তিনি আমাদের একমাত্র নোবেল লরিয়েট। অনেক বিতর্ক তাঁকে নিয়ে। তিনিই কি এসব বিতর্কের জন্ম দেন, না কি নিজেদের কাটতি বাড়াতে মিডিয়াই এসব বিতর্কে ইস্যু তৈরির ঘৃতাহুতি দিয়ে যায়, তাও এক রহস্য বৈ কি। তবে কোন রাষ্ট্রনায়ক বা ওয়ার্ল্ড ক্লাস পারফর্মার না হয়েও অসাধারণ মেধা আর অনন্য সৃজনক্ষমতার চৌকস উপস্থাপন, অর্থনীতির ক্ল্যাসিক তত্ত্বকে উল্টে দিয়ে সৃষ্ট তত্ত্বের সাথে প্রয়োগযোগ্যতার বিস্ময়কর সাফল্য প্রদর্শন এবং সাদাসিধে ব্যক্তি-জীবনের গ্লামারাস কারিশমা ও ঈর্ষণীয় যোগ্যতা তাঁকে হতভাগ্য গরীব একটি দেশের সাধারণ শিক্ষক প্রতিনিধি থেকে এক প্রভাবশালী বিশ্ব-ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে। তাঁকে নিয়ে আমরা যত বিতর্কই করি না কেন, বিশ্ব-মানচিত্রের এক কোণে পড়ে থাকা অসংখ্য সমস্যা-জর্জরিত বাংলাদেশ নামের ছোট্ট এই দেশটির বিশ্বপরিচিতি তুলে ধরতে তাঁর অবদান কোন অংশে কম নেই। এবং তাঁর মতো দ্বিতীয় আরেকটা বিশ্ব-ব্যক্তিত্ব তৈরি হতে এই হতভাগ্য জাতিকে আরো কতোকাল যে অপেক্ষা করতে হবে কে জানে। করে খাওয়ার বদলে কেড়ে খাওয়ার সংস্কৃতিতে পর্যুদস্ত এই দেশে তাঁকে নিয়ে অহঙ্কার আমরা করতেই পারি।
জ্ঞান চর্চা ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে সব তত্ত্বই আমাদেরকে বাইরে থেকে ধার করে আনতে হয়। কিন্তু যে তত্ত্ব ও তার প্রায়োগিক কৌশলটি গোটা বিশ্ব আমাদের থেকে ধার নিয়ে যায় তা হচ্ছে ড. ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ তত্ত্ব। বিশ্ব অর্থনীতিতে যার প্রায়োগিক সাফল্যের কার্যকর প্রভাবের কারণেই নরওয়েস্থ নোবেল শান্তি কমিটি ২০০৬ সালে ক্ষুদ্রঋণের স্রষ্টা ড. ইউনূস ও তাঁরই সৃষ্ট এই তত্ত্ব প্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংককে যৌথভাবে বিশ্বের সবচাইতে মর্যাদাপূর্ণ নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করে।
বিশ্বের প্রায় সবগুলো মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারসহ আশিটিরও বেশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও অসংখ্য খেতাবে ভূষিত একক ব্যক্তি হিসেবে ড. ইউনূসের জুড়ি তিনি নিজেই। তাঁর ধারেকাছেও দুনিয়ায় আর কেউ আছে বলে জানা নেই। তিনি এই বাংলাদেশেরই সন্তান।
১৯৪০ সালের ২৮ জুন চট্ট্রগ্রামে জন্ম নেয়া বিরুদ্ধ স্রোতের যাত্রী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের এই ৭০তম জন্মদিনে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা। শুভ জন্মদিন ড. ইউনূস।
[ ড. ইউনূসের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে আরো জানতে গত জন্মদিনে দেয়া এই পোস্টটি পড়ুন]
মন্তব্য
তাঁর তত্বের প্রয়োগের কারনে তাঁকে মহাজন বা দাদনদার বলা হয়। আশা করছি তাঁর ৭০তম জন্মদিনে তিনি তাঁর তত্বের প্রয়োগে যত্নবান হবেন, দাদনদার ইমেজ থেকে বেরিয়ে আসবেন।
ঠিক বলেছেন, তবে তিনি যদি মহাজন না হতেন তবে ব্যাঙ্ক বা অন্য কোন ব্যক্তি কি আমাদের দেশের হাজার হাজার দরিদ্র লোকেদের হাতে ঋন তুলে দিত? গ্রামে মহাজনেরা তো আগে থেকে ছিলেন। তিনি যদি সেই মহাজনের চেয়ে কম মূল্যে ঋন দিতে বা পারতেন তবে তো কেউ তার কাছ থেকে টাকা ধার নিতেন না।
দাদনদার ইমেজটি তাঁর তৈরি নয়। বরং যারা রাজনৈতিক স্বার্থ নিয়ে ব্যপারটি দেখেন তারা কিছু না কিছু আবার বের করবেন। ভাল কিছু করতে গিয়ে যে গালাগাল তিনি সহ্য করছেন সেটাও তার মহিমাকে বাড়িয়ে তুলছে। এইসব গালাগালকে অগ্রাহ্য করাটাই বোধহয় সমিচিন। যারা তাঁর সমালোচনা করছেন তাদের আগে তাঁর মত কিছু একটা করে দেখাতে হবেত!
