[ মাইক্রোক্রেডিট বা গ্রামীণ ব্যাংকের সমালোচকরা তাঁদের আলোচনায় বা বিতর্কে অন্যতম জোরালো পয়েন্ট হিসেবে যে অভিযোগটি উত্থাপনের মাধ্যমে অন্যান্য অভিযোগগুলোকে যুক্তিসিদ্ধতায় অব্যর্থ করে তুলতে সচেষ্ট হয়ে ওঠেন তা হচ্ছে ক্ষুদ্রঋণের সুদের হার (Rate of Interest)। অথচ এ বিষয়টির স্পষ্ট একটা তথ্যগত ধারণা বা চিত্র খুব স্বাভাবিকভাবে দায়িত্বশীল কোন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে যথাযথ প্রচারের ব্যবস্থা নেয়া হলে বর্তমানে প্রচলিত কিছু মিথজুজুর অদ্ভুত বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতো না এবং অন্যান্য সৃষ্ট অভিযোগগুলোর বস্তুনিষ্ঠতাও অধিকতর সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করা যেতো। ]
…
আজ থেকে অন্তত তিরিশ বছর আগের কথা। ১৯৮০ সাল। আমি তখন ভ্রাম্যমান নাগরিক হিসেবে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ইন্টারমিডিয়েট ক্লাসের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। অতিরিক্ত আগ্রহ হিসেবে ক্লাস শেষে বিকেলে কলেজের সাধারণ জিমনেশিয়ামটিতে যাতায়াত ছিলো নিয়মিত। এখন সেই জিমনেশিয়াম কম্পাউন্ডটার কীরকম চেহারা দাঁড়িয়েছে জানি না, তবে সেসময়ে তা দেখতে যে খুব একটা দৃষ্টিনন্দন ছিলো তাও নয়। কলেজ ক্যাম্পাসের প্রান্ত ঘেষা স্বল্পপরিসর জিমনেশিয়াম কম্পাউন্ডে ঢোকার জন্যে রাস্তার পাশে লোহার গ্রিলের বুক সমান উঁচু যে পুরনো পকেট গেটটা ছিলো ওটা সবসময়ই তালাবদ্ধ পেয়েছি। ফলে গেটটি বেয়ে উঠে তীরের ফলার মতো লোহার খাড়া গ্রিলের ছুঁচালো অগ্রভাগ বাঁচিয়ে টপকে গেটের ভেতরে ঢুকে প্রয়োজনীয় কাজ সারতে হতো আমাদের। ছাত্র-অছাত্র বিভিন্ন শ্রেণীর ইচ্ছুক শরীরচর্চাকারীদের আনাগোনা ছিলো সেখানে। নিয়মিত যাতায়াতের কারণে অনেকের সাথেই ব্যক্তিগত পরিচয় ও সখ্যতা গড়ে উঠেছিলো। স্মৃতিবিভ্রাটের কারণে সেই বড় ভাইটির নাম এ মুহূর্তে মনে করতে পারছি না। ধরে নেই শাহীন ভাই। বেশ জলি টাইপের লোক ছিলেন। তো একদিন তিনি তাঁর এক বন্ধুর সাথে খেলাচ্ছলে তখনকার হিসাবে দশ টাকার একটা বেট ধরে বসলেন। বেট আর কিছু নয়, লোহার গেটটা একলাফে পেরোনো। যথারীতি লাফ দিলেন এবং অনায়াসে পেরিয়ে গেলেন। অতঃপর বাজি জেতা দশ টাকা নিয়ে খুশিমনে বন্ধুসহ চলেও গেলেন। হরদম ঘটে যাওয়া খুব সাধারণ ও গুরুত্বহীন একটা ঘটনা হিসেবে কিছুক্ষণের মধ্যে আমরাও মনে রাখলাম না সেটা।
কিন্তু পরদিন থেকে তাঁকে আর জিমনেশিয়ামে দেখা গেলো না। সপ্তা খানেক বা আরো কিছুদিন পর হঠাৎ খবর পেলাম শাহীন ভাই হাসপাতালে মৃত্যুশয্যায়। পড়িমরি করে ছুটলাম আমরা তাঁকে দেখতে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে আমার ধারণা শূন্যের কোঠায়। তাই আমার শরীরে কোন একটা সদ্যক্ষত থাকার কারণে আমাকে কেন রোগীর কক্ষে ঢুকতে দেয়া হলো না এর প্রকৃত ব্যাখ্যা দেয়া আমার দ্বারা সম্ভব নয়। হয়তো আমার জন্যেই অতিরিক্ত সতর্কতা ছিলো এটা। কারণ তীব্র ধনুষ্টঙ্কারে আক্রান্ত হয়ে ধনুকের মতো বাঁকা হয়ে যাওয়া শাহীন ভাই তখন চূড়ান্তভাবেই মৃত্যুপথযাত্রী। অন্যেরা তাঁকে দেখে বিষণ্ন মন নিয়ে বেরিয়ে এলো। জানা গেলো, বেট ধরে লাফ দিয়ে সেদিন গেট পেরোতেই মাটিতে পড়ে থাকা একটা পুরনো ছোট্ট পেরেকের মাথা গেথে গিয়ে পায়ের তলায় বেরিয়ে আসা অতিনগন্য রক্তবিন্দুকে তাঁর মতো একজন এথলেটের অনাবশ্যক ভেবে পাত্তা না-দেয়ার মাশুল দিলেন তিনি এভাবেই।
তারুণ্যের উন্মেষকালে এরকম অভাবনীয় ঘটনার স্তম্ভিত সাক্ষি হয়ে বিমূঢ় হয়ে পড়েছিলাম। সাধারণ অবস্থায় স্বাভাবিক ভাবনার বাইরে কিছু ঘটে যাওয়াকেই অভাবনীয় ঘটনা বলে। এরকম অভাবনীয় ঘটনা দেখা ও জানার অভিজ্ঞতা পরবর্তীকালে আরো অনেক হলেও বর্তমান লেখাটা লিখতে যাওয়াও আরেক অভাবনীয় রঙ্গ বলেই মনে হচ্ছে নিজের কাছে। তবু কতো রঙ্গই তো ঘটে এই বঙ্গদেশে।
... ... ...
আমি অর্থনীতি বা ব্যাংকিংয়ের ছাত্র নই। তবু দায়ে পড়ে, কখনো বা অদম্য কৌতুহলের বশে কত কিছুতেই যে নাক গলাতে হয়। মাইক্রোক্রেডিট (microcredit) নিয়েও সেরকমই কৌতুহল আমার। গোটা বিশ্বে আলোড়ন তোলা যে তত্ত্বের জন্ম ও প্রাথমিক প্রয়োগ এই গরীব বাংলাদেশেই, যার সাফল্যের সাথে জড়িয়ে আছে ক্ষুদ্রঋণের পথিকৃৎ ব্যক্তিত্ব নোবেল লরিয়েট প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Yunus)ও গ্রামীণ ব্যাংকের (Grameen Bank) নাম, যাঁকে নিয়ে দুনিয়া জুড়ে এতো আলোচনা-সমালোচনার ঝড়, উপরন্তু যে তত্ত্বকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে সভ্যতার কলঙ্কচিহ্ন দারিদ্র্য নামের সামাজিক রোগটিকে বিমোচন বা দূর করার সম্ভাব্যতা নিয়ে টাটকা বিতর্ক, তার প্রতি শুধু আমার কেন, শিক্ষিত সচেতন যে কারোরই কৌতুহল থাকা স্বাভাবিক। ফলে নানা মত ও পথের দেশি-বিদেশি রথি-মহারথি ব্যক্তি ও ব্যক্তিত্বরাও এর পক্ষে-বিপক্ষে পরস্পর কলম-যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরেই। ইদানিং নতুন মাত্রা যুক্ত হলো ড. ইউনূসকে তাঁরই প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অপসারণের নির্দেশের মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশকে সারাবিশ্বে দারুণ সম্মানের সাথে পরিচিতি দেবার ঈর্ষণীয় সাফল্যধারী ড. ইউনূসের এই অপমানজনক অপসারণের অতিউৎসাহী উদ্যোগকে তাঁর পক্ষাবলম্বীরা যেমন দেখছেন একটি উদ্দেশ্যমূলক অবৈধ হটকারি আয়োজন হিসেবে, অন্যদিকে ইউনূস বিরোধী পক্ষ এটিকে দেখছেন একটি বৈধ আইনী পদক্ষেপ হিসেবে। বিষয়টির চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য তা উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। আমার আলোচনা সেটা নয়। আমি বরং আমার আলোচ্য বিষয়েই দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে চাই।
ড. ইউনূস, গ্রামীণ ব্যাংক বা মাইক্রোক্রেডিট নিয়ে যুযুধান পক্ষের এই যে ঝড়ো বিতর্ক, প্রত্যেকেই যার যার নিজস্ব অবস্থান ও দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই তা বিশ্লেষণের চেষ্টা করেন। কেউ দেখেন এটিকে রাজনৈতিক দৃষ্টিতে, কেউ দেখেন অরাজনৈতিকভাবে। কেউ দেখেন কর্পোরাল কিংবা কর্পোরেট দৃষ্টিতে, কেউ দেখেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষণের আলোকে। কেউ আবার দেখেন সমাজমনস্ক দৃষ্টিতে। কেউ করেন আবেগের চাষ, কেউবা তাকে ব্যবচ্ছেদ টেবিলে ফেলে নিজের মতো কাটাছেঁড়া করেন। ইদানিং কাউকে আবার জনমতের মাঠ গরম করতেও ভীষণ উৎসাহী দেখা যায়। এ সব ক্ষেত্রেই ব্যক্তির নিজস্ব চিন্তা-চেতনা, দায়বোধ ও নাগরিক অধিকারের বিষয় জড়িত। যে যার মতো করে দেখতেই পারেন এবং মতামত প্রকাশের স্বাধীনতাও তাঁর রয়েছে। কিন্তু এটা করতে হয় বস্তুনিষ্ঠ তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই। তা না করলে যে অন্য নাগরিকের নাগরিক অধিকারও এতে খর্ব করা হয় সে বিষয়ে হয়তো আমরা অনেকেই সচেতন থাকি না। আর কোন ক্ষেত্রে যদি উদ্দেশ্যমূলকভাবে তথ্য গোপন বা বিকৃতির অপপ্রয়াস লক্ষ্যণীয় হয়ে ওঠে, এর চেয়ে পরিতাপের বিষয় আর কী থাকতে পারে ! ইতিহাস বিকৃতির সিদ্ধহস্ত জাতি হিসেবে আমাদের খ্যাতি তো ইতোমধ্যেই বিশ্ববিশ্রুত হয়েই আছে !
মাইক্রোক্রেডিট বা গ্রামীণ ব্যাংকের সমালোচকরা তাঁদের আলোচনায় বা বিতর্কে অন্যতম জোরালো পয়েন্ট হিসেবে যে অভিযোগটি উত্থাপনের মাধ্যমে অন্যান্য অভিযোগগুলোকে যুক্তিসিদ্ধতায় অব্যর্থ করে তুলতে সচেষ্ট হয়ে ওঠেন তা হচ্ছে ক্ষুদ্রঋণের সুদের হার (Rate of Interest)। অথচ এ বিষয়টির স্পষ্ট একটা তথ্যগত ধারণা বা চিত্র খুব স্বাভাবিকভাবে দায়িত্বশীল কোন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে যথাযথ প্রচারের ব্যবস্থা নেয়া হলে বর্তমানে প্রচলিত কিছু মিথজুজুর অদ্ভুত বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতো না এবং অন্যান্য সৃষ্ট অভিযোগগুলোর বস্তুনিষ্ঠতাও অধিকতর সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করা যেতো। এতে করে হয়তো আমাদের প্রচুর মেধাশ্রমের অপচয়ও রোধ হতো এবং মাইক্রোডিটের প্রকৃত সুফলগুলোকে কিভাবে কোন্ প্রক্রিয়ায় আরো উন্নত ও কার্যকর করা যায় সেদিকে এই মেধাশ্রমের সফল প্রয়োগও করা যেতো। কিন্তু তা হয়নি। কেন হয়নি তা খুঁজে বের করা হয়তো সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষকদের কাজ। নিশ্চয় একদিন তা জানতে পারবো আমরা।
বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অনেক। এগুলোর নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্নের জন্যেও রাষ্ট্রের সুনির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা দপ্তর রয়েছে। আর এদের নিয়ন্ত্রণের জন্য বর্তমানে রয়েছে এমআরএ বা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি। তবে এখন পর্যন্ত এই এনজিওগুলোর নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ব্যাংক নয়। কিন্তু ক্ষুদ্রঋণের পথিকৃৎ প্রতিষ্ঠান হয়েও গ্রামীণ ব্যাংক যে প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে সরকার অনুমোদিত নিজস্ব নীতিমালায় পরিচালিত একটি বিশেষায়িত ব্যাংক এবং এটার আর্থিক লেনদেনের প্রক্রিয়াটি যে প্রচলিত ব্যাংকিং রীতিতেই সম্পন্ন হয়ে থাকে, এ বিষয়টি অনেকেই ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে গিয়ে অন্যান্য অনিয়ন্ত্রিত ক্ষুদ্রঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিশৃঙ্খলার দায়ভারও এতকাল আশ্চর্যজনকভাবে গ্রামীণ ব্যাংকের উপর নির্দ্বিধায় চাপিয়ে দিতে দেখা গেছে। কেন এটা করা হয়েছে সেটাও একটা প্রশ্ন। এর দৃশ্যমান নমুনা হচ্ছে গ্রামীণ ব্যাংকের সুদের হার বিষয়ে বিভ্রান্তিকর প্রচারণার আধিক্য। এই প্রচারকদের কে কীভাবে এই সুদের হার নির্ণয় করেন জানি না, তবে কেউ বলেন ৩০%, কেউ বলেন ৩৩%, কেউ দেখান ৩৬% বা ৩৮%, আবার কেউ কেউ এটাকে ঠেলতে ঠেলতে চল্লিশ পার করে পঞ্চাশ বা তারও অধিক শতাংশের হারে নিয়ে যান। বিগত পঁয়ত্রিশ বছর বা তারও অধিক সময় ধরে যে প্রতিষ্ঠানটি আমাদের চোখের সামনেই একটু একটু করে বিস্তৃত হতে হতে বিরাট মহীরুহের আকার নিয়ে গোটা দেশে আড়াই হাজারেরও বেশি শাখার মাধ্যমে দেশের প্রায় সবকটি গ্রামে তাদের কর্মকাণ্ড বিস্তার করে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এবং চাইলেই যে হিসাবটি হাত বাড়িয়ে অতি নিকট থেকেই সরেজমিনে বা হাতেকলমে যাচাই করার সুযোগও অগম্য নয়, সেখানে এতো বিচিত্র ও পরস্পর বিরোধী তথ্যের সমাহার দেখে আশ্চর্যই হতে হয়। আর এই বিভ্রান্তিকর প্রচারের বিরুদ্ধে গ্রামীণ ব্যাংক তাদের ওয়েবসাইট, পত্র-পত্রিকায় বিভিন্ন সময়ে দেয়া রিজয়েন্ডার বা বিভিন্ন প্রকাশনা পুস্তিকার মাধ্যমে জানাতে চেষ্টা করছে যে তাদের সুদের হার সর্বোচ্চ ২০% এবং তা অন্য যেকোন ক্ষুদ্রঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানের তুলনায় সর্বনিম্ন। আরো বিস্ময়কর হচ্ছে নিয়ন্ত্রণকারী বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে এ ব্যাপারে আদৌ কোন তথ্য রয়েছে কি না, বা থাকলে তা কতো সেদিকে কারো আগ্রহী না হওয়া। এটা এমন কোন হাইপোথিটিক্যাল বা হাওয়াই বিষয় নয় বা ছিলো না যে তা খুঁজে দেখতে আমাদেরকে কল্পনার আশ্রয় নিতে হবে। ব্যাংকিং রীতিতে এই বিষয়গুলো তো সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের লেজার বা ব্যালেন্স সীটে প্রকাশিত তথ্য-উপাত্ত হিসেবে স্থায়ীভাবেই থেকে যায়। আমরা কেন তাতে নজর দিলাম না বা আগ্রহী ছিলাম না সেটাও প্রশ্ন।
ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাদের কাছ থেকে গ্রামীণ ব্যাংক কোন্ প্রক্রিয়ায় কিস্তির (instolment) মাধ্যমে ঋণ ও সুদ আদায় করে থাকে এবং ঋণের উপর তাদের সুদ ধার্য করার পদ্ধতি কী তা যাচাই করতে কোন বিশেষ জ্ঞানের প্রয়োজন হয় না বলেই বর্তমান লেখকের কৌতুহল ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা সাক্ষ্য দেয়। গ্রামীণের সুদের হিসাবটা কাছে থেকে দেখার সুযোগ না-হওয়া বা বাস্তবাবস্থাটা মিলিয়ে দেখার সুযোগ না-পাওয়ার কারণেই হয়তো সুদ সম্পর্কে অনেকের মধ্যে এই বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে বলে ধারণা। এবং আরো ধারণা করি, কেউ কেউ আবার হয়তো এই বিভ্রান্তিকেই পুজি করে বিশেষ উদ্দেশ্যসাধনের চেষ্টা করেছেন অজ্ঞাত কোন ফায়দা হাসিলের জন্য। অতএব, যাঁরা আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও প্রকৃত তথ্য যাচাই করার যথাযথ সুযোগটুকু করে ওঠতে পারেননি, মূলত তাঁদের জন্যেই সুদ সম্পর্কিত বিভিন্নজন কর্তৃক প্রচারিত কাল্পনিক জুজুমিথের সাথে গ্রামীণের ও অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বাস্তব অবস্থা একটু হাতে কলমে মিলিয়ে দেখার এই প্রচেষ্টা। তার আগে অর্থনীতি বা ব্যাংকিংয়ের ছাত্র বা সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী পাঠকের কাছে বিনীতভাবে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি এই বলে যে, তাঁরা যেন এ বিষয়ে বর্তমান লেখকের উদ্যোগটিকে কোনভাবেই অযৌক্তিক সীমালঙ্ঘন বা অযাচিত জ্ঞান দেয়ার চেষ্টা হিসেবে না ভাবেন। সংশ্লিষ্ট বিষয়ের একাডেমিক শিক্ষার্থী ছিলাম না বলেই নিশ্চয় করে বলা না গেলেও পাঠ্যে এটি সাধারণ ও প্রাথমিক পর্যায়ের পাঠ বলেই অনুমান করছি। তাই একাডেমিক পদ্ধতিতে উপস্থাপন করতে না-পারার নিজস্ব সীমাবদ্ধতা নিয়ে এ লেখাটা ভিন্ন অংগনের আগ্রহী ও কৌতুহলী পাঠকের জন্যেই নিবেদিত।
ক্ষুদ্রঋণের সুদ ধার্য ও আদায় প্রক্রিয়া:
গ্রামীণ ব্যাংকের সুদ চার্জের হিসাবটা কিন্তু প্রচলিত ব্যাংকিং নিয়মকে পুরোপুরি অনুসরণ করে। আমার ধারণা বাংলাদেশ ব্যাংকও এটা নিরীক্ষা করার বাকি রাখেনি এবং তাঁরা খুব ভালোভাবেই জানেন যে গ্রামীণ ব্যাংক উৎপাদনশীল ও বিভিন্ন খাতভেদে প্রদত্ত ঋণের উপর ডিক্লাইনড মেথড বা ক্রমহ্রাসমান পদ্ধতিতে সর্বোচ্চ ২০% হারে সরল সুদ আদায় করে থাকে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা আরো ভালো জানবেন, আমার সীমিত জ্ঞানে যেটুকু বুঝি, ক্রমহ্রাসমান পদ্ধতি হচ্ছে ঋণগ্রহীতা যে পরিমাণ টাকা যতদিন ভোগ বা ব্যবহার করেন, সে পরিমাণ টাকার ততদিনের সুদচার্জ বা ধার্য করা।
নমুনা হিসেবে ধরা যাক্ গ্রামীণ ব্যাংক একজন ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাকে বার্ষিক ২০% সুদসহ ফেরতদানের শর্তে এককালীন ১০০০ টাকা ঋণ বিতরণ করলো। সেক্ষেত্রে মূলঋণের পরিমাণ হলো ১০০০ টাকা। বিতরণের পর বিনিয়োগকৃত এই ১০০০ টাকা হলো ব্যাংকটির এসেট বা সম্পদ, যা আদায়যোগ্য ঋণ হিসেবে ঋণগ্রহীতা সদস্যের কাছে বার্ষিক ২০% সুদসহ পাওনা। সুদ হলো ব্যাংকটির মূল আয়, যা দিয়ে তার যাবতীয় পরিচালন ব্যয় নির্বাহ করে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চায়।
এবার আসি ঋণ আদায়ের প্রক্রিয়ায়। যেহেতু গ্রামীণের ঋণ আদায়ের সিস্টেমে সাপ্তাহিক কিস্তির মাধ্যমে ঋণ আদায় করা হয়ে থাকে, তাই আদায়যোগ্য ঋণ যেমন এই ১০০০ টাকার সাপ্তাহিক কিস্তিতে পরিশোধের শর্তও বিতরণের সময়ে বা আগেই নির্ধারণ করা থাকে। ধরা যাক্ পঞ্চাশটি সাপ্তাহিক কিস্তিতে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। তাহলে মূল ঋণ ১০০০ টাকাকে পঞ্চাশটি সমান কিস্তিতে ভাগ করা হলে সাপ্তাহিক ঋণের কিস্তি হয় ২০ টাকা। অর্থাৎ মাঠকর্মী বা কর্মকর্তা প্রতি সপ্তাহের একটি নির্দিষ্ট দিনে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র থেকে এই হারে কিস্তি আদায় করবেন। ধরা যাক্ ওই নির্দিষ্ট দিনটি সপ্তাহের প্রতি রবিবার। অর্থাৎ প্রতি রবিবার এলেই ঋণগ্রহীতার কিস্তি দেয়ার পালা।
ঋণগ্রহীতা ঋণ নেয়ার এক সপ্তাহ পর রবিবার এলেই ২০ টাকা কিস্তি দেবেন। এদিন প্রথম কিস্তি দেয়ার পর ঐ তারিখে ঋণগ্রহীতার কাছে ব্যাংকের পাওনা আদায়যোগ্য ঋণ থাকবে (১০০০-২০) = ৯৮০ টাকা। পরের সপ্তাহে নির্দিষ্ট দিনে আবার ২০ টাকা দ্বিতীয় কিস্তি পরিশোধের পর ঋণগ্রহীতার কাছে ব্যাংকের পাওনা আদায়যোগ্য ঋণ থাকবে এবার (৯৮০-২০) = ৯৬০ টাকা। এভাবে প্রতিসপ্তাহে ২০ টাকা করে কিস্তি পরিশোধ হতে থাকবে আর ঋণগ্রহীতার কাছে ব্যাংকের পাওনা আদায়যোগ্য ঋণের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেতে থাকবে। এ প্রক্রিয়ায় … ৯৪০, ৯২০, ….., ৫২০, ৫০০, ৪৮০,… ৬০, ৪০, ২০ এভাবে আদায়যোগ্য ঋণের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেতে পেতে পঞ্চাশ নম্বর সপ্তাহে গিয়ে ঋণ পূর্ণ পরিশোধ হয়ে যাবে।
