• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

| কাকতালীয়…|

রণদীপম বসু এর ছবি
লিখেছেন রণদীপম বসু (তারিখ: বিষ্যুদ, ২২/০৪/২০১০ - ১:১৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


ভাতের গ্রাসটি ঠেলে মুখে পুরে দিতেই বিবমিষায় ভরে গেলো মুখ। মেটে আলুর মতো স্বাদ-গন্ধহীন শক্ত শক্ত কাঁচকলায় রান্না তরকারি। কাতলার মতো বড় কানকাঅলা মাছের মাথাটার চ্যাপ্টা দুধার দুদিকে রেখে লম্বালম্বি দু’ভাগ করার পর মাথার মধ্যে লোটাকাটা ছাড়া আর কিছু থাকে কিনা কে জানে। মোটাচালের ভাত আর কেন্টিনের বিখ্যাত হলদে কিন্তু অবয়বহীন ডাল। সব মিলিয়ে একসাথে মেখে যে পদার্থটা তৈরি হলো তার একটা গ্রাস মুখে অর্থহীন কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে পেটে চালান করতে গিয়ে নাজুক শরীর আরো কাহিল হয়ে ওঠলো। কিন্তু খেতে হবে। এখনো জি-ম্যাক্স ৫০০ এমজি ট্যাবলেট প্রতিদিন একটি করে চলছে। সাথে নাপা ও স্ট্যামিটিল তিন বেলা। আরো কী কী ঔষধ যেনো রয়েছে। দেহের ইঞ্জিন চালু রাখতে ফুয়েল তো দিতেই হবে। সেক্ষেত্রে জিহ্বাকে আর প্রাধান্য দিয়ে লাভ কী !

আরেকটি গ্রাস মুখে পুরতে পুরতে শরীরের লোমগুলো খাড়া হয়ে ওঠলো। সেদিনও তো একই আইটেমের খাবার ছিলো ! একেবারে হুবহু! কী আশ্চর্য, সেদিন কেন্টিনের যে আসনটিতে বসে খেয়েছি, আজো সেটিতে বসেই খাচ্ছি ! লাঞ্চ-আওয়ারে ভিড় লেগে থাকা কেন্টিনে কোন চেয়ার খালি হলে সেখানেই বসে পড়তে হয়। কিন্তু এমন কাকতালীয়ভাবে যদি ঘটনার পর ঘটনা মিলে যেতে থাকে, তাহলে তো আশঙ্কার কথা ! শরীর দুর্বল হলে মনের জোরেও ঘাটতি পড়ে। আর একটি গ্রাসও মুখে দেয়ার ধৈর্য্য স্থৈর্য্য কোনটাই নেই। খাবার অসমাপ্ত রেখেই উঠে গেলাম। এবং তখনই মনে পড়লো, সেদিনও এভাবেই খাবার ছেড়ে উঠে গিয়েছিলাম। মেরুদণ্ডের ভেতরে একটা হালকা ঠাণ্ডা প্রবাহ টের পাচ্ছি। কী সর্বোনাশ ! সেদিন তো সোমবারই ছিলো ! আজ এপ্রিলের উনিশ, সেদিন ছিলো বারো। মাত্র একটি সপ্তা’র ব্যবধান।

তাড়াতাড়ি হাত-মুখ ধোয়ে দোতলার সিঁড়ি টপকে নামছি। নিচতলায় রিসেপশান-ডেস্কে দায়িত্বে থাকা সহকর্মী সালাম দিয়েই জিজ্ঞেস করলো, এখন শরীর কেমন আছে স্যার ? ‘ফাইন!’ তবে উত্তর জানানোর আগেই তাঁর আন্তরিকতাপূর্ণ কণ্ঠ খলবল করে ওঠলো- সেদিন এই ফতোয়াটাই তো গায়ে ছিলো আপনার ! বমিতে একেবারে মাখামাখি হয়ে গিয়েছিলো। আমিই তা খুলে নিয়েছিলাম আপনার গা থেকে। আসলে অজ্ঞান অবস্থায় বমি করেছিলেন বলে খুব ভয় পেয়েছিলাম আমরা। একদিকে আপনার মাথায় পানি ঢালছিলাম আমরা, অন্যদিকে আপনার ডিপার্টমেন্টে টেলিফোন করেই সাথে সাথে যানবাহন-পুল থেকে জরুরি গাড়ি আনিয়েছি। ধরাধরি করে গাড়িতে তুলে যখন হার্ট-ফাউন্ডেশানে পাঠানো হচ্ছিলো, কী যে ভয় পাচ্ছিলাম আমরা !