ভালো খারাপ মিলিয়ে মানুষ । শুভ জন্মদিন।
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
ডুয়েল পোস্ট http://www.somewhereinblog.net/blog/ranadipam/28970551 , মনে হয় কেউ খেয়াল করে নাই।
ডুয়াল পোস্টিঙের কারণে পোস্টটি প্রথম পাতা থেকে সরিয়ে লেখকের নিজের ব্লগে প্রকাশ করা হলো।
সাদা মডু ভাই, আপনি আপনার অবস্থানে অবশ্যই সঠিক। কিন্তু এটা একটা স্পেশাল টপিক ছিলো। যদিও শিরোনামটা পাল্টে ভেতরের টেক্সটে একটু এদিক ওদিক করে অনায়াসে দু জায়গায় নিরাপদে চালিয়ে দেয়া যেতো। সেই প্রবঞ্চনা না করে চেয়েছিলাম সামুতে পোস্ট শেষে এখানে মন্তব্যে উল্লেখ করে দিতে। কিন্তু এক্কেবারে কানের গোড়ায় বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় তাৎক্ষণিক কনফেশনের সুযোগ পাই নি।
একটা মজার বিষয হলো গত বছরও কিন্তু এই দিনে এই টপিকেই এরকম কেসই হয়েছিল। তখন সম্ভবত আমি অতিথি ছিলাম। আশা করি কেউ বিষয়টাকে ভুলভাবে নেবেন না। কী করবো বলেন ? জন্মদিন কি আর বাহাত্তর ঘণ্টা অপেক্ষা করবে !
ধন্যবাদ আপনাকে।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
প্রফেসর ইউনুসের বয়স ৭০ হয়ে গেছে। আমি ভেবেছিলাম ৪৫ মতো হবে!!!!!!!!!
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
আপনার মন্তব্য প্রায়ই সভ্যতার সীমা ছাড়িয়ে যায়। আপনার এই মন্তব্য মুছে দেয়া হল। আপনার ভবিষ্যত সচলতা প্রাপ্তির সম্ভাবনায় এই বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হবে।
ধন্যবাদ মডুদাদা, আসলেও সত্যি, মন্তব্যটা অশালীন, মেজাজটা খুবই খারাপ ছিল, তার রোষটা পড়েছে ড: ইউনুসের ঘাড়ে।
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
রণদা'র পোষ্টটার জন্যে অনেক ধন্যবাদ।
অর্থনীতির আমি তেমন কিছু জানি না।বুঝি আরো কম। ডঃ ইউনুসের কাজ, তার সিদ্ধি নিয়ে অনেক বিতর্কও শুনেছি। বেশির ভাগই আমার নিজের দেশের লোকের মুখ থেকে।
আমি যেটা নিয়ে আশ্চর্য হলাম---একজন লোক, যিনি এই বিশ্বের মানচিত্রে আমাদের দেশের নামটা গর্বের সাথে উচ্চারণের সুযোগ করে দিয়েছেন, তাঁর জন্মদিবসে তাঁকে শুভেচ্ছা জানানোর বদলে তাঁর কৃতকর্ম নিয়ে বিতন্ডা কী না করলেই নয়?