আবার ৪৬ সপ্তাহেও এই ঋণ পরিশোধযোগ্য হতে পারে। সেক্ষেত্রে মূল ঋণ ১০০০ টাকাকে সমান ৪৬ টি কিস্তিতে ভাগ করতে গিয়ে ২২ টাকা করে সাপ্তাহিক কিস্তি নির্ধারণ করা যায়। এতে ৪৫ কিস্তিতে পরিশোধ হবে (২২*৪৫)= ৯৯০ টাকা। ফলে ৪৬ নম্বর সপ্তাহে বাকি ১০ টাকা পরিশোধ করতে হয়। এক্ষেত্রে প্রথম কিস্তি পরিশোধের পর থেকে আদায়যোগ্য ঋণ হ্রাসের ধারা হবে ৯৭৮, ৯৫৬, ৯৩৪, …, ৫৪, ৩২, ১০। তবে আলোচনার সুবিধার্থে উপরোক্ত ৫০ কিস্তিতে পরিশোধের শর্তকেই নমুনা হিসেবে ধরি।
এবার আসা যাক এই বিতরণকৃত ঋণের উপর সুদ চার্জ ও তার আদায় প্রক্রিয়ায়। ঋণগ্রহীতার কাছে গ্রামীণ ব্যাংক প্রাপ্য সুদ ধার্য করে ব্যাংকিং রীতির খুব সরল একটি পদ্ধতিতে। যা আগেই উল্লেখ করেছি, ক্রমহ্রাসমান পদ্ধতি। অর্থাৎ ঋণগ্রহীতার কাছে কতটাকা কতদিন আদায়যোগ্য ঋণ হিসেবে ছিলো তার উপর সুদ ধার্য করা হয়। এক্ষেত্রে সাপ্তাহিক কিস্তি আদায়ের প্রকৃতি অনুযায়ী সপ্তাহ অন্তর আদায়যোগ্য ঋণের উপর উপরে বর্ণিত ধারায় ঋণগ্রহীতার কাছে ব্যাংকের প্রাপ্য সুদ হবে এভাবে-
১০০০টাকার ৭দিনের সুদ + ৯৮০টাকার ৭দিনের সুদ + ৯৬০টাকার ৭দিনের সুদ + …..+ ৫২০টাকার ৭দিনের সুদ + ৫০০টাকার ৭দিনের সুদ + ৪৮০টাকার ৭দিনের সুদ + ….. + ৪০টাকার ৭দিনের সুদ + ২০ টাকার ৭দিনের সুদ… = মোট ৫০সপ্তাহের বা ৩৫০দিনের সুদের যোগফল।
ব্যাংকিং নিয়মে এই সুদ ক্যালকুলেশনের সহজ একটি গাণিতিক সূত্র রয়েছে। সরল সুদচার্জের এই সূত্রটা হচ্ছে এরকম-
সুদ = [{(১ম ব্যালেন্স + শেষ ব্যালেন্স)/২} *ঋণ ব্যবহারের দিন সংখ্যা/ ৩৬৫] * সুদের হার %
তাহলে এই নিয়মে ২০% হারে ঋণগ্রহীতার কাছে ব্যাংক প্রথম সপ্তাহের সুদ প্রাপ্য হবে
= [{(১০০০ + ৯৮০)/২}* ৭/৩৬৫]* ২০/১০০ টাকা
= [৯৯০*৭/৩৬৫]* ২০/১০০ টাকা = ৩.৮০ টাকা (সম্ভাব্য)।
এভাবে দ্বিতীয় সপ্তাহের জন্য সুদ প্রাপ্য হবে
= [{(৯৮০ + ৯৬০)/২}* ৭/৩৬৫]* ২০/১০০ টাকা
= [৯৭০*৭/৩৬৫]* ২০/১০০ টাকা = ৩.৭২ টাকা (সম্ভাব্য)।
এই পদ্ধতিতে পঞ্চাশটি সপ্তাহের ধার্যকৃত সুদগুলোর সামেশন বা যোগ টানলে প্রাপ্য সুদের মোট পরিমাণ বেরিয়ে যায়। এটাকে বলে ব্রেক মেথড। কিন্তু ঋণ পরিশোধের প্রকৃতি অনিয়মিত না হলে একজন ঋণগ্রহীতার জন্য এভাবে প্রত্যেক সপ্তাহের এক এক করে সুদ চার্জ করে মোট সুদ বের করার প্রয়োজন পড়ে না ।
যেহেতু ঋণ পরিশোধের ধরন নিয়মিত সাপ্তাহিক, তাই সেখানে ব্যাংকিং রীতিতে গোটা বছরের হিসাবটাকে একই গড় নিয়মে বের করে ফেলা যায়। এক্ষেত্রে একই নিয়মে প্রথম দিনের আদায়যোগ্য ঋণ হয় ১০০০ টাকা এবং সর্বশেষ কিস্তি প্রদানের আগের দিনে আদায়যোগ্য ঋণ ২০ টাকা। ফলে
সুদ = [{(১০০০ + ২০)/২}*৩৫০/৩৬৫]*২০/১০০ = ৯৯টাকা।
এই গাণিতিক নিয়মে ধার্য করা মোট সুদের পরিমাণের সাথে পূর্বের ব্রেক মেথডে ধার্যকৃত সুদের খুব একটা হেরফের ঘটে না বলে প্রচলিত ব্যাংক ব্যবস্থায় এটাই সর্বস্বীকৃত পদ্ধতি। এটার নাম সুদ চার্জের গড় পদ্ধতি।
এখানে আরেকটা বিষয় ধর্তব্য যে, ৫০ সপ্তাহের মোট দিন সংখ্যা ৩৫০ দিন ধরা হলেও বছরে সরকারি ছুটি বা ইত্যাদি কারণে গড়ে দু’সপ্তাহ কিংবা তারচে কম-বেশি সংখ্যক সপ্তাহের সংশ্লিষ্ট কিস্তি পরিশোধের সাপ্তাহিক তারিখে ব্যাংক বন্ধ থাকতে পারে। বছরে গড়ে দু’সপ্তাহ বন্ধ হিসাবে ধরে যদি মোট ঋণ ব্যবহারের দিন সংখ্যা ৩৬৫ দিনই ধরি তাহলেও হিসাবটা হবে এরকম,
সুদ = [{(১০০০ + ২০)/২}*৩৬৫/৩৬৫]*২০/১০০ = ১০২ টাকা।
অর্থাৎ একজন ঋণগ্রহীতাকে এক বছর মেয়াদী ১০০০ টাকা ঋণ গ্রহণ করে ২০% হারে বছরে সুদ দিতে হচ্ছে প্রায় ১০০ টাকা বা এক-দু’টাকা এদিক ওদিক। তাহলে ২০% রেটে ক্রমহ্রাসমান পদ্ধতির কী অর্থ দাঁড়ালো ? সাদা চোখে সুদের হার প্রায় ১০% ফ্ল্যাট রেটে নেমে এলো। গ্রামীণ ব্যাংকের জন্য এটাই হচ্ছে প্রকৃত বাস্তবতা।
আবার কোন ঋণগ্রহীতা যদি বছরের মাঝখানে ধরা যাক ২৫ সপ্তাহ পরে ঋণ একবারে পূর্ণ পরিশোধ করে দিতে চায় সেক্ষেত্রে একই ব্যাংকিং রীতিতে ২৫ সপ্তাহ বা ১৭৫ দিনের জন্য হিসাবটা কেমন হবে ? একই সূত্র-
সুদ = [{(১০০০ + ৫০০)/২}*১৭৫/৩৬৫]*২০/১০০ = ৭২ টাকা।
যে যখনই ঋণ পরিশোধ করুক না কেন, কিস্তিতে ঋণ পরিশোধের প্রকৃতি নিয়মিত হলে অর্থাৎ ঋণ প্রদানে অনিয়মিত বা খেলাফি না হলে এই গড় পদ্ধতির মাধ্যমেই সুদ ধার্য করা হয় এই অভিন্ন ব্যাংকিং রীতিতে। গ্রামীণের অন্যান্য ঋণ যা এক বছরের বেশি মেয়াদীও হতে পারে যেমন গৃহনির্মাণ ঋণ ৮% বা উচ্চশিক্ষা ঋণ ৫% বা অন্য কোন রেটের স্বল্প বা দীর্ঘ মেয়াদী ঋণ, সবগুলোর জন্যই সুদচার্জের এই স্বীকৃত নিয়ম প্রযোজ্য হয়ে থাকে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, আর কোন প্রতিষ্ঠানে এ সুবিধা রয়েছে কিনা জানি না, গ্রামীণ ব্যাংকের একজন নিয়মিত প্রকৃতির ঋণগ্রহীতা ২৫ সপ্তাহে ২৫টি কিস্তি পরিশোধের পর চাইলে তাঁর বাকি ঋণ এককালীন পরিশোধ করে কিংবা প্রয়োজনীয় সমন্বয় সাপেক্ষে পূর্বের সিলিংয়ে একই ঋণ পুনরায় নিতে পারেন। পূর্বের সিলিং উল্লেখ করার কারণ হলো তিনি যদি ১০০০ টাকার ঋণগ্রহীতা হয়ে থাকেন তাহলে ঋণ গ্রহণের এক বছরের মধ্যে ১০০০ টাকার ঋণের সিলিং অতিক্রম করতে পারবেন না। আর সমন্বয় সাপেক্ষে বলার অর্থ হচ্ছে একজন ঋণগ্রহীতার পুজি বৃদ্ধি বা জরুরি প্রয়োজনে ঋণ পরিশোধের মাঝামাঝি সময়ে বাকি অর্ধেক পরিমাণ ঋণ নগদে পরিশোধ করার সুযোগ বা সামর্থ নাও থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে এই সুবিধা গ্রহণ তাঁর দ্বারা অসম্ভব হয়ে যাবে।
একটি ঋণদানকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সবক্ষেত্রেই যে গড় নিয়ম অনুসরণ করা হবে তা নয়। কেননা ঋণ পরিশোধের প্রকৃতি নিয়মিত না হলে একটানে এই গড় পদ্ধতিতে সুদ চার্জ করা সম্ভব হয় না। অর্থাৎ ঋণ পরিশোধে অনিয়মিত বা খেলাফি হলেই তখন ব্রেক মেথডে সুদ চার্জ করতে হয়। কারণ একজন ঋণগ্রহীতা এক সপ্তাহ কিস্তি দিয়ে পরবর্তী দুসপ্তাহ হয়তো কিস্তি না দিয়ে তার পরের সপ্তায় কিস্তি দিলেন। সেক্ষেত্রে মাঝখানের ওই তিন সপ্তাহ বা একুশ দিনের জন্য তাঁর কাছে একই পরিমাণ নির্দিষ্ট আদায়যোগ্য ঋণ থাকার কারণে ২১ দিনের জন্য একটি সুদ চার্জ হবে। আবার পরের সপ্তাহে কিস্তি দিলে ওই এক সপ্তাহের জন্য পরিবর্তিত আদায়যোগ্য ঋণের প্রেক্ষিতে একটি সুদ চার্জ হবে। এরপর দেখা গেলো তিনি পরের ছয় সপ্তাহ কোন কিস্তি দিলেন না। তাহলে ওই সময়ের জন্য আরেকটা সুদ চার্জ হবে। এভাবে প্রতিটা অসমান ব্রেকের জন্য একটা করে সুদ চার্জ হয়ে ঋণ পরিশোধ পর্যন্ত যতগুলো ব্রেকের প্রয়োজন হয় ততগুলো গড় পদ্ধতির চার্জের যোগফলই মোট সুদ হিসাবে ব্যাংক প্রাপ্য হবে। অর্থাৎ ব্রেক পদ্ধতি মানে হলো কতকগুলো অসমান গড় পদ্ধতির সমাহার। বর্ণিত এই ব্যাংকিং রীতির বাইরে সুদ চার্জের অন্য কোন নিয়মের প্রচলন জানামতে গ্রামীণ ব্যাংকে কখনো ছিলো না, এখনো নেই। এখানেও উল্লেখ থাকা উচিৎ যে, গ্রামীণ ব্যাংকে ঋণের উপর চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ ধার্য বা আদায়ের এমন কোন অমানবিক বিধান কখনোই ছিলো না বা তা চর্চিতও হয় না। এবং আরেকটি বিধান যা চর্চার খুব একটা প্রয়োজন হয় না, দীর্ঘকালীন ক্লাসিফাইড বা খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রেও ব্যাংকিং নৈতিকতা অনুযায়ী ঋণের উপর ধার্যকৃত মোট সুদের সর্বোচ্চ পরিমাণ বিতরণকৃত মূল ঋণের চাইতে কখনোই বেশি হতে পারে না।
উপরিউক্ত হিসাব মতে এটা স্পষ্ট যে, গ্রামীণ ব্যাংকের ঘোষিত ২০% সুদের হার আসলে ডিক্লাইনড বা ক্রমহ্রাসমান সুদের হার, যা মূলত ফ্ল্যাট রেটে দাঁড়ায় ১০% এ। গ্রামীণ ব্যাংক এখানে তার ঋণের উপর সর্বোচ্চ সুদের হার ডিক্লাইনড রেটে ২০% প্রচার না করে ১০% ফ্ল্যাট রেটের এমন চমৎকার কথাটি কেন প্রচার করলো না ? এখানে এরকম ধারণা করা অনুচিত হবে না যে, গ্রামীণ ব্যাংক এক্ষেত্রে ১০% ফ্ল্যাট রেটের কৌশলী প্রচার না করে ২০% ডিক্লাইনড রেটের কথা বলে বিশ্বস্ততার পরিচয় দিয়েছে। যদিও তার বিরোধীরা যে এর ধারেকাছেও না থেকে অপপ্রচারের মাধ্যমে কোনভাবেই সততার পরিচয় দেন নি তা বলা যায়। অথচ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঘোষিত আপাত অল্প হারের দৃশ্যমান ফ্ল্যাট রেটের আড়ালে সম্ভাব্য কত যে গুজর রয়ে গেছে তা ভাবলেই অবাক হতে হয় !
এই ফাঁকে আমরা নাহয় ফ্ল্যাট রেটের মহিমাটা একটু যাচাই করে নিতে পারি যা অনেক প্রতিষ্ঠান নিজের জন্য সুকৌশলে প্রচার করে থাকে। গ্রামীণের এতো জটিল শব্দ ডিক্লাইনড রেট ২০% এর বিপরীতে কোন কোন প্রতিষ্ঠান অত্যন্ত সহজ-সরলভাবে বলে থাকে যে ওরা মূলঋণের উপর সাধারণ ফ্ল্যাট রেটে ১৫% সুদ নেয়। ব্যাংকিং রীতিতে এই সহজ কথাটির হিসাব পদ্ধতিও অত্যন্ত সরল। এক্ষেত্রে সুদকষার খুব স্বাভাবিক নিয়মটি হলো-
সুদ = মূল ঋণ গুণন সুদের %।
অতএব মূল ঋণ ১০০০ টাকার জন্য ১৫% হারে এক বছরের সুদ হবে
= ১০০০ *১৫/১০০ = ১৫০ টাকা।
ফলাফল যে আর সরল থাকছে না সেটা বুঝতে বাকি থাকে না। অর্থাৎ সুদের হার কম দেখিয়েও প্রতি হাজার টাকার জন্য এরা গ্রামীণ ব্যাংকের চাইতেও ৫০ টাকা করে বছরে সুদ বেশি নিচ্ছে। কারো কারো ফ্ল্যাট রেটের হার হয়তো ১৫% এরও বেশি রয়েছে। বাংলাদেশে এরকম বহু ঋণদানকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও এনজিও সংস্থা সবার চোখের সামনে দিয়ে এ কাজটি হরদম করে যাচ্ছে যা আমাদের নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বা কর্তৃপক্ষের নজরে আসছে না।
কোন ঋণ গ্রহীতা যদি এই ফ্ল্যাট রেটের ১৫% সুদহারেই বছরের মাঝামাঝি সময় অর্থাৎ ২৫ সপ্তাহ পর ঋণ পূর্ণ পরিশোধ করতে আগ্রহী হয়, সেক্ষেত্রে খুব স্বাভাবিক সরল সুদের ফ্ল্যাট নিয়মে সুদ হওয়ার কথা অর্ধেক, অর্থাৎ ৭৫ টাকা। এখানেও গ্রামীণের ২০% ডিক্লাইড রেট থেকে সুদ নিচ্ছে বেশি। কিন্তু ভয়ঙ্কর আশংকার কথা হচ্ছে, ঋণগ্রহীতা যখনই ঋণ পরিশোধ করুক না কেন, তা বছরের যে কোন সময়, হতে পারে ঋণ গ্রহণের ছ’মাস পর বা তিন মাস পর, তার কাছ থেকে বিতরণকৃত মূলঋণের উপর ফ্ল্যাট রেটে গোটা বছরের সুদটাই নিয়ে নিচ্ছে, যেহেতু তাদের ঋণদানের শর্তই হচ্ছে মূল ঋণের পরিমাণের উপর সুদ আদায়। যারা গণিত ও ব্যাংকিংয়ে পারদর্শী, দয়া করে এই সুদের হিসাবটা কেউ কি বের করে দেখবেন ঋণ পরিশোধের সময়ের হেরফেরে বাস্তবে এই সুদের হার শেষপর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় ?
কেউ কেউ হয়তো এই হিসাবটা করেছেনও, এবং এর ভয়ঙ্করতাও চাউর হয়েছে ঠিকই। কিন্তু প্রতিষ্ঠানভেদে বাছবিচার না হবার অদ্ভুত কারণে ক্ষুদ্রঋণের পথিকৃৎ হবার মাশুল হিসেবে গ্রামীণ ব্যাংককেই শিখণ্ডি হয়ে এর মিথ্যে দায় নিতে হয়েছে হয়তো। আর যেহেতু হতদরিদ্র মানুষজনকে নিয়েই তার কাজকারবার, ফলে নোবেল জয়ী হয়েও অতিরিক্ত শিরোপা হিসেবে ‘সুদখোর’ ‘রক্তচোষা’ ‘কাবুলিঅলা’ ইত্যাদি মহান ভূষণ অর্জনেও ঘাটতি পড়ে নি। অথচ বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণদানকারী সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে, যেখানে কোন কোন রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকেরও সীমিত পর্যায়ে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম রয়েছে, গ্রামীণ ব্যাংকের সুদের হারই তুলনামূলক নিম্নতম বলে জানা যায়।
অবশ্য গ্রামীণ ব্যাংক ঘোষিত এই যে ২০% ডিক্লাইনড রেট, তার মধ্যে ছোট্ট একটা ফাঁক থেকে গেছে বলে বিশেষজ্ঞদের মধ্যেও রয়েছে ঘোলাটে ধারণা। সেটা হলো গ্রামীণের সুদ আদায় প্রক্রিয়া নিয়ে। এক্ষেত্রে গ্রামীণের সিস্টেম অনুযায়ী প্রতি ১০০০ টাকা ঋণের জন্যে গোটা বছরের সম্ভাব্য সুদের পরিমাণ ১০০ টাকা ধরে সাপ্তাহিক কিস্তিতে ভাগ করে শুরু থেকেই সমান কিস্তিতে আদায়ের উদ্যোগ নেয়া। তবে সুদের পূর্বোক্ত গড় পদ্ধতির হিসাব অনুযায়ী প্রথম সপ্তাহেই যে টাকা চার্জ হয়, যা আনুমানিক চার টাকার কাছাকাছি, তার থেকে কম পরিমাণ কিস্তিতেই আদায় করা হয়। পঞ্চাশ কিস্তিতে ভাগ করা হলে তা হয় ২ টাকা। যদি এটা আরো কম কিস্তিতে বিভাজন হয় (২৫ কিস্তির পর পুনরায় ঋণ নেয়ার কারণে) তাহলে এর পরিমাণ ৩টাকাও হতে পারে। তবে এটা বলা যায় প্রথম অন্তত ২৫ সপ্তাহ পর্যন্ত যে টাকা সুদ চার্জ হতে পারতো, সে সময় পর্যন্ত সুদ আদায়ের পরিমাণ বাস্তবে অবশ্যই তার চেয়ে কম হয়ে থাকে।
আর বিশেষজ্ঞদের হিসাব জটিলতাটাও এখানেই। নিয়ম অনুযায়ী যদি ঋণ পরিশোধের পর সুদ আদায় করা হতো এককালীন, তাহলে উপরোক্ত হিসাবে সুদের হার নিয়ে কোন বিতর্ক থাকার সুযোগই হতো না। যেহেতু শুরু থেকেই সুদের আংশিক কিস্তি ঋণের কিস্তির সাথে (২০+২ বা ২২+৩ টাকা) আদায় করা হয়, তাই ধরে নেয়া যায় আদায়কৃত সুদের চূড়ান্ত হারে কিছুটা বিচ্যুতি ঘটে। কিন্তু সেটা কতো ? অনেকে বিভিন্নভাবে বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন তা। কারো কারো মতে এই বিচ্যুতিসহ চূড়ান্ত হিসাব দাঁড়ায় ২২%, কেউ বলেন এটা ২১%। কেউ আবার ফ্র্যাকশন বা ভগ্নাংশ যোগ করে বলেন ২১ দশমিক সামথিং। এ ব্যাপারেও দক্ষ গণিতবিদরা সঠিক রেটটা হিসাব করে দেখতে পারেন তা আসলে কতো। তবে আমার ধারণায় এটা ডিক্লাইন রেটে ২২ পারসেন্টের চাইতে কমই হবে। সম্ভাব্য ২১.২৫%। এটাকেও যদি চূড়ান্ত রেট হিসেবে বিবেচনা করি তাহলেও প্রশ্ন আসে ক্ষুদ্রঋণের তহবিল সহায়তাকারি সংস্থা পিকেএসএফ-এর মাধ্যমে সরকার কেন ক্ষুদ্রঋণের সুদ আদায়ের হার সর্বোচ্চ ২৭% এর মধ্যে রাখতে বলছে ? এটা নিশ্চয়ই ডিক্লাইড রেটেই হবে। ধারণা করি, সম্ভবত পিকেএসএফ-এর আওতাধীন উপরে উল্লিখিত ফ্ল্যাট রেটের হিসাবধারী সংস্থাগুলোর সুদহিসাবের মাহাত্ম্যটা নিশ্চয়ই তাঁদেরও নজরে এসেছে। তবে ক্ষুদ্রঋণ সংস্থাগুলোর তদারকি ও তাদের তহবিল সহায়তার দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান পিকেএসএফ-এর বেঁধে দেয়া রেটের চাইতেও বিশেষায়িত ব্যাংক গ্রামীণের রেট যে অনেক কম, এটাই প্রকৃত বাস্তবতা। ইলেক্ট্রনিক প্রযুক্তির যুগে এসে গ্রামীণের ওই ম্যানুয়াল হিসাব প্রক্রিয়াটি এখন কেবল কম্প্যুটারের সহায়তায় নির্ণীত হচ্ছে এই যা। তবে কম্প্যুটার প্রযুক্তির ব্যবহারে এই হিসাব গণনা আরো নিখুঁত হবে বলা যায়। কেননা এতে সুদ নির্ণয়ের গাণিতিক হিসাবগুলো দিনভিত্তিক আদায়যোগ্য ঋণের ব্রেক মেথডে বের করা সম্ভব। এবং জানামতে হচ্ছেও তাই।
বিস্ময়ের কথা হলো, অনেকেই সরেজমিনে যাচাই না করে সম্ভবত কান-কথার উপর নির্ভর করেই অবিবেচকের মতো গ্রামীণ ব্যাংককে উচ্চসুদ হারের জন্য দোষী সাব্যস্ত করে রীতিমতো কটুবাক্যও বর্ষণ করে যাচ্ছেন। এটা কেন করেন তা তাঁরাই ভালো বলতে পারবেন। তবে যাঁরা শুধু ধারণার বশবর্তী হয়ে গ্রামীণের প্রতি কাল্পনিক অভিযোগ আনছেন, তাঁদের প্রতি আমার নিবেদন, এবার অন্তত একবারের জন্যে হলেও সরেজমিন তথ্য যাচাই করে প্রকৃত সত্যটুকু তুলে ধরুন। ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক, ইতিহাসের চোখে ধুলা দিয়ে কতদিন আর নিজের প্রতি বিশ্বস্ত থাকা যায় !
পরিশেষে যদি প্রশ্ন হয়, হঠাৎ এই অবেলায় এতো ব্যাখ্যা করে সুদের এই হিসাব পর্যালোচনার কী কারণ থাকতে পারে ? বিনীত জবাব হলো, বিশ্বনন্দিত ক্ষুদ্রঋণের পথিকৃৎ প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে মূল্যায়ন বা অবমূল্যায়নে আমাদের যার যে দৃষ্টিভঙ্গিই থাক, বহুল আলোচিত ক্ষুদ্রঋণ ও গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকাণ্ড নিয়ে নির্মোহ পাঠ ও যথাযথ বিশ্লেষণের প্রাসঙ্গিকতা বিবেচনায় একটা সংবেদনশীল বিষয়ের প্রকৃত বাস্তবতার দিকে কৌতুহলি পাঠকের আগ্রহী দৃষ্টি নিবদ্ধ করা। শুধু তাই নয়, এটা সময়ের দাবীতে ইতিহাসের চোখ থেকে যৎকিঞ্চিৎ ধুলো সরানোর নগন্য প্রচেষ্টাও । আদৌ তা হলো কিনা সময়ই তা বলে দেবে হয়তো।
তবে তথ্য বিচারে লেখকের ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতাকে না এড়িয়ে যথাযথ অনুসন্ধিৎসাই হোক আমাদের ব্যক্তিগত দায়মোচনের অবাধ অঙ্গিকার।
…
[ পোস্টটি ব্যক্তিগত ব্লগ 'হ-র-প্পা'য় প্রকাশিত ]
...