আমি গায়ে চাপানো হালকা বাদামি স্ট্রাইপের উপর কালো ঝুরিছাপা ফতোয়াটার দিকে আশ্চর্য হয়ে চেয়ে আছি। পুনরাবর্তন ! এই কাকতালীয় পুনরাবৃত্তি কি ক্রমান্বয়ে আবারো কোনো ভয়ঙ্কর অবস্থার দিকে যাচ্ছে ? অহেতুক ভয়ের কাল্পনিক চাপ থেকে মুক্ত হতে গটগট করে যদিও মেইন গেটের দিকে এগিয়ে গেলাম, শরীর যেন ঠিকভাবে সাড়া দিচ্ছে না।

গেট পেরিয়ে ফুটপাথ দিয়ে সামান্য ডানে এগোলেই পোস্ট অফিসটার সামনে সেই টঙ-দোকানটা, যার নিয়মিত কাস্টমার আমি। চায়ের অর্ডার দিয়ে বেনসন স্টিকটা দুঠোঁটে চেপে ধরে ফস করে আগুন ধরিয়ে নিলাম। চায়ে চুমুক দিয়েই ভাবলাম, লাঞ্চের পর চা খাওয়ার এই কায়দাটা নিয়মিত অভ্যাসের অংশ হলেও এটাও তো সেদিনের পুনরাবৃত্তিই হচ্ছে ! বৈশাখের গনগনে উত্তাপ ছড়ানো খাঁ খাঁ দুপুরে ভালোভাবেই ঘামছি। বিশেষ করে মাথার পেছনভাগটা গলগল করে ঘাম বের করে ঘাঁড়টাকে ভাসিয়ে দিচ্ছে। এটা কি কোন নার্ভাসনেস ! সেদিনও এমনি করেই ঘামছিলাম। এভাবে চললে পুনরাবর্তনের আর একটা ধাপ পরেই ঘটবে সেই দুর্ঘটনা। কিন্তু একই দুর্ঘটনা থেকে বারবার কি একইভাবে ফিরে আসা যাবে ? কোথাও না কোথাও তো অবশ্যই একটা নতুন ঘটনার জন্ম হয়ে যেতে পারে। সেটা যদি হাসপাতালের ইমার্জেন্সির আইসিইউ থেকে একইরকম ফিরে আসার ঘটনা না হয় !

কী সাংঘাতিক ! আতাউর ভাই, আশিক ভাই (অভিনেত্রী অপি করিমের স্বামী) এবং সেই গ্রুপটাই চা খেতে এলো, ঠিক সেদিনের মতোই। আমাকে দেখেই আশিক ভাই তাঁর চাপা কণ্ঠেই হৈ হৈ করে ওঠলেন- আরে আরে, কী অবস্থা আপনার ? সেদিন তাঁদের সাথে সর্বশেষ আড্ডারত অবস্থাতেই শরীরটাকে কেমন বেতাল বেতাল লাগছিলো। একনম্বর হাকিমপুরি জর্দা দিয়ে খিলি করা পানটা মুখে মজাতে মজাতে আর অনবরত পিক ফেলতে ফেলতে তাঁদের কাছে আকস্মিক বিদায় নিয়ে অফিসের দিকে হাঁটা ধরেছিলাম। মাথায় ভাবনা বুনছিলো সকালের দিকে মাহবুব লীলেনের মোবাইল কলটা- শুভ’দা অর্থাৎ কোলকাতার শুভ প্রসাদ মজুমদার এখন ঢাকায়। সন্ধ্যায় চলে আসেন মুস্তাফিজ ভাই’র বাসা নিকেতনে। আড্ডা হবে গান হবে…। এই ডাক এড়ানোর উপায় আছে কি ? বলেছিলাম অবশ্য, শরীর জুত মতো নেই। তবু উপায় খুঁজছিলাম অফিস শেষে কিভাবে সেখানে দ্রুত পৌঁছা যায়। কতদিন সচলাড্ডায় যাওয়া হয় না ! সেখানে যাওয়া দূরে থাক, অফিসেই আর ঢুকতে পারলাম কই !

