…
লালবাগ কেল্লা থেকে উত্তর-পশ্চিমে সামান্য দূরে আতিশখানায় এই সুদৃশ্য খান মহম্মদ মির্ধা মসজিদটির (Khan Muhammad Mirdha Mosque) অবস্থান। মূলত এটি চারদিকে দেয়াল দ্বারা বেষ্টিত একটি আবাসিক মাদ্রাসা-মসজিদ কমপ্লেক্স। কাজী ইবাদুল্লাহর নির্দেশে জনৈক খান মহম্মদ মির্ধা এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। ধারণা করা হয় কাজী ইবাদুল্লাহ ছিলেন ঢাকার প্রধান কাজী। তবে মসজিদটির নির্মাণকাল নিয়ে গবেষক মুনতাসীর মামুনের ‘ঢাকা স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী’ গ্রন্থের তথ্যমতে ফররুখসিয়ার যখন ঢাকার উপ শাসনকর্তা তখন ১৭০৬ সালে মসজিদটি নির্মিত হয়। প্রাচীনত্বের দিক থেকে এর অবস্থান সপ্তদশ। বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক সমীক্ষামালা-২’ স্থাপত্য শীর্ষক গ্রন্থে এই কমপ্লেক্সটির নির্মাণকাল উল্লেখ করা হয়েছে ১৭০৪-০৫ সাল।
Khan Muhammad Mirdha Mosque
.
তিন গম্বুজঅলা এই মসজিদটির অন্যতম বিশেষত্ব হলো ৫.১৮ মিটার বা প্রায় সতের ফুট উঁচু নিম্নতল কক্ষ সম্বলিত প্লাটফর্মের উপর এর ভিত্তি। ৩৮ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৩০.৪৮ মিটার প্রস্থ বিশিষ্ট আয়তাকার এই প্লাটফর্ম বা মঞ্চের নিচে টানা করিডোর, পাশে ছোট ছোট প্রকোষ্ঠ বা কক্ষ। পূর্বদিক ব্যতীত অন্য তিনদিক ব্যাপী এই ভল্টযুক্ত কক্ষগুলো নির্মিত। মঞ্চের উপর মুগল রীতিতে নির্মিত ৪৮ ফুট বাই ২৪ ফুট ত্রেবিশিষ্ট নামাজ ঘর বা মূল মসজিদ এবং এর উত্তর-পূর্বদিকে নির্মিত ইমারতটিকে মাদ্রাসা ভবন হিসেবে সনাক্ত করা হয়। সমতল ভল্ট বিশিষ্ট ছাদ দ্বারা আবৃত তিনটি কক্ষ এবং এই কক্ষসমূহের দক্ষিণে একটি টানা বারান্দা সমন্বয়ে মাদ্রাসা ভবনটি গঠিত। মঞ্চের উপর তিন গম্বুজ মসজিদ ও মাদ্রাসা ভবন ছাড়া অবশিষ্ট উন্মুক্ত অংশ শিক্ষার্থীদের পাঠদান কাজে ব্যবহৃত হতো বলে ধারণা করা হয়। তাই মনে করা হয় যে মঞ্চের নিম্নস্থ কক্ষগুলো মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষকদের বাসস্থান বা শয়নাগার হিসেবে নির্মিত হয়েছে।
.
Khan Muhammad Mirdha Mosque
.
উঁচু মঞ্চের পূর্বদিকে প্রায় মাঝামাঝি অবস্থানে বহুধাপ বিশিষ্ট একটি সংকীর্ণ সিঁড়িপথ রয়েছে। এই সিঁড়িপথের উপরাংশে খিলান সম্বলিত তোরণদ্বারের মাধ্যমে মসজিদ ও মাদ্রাসা সম্বলিত মঞ্চে উঠা যায়। এতো উঁচু ও এক চমৎকার ব্যতিক্রমী অবয়বের কারণে এই খান মহম্মদ মির্ধা মসজিদ কমপ্লেক্সটি সমসাময়িক কালে ঢাকায় নির্মিত একই রীতির অন্যান্য স্থাপনা অপেক্ষা অনেক বেশি আকর্ষণীয় ও সমৃদ্ধ বলে মনে হয়। বর্তমানে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধীনে মসজিদটি সংরক্ষিত।
.
তথ্য সূত্র:
০১) স্থাপত্য / বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক সমীক্ষামালা-২ /
বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি।
০২) ঢাকা স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী / মুনতাসীর মামুন
…
মন্তব্য
ধন্যবাদ দাদা। সময় করে একদিন দেখতে যাবো। বর্ননা এবং ছবি দারুন হয়েছে।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
ধন্যবাদ।
ওই এলাকাটায় বেশি সময় দিতে পারি নি সেদিন আমরা। আরেকদিন আরো বেশি সময় নিয়ে যেতে হবে।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
ছবিয়াল গ্রুপের কেউ কেউ হয়তো স্মৃতি রোমন্থন করতে পারেন। তাই আগেভাগেই বলে দিচ্ছি, তিন নম্বর ছবিটি তুলতে গিয়ে পেছাতে পেছাতে খেয়াল ছিলো না পেছনে নর্দমার ড্রেন ছিলো ! অতএব...!! সে কী দুর্ভোগ !!!
