...
ভুট্টাক্ষেতের বর্তমান অধিবাসী গণকমিস্তিরি রাগিব ভাই ক’দিন আগে উইকিপিডিয়ার আর্কাইভে রাখা তথ্য অনুসরণে আমাদের সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ-এর জীবনীভিত্তিক একটি অন্তর্জালিক পোস্ট দেন তাঁর ব্লগে। ওখানে চারজন বীরশ্রেষ্ঠর সমাধিস্তম্ভের ছবি দেয়া হলেও তখন আরো দু'জনসহ বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমান-এর সমাধির কোন ছবি দেয়া হয়নি। এতে মনে হলো যে শহীদ হামিদুর রহমানের সমাধিস্তম্ভের কোন ছবি তখনো উইকিতে নেই। তথ্য অনুযায়ী এই বীরশ্রেষ্ঠর সমাধিও শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে রয়েছে। গত ডিসেম্বর ২০০৮-এ শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ সংশ্লিষ্ট ছবিগুলো যখন ধারণ করি তখন বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লাইট লেঃ মতিউর রহমানের সমাধির ছবিটাই কেবল ধারণ করেছিলাম। কিন্তু শহীদ হামিদুর রহমানের সমাধিটা কেন আমার চোখে পড়লো না তখন, তা একবার যাচাই করতে ভাবলাম শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এলাকাটা আরেকবার ঘুরে আসা দরকার। সে লক্ষ্যেই এক বছরের ব্যবধানে আজ (১২-১২-২০০৯) চলে গেলাম সেখানে। সঙ্গি আমার দুই-মেগাপিক্সেল।
সামনেই ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। তাই এ মুহূর্তে সংস্কার কাজ চালু থাকায় মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এলাকায় সর্বসাধারণের প্রবেশ সীমিত করা হয়েছে। গেট দিয়ে ঢুকলেই সোজা সামনে কিছুটা দূরে গর্বিত অহঙ্কারে দাঁড়িয়ে থাকা চওড়া স্মৃতিস্তম্ভ দেখা যায়। কয়েক কদম এগিয়ে স্মৃতিস্তম্ভের দিকে না গিয়ে বাঁয়ে মোড় নিলেই চোখে পড়বে বেশ বড় এলাকা নিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী সমাধিক্ষেত্র বা কবরস্থান (শীর্ষ-ছবিতে যা প্রদর্শিত)।
দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা সাত বীরশ্রেষ্ঠ-এর সমাধিস্তম্ভগুলো সম্ভবত এক অভিন্ন ডিজাইনে তৈরি করার একটা প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন বাংলাদেশ সরকার। সেই ডিজাইনে শহীদ লেঃ মতিউর রহমানের সমাধিস্তম্ভ নির্মিত হলেও শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমানের সমাধিটি সেভাবে এখনো নির্মিত না হয়ে সাধারণভাবে পাকা করা থাকায় মূলত তা আলাদা করে চোখে পড়েনি সেদিন। তাই আজকের উদ্দেশ্যই হলো মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানটি ঘুরে ঘুরে দেখবো আর শায়িত শহীদদের সমাধিফলকে যেভাবে যা লেখা ও অঙ্কিত রয়েছে তা টুকে নেবো।
সূর্যের আপেক্ষিক অবস্থান আলোকচিত্র ধারণে আপাত সমস্যা করলেও আমার উদ্দেশ্য তো ফটোগ্রাফি নয়, স্মৃতি গেঁথে নেয়া। সেটুকু করার চেষ্টাই করেছি। চিরশায়িত শহীদদের সমাধিফলকগুলোতে যেভাবে যে তথ্য দেয়া রয়েছে, ঠিক তার ভিত্তিতেই ছবির ক্যাপশানগুলো তৈরি করা হয়েছে। কোন কোন সমাধি ফলক তথ্য-অস্পষ্টতায় আক্রান্ত হওয়ায় পুরো তথ্য উদ্ধৃত করা যায় নি। আবার কোন কোন সমাধির কোন ফলকই চোখে পড়েনি। ফলে কোন্ শহীদরা সেখানে চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন, আমার জানার আপাত কোন সুযোগ হয়নি। সমাধিফলকগুলোতে বাংলা বানানরীতির প্রতি যে মনোযোগ দেয়া হয়নি তা দেখলেই বোঝা যায়।
পোস্টটি বেশ দীর্ঘ বা লোড হবার আশঙ্কায় পরপর দুটো পর্বে পুরো উপস্থাপনের চেষ্টা করা হবে।
# শহীদ বুদ্ধিজীবী সমাধিক্ষেত্রে চিরশায়িত দু’জন বীরশ্রেষ্ট’র সমাধিস্তম্ভ
০১.
