মানুষ চিড়িয়াখানায় যায় কেন ? এর একটা কারণ হতে পারে, যখনি মানুষ হিসেবে নিজের আত্মবিশ্বাসে টান পড়ে যায়, তখনি ছুট লাগায় চিড়িয়াখানার দিকে ! মানুষ হিসেবে নিজের অস্তিত্বটাকে যত দ্রুত সম্ভব ঝালাই করে নেয়ার তাগিদে। কী হয় সেখানে গিয়ে ? এর অন্যতম উদ্দেশ্য হতে পারে শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে মানুষের আধিপত্যের কিছু নমুনা পর্যবেক্ষণ করে নিজেকে আশ্বস্ত করা। কী সেই নমুনা ? গায়ে-গতরে যত বলবানই হোক, মানুষের হিংস্র বুদ্ধির সাথে কুলিয়ে না উঠা প্রকৃতি জননীর সহজ সরল বোকাসোকা প্রাণীগুলোর বন্দীদশা। যা কিনা সুসভ্য মানুষ কর্তৃক অত্যন্ত সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে সৃজনশীল দক্ষতার সাথে। এই দুর্ভাগা বন্দী প্রাণীগুলোকে কেন মানুষ চিড়িয়া নাম দিলো তা নতুন করে আবিষ্কারের আনন্দে এদেরকে অমানবিক প্রক্রিয়ায় উত্যক্ত করার মধ্য দিয়ে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করতে। নইলে আর মানুষ হলাম কেন আমরা !
এই একই প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতায় আমাকেও যেতে হলো আপাত অবুঝ সন্তানকে সাথে নিয়ে পূর্বপুরুষ হিসেবে নিজের দায় ঘুচাতে। তুমিও মনুষ্য সন্তান, এটা উত্তরাধিকারীকে বুঝিয়ে দিতে হবে না ! সাথে নতুন কেনা Canon PowerShot SX120 IS ক্যামেরার জারিজুরিগুলো আয়ত্ত করে নেয়ার একটা উপায়ও হয়ে গেলো !
সত্যি বলতে কি, চিড়িয়াখানায় গেলে আসলেই চিড়িয়ার অভাব হয় না। তবে আমার দুই-মেগাপিক্সেলে যে সমস্যাটা অনুভব করিনি কখনো, এই প্রথম বুঝতে পারলাম যখন তখন ক্যামেরায় 'ব্যাটারি লো' সিগনাল কতোটা বিরক্তিকর হতে পারে। তাই বাধ্য হয়ে আসল চিড়িয়াগুলোর ছবি ধারণের বদলে সেই দুর্ভাগা নিরপরাধী বন্দী প্রাণীগুলোকেই যত্ন করে ক্যামেরাবন্দী করার চেষ্টা করলাম। কারণ ফটোগ্রাফি শেখা হয়নি কখনো আমার। তাই দেখার দৃষ্টিটাকে শুধু আলোকযন্ত্রের লেন্সের মধ্য দিয়ে সূত্রহীন চারিয়ে দেয়ার চেষ্টাটুকুই করে যাই।
অতএব এই প্রচেষ্টাকে ফটোগ্রাফি ভাবা সবার জন্যেই অবিচার হবে। কবিতার দৃষ্টিতে না দেখে গদ্যচোখেই দেখার আমন্ত্রণ রইলো।
[ এ পর্যন্ত এসে যখন আমার পিকাসা-ওয়েবে ধারণ করা এলবাম থেকে প্রয়োজনীয় লিংক দিয়ে চিড়িয়াখানা সংশ্লিষ্ট ছবিগুলো আপলোড করতে যাবো, কোন কাজ করছে না ! এটাও কি রিচ-টেক্সট এডিটরের কোন সমস্যা কিনা বুঝতে পারছি না ! না কি ছবি আপলোডের নতুন পদ্ধতিই জানি না কে জানে ! সুরাহা করতে পারিনি বলে ওখান থেকে ছবি দিতে পারলাম না। শেষপর্যন্ত পোস্ট লেখাটাই কি পণ্ডশ্রম হয়ে গেলো ! তা হবে কেন ! অবশেষে আমার ব্যক্তিগত ব্লগ থেকেই লিঙ্ক করলাম।]
...
মন্তব্য
সুন্দর ছবি আসছে তো! বিস্তারিত মন্তব্য রাতে দিব। ততক্ষণ অপেক্ষায় থাকুন
বিস্তারিত মন্তব্যের অপেক্ষায় আছি। তাড়াতাড়ি।
আপনার মতামত জরুরী।
ফাহিম হাসান
ছোটকালে একবার আব্বা বললেন চল্ বেটা চিড়িয়াখানা। সন্ধ্যা বলে মনের মধ্যে একটু কিন্তু কিন্তু থাকলেও বেশি উৎসাহ নিয়ে গেলাম .... .... আব্বা সেইবার আমাকে মীরপুর ১ নং এর কাছে অবস্থিত শাহআলীর মাজারে নিয়ে গিয়েছিলো।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
ওটাই তো আসল চিড়িয়াখানা
প্রতিদিন চিড়িয়াখানা লেখা বাস দেখি, যাওয়া আর হয় না কখনো, ছোটবেলায় নাকি একবার গেছিলাম !!!
