও উৎসাহ নিয়ে কোনো কাজে না নামলে তা হবে আত্মঘাতী। পূর্ণ উদ্যমে সর্বশক্তি দিয়ে ধাক্কা দিলে আমাদের সামনে যেসব হুমকি আছে, তা একেবারে পরিষ্ককার হয়ে যাবে। উদ্দেশ্য হতে হবে কাচের মতো স্বচ্ছ এবং তা হবে শত্রুকে সম্পুর্ণভাবে নির্মুল করা। কালক্ষেপণ আত্মহত্যার শামিল। না হলে শত্রুরা তড়িৎ গতিতে বিপক্ষকে সুযোগ না দিয়ে একই কাজ করবে। সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর সদ্ব্যবহার জয়ের পথ সুগম করে দেয়। শত্রুদের জন্য এটা হলো অস্তিত্বের প্রশ্ন। তাই অনিবার্যভাবেই তারা জোট বাঁধবে এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যে চলমান তদন্ত কার্যক্রম ব্যাহত করার উদ্দেশ্যে আবার আঘাত করবে। আর এবার তারা আঘাত হানবে প্রচন্ড বেগে ও ব্যাপক আকারে। অন্যদিকে সর্বজনস্বীকৃত একটি কথা হলো, প্রেম ও যুদ্ধে সবই বৈধ।

পেছনের দিকে তাকালে আমরা দেখব, যখন তারা সরকারপক্ষের সঙ্গে একটি সুবিধাজনক অবস্থানে থেকে আলোচনা করছিল, তখন তাদের আসল রূপ বোঝা যায়নি। কারণ, ওই সময়ই তারা নির্বিচারে লুটপাট, নিরস্ত্র সেনা কর্মকর্তা ও তাঁদের পরিবারকে আটক করে তাঁদের ওপর অকথ্য নির্যাতন, লাশ পোড়ানোসহ মাটি চাপা দেওয়ার কাজগুলো সেরেছে। মহাপরিচালক, তাঁর স্ত্রী, কর্মকর্তাদের স্ত্রী-সন্তান, এমনকি তাঁদের বাসায় বেড়াতে আসা অতিথিরাও এ হত্যাকান্ড থেকে রেহাই পাননি। অভিযোগ রয়েছে, কর্মকর্তাদের স্ত্রীদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়েছে এবং নির্যাতনের কারণে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। এরা আসলে কাপুরুষ। অগ্রসরমাণ সশস্ত্র বিডিআর (তথাকথিত) জওয়ানদের ওপর তাঁর গানম্যান গুলি করতে চাইলেও জেনারেল শাকিল বারণ করেন। কারণ তিনি সৈনিকের অধিনায়ক। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও তিনি অধিনায়কসুলভ আচরণ করেছিলেন।

আবার অস্ত্রসমর্পণ চলাকালে তারা আলো নিভিয়ে দেয় এবং বিডিআর জওয়ানদের সামনের দিকে রেখে ওই দুষ্ককৃতকারীরা পিলখানা ত্যাগ করে। ধারণা করা যায়, সশস্ত্র অবস্থায়ই সন্ত্রাসীরা বিডিআর সদর দপ্তর থেকে অনেক অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে পিলখানা ত্যাগ করেছে। পিলখানা ত্যাগ করা এই দুষ্ককৃতকারীরা এখনো পলাতক এবং দেশের যেকোনো এলাকায় তারা ধারাবাহিকভাবে সমস্যা তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে সীমান্ত এলাকায় যেকোনো ধরনের সমস্যা তৈরি করার ক্ষমতা তাদের আছে। তারা আমাদের সরলতার সম্পুর্ণ সুযোগ নিয়েছে।