মেইন গেট পেরিয়ে ভেতরে দু’কদম ফেলতে না ফেলতেই শরীরটা বিশ্রীরকম দুলে ওঠলো। সামনেই একটা খালি চেয়ার, হয়তো সিকিউরিটির দায়িত্বে নিয়োজিত কারো বসার জন্যে রাখা। কিন্তু এমন দৃষ্টিকটু জায়গায় গেটের সাথেই কোনো চেয়ার রাখা হতে এর আগে দেখিনি কখনো। তাহলে কি আমি আকস্মিক অসুস্থ হয়ে বসে পড়বো বলেই চেয়ারটা কাকতালীয়ভাবে ওখানে রাখা ছিলো ! ধপ করে বসে পড়েও স্বস্তি পাচ্ছি না, শরীরের ভেতরটা তড়পাচ্ছে যেনো। মুখ-জিহ্বা-গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। ভেতরগত এই অস্থিরতা বুকে নিয়ে লাঞ্চ শেষে অফিসফেরৎ পরিচিতজনদের বিস্মিত দৃষ্টি এড়ানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু উপায় নেই। ব্যস্ত রাস্তার মাঝখানে কাপড় খুলে দাঁড়িয়ে পড়া আর এই এখানে বসা প্রায় সমার্থকই। একটু বাতাসের জন্য হাসফাস করছি। কোনোভাবে রিসেপশান পর্যন্ত যেতে পারলে হতো। কিন্তু ওই মুহূর্তে শরীরে উঠে দাঁড়ানোর মতো এক ফোঁটা শক্তিও আর অবশিষ্ট আছে বলে হনে হচ্ছে না। মুহূর্তের মধ্যে এতো শক্তি নিঃশেষ হলো কী করে !

হঠাৎ পরিচিত একটা আন্তরিক কণ্ঠে মুখ তুলে তাকালাম। একজন প্রিয় মানুষের কণ্ঠ। সিনিয়র কলিগ জনাব আবু তাহের, যাঁকে আমি স্যার বলেই সম্বোধন করি। অডিট সেকশনে কাজ করেন তিনি। সবসময় ‘ফাইন’ থাকা সহকর্মীটিকে এমন বেমক্কা বেকায়দা অবস্থানে দেখে থমকে দাঁড়িয়ে গেলেন। খুলে বললাম অবস্থাটা। বললেন- আসেন আপনাকে ধরে নিয়ে যাই সাততলায় আপনার অফিসে। ওখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।
তিনি নিজেও প্রায় বৎসরাধিককাল যাবৎ বহু চিকিৎসায়ও অনির্ণীত পেটের পীড়াজনিত রোগে ভোগে ভোগে কঙ্কালসার প্রায়। আমি বললাম, না স্যার, শরীরের ভাব সে অবস্থায় নেই।
এরইমধ্যে আরেকজন পরিচিত সিনিয়র কলিগ জনাব আবু জাফর দাঁড়িয়ে কথাগুলো শুনছিলেন। বললেন, আসেন, দুজনে ধরে আপনাকে রিসেপশান পর্যন্ত নিয়ে যাই। ওখানে ফ্যানের বাতাসে দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে উঠবেন। কথাটা যুক্তিপূর্ণ এবং নির্ভর করার মতো। সিকিউরিটির কাছ থেকে খাবার পানি চাইলাম। পানির বোতলটা এগিয়ে দিলো। কুলকুচি করে মুখের সমস্ত পান ধুয়ে ফেলে দিলাম। দুঢোক গিলেই দুহাতে দুজনের কাঁধে ভর দিয়ে দাঁড়ালাম। কিন্তু দু’কদমও যাওয়া হলো না। হঠাৎ সবকিছু কেমন ঘোলাটে হয়ে আসতে লাগলো। চারদিকের জাগতিক শব্দ কেমন ম্লান ও দূববর্তী হতে হতে…..আর কিছু বলতে পারি না…।