মন্তব্য
আধাআধি পড়লাম, এবং চিহ্ন রেখে গেলাম।
ভাল লিখেছেন। আমার শুরু থেকেই এই প্রশ্ন ছিল - সুদের হার এত বেশী হওয়ার পরেও এত লোকে লোন নেয় কেন? উত্তরটা কিছুটা হলেও পেলাম। বাকিদের কমেন্টের জন্য অপেক্ষা করে থাকলাম।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
কেউ যদি সুদাসল পরিশোধে অসমর্থ হয়, তাহলে ব্যাঙ্কিং আইন অনুযায়ী কি গ্রামীণ ব্যাঙ্ক ঋণীর স্থাবর এবং/অথবা অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে পারে?
এখন পর্যন্ত এমন নজির দেখা যায় নি।
গ্রামীণের আদায় হার কিন্তু একশত ভাগ নয়। প্রায় ৯৮% তাদের তথ্য মতে। অতএব বাকিটা ক্লাসিফাইড। যেহেতু গ্রামীণের সিস্টেম জামানত বিহীন ঋণ দেয়া, তাই কোন স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের বিষয় প্রযোজ্য নয়। তবে সদস্যদের নিজেদের তৈরি গ্রুপ-লায়াবিলিটির একটা দায় থাকে। সেক্ষেত্রে গ্রুপের অন্য সদস্যরা তাদের ঋণ প্রাপ্তির সুযোগটাকে সাবলীল রাখতে সংশ্লিষ্ট খেলাপি সদস্যটিকে চাপ দেয় ঋণ পরিশোধ করতে। কোথাও কোথাও এরা হয়তো একটু অফেনসিভ হয়ে ওঠে। আর এই বদনামটাই গ্রামীণের ঘাড়ে এসে পড়ে যায়।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
আপনি কি বলতে চাইছেন, স্থাবর এবং/অথবা অস্থাবর সম্পত্তি ঋণী গ্রুপের লোকজন এসে বাজেয়াপ্ত করে, রিয়্যালাইজ করে, তারপর গ্রামীণকে শোধ করে? ব্যাঙ্কিং আইন মতে ব্যাঙ্ক এই কাজটা করতে পারে আইনের আশ্রয় নিয়ে, কোনো যদুমধু তো করতে পারে না।
না, আমি তা বলি নি। গ্রুপের লোকজন হয়তো গ্রুপ লায়াবিলিটির কারণে তার সাপ্তাহিক কিস্তিটা ওরা মিটিংএর দিন গ্রামীণকে পরিশোধ করে দিলো। সে যাতে টাকাটা ওদেরকে ফেরত দেয় সেজন্যে কোন একটা জিনিস জব্দ করে রাখলো, যেমন ছাগলটা। পরদিন হয়তো সে গ্রুপকে টাকাটা দিয়ে ছাগলটা ফেরত নিয়ে এলো। অনেকটা এরকম। সরেজমিনে অনেকটা এরকম কাহিনীই শুনি লোকমুখে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, আজকে যার এরকম সমস্যা হলো, আগামী ছ'মাসেও হয়তো তার আর এরকম সমস্যা হলো না। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, গ্রুপের সদস্যরা যাকে এমন করলো, সে কিন্তু এটাকে গায়ে মাখছে না। কেননা পরদিন বা তারপরদিন সে ঠিকই টাকা দিয়ে ছাগলটা নিয়ে আসছে। আরেকদিন হয়তো তার ভূমিকাই গ্রুপের অন্যদের মতো হয় এবং অন্য একজনের উপর ওরা চড়াও হয় ! আবার একসাথে হয়তো ব্যাংকে যাচ্ছে ঋণ আনতে। কেননা বস্তুগত কোন জামানত না থাকলেও গ্রুপই পরস্পরের জামিনদার হয় এবং ঋণের সাক্ষী হয়।
যে ক্ষেত্রে কোন কারণে গ্রুপ ব্যর্থ হয় ঋণ পরিশোধ করতে, সেক্ষেত্রে ঋণটা ক্লাসিফাইড হয়ে যায় এবং এই গ্রপের ঋণ পাওয়ার সুবিধাটা অন্য গ্রুপের মতো এতোটা সাবলীল থাকে না বা পেলেও সিলিং কমে যায়। এই ক্লাসিফাইড ঋণ হয়তো এক বছরের স্থলে দু-তিন বছরেও একটু একটু করে পরিশোধ হয়। তখন আবার স্বাভাবিক ঋণ পেতে সমস্যা হয় না। কিন্তু দুবছর ফেল করা ছাত্রের মতো সতীর্থদের থেকে একটু পিছিয়ে যায় আর কি !
তবে ব্যাংক তাদেরকে আইনের যাতাকলে ফেলার কথা হয়তো ভাবে না। মোটিভেশনটাই এধরনের প্রতিষ্ঠানের বড় হাতিয়ার। এই মোটিভেশন পাওয়ারটা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরও তাঁদের এসিআরের জন্যেও গুরুত্বপূর্ণ যোগ্যতা হয়তো।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
তাহলে কোলেইটারাল ছাড়া ঋণ দেয়া হচ্ছে, এমনটা বলা হয় কেন? একটা পক্ষ তো ঋণীর হয়ে গ্যারান্টর থাকছেই দেখা যায়।
আর আপনার মন্তব্যের একটা অংশ পড়ে অন্য একটা পর্যবেক্ষণ দিয়ে যাই। আপনি বলছেন,
ঋণ নিয়ে দরিদ্ররা একটা উদ্যোগে শামিল হন। সেই উদ্যোগে তারা যদি সফল হন [এই সফলতার হার বা মাত্রা নিয়ে কোনো পরিপূর্ণ স্টাডি এখনো হাতে পাইনি, আপনার সন্ধানে থাকলে জানাবেন], সেটার সুনাম গ্রামীণ ব্যাঙ্ক পূর্ণমাত্রায় নিতে প্রস্তুত, আর বিফলতার পরিণতির বদনাম তাদের "ঘাড়ে এসে পড়ে"?
চমৎকার পর্যবেক্ষণ।
হা হা হা! তাৎক্ষণিকভাবে হয়তো উপযুক্ত শব্দ ব্যবহার করা যায় নি বলে কথাটা রূঢ় একপেশে শোনাচ্ছে। আমি আসলে প্রচলিত সম্ভাবনাটাকেই ইঙ্গিত করেছি। এই ঘটনা সদস্যদের দ্বারা ঘটলেও এর নৈতিক দায় থেকেও গ্রামীণ ব্যাংক মুক্ত এটা বলবো না। পরোক্ষভাবে হলেও তো এটা গ্রামীণের কর্মসূচির একটা ফল্টই বলা যায়।
এর এন্টিবায়োটিক খোঁজাটাও এই সিস্টেমের অন্তর্ভূক্ত হওয়া উচিৎ। এর সম্ভাবনার হার এই সিস্টেমের জন্য যত নগন্যই হোক, এই ঘটনা ব্যক্তি আমার ক্ষেত্রে ঘটলে আমার জন্যেই তো তা শতকরা একশ ভাগ আপত্তিকর। অতএব আপনার মন্তব্যে আমি দ্বিমত করছি না।
তবে মর্টগেজ বিষয়টাকে বস্তুগত দৃষ্টিভঙ্গিতে বিবেচনা করা হয় বলেই জামানতবিহীন শব্দটা এই সিস্টেমের সাথে যুক্ত হয়েছে। গ্রুপ-লায়াবিলিটিকে মনে হয় কোনভাবেই এই সিস্টেমে অস্বীকার করা যাচ্ছে না।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
উইকির নিচের সংজ্ঞা অনুযায়ী কিন্তু কোনো কোলাইটারাল ছাড়াই ঋণ দেয়া হচ্ছে---
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
অর্থাৎ, বিজ্ঞাপনের সময় কোলেইটারাল অনুপস্থিত। কিন্তু পরিস্থিতির প্রয়োজনে ঠিকই দরিদ্র ঋণীর ছাগল বা টিনের চাল কোলেইটারাল হিসেবে বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে। এটা তো একটা শঠতা!
এই জিনিসটা নিয়ে আসলেই বস্তুনিষ্ঠভাবে খোঁজ-খবর করা উচিত এবং গ্রামীণ ব্যাংকের কোনো কর্মচারী এ ধরনের কাজের সাথে জড়িত থাকলে এটা যে শঠতা এটা নিয়ে আপনার সাথে কোনো দ্বিমত নেই । সেই সাথে এটাও লক্ষ্য রাখা দরকার অন্য কোনো এনজিও'র কাজের দায়ভার গ্রামীণ ব্যাংকের উপর চাপানো হচ্ছে কিনা ।
ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে এর আগে অনেকেই অনেকভাবে চেষ্টা করলেও (এমনকি কবিগুরুও চেষ্টা করেছিলেন) যে কারণে গ্রামীণ ব্যাংক মডেল সফল হয়েছে সেটা কিন্তু গ্রুপ-লায়াবিলিটির ধারণা ! টাকা ফেরত দিতে অনিচ্ছুক মানুষের কাছ থেকে পাওনা টাকা আদায় করা কেমন সহজ/কঠিন কাজ এ নিয়ে আশা করি আমাদের সবারই কমবেশি ধারণা আছে । অন্যদিকে গ্রামীণ ব্যাংকের পুরো মডেলের সাফল্য নির্ভর করে সব টাকা ঠিকঠাকমত ফেরত পাবার উপর । এ ব্যাপারটি নিশ্চিত করার জন্য গ্রুপ-লায়াবিলিটির ধারণাই কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংক মডেলকে অনন্য এবং সফল করেছে এবং অন্যান্য দেশেও এই মডেলটাকে সফলতার সাথে রেপ্লিকেট করা যাচ্ছে !
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
গ্রামীণ ব্যাঙ্কের সফলতার প্যারামিটারগুলো নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ খোঁজখবর প্রয়োজন আসলে। গ্রামীণ যে ঋণ দিয়ে ঋণ আদায়ে অতীব দক্ষ, এতে আমার কোনো দ্বিমত নেই। এই কাজের জন্য একটি ব্যাঙ্ক হিসেবে গ্রামীণ অবশ্যই প্রশংসিত হতে পারে। কিন্তু দারিদ্র্য দূরীকরণের সাথে এই ঋণ সুদসমেত আদায়ের সমীকরণ চিহ্নটা আমরা কি একটানে বসিয়ে দিতে পারি? দরিদ্র কি ঋণকে বিনিয়োগে পরিণত করে মূল্য সংযোজনের মাধ্যমে অর্জিত মুনাফা থেকে ঋণ সুদসমেত পরিশোধ করছে, নাকি সে এক ঋণ শোধ করতে গিয়ে অন্য ঋণের জালে জড়িয়ে যাচ্ছে, এ নিয়ে কি কোনো গবেষণা আছে আপনার হাতে?
আপনি মেধাবী, আপনাকে ক্ষুদ্র ঋণ দিলে আপনি সেটাকে কাজে লাগাতে পারবেন। আমি মাথামোটা, ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে বাজে কাজে খরচ করে ফেলবো। ক্ষুদ্র ঋণের সাফল্য নির্ভর করছে ঋণীর বিনিয়োগকুশলতা আর ঋণপরবর্তী ক্যাশ ম্যানেজমেন্টের ওপর। আমাদের দেশে গ্রামীণের ৮৩ লক্ষ দরিদ্র গ্রাহক কি এতই পারঙ্গম? যদি হতো, তাহলে দিনের পর দিন গ্রামীণের গ্রাহক সংখ্যা কেন বাড়ে? দারিদ্র্য কমলে ঋণী বাড়ে কেন?
গ্রামীণের সুদের হার ১০%, কিংবা ২০%, এই কথাটার কোনো নিজস্ব অর্থ নেই, যদি আমরা কনটেক্সটকে বিবেচনা না করি। দরিদ্র ঋণীর কি ১০% বা ২০% সুদে এই অর্থ ফিরিয়ে দেয়ার সামর্থ্য তৈরি হয় কি না, সেটাই বিবেচ্য। ব্যাঙ্কগুলি যখন নিজেদের মধ্যে কলমানি ট্র্যানজ্যাক্ট করে, তখন তো ৪০%, ৫০% (কিছুদিন আগে ১৫০%এও উঠেছিলো) সুদেও ধার নেয়, এটা নিয়ে তো কথা ওঠে না। ওঠে না কারণ ব্যাঙ্ক এই হারেও মুদ্রাবাজার থেকে ঋণ নিতে সক্ষম। একজন দরিদ্রের জন্য যখন ১ হাজার টাকা টিকে থাকার শেষ অস্ত্র, এর ওপর ১০০ টাকা সুদ দিতে হলেও সেটা তার জন্য চাপ হতে পারে।
গ্রামীণ ব্যাঙ্কের কল্যাণে মানুষের দারিদ্র্য দূর হলো কতটুকু, তা জানি না, কেউ জানাতে পারেনও না, চানও না। কিন্তু ইলেকট্রন যেমন ভ্যালেন্স ব্যাণ্ড থেকে একটু এনার্জি পেয়ে কনডাকশন ব্যাণ্ডে গিয়ে অন্তহীন ফরমায়েশ খাটে, গ্রামীণের ঋণীরাও কি সেই একই পরিণতি ভোগ করেন না? বগুড়ায় গ্রামীণ ব্যাঙ্ক গরু কেনার জন্যে ঋণ দেয় দরিদ্রকে, সঙ্গে জুড়ে দেয় ডানোনের শক্তি দই কারখানায় বছরভর সস্তায় দুধ সরবরাহের শর্ত। আপনার দূরবর্তী চোখে গরু পেয়ে দরিদ্রের দারিদ্র্য দূর হলো ঠিকই, কিন্তু যে গরুর দুধ সরবরাহের শর্তের পাকে বাঁধা, কেবল সে জানে, সে অন্যের লাভের জন্যে শ্রম দিয়ে চলছে। সেও এখানে আরেকটি গরু। আশা করবো আপনারা, যারা এই দারিদ্র্য দূরীকরণ মিথে বিশ্বাস করেন, তারা প্রাঞ্জল একটি পোস্টে গ্রামীণের ঋণ কী ধরনের প্রকল্পে কাজে লাগে আর দরিদ্রের কতটুকু কাজে লাগে, তা ব্যাখ্যা করবেন।
এ অংশটুকুর সাথে কোনো দ্বিমত নেই । সমস্যা হচ্ছে আমিতো অর্থনীতির ছা্ত্র নই, আমার পরিচিত অর্থনীতিতে পড়াশোনা করা যাঁরা ছিলেন তাঁদের কাছে এ বিষয়ে গবেষণাপত্র চেয়েছিলাম --সেগুলো হাসান মোরশেদ ভাইয়ের পোস্টে আপনার মন্তব্যের জবাবে দিয়েছিলাম--জানি না আপনার চোখে পড়েছিল কিনা ! এখানে ক্ষুদ্রঋণ সমর্থক
এক্সপার্টদের আলোচনার একটা লিংক দিলাম (রণদাও এই লিংকটা শেয়ার করেছেন নিচে) !
তাঁদের আলোচনার যেসব পয়েন্টের সাথে আপনি একমত নন সেগুলো নিয়ে হয়ত একটা পোস্ট দিতে পারেন !
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
বিরাট প্রবন্ধ আমাকে গছিয়ে না দিয়ে আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর আপনার দেয়া আলোচনার লিঙ্ক থেকে কোট করে তুলে দিন না। আপনার দেয়া লিঙ্কে প্রচুর বিশেষণ আছে, অ্যানেকডোটস আছে, প্রাসঙ্গিক ডেটা নেই। কে কবে অন্ধ্র প্রদেশে গিয়ে গ্রামীণের নাম বলে খাতির পেয়েছেন, সে কেচ্ছা আছে, কিন্তু নিজের দেশে গ্রামীণের ঋণগ্রহীতাদের আর্থিক অবস্থার ক্রমবিবর্তন নিয়ে গবেষণার তথ্য নেই। অর্থনীতিবিদদের গোলটেবিলের স্ক্রিপ্ট না, আমি খুঁজছিলাম কিছু ম্যাক্রো স্টাডি।
কোট করতে হলে অনেক বড় বড় অংশ কোট করতে হবে --এ জন্যই লিংকটা দেয়া হয়েছিল ! আর যে অর্থনীতিবিদদের গোলটেবিলের স্ক্রিপ্টের লিংক এটা তাঁরা অনেকে এ ব্যাপা্রগুলো নিয়ে অনেকদিন ধরে কাজ করেছেন, তাই তাঁদের
মতামত সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা আমি/আমরা কিছু লিখলে তার চেয়ে অনেক বেশি -- এটাও লিংক দেয়ার একটা কারণ ! বাংলাদেশে আমার সবচেয়ে প্রিয় আর শ্রদ্ধেয় মানুষদের একজন আকবর আলি খানকে কোট করলাম এখানে --
লিংক
প্রথম পয়েন্টটি অর্থাত্
এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য জানতে চাইছি !
আর উপরের লিংকের মাহবুব হোসেনের কথাগুলো আপনার চাহিদাকে পূরণ করবে ভেবে কোট করলাম --
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
"আমি/আমরা" বলাতে নাক গলালাম। আপনি নিজে কি লিখেছেন সেটার লিঙ্ক আমার চোখে পড়ে নাই। লিঙ্কটা একটু দিন। গুণীজন হলেই তাঁদের মতামত বেদবাক্য হিসেবে আপনি মেনে নিতে পারেন, আমি খুঁটিয়ে দেখে তারপর মানার হলে মানব।
অট: আমিনুর রহমানের "Women and Microcredit in Rural Bangladesh" বইটা একটু নেড়েচেড়ে দেখার অনুরোধ করি। মাঠ পর্যায়ের অনেক ডাটা সেখানে আছে। তাহলে প্রথম আলোর গোলটেবিল থেকে সবকিছু শিখে নেয়ার কষ্টটুকু কমবে।
আমার বক্তব্য ছিল আসলে এক্সপার্টিজম নিয়ে-- যাঁরা ওইখানে এ বিষয়ে কথা বলেছেন তাঁদের এক্সপার্ট নলেজ আপনার/আমার চেয়ে বেশি --এই অর্থে!
আমিও আসলে এমনটাই মনে করি !
বইয়ের নামের জন্য ধন্যবাদ ! আমি আসলে কোথাও কিছু লিখিনি-- শুধু আমার ফেসবুকে এ বিষয়ে আমি যে লেখাগুলোর সাথে একমত; যেগুলোকে আমার নিজের বক্তব্য মনে হয়েছে সেগুলো শেয়ার করেছি !
সময় বের করা প্রধান সমস্যা --তার উপর শেখাশেখির ব্যাপারও আছে-- এজন্যই আপনাদের লেখা পড়ি আর কি !
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
খুবই আমোদ পেলাম। ইউনূস দরিদ্র প্রায়-অশিক্ষিত নারীদের নিয়ে কাজ করেন, এবং তাদের পরিচালক বানান, যাতে তারা ব্যাঙ্কের কার্যক্রমে তাঁর মতের বিপক্ষে না যান। আপনি আমাকে অনুগ্রহ করে একটা ডিসেন্ট নোট দেখান, যেখানে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের এই তথাকথিত নির্বাচিত পরিচালক দরিদ্র নারীরা পরিচালকের ক্ষমতা প্রয়োগ করে ইউনূসের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে কিছু বলেছেন।
ইউনূস নারীদের ক্ষমতার কেন্দ্রে আনতে যদি এতোই উৎসাহী হবেন, তাহলে আজ কেন আমিনীদের এই নারীনীতি নিয়ে লম্ফঝম্ফে একটা টুঁ শব্দও করেন না? নিজের এমডির গদি বাঁচানোর জন্য তিনি সারা দুনিয়ার কেষ্টুবিষ্টুদের জড়ো করে বিবৃতি যোগাড় করছেন, সেগুলো বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশিত হচ্ছে খবরের কাগজে, অথচ সারা দেশের নারীদের ক্ষমতায়নের উদ্দেশ্যে গৃহীত নারী নীতির ওপর এই আক্রমণের বিরুদ্ধে ট্যাঁ করে একটা আওয়াজ পর্যন্ত তিনি করেন না? ইউনূসের নারীর ক্ষমতায়নের গল্প খুবই হাস্যকর। গ্রামীণ ব্যাঙ্কের পরিচালক পদে যে নারীদের তিনি পুতুল পরিচালক পদে বসিয়েছেন, তাঁদের কি গ্রামীণ ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে ব্যাঙ্কিঙের ওপর কোনো ধরনের এজুকেশন বা ট্রেইনিঙের ব্যবস্থা করা হয়? তাঁরা ৮৩ লক্ষ গ্রাহকের মধ্যে থেকে কী পদ্ধতিতে নির্বাচিত হন? কার অধীনে হয় সেই নির্বাচন? নির্বাচনী প্রচারণার কোনো ডকুমেন্ট আছে আপনার কাছে? আমি দেখতে পেলে কৃতার্থ হবো।
ড. আকবর আলি খান খুবই পণ্ডিত মানুষ, আমি তাঁকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু তিনি যা বলবেন, সেটাকে বিবেচনা না করেই আমি মেনে নিতে পারি না। শিক্ষার উদ্দেশ্য চারপাশের পৃথিবীকে ইন্টারপ্রিট করার সর্বোচ্চ চেষ্টায় মানুষকে ব্রতী করা, বিবেচনাকে এক পাশে সরিয়ে রেখে আরেকজনের মুখের কথা রিলে করা না। ওটা ধর্মে চলে, মুফতি আমিনীদের মানায়।
মাহবুব হোসেন সাহেবের বিশাল বক্তব্যে আমি আমার প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাইনি। ক্ষুদ্রঋণকে যারা দারিদ্য বিমোচনের জাদুর কাঠি মনে করেন, তাঁরা একটু মন দিয়ে মাহবুব হোসেনের কথাগুলো পড়লে দেখতে পাবেন, দারিদ্র্য বিমোচন একটা মন্থর প্রক্রিয়া, যেখানে প্রচুর ফ্যাক্টর জড়িত। আপনি আপনার দেয়া লিঙ্কে বিনায়ক সেনের জবানিতে দেখতে পাবেন, তিনি বলছেন ক্ষুদ্রঋণ দারিদ্র্য বিমোচনের একটা হাতিয়ার মাত্র, আলটিমেট এলিক্সির নয়। এই হাতিয়ারের প্রভাব দারিদ্র্য বিমোচনের ওপর কতটুকু, সেটা মাহবুব হোসেনের বিশাল বক্তব্যে আমি খুঁজে পেলাম না। আপনি একটা কন্ট্রোল আর একটা এক্সপেরিমেন্ট গ্রুপ নিন একই এলাকায়, সমান অবকাঠামোগত সুবিধায় রাখুন দুই দলকে, এক দলকে ক্ষুদ্র ঋণ দিন, আরেকদলকে ক্ষুদ্র ঋণ নেয়া থেকে বিরত রাখুন। তারপর দুই দলের অর্থনৈতিক পারফরম্যান্স তুলনা করুন নির্দিষ্ট সময় পর পর। তাহলে ক্ষুদ্র ঋণের প্রভাব পরিষ্কারভাবে স্টাডি করা যাবে। এমন একটা স্টাডির সন্ধান দিন। মাহবুব হোসেন সাহেব নিজেই একজন নির্বাহী ছিলেন, নিশ্চয়ই গোলটেবিলে বসে তিনি ক্ষুদ্রঋণের ব্যাকফায়ার নিয়ে কিছু বলবেন না, তাই না?
