ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৩১। আসন: মৎস্যাসন।

রণদীপম বসু এর ছবি
লিখেছেন রণদীপম বসু (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৭/০৫/২০০৯ - ১০:০৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আসন অবস্থায় দেহটি অনেকটা মাছের মতো দেখায় বলে এ আসনের নাম মৎস্যাসন (Matsyasana)। দু’ধরনের মৎস্যাসন চর্চাই বহুল প্রচলিত।

# মৎস্যাসন-(ক)

auto

প্রণালী:
সটান চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন, পায়ের পাতা জোড়া থাকবে। হাতের তালু দু’টো চিৎ অবস্থায় পাছার নিচে রাখুন। এবার হাতের উপর ভর রেখে কোমরে চাপ দিয়ে সাধ্যমত বুক উঁচু করুন এবং মাথা পেছন দিকে নিয়ে এসে সামনের দিকে তাকানোর চেষ্টা করুন। ২০ সেঃ থেকে ৩০ সেঃ পর্যন্ত এই অবস্থায় থেকে এরপর আস্তে আস্তে হাতের উপর ভর রেখে পূর্বাবস্থায় ফিরে আসুন। এভাবে আসনটি ২/৩ বার অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।

# মৎস্যাসন-(খ)

auto

প্রণালী:
প্রথমে পদ্মাসনে বসুন। এবার পা দু’টো পদ্মাসনে রেখে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। এখন হাত দু’টো মাথার দু’পাশে রেখে চাপ দিয়ে কাঁধ, পিঠ, কোমর মেঝে থেকে তুলে ঠিক ধনুকের মতো করুন। শুধু মাথার ব্রহ্মতালু মেঝেতে থাকবে। এবার ডান হাত দিয়ে বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুল এবং বাঁ হাত দিয়ে ডান পায়ের বুড়ো আঙুল ধরুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০ সেঃ থেকে ৩০ সেঃ এ অবস্থায় থাকুন।
আসন ছাড়ার সময় একটু সাবধান হতে হবে। তাড়াতাড়ি করতে গেলে ঘাড়ে চোট লাগতে পারে। প্রথমে হাত আলগা করুন। হাতের তালু বা কনুই মেঝেতে রাখুন। এরপর হাতের উপর জোর রেখে মাথা সোজা করুন এবং মাথা, কাঁধ, পিঠ ও কোমর মেঝেতে রাখুন। এবার পা আলগা করে ছড়িয়ে দিন। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে পদ্মাসনের হাত-পা বদল করে আসনটি আবার করুন। এভাবে ২/৩ বার আসনটি অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।

auto

উপকারিতা:
আসন দু’টো অভ্যাসে থাইরয়েড, প্যারাথাইরয়েড, টনসিল, থাইমাস প্রভৃতি গ্রন্থির খুব ভালো কাজ হয়। যাদের হাঁপানি, সর্দিকাশির ধাত, ব্রঙ্কাইটিস, টনসিলের দোষ আছে তাদের এ আসন অবশ্য করা উচিৎ। এ আসন মাথাধরা, অনিদ্রা, দৃষ্টিশক্তির দুর্বলতা রোগ দূর করে। আসনটির সঙ্গে শশাঙ্গাসন বা পদ-হস্তাসন জাতীয় মেরুদণ্ড সামনে বাঁকানো যায় মতো আসনের অভ্যাস রাখলে স্লীপড ডিস্ক, লাম্বার স্পণ্ডিলোসিস জাতীয় রোগ কোনদিন হতে পারে না। এছাড়াও যাদের বুকের খাঁচার কোন দোষত্রুটি থাকে, আসনটি তাদের জন্য বিশেষ উপকারী। প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থির অন্তর্মুখী রস নিঃসরণে এ আসন বিশেষভাবে সাহায্য করে। এই রস ক্ষরণ যদি প্রয়োজনমতো না হয়, তবে দেহের ক্যালসিয়াম জীর্ণ হয়ে দেহের কাজে আসে না। ফলে শরীরে ক্যালসিয়াম ঘাটতি দেখা দেয়। তাছাড়া প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থির অন্তঃক্ষরণ কম হলে খাদ্যবস্তু হজম হয় না, ফলে অজীর্ণ, কোষ্ঠবদ্ধতা, পেটফাঁপা প্রভৃতি নানারকম পেটের রোগ দেখা দেয়। ক্যালসিয়ামের অভাবে দাঁতও দুর্বল হয়ে যায়। এ্যাপেণ্ডিসাইটিস, পিত্তশূল প্রভৃতি রোগও দেখা দিতে পারে। নানারকম চর্মরোগ হয়। আবার এই গ্রন্থির অতিরিক্ত অন্তঃক্ষরণে রক্তচাপ বৃদ্ধি রোগ হয়। তাই এ আসনটি অভ্যাসের সঙ্গে সঙ্গে সর্বাঙ্গাসন করা উচিৎ। দু’টো আসন পরস্পর পরিপূরক। আসনটিতে দেহের সব জায়গায় কম-বেশি ব্যায়াম হয়। তাছাড়া আসন দু’টোর ভঙ্গিমায় ঘাড়, কাঁধ, গলা, হাত-পা, বুক, পেট, বস্তিপ্রদেশ, নিতম্ব, কোমর, মেরুদণ্ড ও মেরুদণ্ডের দু’পাশের পেশী ও স্নায়ুজালের খুব ভালো ব্যায়াম হয়, বুকের গড়ন সুঠাম ও সুন্দর হয়। বুকের খাঁচার দোষ-ত্রুটি থাকলে ভঙ্গিমা দু’টো অভ্যাসে অল্পদিনে ঠিক হয়ে যায়।
[Images: from internet]