বিডিআর জওয়ান এবং ওই দুর্বৃত্তদের অস্ত্রসমর্পণের পরপরই আমরা তাদের ধরে ফেলতে পারতাম। কিন্তু আমরা সেই সুবর্ণ সুযোগ হারিয়েছি এবং তারা পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। এখন তাদের চিহ্নিত করে ধরাটা হবে খুবই কঠিন কাজ। যে বা যারাই এই ভুলের জন্য দায়ী হোক, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
এই ঘটনা একটি সুপরিকল্পিত বিষয় হিসেবেই প্রতীয়মান হয়। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অস্থিতিশীল করে তুলে তারা সেনাবাহিনীকে উসকে দিতে চেয়েছে। আবার দেশের দুটি গুরুত্বপূর্ণ বাহিনী−সেনাবাহিনী ও বিডিআরের মধ্যে একটি দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত তৈরি করে নিরাপত্তাব্যবস্থা দুর্বল করার মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সরকারকে বিপাকে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। সেনাবাহিনী ও বিডিআরের মধ্যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত সংঘাত পুরো দেশের সার্বভৌমত্বকেই হুমকির মুখে ফেলত। আপনার বিজ্ঞ, দুরদর্শী ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত দেশকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। আপনার ভাষণটি ছিল অসাধারণ; কিন্তু ভাষণটি পিলখানার ঘটনার পরপরই প্রথম দিন দেওয়া উচিত ছিল। একই সঙ্গে যুগপৎ তড়িৎ গতিতে শক্তি সঞ্চয় করে সমস্যা সমাধানের জন্য তৎপরতা চালানোর প্রয়োজন ছিল।
সন্ত্রাসীরা ভিত্তিহীন অভিযোগের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কলঙ্ক লেপন করার চেষ্টা করেছিল। শুরুর দিকে দায়িত্বজ্ঞানহীন সাংবাদিকতার কারণে তারা কিছুটা সফলতাও পেয়েছিল, কিন্তু পরে তাদের অমানবিক ও বর্বর কর্মকান্ড দেখে এবং তাদের দুরভিসন্ধি বুঝতে পেরে দেশবাসী হতবাক হয়ে পড়ে। ততক্ষণে সেনাবাহিনী ও বিডিআরের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে। একটি সংস্থা হিসেবে বলতে গেলে বিডিআরের এখন কোনো অস্তিত্বই নেই। এটা ভেঙে দেওয়া উচিত এবং নতুন নামে নতুন করে শুরু করা উচিত। বস্তুত শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের কোনো স্থান থাকার কথা নয়। সেনাবাহিনী এ ঘটনায় ৬০ জনের মতো সেনা কর্মকর্তা হারিয়েছে। সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব-কাঠামোতে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। এ শুন্যতা পূরণ করতে অনেক বছর প্রয়োজন হবে। বিডিআরকে, হতে পারে অন্য নামে, পুনর্গঠন করতে দশকেরও বেশি সময় লাগবে।

আমাদের নিরাপত্তা-কৌশলে বিডিআর ও আনসার-ভিডিপি দ্বিতীয় পর্যায়ের নিরাপত্তা রক্ষার কাজে নিয়োজিত থাকে। দেশ আক্রান্ত হলে প্রতিরক্ষা ব্যুহ তথা জনযোদ্ধাদের যুদ্ধের ব্যুহ সৃষ্টিকল্পে এ দুটি দল সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত। এটা ব্যয়সাশ্রয়ী নিরাপত্তা-কৌশল। অন্যথায় এ দুটি সংস্থা তাদের নিজস্ব কর্মকর্তাদের দ্বারা পরিচালিত হলে এ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং যুদ্ধের সময় সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পৃক্ত করা বিশাল ঝামেলার ব্যাপার বৈকি; বিশেষ করে কমান্ড ও কন্ট্রোলের ক্ষেত্রে। তদুপরি আলাদাভাবে সামরিক পরিপ্রেক্ষিতে প্রশিক্ষণ দানের জন্য বিশাল প্রশিক্ষণসুবিধা প্রয়োজন এবং এর পরও দক্ষ নেতৃত্ব গড়ে তোলা অনেক কঠিন ও ব্যয়বহুল।