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ড. ইউনূসকে সুদখোর ইত্যাদি যারা বলে, সেই পলিটিশিয়ানদের প্রতি আমার বিন্দুমাত্র সহানুভূতি নাই। আমি ব্যাঙ্কিংকে একটা স্বীকৃত বাণিজ্য মনে করি এবং সুদ খাওয়া নিয়ে আমার কোনো ধর্মীয় বা আদর্শগত সংস্কার নাই। ড. ইউনূস একশোবার সুদ খাবেন, কার বাবার কী? রাজনীতিতে সুবিধা দেখলে দুইদিন পর এরাই আবার ইউনূসের নামে তসবি টিপবে। ইউনূসের নোবেলের ওপরও আমার কোনো বিরাগ নাই, বারাক ওবামা বালটা না ছিঁড়েও যদি নোবেল পায়, ইউনূস অবশ্যই একজন যোগ্য ক্যাণ্ডিডেট ও লরিয়েট। কিন্তু এই নোবেলকে ডুবন্ত জাতির লাইফবয় বানানো আর ইউনূসকে একজন সন্ত মহাপুরুষ হিসেবে উপস্থাপন করে যাবতীয় আইনকানুনের ঊর্ধ্বে তোলার চেষ্টাকে আমি অ্যাপ্রিশিয়েট করতে পারি না। ঠিক এভাবেই তারেক জিয়া আর সজীব ওয়াজেদ জয়কে ডিইফাই করে বিম্পি আর লীগ। আমি ব্যক্তিপূজার ঘোরতর বিরোধী। আমি ড. ইউনূসের অবস্থানের সমালোচনা করছি, এ কারণে আপনি যদি আমাকে এই পলিটিশিয়ানদের পলেমিকের ধারক-বাহক-প্রচারক বানানোর চেষ্টা করেন, আমি তিক্ত আর কঠোর একটা উত্তর দেবো যেটা আপনার পছন্দ হবে না।
আমি আসলে এটাকে পরিবারের কনটেক্সটে ভেবেছি-- গ্রামীণ,দরিদ্র পরিবার কাঠামোতে নারীর ক্ষমতায়নের কথা ভেবেছি -- আপনার মন্তব্য পড়তে যেয়ে কোট করা অংশটুকুতে তাকিয়ে দেখলাম ওইখানে পরিবার কথাটি নেই -- তাই আপনি ভিন্নভাবে ইন্টারপ্রেট করতেই পারেন !
বিবেচনাকে পাশে সরিয়ে আরেকজনের কথা রিলে করার উদ্দেশ্যে আকবর আলি খানের কথা এখানে কোট করিনি-- বরং আরও একজন মানুষ যাঁকে আমি শ্রদ্ধা করি তাঁর সাথে আমার বিবেচনা মিলে যাওয়ার পয়েন্টটা শেয়ার করেছি !
আর মাহবুব হোসেনের বক্তব্য প্রো'স এণ্ড কন'স উঠে এসেছে বলে সেটা শেয়ার করেছি ! আমি এম এম আকাশের বক্তব্যটুকুও পড়ে দেখতে অনুরোধ করব !
এটা আমি জানি ! ভালো থাকবেন !
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
কয়েক হাজার টাকা ক্ষুদ্র ঋণ নিয়েই একজন নারী পরিবারের ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসতে পারবেন? আমি শহরের মধ্যবিত্ত পরিবারের কর্মজীবী নারীকে তাঁর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির মানুষের হাতে আর্থিকভাবে শোষিত হয়ে বিনা প্রতিবাদে জীবন যাপন করতে দেখেছি। আমাদের দেশে নারী কি নিজের উপার্জনের ওপরও একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করতে পারেন? যৌতুকের জন্যে পিটিয়ে এখনও বউ মেরে ফেলে বদমাইশ পাবলিক, আর সেই জায়গায় কয়েক হাজার টাকা ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে নারীর ক্ষমতায়ন হয়ে যাবে? তিনি তাঁর বিনিয়োগের উপার্জনের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবেন? এসব গোলটেবিলে হয়, সেমিনার সিম্পোজিয়ামে হয়, হিলারি বা প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বেড়াতে এলে হয়, কিন্তু বাস্তবে কি হয়?
আমি আরো লক্ষ্য করলাম, নারী নীতি নিয়ে আমিনীদের অশ্লীল লাফঝাঁপের বিপরীতে ইউনূসের পর্বতপ্রমাণ নীরবতা নিয়ে আপনিও নীরব হয়েই রইলেন। আপনার কী মনে হয়, এ ব্যাপারে ড. ইউনূসের প্রতিবাদ করা উচিত ছিলো কি ছিলো না?
তার মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন নারীকে কেন্দ্র করে ক্ষুদ্রঋণ প্রক্রিয়া আবর্তিত হওয়াতে পরিবারে নারীর গুরুত্ব একটুও বাড়েনি ? এ ব্যাপারে একমত হতে পারলাম না । সম্ভব হলে এ ব্যাপারে আপনাকে একটু খোঁজ-খবর করতে অনুরোধ করব!
এ বিষয়ে তাঁর মতামত পেলে আমার ভালো লাগত-কিন্তু
সমসাময়িক বিষয় নিয়ে নিজের দৃঢ় মতামত জানানো তো ড. ইউনূসের কাজের ধরণ না-- আগেও এ ধরনের কোনো ইস্যুতে
তিনি তাঁর মতামত জানিয়েছেন এমনটা তো চোখে পড়েনি !
ড: ইউনূসের কাজের ফলে নারীরা আত্ননির্ভর হয়ে মৌলবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে আমি না হয় এটুকুতে খুশী থাকলাম ! আমিনীদের প্রতিরোধ করার কাজটা না হয় চলুন আমরা তুলে নিই !
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
বিশ তিরিশ হাজার টাকা যৌতুক আদায়ের জন্য লোকে বৌ পিটিয়ে মেরে ফেলে। আর আপনি দুই তিন হাজার টাকার ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে পরিবারে তাদের গুরুত্ব বাড়াচ্ছেন। এই আলাপ গোলটেবিল মার্কা হয়ে যাচ্ছে। তারচেয়ে বরং খোঁজ নিন, কেউ গবেষণা করেছেন কি না এর ওপর। গোলটেবিলের গরু গাছ বেয়েও উঠতে পারে, সেদিকে গেলাম না।
২০০৬ সালের অক্টোবর মাসটা তাহলে আপনি চোখ বন্ধ করে ছিলেন, অথবা খবরের কাগজ বা টিভির সংশ্রব থেকে দূরে ছিলেন। ইউনূস নোবেল পেয়ে জাতির উদ্দেশ্যে প্রথম ভাষণেই বন্দর উন্মুক্ত করে দেয়ার আবদার করেছিলেন, এরপর জাতীয় সংসদের সামনে অতীত ভুলে যাওয়ার হুকুম দিয়েছিলেন জাতিকে।
আর ইউনূস নারীর ক্ষমতায়নের জন্য নোবেল বগলস্থ করতে পারবেন, আর নারীর ক্ষমতায়নের বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে একটা বাক্যও খরচ করার সাহস নাই তাঁর? অন্তত নারীদের সম্মানের কথা ভেবে একটা "সম্মানজনক সমাধান"-এর কথাও তো বলতে পারতেন!
নেলসন ম্যাণ্ডেলা কি দক্ষিণ আফ্রিকায় আবার বর্ণবাদ দেখা দিলে চুপ করে থাকতেন? কিংবা চীন আবার তিব্বতে আগ্রাসন চালালে দালাই লামা কি মৌনীবাবা হয়ে থাকতেন? আমার মনে হয় না। তাই আপনি ওনার সব কাজেই খুশি হলেও, নারীর ক্ষমতায়নের মূলার বিজ্ঞাপন মাথায় বেঁধে ওনার এই নীরবতা আমাকে আহত করে।
আরেকটা তথ্য আপনাকে জানাই। গ্রামীণ ব্যাঙ্কের বিপুল অঙ্কের টাকা, যে টাকার মালিক হিসেবে দরিদ্র ঋণীরাই বিজ্ঞাপিত হন, খুবই ঢিলে শর্তে গ্রামীণ ফাণ্ডকে দেয়া হয়েছিলো। ৪৯ কোটি ১০ লাখ টাকার মধ্যে চার কোটি ৮৩ লাখ টাকা দেয়া হয়েছিলো ২ শতাংশ সুদের হারে, আর বাকি ৪৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা সুদবিহীন দীর্ঘমেয়াদি ঋণ হিসেবে। এই ঋণের ৩৯ কোটি ১২ লাখ টাকার মধ্যে ৩২ কোটি ৪২ লাখ টাকা ১০ বছর রেয়াতে ২৫ বছরের মধ্যে পরিশোধ করার শর্ত ছিলো।
আবার দেখুন, চুক্তি ছিলো যে এ ঋণের টাকা আদায় না হলে তা ব্যাংকের দায় বলে বিবেচিত হবে। ১৯৯৯ সালের মধ্যেই গ্রামীণ ফাণ্ডের সাড়ে ৯ কোটি টাকা ঋণ মওকুফ করতে হয়েছে গ্রামীণ ব্যাঙ্ককে। [সূত্র]
গ্রামীণ ফাণ্ড এই টাকা নিয়ে কী করেছে জানেন? গ্রামীণ ছাপ্পর লাগানো কিছু প্রতিষ্ঠান, যেগুলোর সাথে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের কোনো আইনগত সম্পর্ক নেই, সেগুলোতে ঋণ দিয়েছে। চকোরিয়া মৎস্য খামারকে আড়াই কোটি, গ্রামীণ সাইবারনেটকে ৫১ লাখ, গ্রামীণ বাইটেককে ২০ লাখ, গ্রামীণ ব্যবসাসেবাকে ১০ লাখ, গণস্বাস্থ্য ও গ্রামীণ টেঙ্টাইলকে এক কোটি ৪৮ লাখ, গ্রামীণ নিটওয়্যারকে এক কোটি ১০ লাখ, গ্রামীণ সিকিউরিটিজকে এক কোটি ৫০ লাখ, টিউলিপ ডেইরিকে ৫০ লাখ এবং গ্রামীণ সফটওয়্যারকে ১৬ লাখ টাকা চড়া সুদে ঋণ দেয়। এসব প্রতিষ্ঠানের কোনোটিই গরিব মানুষের প্রতিষ্ঠান নয়।
গ্রামীণ ব্যাঙ্ক থেকে অর্জিত পুঁজি পুনর্বার দরিদ্রের কাজেই লাগানো হয় বলে মিথ প্রচলিত, আপনি খুঁজে দেখুন এখানে দরিদ্ররা কোথায়। তারা ছাগল পালে আর সপ্তাহে সপ্তাহে ঠিকই ২২ টাকা সুদেমূলে পরিশোধ করে ২০% সুদে। গ্রামীণ ব্যাঙ্কের মুনাফার স্তুপ উঁচু হয়। তারপর ২% সুদে, নয়তো বিনা সুদে সেই টাকা চলে যায় গ্রামীণ সিলমারা অন্য প্রতিষ্ঠানে। সেই টাকার একটা বড় অংশ আবার ফিরেও আসে না। গ্রামীণ ব্যাঙ্কের ভক্তরা এ নিয়ে কিছু লিখবেন, সেই পোস্ট পড়ার আশায় রইলাম।
এ ব্যাপারে সবচেয়ে ভালো ব্যাখ্যা হয়ত গ্রামীণ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ দিতে পারবে-- আশা করব ওই প্রতিষ্ঠানের কেউ (হতে পারেন জনসংযোগ কর্মকর্তা) এসে এ বিষয়গুলোর ব্যাখ্যা দিয়ে যাবেন ! তবে এই ইস্যুতে 'কালের কণ্ঠ'কে বস্তুনিষ্ঠ মনে করি না ।
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
কালের কণ্ঠে এই সংবাদের কোনো প্রতিবাদ গ্রামীণ ব্যাঙ্ক করে থাকলে আমাকে লিঙ্ক দেখিয়ে যাবেন প্লিজ। আমি খুঁজে পাইনি। কালের কণ্ঠ যেহেতু জাতীয় দৈনিক, কোনো মিথ্যাচার তারা করে থাকলে গ্রামীণ ব্যাঙ্ক নিশ্চয়ই শক্ত প্রতিবাদ করে থাকবে। তাই না? এই রিপোর্টে যদি আপনার জানামতে কোনো ত্রুটি থাকে, সেটাও আমাকে ধরিয়ে দিতে পারেন।
ইউনূস সাহেবের সাথে একবার দেখা হয়েছিল ওনা নোবেল প্রাইজ পাওয়ার বেশ আগে। ওনাকে আমি সুদের হার নিয়ে প্রশ্ন করেছিলাম। উনার উত্তরটার সাথে আপনার এই ব্লগের তথ্য সম্পূর্ণ মিলে যায়। এই তথ্যবহুল লেখার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
কয়েকটা প্রশ্ন আছে আমার।
১/ কিস্তি যথাসময়ে দিতে না পারলে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়? কোন জরিমানা বা পেনাল্টি ফি আছে?
২/ শোনা যায় ঋণের জন্য বাসার চাল খুলে নেওয়া হয়েছে- বিনা জামানতে দেওয়া ঋণের জন্য এটা কিভাবে সম্ভব?
৩/ গ্রামীনের এই বিশাল গ্রাহকদের মধ্যে কয়জন প্রকৃত অর্থেই দারিদ্র্য অতিক্রম করেছে এই পরিসংখ্যান আছে কোথাও?
৪/ গ্রামীনের উদ্দেশ্য হচ্ছে ঋণ দিয়ে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করা। কিন্তু এটা কতখানি কার্যকারী মডেল এই বিষয়ে আমার সন্দেহ আছে। ঋণ নিয়ে সবাই ব্যবসায়ী হতে পারবে না, ক্ষুদ্র বা বৃহৎ যেকোনো ব্যবসার জন্য কিছুটা অভিজ্ঞতা লাগে অথবা কেউ কেউ হয়ত এই গুন নিয়েই জন্মান। অনেক ক্ষেত্রেই মানুষ এই ঋণের জালে জড়িয়ে যেতে পারে। মার্কিন দেশে ক্রেডিট ব্যুরো বলে একটা ব্যাপার আছে। আপনি একটা ক্রেডিট কার্ডে পেমেন্ট না দিলে সেটা ব্যুরোর রেকর্ডে থাকবে, অন্য ক্রেডিট কার্ডের লোন আপনি আর পাবেন না। গ্রামীনের একটা লোন কেউ পরিশোধ করতে না পারলে তাকে গ্রামীন বা অন্য কোন ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠান কি ঋণ দেবে? অর্থাৎ একবার লোন পরিশোধ করতে না পারলেও কি আবার ঋণ পাওয়ার যোগ্য?
আবারও অনেক ধন্যবাদ রণদা।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
১/ না, জরিমানা বা পেনাল্টি ফি টি কিছু নেই। তবে যথাসময়ে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে স্বাভাবিকভাবেই পরিশোধের সময়কাল বা দিন বেড়ে যায়, ফলে গাণিতিক কারণে ইন্টারেস্টের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। আর অনিয়মিত হওয়ার কারণে ঋণ পরিশোধের পর পরবর্তী দফায় ঋণের সিলিং বৃদ্ধির বিষয়টিও তার আগ্রহ অনুযায়ী বিবেচিত হবে না হয়তো।
২/ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দ্বারা আইনগত কারণেই এটা সম্ভব নয় কখনো। চাল খুলে নেয়ার বিষয়টি গ্রুপের অতি উৎসাহী সদস্যদের কারণেই ঘটতে পারে। তারপরও গ্রামীণের ৮০ লক্ষ সদস্যের মধ্যে যে দুএকটা ঘটনার কথা শুনা যায়, তা যেভাবে প্রচার পেয়েছে, যদি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দ্বারাই ঘটতো তাহলে তো আইনগত চ্যালেঞ্জেই চলে যেতো মনে হয়। সাধ করে চাকুরির ঝুঁকি কে নিতে যাবে !
৩/ দারিদ্র্যসীমা অতিক্রমের তথ্য গ্রামীণেই আছে নিশ্চয়ই। কোথায় যেন এবিষয়ে পরিসংখ্যানমূলক তথ্য দেখেছি এ মুহূর্তে মনে করতে পারছি না। তথ্য সংগ্রহ করা গেলে জানানো যাবে।
৪/ বিষয়ের ব্যাপকতার কারণেই এই পয়েন্টে আলোচনাটা মনে হয় আলাদা ফেজে করতে হবে। তবে এই লিংকে অর্থনীতিবিদদের কিছু আলোচনা রয়েছে। আপাতত এখানে ভাবনা মিলিয়ে দেখতে পারেন।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
বাহ! দারুণ! স্পষ্ট তথ্য সামনে আসুক।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
খুব ভাল লিখেছেন। পড়ে শেষ করতে পারিনি, বাকিটা পরে পড়ব।
ড. ইউনূসের এই অপমানজনক অপসারণের বিষয়টি আমি আন্য ভাবে বলতে চাই - তাঁকে এভাবে অপসারনের কারনে বাংলাদেশকে অপমানিত করা হবে, এ দেশের দারিদ্রতাকে আপমানিত করা হবে, এ দেশের ভাবমূর্তি ক্ষূন্ন হবে বিশ্বের কাছে। এতে ড. ইউনূসের কোন ক্ষতি হবে না।
আপনার লেখাটির জন্য ধন্যবাদ।
somomona
আমার ছোট মাথায় একটা প্রশ্ন কয়েকদিন যাবত ঘুরছে। প্রশ্নটি হল- গ্রামীণ ব্যাংক উত্তরবঙ্গে কি ধরনের কাজ করছে?is it functioning properly?আর যদি ঠিকমত কাজ করেই থাকে, তাহলে এখনও মাইগ্রেটের হার বেশি কেন?এখনও কেন তারা কাজের খোঁজে ঢাকা এবং বিভিন্ন শহর এবং ভাটিয়ারিতে যায়???
অলস সময়
হা হা হা ! গ্রামীণ ব্যাংক বা মাইক্রোক্রেডিটকে সর্বরোগের মহৌষধ ভাবাটা কি ঠিক ? আমাদের মাথা থেকে এই মিথটাকেই হটানো দরকার আগে।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
পরিশ্রমী পোস্টের জন্য সাধুবাদ দাদা। ক্ষুদ্রঋণের ক্যাচালে একটা কনক্লুশান টানার সময় মনে হয় এসেছে ।
আপনি যদিও বলছেন ক্ষুদ্রঋণ সব রোগের মহৌসধ না, কিন্তু এর ফেরিওয়ালারা কিন্তু এরকমই ধারনা দিয়ে এসেছেন এতকাল । দারিদ্রকে জাদুঘরে পাঠানোর জন্য ক্ষুদ্রঋণই একমাত্র মহৌসধ, এরকম একটা এক্সট্রাভেগান্ট পাবলিসিটি করে আসছেন ।
যত দোষ নন্দ ঘোষ বলতে পারেন, কিন্তু সম্প্রতি এক বন কর্মকর্তাকে তাঁর বনের সব গাছ সবার করে ফেলার জন্য় ক্ষুদ্রঋণকে দায়ী করতে শুনলাম । সাপ্তাহিক কিস্তির আগের দিন নাকি লোকজন দা-কুড়াল-বটি নিয়ে জঙ্গলে চলে যায় । ভদ্রলোক এমন সুন্দর করে বলছিলেন, আমি শব্দ করে হেসেই দিয়েছিলাম এই সিরিয়াস কথায় ।
চমৎকার লেখা। এবার আপনার উদাহরণের সাপেক্ষে কয়েকটা প্রশ্ন -
১। সাপ্তাহিক সুদ ৩,৮০ টাকা না দিয়ে আমি যদি ৪,০০ টাকা দেই তাহলে এই অতিরিক্ত ,২০টাকা কোথায় যায়? এই টাকা কি আমার পরের সপ্তাহের সুদ থেকে কাটা যায় নাকি মূল থেকে কাটা যায়?
২। ধরা যাক, আমি ৩০০০ টাকা ঋণ নিয়ে ১টা ছাগল কিনলাম ২০০০ টাকায়। ৩ মাস পরে আমি ছাগল বিক্রি করে বাকী টাকা কি এককালীন শোধ করে দিতে পারবো? সেক্ষেত্রে সুদের হিসেব কি হবে?
ধন্যবাদ।
১) আপনি যে ৪.০০ টাকা দেয়ার কথা বলছেন, বাস্তবে তা এরকম নয়। আমি পোস্টেও উল্লেখ করেছি, যদি সমান ৫০ টি কিস্তিতে ঋণ ও সুদ পরিশোধ করতে হয়, সুদের ক্ষেত্রে ১০০০ টাকা বিতরণকৃত ঋণের জন্য এক বছরের সম্ভাব্য সুদ ১০০ টাকা ধরে (কেননা ঋণ পরিশোধের আগ পর্যন্ত ব্যাংকিং নিয়মে চূড়ান্ত সুদ চার্জ করা হয় না) তাকে ৫০টি সমান ভাগে ভাগ করে কিস্তি নির্ধারণ করা হয়। সেক্ষেত্রে সুদের কিস্তি হবে ২ টাকা। এক্ষেত্রে কখনোই প্রাপ্য সুদের চেয়ে কিস্তিতে কিস্তিতে আদায়কৃত সুদ কখনোই বেশি হবে না। অর্থাৎ ব্যাংকই ঋণগ্রহীতার কাছে সুদ প্রাপ্য থাকে।
২) এক্ষেত্রে যদি ম্যানুয়ালি করতে হয় তাহলে পোস্টে যে সূত্রটা দেয়া হয়েছে সে মোতাবেক মান বসিয়ে ক্যালকুলেটর টিপলেই তা মুহূর্তের মধ্যে বেরিয়ে আসবে। হিসাবের সুবিধার জন্যে আরেকটু ব্যাখ্যা করি।
এখানে ৫০ কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য ৩০০০ টাকার ঋণের কিস্তি হবে প্রতি সপ্তায় (২০*৩)= ৬০ টাকা। ৩ মাস হিসাবকে যদি (৩*৪)= ১২ সপ্তাহ ধরি, তাহলে ১২ সপ্তায় ঋণ পরিশোধ হবে (৬০*১২)= ৭২০ টাকা। তাহলে তখনকার আদায়যোগ্য ঋণ দাঁড়াবে (৩০০০-৭২০)= ২২৮০ টাকা। ঋণের বকেয়া এটাই পরিশোধ করতে হবে।
এবার সূত্রে ফেলে সুদ বের করা।
সুদ = [{(১ম ব্যালেন্স + শেষ ব্যালেন্স)/২} *ঋণ ব্যবহারের দিন সংখ্যা/ ৩৬৫] * সুদের হার %
= [{(৩০০০ + ২৩৪০)/২}*৮৪/৩৬৫]*২০/১০০ = ১২৩ টাকা।
এই ধার্যকৃত সুদ থেকে ১২ কিস্তিতে আদায়কৃত সুদ (প্রতি হাজারে সপ্তাহে ২ টাকা করে ৩হাজারে সপ্তাহে ৬টাকা হিসেবে) ১২*৬= ৭২ টাকা বাদ দিয়ে বাকি (১২৩-৭২)= ৫১ টাকা সুদ হিসেবে জমা দিতে হবে।
আমার হিসাবটা সঠিক কিনা একটু ক্যালকুলেটরে যাচাই করে দেখেন। সূত্র ঠিক আছে, তবে হিসাবে গণ্ডগোল করে ফেললাম কিনা।
তাহলে একটা জিনিস পরিষ্কার হলো যে, আপনি ৩০০০ টাকা ঋন পাওয়ার পর ৫০ কিস্তিতে সুদসহ পরিশোধযোগ্য হিসেবে প্রতিসপ্তাহে ঋণ ও সুদের কিস্তি বাবদ (৬০ + ৬)= ৬৬ টাকা করে কিস্তি চালিয়েছেন।
উপরের সূত্রের সুদ গণনায় শেষ ব্যালেন্সটা খেয়াল করেন। ওখানে কিন্তু শেষ ব্যালেন্স দেখানো হয়েছে ২৩৪০ টাকা। অথচ আমরা বকেয়া আদায়যোগ্য ঋণ হিসেবে কিন্তু ঋণগ্রহীতা আপনার কাছ থেকে ২২৮০ টাকা জমা করছি। ব্যাংকিং নিয়মে যেদিন ঋণ পরিশোধের পূর্বদিন পর্যন্ত সুদ দিতে হয়। তাই আগের দিনের আদায়যোগ্য ঋণের ব্যালেন্সকেই শেষ ব্যালেন্স হিসেবে গণনা করা হয়েছে।
তবে বর্তমানে কম্পিউটার প্রযুক্তিতে সুদ ক্যালকুলেশন হয় দিনভিত্তিক ব্রেক মেথডে আরো নিখুঁতভাবে। ম্যানুয়াল গড় হিসাবের সাথে কম্প্যুটারের ব্রেক মেথডে সামান্য কিছু তফাৎ হতে পারে। আমি কম্পুকানা মানুষ ভাই, কেউ একজন কম্পুথিউরিতে ক্যালকুলেশনটা করে দেখতে পারেন।
আপনার ২ নং প্রশ্নটার সম্পূরক হিসেবে আরেকটা বিষয় জানিয়ে রাখি। আপনি ১২ সপ্তাহ পর ঋণ পরিশোধ করলেও সম্ভবত সাথে সাথে আবার সিলিং বাড়িয়ে ঋণ নিতে পারবেন না। কেননা আপনাকে সিলিং বাড়ানোর জন্য ১ বছর মেয়াদ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
বিষয়টা ক্লিয়ার করতে পারলাম কিনা দেখেন।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
ধন্যবাদ রণদা। মূল লেখা পড়ার সময় সিলিং এর ব্যাপারটা চোখ এড়িয়ে গেছিল।
রণদীপম,
খুবই সুন্দর করে প্রাঞ্জল ভাষায় তুলে ধরেছেন একটা বিষয় - যেটা আসলে সোজা, কিন্তু এটা নিয়ে নিয়ে বাংলাদেশের জ্ঞানী-গুনীরা যে কেন এত খুঁত খুঁজতে ব্যস্ত সেটা বুঝতে কষ্ট হয় আমার।
বর্তমান গ্রামীনের ব্যবস্থার চাইতে যদি আরও ভাল কিছু কেউ শুরু করতে চায় - তাহলে তাকে মানা করছে কে?