(চলবে...)

পর্ব:[৩০][**][৩২]


মন্তব্য

এনকিদু এর ছবি

এ আসন মাথাধরা, অনিদ্রা, দৃষ্টিশক্তির দুর্বলতা রোগ দূর করে।

দৃষ্টিশক্তি কিভাবে প্রভাবিত হবে চিন্তা করছি । ব্যাখ্যা করবেন, রণদা ?


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

রণদীপম বসু এর ছবি

আমি আসনের পোস্ট দেয়ার আগে প্রথমদিকে ইয়োগার যেসব তত্ত্বগত কিছু প্রাথমিক পোস্ট দিয়েছিলাম, সেগুলোর অস্তিত্বকে ভুলে গেলে কিন্তু ইয়োগার কার্যকারিতা বিষয়ে এরকম অস্পষ্টতা আসতেই পারে।
সেখানে কিঞ্চিৎ ধারণা দেয়া হয়েছিল যে আমাদের শরীরের যাবতীয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সংবেদনকার্য নিয়ন্ত্রণকারী যে গ্ল্যান্ড বা গ্রন্থিগুলো জড়িত তা নারভাস সিস্টেমের অংশ। আর নার্ভাস সিস্টেমের প্রধান নিয়ামক কিন্তু মেরুদণ্ডের অন্তস্থ স্নায়ুরজ্জু। মেরুদণ্ডের কোন্ কোন্ অংশ শরীরের কোন্ কোন্ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোকে স্নায়ুতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ করে তার উপরেই নির্ভর করে কার্যকর প্রয়োগগুলো।
অতএব কোন আসন মেরুদণ্ডের কোন্ অংশে কী প্রতিক্রিয়া তৈরি করে, তার উপরেই নির্ভর করে কী কী উপকার কী কী ভাবে আপনি পেতে পারেন। ইয়োগার প্রতিটা আসনের গুঢ় রহস্য সেখানেই। নারভাস সিস্টেম সম্পর্কে যারা অধিক জ্ঞান রাখেন তারা হয়তো বিষয়টাকে আরো বিস্তৃত ব্যাখ্যা করে বুঝাতে পারবেন। তবে প্রাথমিক ধারণার জন্য আগের এই পোস্টটা দেখলে বিষয়টা পরিষ্কার হতে হয়তো কিছুটা সহায়তা করবে।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

হাড্ডি আমার এমনিতেই দুর্বল... রণদা যা সব ছবি দেন, ভয়ই লাগে। চেষ্টা করতে গেলে দেখা যাবে কটকটির মত ভেঙে টুকরা টুকরা হয়ে গেছি!

রণদীপম বসু এর ছবি

দুর্বল হাড্ডিই তো ইয়োগার জন্য বেশি কার্যকর ! হাড্ডি শক্ত হইলে ইযোগায় এইগুলারে আগে একটু নরম কইরা লয়। হের পরে কাজ দেখায়।
আপনি তো ভাই এক স্টেপ আগাইয়া আছেন ! অভিনন্দন আপনাকে !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

নজমুল আলবাব এর ছবি

আহারে নরোম সরোম শরীর নিয়া বালিকারা এই তেড়াবেড়া সিস্টেমে কেমনে শোয়? দুক্কুই লাঘে দেকে।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

রণদীপম বসু এর ছবি

আপনের মনডা এত্তো নরোম ! শইলডা এমুন শক্ত হইলো কেমনে !!

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

ধুসর গোধূলি এর ছবি
রণদীপম বসু এর ছবি

নিশ্চয়ই কাহারো শালিকা হইবে !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

গৌতম এর ছবি

বালিকাদের দেখে উৎসাহিত হই।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

রণদীপম বসু এর ছবি

ইয়োগার দিকে ? না কি ইয়োগা না করার দিকে !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।