হয়ত এইটা সত্যি যে--- ইউনুস আসলে আধুনিক জোতদার
হয়ত এইটা সত্যি যে ----গ্রামীণ ব্যাঙ্ক আসলে ইউনুসের বড়লোক হবার প্রকল্প
হয়ত এটা সত্যি যে--- তিনি নোবেল পেয়েছেন 'তদবির' করে---
কিন্তু এটাও তো সত্যি যে আমাদের এই বানেভাসা দরিদ্র দেশ---পশ্চিমে যে দেশটার পরিচয় দিতে গিয়ে প্রথমেই মনে করিয়ে দেয়া হয়,আমরা একেবারে তলার দিকের মানুষ, অর্ধেক বছর আমরা বানে ভাসি, আর বাকী অর্ধেক উপোস থাকি---কিন্তু এই পোড়া দেশেই আমরা একটা নতুন কিছু করে দেখাতে পেরেছি---যেটা অল্প হলেও কিছু কিছু মানুষের ভাগ্য বদলে দিয়েছে(ধরে নিলাম, এর মাঝে ইউনুস নিজেও আছেন)---কিছু কিছু ভাগ্যাহত নারীর হাতে স্বয়ম্ভরতার রুপোর কাঠি তুলে দিয়েছে, আর সেই সুবিশাল কর্মযজ্ঞের সাগ্নিক পুরোহিত যিনি-----তাঁর সকল মানবিক বিচ্যুতি ক্ষণিকের জন্যে ভুলে গিয়ে আমরা কী পারিনা তাঁর জন্মদিবসে তাঁকে, শ্রদ্ধা না হোক, অন্তত শুভেচ্ছা জানাতে?
বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র ও দুর্নীতি অধ্যুষিত দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের মাথা নীচু করার কারণের অভাব নেই। সামান্য কিছু লোক যদি কিছুটা হলেও আমাদের সেই শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দিতে পারে---তাদের আমরা সাধুবাদ না জানাই, নিদেনপক্ষে মানবিক আচরণ তো দেখাতে পারি? কে জানে, হয়ত এইটাও বেশি চাওয়া---!!!
অন টপিক আর অফ টপিকের মাঝামাঝি একটা মন্তব্য করি। বর্তমান বিশ্বে সো-কলড নাম বা পরিচিতি দিয়ে আসলে দেশের মানুষের কতোটা কাজ হয়? আমার কাছে মনে হয়, এটা আমাদেরকে কিছু একটা টাইটেল ধরিয়ে দিয়ে দেশকে বাঁশ দেয়ার একটা পোর্ট তৈরি করা। ব্রিটিশ আমলে এরকম কিছু টাইটেল দেয়ার চল ছিলো। বাস্তবতার বিচারে এই টাইটেলের সাথে দেশের মানুষের প্রকৃত লাভ কতোটুকু? অর্থনীতির জন্য শান্তি পুরস্কার পাওয়া ডক্টর ইউনুসকে বিশ্বের ৬০০ কোটি মানুষ চিনলে তাতে দেশে কয়টা মানুষের রুটিরুজির উপকার হয়?
অনটপিক, পোস্টে জানলাম, রবি ঠাকুর আর আমাদের না।
ডক্টর ইউনুস শতায়ু হোন।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
বলাই দা, আপনি সম্ভবত 'তিনি আমাদের একমাত্র নোবেল লরিয়েট' উক্তিটাকে কটাক্ষ করেছেন। সত্যি কি আমি বুঝাতে ব্যর্থ হয়েছি যে আমাদের বলতে আমি বাংলাদেশ বুঝাতে চেয়েছিলাম ?