কেউ কি বলতে পারবে প্রফেসর ইউনুসকে ছোট করার চেষ্টাতে লাভটা কার?
সাইফ শহীদ
এখানে ১৬ পারসেন্টের উল্ল্যেখ দেখছি, এব্যাপারে কিছু বলবার অনুরোধ রইল।
ধন্যবাদ আপনাকে।
ধারণা করছি আপনার এ তথ্যটা সম্ভবত ১৯৯১ সালের আগের। সে সময় গ্রামীণ ব্যাংকসহ অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকেও ঋণের সুদহার ১৬% ছিলো। ১৯৯১ এ সরকার নতুন পে-স্কেল ঘোষণা করলে গ্রামীণ ব্যাংক তার কর্মকর্তা-কর্মচারিদের নতুন পে-স্কেল প্রদান করে পরিচালনব্যয় বৃদ্ধি জনিত কারণে সুদের হার সর্বোচ্চ ২০% এ উন্নীত করে।
সম্ভবত সে সময়কার কোন আর্টিক্যাল বা ম্যাসেজ ছিলো ওটা।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
আমার কিন্তু সেরকম মনে হচ্ছেনা। গ্রামীণের সাইট থেকেই দেখলাম এবং এ সাইটটি লাস্ট আপডেট হয়েছে জানুয়ারী ২০১১। আপনার জ্ঞাতার্থে লিঙ্কটা এখানে দিলাম।
তবে একটা প্রশ্ন। যতটুকু আমার জানা তাতে ঋণ নেবার পরের সপ্তাহ থেকেই ঋণগ্রহীতাকে ঋণ পরিশোধ করতে হয়, এটাকে অযৌক্তিক মনে হয়। যেকোন বিনিয়োগ লাভের মুখ দেখতে অন্তত আরও কিছুটা সময় লাগবেই বলে আমার ধারণা।
এছাড়া যদিও অপ্রাসংগিক, তবুও জিজ্ঞেস করি--
ঋণগ্রহীতারা যাতে ঋণ নিয়ে সফল ভাবে তা বিনিয়োগ করতে পারেন, এ ব্যাপারে গ্রামীনের পক্ষ থেকে কোন ধরণের ট্রেইনিং বা সাজেশান দেবার রীতি আছে কি? যেমন, একজন অশিক্ষিত গরীব গৃহবধূকে কোন খাঁমার দিতে চান, তবে সেক্ষেত্রে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে কোন ধরণের লজিস্টিক সাপোর্ট দেওয়া হয়কি?
সময় নিয়ে হলেও উত্তর দিবেন, এই আশা রাখি।
ধন্যবাদ আপনাকে।
এমনকি ভাসা-ভাসা ধারণাও যাদের নেই তাদের কন্ঠেও বিরক্তিকর 'কুষীদজীবী-কুষীদজীবী' রব শুনছিলাম ক'দিন ধরেই।
এই কথাটা আরো আগেই স্পষ্টভাবে বলা দরকার ছিলো।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
সুদের এরকম ক্যালকুলেশন না-দেখালেও বিভিন্ন সময়ে কিন্তু এ বিষয়ের কোন পোস্টে প্রাসঙ্গিক মন্তব্যের মাধ্যমে এ কথাগুলো বলার চেষ্টা করেছি। তখন হয়তো কেউ গুরুত্ব দিয়ে দেখেন নি বা গভীরভাবে নজরে আসেনি বিষয়টা অন্য কোন আবেগের উত্তাপে।
তবে বিষয়টি নির্মোহ বিশ্লেষণের প্রয়োজন রয়েছে। এখনো যদি তা হয় ক্ষতি কী !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
বেশ সহজ সরল করে সুদের হিসাবটা বুঝিয়েছেন, ধন্যবাদ আপনাকে। আগ্রহ নিয়ে পড়লাম, অর্ধেক বছরের হিসাব নিকাশগুলোর আগ পর্যন্ত। পড়ার পরেই মনে পড়ল, এখানেই আরেকজন নিয়মিত ব্লগার শুভাশীষ দাশের একটা লেখায় পড়েছিলাম ৪৬% বা তারও বেশী সুদের একটা হিসাব, তাই চট করে সেটাও পড়ে আসলাম, কোথায় অমিল সেটা দেখতে।
এখানকার ১৮ নম্বর মন্তব্য
আপনার দেয়া হিসাব আর ওনারটা খুবই কাছাকাছি, অন্তত ২১% এর হিসাব পর্যন্ত। কিন্তু এর পরের ধাপেই সেটা ৪৫% হয়ে যায়।
এই ধাপে একটা ফ্যাক্ট হিসাবে আনা হয়---গ্রামীণ ১০০ টাকা কেটে রাখে শেয়ার বাবদ, কিন্তু কিস্তি আসলে সমানই থাকে, তাই আসলে ৯০০ টাকার উপর সুদ দেয়া হচ্ছে, ১০০ টাকার ওপর নয়(কথা ঠিক)। তবে এই ১০০টাকা শুভাশীষ ২ জায়গায় হিসাব করেছেন, এবং আমার ধারণা তাতেই সুদের হার এত বড় দেখাচ্ছে।
প্রথমত এই ১০০ টাকা বিয়োগ হয়েছে আসল থেকে (১০০০-১০০=৯০০), অর্থাৎ গ্রামীণের ঘরে ১০০ টাকা ফেরত গেল। কিন্তু, এই ১০০ টাকা আবারও গ্রামীণের ঘরে ফেরত দেয়া হয়েছে সুদের পরিমাণ ১০০ টাকা বাড়িয়ে ২০৫ করে (আগের ধাপে সুদ ১০৫ যোগ ১০০=২০৫)।
আমার হিসাবমতে, সুদে আরো ১০০ টাকা এভাবে যোগ হবেনা, কারণ সেটা আগেই বাদ দিয়ে ৯০০ টাকা আসল করা হয়েছে।
হিসাবে ভুল হলে অবশ্যই দেখিয়ে দেবেন, খুশী হব।
(এখন ভাবছি, এই মন্তব্য আপনার লেখায় না করে শুভাশীষ দাশের ব্লগেই করে আসাটাই ভাল দেখাত কিনা)
এখানে মন্তব্য করায় মনে হয় না শুভাশীষ দা কিছু মনে করবেন। বরং আমার একটা জবাব দেয়ার সুযোগ হলো।
শেয়ার ক্রয় বাবদ ১০০ টাকা কেটে রাখার বিষয়টি এখানে সঠিকভাবে আসেনি। একজন সদস্যের কেবল একবারই ১০০টাকার শেয়ার ক্রয় করার সুযোগ থাকে। এর বেশি অবশ্যই নয়। তবে এটা ঋণের টাকা থেকে কেনা হয় না। সদস্য তাঁর ব্যক্তিগত সঞ্চয়ী তহবিল যা সাপ্তাহিক সঞ্চয়ের মাধ্যমে ( ৫টাকা, ১০টাকা বা তারচেও কম) একটু একটু করে গড়ে ওঠে, সেটার ব্যালেন্স ১০০ টাকা পেরোলেই কেবল ওখান থেকে ট্রান্সফারের মাধ্যমে এই শেয়ার কেনা হয়। তাও গ্রুপের সবার ক্ষেত্রে আলাদা আলাদাভাবে তাদের সঞ্চয়ের মিনিমাম ব্যালেন্স ১০০টাকা পেরোলে গ্রুপভিত্তিক শেয়ার কেনা হয় সদস্যের সম্মতিতে। কেননা সেজন্যে তাদেরকে প্রয়োজনীয় শেয়ার ফরম পূরণ করতে হয় গ্রুপের অন্যান্যদের সাক্ষিসহ।
কিন্তু ঋণপ্রক্রিয়াটা চলমান। অতএব ঋণ থেকে কেটে নেয়ার তথ্যটা সম্পূর্ণ ধারণাপ্রসূত। প্রকৃত বাস্তবতা তা নয়।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
এখানে হিসাবটা ব্যাখ্যা করেছি।
বাঙ্গালী দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বোঝে না...
আমি আমার আপন ছোট ভাই কোনো অন্যায় করেছে জানলে তাকে শাস্তি দেবার আগে সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করে থাকি যেনো আসলেই সে নির্দোষ থাকে ..যেনো তাকে আমার শাস্তি দিতে না হয়...কারণ সে আমারি ভাই...
নোবেল বিজয়ী ড. ইউনুস আমাদের দেশেরই সন্তান...তিনি অনেক বড় সম্মান এনে দিয়েছেন আমাদের জন্য...আমি মনে প্রাণে চাই উনি নির্দোষ প্রমাণিত হোক....
কিন্তু দুখের বিষয় কিছু কিছু মানুষ তাকে দোষী করতেই যেনো বেশি উত্সাহী....আমি জানিনা তাদের লাভ টা কোথায়...তবে এতে দেশের জন্য অবশ্যই ভালো কিছু বয়ে আনবে না...আমি বলছিনা যে ..অন্যায় করলে তাকে শাস্তি দেয়া যাবে না...কিন্তু দেশের কথা বিবেচনা করে আমাদের আরো নিবির ভাবে পর্যবেক্ষন করে যথেস্ট প্রমান পাবার পরি শুধু মাত্র তার বিষয়ে মন্তব্য করা উচিত.....
রণদা, এই স্টেটমেন্টে মনে হয় সমস্যা আছে।
ঋণগ্রহীতা তো সারা বছরের জন্য ১০০০ টাকা হাতে রাখতে পারছে না, সাপ্তাহিক কিস্তির মাধ্যমে তার প্রকৃত ঋণের পরিমাণ কমছে প্রতি সপ্তাহেই ২০ টাকা করে। অর্থাৎ, প্রথম সপ্তাহে ঋণ ১০০০ টাকা, ২য় সপ্তাহে ৯৮০, তৃতীয় সপ্তাহে ৯৬০ এভাবে ৫০তম সপ্তাহে ২০ টাকা। সারা বছর ১০০০ টাকা হাতে রেখে বছর শেষে ১০০ টাকা সুদ দিলে তখন বলা যেতো সুদের রেট (ফ্ল্যাট হোক আর যে নামেই ডাকা হোক) ১০%।
আরো সহজ করে বলি। ধরি, আমি ১০০০ টাকা নিয়ে একটা মুরগির খামার করছি। প্রথম সপ্তাহে ২০ টাকা দরে ৫০ টা মুরগির বাচ্চা কিনলাম। সামহাউ ৫০ টা মুরগির বাচ্চা শুরু থেকেই ডিম দিতে শুরু করলো; ডিম বিক্রি করে খরচাপাতি বাদ দিয়ে লাভ থাকলো 3.80 টাকা। সপ্তাহান্তে গ্রামীণকে আমার দিতে হবে ২৩ টাকা ৮০ পয়সা; অর্থাৎ ওই লাভ প্লাস ১টা মুরগির বাচ্চা (সমতুল্য টাকা)। তার মানে সেকেন্ড উইকে আমার মুরগির বাচ্চা থাকবে ৪৯টা (৯৮০ টাকা), এভাবে ৫০ তম সপ্তায় গিয়ে মুরগির বাচ্চা থাকবে ১ টা, যা সপ্তাহ শেষে কিস্তি শোধে ব্যয় করতে হবে। এর বিপরীতে ৫০ টা মুরগি সারা বছর হাতে থাকলে এবং বছর শেষে ওই ৫০ টা মুরগির বাচ্চা প্লাস একই পরিমাণ (১০০) টাকা দিতে হলে আমার জন্য কাজটা অনেক বেশি প্রোডাক্টিভ (সারা বছরের জন্যই ৫০ টা মুরগির ডিম) হতো।
[এখানে আরেকটা বাস্তবসম্মত প্রশ্ন আসবে, তাহলো, ঋণ নিয়ে সেটাকে উৎপাদনে রূপান্তরিত করার ন্যূনতম সময় কতো? আমি যদি ঋণ থেকে লাভ করার আগেই সুদ পরিশোধ শুরু করতে হয়, তাহলে তো মূল ঋণ থেকেই ওই ৩ টাকা ৮০ পয়সাও যেতে থাকবে। সেক্ষেত্রে উৎপাদন শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত এফেক্টিভ ঋণের পরিমাণ আরো অনেক কম হবে। এ পোস্টের হিসাবের ক্ষেত্রে প্রশ্নটা ঐচ্ছিক।]
এই সূত্রের প্রয়োগে
এই হিসাবটাও ঠিক মিলাতে পারছি না। শেষ ব্যালেন্স ৫০০ হবে কেন? শেষ ব্যালেন্স তো ০ হওয়ার কথা। কারণ, পুরা টাকাই পরিশোধ করে দেয়া হচ্ছে। (অন্য হিসাবটায়ও ২০ এর পরিবর্তে ০ হবে।)
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
বলাই দা, স্টেটমেন্টে আমি যা বললাম ওটা কিন্তু গ্রামীণের নয়, আমার বক্তব্য। গ্রামীণের বক্তব্য হচ্ছে ডিক্লাইনিং রেটে ২০%। কারণ পর্যায়ক্রমে আদায়যোগ্য ঋণ কমতে থাকবে এবং যত টাকা যতদিন ব্যবহার হবে তত টাকার তত দিনের সুদ হিসাব করা হয় এই পদ্ধতিতে।
আর ফ্ল্যাট রেট ১০% বলতে গিয়ে আমি সাদা চোখে কথাটা ব্যবহার করেছি। বস্তুত ফ্ল্যাটরেটে হিসাবের মধ্যেই যত গ্যাঞ্জাম। আপনি যে বললেন ১০০০ টাকার সারা বছরের সুদ, তা যেমন সত্যি, তেমনি বছরের মাঝামাঝি বা যেকোন সময় ঋণ একসাথে শোধ করলেও একই সুদ, কিংবা ক্রমান্বয়ে কিস্তিতে কিস্তিতে পরিশোধ করলেও সেই একই সুদ। কারণ অর্থনীতির সূত্র বুঝতে যদি ভুল না করি, তাহলে ফ্ল্যাট রেটের মানে দাঁড়াচ্ছে মূলঋণের উপর সুদধার্য। এখানে সময় বা মধ্যবর্তী ঋণ পরিশোধ গৌন।
আর সপ্তাহান্তে গ্রামীণকে সুদবাবদ ৩.৮০ টাকা দেয়ার যে কথাটা বললেন, বাস্তবে কিন্তু তা নয়। এক বছরের সম্ভাব্য সুদ ১০০টাকাকে সমান কিস্তিতে ভাগকরে দেয়া হয়। ফলে সারাবছর সমান পরিমাণের কিস্তি দিতে হয়। এব্যাপারে উপরে সাফি'র মন্তব্যের জবাবে আরেকটু বিস্তারিত বলেছি (ওখানে একটু চোখ বোলালে আরেকটু পরিষ্কার করতে পারবো হয়তো)। এখানে একটা বিষয়, যদি প্রতি সপ্তাহের সুদ চার্জ করে সেই পরিমাণ টাকার কিস্তি আনতে হয় তাহলে তো গোটা সিস্টেম এলোমেলো পাকিয়ে যাবে। একেক সপ্তাহে একেক পরিমাণ টাকার কিস্তি আনার চিন্তা করাটা হবে ভয়ঙ্কর হটকারি সিদ্ধান্ত ! কোন আর্থিক শৃঙ্খলাই থাকবে না।
আপনার ঐচ্ছিক প্রশ্নটা মানবিক যুক্তিসঙ্গত হলেও প্রায়োগিক সিস্টেমের শৃঙ্খলার জন্যে মনে হয় এটা গ্রহণযোগ্য হয় না। কেননা কে কখন তা থেকে আয় শুরু করবে সেটা বিবেচনা করতে গেলে সিস্টেমের মধ্যে কিস্তি শুরুর সাবলীলতা থাকবে না। এতে আর্থিক লেনদেনের সুষ্ঠু মনিটরিংও কার্যকর থাকতে পারবে না। আর্থিক অনিয়মের কিছু লিকেজ তৈরি হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে এতে। তারপরও বিষয়টা বিবেচনা করে যদি এক সপ্তাহের বদলে এক মাস করা যেতো তাহলে সুদের পরিমাণ কিন্তু বেড়ে যাবে। তথাপি লিকেজ হবার সম্ভাবনাটা কিন্তু থেকেই যাবে।
আর সূত্রের প্রয়োগে বছরের মাঝামাঝি সময়ে শেষ ব্যালেন্স ৫০০ ই হবে, ০ হবে না। ব্যাংকিং নিয়মে পরিশোধের দিনকে সুদ গণনায় আনা হয় না। তার আগের দিনের ব্যালেন্সকে শেষ ব্যালেন্স হিসেবে গণ্য করা হয়। আপনি খেয়াল করেছেন কিনা, আমি গোটা বছরের সুদ হিসাবের যে গড় পদ্ধতি দেখিয়েছি সেখানেও কিন্তু শেষ ব্যালেন্স ২০ দেখিয়েছি, ০ দেখাইনি। এবং দিন সংখ্যার হিসাবেও সুদ চার্জের দিনকে কখনো গুণায় ধরা হয় না, আগের দিনটাই ক্যালকুলেশনে আসে।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
১০% এর কথাটা আপনার একার নয়, গ্রামীণের সাইটেও একই মুলা দেখানো হয়েছে। এই সাদা চোখের ভিতরে বিরাট শুভঙ্করের ফাঁকি লুকানো। ফ্ল্যাটরেট হিসাব করতে হলে ঋণেরও গড় ধরতে হবে। সেক্ষেত্রে ইফেক্টিভ ঋণ হয় ৫০০ টাকা, ১০০০ টাকা নয়। এক বছরের সুদকে সমান ভাগ করে দিলেও এক্ষেত্রে ইফেক্টিভ ঋণের পরিমাণ পালটায় না।
আমার ঐচ্ছিক প্রশ্নটা ক্ষুদ্রঋণকে দারিদ্র দূরকরনের নিয়ামক হতে গেলে খুবই প্রয়োজন।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
গ্রামীণের ১০% ফ্ল্যাট রেট বলাটা বোধয় কথার কথা। মূলত গ্রামীণ সর্বোচ্চ ২০% ডিক্লাইনিং রেটেই সুদ হিসাব করে থাকে। এটাই বাস্তব।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
রণদা, আমি এই কথার কথাকে গ্রামীণের স্ট্যান্টবাজি এবং মিথ্যাচার হিসেবে দেখছি। আপনি এটা নিয়ে এতো হিসাব নিকাশ করার পরেও আপনার পোস্টে কিন্তু এটা যে ভাওতাবাজি, সে কথাটা আসে নি, সম্ভবত আপনার চোখ এড়িয়ে গেছে। আপনার হিসাব ফলো করতে গিয়ে আমার চোখে পড়লো। গ্রামীণের সুদের হার নিয়ে আমি আগে কখনো মাথা ঘামাইনি। কিন্তু যারা ঋণ নিচ্ছে, তাদের অবস্থাটা চিন্তা করে দেখেন। ১০% এর মুলা ঝুলানো তো স্রেফ প্রতারণা।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
আরেকটা জিনিস, 'ডিক্লাইনিং রেট' কথাটাও ভুল। সুদের হার সারা বছর ধরে একই থাকছে, রেট কমছে না, যা কমছে তাহলো ঋণ, যেটা ঋণগ্রহীতার মূলধন। তাকে প্রকৃতপক্ষে (গড় হিসাব করলে) ৫০০ টাকা ঋণ দিয়েই ১০০০ টাকা ঋণ দেয়ার ক্রেডিট নেয়া হচ্ছে। ডিক্লাইনিং রেটের এই তত্ত্ব শেষবচারে ঋণগ্রহীতার বিপক্ষে যায়। কারণ, উৎপাদনশীল খাতের অনেক খরচই পার ইউনিটের ওপর তেমন নির্ভর করে না, সেক্ষেত্রে যতো বেশি ঋণ পাওয়া যায়, ঋণগ্রহীতার জন্য ততো লাভ (প্রোডাকশন স্যাচুরেশনে পৌঁছা পর্যন্ত)।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
ধন্যবাদ বলাই দা। ডিক্লাইনিং রেট কথাটা মনে হয় আমিই ভুল করে বলছি, সংশ্লিষ্ট বিষয়ের লোক না হলে যা হয়। তা হবে হয়তো ডিক্লাইনিং প্রসেস। বাংলায় যাকে বলে সুদ নির্ণয়ের ক্রমহ্রাসমান পদ্ধতি। সুদের রেট তো পরিবর্তিত হওয়ার না। সাধারণ নিয়মে পরিবর্তিত হবে আদায়যোগ্য ঋণের পরিমাণই। ক্রমাগত কিস্তিতে ঋণ পরিশোধের সাথে সাথে যা কমতে থাকে। সুদ নির্ণয়ে এই ক্রমহ্রাসমান ধারাটাকে প্রাধান্য দিয়ে যখন যা ঋণ থাকে অর্থাৎ যে পরিমাণ ঋণ যতদিন ব্যবহার করা হয় সে পরিমাণ ঋণের ততদিনের সুদ নির্ণয় করার পদ্ধতিই ক্রমহ্রাসমান পদ্ধতি। এটাই অর্থনীতি বা ব্যাংকিং জগতে জগতজোড়া সৎ ও স্বীকৃত পদ্ধতি। এখানে গ্রামীণ সুদ হিসাবে কোন প্রতারণা করছে না বলেই মনে হয়। তাইলে পৃথিবীব্যাপী কথিত সকল সৎ ও স্বীকৃত ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানই সুদ হিসাবের ক্ষেত্রে প্রতারক হয়ে যায়। এই নীতিতে আমাদের সকল ব্যাংক এমন কি বাংলাদেশ ব্যাংক কিংবা অর্থনীতির জগতটাকেই প্রতারক বলতে হবে!
মূলত ফ্ল্যাট রেটের হিসাবের মধ্যেই যত গণ্ডগোল। ডিক্লাইনিং প্রসেসে নয়। অর্থনীতির তত্ত্বে অন্য কোন স্বীকৃত সৎ পদ্ধতি থাকলে তা আমার জানা নেই। কেউ জানালে উপকৃত হই। তাতে প্রচলিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বহমান ব্যবস্থাকে নতুন করে সাজানোর আন্দোলনে সামিল হওয়া যাবে। তার আগ পর্যন্ত মিথ্যাচার বলার সুযোগ নাই মনে হয়।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
আপনার এই মন্তব্য অর্থনীতি না জানা বিনয়ের সাথে যায় না। এই হিসাবের ফাঁকিটা তো আমরা দেখলামই। এই ফাঁকিটাই অর্থনীতি বা ব্যাঙ্কিংয়ের ক্ষেত্রে গতজোড়া 'সৎ' ও স্বীকৃত পদ্ধতি - এটা কিভাবে নিশ্চিত হলেন বুঝলাম না। অন্ততপক্ষে পদ্ধতির অসততা যেখানে দিবালোকের মতো পরিষ্কার, সেখানে এটাকে এই সততার সার্টিফিকেট কিভাবে দেওয়া যায়?
