[পাণ্ডব দা'র 'তারার ফুল..' বা রাজর্ষি দা' অর্থাৎ মূলত পাঠকের 'ফুল ছড়ানো পথে'র মাধ্যমে গল্পে-ছড়ায় পুষ্পকোষ প্রকল্পকে গতিশীল ও অনুপ্রাণিত করার প্রচেষ্টাকে সহমত জানাতেই মূলত এ সিরিজটার জন্ম-প্রয়াস। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে রচিত ছড়াটি সম্পূর্ণ মৌলিক এবং শিশুতোষ আঙ্গিকে। সাথে দেয়া তথ্যগুলো ধার করা, যার সূত্র নীচে উল্লেখ করা আছে। পোস্টের ছবি আপাতত ইন্টারনেট থেকে নেয়া।]
রাগ করেছি ঠিক করেছি
মুখ ফুলিয়ে সই,
তাই বলে তো কারো সাথেই
করছি না হৈ চৈ !
করছি না তো ঝগড়া-ফ্যাসাদ
করছি না দম্ভ,
জিদ তো হবেই- বলবে কেন
মুখটা কদম্ব !
কদম্ব পরিচিতি:
কদমকে বর্ষার দূত বলা হয়। ‘সখী, ঐ শুনো কদম্বতলে বংশী বাজায় কে’ (উত্তরবঙ্গের লোকগীতি)। বৈষ্ণব সাহিত্য থেকে লোকগাথা, পল্লীগীতি, রবীন্দ্র-কাব্য সহ গোটা বাংলা সাহিত্যে বহুল উপমায় প্রশস্তিতে ভরে আছে কদমের গুণগাথা।
বৈজ্ঞানিক নাম: অ্যানথোসেপেল্যস চায়নেনসিস (Anthocephalus chinensis), যার সঠিক বঙ্গানুবাদে অর্থ দাঁড়ায় মস্তকাকৃতি ফুল। ফ্যামিলি বা গোত্র: রুবিয়্যাসি (Rubiaceae)।
পুষ্প: একটি পূর্ণ মঞ্জরিকে সাধারণত একটি ফুল বলে মনে হয়। পূর্ণ মঞ্জরিটি দেখতে বলের মতো গোল, মাংসল পুষ্পাধারে অজস্র সরু সরু ফুলের বিকীর্ণ বিন্যাস থাকে। পূর্ণ প্রস্ফুটিত মঞ্জরির রং সাদা-হলুদে মেশানো। প্রতিটি ফুল খুবই ছোট, বৃতি সাদা, দল হলুদ, পরাগচক্র সাদা এবং বহির্মুখীন, গর্ভদণ্ড দীর্ঘ। বৃন্ত ১-২ ইঞ্চি দীর্ঘ। মঞ্জরি একক, গোল, দেড় থেকে দু’ইঞ্চি প্রশস্ত। মঞ্জরি দণ্ড এক থেকে দেড় ইঞ্চি।
ফল: গোল, হলুদ, মাংসল এবং দুই থেকে আড়াই ইঞ্চি চওড়া। টক স্বাদ। বাদুড় ও কাঠবিড়ালীর প্রিয় খাদ্য, ওরাই বীজ ছড়ানোর বাহন।
বৃক্ষ: কদম দীর্ঘাকৃতি, বহুশাখী, পত্রমোচী বৃক্ষ। কদমের কাণ্ড সরল, উন্নত, ধূসর থেকে প্রায় কালো এবং বহু ফাটলে রুক্ষ, কর্কশ। শাখা অজস্র এবং মাটির সমান্তরালে প্রসারিত। পাতা বড়, লম্বায় ৫ থেকে ৯ ইঞ্চি, চওড়া ৩ থেকে ৭ ইঞ্চি। ডিম্বাকৃতি কিংবা লম্ব-ডিম্বাকৃতি, চার্ম, উপরিভাগ তেল-চকচকে মসৃণ, বিন্যাসে বিপ্রতীপ, পৃষ্ঠ রোমশ, উজ্জ্বল সবুজ। উপপত্রিকা অত্যন্ত স্বল্পস্থায়ী বিধায় পরিণত পাতা অনুপপত্রিক। বোঁটা খুবই ছোট। অল্পবয়স্ক গাছের পাতা বৃহত্তর।
সতর্কতা: নিষ্পাপ শিশুদের মুখকে কখনোই কদম্বের সাথে তুলনা করা চলবে না। তাহলে ঠিক ঠিকই মুখটাকে কদম্বের মতোই বানিয়ে ফেলতে পারে। যা সঠিকমাত্রায় পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনা বহুত শ্রমসাধ্য হয়ে ওঠবে। হা হা হা !
