• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

| ঘৃণার বুলেটে বিদ্ধ ভালোবাসা...!

রণদীপম বসু এর ছবি
লিখেছেন রণদীপম বসু (তারিখ: শুক্র, ২০/১১/২০০৯ - ৫:৪৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

auto
...

প্রিয় রাসেল
বেঁচে থাকলে তুমি আজ ঠিক আমার বয়েসী-ই হতে। কারণ একই বছরে জন্মেছিলাম আমরা। কিন্তু আমার মতোই হতে কিনা জানি না। গড়পড়তা বাঙালির মধ্যমাকৃতির দেহে অকাল-বাতাসে উড়ে যাওয়া তৃণভূমির বিরাণ হাহাকার হয়তো জ্বলজ্বল করতো না তোমার মাথায়। ঘন কালো গভীর অরণ্যে বিচ্ছুরিত আলোকরেখার মতো এক ঝাঁক রূপালী ঝিলিক নিয়ে আশ্চর্য সুঠাম ও দীর্ঘদেহী পৌরাণিক পিতার কনিষ্ঠ উত্তরাধিকার তুমি অসম্ভব ঋজুতায় অহঙ্কারী হতে। ‘হয়তো’র সম্ভাব্য-আঁটা এই অনিবার্য বৈশিষ্ট্যও তোমার আর আমার মাঝে মূলত কোন পার্থক্য সূচিত করে না আজ। বেঁচে থাকলে আমাদের আকস্মিক বন্ধুতা হওয়াও তেমন কোন আশ্চর্যের বিষয় হতো না। কারণ এখনো তুমি আমার ভাই। আমাদের পিতা তোমাকে দিয়েছিলেন রক্তের জেনেটিক স্রোত আর আমাকে দিয়েছেন দুর্বার পরিচয়।

বেঁচে থাকলে তোমার আর আমার মাঝে প্রকৃত পার্থক্য হতো না কিছুই। আজ এই দু’হাজার ন’য়ে দাঁড়িয়ে তোমার আর আমার মাঝে চৌত্রিশটি বছরের অক্ষয় পার্থক্য কখনোই মুছবে না শুধু প্রলম্বিতই হবে, হতে থাকবে, হতেই থাকবে। কেননা তুমি স্থির হয়ে গেছো পঁচাত্তরের পনেরোই আগষ্টের এক অদৃশ্য কৃষ্ণ-গহ্বরে। প্রিয় রাসেল, শেষপর্যন্ত তুমি শিশুই রয়ে গেলে।

তোমাকে যে ওরা বাড়তে দিলো না আর, এ পৃথিবীর কতোটা ক্ষতিবৃদ্ধি হলো, তা নিয়ে আমার যতটুকু মাথা-ব্যথা, তারচে’ও বড় কথা, তোমাকে যে বাড়তে দিলো না, একা একা বড় হবার দুঃসহ যন্ত্রণা আর বড়ত্বের ঘৃণায় নিমজ্জিত আমিও যে কলঙ্কের অংশীদার আজ ! তোমাকে বাড়তে দিলো না ওরা, ওরা মানে বড়’রা, মানে পৃথিবীটা শিশুদের নয়- বড়দের; শিশু আর বড়’র এই মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে কতোটা নতজানু হ’লে পাপের কলঙ্ক ধোয়, ধোয়ে যায় বড় হবার শিশু-হন্তারক পাপ ? নতজানু হতে হতে বাঙালি মাথাটা এই বাংলার ক্ষয়িষ্ণু মাটি ভেদ করে কতোটা গভীর আর নিম্নবর্তী হলে ফের ভাই বলে বন্ধু বলে তোমাকে বুকে টানার বৈধতা পাবে ?

শিশুর সবুজ স্বপ্নিল জগতে ‘ঘৃণা’ নামের পুতিগন্ধময় কোনো শব্দ বা প্রতিশব্দ কিংবা বোধের অনুপ্রবেশ ঘটেনি কোথাও কোন কালে। শিশুকে দেবদূত বলে তাই। ভালোবাসা নামের শুভ্র পাখিদের অবিরল কাকলি-মুখর শিশুর বর্ণিল ঘর। যেদিন শিশুরা ঠিক ঠিক বেড়ে না ওঠে আমার মতো অনুচিত বড় হয়ে যায়, ভালোবাসা নামের অপাঙক্তেয় পরিশব্দের ন্যুনতম ছোঁয়া কিংবা আবেশ থেকে দূরে বহুদূরে দাঁড়িয়ে গা থেকে ঝেঁড়ে ফেলে মানবিক শেষ চিহ্ণটাও, বড়’রা সেদিনই শিশু-হন্তারক হয়। শিশু-হন্তারক মানেই পিতৃ-মাতৃ হন্তারক। শিশু-হন্তারক মানে ভ্রাতা-ভগ্নি হন্তারক। শিশু-হন্তারক মানে সবকিছুই হন্তারক। তবু শিশু-হন্তারক মানে সন্তান-হন্তারক নয়; কারণ তাদের কোন সন্তান থাকে না। পাশবিক যৌনক্রিড়ায় অভ্যস্ত ওরা জানে না কিভাবে সন্তানের জন্ম দিতে হয়। সন্তান-বাৎসল্যে বঞ্চিত ওরা কখনোই পিতা হতে পারে না।