গ্রামীণের ওয়েবসাইটের এই বক্তব্য নির্ভেজাল মিথ্যাচার। যা মিথ্যা, তা মিথ্যাই। ৫০০ টাকা (যেটাকে ১০০০ টাকা বলা হয়েছে) ঋণের সুদ ১০০ টাকা হলে কোনো রেটেই ১০% সুদ হয় না। প্রচলিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বহমান ব্যবস্থার আড়ালও এক্ষেত্রে কোনো কাজে আসবে না।
প্রচলিত জিনিসটাই আপেক্ষিক, দেশ, কাল, অবস্থা ও ব্যাঙ্কভেদে এটা পরিবর্তিত হয়। ক্ষুদ্রঋণ সম্পর্কে স্পেসিফিক পড়াশোনা না থাকলেও দেশে অন্তত ৩টা ব্যাঙ্ক এবং দেশের বাইরে ৪ টা ব্যাঙ্কের কাস্টোমার হওয়ায় জানি, প্রচলিত ব্যবস্থার রূপ কতোটা পরিবর্তনশীল। আমার এক ব্যাঙ্ক থেকে প্রায় ১২% ইন্টারেস্ট রেটে জমাতিরিক্ত (ডিসপোক্রেডিট) টাকা তোলা যায়। একই ব্যাঙ্ক থেকে এরচেয়ে কম রেটে 'লোন' নেয়া যায়। আবার অন্য একটা ব্যাঙ্ক ডিসপোক্রেডিট দিতেই রাজি না।
এর বাইরে, ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিং, ক্রেডিট কার্ড - এসবের ক্ষেত্রেও এক এক ব্যাঙ্কে নিয়ম এক এক রকম এবং তা ব্যক্তিভেদেও ভিন্ন হয়।
বাংলাদেশের মাইক্রোক্রেডিটের বিজনেস করা ব্যাঙ্ক, এনজিও এদের ক্ষেত্রেও সুদের হার, নিয়মনীতি এগুলো এক না। তত্ত্বের বাস্তবায়ন একটা ভ্যারিয়েবল জিনিস। এজন্য বাস্তবায়নের ওপর ভিত্তি করেই সত্য-মিথ্যা নির্ণয় করা সম্ভব। ৫০০ টাকার সুদ ১০০ টাকা হলে সেটা ২০%, সেটাকে ১০% বলে বিজ্ঞাপন দেয়া খুব ফালতু ধরনের মিথ্যাচার। এটা শুধু মাত্র কথার কথা না, এর ওপর নির্ভর করেই গ্রাহকরা ঋণ নেয়।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
আমিও আগে জানতাম যে বাংলাদেশের মাইক্রোক্রেডিট সংস্থাগুলো তাদের ফ্ল্যাট রেট (আর ডিক্লাইনিং ব্যালান্স রেট) উল্লেৃখ করে। আপনার মন্তব্যের পর একটু খুঁজে দেখলাম যে এটা কি "ফালতু ধরনের মিথ্যাচার" বা "শুধু গ্রামীণের" কিনা।
ফ্ল্যাট রেট জিনিসটা [url=http://en.wikipedia.org/wiki/Flat_rate_(finance)]উন্নয়নশীল বিশ্বের অনেক জায়গাতেই[/url] আছে, তবে উন্নত বিশ্বে এটা এখন ব্যবহৃত হয় না, কারণ আসল রেট টা প্রায় দ্বিগুণ। কিছু কিছু সুবিধার কারণে গরীব জন গোষ্ঠীর মধ্যে এটা ব্যবহৃত হয়।
"ইনফর্মাল ব্যাংকিং" এর যুগে এটার আবির্ভাব এবং এখন এটার ব্যাবহারকে অনেকেই ঠিক মনে করেননা, যৌক্তিক কারণেই।
তবে গ্রামীণ যদি সব জায়গায় তাদের ডিক্লাইনিং রেটও উল্লেখ করে, আর সাথে ফ্ল্যাট রেটও (হতে পারে অন্যান্য ফ্ল্যাট রেটের সাথে তুলনার জন্য) তাহলে তাতে কোন সমস্যা দেখিনা।
এটা কেন সমস্যা আপনার মন্তব্যেই আছে। 'আসল' রেট দ্বিগুণ হওয়ায় ফ্ল্যাট রেটের ওই হিসাব প্রকৃত সুদ নির্দেশ করে না। গরীব জনগোষ্ঠী বা ক্ষুদ্রঋণের গ্রহীতারা অধিকাংশই অশিক্ষিত বা কম শিক্ষিত হওয়ায় তাদেরকে 'আসল' রেটের অর্ধেক বলায় সুবিধাটা কে পায়, বুঝতেই পারছেন। বেশি শিক্ষিত লোকজনই দেখেন এই পোস্টে বুড়া আঙ্গুল উচাচ্ছে, ওই হিসাবের অযৌক্তিকতা অনেকেই ধরতে পারেন নাই। আর ঋণগ্রহীতাদের কত জন এই ডিক্লাইনিং রেট আর ফ্ল্যাটরেটের সংজ্ঞা বুঝেশুনে ঋণ নেবে, এটা ভেবে দেখবেন।
যে কাজের উদ্দেশ্যই হচ্ছে দারিদ্র দূরীকরণ, সে কাজের শুরুতেই দরিদ্রদেরকে এই ভুল সুদের হার শুনানো কাজটা কোনোমতেই মানায় না। উন্নয়নশীল বিশ্বে ব্যবহৃত হয়, উন্নত দেশে হয় না - কেন হয় না, এর উত্তর খুঁজলেই পাওয়া যাবে এটা ঠকবাজি।
উইকি লিংকের জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
গ্রামীণের মাঠপর্যায়ের ব্যবহারিক কোন কাগজপত্রে ফ্ল্যাটরেটের উল্লেখ দেখা যায় নি। যা আছে তা সর্বোচ্চ ২০% এর কথাই। তাদের ঋণ গ্রহীতা সদস্যরাও তা-ই জানেন।
ফ্ল্যাটরেটের কথাটা সম্ভবত আমরা যারা শহুরে বুদ্ধিজীবী নাগরিক তাদের মাথা আওলানোর জন্যেই বলা হয়তো। হা হা হা !
ধন্যবাদ বলাই দা।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
আপনি নিজেই তো লিখলেন,
এখন বলছেন,
বাস্তবতার ব্যাপারে তো প্যাঁচ লেগে গেলো। আসলে কোনটা বাস্তব?
অর্থনীতি বা সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ছাত্র না হওয়ায় বিষয়ভিত্তিক টার্মগুলো যথাযথ ব্যবহার করতে না-পারার সীমাবদ্ধতা আমি বরাবরই স্বীকার করে নেই। তাতে প্রকৃত তথ্য পাল্টায় না নিশ্চয়ই। আপনিও হয়তো বুঝেছেন যে আমি বলতে চেয়েছি গ্রামীণ তার ঋণের উপর সর্বোচ্চ ২০% রেটে সুদচার্জ করে ডিক্লাইনিং প্রসেস বা ক্রমহ্রাসমান পদ্ধতিতে। শব্দ ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা থাকলেও হিসাব গণনাতেই তা স্পষ্ট করার চেষ্টা করেছি।
মূল পোস্টে কথাটা এডিট করার সুযোগ থাকলেও যেহেতু এ নিয়ে যথেষ্ট মন্তব্য প্রতিমন্তব্য চলে এসেছে তাই ওখানে আর পরিবর্তন করা সংগত হবে না মনে করি।
বাস্তবতা তো আর পাল্টাচ্ছে না। তাই বাস্তবতার নিরিখে আলোচনা চলতে থাকুক।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
শ্রদ্ধা, আপনার এবং আপনার লেখাটির প্রতি। ফেসবুক, ব্লগ যত জায়গায় সম্ভব শেয়ার করেছি।
কিছু মানুষ আছেন, যারা আপনার এইসব হিসেব দেখার পরেও গালি দিবে গ্রামীণ ব্যাঙ্ককে। কাদবেন। চিল্লাবেন। শান্ত হবেন না। পয়েন্ট করে, কোট করে আপনার লেখায় ছিদ্র খুজবেন। তারপর জবাব্দিহিতা চাইবেন। আমাদের দেশে কিছু মানুষকে সাফল্যের চূড়োয় উঠলে দেখলে অনেকের চুল্কায়। তাইতো মূসা ইব্রাহিম, ড. ইউনূস স্যাররা বিশ্ব জয় করে এলেও তাদের চুল্কানি থামেনা, বাড়ে।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে। তবে মন্তব্যের ভাষাটা বোধয় একটু কড়া হয়ে গেলো ভাই !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
এই শ্রেণীর লোকেরা আছে দেখেই বাটপারি করা এখন বাংলাদেশে কঠিন কাজ। আগে সহজ ছিলো কারণ তখন ব্লগ ছিলো না। সংবাদপত্র আর সংবাদপত্রে কামলা খাটা মেট্রিক পাশ লোকজন বাটপারদের জাতীয় হিরো বানিয়ে দিতে পারতো। কিন্তু আফসোস, কালে কালে বাটপারি কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
মাসের পর মাস, নেভারেস্ট লিখলেন, ব্লগ ফোরামে একটা আন্দোলন গড়ে তুল্লেন। যেন আপনার সার্টিফিকেট না নেয়া পর্যন্ত প্রমাণ হবেনা, মূসা এভারেস্ট জয় করেছে। পরে নিজে আবার ভুল স্বীকার করেছিলেন, তবে তাও হুমকি দিয়ে। বলেছিলেন, নেভারেস্ট বন্ধ হবেনা। যেই এভারেস্ট জয়ের দাবী করবে তাকে প্রমাণ দিয়ে দাবী করতে হবে। এখন বাঙ্গালীর কর্তব্য হয়ে গেলো আর কি, আপনার কাছে এসে সার্টিফিকেট নেয়া। এটা হলুদ সাংবাদিকতার মত একটা ব্যাপারই।
ভাইয়া, আপনি ভাল লিখেন, অনেকটা সেলিব্রেটি হয়ে গেছেন ব্লগ লিখে, সেদিন আপনার একটা লেখায় পড়লাম, বলছিলেন ব্লগ লেখার উপর নোবেল থাকলে আপনি কয়েকটা এনে দেখিয়ে দিতেন। কিন্তু আপনার পাঠকগোষ্ঠী(যারা আপনার লেখা নিয়মিত পড়ে, এবং শেয়ার করে)- কিন্তু ভুল জানছে একটা জিনিষ। তারপর নানাখানে শেয়ার করছে। অনেক মানুষ ভুল জানছে। পরে যখন আপনি ভুল মেনে নিলেন, তখন তারা আর শেয়ার করছেনা। সুতরাং অনেক মানুষের কাছে ভুল্টাই ছড়িয়ে গেলো। (প্রসংগ নেভারেস্ট)
আপনি কি এই পোস্টটা পড়েছেন। সহজ একটা হিসেব, বুঝতে না পারার কথা নয়।
শোনেন ভাইয়া, বাটপারি কোনটা? ২০% ইন্টারেস্ট? সরকারের বিশেষায়িত ব্যাঙ্ক কিন্তু। বাটপারি বলে যেটা ছড়ান, সেটা মানুষের মুখে মুখে ঘুরে কোথায় গিয়ে থামে জানেন? সামহোয়ারে এক পোস্ট পড়েছিলাম,(লিঙ্ক দিতে পারছিনা, তবে এমন অনেকেই বলে। অবাস্তব কিছুনা) যেখানে লেখক বলেছেন, গ্রামীণের ইন্টারেস্ট এর হার ২০০%। বাকীরা এসে সমানে সেখানে গালী দিয়ে গেলো।
ঢালাওভাবে সংবাদপত্র নিয়ে যে মন্তব্য করলেন! অহংকার কখনোই ভালনা ভাইজান।
অফটপিকঃ আমরা বন্ধু মহলে আপনাকে নিয়ে একদিন সমালোচনা করছিলাম। তখন আমি বন্ধুদের বলছিলাম, (যারা সচলে লেখে এবং নিয়মিত শেয়ার করে) তোরা সচলে জবাব দেস না কেন ওনার এইসব আক্রমনের?
তারা বলেছিল, হিমু খুবই আক্রমনাত্বক। তাছাড়া সচলে আমরা কিছু বললে ছাপায় না।
আমি বলেছিলাম, তাহলে ওনার এইসব কমেডী(নেভারেস্ট, বিভিন্ন জায়গায় আক্রমন) নিয়ে অন্য কোথাও পোস্ট দে, নোট লেখ। তারা বলে, আরে সে ক্ষমতাবান। যেভাবে আক্রমন করে, হুমকি ধামকি দেয়!
আপনাকে দেখে আমার বলতে ইচ্ছা হলো, অল্প খ্যাতিও ভয়ঙ্কর!
সাফায়েত-০৫, বুয়েট।
বাঙালি যদি পেপারে ইয়ারদোস্তোদের ছাপানো রিপোর্ট পড়েই সব কিছু বিশ্বাস করে ফেলে, তাতেও আমার কোনো সমস্যা নাই। আমি কোনো কিছু নিয়ে সন্দেহ করলে সেটার ওপর লিখবোই। পছন্দ না হলে সারাদিন আলুপেপার পড়বেন, সমস্যা কই? আমার সার্টিফিকেট না নিয়ে আপনি পল্লব মোহাইমেনের সার্টিফিকেট নিয়ে ঘুরেন, বাধা তো দিচ্ছে না কেউ।
ভুল তো লিখিনি, যে মানুষ ভুল জানবে। মুসা এভারেস্টে চড়ার আগে চার চারটা পিক নিয়ে যে বিভ্রান্তিকর অসত্য তথ্য দিয়েছে, সেগুলো ছবি আর সাক্ষাৎকারসহ তুলে ধরেছি। মানুষের সেগুলো জানার অধিকার আছে, আমারও জানানোর অধিকার আছে।
আপনি নিজে কি এই পোস্টটা পড়েছেন? এই পোস্টে লেখক প্রমাণ করার চেষ্টা করছিলেন যে গ্রামীণ ১০% হারে সুদ দেয়, পরে যখন লোকজন মন্তব্যে চেপে ধরলেন তাঁকে, তিনিও স্বীকার করে নিলেন যে সুদের হার ২০% এর বেশি। পোস্ট আর মন্তব্য, দুটোই মন দিয়ে পড়ার অভ্যাস করুন, কাজে দিবে।
শোনেন ভাই, বাটপারি হচ্ছে একটা লোককে সে যা না, তা বানানোর চেষ্টা। সামহোয়ারইনে আপনি কী বালছাল পড়েছেন, সেটার দায় আমাকে নিতে হবে? সামহোয়ার ইনের গু-মুত নিয়ে আপনি সামহোয়ার ইনে আলাপ করেন গিয়ে, এইখানে কী?
ঢালাওভাবেই সংবাদপত্র নিয়ে মন্তব্য করলাম। আপনার পছন্দ হয় নাই? অহংকারের কিছু নাই এইখানে, উঠতে বসতে প্রত্যেকদিনই সংবাদপত্রের অসঙ্গতি লোকে ধরিয়ে দেয় ব্লগে আর ফেসবুকে। আপনার ফ্রেণ্ডলিস্টে সচেতন আর শিক্ষিত বন্ধু থাকলে, আর সচেতন মানুষদের ব্লগ ফলো করলে, আপনিও সেগুলো সম্পর্কে অবগত হবেন। সংবাদপত্রের টুকিটাকি ছাগলামি ধরিয়ে দেয়াতে অহঙ্কারের কিছু নাই। আপনার পছন্দ না হলে আপনি রাস্তা মাপবেন, কিংবা তাদের ছাগলামিকে প্রমোট করবেন, আমার কোনো আপত্তি নাই।
আপনি আপনার বন্ধু মহলকে সাথে নিয়ে আমাকে নিয়ে যেখানে খুশি, যা খুশি লিখতে থাকেন। লিখে ভয়ঙ্কর খ্যাতি লাভ করেন। আমার শুভকামনা রইল।
আর আপনার নাম সাফায়েত না, আপনি বুয়েটের ০৫ ব্যাচেরও না। নিশ্চিন্তে নিজের আসল নামে এসে কমেন্ট করবেন, সাধ্যমতো উত্তর দিবো।
"কালের কণ্ঠে এই সংবাদের কোনো প্রতিবাদ গ্রামীণ ব্যাঙ্ক করে থাকলে আমাকে লিঙ্ক দেখিয়ে যাবেন প্লিজ। আমি খুঁজে পাইনি। কালের কণ্ঠ যেহেতু জাতীয় দৈনিক, কোনো মিথ্যাচার তারা করে থাকলে গ্রামীণ ব্যাঙ্ক নিশ্চয়ই শক্ত প্রতিবাদ করে থাকবে। তাই না? এই রিপোর্টে যদি আপনার জানামতে কোনো ত্রুটি থাকে, সেটাও আমাকে ধরিয়ে দিতে পারেন।"
যেই নিউজগুলা আপনার পছন্দ হয়, সেগুলো নিয়ে আপনিও লম্ফ ঝম্ফ করেন। সত্য কি অসত্য তা নিয়ে মাথা ঘামান না। আলু পেপার মন্দ হইয়ে যায়, বালের কন্ঠ হয় রেফারেন্স? হায়রে কার্টুন!
আলুপেপারের এইরকম পূজারী তো আগে দেখি নাই! যেই নিউজ কোট করলাম, সেইটার সত্য কি অসত্য নিয়ে তো গ্রামীণ ব্যাঙ্করেও মাথা ঘামাইতে দেখলাম না। অসত্য হইলে তো তাদের গণসংযোগ শাখা থেকে প্রতিবাদ যাওয়ার কথা! নাকি গ্রামীণ ব্যাঙ্কও খালি আলুপেপার পড়ে? আর আলু কি দুনিয়ার তাবত জিনিসের জন্য রেফারেন্স? আলুতে চাকরি করেন দেইখা কি দুনিয়ার সব কিছুর উপর রেফারেন্সের তাল্লুক লইছেন? মাটিতে নামেন মিয়া, আর ইন্টারমিডিয়েটটা পাশ করেন!
ব্রাদার, আমি পাশ করে, ২ মাস বেকার থেকে মাত্রই ওয়াল্টনে চাকুরি পেলাম। শোনেন, আলুপেপারের প্রতি ভক্তি কই পেলেন?
আপনি বলছিলেন, পেপারগুলোতে ভুল ছাপায়। মেট্রিক পাশ করা লোকেরা যা লিখে তা নিয়ে আমরা নগন্য বাঙ্গালীরা সবাই লাফাতে থাকি। এই মন্তব্যটা কি শুধু আলুর জন্যে ছিল তাহলে? আমি বুঝিনি। আমি ভেবেছি, পুরো প্রিন্টিং মিডিয়া নিয়ে বলছিলেন। তাই প্রশ্ন করলাম, মেট্রিক পাশ করা লোকেদের নিউজ আবার রেফারেন্স দেন কেন?! সেগুলোত বানোয়াট এবং তা পড়ে আমার মত ক্ষুদ্র নগন্য বাঙ্গালীরাই লাফায় বলে জানি।
আর যদি বলেন, ঐ নিউজটা বাদে আপনার মন্তব্য তাহুলে তো ভায়া আমরা ছোটরাও সন্দেহ করতে পারি, আপনি কালের কন্ঠের লোক নাতো!?
ভাইডি, বারবার পরিচয় লুকাইয়া মিথ্যা কথা বলার তো দরকার নাই। আপনি নিজের নামেই তো মন্তব্য করতে পারেন। আপনার আসল পরিচয়ে তো আমার জানামতে কোনো অগৌরব নাই। নাকি আছে? নিজের নাম নিয়া এতই লজ্জিত আপনি?
শোনেন, আপনি যেইভাবে ক্ষুদ্রঋণের আলাপে হুজুরে পাক মুসা ইব্রাহীম এভারেস্টী রহমতুল্লাহে আলায়হির কান্দন শুরু করছেন, আপনার জ্বলুনি কোন জায়গায়, বুঝতে তো রকেট সায়েন্টিস্ট হওয়া লাগে না। আপনার হেড কের্দানেরা কলমের খোঁচায় লোকজনরে পাহাড়ে উঠায়, সাগর পার করায়, আর ভাবে দুনিয়ার বাকি লোক তাদের থিকাও মুরুক্ষু, কেউ কিচ্ছু বুঝে না। আর মেট্রিক পাশ লোকজনের নিউজ রেফারেন্স না দিয়ে উপায় কী, ওয়াল্টনের কার্টুনিস্টরা তো পেপারে লেখে না কিছু।
ক্যান, আমি কালুপেপারের লোক হইলে আপনার কি ত্যানা প্যাচাইতে সুবিধা হয়? কালের কণ্ঠের খোঁয়াড়ে না ঢুকলে আলুর সমালোচনা করা মাক্রুহ? আমারেও কি দুই মাস বেকার থাইকা ওয়াল্টনে ঢুকতে হবে এখন?
আপনি এক গালে মুসা আর আরেক গালে ইউনূসের চেহারা উল্কি মাইরা ঘুরলেও আমার কোনো আপত্তি নাই। আপনি কারে পূজা করবেন, সেইটা অ্যাবসলিউটলি আপনার চয়েস। কিন্তু যখন আরেকজনরে আইসা চার্জ করবেন, সে ক্যান দুই গালে দুই পীরের মার্কা ছাপ্পড় দিয়া ঘুরে না, তখন আপনি অন্যের চিন্তার স্বাধীনতায় হাত দিতেছেন। ঐটা বদভ্যাস। আপনার যদি মুসা আর ইউনূসের উপর ভক্তি ফাইটা পড়ে, আপনি তাদের নামে বাড়ির গ্যারেজে মাজার খোলেন, ব্লগে তাদের প্রশংসা কইরা পোস্ট দিয়া ফাটায় ফেলেন, কেউ তো আপনারে আটকাইতে যাইতেছে না। আমি কী লিখবো, সেইটা ডিকটেট করার আপনি কে? আর আমি তো নিজের পরিচয়ে নিজের লেখার দায়িত্ব নিয়া লেখি। আপনার আর আপনার হেড কের্দানদের কোনো একটার মধ্যেও তো সেই সাহস দেখলাম না। সামুব্লগে নিক খুইলা প্যানপ্যান করা আর গাইল পাড়া পর্যন্তই দৌড় আপনেগো। পর্দার আড়ালে রুস্তম সাজতে তো বিদ্যাবুদ্ধি কিছুই লাগে না, একটা কীবোর্ড হইলেই চলে, তাই না?
সচলায়তনে কথা বলতে চান, স্বাগতম, যুক্তি সাজান। ইউনূসের পূজা করতে চান, স্বাগতম, যুক্তি সাজাইয়া সুন্দর কইরা একটা পোস্ট লেখেন। আপনার যুক্তি খণ্ডন করার চেষ্টা করবো। না পারলে আপনার যুক্তি মেনে নিবো। বেনামে পর্দার আড়ালে বইসা চোখ গরম করতে আর লাদি ছড়াইতে চাইলে সামুতে যান। ঐখানে ঘাস পাবেন, মলত্যাগের সুবন্দোবস্তও পাবেন।
আপনি তথ্য আর বাস্তবতা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে পোস্টে যা বলেছেন, তার উল্টো কথা বলেছেন মন্তব্যে। বিভ্রান্ত আপনি, আমি নই। কোথায় গ্রামীণের ১০% সুদের কথা বলেছেন, তা আমি এক মন্তব্যে কোট করে দেখিয়ে দিয়েছি। দয়া করে আবার পড়ে নিন।
আমি মোটেও বিভ্রান্ত নই, এবং আমার পোস্টেও কোন বিভ্রান্তি নেই। ১০% আর ২০% এক কথা হয় নাকি ! এই পার্সেন্টিজের আগে-পিছে নিশ্চয়ই ভিন্নতা নির্দেশক কিছু শব্দ বা শব্দবন্ধ রয়েছে। মানুষ আর গরুকে কি এক করা যায় ? অন্তত এটুকু তো বলতে হবে যে মানুষ দু'পেয়ে প্রাণী আর গরু চারপেয়ে প্রাণী। আমি আশ্চর্য হয়ে গেছি যে আপনি কী নির্বিকারভাবে বিভ্রান্তিকর একটা মন্তব্য করে ফেললেন !
আমি ১০% এর সাথে ফ্ল্যাট রেট কথা আর ২০% এর সাথে ডিক্লাইনিং কথাটা উল্লেখ করেছি। ফ্ল্যাট আর ডিক্লাইনিং কি এক কথা !?! সংশ্লিষ্ট বিষয়ের অভিজ্ঞরা কী বলেন ?