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
সামলে, দাদা।
দারুণ হয়েছে দুটোই, ছবি এবং বর্ণনা।
ধন্যবাদ।
এম আব্দুল্লাহ
আপনাকেও ধন্যবাদ।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
দারুণ পোস্ট!
২/৩বার গেছি জায়গাটাতে।
আরেকদিন চলেন ! ঘুরে আসি !!
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
দেখতে যাব! ধন্যবাদ,
আপনার আরো কয়েকটা লেখা পড়লাম, তার মাঝে সাত বীরশ্রেষ্ঠকে নিয়ে লেখাটা পড়ে আপনাকে খাওয়াতে মন চেয়েছিলো, ফেসবুকে আপনি আমার ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট এর অনুমোদন দিয়েছেন, আমরা একধাপ এগিয়েছি। খাওয়া পাওনা আছে, দেখা যাক কোথায় কিসের আশেপাশে দেখা হয়, তখন সামর্থ্যের হাল কি থাকে আর আপনার রুচি কোন দিকে আমাদের নেয়। দেখা হয়েই যায়!
খানাদানার ব্যাপারে আমি সাংঘাতিক উদার রে ভাই ! আমাকে খাওয়াতে আপনার ইতস্তত হবার কোন কারণ দেখি না !! প্রয়োজনে দলবল নিয়ে হাজির হয়ে যাবো ! তন্ময় ক-অ-অ-ইইইইই......!! হা হা হা !
যাক্, আশা করছি এভাবেই একদিন দেখা হয়ে যাবে। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
বস্, যতদূর জানি শব্দটা সম্ভবতঃ "আতিশখানা" হবে - গোলাবারুদ রাখার স্থান অর্থে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ধন্যবাদ পাণ্ডব দা। শব্দটা আমি মুনতাসীর মামুন থেকে ব্যবহার করেছি। ওখানে আতশখানা নামই উল্লেখ রয়েছে। এখন জানতে হবে ওই জায়গাটাকে সেখানে কী নামে ডাকা হয়। অপভ্রংশ হয়েও প্রচলন হতে পারে। আমি তো জানার চেষ্টা করবোই। আপনিও সম্ভব হলে একটু জানবেন কি জায়গাটার বর্তমান নাম কোনটা ?
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
আপনি ডাঃ শাকিলের সাথে কথা বলুন। উনি এই জায়গাটার ব্যাপারে আরো বিস্তারিত জানেন। আতিশখানা'র পাশে ফিলখানা (পীলখানা) বা হাতিশালও ছিলো। আতিশখানা অপভ্রংশ হয়ে আতশখানা হয়ে যেতেই পারে। তবে তথ্যভিত্তিক লেখাতে মূল নামটা উল্লেখ থাকা প্রয়োজন। নয়তো বিভ্রান্তি তৈরি হয়। যেমন, আপনি যদি আতশখানা বলেন তাহলে তার মানে দাঁড়ায় কাচঘর।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
চমৎকার পোস্ট, রণদা........ .....শীঘ্রই যেতে হবে একবার.................
আরে, এমন দারুণ পোস্টখানা মিস হয়ে যাচ্ছিল। রণদা, আরো আরো ছবি আর আরো বর্ণনা দিলেও মন ভরবে না!
ধন্যবাদ দাদা। চমৎকার লিখা এবং ছবি। আর ষষ্ঠ পাণ্ডবদা ঠিকই বলেছেন জায়গাটার নাম আতিশখানা। তবে একটা ব্যাপার, আমার মনে হয় লিখার মধ্যে সঠিক লোকেশন আর যাওয়ার উপায় উল্লেখ করলে অনেকে উপকৃত হবে।
বাড়ির সামনের মসজিদ টা।
=কিংবদন্তির ঢাকা , নাজির হোসেন=এর বই থেকে এ বিষয়ে কিছু তুলে ধরছি-
শেখ সাহেব বাজার এ লালবাগ রোডের সংযোগস্থলে তথা আতসখানার সাবেক পশ্চিম সীমানায় মোগল স্থাপত্য আঙ্গিকে তৈরী করা এ মসজিদটি।
মসজিদটি খাঁন মাহ্ মুদ / মহাম্মদ মৃধা মসজিদ নামে পরিচিত। মসজিদের ফলকের বর্ণনানুযায়ী মুর্শিদ কুলীখাঁর সুবেদার আমলে আইন বিভাগের রক্ষক প্রধান কাজী ইবাদুল্লাহ নির্দেশে এটি তৈরী হয়। সে সময় ফখরুর শিয়র ঢাকার নায়েব ছিলেন(১৭০৪-১৭০৬) সম্ভবত : খাঁন মাহ্ মুদ মৃধা মসজিদটির প্রধান রাজমিস্ত্রী ছিলেন।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পূর্বে মসজিদটির বেশ করুন অবস্থা ছিল। বৃটিশ সরকার এটিকে পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করে এর দ্বায়িত্ব প্রত্নতত্ত বিভাগের নিকটে তুলে দেয়।
মসজিদের পূর্বদিকে বিরাট খালি জায়গায় মোঘল আঙ্গিকে দেওয়াল ছিল, যা ধারণা করা হয়ে ঈদগাহে ব্যবহৃত হত। পরর্তীতে এ জায়গা বিক্রি করে দেয়ার ফলে বেশ ছোট হয়ে যায়।
নতুন মন্তব্য করুন