প্রায় একটা সপ্তা’র অসুস্থতাজনিত ছুটি কাটিয়ে অফিসে যোগদান করেই সেদিনের মতো আজও এমন লজ্জাজনক একটা ঘটনা ঘটুক, তা কিছুতেই হতে পারে না ! কিন্তু ঘটনাপুঞ্জ যেভাবে কাকতালীয়ভাবে পুনরাবর্তিত হতে হতে সর্বশেষ ধাপের একেবারে প্রান্তসীমায় চলে এসেছে প্রায়, তাতে যুক্তিহীন অদৃষ্টবাদের হাতে নিজেকে সমর্পণ না করে এবার নিজেই আবর্তনের ধাপ ভেঙে দিলাম। আড্ডায় আর যোগ দেয়া হলো না, কিংবা একনম্বর হাকিমপুরি জর্দাসমেত পানের খিলির কথা সচেতনভাবে ভুলেই সোজা গেট পেরিয়ে রিসেপশান পার হয়ে গটগট করে লিফটের দিকে ছুটছি..।

সেদিন জ্ঞান ফিরে এলে একটা অপরিচিত আধো আলো রুমের সিক-বেডে নিজেকে অসহায়ভাবে আবিষ্কার করে চমকে ওঠেছিলাম। উদোম বুকে পেটে কতকগুলো তার আর ক্লিপের দঙ্গলে বিকট কিছু যন্ত্রের সাথে নিজেকে সংযুক্ত দেখে বুঝতেই পারছিলাম না যে এটা মিরপুর হার্ট ফাউন্ডেশানের ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডের নিরিবিলি পর্যবেক্ষণ কক্ষ। পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা সফল হতেই আবছা আলোতে একজন সহকর্মীর বাড়িয়ে দেয়া মোবাইলটা হাতে নিয়ে কানে ঠেকালাম। ফোনের ওপাশে কান্না চেচামেচি- ওগো, কী হয়েছে তোমার ! আমি আসছি !
না, আসতে হবে না, আমার কিচ্ছু হয়নি !
এরপরই একমাত্র শিশুপুত্রের কান্না- বাপী, কী হয়েছে তোমার ?
না বাবা, কিছু হয়নি, এই একটু চেক-আপ করাচ্ছি। এইতো চলে আসছি। চিন্তার কিছু নেই।
অর্থহীনভাবেই চোখদুটো ঝাপসা হয়ে এলো।

সমস্যা কী ? দায়িত্বরত ডাক্তারের রুটিন জিজ্ঞাসা হয়তো। আমি বললাম, প্রশ্নটা তো আমার !
ডাক্তার শুনলো কিনা বুঝা গেলো না। কেননা সাথে সাথেই তিনি পরের প্রশ্নে চলে গেলেন, ডায়াবেটিস আছে ? এদিক ওদিক মাথা নেড়ে না-সূচক উত্তর দিলাম। সাথে এও বললাম, গত দুদিন বেশ জ্বরে ভুগছি।
ততক্ষণে ডাক্তার তার টেবিলে চলে গেছেন। ইসিজি রিপোর্টটি হাতে নিয়েই হাঁক দিলেন- রুগীর সাথের কে আছে ? দরজা খুলে একজন সহকর্মী এগিয়ে এলেন। বাইরে অনেক উৎকণ্ঠিত সহকর্মীর মুখ দেখা গেলো। ডাক্তার বলছেন- হার্টে কোন প্রোবলেম নেই, এভরিথিং ওকে। আমরা রেফার করে দিচ্ছি, রোগীকে সোহরাওয়ার্দী বা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। বলেই সহকর্মীর হাতে কাগজপত্রগুলো বুঝিয়ে দিলেন। সহকর্মী আমার কাছে এগিয়ে এলেন প্রশ্নবোধক দৃষ্টি নিয়ে। বললাম- তেমন কিছু হয়নি আমার, কোথাও যাওয়ার দরকার নেই, সোজা বাসায় চলে যাবো। পরে একজন মেডিসিনের ডাক্তার দেখিয়ে নেবো।