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
রণদা, কথা পুনরাবৃত্তি নিশ্চয়ই আমাদের সবার জন্য বিরক্তিকর। আপনার পোস্টের মূলসুর নিয়ে আমার ইন্টারপ্রিটেশনের সাথে আপনি একমত না-ও হতে পারেন। কিন্তু আমার কাছে এই পোস্টের সারমর্ম মনে হয়েছে এটাই, গ্রামীণ যে প্রকৃতপক্ষে তুল্য ১০% রেটে সুদ আদায় করছে, সেটা হিসাব করে দেখানো। সেই হিসাবের ত্রুটি অচ্ছ্যুৎ বলাই আর জ্বিনের বাদশা চিহ্নিত করেছেন, ত্রুটিটি হচ্ছে, ঋণের টাকা সারা বছর ঋণীর আয়ত্বে থাকে না। আপনি নিজেও তার সাথে একমত হয়েছেন, তাই না? আপনি একটা হিসাব নিয়ে পোস্ট দিলেন, তারপর সে হিসাবে একটা ত্রুটি চিহ্নিত হলো, সেই ত্রুটিকে আপনিও অ্যাকনলেজ করলেন। যদি এই কথার সাথে একমত হন, তাহলে আমার মন্তব্য কেন বিভ্রান্তিকর, আমি বুঝতে অপারগ।
আপনি লিখেছেন,
এটা যে ঘটে না, সেটা বলাই আর জ্বিনের বাদশা হিসেব করেই তো দেখালেন। আপনিও তার সাথে একমত। তারপরও কেন বিভ্রান্তির দায় আমার ওপর দিচ্ছেন? সাদা চোখে গ্রামীণের সুদের হার ১০% হয়, সেটা যে বাস্তবতা নয়, তা তো হিসেব করেই দেখা গেলো!
হা হা হা ! যাক্ আমি আর বিতর্কে যাচ্ছি না। আপনি আমার যে উদ্ধৃতিটা ব্যবহার করেছেন সেখানেই বিভ্রান্তির উত্তরটা দেয়া আছে সুদের হারের সাথে ফ্ল্যাট রেট আর ডিক্লাইনিং বা ক্রমহ্রাসমান পদ্ধতির উল্লেখে।
বিরক্ত হওয়ার কারণ নেই। ভালো থাকবেন।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
আপনার এ মন্তব্যটা বিভ্রান্তিকর মনে হচ্ছে হিমু। পোস্ট দেয়ার পর মূল পোস্টে আমি কোন ধরনের সম্পাদনা করিনি। আশা করি আপনি আমাকে একটু বুঝিয়ে বলবেন যে কোথায় আমি প্রমাণ করতে চেয়েছি গ্রামীণ ব্যাংক ১০% হারে সুদ নেয় এবং পরে লোকজনের মন্তব্যের চাপে স্বীকার করতে বাধ্য হলাম যে এটা ২০% এর বেশি।
আমি এখানে তথ্য ও বাস্তবতা নিয়ে কথা বলতে এসেছি, বিতর্ক করতে নয়। বাস্তবতা থেকে সরে গিয়ে আপনার কাছ থেকে বিভ্রান্তি ছড়ানো কথা আমি আশা করি না।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
ভাই, মন্তব্য তো ছাপা হলো! কেমনে কী?
সচলদের বক্তব্য মডারেশনেও তো যায়না। সরাসরিই ছাপা হয়।
এটা ঠিক যে অনেকেই না বুঝে সমালোচনা (কিংবা ভক্তি) করে। তবে ইদানীং ব্লগে (সচলায়তনের কথাই বলছি) অনেকে আছেন তারা সবকিছু কষ্ঠিপাথরে যাচাই করে নিতে চান। সেক্ষেত্রে যারা বিতর্ক করতে চান তারা তাদের যুক্তি নিয়ে আসবেন, বিতর্ক করবেন। এটাকে পরশ্রীকাতরতা বললে ভুল হবে, কারণ সবাই আমাদের রাজনীতিবিদদের মতো নন।
না দাদা, এটা পরশ্রীকাতরতা। আমার আশা ছিলো, প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে 'শান্তিতে' নোবেল পাবো। ইউনুস এটা পেয়ে যাওয়ায় একটু সমস্যা হয়ে গেলো। ইউনুসের এই শ্রী দেখে আমি যারপরনাই কাতর, তাই ক্ষুদ্রঋণের ফ্ল্যাটরেট-বাটপাড়ি নিয়ে ব্লগে কথা বলি।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
আপনিও কি ঋণ দিয়ে দরিদ্রকে যাদুঘরে পাঠাতে চান? শান্তি আনতে চান?
পরিশ্রমী লেখা - মনযোগ দিয়ে পড়লাম। অনেক ধন্যবাদ। আমার নিজেরও ব্যাপারটা জানার খুব ইচ্ছে ছিল।
তবে বুঝতে পেরেছি বলা কঠিন... আমার মত সিঙ্গেল-ট্র্যাক লোকদের জন্য একটা ভেরি স্পেসিফিক বাস্তব উদাহরণ দিলে হিসাবটা পরিষ্কার বুঝতাম। যেমন কোন গ্রহীতাকে ১০০০ টাকা ঋণ ৫০ সপ্তাহের জন্য দিলে, এবং ক্লিন প্রথম সপ্তাহের শেষ থেকে প্রত্যেকটি সমান কিস্তি আদায় করলে প্রতি কিস্তির পরিমান গ্রামীণ ব্যাংকে কত? আপনার লেখা এবং আমার বুঝার ক্ষমতায় বুঝলাম প্রতি কিস্তির পরিমান ২২ টাকা হওয়া উচিত। তাহলে ইফেক্টিভ ইন্টারেস্ট রেট হয় ২১%-+।
যদি বেশি হয় তবে ইফেক্টিভ ইন্টারেস্ট রেট বেশি।
আপনার পর্যবেক্ষণ যথাযথ। ১০০০ টাকা ঋণ ৫০ সপ্তাহের জন্য দেয়া হলে ঋণ ও সুদের সমহারে কিস্তি বাবদ প্রতি সপ্তাহে (২০+২)= ২২ টাকাই হয়। এবং গ্রামীণের প্রচলিত পদ্ধতিটা এরকমই।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
রণদা, আপনার কিছু লেখার বড় ভক্ত হয়ে গেছি ইদানিং, বিশেষ করে মনুস্মৃতি আর আম্বেদকরকে নিয়ে লেখাটা সেই রকম। কিন্তু এই লেখাতে আমি বাস্তবতার অভাব দেখতে পাচ্ছি , বিশেষ করে ঋন পরিশোধের ব্যাপারে। খুব ভালো একটা কাজ হয় যদি কিছু ফিল্ড টেস্ট করা হয়। আপনি কাউকে ঋন নিতে বলেন গ্রামীণ ব্যাংক থেকে এর পরে যাচাই করুন। আমার নিজের মানুষেরা ঋন নিয়েছিলো, পল্লীফোন তুলেছিলো বলেই খুবই ভালো ধারনা আছে।
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। কিন্তু ভাই, লেখাটা তৈরির আগে আমি অবশ্যই বেশ কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেই নিয়েছিলাম। হতে পারে গোটা দেশের বাস্তব অবস্থা হুবহু এক নয়। কিন্তু আমার এখানে কোন মৌলিক তথ্যে কি কোন ভুল রয়েছে ? যদি থাকে অবশ্যই তা তুলে ধরবেন এটা আশা করছি। কেননা এটা আমার অভিজ্ঞতার সাথে মিলিয়ে নিতে হবে বৈ কি ! কারণ আমরা এখানে মিথ নয়, প্রকৃত বাস্তবতাটাই খুঁজছি। আশা করছি আমাকে সহায়তা করবেন।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
গ্রামীণ ব্যাংক কি এখনো এই আদি পদ্ধতিতে সুদ নেয়? গ্রামীণ II এর হিসেব অনুসারেই তো নেয়ার কথা।
গ্রামীণ II অনুসারে ঋণের ২.৫% সঞ্চয় হিসেবে গ্রামীণে জমা রাখা বাধ্যতামূলক। এই সঞ্চয়ের ওপর ঋণগ্রহীতা সুদ পাবেন ৮.৫% ফ্ল্যাট রেটে (দীপাল বড়ুয়ার বই আর ডেভিড রুডম্যানের তথ্য অনুসারে)। ১০০০ টাকা ঋণ নিলে ২৫ টাকা সেখানে জমা রেখে আসতে হবে। এভাবে কোন একবছর সেই সঞ্চয়ের পরিমাণ ১০০ টাকা অতিক্রম করলেই ১০০ টাকার শেয়ার কেনা ও বাধ্যতামূলক। মোট ক্যাশ ফ্লোতে এই হিসাবের প্রভাব থাকবে। তখন সেটা আপনার ধারণা অনুসারে "২২% এর কম" কে ছাড়িয়ে যাবে।
এই লিঙ্ক অনুসারে হিসাব কিছুটা পাল্টাচ্ছে-
“From the beginning of Grameen Bank’s operation, members have been required to maintain a savings account containing five percent of their loan disbursement amount in order to provide for their emergency needs,” Grameen said.
"This money is credited to the borrowers’ savings account, which is an interest bearing account and Grameen Bank has been giving 8.5 percent interest for the savings. The borrowers are enjoying the benefit of their savings at their convenience and are allowed to withdraw the entire savings without leaving any balance in their accounts. There is no question of not returning the money to the account holders," Grameen added.
অর্থাৎ ঋণের ৫% সঞ্চয় রাখা বাধ্যতামূলক। আর এই সঞ্চয়ের ওপর সুদ ফ্ল্যাট রেটে ৮.৫%;
গ্রামীণের এই কথায় একটু বিভ্রান্ত হচ্ছি। তাদের মতে ঋণের ৫% হারে জমা রাখা শুরু থেকেই ছিল। তাহলে সেটা আপনি হিসেব কষে দেখাননি কেন?
যতটুকু জানতে পেরেছি গ্রামীণ ব্যাংকের সিস্টেমে সম্ভবত ২০০৭ সালের পর থেকে এটার আর প্রচলন নেই। বর্তমানে সর্বশ্রেণীর লোকজন গ্রামীণে আমানত জমা রাখতে পারেন বলে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনায় এখন আর ফান্ড সংগ্রহের ওই পদ্ধতিটি বহাল নেই।
বর্তমানে প্রচলন না থাকলেও পূর্বের এই ৫% পরিমাণে ১০০০ টাকার জন্যে ৫০ টাকা জমা রাখার ফ্যাক্টরটিকে একটা ক্যাটেগরিতে এনে হিসাব করলে তখন চূড়ান্ত হিসাব কী হতো তাও দেখা যেতে পারে। অন্তত সিস্টেমের ক্রমাগত পরিবর্তনটাও বুঝা যাবে। এক্ষেত্রে এই ৫০ টাকার উপর ২০% হারে ঋণের সুদ বেশি দেয়া এবং ফ্ল্যাট রেটে ৮.৫০% হারে আমানতের সুদ পাওয়ার ব্যবধানটা সার্বিক ঋণের উপর কীভাবে ইফেক্ট করে তা হিসাব করলে মনে হয় আপনার তথ্যানুযায়ীই প্রায় ১% সুদ হারের ডিফার করতো।
তবে এটা নিশ্চিত যে গ্রামীণে বর্তমানে এটা নেই।
ধন্যবাদ শুভাশীষ দা।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
এর মানে দাঁড়াচ্ছে ঋণের বিপরীতে ৫% সঞ্চয় রাখার বাধ্যবাধকতা এখন নেই। তাহলে আমানতের পরিমাণ ১০০ টাকা অতিক্রম করলে শেয়ার কেনার বাধ্যবাধকতার কি অবস্থা? ফিডম্যান একটা বিস্তারিত হিসাব কষেছেন এই এক্সেল শীটে। এটা অনুসারে সুদের হার ১% ডিফার করে না। ভালোই ডিফার করে। সেটা গিয়ে দাঁড়ায় ২৭.১৯%;
আপনি যদি গ্রামীণের সাথে জড়িত থাকেন তবে স্যাম্পল হিসেবে কিস্তি শোধের কাগজপত্রের বেশকিছু স্ক্যান কপি আপ করতে পারেন। তাহলে হিসাব বুঝতে সুবিধা হয়। তখন এই আলোচনা-পর্যালোচনা থেকে গ্রামীণের সুদের হারের ব্যাপারে একটা স্থির সিদ্ধান্তে আসা যায়।
সঞ্চয়ী একাউন্ট থেকে গোটা জীবনে একবার মাত্র ১০০ টাকার শেয়ার কেনার সাথে যদি একজন সদস্যের বহুবারে নেয়া প্রচুর পরিমাণ ঋণের হিসাবের ইন্টারেস্টের ক্ষেত্রে ব্যাপক পার্থক্য সূচিত করে ফেলে, অর্থনীতির সেই হিসাবের সাথে আমি পরিচিত নই। আর সেই ১০০ টাকার শেয়ারের উপরও শেয়ার হোল্ডার সদস্যরা নাকি ইতোমধ্যে ১০০ টাকার উপরে ডিভিডেন্টও পেয়েছেন। কেজানে, এটা অভিজ্ঞ অর্থনীতিবিদরাই ভালো বলতে পারবেন।
আর আপনার মন্তব্যের নিচের প্যারাটা সম্ভবত আমার জন্যে বিব্রতকর হয়ে গেলো। গ্রামীণ ও মাইক্রোক্রেডিট নিয়ে আলোচনায় গ্রামীণের সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি আরোপিত হলে বলতেই হবে এই কর্ম আমার জন্যে নয়। আমি আমার মূল পোস্টেও বলেছি যে বিষয়টা সরেজমিন যাচাই করেই যে যার মতো সিদ্ধান্তে আসার জন্যে। আমি কেবল আমার কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম সবার সাথে অনুমানমূলক মিথের পেছনে না দৌড়ে প্রকৃত বাস্তবতায় দৃষ্টি নিবদ্ধ করানোর জন্যে। হলো কি হলো না সেটা সময়ই বলবে।
অনেক ধন্যবাদ শুভাশীষ দা।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
রণ'দা,
আমার মনে হয় হিসেবটা খুব একটা জটিল না। এক্সেল ফাংশান নিয়ে কিছুটা ধারণা থাকলেই বুঝে যাবেন। ব্যাপক পার্থক্য ১০০ টাকার শেয়ারের জন্য খুব একটা হচ্ছে না, হচ্ছে ঋণের বিপরীতে ৫% সঞ্চয়ের জন্য।
স্ক্যান করা যদি বিব্রতকর হয়, তবে থাক। দীর্ঘমেয়াদে ঋণগ্রহীতাদের দুই চারজনের ঋণ নেয়া, কিস্তি দেয়া, সঞ্চয়ী আমানতের হিসাবের সাথে রুডম্যানের হিসাবটা মিলিয়ে দেখতে পারেন। আশা করি হিসাব মিলে যাবে।
ধন্যবাদ।
খুব ভালো লিখেছেন। হিসাব ভেঙ্গে ভেঙ্গে দেখানোতে বুঝতে সহজ হয়েছে। সত্যি বলতে কি আমার গ্রামীণ ঋণ নিয়ে ধারণা খুব বেশি নাই। ১০০০ টাকার যেই হিসাব দিলেন, বুঝতে সাহায্য করলো অনেক। আরো কিছু প্রশ্ন মনে আসলো, সাধারণত মানুষেরা কত টাকা ঋণ নিয়ে থাকে? এই ১০০০ নিশ্চয়ই না। এতো কম টাকায় কি কোন ক্ষুদ্র ব্যবসা চালু করা সম্ভব হয়? একটা গরু বা ছাগল কিনতে কত লাগে আমার জানা নাই। প্রাণীটার খাবার চিকিৎসার জন্য নিশ্চয়ই একটা খরচ যায়। এইসব খরচ দিয়ে, সেই ইনভেস্টমেন্ট থেকে কি পরিমান মতো আয় আসে যেটা দিয়ে সাপ্তাহিক সুদ দিয়ে কিছু লাভ থাকবে? আবারো ধন্যবাদ জানাই। -রু
এইখানে একটা বিষয় আছে। সবাই শূণ্য টাকা নিয়া কাজ শুরু করে এইটা ভাবাটা কি ঠিক হইতাছে? ধরেন আপনে একটা গরু কিনবেন, দাম ৫০০০ টাকা, কিন্তু আপনার সঞ্চয় আছে ৩০০০ টাকা। তখন ঋণ নিবেন ২০০০ টাকা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাই হয়। এইখানে যারা গুগল মাইরা কমেন্ট করতাছেন, তারা জীবনেও সেটিস্ফাই হইবেন বইলা আমার মনে হয় না। তাই দয়া কইরা একটু মাঠে-ঘাটে যান, লোকজনের সাথে কথা-টথা বলেন, তাইলে হয়ত কিছু বুঝতে পারবেন।
ধন্যবাদ রু। আসলে হিসাবের সুবিধার্থে একক হিসেবে এই ১০০০ টাকাকে ঋণের পরিমাণ ধরে ক্যালকুলেশন করা হয়েছে। বাস্তবে এই পরিমাণ অনেক বেশি। একেবারে প্রথম দফার একজন সদস্য সামর্থভেদে ৫০০০ থেকে ১০০০০ টাকার সিলিংয়ে ঋণ নেন। আর পর্যাক্রমে বছর বছর তা বাড়তে থাকে এবং সন্তানের জন্য উচ্চশিক্ষা ঋণ, গৃহ নির্মান ঋণ এবং নতুন নতুন বিনিয়োগের জন্য বিশেষ বিনিয়োগ ঋণের মতো বিভিন্ন ঋণ সুবিধাও নিয়ে থাকেন। গ্রামীণের এই বিশেষ বিনিয়োগ ঋণ নাকি সর্বনিম্ন ২০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সক্ষমতার ভিত্তিতে লিমিটলেস পরিমাণে নেয়া যায়। জানামতে এই খাতে সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ টাকার ঋণও নাকি দেয়া হয়েছে। ২৫/৩০ বছরের সদস্যদের মধ্যে এর চেয়ে বেশি পরিমাণের ঋণও থাকতে পারে। তবে এতো বড় ঋণের সংখ্যা খুব কম। ৫০ হাজার থেকে ২ লক্ষ টাকার লিমিটের ঋণ অনেক রয়েছে বলে জানা যায়।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
চমৎকার একটা বিবরণের জন্য ধন্যবাদ রণ'দা। মোটামুটি ভালো একটা বিতর্ক জমেছে এই পোষ্টে। বিশেষ করে বলাইদার পয়েন্টটা ভাবার মতো। এই বিষয়টা আরেকটু খোলাসা হতো যদি একজন সত্যিকারের গ্রামীণ ঋনগ্রহীতার অভিজ্ঞতা যুক্ত করা যেত। সে কত টাকা পেল, আর কতোটাকা দিল, তার একটা উদাহরণ আনতে পারলে ষোকলা পূর্ন হতো। এখন তো আমরা কেবল তত্ত্বের ভিত্তিতে যুক্তি ছোড়াছুড়ি করছি। আসল যারা ঋনব্যবহারকারী, সেই আশি লাখের একজনের কাছ থেকে একটা ঋনের তথ্য বের করা কি কঠিন হবে? তাহলে দিনের আলোয় আরেকটু পরিষ্কার দেখতাম শুভংকরের কোন ফাঁক আছে কিনা। আমি ব্যক্তিগতভাবে আগে যেসব গ্রামীণ গ্রহীতার সাথে আলাপ করেছিলাম, গ্রামে গেলে তাদের কাছ থেকে চেষ্টা করবো কিছু পাওয়া যায় কিনা।
যে কোন ব্যাংকের ঋনপ্রদান পদ্ধতিতে কিছু ফাঁক থাকে। মার্কেটিং করার আগের আর পরের অবস্থা ভিন্ন হয়। গ্রামীণও সেই কাতারের ঋনদাতা কিনা জানা দরকার।
ক্রমহ্রাসমান পদ্ধতি নিয়ে যারা অজ্ঞতা প্রকাশ করছেন, তারা যে কোন ব্যাংকের কনজিউমার স্কীমগুলো দেখতে পারেন। যেমন একজন গাড়ী কেনার জন্য ১০ লাখ টাকা ঋন নিল। সেই ঋনগ্রহীতাকে একটা কিস্তির তালিকা দেয়া হয়, সাধারণত ৩৬ কিস্তি। সেই কিস্তির হিসেবটা কিভাবে আসে, সেটা জানলে গ্রামীণ কিস্তিটাও পরিষ্কার হবে।
গ্রামীণের উপর ঈমান আনার চেয়ে, গ্রামীণের ক্ষুদ্রঋন প্রদান পদ্ধতিটা খোলাসা করাই বেশী জরুরী। কারন এখানে দেশের অন্তত ১০% জনসংখ্যা যুক্ত আছে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
পরিশ্রমী লেখা, আলোচনাটাও খুবই আগ্রহদ্দীপক।
লেখার প্রেক্ষাপটের সাইডলাইনে একটা প্রশ্ন করতে চাই:
গ্রামীন ব্যাংক যে আয় করে তার কত অংশ ড. ইউনুস সাহেব পান? অভিযোগকারী সরকারপক্ষও বা কত পার্সেন্ট পান?
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
আপনার মন্তব্যটাও কৌতুল উদ্দীপক মনে হচ্ছে শামীম ভাই !
শেয়ারের হিসাবে তো দেখি গ্রামীণের সদস্যদের সাথে সরকারের মালিকানা শেয়ারের অনুপাত ৭৫ : ২৫। যদিও শুনি বাস্তবে নাকি সরকারের শেয়ারের মূল্যমান ৪ শতাংশেরও কম। সে যাক্, ব্যাংকিং বা অর্থনীতির বিধানে শেয়ারের মালিক না হয়ে ব্যাংকের একজন এমডি ব্যাংকের আয়ের কোন অংশ পান কিনা এটা আমার জানা নেই। কেউ জানলে দয়া করে জানাবেন নিশ্চয়ই।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
চিন্তায় ও কর্মে সততাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা বলে মনে করি।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
গ্রামীণের ওয়েবসাইটে আছে-
ঋণ যারা নিচ্ছে তারা সঞ্চয়ে আগ্রহী হচ্ছে আর সেটা গ্রামীণেই- আপাতদৃষ্টিতে ব্যাপারটা ভালো। কেউ ঋণচক্র থেকে বেরিয়ে ৮.৫% ফ্ল্যাট রেটে সুদ পেয়ে খুশি থাকলে সেটা ঠিকাছে। কিন্তু ঋণচক্রে ঢুকে থেকে (২২% বা ততোধিক হারে গ্রামীণে সুদ পরিশোধ করে) টাকা সঞ্চয় করে সেটার ওপর ৮.৫% ফ্ল্যাট রেটে সুদ পেলে গরীবগুর্বোগুলো ভীষণ ঠকে। এই ঠকে যাওয়ার ব্যাপারটা গ্রামীণ ব্যাঙ্ক থেকে কি বোঝানো হয়? নিরুৎসাহিত করার ব্যাপার কি আছে? নাকি উলটো আপনারাই মালিক হয়ে যাচ্ছেন বলে এই ধার নিয়ে সঞ্চয়ে উৎসাহিত করা হয়?
নিজেকে সৎ ও নির্মোহ রেখে এগুলোর অনুসিদ্ধান্তে আসা নিশ্চয়ই ব্যাপক আকারের মাঠ জরিপ দরকার। আশা করছি এসব নিয়ে গবেষণা করবেন কেউ।
তবে রাষ্ট্রযন্ত্রের শীর্ষ পর্যায় থেকে যখন অদ্ভুত ধরনের বিরূপ সমালোচনা শুনা যায় তখন একটা বিষয় আমার মাথায় আসে না, এদেশে নতুন বিমান বন্দর কিংবা পাতাল রেল চালু করার মতো বিশাল আকারের পরিকল্পনা যারা নিতে পারেন তাদের দরিদ্রপ্রেম কি পারে না গ্রামীণের চাইতেও উত্তম একটা ব্যাংক বানিয়ে তাঁদের বক্তব্যের সারবস্তুটাকে প্রমাণ করে দিতে ? দরিদ্রদের জন্য অধিকতর সহায়ক বিকল্প কিছু একটা তৈরি করে গ্রামীণকে বাতিল বলে পর্যবসিত করাটাই হতো জুতসই গ্রহণযোগ্য জবাব। ঋণ কেউ সখে নেয় না, প্রয়োজনেই নেয়। আর গরীবের জন্য রাষ্ট্রীয় কোন ব্যাংক নেই। অতএব, ভাত দেবার মুরোদ নাই কিল মারার গোসাইদের কাছে অসার বুলি ছাড়া দরিদ্র জনগোষ্ঠির আর কী পাওয়ার আছে ?
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
রণ'দা,
আপনার দ্বিতীয় প্যারার সাথে আমার চিন্তা সাংঘর্ষিক না।
আমার মন্তব্যের দ্বিতীয় প্যারার প্রশ্নগুলোর কিছুটা উত্তর দেয়া কি সম্ভব?