বিদ্রোহীরা বিদ্যুৎ গতিতে এবং সুক্ষ্মভাবে ঘটনাটি সম্পাদন করেছে। কোনো একটি স্থানে গোয়েন্দা তথ্য আটকে দেওয়া হয়েছে। এতেই বোঝা যায় যে এ ঘটনায় জড়িত কেউ কেউ আমাদের সমাজের খুব উচ্চ শ্রেণীর মানুষ। তারা দেশি-বিদেশি নানা পক্ষের সঙ্গে মিলে কাজ করেছে এবং এ ঘটনার নির্দেশনা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত তাদের অবস্থান স্পষ্ট নয়, কিন্তু তদন্ত কমিটির এ ব্যাপারে অবশ্যই গভীরে দৃষ্টি দেওয়া উচিত।
বিডিআর জওয়ানদের (নকল বিডিআরও হতে পারে) এই হিংস্র কাজের মূলে ছিল একটি অসৎ উদ্দেশ্য। তারা শক্তি প্রদর্শন করে সরকারকে কাবু করতে চেয়েছিল এবং ভেবেছিল, এ ঘটনার প্রতিক্রিয়া হিসেবে ক্ষুব্ধ সেনাবাহিনী প্রশাসন দখল করে নেবে। কিন্তু গুরুতরভাবে আহত ও আবেগতাড়িত হলেও আমাদের সেনাবাহিনী অসম্ভব ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন প্রকাশ করে তাদের ঘোষণা কৃতিত্ব ও প্রশংসার দাবিদার। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সরকারের উদ্যোগ নিতে বিলম্ব হলে তা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলবে।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত সব হত্যাকান্ডের বিচার না করলে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না। একইভাবে এই বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত ও নির্মম শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। তবে সেটা অবশ্যই পূর্ণ তদন্ত এবং প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার পর। ন্যায়বিচার করার জন্য প্রথমে ঘটনার দিন পিলখানায় উপস্থিত সবাইকে গ্রেপ্তার করতে হবে এবং ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে।
অবস্থা দেখে মনে হয়, ঘটনায় তিন ধরনের মানুষ জড়িত ছিল। আমি পূর্ব-অভিজ্ঞতা থেকে ধারণা করছি মাত্র। একটি দলে ছিল রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া বিডিআরের ভেতর বা বাইরের মানুষ, যাদের বেশির ভাগই সম্ভবত বিগত রাজনৈতিক সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত। নামে মাত্র প্রশিক্ষণ বা প্রশিক্ষণ ছাড়াই তাদের সীমান্তের লোভনীয় নানা চেকপোস্টে (চোরাচালান হয় এমন স্থান, বিশেষ করে অস্ত্র চোরাচালান) পোস্টিং দেওয়া হয়েছিল। তারাই মূলত এ ঘটনায় এবং হত্যা ও নির্যাতনে নেতৃত্ব দিয়েছে বলে মনে হয়। তাদের মধ্যে অনেকে বহিরাগতও হতে পারে।
দ্বিতীয় দলে ছিল যারা বিডিআরের ভেতরে থেকে তাদের সহায়তা করেছে। তাদের বেশির ভাগই ছিল ডিএডি পর্যায়ের কর্মকর্তা, যাদের অনেকেই ব্যাপকভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত। তারা গোপনে বিদ্রোহের পেছনে অবস্থান নিয়ে অভ্যন্তরীণ সমর্থন দিয়েছে। এই দলের বেশির ভাগেরই আড়ালে রয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। টিভি ও পত্রিকার সংবাদ, দুর্বৃত্ত বিদ্রোহীদের কথাবার্তা ও ভাবভঙ্গি এবং আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার মাধ্যমে আমি এ ধারণা করছি। এটা ভুলও হতে পারে।
নিশ্চিতভাবেই তৃতীয় দলটি হতে পারে একটি ভাসমান দল, যারা জনতা ও হুজুগের সঙ্গে চলতে পছন্দ করে। তদন্ত কমিটি এ দলটির সংশ্লিষ্টতা নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়তে পারে। কারণ, তাদের অনেকে লুটতরাজে জড়িত ছিল। আবার তাদেরই অনেকে নিরপরাধ ছিল, যারা নিজেদের জীবনের বিনিময়েও সঠিক কাজটি করেছে এবং এর আগেও তারা এমন অনেক কাজ করেছে; তাঁদের মধ্যে কয়েকজন হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন। এই সব সাহসী সৈনিক ও শহীদ সেনা কর্মকর্তা ও পরিবার এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে গণহত্যায় বেঁচে যাওয়া সেনা কর্মকর্তা ও তাঁদের সাহসী পরিবারের সদস্যরা সবাই আমাদেরও নমস্য। আমরা সবাইকে সালাম জানাই। স্যালুট করছি আমাদের সাহসী ও শৃঙ্খলাপরায়ণ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের, যাঁরা আমাদের গর্বের ধন।