পায়ের জুতো, গায়ের ফতোয়া, চশমা, আরো কী কী কোথায় কে জানে। পরে পাওয়া যাবে না হয়। অর্ধ-উদোম অবস্থায় অফিসের গাড়ি থেকে বাসার সামনে নামতেই উৎকণ্ঠিত স্ত্রী-সন্তান এগিয়ে এলো বিধ্বস্ত চেহারা নিয়ে। হালকা রসিকতার মধ্য দিয়েই বাসায় ঢুকলাম। কৃতজ্ঞতায় আবদ্ধ করে সহকর্মীরা ফিরে গেলেন। এবং সন্ধ্যার পরপরই চরাচর কাঁপিয়ে জ্বর এলো। অসহায় জীবনসঙ্গিটির কোলেই সময়জ্ঞান লুপ্ত হয়ে পড়ে রইলাম। রাত কতো হবে জানি না। বিদ্যুৎ নেই, আইপিএসটাও কো কো করতে করতে চোখ বন্ধ করে দিলো।
চোখ খুলে টিমটিমে আলোয় পাথরে বাধাই দেবদূতির মতো রূপা’র মুখের দিকে চেয়ে অনেকদিন পর বুকের ভেতরে কোথায় যেন অনবরত ভাঙনের শব্দ শুনতে পেলাম। মাথায় পানি ঢালার কলকল শব্দ থেকে কিছুতেই বিচ্ছিন্ন করতে পারছি না আর। অনলাইন, লেখালেখি, ইন্টারনেট, বই আর রাতজাগা অগাবগা চিন্তা থেকে মুক্ত হয়ে আজ কতদিন পর এভাবে দেখছি তাঁকে ! একই ছাদের তলে থেকেও কতোকাল স্বেচ্ছানির্বাসিত রেখেছি নিজেকে ! বহুদিন পর অসুস্থতার দমকা হাওয়ায় সেই বন্ধ হয়ে যাওয়া চোখটাই খুলে গেলো আবার…। শুধু এখানেই কোন কাকতাল নেই।


মন্তব্য

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

বসু তো বুড়া হইয়া গেলেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় আপনে স্বপ্নটপ্ন দেখা ছাইড়া দিসেন। স্বপ্ন না থাকলে মানুষ বুরা হইয়া যায়। ভালো থাইকেন।
.
___________________________________________
ভাগ্যিস, আমার মনের ব্যাপারগুলো কেউ দেখতে পায় না!

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

রণদীপম বসু এর ছবি

জুলিয়ান ভাই, বসু কি কখনো বুড়া হয় ? প্রকৃতির ধাতেই তা নেই ‍!

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

স্নিগ্ধা এর ছবি

সেদিন কী হয়েছিলো সেটা কি পরে আর ফলোআপ করে জেনে নিয়েছিলেন?
লেখার শেষটা পড়ে ভালো লাগলো। সবাই মিলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন :)

রণদীপম বসু এর ছবি

ফলোআপ হচ্ছে- সুস্থ থাকার মজাটা পরিপূর্ণ উপলব্ধির জন্যেই মাঝে মাঝে এমন একটু আধটু অসুস্থ হওয়া সবার জন্যেই প্রয়োজন বৈকি ! হা হা হা !
উৎকণ্ঠিত মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনারা থাকতে বেশিক্ষণ অসুস্থ থাকার সুযোগ কোথায় !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

রণদা, আপনি যে অসুস্থ সেটা আপনার লেখা থেকেই জেনেছিলাম। ঘটনা যে এমন তা জানতে পারিনি, বুঝতে পারিনি। আপনার লেখা পড়ে আমার অন্য ধরণের একটা বোধ তৈরি হয়েছে যেটা আপনাকে একা বলতে চাই, পরে কখনো সুযোগ হলে।

ইয়োগামাস্টার যে চরম অনিয়মের জীবন যাপন করেন সেটা জানি। এখন থেকে একটু নিয়মানুগ হোন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

রণদীপম বসু এর ছবি

পাণ্ডব দা, আমি অসুস্থ নই তো ! কিঞ্চিৎ অসুখে আক্রান্ত হয়েছিলাম, যা কিনা শাপে বর হয়েছে ! হা হা হা !

আর ইয়েগার দারুণ মাহাত্ম্যটা হচ্ছে, সব অনিয়মকেই অনায়াসে হজম করে তা থেকে পুষ্টি আহরণ করতে পারে !
তবে আপনার আত্মোপলব্ধিটা জানার কৌতুহল বোধ করছি। দেখা তো হবেই !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

মেহবুবা জুবায়ের [অতিথি] এর ছবি

একই ছাদের তলে থেকেও কতোকাল স্বেচ্ছানির্বাসিত রেখেছি নিজেকে ! বহুদিন পর অসুস্থতার দমকা হাওয়ায় সেই বন্ধ হয়ে যাওয়া চোখটাই খুলে গেলো আবার…। শুধু এখানেই কোন কাকতাল নেই।