তাই প্রিয় রাসেল, যেদিন ওরা, মানে সেই বড়’রা, আমাদের পিতা-মাতা-ভাই-বোন-পরিজনকে হত্যা করে শেষবার তোমার দিকে অশ্লীল তাক করেছিলো বর্বর মারণাস্ত্র, সত্যিকারের শিশুই ছিলে তুমি। তোমার ভালোবাসার উদ্বেল কষ্টের কান্নায় একটা লোমও নড়েনি তাদের। আমি স্পষ্ট কল্পনায় দেখতে পাই আজো- শিশুর অপার বিশ্বাস নিয়ে অসম্ভব প্রিয় যে বইটাকে ছোট্ট বুকের বিশ্বস্ত ঢাল বানিয়ে নিরব সংলাপে তুমি অবিচল দাঁড়িয়ে ছিলে, সেই বইটার নাম ছিলো ঝলমলে অক্ষরের প্রচ্ছদে স্পষ্ট বাংলায় আঁকা- ‘তোমাদের জন্য ভালোবাসা’।

শেষপর্যন্ত তুমি এক অক্ষয় শিশুর উজ্জ্বলতায় আঁকা হয়ে আমাকে নিরঙ্কুশ বৈধতাহীন বড় হবার অন্ধকার গহ্বরে নিপতিত করে গেলে।

প্রিয় রাসেল, নির্মম হত্যাকাণ্ডের অন্যতম জাজ্জ্বল্যমান আলামত হয়ে মহামান্য আদালতে প্রদর্শিত হলো ‘বত্রিশ নম্বরে’ রাখা তোমার সেই বুলেটবিদ্ধ বইখানা- ‘তোমাদের জন্য ভালোবাসা’। ইতিহাসের দণ্ড থেকে জানি রেহাই পায় না কেউ। কিন্তু যে অবাধ্য বুলেট সব এফোঁড়-ওফোঁড় করে সগর্বে চলে গেলো মহাকালের অপসৃত পথে, সে কি আর একই পথে ফেরতযাত্রায় এসে সেই ক্ষত আর সবকিছু বুঁজে দেবে কখনো ? দিতে পারবে কি ?

আমাদের বড় হবার লজ্জাটা অপাপবিদ্ধ শিশুদের কাছে অপরাধ হয়েই রইলো...।
...


মন্তব্য

রেশনুভা এর ছবি

অসামান্য, অদ্ভূত।

রণদীপম বসু এর ছবি

ধন্যবাদ রেশনুভা।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

মুস্তাফিজ এর ছবি

পুরোনো কথা মনে করিয়ে দিলেন, অনেকদিন যাবৎ ভাবছি ছেলেকে নিয়ে যাদুঘরে যাবো, কিন্তু বুঝতে পারছিনা এই বয়সে ৩২ নাম্বারে নিয়ে গেলে ওর প্রতিক্রিয়াটা কেমন হবে বা এই বয়সে ওকে নিয়ে যাওয়াটা ঠিক হবে কীনা।
.........................................
I think what I think because that's how I am. You think what you think because that's how you are.

...........................
Every Picture Tells a Story

রণদীপম বসু এর ছবি

ছোট্ট মনে বড় কোন দাগ পড়ে যেতে পারে মুস্তাফিজ ভাই। ওটা ঠিকভাবে সামলানো গেলে নিতে পারেন।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

মুস্তাফিজ এর ছবি

ঠিক বলেছেন, আরেকটু বড় হোক।

.........................................
I think what I think because that's how I am. You think what you think because that's how you are.

...........................
Every Picture Tells a Story

অনুপম ত্রিবেদি এর ছবি

ব্যাচেলর ডিগ্রী শেষ করে একবার গিয়েছিলাম ৩২-এ। সেদিনের কথা ভুলবোনা। এখনো বুকের ভেতরটা যন্ত্রনায়, ক্ষোভে, কষ্টে, রাগে, অপমানে জ্বলে জ্বলে উঠে। ঐ বর্বরতা সহ্য করতে পারিনি তাই দ্বিতীয়বার আজো যাওয়া হয়নি।

------------------------------------------------------------
সকলই চলিয়া যায়,
সকলের যেতে হয় বলে।

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

বইখাতা এর ছবি

কী বলবো ! ভাষা খুঁজে পাই না।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

ঘাতকদেরকে ১২ কোটিবার ফাঁসিতে ঝোলালেও
ক্ষতি পোষাবেনা
দাগ শুকোবেনা

যতটুকু সামর্থ ঘৃণা করে কেবল যন্ত্রনা কমিয়ে রাখি...
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

রাজিব মোস্তাফিজ এর ছবি

অসাধারণ লাগলো লেখাটা--সত্যিই অসাধারণ রণদা। আমার প্রায় কান্না চলে আসছিল।

চেতনায় বাংলাদেশ এর ছবি

এভাবে রাসেলের চলে যাওটা আসলেই মেনে নেওয়া যায়না কিন্তু হয়তো তার এইভাবে প্রস্থানটা থেকেই আপনাকে এই আবেগতাড়িত লেখার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। কারন বড় হলে এ ছেলে যে তার বাবার ক্ষমতার অপব্যবহার করত না তা আমাদের রাজনীতিক কালচার শেখায় না। বঙ্গবন্ধুর একচ্ছত্র আধিপত্যের ছোঁয়া হয়তো তার ছেলেকেও স্পর্শ করত তখন আজকের তারেক জিয়ার মতই তাকে গালাগালি করতে হত।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাল লাগল ...
ভাবনা মেলুক পাখনা ...
যারা নির্মমতা থেকে বেঁচে গেছেন তাদের ক্ষত পূরণ হোক অন্যের ক্ষত ভরে দিয়ে..

(জয়িতা)

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।