আরও একটি দল থাকা অত্যন্ত স্বাভাবিক। তারা রাজনৈতিক অঙ্গনে সদা বিচরণকারী ভুঁইফোঁড় ও পরগাছার দল। ভণিতা করে ইনফর্ম সেজে কিংবা যত্রতত্র অনুদান নিয়ে তারা অবাধ বিচরণ নিশ্চিত করে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে এই ধরনের অপকর্ম ঘটিয়ে পরমুহুর্তে একেবারে ধর্মপুত্র যুথিষ্ঠির সেজে ঘাপটি মেরে মিশে যায় সবার অজান্তে। তাদের চিহ্নিত করা অত্যাবশ্যক।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যাঁরা দেখা করতে গিয়েছিলেন, তদন্ত কমিটিসহ সরকারকে তাঁদের ব্যাপারে মনোযোগ দেওয়া উচিত। তাঁদের ভালোভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত এবং ডিএডি (উপসহকারী পরিচালক) তৌহিদ হোসেন অপরাধীদের ভালোভাবে চেনেন। তিনি অনেক কিছু জানেন। তাঁদের দলটিকে সব সময় শার্ট/ইউনিফর্মের বোতাম খোলা ও টুপি ছাড়া অবস্থায় দেখা গেছে। তারা তাদের সৈনিকসুলভ সব বৈশিষ্ট্য হারিয়েছিল। যারা মুখোশ পরে ছিল এবং মাথায় লাল কাপড় বেঁধেছিল অথবা সাদা কোমরবন্ধনী পরেছিল; এবং তাদের অনেকেরই নিজস্ব কোমরবন্ধনী ও টুপি ছিল না, তাদের অনেকেই অস্ত্র ও গ্রেনেড ধরতে জানে না। আমি নিশ্চিত, তারা লক্ষ্য ঠিক করে গুলি করতে জানে না এবং তদন্তদলের উচিত তাদের গুলি করার ক্ষমতা ও রাইফেল ড্রিল পরীক্ষা করা। সম্ভবত অনেকেই রয়েছে, যারা স্থানীয় ও জাতীয় রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের সহায়তায় আকর্ষণীয় চোরাচালান পয়েন্টে নিয়োগ পেয়েছিল এবং গণহত্যা ঘটানোর জন্য একসময় তাদের ঢাকায় নিয়ে আসা হয়।