শুভাশীষ দা, ঋণ কর্মসূচি থেকে আমানত কার্যক্রমটাকে যদি একটু বিচ্ছিন্ন করে ভাবি, তাহলেই হয়তো আপনার মন্তব্যের দ্বিতীয় প্যারার প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে সহায়ক হবে।
এখানে ঋণ চলে ঋণের আঙ্গিকে, আর আমানত প্রক্রিয়া তার নিজস্ব গতিতে। যেমন একজন গ্রহীতা কিন্তু তাঁর অনুমোদিত ঋণের সবটুকুই কোন ধরনের কর্তন ছাড়া হাতে পাচ্ছেন। সোজা কথায় একজন যদি ১০ হাজার টাকা ঋণ প্রাপ্য হন, তিনি ১০ হাজার টাকা পুরোটাই হাতে নিয়ে চলে যাচ্ছেন। এখানে আমানত প্রক্রিয়া এসে কোনভাবেই নাক গলায় না।
গ্রামীণের সিস্টেমে আমানত সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি প্রক্রিয়া। তিনি ঋণ নেন বা না নেন তার সাথে আমানতের কোন সম্পর্ক অন্তত বর্তমান সিস্টেমে দেখা যায় না। তবে তাদেরকে আপদ-বিপদ মোকাবেলার জন্যে সঞ্চয়ী হতে উদ্বুদ্ধ করা হয়। ফলে দেখা যায় সদস্যরা ব্যাংকে তাঁর নামে খোলা ব্যক্তিগত সঞ্চয়ী হিসাব খুলে সেখানে ন্যুনতম ৫ টাকা থেকে যেকোন পরিমাণের আমানত যখন খুশি জমা করতে পারেন এবং যখন খুশি তা উত্তোলনও করতে পারেন আমানতের ন্যুনতম ১০০টাকা ব্যালেন্স রেখে। কেউ কেউ গ্রামীণ পেনশন স্কীম বা জিপিএস বা মেয়াদী আমানতও পরিচালনা করেন। এই জিপিএস হিসাব ছাড়া বাকি সুবিধাগুলো গ্রামীণের সদস্য ছাড়াও যেকোন অসদস্য নাগরিকের জন্যেই উন্মুক্ত।
এখানে উল্লেখ্য যে ৫টাকা সাপ্তাহিক সঞ্চয় জমার একটা বিষয় রয়েছে ঋণ থাক বা না থাক। গ্রুপের সাথে জড়িত থাকার জন্যে এটা একটা গ্রুপ-বাইন্ডিং হয়তো। তবে যে কোন সময় তা উত্তোলনেও বাধা নেই। এক্ষেত্রে ঋণ প্রক্রিয়া কোনভাবে বাধাগ্রস্ত হয় না। অতএব এই সঞ্চয়ী মনোভাবকে আমরা নিগেটিভ হিসেবে কি দেখতে পারি ?
আমি যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি সেখানে আমার প্রাপ্য মূল বেতনের ১০% প্রভিডেন্ট ফাণ্ড হিসেবে কর্তন করা হয়। ওখান থেকে আবার আমি আপদে বিপদে ধার বা উত্তোলন করতে পারি। যদি কর্তন করা না হতো, আদৌ কি তা সঞ্চয় হতো আমার ? অন্তত সর্বগ্রাসী আমার ক্ষেত্রে তা হবার কোন সম্ভাবনাই ছিলো না। এই আর কি ! আমি বিষয়টাকে এভাবেই দেখি। অন্য কারো দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন হতে পারে। এক্ষেত্রে কোনটা অধিকতর গ্রহণযোগ্য বলে আমরা মনে করি তা নিয়েও আলোচনা হতেই পারে। এভাবে যদি কোন আপগ্রেড সিস্টেমের নতুন একটা ধারণা বেরিয়ে আসে মন্দ কী !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
চমৎকার পোস্ট। নিজে হিসেব করে যা বুঝেছিলাম তাও যোগ করি।
স্পেসিফিকালি গ্রামীণের ক্ষেত্রে হিসেবটায় যা ঘটে তা দেখাই। শুধু হিসেবের সুবিধার জন্য বছরে ৫০ সপ্তাহ ধরে নিলাম।
ধরা যাক, একজন এক বছরের জন্য ১০০০০ টাকা ধার নিলো। তাহলে গ্রামীনের নিয়ম হলো, এই টাকার ওপর বছরে ১০% হারে ফ্লাটরেটে সুদ নেয়া হবে ১০০০ টাকা। অর্থাৎ, একবছর ধরে গ্রামীন ঋণগ্রহীতার নিকট থেকে মোট ১১০০০ টাকা গ্রহন করবে।
হিসেবের সুবিধার জন্য আমরা ধরলাম, বছরে ৫০ সপ্তাহে ৫০ টি কিস্তিতে এই টাকা গ্রহন করা হলো। গ্রামীনের নিয়ম হলো, প্রত্যেক কিস্তিতে সমান হারে, অর্থাৎ প্রতি কিস্তিতে (১১০০০/৫০) = ২২০ টাকা ঋনগ্রহীতা শোধ করবেন।
এখন আমরা দেখি, আসলে বাস্তবে ঋনগ্রহীতা কত পার্সেন্ট সূদে ঋণ শোধ করছেন? এই ব্যাপারটিকেই ইফেক্টিভ রেট বলছেন অনেকে। গ্রামীন ডিক্লাইনিং রেট বলছে।
এখানে দুটো ঝামেলা আছে।
১) প্রথমটি হলো, ঋনগ্রহীতা যদিও ১০০০০ টাকা ঋণ নিচ্ছেন, কিন্তু তিনি এই ঋণের আসলটুকু সারাবছর ধরে ব্যবহার করতে পারছেননা। প্রতি সপ্তাহে আসলে ২% মানে ২০০ টাকা তাঁকে ফেরত দিয়ে দিতে হচ্ছে। অর্থাৎ তিনি একবছর ধরে ১০০০০ টাকার ঋণ ভোগ করেছেন এটা বলা যাবেনা। তাঁর ভোগ করা ইফেক্টিভ আসলটা ১০০০০ টাকার চেয়ে কম।
২)দ্বিতীয় ঝামেলাটি হলো ঋনগ্রহীতা প্রতি সপ্তাহে ২০ টাকা করে বছর জুড়ে ১০০০টাকা সূদ দিয়েছেন। এতে খোলা চোখে তিনি একবছরে সূদ হিসেবে ১০০০ টাকা দিয়েছেন বললেও ভুল হবে। কারণ তাঁর দেয়া প্রথম সূদটি মানে ২০ টাকাটি গ্রামীনের কাছে ৪৯ সপ্তাহ ধরে জমা থাকছে, দ্বিতীয় সূদের ২০ টাকাটিও গ্রামীনের কাছে ৪৮ সপ্তাহ ধরে জমা থাকছে, .... এভাবে তাঁর শোধ করা প্রত্যেকটি (শেষটি বাদে) সূদ গ্রামীনের ফান্ডে কিছুটা সময় ধরে জমা থাকছে। অর্থাৎ ঐ পরিশোধ করা সূদ যদি তিনি সপ্তায় সপ্তায় গ্রামীনকে না দিয়ে তাঁর এ্যাকাউন্টে জমা রেখে বছর শেষে একবারে জমা দিতেন, তাহলে তিনি এ্যাকাউন্টে জমা রাখা ইন্টারেস্টটা বাঁচাতে পারতেন। অর্থাৎ, তাঁর দেয়া ইফেক্টিভ সূদটা ১০০০টাকার চেয়ে বেশী।
এখন আমরা দেখি, উপরের ইফেক্টিভ আসল (১) আর ইফেক্টিভ সূদ (২) আসলে কত?
ইফেক্টিভ আসল ব্যবহারের সিনারিওটা এমন হবে:
ঋনগ্রহীতা ৫০ সপ্তাহের মধ্যে শুধু প্রথম ১ সপ্তাহ ১০০০০ টাকা ব্যবহার করেছেন, দ্বিতীয় সপতায় ৯৮০০ টাকা ব্যবহার করেছেন, ......, শেষ সপ্তায় ২০০ টাকা ব্যবহার করেছেন।
এখান থেকে তাঁর ইফেক্টিভ বা কার্যকরী আসল হিসেব করতে পারি এভাবে,
(১০০০০ + ৯৮০০ + ৯৬০০ + .... ২০০) / ৫০ টাকা-বছর (১ টাকা-বছর = ১ বছর ধরে ১ টাকার ঋণ)
=২০০ x (৫০+৪৯+...+১) / ৫০ টাকা-বছর
=(২০০ x (৫০ x ৫১) / ২) / ৫০ টাকা-বছর
=৫১০০ টাকা-বছর
অর্থাৎ ঋণগ্রহীতা এক বছর ধরে কার্যকরী আসল ৫১০০ টাকার ঋণ নিয়েছেন বলা যায়।
এখন, আসি ইফেক্টিভ সূদের হিসেবে। এখানে সিনারিওটা হবে এমন,
ধরা যাক ঋণগ্রহীতা প্রতি সপ্তায় ২০ টাকা করে গ্রামীনকে সূদ না দিয়ে গ্রামীন ব্যাংকে নিজের এ্যাকাউন্টে রাখলেন, এবং বছর (৫০ সপ্তাহ শেষে) টাকাটা জমা দিলেন। তাহলে তিনি আসলে ১০০০ টাকার চেয়ে কত বেশী জমা দিলেন?
তাঁর জমার হিসেব হবে,
প্রথম ২০ টাকা ৪৯ সপ্তাহ ধরে জমা, ২য় ২০ টাকা ৪৮ সপ্তাহ ধরে জমা, .... , শেষ ২০ টাকা ০ সপ্তাহ ধরে জমা।
অর্থাৎ তানণর প্রাপ্য ইন্টারেস্ট হলো,
(২০ x ৪৯ + ২০ x ৪৮ + ২০ x ৪৭ + .... + ২০ x ১)/৫০ টাকার ওপর এক বছরের ইন্টারেস্ট
= ২০ x (৪৯ x ৫০/২) x ০.০৮৫ (গ্রামীনের দেয়া ইন্টারেস্টের হার ৮.৫%)
= ৪১টাকা ৬৫ পয়সা।
অর্থাৎ, আমাদের ঋণগ্রহীতা আসলে গ্রামীণকে কার্যকরী সূদ দিচ্ছেন ১০০০ + ৪১.৬৫ = ১০৪১.৬৫টাকা।
এখন কার্যকরী সূদের হার আমরা বের করতে পারি,
কার্যকরী সূদ / কার্যকরী আসল = ১০৪১.৬৫/৫১০০ = ২০.৪২%।
এটার সাথে ছুটিছাটার কারণে বছরজুড়ে ৫২ কিস্তিতে না নিয়ে ৪৬ কিস্তিতে টাকা নেয়া জাতীয় কিছু প্যারামিটারের জটিলতা হিসেবে আনলেও দেখা যাবে যে ২২% এর উপরে কার্যকরী সুদের হার ওঠেনা।
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
ধন্যবাদ জ্বিন ভাই, হিসাবটাকে অন্য ভঙ্গিতে বিশ্লেষণ করার জন্য। একটা সিস্টেম ততক্ষণই সারভাইভ করবে যতক্ষণ পর্যন্ত উভয়পক্ষের জন্যেই সিস্টেমটা সহায়ক থাকে। নইলে তা টিকতে পারে না। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জনের অজ্ঞাত সব হিসাব প্রক্রিয়ায় যখন অদ্ভুত অদ্ভুত ফলাফল দেখতে পেলাম তখনই কেন যেন সেসব বিজ্ঞ ব্যক্তিদের উপর এক ধরনের অনাস্থাবোধ তৈরি হতে থাকলো। সেটা যাচাইয়ের জন্যেই মূলত এই পোস্ট লেখা। এজন্যে গ্রাউন্ড ওয়ার্ক হিসেবে কিছু অভিজ্ঞতা নিতে হয়েছে বৈ কি। [রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক সোনালী ব্যাংক থেকে ডিপিএস হিসাবের বিপরীতে ১৮% ত্রৈমাসিক সুদ হারে (ওটা কি চক্রবৃদ্ধি ছিলো!) ঋণ নেয়ার আতঙ্কজনক অভিজ্ঞতাও রয়েছে আমার সেই ১৯৯৭ সালে, যা আমার ডিপিএসটাকেই গিলে ফেলছিলো প্রায় এবং হিসাবটাকে ওখানেই ক্লোজ করে আজও আমি ডিপিএসহীন।]
আর কেউ যদি অন্য কোন ভঙ্গিতে হিসাব করেন, তাও ওয়েলকাম। মোটকথা আমরা বিভিন্ন দিক থেকে যাচাই করে নিতে পারলে তবে এই সিস্টেমটার আরো উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যে অন্যান্য বিষয়গুলোর দিকে সঠিক ও স্বচ্ছভাবে দৃষ্টি দিতে পারবো বলে মনে হয়। তার আগে কাউকে দেবতা বা দানব বানানোর নিরর্থক চর্চা থেকে বিরত থাকতে না পারলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে কিছুতেই দায় এড়াতে পারবো বলে মনে হয় না। রাজনৈতিক চশমা পরে আমরা যে যেভাবেই দেখি না কেন, আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যে আমাদের সমকালীনদের মতোই একচোখা হবে তা ভাবাটা বোধ করি আমাদের জন্য অদূরদর্শিতাই হবে। নিশ্চয়ই আমরা সমকালীন আবেগের উর্ধ্বে নই, তবু মনে হয় আমরা বিষয়টা নিয়ে ভাবতে পারি।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
এখন আসি ক্ষুদ্র ঋণের হার বিষয়ক আরেকটি পর্যবেক্ষণে। ধরা যাক কার্যকরী সূদের হার গ্রামীন ২২% থেকে কমিয়ে ১৫% এ আনলো। মানে বর্তমান সূদের মোটামুটি ৩ ভাগের ২ভাগ তারা নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করলো। তাতেও দেখুন, ঋণগ্রহীতাকে সপ্তায় সপ্তায় দিতে হবে ২১৩.৬৫ টাকার মতো। সপ্তায় তার বাঁচবে ৬ থেকে সাড়ে ৬ টাকার মতো।
খুব সাধারণ চিন্তায়ও আমরা বুঝতে পারি যে, যে লোক সপ্তায় ২১৩ টাকা শোধ করতে পারে, তার জন্য ২২০ টাকা শোধ করা খুব বড় বোঝা না। এটাই ক্ষুদ্রঋণের সৌন্দর্য্য। আপনি অপারেটিং কস্টের জন্য বেশী সূদ নিচ্ছেন কিন্তু এমন সিস্টেমে যাতে ঋণগ্রহীতার গায়ে না লাগে। দরিদ্র ঋণগ্রহীতার জন্য এটা অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ।
সূতরাং, আমার মনে হয়না ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে যারা সাফল্য পাচ্ছেননা, তারা উচ্চসূদের হারের কারণে সেটা পাচ্ছেননা।
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
হ্যাঁ। সপ্তায় মাত্র ১ টাকা বেশি। একইভাবে সাধারণ চিন্তা প্রয়োগ করে বলা যায়, ২০৩ টাকার স্থানে মাত্র আরেক টাকা বাড়িয়ে দিয়ে দৈনিক ২০৪ টাকা শোধ দেয়াও গায়ে লাগবে না। যে ২০৩ টাকা দিতে পারে, সে ২০৪ টাকাও দিতে পারবে। জিনিসটা রাউন্ড ফিগার করলে ২০৫ টাকা করে প্রতিদিন শোধ দেয়াই সাধারণ চিন্তা সমর্থন করে।
এটাও ঠিকাছে। ইন জেনারেল, ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে যারা ব্যর্থ হয়, সেটা তাদের দোষ। অন্যদিকে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে কেউ সফল হলে সেটা গ্রামীণের ক্রেডিট।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
যাবতীয় প্রতিষ্ঠানের বেলায়ও কি তা না?
এইটা একটা কথা বললেন? সেটা গ্রামীণ না, ক্ষুদ্রঋণের ক্রেডিট তো অবশ্যই। যে মানুষ আপনি আমি, কেউ টাকা দিতাম না, সেই মানুষ যদি ক্ষুদ্রঋণ পেয়ে নিজের অবস্থার উন্নতি করে, তাহলে ক্ষুদ্রঋণ থিওরি সফল নয় কি?
ক্ষুদ্রঋণ যদি মানুষের অবস্থার অবনতি কারণ হয়, সেইটার দায়ভার ক্ষুদ্রঋণের উপর চাপাতে রাজি আছেন তো?
একটা উদ্ভট চিন্তা মাথায় এলো, স্বাভাবিক ঋণের সাথে তুলনা করতে গিয়ে। (আগেই বলে নেই, আমার চিন্তার কোন অ্যাকাডেমিক ভিত্তি নেই)। ধরা যাক একটা বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক ১০০০ টাকা ঋণ দেয় বার্ষিক ১০% হারে। এক্ষেত্রে ঋণগ্রাহক ১০০০ টাকা ১ বছর ধরে নিজের কাজে লাগাতে পারেন। আর বছর শেষে তাকে ১০০ টাকা সুদ আর ১০০০ টাকা আসল পরিশোধ করতে হয়। ঋণকে একটা সেবার মত ধরে নিলে ভোক্তা এখানে ১০০০ টাকাXবছর(Man-Hour বা Watt-Hour এর মত) পরিমাণ সেবা পাচ্ছেন। আর যদি ২০% ডিক্লাইনিং রেটে ১০০০ টাকা সুদ নেয়া হয়, আর পোস্টের মত ৫০টা টেনরে সুদ+আসলের একটা অংশ (৫০ ভাগের ১ ভাগ) পরিশোধ করা হয় তাহলে ভোক্তা এখানে ১০০০টাকাX(১/৫০)বছর + ৯৮০টাকাX(১/৫০)বছর + ...+২০টাকাX(১/৫০)বছর = (১০০০+৯৮০+...+২০)X(১/৫০) টাকাXবছর = ৫১০ টাকাXবছর পরিমাণ সেবা পাচ্ছেন। অর্থাৎ তিনি এখানে ৫১০ টাকা এক বছর ধরে কাজে লাগানোর সুবিধা পাচ্ছেন। সুদের হারের চেয়েতো আমার কাছে কার্যকর ঋণের ব্যাপারটাই ঘাপলার লাগছে।
ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে উপকৃত হয়েছে/হয়নি এমন একটা অথেন্টিক সার্ভে আসলেই দরকার। যেহেতু এটা একটা বহুল আলোচিত অর্থনৈতিক তত্ত্ব(নাকি পদ্ধতি?), এর সাফল্য/ব্যার্থতা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে ইম্পিরিকাল ডাটার সাহায্য নেয়াই উচিত। যেকোন ক্ষুদ্রঋণদাতা সংগঠনের কাছেই তাদের ভোক্তাদের হালনাগাদ তালিকা থাকার কথা। একটা অ্যাকাডেমিক সার্ভে কেন করা হচ্ছে না, কে জানে!
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
কাজী খলিকুজ্জামান কিন্তু সার্ভে করেছিলেন। আড়াই হাজার দৈবচয়িত ভোক্তার ওপর। করে দেখেছেন, তাদের অবস্থার উন্নতি হয়নি। এই সার্ভে সম্পর্কে আমি তাঁর মুখে শুনেছি, বিশদ পড়ে দেখিনি, পড়ার জন্যে খুঁজছি।
@সজল,
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আমাদের জনগোষ্ঠীর এক বিরাট অংশের এককালীন ঋণ ও সুদ পরিশোধের ক্ষমতা নেই বলেই এই ক্ষুদ্রঋণের ধারণায় কিস্তিতে পরিশোধের বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত হয়েছে বলে মনে হয়। এককালীন পরিশোধের প্রচলিত ব্যাংকিং পদ্ধতি কার্যকর করা সম্ভব হলে মাইক্রোক্রেডিট সিস্টেমের ঋণ আদায়ের বর্তমান প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এতো ম্যান-পাওয়ারেরও দরকার হতো না হয়তো। ফলে প্রতিষ্ঠানের পরিচালন ব্যয় বহুলাংশে হ্রাস পাওয়ায় সুদের হারও অনেকাংশে কমিয়ে আনা যেতো। এবং তা সম্ভব হলে প্রচলিত ব্যাংকিং ধারার বাইরে গিয়ে ভিন্নধারার এরকম একটি সিস্টেমেরও প্রয়োজন হতো না। কিন্তু বাস্তবতা যে এতে সায় দেয়নি তা বলা যায়।
গ্রামীণের সিস্টেমে একসময় ঋণ পরিশোধের পর এককালীন সুদ পরিশোধের নিয়ম ছিলো। কিন্তু ওখান থেকেও বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই কিস্তিতে সুদ পরিশোধের বর্তমান সিস্টেমে আপডেট করতে হয়েছে পরবর্তীতে। ব্যবহারিক ক্ষেত্রটাই এমন যে প্রতিনিয়ত পরিবর্তনযোগ্যতার মধ্য দিয়েই সিস্টেমকে কার্যকরভাবে আপডেট করে যেতে হয়। বর্তমান অবস্থাটাও পূর্বের অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্যায়ক্রমিক ফলাফল বলা যায়।
তত্ত্বীয় ধারণায় যা অত্যন্ত মাধুর্যময় ও যৌক্তিক মনে হয়, প্রয়োগক্ষেত্রে তা-ই সারবত্তাহীন অকার্যকর হয়ে যেতে পারে। আবার উল্টোটাও ঘটতে পারে। তত্ত্বের সাথে ব্যবহারিক ক্ষেত্রের ভিন্নতাটা এখানেই।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
গ্রামীণ ব্যাংক যদি উচ্চহারে (কথার কথা) সুদ নিয়েও থাকে তবুও সেটা বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক (সরকারের) ঘাড়েই এসে পরার কথা। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারণ করে দেয় সর্বোচ্চ কত সুদ চার্জ করা যাবে। তাই সরকার যখন বলে গ্রামীন ৩০-৫০ ভাগ সুদ নেয় তখন অবাক না হয়ে পারিনা। কারন এটা তাদেরই নিয়ন্ত্রণ করার কথা। তার মানে সরকার জেনে শুনেই নিজের গায়ে দোষ টেনে নিচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষ যেহেতু এই ব্যাপারগুলা বোঝে না তাই খুব সহজেই তারা দোষটা দ: ইউনুস কিংবা গ্রামীনের ঊপর চাপিয়ে দিতে পারে।
আর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার বিষয়ে চাই এটাও বাংলাদেশ ব্যাংক বা সরকারের দায়িত্ব। এরকম ঘটনা যখন ঘটে তখন সরকার ম্যাল প্রাক্টিসের অভিযোগে গ্রামীনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা। তাই তারা যখন এই অভিযোগ আনে বা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না তা তখন তাদের অযোগ্যতাই প্রমান করে। অথবা সাধারন মানুষ জনের অজ্ঞতার সুযোগ নেয়।
Maren Duvendack এবং সহযোগীদের করা "What is the evidence of the impact of microfinance on the well-being of poor people?", EPPI-Centre, Social Science Research Unit, Institute of Education, University of London এর করা এই গবেষণাপত্রটি পড়ে দেখতে পারেন যেখানে মাইক্রোক্রেডিটকে একটি মরীচিকা বলে অভিহিত করা হয়েছে যার সাফল্যের দাবীর কোন পরিষ্কার প্রমাণ নাই।
http://www.dfid.gov.uk/r4d/PDF/Outputs/SystematicReviews/Microfinance2011Duvendackreport.pdf
রণদীপম বসু @ আপনার কথা শুনে ডেস্টিনির পোলাপানের কথা মনে পরে গেলো !!
"কোথাও কোথাও এরা হয়তো একটু অফেনসিভ হয়ে ওঠে। আর এই বদনামটাই গ্রামীণের ঘাড়ে এসে পড়ে যায়।"
আর আপনি ৮০ লাখ কর্মীর হিসাব দিছেন !! আসলেই কি এতো লোক ঋণ নেয় ?? :/
বাস্তবে কি হচ্ছে সেইটা দেইখা আছেন । আগের থেকেই ইউনুস নিয়া পসিটিভ ধারনা থাকলে আপনার ভুল ভাঙ্গানো যাবেনা ।
"কোথাও কোথাও এরা হয়তো একটু অফেনসিভ হয়ে ওঠে। আর এই বদনামটাই গ্রামীণের ঘাড়ে এসে পড়ে যায়।"
-- গ্রামীণ এমন সুযোগ রাখে কেন ?? এইটা ওদের একটা পলিটিক্স । যেমনেই হোক টাকা কালেকশন হবেই , কিন্তু বদনাম গ্রামীণের হবেনা ।
বাঙালি জীবনে নোবেল দেখেন নাইতো !! এখন বেশি পাইয়া ইউনুস রে নিয়া লাফাইতাছেন !!
নিজের দোষ কোনদিন এই জাতির চোখে পরবেনা
নতুন মন্তব্য করুন