। দুই-মেগাপিক্সেল…। এক চিমটি র‌্যাংগস ।

রণদীপম বসু এর ছবি
লিখেছেন রণদীপম বসু (তারিখ: বুধ, ২৩/০৯/২০০৯ - ১:৪৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


আমার এই দুই-মেগাপিক্সেলটা যখন হাতে আসে, র‌্যাংগস ভবন তখন বিলুপ্তির শেষ ধাপে। টাউন বাসে আসতে যেতে এর বিলুপ্তির প্রতিটা ধাপই চোখে পড়েছে। কিন্তু তা ধারণ করে রাখার সুযোগ ছিলো না। হঠাৎ করে ঢাকায় উগ্র-মোল্লাদের ভাস্কর্য ভাঙার একটা অস্থিরতা দেখা দিলে, ‘যদি হারিয়ে যায়’ ধরনের একটা বোধ বুকের ভেতরে চাড়া দিয়ে উঠলো। জনপদ জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন ভাস্কর্য-স্মারক-পথভাস্কর্য-স্থাপনাগুলোকে আলোকস্মৃতিতে ধরে রাখার হাস্যকর একটা তাগিদ থেকে ছাপোষাদের প্রাপ্য অনুদান উৎসব বোনাসের সীমিত সামর্থ দিয়ে দুই-মেগাপিক্সেলটার স্বত্ব পেলাম। ক’দিন পরই ঈদের ছুটি, ঢাকা যখন ফাঁকা অবস্থা, ভবঘুরে দু’পা সঙ্গি করে বেরিয়ে পড়ি। দুপুর নাই সন্ধ্যা নাই যখন যেখানে পারছি দুই-মেগাপিক্সেলে ধরতে চাচ্ছি সব। আমার দুর্ভাগ্য বলতে হবে, সেই ক’টা দিনই সূর্য মিয়াও সম্ভবত ঈদের ছুটিতে ঢাকার বাইরে ছিলো। তাই আমার মতো ভাদাইম্যা-কুয়াশার উৎপাতে ছবি তুলবো কী, একটু দূর থেকেই দেখা যাচ্ছিলো না কিছুই। কিন্তু এর পরে যে আমার আর সুযোগ নেই !

হাঁটার শ্রান্তি কান্তি ভুলে ঘেমে নেয়ে একশেষ হাঁপাচ্ছি আর গাবরের মতো সাটার টিপছি কেবল। এগুলোতে না আছে ফটোগ্রাফি, না আছে শিল্প। থাকবে কোত্থেকে ! পূর্ব অভিজ্ঞতা ও পেশাগত দক্ষতা না থাকলে যা হয়। তবে পুঁজি কম নয়, অদম্য আগ্রহ আর মন কেমন করা আবেগ। না থাক্ নান্দনিকতা, চিহ্ণ তো রইলো ! ওটাই সান্ত্বনা।

শীর্ষের ছবিটাও তখনই তোলা, ২৫-১২-২০০৮ সন্ধ্যা হয় হয় সময়টাতে। ফার্মগেটের কাছে বিজয় সরণীর মোড়ে একুশের স্মারক ভাস্কর্যটির লাল স্তম্ভগুলোর ফাঁক দিয়ে এক চিমটি র‌্যাংগস ভবন ধরা পড়তেই খেয়াল করলাম, আসলে ওইটুকুই ভবনটির অবশিষ্টাংশ। গাড়ি-ঘোড়ার ফাঁক-ফোকর বাঁচিয়ে সেই র‌্যাংগস-এর শেষ কংকালটাও ধরে রাখলাম।

auto

একটা আফসোস বেজে উঠলো- ইশ্, আর ক’দিন আগে হলে ইতিহাসের সাক্ষী ভবনটার একটা পূর্ণ ছবিও রাখা যেতো ! যদি কখনো ‘টাইম মেশিন’ জাতীয় যান চলাচল চালু হয়, সুযোগ পেলে নিশ্চিতভাবে অতীতে গিয়ে ওটার একটা ছবি নিয়ে আসবো, এই সিদ্ধান্তটাও মনে মনে নিয়ে রাখলাম। কিন্তু এই নশ্বর জীবনের আছি-নেই তুলনাটা বোঝার জন্য একটা ছবি তো দরকার ! অন্তর্জালিক আর্কাইভে ঢুঁ মেরে পেলাম এইটা, ছবির উৎসে বলা আছে শাহাবুদ্দিন ব্লগস্পট। ছবিগ্রাহকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ছবিটা ব্যবহার করলাম এখানে।

auto

ফিরে আসতে আসতে বুক থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। জীবনের নশ্বরতা চোখের সামনে ঘটতে দেখলে ছিটগ্রস্ত মানুষের মনে কখনো কখনো আধা-দার্শনিকবোধ জেগে উঠে। তাই মনে হলো ক’দিন পর এই চিহ্ণহীন ফাঁকা জায়গাটায় দাঁড়িয়ে হয়তো কোন বাউল একদিন এমনি করে গেয়ে উঠবে-

এইখানে এক দালান ছিলো র‌্যাংগস ছিলো তার নাম
একদিন সেইটা হাপিশ কইরা দয়াল করলা কেমুন কাম
আহা, এই আছি এই নাই-এর মাঝে নাইরে কারো দাম
দয়াল এ কেমুন ইঞ্জাম…।

আপডেট: (২৩-০৯-২০০৯)

.
auto

auto

চলমান বর্তমানে অতঃপর আজই তোলা একই জায়গার এই ছবি দুটো না দিলে সম্ভবত ষোলকলা পূর্ণ হতো না। কলা পূর্ণ হোক তাইলে…!