বান্দরের ছবি দেখে ভালো লাগছে...
__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________
__________________________________
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার
এইসব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো
__________________________________
দুঃখিত, চিড়িয়াখানা জিনিসটাকেই আমি আসলে সহজভাবে নিতে পারি না। আমার কাছে এটা 'নিজের খুশীর জন্য অন্যের ইচ্ছা এবং অধিকারের কোন পাত্তা না দেয়া'র নিদর্শন মনে হয়। আরো পরিষ্কারভাবে বলতে গেলে, যে কারণে আমি 'বোরখা পড়া বাধ্যতামূলক' জাতীয় নিয়মের বিরোধীতা করি, সেই কারণেই চিড়িয়াখানার বিরোধীতা করি।
বেশ কয়েকটা ছবির কম্পোজিশন ভালো লেগেছে - ফটোগ্রাফি শেখা হোক বা না-ই হোক, আপনার ছবিগুলো কবিতা বাদ দিয়ে 'কাষ্ঠগদ্য' হয়ে যায়নি
চিড়িয়াখানা আমার ভালো লাগে না। এর প্রাণগুলো বিষন্ন, ক্ষুধার্ত আর বঞ্চিত। সবসময়।
ঢাকার মীরপুরে যেটা আছে সেখানে সর্বশেষ বার যখন গিয়েছিলাম তখন তাকে "চিড়িয়াখানা"র বদলে "খাঁচাখানা" বলে মনে হয়েছিল। শুধু শূন্য খাঁচা ছিল, ভিতরের চিড়িয়া উধাও। অবশ্য খাঁচার বাইরে যত প্রকার চিড়িয়া দেখা যায় তাতে খাঁচাগুলো খালি রাখলেও অসুবিধা নেই।
প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় একটা কথা বলি। মীরপুরের চিড়িয়াখানা আর বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকা নানা জাতের, নানা কিসিমের মাস্তান আর ছিনতাইকারীর অভয়ারণ্য। এবং সেটা আজ নতুন কিছু না। নিয়মিত প্রচুর পরিমাণে লোকসমাগম হয় এমন জায়গার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির এমন অবস্থা মানা যায় না।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
রাস্তাঘাটের কর্পোরেটাইজেশানের মত চিড়িয়াখানার কর্পোরেটাইজেশানের কথা কেউ কি ভাবতে পারেনা। না খেয়ে বিনা চিকিতসায় মরার চাইতে বরং মেরিল ঘড়িয়াল, প্রাণ মদনটাক আর প্রথম আলো চন্দ্রবোড়া হয়ে মরা ভাল।
আপনার আইডিয়াটা বেশ ভাল। তবে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অন্যভাবেও করা যেতে পারে।
আগ্রহীদের জন্য বিখ্যাত প্রায় সব চিড়িয়াখানায় পশু অ্যাডপশানের ব্যবস্থা আছে। যে কেউ নিজেই দিতে পারেন কোন বাঘের বাচ্চার বা একটা হরিণ ছানার ভরণপোষনের খরচ। বিনিময়ে পাওয়া যায় নানা সুবিধা।
যেমনঃhttp://www.zoo.com.sg/l2_t2.aspx?l1=3&l2=25&langid=1
বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এই খরচ খুব বেশি হবে বলে মনে হয় না।
পিজা হাটের এক বেলা না হয় বাদ-ই দিলাম !
ফাহিম হাসান
"চিড়িয়াখানা" কনসেপ্টটাই ভালো লাগে না আমার কাছে। তবে সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ।
ছবিগুলো ভালো লাগলো।
মুখ একটু বের করে রাখা বানরটাকে কি যে বিষন্ন লাগছে!
মায়া লাগছে...
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
দুই-মেগাপিক্সেল দাদা দশ-মেগাপিক্সেলে আপগ্রেড হয়ে গেলেন?