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লাইট লেঃ মতিউর রহমান এর সমাধি, ২৯ অক্টোবর ১৯৪১- ২০ আগস্ট ১৯৭১।
০২.
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লাইট লেঃ মতিউর রহমান-এর সমাধিফলক।
০৩.
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমান এর স্মৃতি স্তম্ভ।
০৪.
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমান-এর সমাধিফলক।
০৫.
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমান-এর সমাধি, একটু সামনেই দেখা যাচ্ছে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লাইট লেঃ মতিউর রহমান এর সমাধির সংস্কারকাজ।
০৬.
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লাইট লেঃ মতিউর রহমান-এর সমাধি, উল্টো দিক থেকে তোলা ছবি। সোজা সামনে তাকালে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমান-এর ধবধবে সাদা সমাধিটি দেখা যায়।
০৭.
মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ।
পবরর্তী পর্বে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে শায়িত অন্য শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, কবি, সাংবাদিক, শিক্ষক, পেশাজীবী, রাজনীতিক প্রমুখ বুদ্ধিজীবীদের সমাধিস্তম্ভ-চিত্রগুলো উপস্থাপন করা হবে।
(দ্বিতীয় পর্বে সমাপ্য...)
...
[ছবি-বর্ণনাগুলো সচলের কল্যাণে একসাথে জড়াজড়ি করে ফেলার কারণে ক্রমানুসারে বুঝতে অসুবিধা হলে আগ্রহী পাঠক এখানে দেখতে পারেন।]
...
মন্তব্য
আহা রণদা, একেবারে ছোটবেলায় নিয়ে আছড়ে ফেললেন। আমাদের ছোটবেলায় এগুলো কিছুই ছিলো না। খালি তালগাছ আর কাঠবাদাম গাছ আর বিশাল খোলা প্রান্তর। তার মাঝখানে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ। আমরা সেখানেই খেলতাম। আমাদের শৈশব কৈশোরের খেলার মাঠ।
১৩ ডিসেম্বর থেকে পরদিন পর্যন্ত আমাদের শৈশব আর কৈশোরের ঈদের মতোই ছিলো (তখনো বুঝতে শিখিনি যে এটা শোকের দিন)
এরশাদ সরকার এটাকে প্রাচীর দিয়ে বেঁধে গাছের গোড়া বাঁধিয়ে আরো অনেক কিছু করে দিলো। তারপর মেজর জলিল মারা যাওয়ার সময় খুব একটা গণ্ডগোল হলো। তখন এই স্মৃতিসৌধের এক কোনে বানানো হলো বুদ্ধিজীবী সমাধিক্ষেত্র। জাহানারা ইমামের সমাধিও হলো এখানেই, চোখের সামনে। বেদিতে বসে জামির কান্না এখনো চোখে লেগে আছে।
একেবারে শৈশব কৈশোরে নিয়ে গেলেন আমাকে। অনেকদিন যাই না।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
হাঁ, নজু ভাই, মানুষ কখনো শৈশবকে ছেড়ে যেতে পারে না। তার বুকের খুব গোপনে সেই শৈশবটা থেকেই যায়।
অন্যান্যদের সমাধির ছবিগুলাও পরবর্তী পর্বে দিচ্ছি।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
ধন্যবাদ পিপি দা।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
রণদা,
অনেক ভালো লাগলো ... মনে হলো আমিই হাটছি কবরের পাশ দিয়ে...
ছবিগুলো উইকিতে দিলে অনেক ভালো হবে।
------
"সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে"
-----------
চর্যাপদ
সাঈদ ভাই, উইকিতে ছবি দিতে পারলে আমিই সবচাইতে বেশি আনন্দিত হই। আমার বন্ধু আলসেমি মাঝে মাঝে খুব গণ্ডগোল পাকিয়ে দেয় আমার সাথে। এটাই যা সমস্যা।
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
বহু বছর শহীদ বুদ্ধিজীবী সমাধিক্ষেত্রে যাওয়া হয়নি। ছবিগুলো দেখে ভালো লাগলো।
আপনি তো এখন ঢাকায়। কালই ওখানে যেতে পারেন। শ্রদ্ধাটুকুও জানানো হবে।
তবে এদিকে এলে আমাকে একটা ফোন দিয়েন, আপনাকে (খুব বেকায়দার মানুষ বলে) চিনে রাখা দরকার।
মোটামুটি ধারেকাছেই নকরগিরি করি আমি।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
২ মে.পি.'র জয় হোক।
আপনার প্রাণশক্তি আমাকে মুগ্ধ করে দাদা।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
'শক্তির উৎস চান্দা ব্যাটারি সেল ', অর্থাৎ আপনারাই !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
ছবিগুলো উইকিতে সংরক্ষন করার চমৎকার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই
নতুন মন্তব্য করুন