মন্তব্য

মৃত্তিকা এর ছবি

ভালো লাগলো লেখা, ছবিগুলো প্রিয় ঢাকা শহরকে আবারও মনে করিয়ে দিলো।
কিন্তু বিজয় সরণীর ফোয়ারাটির স্তম্ভগুলো লাল রঙ করেছে নাকি? আগেতো মনে হয় সাদাই ছিলো।

অতিথি লেখক এর ছবি

র‌্যাংগস ভবন ভাঙা আমার কাছে একটি স্বপ্ন পূরণের নামান্তর। স্বপ্ন হলো সত্যি, ইটের পর ইট।

কানা বাবা
কানাবাবা@হটমেইল.কম
(kanababa@hotmail.com)

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

সত্যি সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ !!!
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

আরো যা যা আছে ২ মেগাপিক্সেলের ভান্ডারে, সব উজার করে দিন দাদা

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

তীরন্দাজ এর ছবি

আহ্! ঢাকার ছবি! ভালো লাগলো খুব। জানুয়ারীতে আসছি।

**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

আমরা জীর্ণ পুরোনোকে ভেঙ্গেচুরে বিক্রমের সাথে সামনে এগিয়ে যেতে চাই। সমস্যা হলো, যে হারে ভাঙ্গা হয়, সে হারে গড়া হয় না।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

ছবির চেয়ে লেখাটাই বরং বেশি ছুঁয়ে গেল...

দ্রোহী এর ছবি

চেনা শহর, চেনা রাস্তা, পরিচিত ঢাকা
ভেসে যাচ্ছি চোখে আলো জ্বেলে, জাহাজীর মত একা
ঝরে চুন-সুড়কি, শরীরের দেয়াল
তবু সিড়ি ভেঙ্গে ভেঙ্গে, অনেক উঠেও থেমে,
শেষ ছাদটায় দেখি নীল,
এরই মাঝে নক্সা , সাদা আলোর সাদা শঙ্কচিল ।
জাহাজীর কাছে ভীষণ সত্য সেই,
পথটাই যাওয়া, এর আর কোন ফিরে আসা নেই ।

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

বর্তমান রাস্তার ছবিটা দিলে ১৬কলা পুর্ণ হতো।

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

রণদীপম বসু এর ছবি

তাই ! আচ্ছা তাহলে আজই তোলা একটা ছবি সেটে দেয়ার চেষ্টা করি নিচে........
কষ্ট করে কিছুটা সময় অপেক্ষা করুন।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

রণদীপম বসু এর ছবি

এবার ষোলকলা পূর্ণ হয়েছে তো ?
ছবি বড় করে দেখতে চাইলে ছবিতে ক্লিক করুন।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

১৬ হয নাই, সাড়ে ১৫ হইছে।

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

ধুসর গোধূলি এর ছবি
রেনেসাঁ [অতিথি] এর ছবি

আমিও শুরু করুম। ভাঙ্গাচোরা ক্যামেরা একখান আছে। ধন্যবাদ আমার ঘুম ভাঙ্গানোর জন্য।

তানবীরা এর ছবি

শেষের দুইটা মারাত্বক।

**************************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

দুর্দান্ত এর ছবি

রাস্তার কাজ কি শুরু হয়ে গেছে?
---
নিয়ম না মেনে, অননুমদিত বেজায়গায় বানানো হয়েছে বলে র‌্যাংগস ভবন ভেঙ্গে ফেলা হল/হচ্ছে, কিন্তু বেক্সিমকো, বসুন্ধরা - এদের অফিস (দুটোই বেজায়গায়) বা ধানমন্ডি বনানি উত্তরায় গড়ে ওঠা কংক্রিটের বস্তিগুলোর কি হবে?

মেহদী হাসান খান এর ছবি

হাঁটার শ্রান্তি কান্তি ভুলে ঘেমে নেয়ে একশেষ হাঁপাচ্ছি আর গাবরের মতো সাটার টিপছি কেবল। এগুলোতে না আছে ফটোগ্রাফি, না আছে শিল্প। থাকবে কোত্থেকে ! পূর্ব অভিজ্ঞতা ও পেশাগত দক্ষতা না থাকলে যা হয়। তবে পুঁজি কম নয়, অদম্য আগ্রহ আর মন কেমন করা আবেগ। না থাক্ নান্দনিকতা, চিহ্ণ তো রইলো ! ওটাই সান্ত্বনা।

আপনি এত কিছু চিন্তা না করে পোস্ট দিতে থাকেন রণদা। ছাতা-মাথা-বুঝি-না-কিছু-কাগের-ঠ্যাং-বগের-ঠ্যাং ধরণের সব ছবি দেখি ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটোগ্রাফিতে পুরষ্কার পায়। ছবিই সব না, পেছনের গল্পটাই আসল, সেটা আপনার মত করে কয়জন বলতে পারে? লেখাটা সত্যি খুব ভাল লেগেছে রণদা।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আপনে দুই মেগাপিক্সেল নামে একটা ফটো প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। আপনের মোবাইল কোম্পানী কী? নকিয়া? তাইলে তারা স্পন্সর তো করবেই, আপনেরে জাতির নায়ক বানায়া দিবো...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

রণদীপম বসু এর ছবি

নায়িকা-সংকটে ফেলানোর ষড়যন্ত্র...!

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।