…
শীর্ষ ছবি:
উপরের ছবিতে যে পুরাতন জীর্ণ স্থাপনাটি দেখা যাচ্ছে, ধারণা করা হয় তার নির্মাণকাল ১৭৬০ থেকে ১৭৭০ সালের মধ্যে কোন এক সময়। অথবা তারও পূর্বে। এটি সে আমলের একটি বাড়ির দেউড়ি বা গেট। তথ্যটি জানা গেলো প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড.শাহনাওয়াজ-এর বক্তব্য থেকে। তৎকালীন বাঙলা প্রদেশের রাজধানী ঢাকার সোনারগাও থেকে মুর্শিদাবাদে যখনো স্থানান্তর হয়নি, ঢাকার প্রধান প্রশাসক যাঁকে বলা হতো ‘নায়েবে নাজিম’, তাঁর জন্য ঢাকার নিমতলীতে যে বাড়িটি নির্মাণ করা হয় সেটাই এই বাড়ি। কালের গহ্বরে হারিয়ে এখন আর নেই। রয়ে গেছে এই দেউড়িটাই।
২০১০ এর শুরুর দিনেই অর্থাৎ ০১ জানুয়ারি মাসিক শিশু কিশোর পত্রিকা ‘টইটম্বুর’-এর ১৯তম জন্মদিনে এশিয়াটিক সোসাইটিতে আয়োজিত চমৎকার একটি অনুষ্ঠানে শিশু-কিশোর-যুবা-বৃদ্ধ সকল শ্রেণীর আগ্রহী দর্শক-শ্রোতা-পাঠক-লেখক ও টইটম্বুর পরিবারের এসেছিলেন অনেকেই। ছিলেন স্বনামখ্যাত সর্বজনাব অধ্যাপক ড.মনসুর মুসা, ড.শাহনাওয়াজ ও ড.মোহিত উল আলম, সাহিত্যিক রণজিৎ বিশ্বাস, কবি আসাদ চৌধুরী, শিশু-সাহিত্যিক রফিকুল হক দাদুভাই ও আলী ইমাম, টইটম্বুর উপদেষ্টা সবিহ উল আলম সহ অনেকেই। প্রমুখ বক্তাদের বক্তব্য থেকে দর্শক শ্রোতাদের অনেক কিছুই জানার ছিলো। কিন্তু ছিলো না সময়ের যথেষ্ট পরিসর।
এতো সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে কৌতুহলি শ্রোতাদের তথ্য-ক্ষুধা মেটানো কঠিন বৈ কি, ড. শাহনাওয়াজের বক্তব্য থেকে যখন আমরা জানতে পারি যে, ঢাকার বয়স কলকাতার চেয়েও অনেক পুরনো তো বটেই, নিদেনপক্ষে ৮০০ বছরের পুরনো এই নগরীটি বিশ্বের প্রাচীনতম নগরীর অন্যতম।
বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির অধিকৃত এই স্থাপনাটির দু’পাশে আধুনিক শৈলীর ঝকঝকে নতুন ভবনগুলোতেই বর্তমানে এশিয়াটিক সোসাইটির কার্যক্রম পরিচালিত হলেও তার আগে স্বাধীনতাপূর্বকালে দেউড়ির উপরের কক্ষগুলোতেই ছিলো লাইব্রেরী ও অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড। এখন প্রাচীন ঐতিহ্য বা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে এই স্থাপনাটিকে সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে হয়তো। এটিকে ঘিরে কিছু সংরক্ষিত খননকার্য দেখে তাই মনে হলো।
ছবি:০১
বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। এশিয়াটিক সোসাইটির প্রতিষ্ঠা বিষয়ে সামান্য কিছু তথ্য জানা গেলো ড. মনসুর মুসা’র স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্যে। স্যার উইলিয়াম জোন্স-এর উদ্যোগে ১৭৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় তৎকালীন এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গল। গবেষণার জন্য যে দুটো উদ্দেশ্য নিয়ে সোসাইটিটি গঠিত হয় তা হলো- এশিয়ার মানুষ ও এশিয়ার প্রকৃতি। তবে এই সোসাইটির অন্যতম উল্লেখযোগ্য কাজটি ছিলো বাংলা বর্ণমালার বিশদ ব্যাখ্যা। বাংলা বর্ণের গঠন রীতি বা আকৃতি আগেই নির্ধারণ করা থাকলেও জানা যায় এগুলোর ধ্বনি, উচ্চারণ, ব্যবহার ও অন্যান্য বিষয়ের যাবতীয় ব্যাখ্যার কাজটি প্রথম বর্ণিত হয় এই এশিয়াটিক সোসাইটির মাধ্যমেই।
এ ব্যাপারে আরো বিস্তারিত ও সঠিক তথ্য জানতে হলে আমাদেরকে হয়তো সোসাইটির পুরাতন রিপোর্টগুলো ঘাটতে হবে। সেগুলো সংশ্লিষ্ট গবেষকদের জন্যেই তোলা রইলো।