তথ্যসূত্র: শ্যামলী নিসর্গ/ দ্বিজেন শর্মা/ প্রকাশক- বাংলা একাডেমী/ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭ সংস্করণ।
মন্তব্য
ভালো হচ্ছে... কিন্তু আমার যতটা মনে পড়ে কদমের বৈজ্ঞানিক নাম পড়েছিলাম Anthocephalus kadamba আর এভাবেই এটা মনে রাখা সহজ ছিল। আপনি যেটা দিয়েছেন সেটাও অবশ্যই ঠিক এবং অন্য একটি প্রজাতি। যাহোক
আরেকটা বিষয়: "বৈজ্ঞানিক নাম" শব্দটা কতটা শুদ্ধ তা নিয়ে ভাববার অবকাশ আছে। আমাদের দেশের সব বইয়েই অবশ্য এভাবেই লেখে। আমার মতে যেটা হওয়া উচিত তা হলো "বিজ্ঞান সম্মত নাম" (Scientific name)। অন্যেরা কী বলেন? আমি নিজেও অবশ্য আমার গুরুদের অনুসরণ করে (নিসর্গে) বৈজ্ঞানিক নামই লিখেছি।
আরেকটা কথা-- বৈজ্ঞানিক নাম যখন প্রিন্ট মিডিয়ার লেখা হয় তখন তা ইটালিক করে লিখতে হয়। হাতে লিখলে ইংরেজীতে লিখে শব্দগুলোর নিচে আন্ডারলাইন করে দিতে হয়
ধন্যবাদ পিপি দা'। বৈজ্ঞানিক নাম ইটালিক করে দিলাম।
আর কদমের এই বৈজ্ঞানিক নামটা আমি উল্লেখিত সূত্র অর্থাৎ দ্বিজেন শর্মা'র 'শ্যামলী নিসর্গ' থেকে নিয়েছি। ওখানে সংক্ষিপ্ত পরিচিতিতে সবশেষে নীচে ইংরেজীতে লেখা আছে-
--------------
Family : Rubiaceae. Sc. name : Anthocephalus chinensis (Lam). A. Rich. Syn. : A. indicus A Rich., A cadamba Miq. Nauclea cadamba Roxb. Beng : Kadam, Kadamba. Place City Road, Bakshi bazar (1965).
এই সবগুলো কথার মর্মার্থ আমি বুঝি নাই ! একটু একটু বুঝছি।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
এগুলা পড়ে আমিও ঠিক পুরাপুরি বুঝলাম না, তবে কিছু কিছু বুঝলাম। Lam হলো ল্যামার্কের নামের সংক্ষিপ্ত রূপ। সম্ভবত উনিও বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাসের একজন উল্লেখযোগ্য পুরোধা এবং এই নামকরণ ওনার করা। অনেক বৈজ্ঞানিক নামের শেষে Lin লেখা দেখবেন, সেগুলো ক্যারোলাস লিনিয়াসের দেয়া নাম। লিনিয়াসকে দ্বিপদ নামকরণের জনক বলা হয়। দ্বিপদ নামকরণ আমরা যেটাকে বৈজ্ঞানিক নাম বলি, সেটা।
কদমফুল দেখলেই 'রসকদম্ব' মনে করে ফুলটিকে আমার খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে। ;)সেই ফুল নিয়ে এতো কাণ্ড!
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
হইবো না ! জগতে খাবারের জিনিস লইয়াই তো এতো এতো কাণ্ড !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
চমৎকার, দাদা। আপনার এনার্জী আর উদ্যোগ দেখে মাঝে মাঝে অবাক হই। এত পারেন কীভাবে? আপাতত ছড়া, কবিতা গান চালিয়ে যান আর তথ্যগুলো জমিয়ে রাখুন পুষ্পকোষের জন্য।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
বাদল দিনের কদম ফুল...
বাঃ ছড়ার সাথে আরো অনেক কিছু পড়া হলো।
কদম ফুল দেখলেই কেন যেন বর্ষার গন্ধ নাকে এসে লাগে...
নতুন মন্তব্য করুন