ছবি ভাল এসেছে রণদা।
চিড়িয়াখানা ভালো না লাগার মানুষ দেখি বাড়ছে। আমার ধারণা অবশ্য উল্টো ছিল। গুড সাইন।
দুই মেগা থেকে দশ মেগায় যাওয়ায় রণদাকে শুভেচ্ছা।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
রণদীপম দা, আপনার লেখাটা আর ছবিগুলো, দুই'ই ভাই ভালো লাগলো। চিড়িয়াখানা শব্দটা আমার কাছে ভালো লাগেনা। প্রাণীশালা তুলনামূলকভাবে ভালো। চিড়িয়া তো আমরা যারা খাঁচার বাইরে ঘোরাঘুরি করি আর প্রতিনিয়ত নানা ভংচং করে বেড়াই। আমার রাফিনকে কখোনেই চিড়িয়াখানা বলতে দেই না। যদি দেখি প্রাণীশালায় ওর সমস্যা, বলি 'জ্যু' বলতে।
একটা মজার ছবি দিলাম এখানে। অতি রিসাইজ করতে করতে ছোট হয়ে গেছে-
[img=auto][/img]
প্রাণীরা আমাকে খুবই টানে। যখনই সুযোগ পাই, ছুটে যাই প্রাণীদের এলাকায়। স্বল্প জীবনে 'ঘুরেছি মাসাই' মারা, প্রাণীবান্ধব ভ্রমণপিপাসুদের স্বপ্ন। ছুঁয়ে দেখেছি বুনো সিংহ। দেখেছি ইন্দোনেশিয়ার 'তামান বুয়াইয়া' বা কুমিরের উদ্যান। আশ্চর্য হতে হয় কিভাবে ৫০ বছরের থেকে শুরু করে সদ্যজাত প্রায় ৩,০০০ কুমির গাদাগাদি করে একটা বাড়ি সংলগ্ন পুকুরে বসবাস করে। শ্রেফ একজন বৃদ্ধ চায়নিজের শখ। নিজের চোখে একাধিকবার দেখেছি কমোডো ড্রাগণ। আশা আছে সময় পেলে কমোডো আইল্যান্ডে একবার যাবার। কাছাকাছি এলাকার ফ্রেন্ড সার্কেল আছে কিন্তু সময় পাচ্ছিনা। সামনে লিখবো।
সবশেষে, (কেউ চাপা ভাবলে ভাবেন, সমস্য নেই) বয়সে অনেক ছোট সম্পর্কে এক মামাকে নিয়ে মিরপুর প্রাণীশালায় গেছিলাম অনেক বছর আগে। ওর বয়স তখন ১১-১২ বছর হবে। যখন গাধার এলাকায় গেলাম, ফাহমী তো অবাক। বলে, মামা দেখেন দেখেন কয়েকটা গাধার পিছনে তিনটা করে ঠ্যাং।
রাতঃস্মরণীয়
রাতঃস্মরণীয় ভাই,
আপনি ভাগ্যবান। মাসাই মারা আমার কাছে তীর্থ। এই অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখে ফেলেন। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন।
আমি চাই না কখনো এমন সময় আসুক যখন বুনো সিংহ ছুঁয়ে দেখা যাবে ! বন্য প্রাণীরা থাকুক মানুষের স্পর্শের বাইরে। (গবেষণা হলে অন্য কথা)। ভুল বুঝবেন না - এটা স্রেফ আমার নিজের মত। রন্থাম্বারের অবস্থা দেখুন- সৌখীন টুরিস্টদের চাপে বাঘের আচরণে আজ অনেক তফাৎ। এক গাড়ি লোকের সামনে বসে হাই তোলে নির্বিকারভাবে !
Ethology / Behavioral Biology তে অনেক পেপার আছে এ নিয়ে।
লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।
ফাহিম হাসান
ধন্যবাদ ফাহিম ভাই, ইচ্ছে আছে লিখবো, তাড়াতাড়িই লিখবো। আসলে ওখানের প্রাণীগুলো তো মানুষ দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। সংক্ষেপে সিংহ ছোঁয়ার গল্প বলি। ৪টা সাফারি জিপ সিংহটাকে চারদিক থেকে আটকে দিলো। গাইড-কাম-ড্রাইভার বললো কেউ ইচ্ছে করলে আলতোভাবে টাচ করতে পারেন তবে না করাই ভালো। আর টাচ করলেও যেন লেজ বা পিছনের দিকে না করেন। হাত বাড়িয়ে পিঠে একটু ছুঁইয়ে দিলাম। গাইড এটা কেনো বলেছিলো তা জানি, উচ্ছসিত হয়ে ট্যুরিষ্ট নিশ্চই তাকে কিছু বখশিশ দেবে।
আমার ফেসবুকে মাসাই মারার অনেক ছবি আপলোড করা আছে তবে ফেসবুক এ্যাকাউন্টে একটু 'ঘাপলা' করে রেখেছি। তা'ও লিংক দিলাম। ক্লিক করে দেখেন, কাজ হতেও পারে তবে শিওর না। আর মেইলবক্সে ২০০-২৫০ ছবি আছে অরিজিনাল সাইজে, রিসাইজ না করা। তাই আর মেইল করলাম না।
রাতঃস্মরণীয়
৫তারা, আপনার ২ মেগাপিক্সেল কে পিছে ফেলে দিলেন?
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
রণদীপমদা, পোস্টটা আরেকটু বাড়ান।
গোটা কয়েক প্রশ্ন রাখলাম -
কি ধরনের মানুষদের দেখলেন ওখানে?
বাচ্চাদের চোখে পড়েছে কি?
বাচ্চাদের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?
ঘোড়া/ হাতিতে চড়ার লাইন ছিল? আপনি কি আদৌ চিড়িয়াখানায় এ ধরনের ব্যবস্থা সমর্থন করেন?
ফাহিম হাসান
নতুন মন্তব্য করুন