ছবি:০২ নিমতলী গেট। পুরনো ঢাকার গুলিস্থানের বর্তমান বঙ্গবাজার থেকে সামান্য দূরেই নিমতলী। বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি ভবনের অপর পার্শ্বে যেখান থেকে আরেকটি রাস্তা নিমতলী ঘাটের দিকে চলে গেছে, সেখানে তিন রাস্তার মোড়ের সড়ক-দ্বীপে বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির উদ্যোগে স্থাপিত নিমতলী গেটটি সহজেই যে কারো চোখে পড়বে। |
ছবি:০৩ নিমতলী গেট। সড়ক-দ্বীপ স্থাপত্য নিমতলী গেট-এর উল্টো দিক থেকে গেটের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির ভবনটি দেখা যায় স্পষ্ট। এই ভবনের পেছনে সোসাইটির কোম্পাউন্ডেই সেই প্রাচীন দেউড়িটি সযত্নে সংরক্ষিত। |
ছবি:০৪-০৫ বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি চত্বরের সামনের ছোট্ট বাগান। ছোট ছোট কয়েকটি সুদৃশ্য ভাস্কর্য বাগানটির সৌন্দর্য বাড়িয়েছে বেশ ! |
ছবি:০৬ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা হিসেবে সংরক্ষিত প্রাচীন দেউড়ির মধ্যে দিয়ে ঢুকে অপরপার্শ্বে ছোট্ট একটা চত্বর। |
ছবি:০৭ চত্বরের সাথেই এশিয়াটিক সোসাইটির অন্য ভবনটি। এর নিচতলায় স্বল্পপরিসর একটা হলরুমে চমৎকার একটা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আমারও ইংরেজি নতুন বছর ২০১০ সালটির শুভযাত্রা হলো। |
ছবি:০৮ এশিয়াটিক সোসাইটিতে আয়োজিত শিশু-কিশোর পত্রিকা মাসিক ‘টইটম্বুর’-এর ১৯তম জন্মদিনে শিশু-কিশোর-যুবক-বৃদ্ধ সব শ্রেণীর উৎসাহীদের আনাগোনা। |
ছবি:০৯ টইটম্বুর-এর ১৯তম জন্মদিনে যাঁরা এসেছিলেন তাঁদের স্বাক্ষরিত স্মৃতিচিহ্ণ সংগ্রহের প্রাথমিক উদ্যোগ। |
ছবি:১০-১১ ঢাকার বঙ্গবাজার গুলিস্থানের চৌরাস্তায় স্থাপিত মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার পটভূমিভিত্তিক পথ-ভাস্কর্য ‘প্রত্যাশা’। ভাস্কর মৃনাল হক। |
এর আগে আর কখনো পুরান ঢাকায় অবস্থিত এই এশিয়াটিক সোসাইটি বা নিমতলী এলাকায় আসার সুযোগ হয়নি। টইটম্বুর-এর সুবাদে এখানে এসে ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন স্থাপত্য দেখা ও জানার সুযোগ হলো। এজন্যে আমাদের শৈশব ও কৈশোরকে সযত্নে লালনকারী টইটম্বুরের প্রতি রইলো কৃতজ্ঞ অভিনন্দন ও আন্তরিক শুভেচ্ছা। আশা করি ১৯তম বছরে পদার্পণের সাবালকত্ব অর্জন করলেও তার সত্ত্বায় সেই শৈশব ও কৈশোরই উচ্ছল হয়ে থাকবে সবসময়। |
…
মন্তব্য
ছবি আর টেক্সট একসাথে আলাদা জট না পাকিয়ে যাতে এরকম হয়, সেই পদ্ধতি আজই আজিজের কোণায় বসে শিখিয়ে দিয়েছিলেন নজরুল ভাই আর রায়হান আবীর।
আমি কী বুঝলাম তা আমিই বলতে পারছি না। তবে তাঁদের নির্দেশিত পদ্ধতি ব্যবহার করার চেষ্টা করেছি। এ ব্যাপারে কোন রঙিন মডু যদি ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলতেন সমস্যা কোথায়, তাহলে হয়তো উৎড়ে যেতাম।
<বিআর>টেক্সটবিআর> এরকম সাইন ব্যবহার করেছিলাম। বিআর শব্দ ইংরেজিতেই দিয়েছি।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
দাদা, সব ছবি ইয়োগার মত প্যাঁচ খাইয়া গেছে, ঠিক করেন।
...........................
Every Picture Tells a Story
ওরে, এতো কঠিন ক্যান?
কিন্তু বিআর দিয়া তো কাজ হয় জানতাম...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আপনেরে আরেকবার পাইয়া লই..!
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
কতদিন এশিয়াটিক সোসাইটির পাশ দিয়া গেছি, কিন্তু একবারো ভেতরে ঢুকে দেখা হয় নাই চক্ষু মিলিয়া।
..................................................................
আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।
আমি শুধু বলতে আসছি, ঢাকার বয়স নিয়ে শাহনাওয়াজ (শাহনেওয়াজ নয়) স্যারের মতামত প্রসঙ্গে। স্যারের মতামতটি বহুদিন ধরেই তিনি বিভিন্ন জায়গায় (যেমন প্রথম আলো, ২০০০ ইত্যাদি কাগজে, বিভিন্ন সেমিনারে) বলে আসছেন এবং আমিও বরাবর ব্যাপারটির বিরোধিতা করে আসছি।
নগরের উৎপত্তি ইউরোপের বাত্তি জ্বালানোর (এনলাইটমেন্ট) সাথে সাথে ধরলে আমাদের বিপদ আছে। ভারতবর্ষের অর্থনীতির সাথে ইউরোপের অর্থনৈতিক বিকাশের কিছুটা ভেদ আছে। ইউরোপের মানদণ্ডে ভারত (বাংলাসহ) বিশ্লেষণ অত্যন্ত জটিল। থমসনের থ্রি এজ সিস্টেম পর্যন্ত মেনে নেওয়া যায়, কিন্তু এর পরের কাহিনী মেনে নেওয়া যায় না। খ্রীস্টপূর্ব যুগে অর্থাৎ এমনকি গৌতম বুদ্ধের জন্মের সময়-ও ভারতবর্ষের অর্থনীতির যে চিত্র পাওয়া যায়, ইউরোপ তখন তেমন ছিল না। বরং অনেক পরের ইউরোপীয় বাত্তি জ্বালানো সময়ের সাথে ভারতের সেই সময়টির অনেক মিল পাওয়া যায়। এক রকম পুঁজিতান্ত্রিক বিকাশ বলা যায় সময়টাকে। রোমিলা থাপার, ইরফান হাবিব এমনকি কোসাম্বিতেও পাবেন তথ্যগুলো (চামে কলিম খান-ও পড়ে নিতে পারেন)। কিন্তু ভারত অকস্মাৎ ব্যাক গিয়ারে চলে যায়, ব্যাপারটার সাথে আরব (আদতে তুর্কি ইত্যাদি বিভিন্ন দেশ) ও ইউরোপীয়দের এই দেশে আসা রিলেট করতে পারেন।
যাই হোক, মূল ব্যাপার হলো, ইউরোপ নগর পত্তন বলতে যে ব্যাপারটা বুঝিয়ে থাকে, সেটা এই দেশে শুরু হয়েছে খ্রীস্টীয় ১ম শতকের আগে থেকেই। আর সেই নগরগুলোর মধ্যে ঢাকা একটি বিশিষ্ট অবস্থান নিয়েই বিদ্যমান ছিল। সমুদ্রগুপ্তের এলাহাবাদ লিপিমালায় তাই "ড্বাকা" নগরীর বিবরণ উল্লিখিত হয়েছে। ৩য় শতকের এই বিবরণ থেকে আমি অন্ততপক্ষে নগর হিসেবে ঢাকার বয়স ১৭০০ বছরের কম মেনে নিতে পারছি না।
শাহনাওয়াজ স্যার বলে যাচ্ছেন, আমিও বলে যাচ্ছি। দেখা যাক, ইতিহাস-বিতর্ক শেষতক কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়।
চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...
চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...
- ঢাকার বয়স ১৭০০ হলে এটা অবশ্যই একটা ঘটনা। কাগজে কলমে কতো ধরা হয়?
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ধন্যবাদ যূথচারী ভাই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করার জন্য। আর কৃতজ্ঞতা জানাই ড.শাহনাওয়াজ-এর নামটি সংশোধনের সুযোগ করে দেয়ার জন্য। আমারই শ্রুতি বিভ্রাট হয়তো, এ-কার আর আ-কার এর পার্থক্যটা বুঝে উঠতে পারি নি। নামটা ঠিক করে নেবো।
ঢাকার প্রাচীনত্ব নিয়ে ১৭০০ বছরের যে ফ্যাক্টরটা উল্লেখ করলেন, এরকম একটা সুরও ওই অনুষ্ঠানে সম্ভবত শুনেছিলাম ড.শাহনাওয়াজ বা ড.মনসুর মুসা'র বক্তব্য থেকে। কে যেন বলেছিলেন যে, হয়তো এমনও হতে পারে বিশ্বের প্রাচীনতম নগরীগুলোও এই দৌড়ে ঢাকার কাছে হেরে যেতে পারে।
আমি প্রত্নতত্ত্বের ছাত্র নই বা এ ব্যাপারে কিছুই বুঝি না। কেবল কেন যেন অতিরিক্ত একটু আগ্রহ ও কৌতুহল ভেতরে লালন করে যাই। সে ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কোন ধারণা বা বিবেচনা যোগ করার উপায় আমার নেই। আর তাই আশঙ্কা রয়েছে শ্রুতিটুকু যথাযথ উপস্থাপন করতে পারলাম কিনা। তথ্যগত ভুল থাকলে অবশ্যই ধরিয়ে দেবেন। এতে ব্যক্তিগতভাবে আমার এবং আগ্রহী পাঠকের উপকার হবে।
পোস্টে আসার জন্য আবারো ধন্যবাদ জানাই। ভালো থাকবেন।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
Shikhlam.
নতুন মন্তব্য করুন