বলা হচ্ছে, বিদ্রোহে অন্যতম নেতৃত্ব দিয়েছে শহীদ নামের এক ল্যান্স করপোরাল। হয়তো এটা তার আসল পরিচয় নয়। তবে নিশ্চিতভাবে বিডিআরের নিহত মহাপরিচালকের বাড়ির পাহারাদার ধরা পড়েছেন। পাচক, মালি ও তাদের পরিবার এবং অন্যরা, যারা ঘটনাটি দেখেছে অথবা অনেক অজানা ভয়ঙ্কর ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে, সেই সব তথ্য হারিয়ে যাওয়ার আগেই অথবা অপরাধীদের হুমকি পাওয়ার আগেই তদন্তদলের উচিত অতি সত্বর তাদের বিবৃতি নিয়ে নেওয়া। এ ধরনের ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শীরা খুবই উদ্বিগ্ন ও ভীত থাকে। তাই তাদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি র‌্যাব থেকে বিডিআরে যোগ দেওয়া কর্নেল গুলজারসহ অন্য যাঁরা চৌকস কর্মকর্তা সন্ত্রাসী ও চোরাচালানের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে পরিচালনা করেছিলেন, তাঁদের নিরস্ত্র অবস্থায় নিজস্ব সেনারা হত্যা করেছে বলে বলা হচ্ছে। ভারতীয় এজেন্টের কলঙ্ক দিয়ে ১৯৮১ সালের জুনে জেনারেল মঞ্জুর এবং ১৯৭৫ সালের নভেম্বরে জেনারেল খালেদ, কর্নেল হায়দার ও হুদাকেও তাঁদের নিজস্ব সেনারা হত্যা করেছিল বলে বলা হয়েছিল। অথচ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় জেনারেল মঞ্জুর ও খালেদদের বামপন্থী ও ভারতবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। বস্তুত তাঁরা সত্যিকারের দেশপ্রেমিক ছাড়া অন্য কিছুই নন, যদিও তাঁরা হয়তো কিছু ভুল করেছিলেন কিংবা ভুল পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে সত্যিকারের দেশপ্রেমিকেরা সাধারণত দেশ-বিদেশের দুষ্টচক্রের হামলার শিকার হন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
বিডিআরের ঘটনায় প্রকৃত অপরাধীদের ব্যাপারে করণীয় সম্পর্কে আমার সুপারিশ হচ্ছে: (৩ মার্চের মধ্যে) শিগগিরই জাতীয় সংসদে একটি বিল উত্থাপন করে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল (সশস্ত্র ষড়যন্ত্র ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিচার অ্যাক্ট) আইন-২০০৯ নামে আদেশ পাস করতে হবে। বিশেষ ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্টের ক্ষমতাবলে−

ক. বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দেশের যেকোনো জায়গায় যেকোনো সময়, এমনকি ছুটির দিনেও, এর বিচারকাজ চলতে পারে।

খ. ট্রাইব্যুনাল অন্তত তিন সদস্যের হতে পারে। ন্যুনতম জেলা ও সেশন জজ পদমর্যাদার একজন বিচারক এর নেতৃত্ব দেবেন। অন্য সদস্যদের মধ্যে সাংগঠনিকভাবে দক্ষ একজন কর্মকর্তা থাকবেন। তিনি সশস্ত্র বাহিনীর মেজরের সম পদমর্যাদাসম্পন্ন কর্মকর্তাও হতে পারবেন। অন্যজন হতে পারেন একজন বিচারিক হাকিম অথবা আইন-বিশেষজ্ঞ। উচ্চ আদালতের বিচক্ষণ বিচারক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পাওয়া গেলে তাঁরাও এই ট্রাইব্যুনালের সদস্য হতে পারেন। কোনো মামলার ব্যাপারে ট্রাইব্যুনালের সদস্যদের মতের ভিন্নতা দেখা দিলে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হবে।