এমনিতেই এটা একটা স্পেশাল পোস্ট হলেও ডুয়েল পোস্টের খাড়া মাথায় তুলে নিয়েছি। তার উপরে দুটো ব্লগ মিলে এই টপিকে যেসব শালিন ও অশালিন মন্তব্যের পাশাপাশি যুক্তি ও যুক্তিহীনতার যে বিছাবিছি দেখছি, এমন কি ব্যক্তি আক্রমণও চলে এসেছে, তাতে করে উত্তর দিতে গিয়ে যা দাঁড়াচ্ছে তাতে বিশাল একটা স্বতন্ত্র পোস্টই হয়ে যায়। এখন ভাবছি কী করি ! অথচ দু'জায়গাতেই তা পেশ করা জরুরি।
দেখা যাক্ কী করা যায়।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
রণদা, আসলে ভূগোলের সংজ্ঞা হোক বা ধর্মের সংজ্ঞা হোক বা অন্য কোনো ক্রাইটেরিয়া হোক, রবীন্দ্রনাথ আমাদের বাইরের কেউ, এটা মেনে নেয়া কষ্টের। আমাদের জাতীয় কবিও যে, তাহলে ভূগোলের ভাষায় অন্যদেশ থেকে ধার করা!
ডঃ ইউনুসকে নিয়ে লিখলে আসলে এরকম প্রতিক্রিয়া আসে। বিভিন্ন কারণে অনেকেই তাকে ভন্ড মনে করে, তার নোবেল প্রাপ্তিটাকে সম্মানের বিষয় হিসেবে না দেখে দালালীর বিষয় হিসেবে সন্দেহ করে। অনেকে তার ক্ষুদ্রঋণ ব্যাবসায়ের ওপরে বিরক্ত। আমার কাছে ডঃ ইউনুসের গ্রহণযোগ্যতাও নেই, তাকে গালিটালি দিয়ে ধুয়ে ফেলার ইচ্ছেও নেই। আমি উনার ওপরে ২টা কারণে বিরক্ত।
১) উনার ক্ষুদ্রঋণের ব্যবসায়টাকে 'মূলতঃ'দাতব্য সেবা হিসেবে দেখানোর একটা প্রয়াস চলে, যেখানে পুরাটাই আমার মতে ব্যবসায়। সো, এটা ভন্ডামি।
২) পলিটিক্সে নামা নিয়ে উনি যেভাবে পল্টি দিলেন, তাতে লোকটা দেশের জন্য বিন্দুমাত্র রিস্ক নিবেন না, এটা বোঝা যায়। এরকম একজন লোককে বাড়তি শ্রদ্ধা করার তেমন কিছু পাই না।
আপনি আবার মন্তব্যের জন্য মাইন্ড কইরেন না।
ডঃ ইউনুস সম্পর্কে আমার জানাও একেবারেই অপ্রতুল। নিরপেক্ষভাবে বিচার বিশ্লেষণ করে পোস্ট দেন, অনেকেই অনেক কিছু জানতে পারবে।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
অশালিন মন্তব্যের জন্য কড়জোরে ক্ষমাপ্রার্থী রণদা, গায়ে থুতু দিয়ে তারপর ক্ষমা চাইলেই তা পাওয়ার যোগ্যতা লাভ হোয় না, তারপরেও আবার ক্ষমা চাইলাম
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
জন্মদিনের শুভেচ্ছা।
প্রফেসর ইউনুসকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। ভালো-মন্দ মিলেই মানুষ। কোনো মানুষ কাজ করে একটা উচ্চতা অতিক্রম করলেই কেবল তাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়। তিনি যে সেই উচ্চতায় উঠেছেন সেটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
বলাই'দার বক্তব্যের সাথে মোটামুটি একমত। তবে আমি মনে করি একটা দেশ ও জাতিকে বিশ্ব কিভাবে দেখছে জানছে এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। রুটি-রুজির সাথে অন্যের সম্মান ও শ্রদ্ধাটাও আদায় করে নেয়াটা জরুরী। আর বহিঃবিশ্বে একটা দেশের সামগ্রিক চিত্র কিভাবে প্রকাশমান সেটা প্রত্যক্ষ না হলে পরোক্ষ ভাবে প্রবাসীদের রুটি-রুজির সাথেও জড়িত।
রবি ঠাকুর আমাদের। এবং আমাদেরই।
ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
কিন্তু রবি ঠাকুরকে আমরা মনে-প্রাণে আমাদের দাবী করলেও বিশ্ববাসী তা স্বীকার করছে না। লিস্টিতে দেখাচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ভারতের আর আমাদের ভাগে শুধু এক ইউনুস।
বিশ্ববাসী বুঝলাম, সাথে আমরাও স্বীকার না করলে তো সমস্যা।
ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
নতুন মন্তব্য করুন