এই কথা গুলিতো আমাদেরই কথা! কিন্তু আমার জন্য কেউ সেটা লিখলো না -----।

রণদীপম বড় ভালো লাগলো। চোখটা যখন খুলেই গেলো তখন আর কখনোই যেন ওটা বন্ধ না হয়। ভালোবাসা বাসি তো থাকেই, কিন্তু ওটা যে বড় অভিমানী, একটু অযত্ন একটু অবহেলাতেই অভিমান করে মুখ লুকিয়ে থাকে সংসারের কোন গোপন কুটিরে। একটু খুঁজে বের করুন ওকে। মনে আছে নিশ্চয়, প্রথমবার ওকে পাবার জন্য কতটা সময়, মেধা ও শ্রম ব্যয় করেছিলেন? না,অতটার দরকার নেই। খানিকটা যত্ন সামন্য একটু মমতা, এটুকু পেলেই ওর চলবে। দেখবেন কেমন করে রং বদলিয়ে দিয়েছে আপনাদের জীবনের। ভাই রূপা, আমার দোয়া আর শুভকামনা রইলো আপনার সাথে।

সব শেষে, আপনার জীবনটা তো শুধু আপনার একার নয়। এতে অনেকেরই ভাগ আছে। আমাদেরও। তাই আমাদের সবার রণদীপমকে একটু যত্ন করে দেখে শুনে রাখবেন ভাই!!

রণদীপম বসু এর ছবি

ভাবী, আপনার মন্তব্যে কোনো জবাব আমার জানা নেই। কেননা মন্তব্যের মধ্যেই সমস্ত জবাব নিহিত। তার চে'ও বড়ো কথা, রূপা স্বচক্ষে আপনার মন্তব্যটুকু পড়ে আরো আবেগতাড়িত হয়েছে। এটাও আমার জন্যে আরো বড়ো পাওয়া বৈকি !
ভালো থাকবেন সবসময়, সবাইকে নিয়ে। শুভকামনা রইলো।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

নাশতারান এর ছবি

শুরুতে ভালো লাগছিল। ভেবেছিলাম বুঝি গল্প। কিছু দূর গিয়ে আর ভালো লাগানো গেলো না। শেষে এসে আবার ভালো লাগলো।

আপনি যে অসুস্থ জানতাম না।

ভালো থাকবেন। আপনার সাথে আড্ডার অপেক্ষায় রইলাম।

|| শব্দালাপ ||

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

রণদীপম বসু এর ছবি

আপনি তাহলে গল্পের পাখায় চড়তে ভালোবাসেন ! তবে এটা স্বপ্নময়তার শুভ-লক্ষণ।

আপনার শব্দালাপ ব্লগস্পট থেকে ঘুরে এলাম। মন্তব্যও করে এসেছি। ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ। দেখা হবে কোনো আড্ডায়।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

সহজীয়া এর ছবি

শুরুর মুগ্ধতা মাঝে শঙ্কায় পরিণত হয়েছিলো। অবশেষে শেষে স্বস্তি কিছুটা হলেও পেলাম। শেষটুকু অসাধারণ; কেন জানি অতন্দ্রীলার কথা মনে হচ্ছিলো।

সুস্থ হয়ে উঠুন এবং সেভাবেই থাকুন এই কামনা করি।
____________________________________
বিধিবদ্ধ পঙ্কিলতা।
জীবন বাবু,তাঁর কবিতা।
তৃপ্তিদায়ী আত্মশ্লাঘা।
এবং এ রাতজাগা।
************************************

রণদীপম বসু এর ছবি

প্রত্যেকেরই মনে হয় একজন অতন্দ্রীলা থাকে। কেউ খুঁজে পায়, কেউ পায় না।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

তিথীডোর এর ছবি

ভালো থাকবেন,
এই প্রার্থনা রইলো...

--------------------------------------------------
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

রণদীপম বসু এর ছবি

আসলে ভালো থাকার কোনো বিকল্প নেই !
ধন্যবাদ আপনাকে।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

প্রখর রুদ্র [অতিথি] এর ছবি

না রণদা, আপনি অসুস্থ এ আগে জানিনি। দেহঘড়িটার দিকে নজর তো দিতে হবে নাকি ? ভালো থাকুন, এ কামনা করি।

রণদীপম বসু এর ছবি

হা হা হা ! রুদ্র তাঁর প্রখরতায় এখানেও আলো ছড়িয়ে গেলো !
অনেক ধন্যবাদ।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।