গ. শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাধারণ চেইন অব কমান্ড ভঙ্গ করা, ধর্মঘট ডাকা অথবা কোনো ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠানের সমস্যার কারণে অস্ত্র তুলে নেওয়া, অন্যদের চেইন অব কমান্ড ভাঙতে উসকানি দেওয়া, ইচ্ছা করে কোনো প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো অথবা কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিতৃষ্ণ হয়ে অস্ত্র তুলে নেওয়া অথবা নিজস্ব ও অন্য প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জিম্মি করা, বিদ্রোহের নামে অথবা বিদ্রোহ সংগঠিত করে সশস্ত্র বাহিনী, আধাসামরিক বাহিনী ও তাদের পরিবারসহ কোনো নাগরিককে হত্যার চেষ্টা ও আহত করলে এবং পরবর্তী সময়ে হত্যা, গণহত্যা, লুটতরাজ, ধর্ষণ, গুলিবর্ষণ, উচ্ছৃঙ্খল হয়ে কোনো সম্পদের ক্ষতিসাধন এবং তাতে সহযোগিতা করলে তারা এই ট্রাইব্যুনালের বিচারের আওতায় পড়বে। ধারাবাহিক অন্যান্য অপরাধকে অনুসরণ করে ঘটে যাওয়া মূল অপরাধটিসহ একটি অপরাধ হিসেবে বিবেচ্য হতে পারে অথবা প্রতিটি ঘটনাকে আলাদা আলাদা অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে পৃথক পৃথক অভিযোগপত্র দাখিল করা যাবে। নিরাপত্তা বাহিনীতে কর্মরত ব্যক্তিরা যখন সশস্ত্র বাহিনী/প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতার বাইরে অন্যান্য বাহিনী বা সংগঠনে কর্মরত থাকবেন, তাঁরাও এ আইনের আওতায় থাকবেন। প্রতিটি অপরাধই সব ধরনের জামিনের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।

ঘ. পুলিশ, সশস্ত্র বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার বিশেষজ্ঞ লোক দিয়ে এই ট্রাইব্যুনালের এক বা একাধিক বিশেষ তদন্ত কমিটি থাকবে, যারা এ মামলাটি তদন্ত করবে, দেশ-বিদেশের সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করবে এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে, তবে তিন সপ্তাহের বেশি নয়, বিশেষ ট্রাইব্যুনালের সামনে অভিযোগপত্র দাখিল করবে। মামলা পরিচালনার জন্য ট্রাইব্যুনাল প্রতিটি মামলার জন্য আইনজীবী ও জ্যেষ্ঠ তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেবে।

ঙ. সাক্ষ্যপ্রমাণ হিসেবে সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রাসঙ্গিক সংবাদ, ভিডিও, ধারণ করা টেপ, সিডি, ছবি, ফটোকপিসহ যেকোনো নথিপত্র গ্রহণ করার অধিকার ট্রাইব্যুনালের থাকবে।

চ. বিচারকাজ শুরু করে ট্রাইব্যুনাল তার ইচ্ছা অনুযায়ী কোনো ধরনের মুলতবি ছাড়াই স্বল্প সময়ে বিচারপ্রক্রিয়া শেষ করতে পারে।

ছ. সশস্ত্র বাহিনী ছাড়া অন্য সব আধাসামরিক বাহিনী, সীমান্তরক্ষী বাহিনী, আনসার ও ভিডিপি, পুলিশ এবং অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর যারাই নিয়মিত দায়িত্ব পালনকালে হাতিয়ার ব্যবহার করতে ক্ষমতাবান, তারা সবাই এ আইনের আওতায় আসবে। কর্তব্যরত থেকে হাতিয়ার কেড়ে নিয়ে উচ্ছৃখলভাবে হাতিয়ার ব্যবহারকারীরাও এ আইনের আওতায় পড়বে।

জ. এই ধরনের অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি হবে ফায়ারিং স্কোয়াডে গুলি করে মৃত্যুদন্ড দেওয়া এবং সর্বনিম্ন শাস্তি ১০ বছর করাদন্ডের কম হবে না।
ঝ. এই ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আপিল করার সুযোগ থাকবে এবং হাইকোর্ট বিভাগ ছয় মাসের মধ্যে এর মীমাংসা করবেন। সুপ্রিম কোর্ট এই উদ্দেশ্যে স্পেশাল বেঞ্চ গঠন করতে পারেন।

ইংরেজি থেকে অনুদিত

আমিন আহমেদ চৌধুরী: সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও সাবেক রাষ্ট্রদুত।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

রণদীপম বসু এর ছবি

ধন্যবাদ হিমু, প্রথম আলোয় প্রকাশিত এই গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনাপত্রটি এখানে তুলে দিয়ে পোস্টটিকে পূর্ণতা দেয়ার জন্য।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।